#প্রণয়ে_তুমি
#পর্ব_১৪
#writer_nahida_islam
সুমি ইফাজের হাতের দিকে তাকিয়ে আছে, এভাবে অতসীর হাত ধরে সামনে নিয়ে আসবে তা কল্পনা করেনি।
-অতসী আমার বিবাহিতা স্ত্রী, নেক্সট টাইম ওর সাথে কথা বললে ভেবে কথা বলবে।
সুমির মুখটা দেখে মনে হচ্ছে আকাশ থেকে পড়েছে। কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে দৃষ্টি ক্ষেপণ করে বললো,
-এতোদিন এটা বলোনি কেনো, ইফাজ।
-এতোদিন বলার প্রয়োজন মনে করেনি কিন্তু এখন মনে হচ্ছে না বললে ই নয়।
-বিয়ে করছো তো কী হইছে তুমি অতসীকে ডিভোর্স দিয়ে দাও, তারপর আমরা বিয়ে করে নিবো।
আমি ইফাজের থেকে হাতটা ছাড়ানোর চেষ্টা করছি, কিন্তু ইফাজ যে ভাবে হাত ধরে রেখেছে এতে ছাড়ানো সম্ভব নয়।
-এসব নাটক দেখতে পারবে না, হাত ছাড়ুন।
-এতো কথা বলো কেনো হে, চুপ করে দাড়াও।
-আচ্ছা দাড়াচ্ছি, আপনি হাত ছাড়ুন।
ইফাজ হাত ছাড়তে আমি দ্রুত হেটে ক্লাস রুমে চলে গেলাম। ক্লাসে গিয়ে চারদিকে চোখবুলিয়ে দেখলাম রুহি নাই। রুহি আজকে আসেনি হয়তো। অন্যকথা মাথা থেকে বাদ দিয়ে ক্লাসে মন দিলাম।
-ইফাজ তুমি কী করে এই বেয়াদব মেয়েটাকে বিয়ে করলে?
-সুমি ফার্স্টে ই বলেছি অতসী আমার বউ, তাই কোনো কথা বলার দুবার ভাববে।
-ইফাজ শুনো আমি সব মেনে নিবো তুমি অতসীকে ডিভোর্স দিয়ে আমাকে বিয়ে করো।
-এটা সম্ভব নাহ, তোমার ক্লাস শুরু হয়েছে হয়তো ক্লাসে যাও ফালতু কথা বলবা না সুমি।
-আহা এগুলো বাদ দেও ইফাজ, তুমি ভয় পাচ্ছো কেনো, তুমি আমার সাথে ও সম্পর্ক রাখবে অতসীর সাথে ও, সময় হলে অতসীকে ডিভোর্স দিয়ে দিবে।
ইফাজ অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
-তোমার মতো মেয়েদের জন্য ই অনেকের সুখের সংসার ভাঙ্গছে।এতোটা নিচে কীভাবে নামো।
-ইফাজ আমি তোমাকে চাই এতে যদি আরো নিচে ও নামতে হয় তাতে ও আমার কোনো সমস্যা নেই।
ইফাজ রেগে বাইক নিয়ে বেরিয়ে যায়। এই মেয়ের সাথে অযথা কথা বলে লাভ নেই।
ক্লাস শেষে বের হতে ই গেইটের কাছে ইফাজকে দেখলাম। আমি দেখে ও না দেখার ভাব করে সোজা হাঁটা শুরু করলাম,
ইফাজ বাইক নিয়ে পিছু নেয়,
-অতসী আবার শুরু করলে?
