#প্রণয়ে_তুমি
#পর্ব_১৫
#writer_nahida_islam
অন্তু ব্যাপারটা বুঝতে পেরে রুহিকে ডেকে নিয়ে যায়। ইফাজ বসতে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
অতসী সুমির দিকে তাকিয়ে, ইফাজের ডান হাতটা নিজের হাতের মধ্যে আটকে নিলো অতসী।
-এতো হিংসুটে কেন তুমি?
অতসী সাথে সাথে হাত ছেড়ে বললো,
-তো যান সুমির কোলে গিয়ে বসে পড়েন। এতো পক্ষধারী করছেন।
– আমার কোন কথাটার মধ্যে লিখা আছে যে আমি সুমির পক্ষ নিলাম।
-বেশি কথা বললে আমি আপনার সাথে বসবো না।
-ওহ্ আল্লাহ মাফ করো তুমি, মুখ দিয়ে কোনো কথা বের করা মানে ই হচ্ছে জেনে বুঝে আগুনে ঝাপ দেওয়া। এমন বউ থাকলে শত্রুর প্রয়োজন আছে কি।
-যা ই বলছেন হেসে হেসে বলেন নয়তো সুমি ভাববে আমরা ঝগড়া করছি, শাচুন্নিটা এদিকে ই তাকিয়ে আছে। আর কোথাও যায়গা পেলে না আমার সোজাসুজি সিটে বসতে হলো।
-এতো হিংসুটে মেয়ে আমি জীবনে দেখিনি?
অতসী রাগি চোখে তাকিয়ে বললো,
-আবার?
-আমি হিংসুটে তো বিয়ে করছেন কেন।
-ইচ্ছে হইছে তাই।
অতসী দাত বের করে হেসে হেসে বললো,
-বলদ সাহেব আপনাকে বলেছি না হেসে হেসে কথা বলবেন, শাচ্চুনিটা আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
ইফাজ পাশ ফিরে দেখলো সুমি ঠিক ই ইফাজ আর অতসীর দিকে তাকিয়ে আছে।
-কী সুমি আফা পানি খাবেন, এভাবে আমাদের দিকে তাকাবেন না এতে আপনার নজর লেগে যেতে পারে।
-এই শয়তান মেয়ে থাপ্পড় দিয়ে কী করবো জানো।
ইফাজ মুচকি মুচকি হাসছে অতসীর কান্ড দেখে।
-আবার তাকিয়ে থাকতে দেখলে আপনার দিতে হবে না আমি ই থাপ্পড় দিয়ে দিবো।
ইফাজকে বেশ জ্বলাচ্ছিলো অতসী তাই বিরক্ত হয়ে ইফাজ ইয়ারফোন কানে খুজে গান শুনতে থাকে। বেশ কিছুক্ষণ যাওয়ার পর ইফাজ খেয়াল করলো পাশের মানুষটা বেশ শান্ত। কান থেকে ইয়ার ফোন খুলে ই অতসীর দিকে তাকাতে ই দেখলো ঘুমিয়ে পড়েছে। ইফাজ জানালা বন্ধ করে দিলো,
তাও অতসী ঠান্ডায় কাপছিলো, ব্যাগ থেকে অতসীর একটা ভারি ওড়না বের করে যতটুকু পেড়েছে ডেকে দিয়েছে।নিজের বাহুতে অতসীকে আবদ্ধ করে নিলো।
অতসী বড্ড পাগল, অনেক ছেলেমানুষী করে,
ভালোবাসার মানুষটি সামনে থাকলে তো এমন ছেলে মানুষি করতে ই ইচ্ছে করে। তাহলে কী আমি অতসীর মনে যায়গা করে নিয়েছি।
আনমনে কথাগুলো ভেবে ইফাজ হেসে দিলো। রাত তো প্রায় অনেক হলো গাড়ি চলছে তার গতিতে। আজকে না চাইতে ও অতসীর অনেকটা কাছে চলে এসেছে।
-ইফাজ ভাইয়া আপনি অতসীকে এমন ঝাপটে ধরে বসে আছেন কেনো। রাতের বেলা সুযোগ পেয়ে মেয়ে মানুষকে…
-এই রুহি থাম বইন মানুষ শুনলে আমার মানসম্মান থাকবে না।
-থামবে কী হে, আপনি অতসীকে এভাবে ধরে বসে আছেন কেনো?
-নিজের বউয়ের সাথে বসলে ও কি অনুমতি পত্র নিতে হবে।
রুহি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো,
-বউ মানে…
ইফাজ পকেট থেকে ফোনটা কোনো রকম বের করে বিয়ের কয়েকটা পি দেখালো।
-এখন বিশ্বাস হলো তো।
রুহি আর ইফাজের কথা শুনে অতসী ঘুম থেকে উঠে বললো,
-আপনারা দুজন কী শুরু করছেন হে?
