#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#সিজন ২
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
#সূচনা_পর্ব
১
ফাঁকা রাস্তা কণাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে ৬-৭ ছেলে। সবার মুখেই অদ্ভুত হাসি। কণা ভয়ে নিজের জামা মুঠো করে রেখেছে। ভয়ে তার শরীর থর থর করে কাঁপছে। ঐ ছেলেগুলোর মাঝে একটা ছেলে কণার শরীরে তরল জাতীয় কিছু ছুঁড়ে মারে।
কণা স্তব্ধ হয়ে গেলো। তৎক্ষণাত ভেসে এলো কণার আর্তনাদ। গলা ফাটিয়ে চিৎকার করছে কণা। কণার চিৎকার কম্পিত হচ্ছে আশপাশ। মাটিতে লুটিয়ে পড়ে গলা কাটা মুরগির মতো ছটফট করছে কণা। কণার এমন আর্তনাদ শুনে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে ঐ ছেলেগুলো। কণার এমন আর্তনাদ শুনে তাদের পৈশাচিক আনন্দ হচ্ছে।
নায়ায়ায়ায়া
কণা ঘুম থেকে লাফিয়ে ওঠে। রুমে ড্রিম লাইট জ্বলছে। ড্রিম লাইটের আলোয় নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে ডুকরে কেঁদে ওঠে কণা। গত সাত মাস ধরে এই স্বপ্ন তাকে ঘুমুতে দেয় না। মেয়ের এমন চিৎকার শুনে দৌড়ে আসেন তাহসিন আহম্মেদ। রুমের লাইট অন করে দেখেন কণা হাঁটুতে মুখ গুঁজে কাঁদছে।
মেয়ের এমন করুন অবস্থা দেখে উনার বুকের ভিতর মুচর দিয়ে ওঠলো। তাহসিন আহম্মেদ গিয়ে মেয়ের পাশে বসলেন। কণা তাহসিন আহম্মেদের উপস্থিতি বুঝতে পেরে ঝাঁপিয়ে পড়ে তাহসিন আহম্মেদের বুকে। চিৎকার করে কাঁদছে কণা। নিরবে চোখের জল ফেলছেন তাহসিন আহম্মেদ। কণা কাঁদতেই কাঁদতেই এক সময় ঘুমিয়ে যায়।
তাহসিন আহম্মেদ কণাকে শুইয়ে দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। তারপর রুমের লাইট অফ করে দিয়ে বেলকনিতে চলে যায়। বেলকনির রকিং চেয়ারে বসে পড়ে। আজকে রাত আর উনি ঘুমাবেন নাহ। কতো রাত যে তিনি এভাবে নির্ঘুম কাটিয়েছেন তার ঠিক নেই। কণা মাঝে মাঝেই দুঃস্বপ্ন দেখে চিৎকার করে কেঁদে এক সময় ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে যায় সেই রাতে আর তাহসিন আহম্মেদের ঘুম হয় না।
২
অন্ধকারে একটা লোক বসে আছে। হাতে রক্ত মাখা নাইফ। যেই নাইফ দিয়ে একটু আগেই একটা ছেলের হাত কেটেছে। লোকটার সামনে একটা মেয়ের হাস্যজ্জ্বল ছবি। চাঁদের আবছা আলোয় মেয়েটির মায়বী চোখ দুটো দেখা যাচ্ছে। লোকটি নাইফ দিয়ে ছবির ওপর দাগ কাটে। নাইফ থেকে ফোটা ফোটা রক্ত ছবি দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে। লোকটি গুণ গুণ করে গেয়ে ওঠে,
হামে তুমসে পেয়ার কিতনা
এ হাম নেহি জানতে
মাগার জি ভি নেহি সাকতে
তুমহারে বিনা
হামে তুমসে পেয়ার কিতনা
লোকটি অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে। এই এক ভয়ঙ্কর হাসি। যেনো সবকিছু জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিয়ে বিজয়ীর হাসি হাসছে। মেয়েটার চোখের ওপর হাত বুলাতে বুলাতে বলে,
