#তুমি আসবে বলে
#অপেক্ষার প্রহর
#Sondha Halder
#পর্ব-২৯ (দ্বিতীয় অংশ)
আয়ানের কথা শুনে নিহিতা ঘাবড়ে যায় হ্যা সে আজ সকালে আয়ানের রুমে গিয়েছিলো আয়রাকে কিছু কথা বলছে। তাইলে কি আয়রা সব বলে দিয়েছে আয়ানকে। নিহিতা মির্জাকে ঘাবড়ে দেখে আয়ান সামান্য হেসে বললো..
আয়ানঃ ঘাবড়ে যাচ্ছেন কেন আপনি আর আয়রা কিছু বলে নিই আমাকে। আপনি সকালে যা যা বলেছেন সব নিজের কানে ও নিজের চোখে দেখেছি।
আয়ানের কথা শুনে নিহিতা তার দিকে প্রশ্নর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে আয়ান কি করে সব শুনলো আর দেখলো সে তো সেখানে ছিলো না। আয়ান বললো..
আয়ানঃ আমি কি করে জানলাম সেটাই ভাবছেন তো তাইলে বলছি। আমার রুমে সিসিটিভি ক্যামেরা আছে আর আয়রার গলায় যে লকেট আছে তা তেও মাইক্সফোন আর ক্যামেরা আছে। তাই আয়রা যা যা করে সব আমি আমার ফোনে দেখতে পাই আজ সকালে যা যা বলছেন সব আমি দেখেছি শুনেওছি।
আয়ানের কথা শুনে সবাই চমকে যায়৷ আয়ান এতো কিছু করেছে তা তারা ভাবতেও পারে নিই। আর আয়ান যে আয়রাকে এতো ভালোবাসে তারা কেও জানতো না। আয়ান হেটে তার ব্যাগ থেকে একটা রিপোর্ট জাতীয় কিছু নিয়ে এসে নিহিতার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে…আপনার সকালে প্রশ্নের সব উত্তর।
আয়ান সব জেনে গেছে ভেবে আয়রা শব্দ করে কান্না করে দেয় অন্তু তাকে ধরে রাখে। আয়ান আয়রা কাছে গিয়ে আয়রাকে জড়িয়ে ধরে বলে…
আয়ানঃ কেন এতো কষ্ট সহ্য করছো বলবে কেন? আমার জন্য তোমাকে কষ্ট পেতে হবে না। আমার জন্য আগে অনেক কষ্ট পেযেছো আর না প্লিজ তেমাকে সুখ দিতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলাম সরি আয়রা সরি পারলে ক্ষমা করে দিও।
আয়রা আয়ানকে শক্ত করে ধরে থাকে। আদি কিছু না বুঝতে পেরে আয়ানকে বললো… কি এমন আছে ওটাতে যাতে চাচির সব উওর পেয়ে যাবে মানে?
আয়ান আয়রাকে ছেড়ে উঠতে নিলে আয়রা তার হাত ধরে নিয়ে ইশারায় না বলতে বলে। কিন্তু আয়ান তাকে উপেক্ষা করে আয়রার হাত ছাড়িয়ে বলতে লাগলো…
আয়ানঃ তো মিসেস নিহিতা মির্জা আপনি বলবেন না আমি বলবো। ঠিক আছে আমি বলছি (আয়ান কাপা কাপা গলায় বললো) সকালে মিসেস নিহিতা মির্জা আমার রুমে এসে আয়রাকে বললে..