-তুই ইফাজ ভাইয়াকে বিয়ে করেছিস আমাকে বলিসনি।
-রুহি টেনশন করো না আমরা আবার বিয়ে করলে তোমাকে ই প্রথম দাওয়াত দিবো।
-আবার বিয়ে করবেন মানে?
-আবার বিয়ে করবো অতসীকে তখন তোমাকে দাওয়াত দিবো।
-ইসস আবার বিয়ে করবো বললে ই হলো নাকি কদিন পর দেখবো কোলে বাচ্চা নিয়ে ঘুরছেন।
অতসী বড় বড় চোখ করে রুহির দিকে তাকিয়ে আছে। রুহি অতসীর ভাব দেখে দ্রুত গিয়ে নিজের সিটে বসে পড়ে।
-তোমার ফ্রেন্ড তোমার থেকে অনেক ফার্স্ট। দেখলে তো তোমার আগে ই ও বাচ্চার চিন্তা করে ফেলেছে।
অতসী ইফাজের মুখ চেপে ধরে বললো,
-আসতে কথা বলেন পাশের মানুষ শুনবে।
ইফাজ হাত ছাড়িয়ে নিলো।
-এতোক্ষণ শান্তিতে ছিলাম। কোন শয়তানের ধাক্কা দিয়ে যে রুহিকে এখানে পাঠিয়েছে আল্লাহ ই জানে
———————————–
ফজরের আযান দিতে ই গাড়ি এসে শাহজালাল পৌছে। ইফাজ অতসীকে কয়েকবার ডাকার পর ও অতসী ঘুম থেকে উঠে না। সারা রাত ইফাজের সাথে ঝগড়া করে কিছুক্ষন আগে মাত্র ঘুমিয়েছে। ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে অতসীর মুখে পানি ছিটাতে ই উঠলো,
-সমস্যা কী আপনার আমার সুখ সহ্য হয়না।
-ঘুরতে আসছো নাকি ঘুমাতে উঠো, চলে আসছি আমরা।
আমি আর কিছু বললাম না ইফাজকে এমনি সারা রাত জ্বালিয়েছি। গাড়ি থেকে নেমে অনেকটুকু হেটে শাহজালাল মাজারের ভেতরে যাই। সেখানে সবাই নামাজ পড়ে নেয়।
সাড়ে আটটার দিকে আমরা জাফলং পৌঁছায়। সবাই নাস্তা করে আস্তে আস্তে নিচে নামতে থাকি।
সন্ধ্যা পর্যন্ত ছয়টার বাসার উদ্দেশ্য গাড়ি ছেড়ে দেয়। কিন্তু আমরা কলেজের বাসে করে কিছুদূর আসার পর নেমে পড়ি অন্য গাড়ি করে ইফাজের গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হই।
অতসী
–
অন্তু আপুর ডাক শুনে আপুর দিকে তাকতে ই,হাসি দিয়ে বললো,
-কেমন ঘুরলে সারাদিন।
-আলহামদুলিল্লাহ আপু ভালো।
-আমাদের গ্রামের বাড়িতে কিন্তু অনেক মানুষ, সবাই জয়েন ফ্যামিলের মতো তুমি আবার ভয় পেয়ো না।
-আপু আমার জয়েন ফ্যামিলি অনেক ভালো লাগে, আমাদের ও জয়েন ফ্যামিলি ছিলো।
কথাটা বলে অতসী আটকে গেলো।
-তাই নাকি অতসী কখনো বললে না তো তোমার ফ্যামিলি সম্পর্কে
কোনো কথা বলে না বলে চুপ করে থাকলাম । না চাইতে ও বার বার অতীত কেন সামনে আসে তা ই বুঝে আসে না।
-কী হলো অতসী।
-ভালো লাগে না আপু ঐসব কথা বলতে?