আমি সব কিছু ভুলে যাই যখন তোমার ঐ মায়াভরা চোখের দিকে তাকাই। আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলি তোমার মাঝে।
৩
ডান্স ক্লাস থেকে ফিরছে কণা। হঠাৎ পিছন থেকে একটা মেয়ের কথা তার কানে আসে,
মানুষ এতো কুৎসিত চেহেরা নিয়ে কীভাবে যে বাইরে ঘুরে বুঝতে পারি না? আমার এমন চেহেরা হলে ঘর থেকে বের হওয়া তো অনেক দুরের কথা এই মুখটাও কাউকে দেখাতাম না।
পাশের মেয়েটা বলে, আমি হলে তো কবেই সুইসাইড করতাম।
কণা পিছনে ফিরে একবার মেয়েদের দিকে চোখ বুলিয়ে নেয়। তারপর বেশ শান্ত গলায় বলে,
তোমাদের মতো কিছু মেয়ের কারণেই আজকে আমার এই অবস্থা। যারা অন্যায় করে তাদের ঘরে মুখ লুকিয়ে থাকতে হয়। আমি তো কোনো অন্যায় করি নাই। তাহলে আমি কেনো ঘরে মুখ লুকিয়ে থাকবো? যারা অন্যায় করে তাদের ঘরে মুখ লুকিয়ে থাকতে হয়। মুখ ঘরের কোণে লুকিয়ে থাকার দরকার তো তোমাদের। অথচ তোমরা বুক ফুলিয়ে সমাজে বসবাস করছো। তোমাদের মতো যদি আমার এই সব অশ্লীল ভিডিও ভাইরাল হতো তাহলে আমি গলায় কলসি বেঁধে নদীতে ঝাপ দিতাম। কথায় আছে না চোরের মায়ের বড় গলা। এই প্রবাদটা তোমাদের দ্বারাই প্রমাণিত।
কণা কথাগুলো শান্ত গলায় বললেও কথাগুলো ছিল অপমানজনক। অপমানে মেয়ে দুটোর মুখ লাল হয়ে গেছে। মেয়ে দুটো মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। তারা হয়তো কল্পনা করেনি। কণা তাদের এভাবে অপমান করবে। কণা আরেকবার মেয়েগুলোর দিকে চোখ বুলিয়ে নিজের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়।
যতই সবার সামনে নিজেকে শক্ত দেখাক ভিতরে ভিতরে সে ঠিকই কষ্ট পায়। যতই মানুষের অপমানের পাল্টা জবাব দেখ না কেনো কুৎসিত চেহেরা কথাটা তার ভিতরটা ক্ষত বিক্ষত করে দেয়। কণার চোখ দুটো টলমল করছে। পলক পড়লেই হয়তো চোখ থেকে গড়িয়ে পড়বে অশ্রু কণা। শুধু অপেক্ষায় আছে মালিকের অনুমতির। কিন্তু কণা তো কারো সামনে নিজের ইমোশন প্রকাশ করে না। তার রাগ, অভিমান, দুঃখ, কষ্ট সবকিছু সে তার বাবার সামনেই প্রকাশ করে। কণা দুই হাত দিয়ে চোখগুলো মুছে নেয়।
৪
কলিংবেল বাজাতেই তাহসিন আহম্মেদ দরজা খুলে দেয়। মেয়েকে দেখেই এক গাল হেসে দেই। কণা তার বাবার হাসি দেখে জোড় করে হাসতে গিয়েও হাসতে পারে না। কণা তাহসিন আহম্মেদকে পাস কাটিয়ে গিয়ে সোফায় বসে পড়ে। নিস্ফলক তাকিয়ে আছে সামনে রাখা পত্রিকার দিকে। পত্রিকার পাতায় আবারও ছাপানো হয়েছে এসিড নিক্ষেপের ফলে এক মেয়ের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে ঢেকে যাওয়ার ঘটনা।
তাহসিন আহম্মেদ বিষণ্ণ মন নিয়ে কণার পাশে বসেন। কণার চোখ জোড়ায় টইটম্বুর করছে নোনাজলে।
কী হয়ছে আমার মামুনির?