-কী শুরু করলাম।
-মা বলছে তোমাকে নিয়ে যেতে, আমি কখন থেকে ওয়েট করতেছি।
-আপনার সাথে আমি যাবো না চলে যান।
-আচ্ছা আমার সাথে যেতে হবে না আমি রিক্সা ডেকে দিচ্ছি।
ইফাজ কোনো উপায় না পেয়ে অতসীকে রিক্সা ডেকে দিলো নিজে রিক্সা পেছনে বাইক নিয়ে গেলো।
ইফাজকে এমন পিছনে ঘুরাতে পেরে বেশ শান্ত লাগছে। এতোদিনের জ্বালানোর শাস্তিটা দিতে পারছি।
বাসার সামনে এসে ফ্রেশ হয়ে ড্রেসিংটেবিলের সামনে বসে ভেজা চুলগুলো আঁচড়াচ্ছি। ইফাজ বেডে বসে আমার দিকে তাকিয়ে আছে, আয়নায় তা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
-অতসী আমি কিছু বলতে চাই তোমাকে, আমার লাইফ হঠাৎ চেঞ্জ হয়ে যাওয়ার সেই দূরস্বপ্নের কথা, শুনবে।
ইফাজের মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে বেশ সিরিয়াস, তাই কোনো প্রকার কথা না বলে, মাথা নেড়ে সম্মতি জানালাম।
-এট ফার্স্ট আই এম সরি,তোমার সাথে যত বাজে বিহেভ করেছি তার জন্য। তুমি ফার্স্ট দিন এসে আমার যে ডায়েরি টা হাতে নিয়েছিলে ঐটাতে একটা ওয়ার্ড লিখা ছিলো মনে আছে।
-হুম p
-জানতে চাওনি কেনো, সেই ডায়েরি সম্পর্কে?
আমি এসে বিছানায় বসতে বসতে বললাম,
-আপনার পার্সোনাল বিষয়ে কথা বলার প্রয়োজন মনে করেনি তাই।
-একটা আবদার করলে রাখবা?
আড়চোখে তাকিয়ে বললাম, কীসের আবদার?
-তোমার কোলে একটু মাথাটা রাখি চুলগুলো টেনে দাও না প্লিজ।
-ভালো কথা এক্সের কথা বলবেন নিজের বউয়ের কোলে শুয়ে বাহ বাহ্ কী সুখ।
-কখনো আমাকে ভালোই বাসেনি তাহলে এক্স হলো কীভবে।
-এতো ইনোসেন্ট ভাব না নিয়ে বলেন তো দেখি।
ইফাজ প্রথম থেকে শুরু করে পৃথার ব্যাপারে সব বললো আমাকে, সব শুনে স্বাভাবিক ভাবে ই বললাম,
-হে ওয়েট করুন, বাংলাদেশ আসলে বিয়ে করে নিবেন। একটা বিয়ে হয়েছে তো কি হইছে।
ইফাজ আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
-আচ্ছা তুমি বললে না হয় করলাম।
-অখে।
-আচ্ছা চলো আমরা ফ্রেন্ডশিপ করি? আমি ফার্স্টে তোমার ভালো বন্ধু হতে হবে তারপর না হয় ভালো হাসবেন্ড হবো।
-আপনার সাথে আমার যায়, সরি ব্রো পারবো না।
-ফ্রেন্ডশিপ করতে পারবা না তো বিয়ে করছো কীভাবে।
-আপনার ঐ দূরস্বপ্নের প্রেমকাহিনী মতো ই আমার বিয়ে হয়ে গেছে নয়তো কী আমি আপনাকে বিয়ে করতাম।
-ওহ আল্লাহ তাহলে কোন রাজকুমার কে বিয়ে করতা শুনি।
-সব কথা আপনাকে বলতে হবে..
-তোমার কথার যে ঝাঁজ আমি তোমার সব কথা শুনতে ও চাইনা।
–আমার সামনে থেকে দূর হন, আমার কথা শুনতে চাননা আবার সামনে বসে আছেন কেনো।
-অতসী , ইফাজ তোদের দুজনের ঝগড়া শেষ হলে খেয়ে নে তো।
মা এসেছে দেখে বাসা থেকে উঠে দাড়ালাম,
-দাড়ালে কেনো মা, এই যে টেবিলে খাবার রাখলাম খেয়ে নিও।
-মা আমি তো এখন নিজে থেকে নিচে গিয়ে খেয়ে আসতাম। আপনার ছেলের প্রেমকাহিনী শুনে লেইট হয়ে গেলো।
-এই বদ মেয়ে কোনো কথা তোমার পেটে থাকে না।
-অসভ্য ছেলে আমাকে বলার আগে এটা মনে ছিলো না?