-কেনো ভালো লাগে না অতসী যেহেতু তুমি বললে জয়েন ফ্যামিলি ছিলে তাহলে তো খুব মজা হতো তোমার ও তাদের কথা বলতে অবশ্যই ভালো লাগার কথা।
-হুম কিন্তু মায়ের মৃত্যুর পর আর ভালো লাগে না।
আনমনে ইফাজের কাধে মাথা রাখতে ই ঘুমিয়ে পড়লো অতসী।
ইফাজদের বাড়ির সামনে গাড়ি দাড় অনিতা বেগম তার জা-দের নিয়ে বাড়ির গেইটের সামনে আসে।
-এই তোমার ঘুম ছাড়া কিছু নাই নাকি।
-আপনার কোলে উঠে ঘুমালাম নাকি।
-তোমার এতো শখ থাকলে ঘুমানোর আগে বলতা কোলে নিতাম।
-হাতি একটা গাড়ি থেকে নামেন।
-আমি এখন ঘুম থেকে না উঠালে তো ঠিক ই তোমার আগে ভেতরে ডুকে যেতাম।
-বড্ড ঘুম পাচ্ছে, ঝগড়া করতে পারবো না।
-ঝগড়া যা করার করে ই ফেলেছো আর বাকি আছে নাকি।
-কি ইফাজ বউ নিয়ে কি নামবি না এই শপথ করে ই কী আসছিস নাকি
-না কাকিমা নামতে নিচ্ছিলাম সামনে এক পেত্নী দেখা পেয়েছি এই দেরি হচ্ছে।
-এই আমি পেত্নী।
-তোমাকে বলিনি চলো।
-নামবো না আমি আমাকে ই পেত্নী বলেছেন।
-এতো ন্যাকামো করো না, আমি যাচ্ছি গ্রামে কিন্তু সত্যি ভুত আছে, তুলে নিয়ে যাবে নে।
ইফাজের কথা শুনে অতসী দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে যায়। রাতের বেলা হলেও লাইটের আলোতে স্পষ্ট সব কিছু দেখা যাচ্ছে। অনিতা অতসীকে দেখে ই জড়িয়ে ধরলো, ইফাজের চাচিদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো। ইফাজের বড় চাচির হাতে একটা ডালা নিয়ে দাড়িয়ে আছে। সবাই ইফাজ অতসীকে মিষ্টি মুখ করিয়ে ভেতরে ডুকালো।
সকাল বেলা,
জানালার ফাঁকে দমকা হাওয়ার সাথে হালকা বৃষ্টি এসে মুখে পড়তে ই ঘুম ভেঙ্গে গেলো ।ইফাজের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ঘুমাচ্ছে। উঠে জানালার এক সাইডে বসে পড়লাম আহা কতোদিন পর এমন বৃষ্টি ঝড় একসাথে দেখছি। বাতাসে গাছগুলো হেলেদুলে যাচ্ছে, সামনে থাকা পিছ ডালা রাস্তা স্বচ্ছ কাচের ন্যায় ঝগঝগ করছে। হাত দিয়ে বৃষ্টি পানিগুলো অযথা ধরে রাখার ব্যর্থ চেষ্টা।
ঘাড়ে গভীর স্পর্শ পেতে ই লাফিয়ে উঠালম। পিছনে ঘুরে তাকাতে ই শান্ত হয়ে হলাম। উহু অন্য কেউ না আমি তারই অধিকার।ইফাজ চুলে মুখ ডুবিয়ে দিয়ে বললো, ভিজে যাচ্ছো তো।
বাহিরে দিকে তাকিয়ে বললাম, ভিজে গেলেই তো ভালো তারপর আমি অসুস্থ হব, ঠান্ডা জ্বর হবে। তারপর জ্বর থেকে টাইফয়েড হবে তারপর একদিন আমি মরে যাবো। তখন নতুন একটা বিয়ে করতে পারবেন।
ইফাজ এবার বেশ জোরে ই হাসি দিলো। কানের কাছে এসে বললো,
-তা এমন অদ্ভুত চিন্তা কে মাথায় ডুকালো মহারানীর।
-হাসলেন কেনো। ওহ বিয়ে করতে পারবেন শুনে হাসি পাচ্ছে তাই না
-হাসির কথা ছিলো তাই হাসলাম। তুমি চাইলে আমি এমনিতে ই বিয়ে করতে পারি। কিন্তু আমি শুধু তোমাকে ভালোবাসবো, অন্যদের মুখ ও দেখবো না।
ইফাজের দিকে তাকিয়ে ভ্রুকুচকে জিজ্ঞেস করলাম,
-ঢং দেখলে বাচি না, তাহলে বিয়ে করবেন কেন?
-এই যে তুমি বলেছো তাই। তুমি আমার একটা বউ হাজার হলেও তোমার কথা রাখতে হবে।
কথাটা বলেই ইফাজ ঠোটে আলতো করে চুমু খেলো।নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়ে বললো, জানিনা কেনো এতোটা কাছে চলে এসেছি একদিনে তবে তোমাকে পেয়ে আমার নিজেকে সৌভাগ্যবান ই মনে হচ্ছে। আমি চাই আমার তুমিটা যেনো সারাজীবন আমার ই থাকে। এমন সকাল প্রতিদিন কাম্য……
চলবে,
[ভুলক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন, আমার আইডি কিছু সমস্যা হওয়ায় গল্প দিতে লেইট হয়েছে। এখন থেকে নিয়মিত গল্প দেওয়ার চেষ্টা করবো]