সকালে নিহিতা আয়রা রুমে গিয়ে দেখে আয়রা বেডে বসে বই পড়ছে তখন তিনি রুমে ঢুকে বলেন…
নিহিতা মির্জাঃ তো আমার ছেলেকে ছলে বলে তোমার করে এখন আয়েশে বসে বসে মজা করছো বুঝিয়ে।
নিহিতার কথা শুনে আয়রা প্রথমে বুঝতে পারে না কিন্তু পরে সব বুঝতে পেরে আয়রা উঠে গিয়ে নিহিতার সামনে দাড়িয়ে বলে… এসব আপনি কি বলছেন মা। আমি আয়ানে ছলচাতুরী করে এখানে আসিনি আয়ান আমাকে ভালোবেসে বিয়ে করে এখানে নিয়ে এসেছে।
নিহিতা মির্জাঃ জানি কেমন ভালোবাসো তুমি আমার ছেলেকে। যে মেয়ের নিজের জন্ম পরিচয় নেয় সেই মেয়ে আমাকে ভালোবাসা শিখাতে এসেছে।
আয়রা চোখে পানি নিয়ে বললো… মা আমার জন্ম নিয়ে প্লিজ কথা বলবে না আমি জানি আমার মা বাবা কে তাই এটা নিয়ে কথা বলবে না।
নিহিতা মির্জাঃ কেন বলবো না শুনি তুমি তো তোমার পালিতো মা বাবার কাছে মানুষ হয়েছো তার মানে তোমার জন্ম পরিচয় নেয় তাই না। আর সেই কারনে আমার ভোলা ভালা ছেলেকে ফাসিয়ে তাকে বিয়ে করে এই বাড়িতে এসে বসে খাচ্ছো।
আয়রা নিহিতার কথা শুনে শব্দ করে কান্না করতে লাগলো। নিহিতা বিরক্ত হয়ে বললো…
নিহিতা মির্জাঃ একটা সত্যি কথা বলতো এই যে তোমার পেটে যে বাচ্চাটা আছে সেটি আদোও আয়ানের না-কি তোমার কোনো নাগরে।
নিহিতা মির্জা কথা শুনে আয়রা হতবাক হয়ে যায়। একজন মা হয়ে একজন মাতৃত্ব কালিন মাকে এতো বড় প্রশ্ন কেমন করে করতে পারলো সে। তার সন্তানে পিতৃ পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন করতে পালেন আয়রা ধিরে ধিরে বেডে বসে পরলো তার মুখে কোনো কথা বলার ভাষা নেয় চোখ দিয়ে অঝরে অশ্রু পড়ছে। নিহিতা আবার বললো….
নিহিতা মির্জাঃ এতো ন্যাকামি করতে হবে না তোমাদের মতো মেয়েকে আমি বেশ জানি কোথা থেকে পেট বাধিয়ে আমার ছেলের নামে চালিয়ে দিচ্ছো। আমি বুঝি জানতে পারবো না এটা মনে করেছো। তোমাকে বলে দিচ্ছে যত দ্রুত সম্ভব এখান থেকে চলে যাও ভালোই ভালোই না হলে আমি কি করবো নিজেও জানি না…
বলে চলে যায় নিহিতা এদিকে আয়রা স্তব্ধ হয়ে বসে আছে। পেটে হাত দিয়ে হু হু করে কান্না করে দেয় এসব আয়ান তার ফোনে দেখে রাগে তার চোখ দিয়ে আগুন বের হয়। সে দ্রুত হসপিটালে গিয়ে সব রিপোর্ট নিয়ে আসে নিহিতা মির্জাকে দেখাবে বলে…
সব কথা শুনে সবাই হতবুদ্ধি হয়ে যায়। অরনি তার মায়ের দিকে ঘেন্না দৃষ্টি প্রয়োগ করে তার মা এতোটা নিচু মনের মানুষ সে আগে জানতো না। আদি অন্তু এখনো কিছু বলার ভাষা পাচ্ছে না একজন মা হয়ে অন্য একজন মা কে তার সন্তানের অস্তিত্ব নিয়ে কি করে প্রশ্ন করতে পারে কেউ। দিদুন মাথায় হাত নিয়ে বসে পড়ে। আয়রা আয়ানের কোমর জড়িয়ে কান্না করছে আয়ান তার মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করছে। দিদুন বললো…..
দিদুনঃ বউমা আমি কখনো ভাবতেও পারিনিই তুমি একজান মেয়ে হয়ে অন্য একজন মেয়েকে এতো বড় অপবাদ দিতে পাড়লে। একবারো তোমার বুক কাপলো না ভাবতে পাড়লে না ওই মেয়েটা পেটে তোমারি ছেলের অংশ আছে ছি আজ তোমাকে দেখে আমার ঘেন্না লাগছে। না জানি আর কি কি বলেছো এই ছোট মেয়েটিকে।
অন্তুঃ চাচি একটা বার বলার আগে ভাবলেন না ভাবির এই অবস্থায় এটা কতোটা কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তার শরীরের ওপর বাজে ভাবে ইফেক্ট করতে পারে। আল্লাহ না করুক বেবিটার কিছু হতো তখন কি জবাব দিতেন।
অরনিঃ আম্মু তোমার কাছ থেকে এটা আশা করিনি। জানি ভাবিকে তোমার পছন্দ না তাই বলে এতোটা নিচু মন্তব্য করলে ছি।
আদিঃ আয়ান আয়রাকে নিয়ে রুমে যায় ওর শরীর খারাপ করবে। এতো কান্না বেবির ক্ষতি হবে।
আয়ানঃ যাবো তো কিন্তু রুমে না এই বাড়ি থেকে। অনেক হয়েছে আর না আমি চায় না আমার সন্তানকে কেও জারবো বা অবৈধ বলুক। সে আমার অংশ পবিত্র আর বৈধ। তাই আমি চায় না ওকে নিয়ে কেও বাজে কথা বলুক।
বলে আয়রাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নেয়। আদি আয়ানের কাছে এসে বলে… ভাই দেখ একজনে ভুলের শাস্তি আমাদের কেন দিচ্ছিস?