-কোন কুক্ষণে জানি তোমার সাথে আমার দেখা হইছে আল্লাহ!
-সেইম।
-তোরা এসব বন্ধ করবি?
-মা আপনার ছেলে আগে শুরু করছে।
-আমি দেখলে তো এখন সব দোষ আমাকে দিচ্ছে?
-তোরা চুপ করবি, আজকে রাতে তোরা সিলেট যাচ্ছিস। কিন্তু সিলেট থেকে তোরা বাসায় ফিরবি না। আমাদের গ্রামের বাড়িতে ফিরবি।
-কি, মা গ্রামে যাবো। ওফফ গ্রামের মঝা ই আলাদা।
-হে খেয়ে নিয়ে সব গুছিয়ে নে। আমার অনেক কাজ আছে আমি যাচ্ছি।
-এতো খুশি হচ্ছেন কেনো, গ্রামের বাড়িতে কী আপনার জিএফ আছে নাকি।
-তোমার গ্রামের বাড়ি কোথায় হে, গ্রামের বাড়িতে কি তোমার বিএফ ছিলো নাকি।
নিজের গ্রামের বাড়ির কথা মনে হতে ই কিছু থমকে গেলাম। এসব কথা মনে হলে ই সেই অন্ধকারাচ্ছন্ন দিনগুলো আমাকে আঁকড়ে ধরে।
-কী হলো মনে পড়ে গেলো তো তোমার বিএফ এর কথা।
-বেশি কথা বলবেন না। বিএফ থাকলে আপনার মতো অসভ্য কে বিয়ে করতাম নাকি। তা আপনার গ্রামের বাড়ি কোথায়।
-তোমারটা আগে বলো নয়তো আমি ও বলবো না।
-আপনার বলার দরকার নাই আমি গিয়ে ই দেখে নিবো।
সন্ধ্যার হতে ই অতসী ব্যাগ গুছিয়ে সব রেডি করে নিয়েছে। অতসী আর ইফাজ রেডি হয়ে আটটার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে গেছে। ইফাজের মা ছাড়া সবাই ই সিলেট যাচ্ছে।
কলেজ গেইটের সামনে এসে, দেখলো প্রায় সবাই ই চলে এসেছে। রুহি অতসীকে দেখে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরছে,
-এতোক্ষণ আসলি, এতোদিন কলেজে আসলি না কেন।
-তুই আজকে আসিস নাই কেন এটা বল।
-কিছু শপিং করতে গিয়েছিলাম। চল বাসে উঠে বসি।
রুহি অতসীর সাথে বাসে উঠে গিয়ে বসলো, ইফাজ অতসীর দিকে তাকিয়ে বললো,
-কী হলো এটা।
ইফাজ দ্রুত এসে রুহিকে বললো,
-এই যে ম্যাডাম এটা আমার সিট।
-ইফাজ ভাইয়া আবার থাপ্পড় খাওয়ার ইচ্ছে আছে। অতসীর সাথে বসার এতো ইচ্ছে কেনো?
-হায় রে আল্লাহ নিজের বউয়ের সাথে বসতে ও এতো কৈফিয়ত দিতে হবে।
-কি বললেন ভাইয়া।
হঠাৎ সুমি এসে অতসীর পাশাপাশি সিটে বসলো,
-ইফাজ তুমি এখানে বসতে পারো।
অতসী বড় বড় চোখ করে ইফাজের দিকে তাকিয়ে বললো,
-তুমি আমাকে ভয় দেখেচ্ছো কেনো হে, আমি কী বলছি আমি ঐখানে বসবো।
অন্তু ব্যাপারটা বুঝতে পেরে রুহিকে ডেকে নিয়ে যায়। ইফাজ বসতে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
অতসী সুমির দিকে তাকিয়ে, ইফাজের ডান হাতটা নিজের হাতের মধ্যে আটকে নিলো অতসী।
চলবে,