প্রণয়ে তুমি পর্ব -১৩

#প্রণয়ে_তুমি
#পর্ব_১৩
#writer_nahida_islam

নার্স আর কিছু না বলে ইফাজকে কেবিনে ডুকতে দেয়। কেবিনে ডুকতে ই অতসীর মুখের দিকে চোখ যেতে ই নিজেকে বড় অপরাধী মনে হচ্ছিল। সাইডে থাকা চেয়ারটা টেনে অতসীর পাশে বসে অতসীর হাতটা ধরতে ই, অতসী চোখ মেলে তাকালো ।

অতসী বুঝতে পেরে তার হাতটা ছাড়িয়ে নেয়। মুখটা ডান দিকে কাঁপা কাঁপা স্বরে বললো,

– আপনার মুখখানা না দেখলে খুশি হবো।

ইফাজ অতসীর কথায় কোনো প্রতিক্রিয়া না করে বললো,

-জানি আমি খুব কষ্ট দেই তোমাকে

-এসব আমি শুনতে চাইনি, প্লিজ আপনি চলে যায়।

-অতসী আমি কিছু বলতে আসেনি আপাতত, কিন্তু তুমি সুস্থ হওয়ার পর অনেক কথা আছে সব বলবো।

–আপনি যেতে পারেন।

-এখন কেমন লাগছে এটুকু বলো?

-অসহ্য লাগছে প্লিজ যান।

-এতো উত্তেজিত হচ্ছে কেনো। আমি চলে যাচ্ছি প্লিজ শান্ত হও।

চলে যাচ্ছি কথাটা শুনে কিছুক্ষন পর অতসী বাম দিকে ফিরে তাকাতে ই দেখে ইফাজ একদৃষ্টিতে অতসীর দিকে তাকিয়ে আছে।

অতসী সাথে সাথে অন্য দিকে ফিরে য়ায়। এমন ইফাজের চোখে চোখ পড়বে তা অতসী বুঝতে পারেনি।

ইফাজ কেবিন থেকে বের হতে ই অনিতা বেগম এসে জিজ্ঞেস করলো,

-কেমন দেখে আসলি..

-আমার সাথে কথা বলেনি।

-তুই কথা বলার যোগ্য না,

হুম বলে ই ইফাজ আবার ওয়েটিং রুমে গিয়ে বসে। এই সবাই আজকে এতো কিছু বলছে একবার ও রিয়েক্ট করিনি।নিজের অপরাধ ভেতর থেকে নিজেকে কুঁড়ে কুড়ে খাচ্ছে।

–ইফাজ চল আমরা বাড়িতে যাই। মা এখানে থাকুক।

-আপু যাও তুমি এখন যেতে ইচ্ছে করছে না।

-চলেন ভাই এভাবে না খেয়ে বসে থাকলে অসুস্থ হয়ে পড়বেন তখন আর বউয়ের রাগ ভাঙ্গাতে পাড়বে না।

ইফাজ অন্তুর কথা শুনে মুচকি হেসে দিলো। অন্তু ইফাজকে নিয়ে বাসায় চলে যায়।

অনুমতি নিয়ে অনিতা বেগম অতসীর কেবিনে ডুকে,

-কেমন আছিস মা।

-এই তো ভালো,

অনিতা বেগম অতসীর কপালে বেন্ডেজ উপর দিয়ে হালকা করে চুমু খেলে,

-আমাদের জন্য তোর এসব কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে মা। মাফ করে দিস মা।

অতসী আস্তে আস্তে অনিতা বেগমের হাত ধরে বললো,

-মা প্লিজ এসব বলবে না।

ইফাজ গোসল করতে গিয়ে ই শার্টের দিকে তাকিয়ে আছে, এখন ও অতসীর রক্ত শার্টে লেগে আছে। দূরস্বপ্নের মতো দিন কাটলো আজকে। এতো অপরাধী বোধ নিয়ে কি বেচে থাকা যায়।

অন্তু খাবার ইফাজের রুমে দিয়ে দেয়, ইফাজ গোসল সেরে অল্প একটু খাবার খেয়ে আবার রেডি হয়ে বের হয়ে যায় হসপিটালের উদ্দেশ্য।

ইফাজ হসপিটাল গিয়ে বেশ কয়েকবার অতসীর সাথে কথা বলার ট্রাই করে কিন্তু অতসী বার বার একঔ কথা বলে দেয় ইফাজের সাথে কথা বলতে ইচ্ছুক না।

🍁🍁

এক সপ্তাহ পর আজ অতসী বাসায় ফিরলো, আগের থেকে এখন অনেকটা সুস্থ। বাসায় এসে ই নিজের বাবার রুমে চলে যায়। বাবার সাথে কথা বলে রুমে ডুকতে ই দেখে ইফাজ অতসীর জামা কাপড়গুলো আলমারিতে রাখছে।