আদির কথা শুনে আয়ান তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে সবার দিকে তাকিয়ে কাতর কন্ঠে বললো… দাদাভাই শুধু একজনে ভুলের শাস্তি না তো এখানে প্রত্যেকটি মানুষের ভুলের শাস্তি দিচ্ছি আমি। এখানে দাড়িয়ে থাকা মানুষদের কে জিজ্ঞেস করো আয়রা এই বাড়ি আসার পর থেকে তার সাথে ভালো ভাবে কেউ কথা বলেছে বা সময় কাটিয়েছে। আয়রা প্রেগন্যান্ট হবার বা তার আগে আমার রুমে কেউ গিয়ে আয়রার সাথে কথা বলেছে? কেউ জানতে চেয়েছে আয়রা কেন সবসময় রুমে একা একা থাকে। না কেউ যাই নি এমন কি আয়রা না খেয়ে থাকলেও কেউ বলেনি আয়রা চলো খেয়ে নাও। আমি বাড়িতে আসলে ওই মেয়ে আমার সাথে খায় আমি না আসলে না খেয়ে থাকে কিন্তু কেউ তা জানে না। আমার মা তাকে পছন্দ করে না আয়রা সব সহ্য করে নে কিন্তু আমার কাছে তার বিষয়ে কোন খারাপ কথা বলে না। কিন্তু আমার মা তার বিষয়ে আমার কান ভরে আমি চুপ করে সব সহ্য করে নিই। কিন্তু কেউ আয়রা বা আমার কথা ভাবে না সবাই সবার লাইফ নিয়ে ব্যস্ত। শুধু আয়রা ওই রুমের চারদেওয়ালে মধ্যে একা থাকে তার কষ্ট সুখ শুধু আমাকে নিয়ে আর কাউকে নিয়ে না।
আয়ানের কথা শুনে অরনি অন্তু মাথা নিচু করে নেয়। সবাই কম বেশি দোষ আছে এই বিষয়ে। আয়ান আদির দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে বললো…
আয়ানঃ জানো দাদাভাই ওই মেয়েটাকে আমি সুখ দেবো বলে নিজের সাথে জড়িয়েছি কিন্তু এখন মনে হয় আমার সাথে জড়িয়ে ওর জীবনের সব সুখ আমি কেরে নিয়েছি। আয়রাকে আমি এই বাড়িতে ২.৫ বছর আগে নিয়ে আসি তখন কেও মেনে নেয় না কিন্তু দিদুন, অরনি, অন্তু, আব্বু মেনে নিলেও দিদুন আর আব্বু ছাড়া তার দিকে কেউ খেয়াল রাখতো না কিন্তু সে কখনো নালিশ করে না সে একটুর মধ্যে সুখ খুজে নেয়। কিন্তু ১ বছর পার হয়ে এই বাড়িতে তখন নিজেকে একা একা মনে করতো কেমন যেন গুমরে গুমরে থাকতো তখন আমি বেশি সময় দিতে পারতাম না৷ কিন্তু এক দিন রাতে যখন আয়রাকে আমার পাশে না পায় তখন আমার অবস্থা খারাপ হয়ে ওকে খুজতে খুজতে দেখে বেলকনিতে বসে তার মা বাবার ছবি নিয়ে বসে কান্না করছে। যানো না দাদাভাই তখন মনে হচ্ছিল কেন মেয়েটাকে আমার জীবনে নিয়ে এসে এতো কষ্ট দিচ্ছি আমার জন্য ও এতো কষ্ট পাচ্ছে। আমি ওর কাছে গেলে আয়রা আমাকে ধরে কান্না করতে করতে বললো…
আয়রাঃ আয়ান আমার বেবি লাগবে আমি এই বাড়িতে একা একা থাকলে দম বন্ধ হয়ে মারা যাবো। আয়ান প্লিজ আমাকে একটা বেবি এনে দাও। যাকে ঘিরে সব সময় আমি মেতে থাকবো যাতে একলা না লাগে আয়ান।
