প্রণয়ে তুমি পর্ব -১২

#প্রণয়ে_তুমি
#পর্ব_১২
#writer_nahida_islam

ইফাজ কয়েকটা মুহুর্তে জন্য থমকে যায়, চোখের সামনে অতসীর এক্সিডেন থেকে কিছুক্ষনের জন্য বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে। ইফাজ দৌড়ে গিয়ে অতসী কোলে নেয়, রক্তে পুরো জামাকাপড় ভরে যায় ইফাজের। মুখে এতো রক্ত মাখা ছিলো যে মুখটা ভালোভাবে বুঝা যাচ্ছিলো না।

হসপিটালের ইফাজের পরিবারের সবাই চলে এসেছে। অনিতা বেগম এসে ই ছেলে সজোরে থাপ্পড় মারে। ইফাজ একবারের জন্য ও মায়ের দিকে ফিরে তাকায়নি, নিচের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

-আমি অতসীর দায়িত্ব তোকে দিয়েছিলাম ইফাজ, কি করেছিস তুই। এতো কেয়ার লেস তুই আমি আগে জানতাম না।আমার সামনে থেকে চলে যা।

-মা আমি বুঝতে পারিনি এমন হবে।

-তুই কি বুঝতে পারিসনি, মেয়েটার সাথে সব সময় পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া না করলে তো তোর হতো না। এখন অবশ্যই খুশি হয়েছিস। একটা মেয়ে বিয়ের পর তার স্বামী ভালো হক এটা চায় আর তুই একটা অমানুষ।

ইফাজ প্রতি উওর একটা টু শব্দ ও করে না। ডক্টর বের হলে ইফাজ দ্রুত গিয়ে জিজ্ঞেস করে,

-অতসী কেমন আছে ডক্টর?

ইফাজের দিকে ডক্টর কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বললো,

-যেমটা আশা করেছিলাম তেমন কিছু হয়নি, আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করুন, উনি এখন বিপদ মুক্ত আছে।

-ডক্টর দেখা করতে পারবো কি।

-নাহ্। দুইঘন্টা পর বেডে শিফট করবে তখন শুধু একজন দেখা করতে পারবেন।

ইফাজ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।

-ইফাজ জানিস তো বানরের গলায় মুক্তর মালা মানায় না তোকে আমি তাই দিয়েছিলাম। আমি যেমন অতসীকে তোর কাছে এনে দিয়েছি তেমন আমি ই অতসীকে তোর থেকে দূরে সরিয়ে দিবো।

ইফাজ ছলছল নয়নে কিবরিয়া চৌধুরী দিকে তাকিয়ে আছে। নিজেকে খুব বড় অপরাধী মনে হচ্ছে। কোথাও আমাকে কেউ আটকে রেখেছে মনে হচ্ছে।

-ইফাজ

নরম কন্ঠে ডাক শুনে ইফাজ পিছনে তাকাতে ই দেখলো, অন্তু

-হে, তুমি ও বকা দেও। আজকে আমি কিছু বলবো না। জানি দোষটা আমার। আমার দোষ না হলে ও এসবের জন্য আমি ই দায়ি।

অন্তু মেকি হেসে বললো,

-অতীত বর্তমান ভবিষ্যতে এই তিন নিয়ে ই আমাদের জীবনের পথ চলা। অতীতকে আঁকড়ে ধরতে বাচতে চাইলে বর্তমান কেবল ই বিষাক্ত কালো ধোয়ার মতো জীবন পার করতে হবে।

-আপু আমি চাইনা অন্তত আজকের দিকে পৃথার কথা বলো, এমনি অনেক টেনশনে আছি।

-পৃথা তোমার অতীত অতসী তোমার বর্তমান। আল্লাহ যা করে ভালোর জন্য করে এই বিশ্বাস আছে তো?

ইফাজ মাথা নাড়াতে ই অন্তু আবার বলতে শুরু করলো,

-বাকি জীবনটা না হয় অতসীর নামে ই লিখে দেও। কথা দিচ্ছি এতে তোমার অনেক বড় ক্ষতি হবে না বরং জীবনে সেই আগের হাসি আনন্দ খুজে পাবে। যা হারিয়েছো নিছক এক ভুল পথে।

ইফাজকে নিয়ে অন্তু ওয়েটিং রুমে বসে। ইফাজ আজ সেই আগের মতো ই চুপচাপ হয়ে আছে।

-অতসীর এমন এক্সিডেন কি করে হলো আমাকে বল তো।

ইফাজ ফার্স্ট থেকে সব কিছু খুলে বললো। সব শুনে অন্তু ইফাজের দিকে রাগি লুক দিয়ে তাকিয়ে বললো,

-তোকে সত্যি ই কঠিন মাইর দেওয়ার প্রয়োজন ছিলো। বউ বলে যদি পরিচয় দিতে এতো ই লজ্জা লাগে তো বিয়ে করতে লজ্জা লাগে নি।