-আমার জামাকাপড় ঐখানে না রাখলে ই খুশি হবো।

-ঔষুধ খেয়ে একটু রেস্ট নেও।

-আপনাকে জ্ঞান দিতে বলি নাই।

-অতসী এবার কি কিন্তু আমার উপর টর্চার টা বেশি হয়ে যাচ্ছে।

অতসী আড় চোখে তাকিয়ে বললো,

-কে আবার আপনাকে টর্চার করলো।

-এই গত কয়েকটা দিন তুমি আমার সাথে ভালো করে কথা বলো নাই। কোনো কথা জিজ্ঞেস করলে উওর দিতে না। আমার সাথে ভালো করে কথা বলো না, এগুলে আমাকে মেন্টালি প্রেসার ক্রিয়েট করছে।

ইফাজের এতো অভিযোগ শুনে হাসি মুখে শুধু বললাম,

–এতো দিন আমার সাথে যা করেছে ঐটা কি ছিলো।

ইফাজ আমার অনেক কাছে এসে উওর দিলো,

-আর কীভাবে ক্ষমা চাইলে আমাকে ক্ষমা করতে পারবা বলবা প্লিজ নিতে পারছি না এসব।

আমি কোনো কথা না বলে নিচে চলে গেলাম।

-মা তুমি নিচে আসছো কেনো?

-অনেকদিন শুধু একটা রুমে মধ্যে ই ছিলাম তাই একটু ঘুরতে ইচ্ছে করতেছে।

-ইফাজকে বলি তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যেতে তাছাড়া কলেজ পিকনিক তো আর দুইদিন বাকি আছে, মজা করে সবাই মিলে একসাথে যাবে।

মাথা নাড়িয়ে সোফায় গিয়ে বসলাম।

রাত প্রায় বারোটা বেজে গেছে, আমি এখন ও নিচে বসে আছি বেশ কয়েকবার ইফাজ আমাকে ডেকেছে কিন্তু আমি এক জায়গায় ই বসে আছি।

-তা অতসী ম্যাম আপনি আর কতক্ষণ এই সিনটা চালাবেন।

-কীসের সিন

-রুমে চলো।

-আমার এখানে ই ভালো লাগছে।

-কোলে করে নিয়ে যাবো নাকি নিজে ই পায়ে হেটে যাবে।

-এতো ঢং দেখাতে আসবেন না।

-আমার কথা বিশ্বাস করো নাই তাই তো।

-আপনার কোনো কিছু ই আমি বিশ্বাস করেনা।

কথাটা মুখ থেকে বের করার সাথে সাথে ইফাজ আমাকে কোলে নিয়ে হাটা শুরু করলো।

-এই বদ লোক নামান আমাকে,

-ওফ এ কদিন তোমার এই বদ লোক নামটা বেশ মিস করছিলাম।

-নামান না হয় চিল্লাবো।

-আমি কি বাহিরের কোনো মেয়েকে কোলে নিয়েছি নাকি নিজের বউকে নিয়েছি।

-তো কি হয়ছে আমি কিন্তু চিল্লাবো ই।

-ওহ আচ্ছা রুমে চলে এসেছি এখন যা ইচ্ছা করো।

-আপনাকে না বলছি হুটহাট আমার টাচ করবেন না।

-তুমি তো কতকিছু ই বলো, সব কথা যেহেতু আমি শুনি না এটা ও শুনবো না।

-শুনবেন কি করে দুনিয়ায় আপনার মতো বদ ছেলে নাই।

-তোমার মত ও এমন বদ মাইয়া আমি দেখি নি।

-কী বলছেন আপনি,

-বিপরীত শব্দ বললাম, বদ ছেলের বিপরীত শব্দ বদ মেয়ে।

-আপনার বাংলা ক্লাস নিচ্ছি আমি।

-কথা কম বলে ঘুমাতে আসো।

আমি কথা না বাড়েয়ি নিচে বেড করতে গেলেই ইফাজ আমার হাত ধরে বললো,

-উপরে শুয়ে পড়ো।

-নাহ্

-সরি বললাম তো

-সরুন আমার থেকে..

-আবার কী লোকে করে নিয়ে যাবো নাকি।

-সব সময় এসব ভালো লাগে না।

ইফাজ হাত ধরে টেনে নিয়ে অতসীকে জোর করে বিছানায় শুইয়ে দেয়। ইফাজ অতসীর একটা ওরনা দিয়ে অতসীর পা বাধে আর হাত ধরে বসে থাকে যেনো বিছানা থেকে না নামতে পারে। অতসী ঘুমিয়ে পড়ত ই ইফাজ পায়ের বাঁধন খুলে দিয়ে শুয়ে পড়লো,

সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে অতসী রেডি হয়ে নেয়। কলেজের উদ্দেশ্য বের হতে ই অনিতা বেগম ইফাজের বাইকে করে কলেজে যেতে বলে।

অতসীকে নিয়ে কলেজের গেইটে পা রাখতে ই দেখলো সুমি সামনে ই আছে, ইফাজ অতসীর হাত ধরে সুমির সামনে নিয়ে গিয়ে বললো,

-সুমি, ঐ দিন জানতে পারিনি তাই সরি

সুমি ইফাজের হাতের দিকে তাকিয়ে আছে, এভাবে অতসীর হাত ধরে সামনে নিয়ে আসবে তা কল্পনা করেনি।

-অতসী আমার বিবাহিতা স্ত্রী, নেক্সট টাইম ওর সাথে কথা বললে ভেবে কথা বলবে।

চলবে,

[ভুলক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here