আয়ানঃ তখন আমি কিছু বলতে পাড়ি নি শুধু আয়রার গুমরে থাকার কারন বুঝতে পারি। এই বাড়িতে অনেক মানুষ থাকা সত্ত্বেও সে একা ছিলো। আমি আয়রাকে নিয়ে ভালো ডক্টর দেখিয়ে অনেক চেষ্টা আর প্রতীক্ষার পর বেবিটা আমাদের জীবনে এসেছে। ডক্টর আমদের বলছে বেবিটার জন্য আয়রার জীবন নিয়ে টানা টানি হতে পারে কিন্তু আয়রা জেদ করে এই বেবি রেখেছে শুধু নিজের একাকিত্ব দূর করতে। কিন্তু তাকে নিয়েও এদের সমস্যা আয়রাকে ইচ্ছে করে সিড়ি থেকে ফেলতে চায় আমি সঠিক সময় না আসলে কি হতো আল্লাহ জানে তাই ওকে রুম থেকে বের হতে দেই নি আর আয়রা ওপর নজর রাখতে রুমে ক্যামেরা আর গলায় লকেটা দেই ওর সেফটি জন্য। আয়রা কি প্রয়োজন আমি দেখি আমি না থাকলে দিদুন আর মিনু খালা দেখে। কিন্তু বাড়িতে আরো মানুষ আছে তার সবাই নিয়ে লাইফে কষ্ট সুখ নিয়ে ছিলো আয়রাকে নিয়ে না। তারা শুধু আমার করা অন্যায় দেখলো কিন্তু তাদের দেখা সত্যি কতোটুকু সত্যি সেটা জানলো না, না বুঝলো তাদের দেখা পেছনের অন্য কোন সত্যি থাকতে পারে। না তারা আমার করা আঘাত গুলো দোষ আয়রার ওপর ফেলো ভালোই নিয়ম।
বলে কান্না করে দেয়। আয়ানকে এতোটা ভেঙ্গে যেতে এই প্রথম সবাই দেখলো। আয়ানের মধ্যে এতো কথা লুকিয়ে রেখেছে কেউ ঘুনাক্ষরে যানতে পারে না৷ আদি আয়ানের কাধে হাত রাখতে সে আদিকে ধরে কান্না করতে করতে বলে….
আয়ানঃ দাদাভাই আমি আয়রা কে ছাড়া থাকতে পাড়বো না ওর কিছু হলে আমি সত্যি মরে যাবো। ওই মেয়ে নিজের একটুও খেয়াল রাখে না নিজের মধ্যে কষ্ট দাবিয়ে রাখে ও। এতোটুকু বুঝতে পারছে না ওর কিছু হলে আমার কি হবে সে সবার কথা মানে সবার কষ্ট বঝে কিন্তু আমার কষ্ট বঝে না। একবার হারাতে হারাতে পেয়েছি এবার হারালে আমি মরে যাব…
আয়ান নিজের মধ্যে নেয় সে কি বলছে সে জানে না। তাই আদি আয়ানে শান্তি করে বুঝিয়ে আয়রাকে নিয়ে রুমে যেতে বলে। আয়ান আয়রাকে নিয়ে যেতে লাগলে কিছু একটা ভেবে পিছুন ঘুরে তার মার সামনে এসে দাড়িয়ে বললে…..
আয়ানঃ যদি কখনো এটা জানতে পারেন আপনার শরীরে যে রক্ত বয়ছে ঠিক সেই রক্তই আয়রার শরীরে বয়ছে তখন কি করবেন। নিজেকে ক্ষমা করতে পারবেন নিজের করা পাপ কে??
সবাই আয়ানের কথায় বিস্ময় হয়ে যায়। নিহিতা মির্জা অবাক চোখে বললো…মানে
আয়ান মুচকি হেসে বললো… বুদ্ধিমানদের ইশারাই যথেষ্ট। এখন আপনি বের করুন আমার কথার মানে। আর (অন্তু অরনির দিকে তাকিয়ে বললো) যদি কখনো সময় পাস তাইলে ভেবে দেখিস তোদের দেখার মধ্যে কোথাও ভুল ছিলো না তো। তােদের চোখের আড়ালে কোন বড় সত্যি লুকিয়ে আছে না তো। আমার শুধু একটাই কথা যেদিন সত্যি জানবি সেদিন তোরা আমাকে হারাবি হাজার মাফ চাইলেও ক্ষমা পাবিনা।
বলে আয়রাকে নিয়ে তাদের রুমে চলে যায়। এদিকে অন্তু আয়ানের কথা ভাবছে সত্যি কি তাদের দেখার মধ্যে কোন ভুল ছিলো। তাদের অগোচরে কোনো বড় সত্যি লুকিয়ে আছে না তো আয়ান এমন কের বলে গেলো কেন। সে কি সব সত্যি জানে জানলে বলছে না কেন? কিছু বুঝতে পাড়ছে না।
সত্যি যা চোখে দেখি সব সময় তাই সত্যি হবে তা কখনো হয় না আড়ালেও অনেক সত্যি লুকিয়ে থাকে। যেটা একদিন না একদিন বেরিয়ে আসে তখন তার করা অপরাধের জন্য হাজার ক্ষমা চাইলোও সব ঠিক হয় না। তাইলে কি অন্তু দেখার মধ্যে ভুল ছিলো আয়ান যা বললো কি ছিলো সেটা…..