-আপু প্লিজ ভালো লাগছে না এসব কথা আর

-পৃথার কথা বললে ভালো লাগবে। পৃথা আর তোর লাইফে কখনো আসবে না।

-আসবে আপু, প্লিজ আমাকে একা থাকতে দেও।

অন্তু চলে যেতে ই ইফাজ অতীতে ডুব দিলো,

ভার্সিটির ফার্স্ট দিন, ভার্সিটিতে পা রাখতে ই খুব বেশি ভয় কাজ করছিলো। গুটিগুটি পায়ে যখন ক্লাস রুম খুজতে এগিয়ে যাচ্ছিলাম কেউ একজন পিছন থেকে জোরে জোরে ইফাজ ইফাজ বলে ডাকছিলো। ভয়ে গুটিশুটি হয়ে দাড়িয়ে পড়ছিলা হায় আল্লাহ ফার্স্ট দিন ই কী র‍্যাগ দিবে নাকি, ভয়ে জোরে জোরে হাটতে লাগলাম, মেয়েটি এসে দৌড়ে আমার সামনে এসে দাড়িয়ে বললো,

-এই ছেলে তোমার মানিব্যাগ না এটা।

মানিব্যাগের দিকে তাকিয়ে হতভম্ব হয়ে বললাম,

-জ্বি আপু

আমার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বললো,

-নিউ

-জ্বি আপু

-এমন গনহারে আপু আপু করছো কেনো, আমি আর তুমি সেইম ব্যাচ।

-জ্বি আপু

-এই ছেলে তুমি আবার আপু বলো কেনো? আবার আপু বললে ধরে নিয়ে বিয়ে করে ফেলবো।

ঐদিন থেকে ই পৃথাকে অসম্ভব ভালো লেগেছিলো। রোজ ভার্সিটিতে যাওয়ার পর, আমি পৃথাকে ই শুধু দেখতাম। হঠাৎ একদিন ওর ফেসবুক আইডি নিলাম, রোজ তাকে মেসেজ করতাম কখনো রিপ্লাই করতো কখনো করতো না। তার একটা মেসেজের রিপ্লাই আমাকে এতোটা খুশি করতো যা আমি অন্য কিছুতে খুজে পেতাম না। কিন্তু লাইফে অপেক্ষা করতে একটু ও পছন্দ করতাম না পৃথার জন্য যা প্রতিনিয়ত করতে হতো।
পৃথা খুব ভালো করে জানতো আমি তাকে পছন্দ করে এটা যেনো ও আমাকে খুব খারাপ ভাবে ইগনোর করতো। কিন্তু মাঝে মাঝে এতো ভালোবাসা দেখাতো মনে হতো পৃথিবীতে তার থেকে কেউ আমাকে ভালোবাসবে না।

লাস্ট দুই ইয়ার আগে সে তার বাবা মায়ের সাথে দেশের বাহিরে চলে যায়। কিন্তু যাওয়ার আগে আমাকে কথা দিয়ে যায়। এসে আমাকে বিয়ে করবে কিন্তু গতবছর জানতে পারি তার বিয়ে হয়েছে অন্য একজনের সাথে তাও আবার বাংলাদেশ থাকতে ই। আমাকে মিথ্যা বলেছে। তখন থেকে এসব ভালোবাসার প্রতি বেশ অনিহা, বিরক্তি, খারাপ ধারণা জন্মে,মেয়েদের সহ্য হয়না।

-ইফাজ সাহেব আপনার ভাবনা শেষ হলে, এই খাবারটুকু খেয়ে নিতে পারেন।

-অতসীকে না দেখে খাবো না।

-ভাব্বাহ এতো ভালোবাসা কবে থেকে,

-সিরিয়াস জিনিস নিয়ে মজা করবা না আপু প্লিজ।

অনিতা বেগম এক সাইডে বসে আছে অন্য দিকে ফিরে, ইফাজ দ্রুম মায়ের সামনে গিয়ে বসে পড়লো, মায়ের দুহাত ধরে বললো,

-সরি মা, আমার জন্য তোমরা কষ্ট পেয়ো না।

-ইফাজ স্যরি বললে যদি সব কিছুর কষ্ট মুছে যেতো তাহলে মানুষ এতো কষ্ট বহন করতো না।

পেসেন্টের নাম অতসী তার বাসার লোক কে আছে চাইলে দেখা করতে পারেন।

নার্সের কথা কান পর্যন্ত পৌঁছাতে ই ইফাজ দ্রুত নার্সের সামনে যায়।

–জ্বি আমি..

-পেসেন্টের কী হন আপনি

ইফাজ কিছু বলে না,

-আপনি কিছু হন না তাহলে দেখা করতে আসেন কেনো?

-জ্বী আমি অতসীর হাসবেন্ড।

নার্স আর কিছু না বলে ইফাজকে কেবিনে ডুকতে দেয়। কেবিনে ডুকতে ই অতসীর মুখের দিকে চোখ যেতে ই নিজেকে বড় অপরাধী মনে হচ্ছিল। সাইডে থাকা চেয়ারটা টেনে অতসীর পাশে বসে অতসীর হাতটা ধরতে ই, অতসী চোখ মেলে তাকালো….

চলবে,

[ভুলক্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here