বাবা সব সময় আমার সাথে কেনো এমন হয়? ছোটবেলা থেকে মাকে পাইনি। বড় হয়ে নিজের চেহারাকে হারিয়ে এরকম কুৎসিত একটা চেহারা পেলাম। এখন প্রতি মুহুর্তে মানুষের অবহেলা অবঙ্গা পেয়ে যাচ্ছি। আমার সাথে কেউ মিশে না। কেউ বলতে চায় না। যে বন্ধুমহলের মধ্যমনি আমি ছিলাম। সেই বন্ধুমহল আমাকে দেখে মুখ ঘুরিয়ে চলে যায়। আয়নায় নিজেকে দেখলেও মনে হয় আয়না আমায় ব্যাঙ্গ করে বলছে, কী দেখতে এসেছো এখানে? নিজের বিকৃতি হয়ে যাওয়া কুৎসিত চেহারাটা। আরো কতো প্রতিবাদ করবো? আর কতো মানুষের অপমানের পাল্টা জবাব দিব। বাবা আমিই তো মানুষ আর কতো সহ্য করবো? আমার আর বাঁচতে ইচ্ছে করে না মানুষের অপমান অবহেলা নিয়ে। মরে যেতে ইচ্ছে করে।
এসব কী বলছো মামুনি? তুমি কেনো মরার কথা চিন্তা করছো? তুমি তো কোনো অন্যায় করোনি? তাহলে তুমি কেনো শাস্তি পাবে? শাস্তি তো তাদের পাওয়া উচিত যাদের জন্য আজকে তোমার এই অবস্থা। কিন্তু তারা তো দেখো ঠিকই নিজের পরিবার নিয়ে সুখে আছে। তাহলে তুমি কেনো নিজের জীবন শেষ করে দিবা? জীবন বড্ড কঠিন মা। এই সমাজে বাঁচতে গেলে প্রতিমুহূর্তে লড়াই করতে হয়। তুমি যদি লড়াই করে এই সমাজে নিজের পরিচিতি গড়ে তুলো। তাহলে তোমাকে দেখে তোমার মতো অনেক মেয়ে অনুপ্রাণিত হয়ে নিজের আধিপত্য বিস্তার করবে এই সমাজে। সমাজের মানুষদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিবে যাদের কুৎসিত চেহেরা নিয়ে তারা ঠাট্টা তামাশা করতো। তারাই আজকে তাদের ওপরে নিজের আধিপত্য বিস্তার করছে। আজকে যদি তুমি নিজের জীবনের কাছে হেরে গিয়ে সুইসাইড করো। তাহলে হেরে যাবে অনেক মেয়ে। কারো সাহস হবে না নিজের জীবনে এগিয়ে যাওয়ার। চোখের পানি মুছো আর মনের মাঝে সাহস যোগাও। দুঃখের পরই সুখ আসে। সমাজে নিজের পরিচয় গড়ে তুলো। আজকে যারা তোমাকে নিয়ে বিদ্রূপ করছে তারাই একদিন তোমাকে দেখে সম্মান জানাবে।
৫
ভার্সিটির ক্যাম্পাস দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় কণার চোখ দুটো ছলছল করে ওঠে। নিজের ভালোবাসার মানুষের সাথে অন্য একটা মেয়েকে দেখে কণার ভিতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে।
চলবে………..
[ আসসালামু আলাইকুম। সবাই কেমন আছেন? আবারও চলে এলাম নতুন গল্প নিয়ে। এই গল্পের সিজন ১ এর সাথে সিজন ২ এর কোনো মিল নেই। তাই কেউ সিজন ১ এর সিজন ২ মিলাতে গিয়ে বিব্রত হবেন নাহ। হ্যাপি রিডিং।]