#তুমি আসবে বলে
#অপেক্ষার প্রহর
#Sondha Halder
#পর্ব-৩০
আজ ৭দিন হয়ে গেছে ওই ঘটনার মির্জা বাড়ির অবস্থা কেমন মন মরা। এই ঘটনা যখন আকাশ মির্জা কানে যায় তিনি নিহিতা মির্জা সাথে কথা কাটা কাটি হয় এই বিষয়ে, এক পর্যায় নিহিতা মির্জা রেগে তার বাপের বাড়ি চলে যায় আকাশ মির্জাও তাকে আটকায় নি, না এই বাড়ির বাকি কেউ। আকাশ মির্জা আয়রার কাছে ক্ষমা চায় নিহিতার ব্যবহারে, আয়রা আকাশ মির্জাকে এতোটা অসহায় এই বাড়িতে এসে কখনো দেখেনি। আয়রা আকাশকে নিজের কাছে ক্ষমা চায়তে মানা করে আর বললে…
আয়রাঃ বাবা আমি মার কথায় কষ্ট পেয়েছি কিন্তু আপনি আমার কাছে ক্ষমা চেয়ে আমারকে লজ্জিত করছেন। যেখানে আপনার কোন দোষ নেই তাই ক্ষমা চায়বেন না প্লিজ।
সেদিন আয়রার ব্যবহৃারে আকাশ মুগ্ধ হয়। মেয়েটা কতোটা বুদ্ধিমান সে বুঝতে পারে আকাশ আয়রার মাথায় স্নেহময় স্পর্শ করে। আজাদ মির্জা নিজের কাজে ব্যস্ত থাকে তার বাড়ির ঘটনা নিয়ে কোনো মাথা ব্যাথা নে তার। আদি আয়ানকে বুঝিয়ে বাড়ি থাকতে বলে আয়ান আদির কথায় বাধ্য হয়ে থেকে যায় কিন্তু নিহিতা মির্জাকে নিয়ে আর কোন কথা বলে না। অন্তু বার বার শুধু আয়ানের কথা গুলো ভাবতো কি আছে তার কথাতে সে বুঝতে পারতো না। অরনি তার মায়ের সাথে কথা বলে না আর নিজের মধ্যে থাকে কিন্তু আয়রার সাথে এখন সময় কাটায় তার কি লাগবে না লাগবে তার খেয়াল রাখে কিন্তু আয়ান না থাকেল…..
_________________________________
প্রাপ্যঃ অরুসোনা কান্না করে না। দেখো আমার দিকে তাকাও।
বলে অরনির মুখ তার দিকে ঘুড়ায় প্রাপ্য, অরনি চোখ ভর্তি জল নিয়ে প্রাপ্য প্রাণে তাকালে প্রাপ্য বুকে মোচর দেয়। মেয়েটা আসার পর থেকে কান্না করছে সে অনেক চেষ্টা করেও কান্না বন্ধ করতে পারে নি। প্রাপ্য অরনিকে বুকে নিয়ে বলে…..
প্রাপ্যঃ অরুসোনা আমাকে না বলে আমি বুঝবো কি করে যে কি হয়েছে বললো।
অরনি চুপ করে থাকে কিছুক্ষণ তারপর এক এক করে তার বাড়িতে ঘটনা গুলো বলতে লাগলো সাথে আয়ান যে কথা শুলো বলেছে সব। সব শুনে প্রাপ্য শান্ত কন্ঠে বললো…..
প্রাপ্যঃ তোমার আম্মু যা করেছে তোমার ভাবির সাথে সেটা অন্যায়। একজান মেয়ে হয়ে অন্য একটা মেয়েকে আঘাত করা ঠিক হয় নি। তোমার ভাইয়া তোমার আম্মুর সাথে যে ব্যবহার করেছে সেটা তার প্রাপ্য ছিলো তার স্ত্রী কে নিয়ে বাজে কথা আর তার সন্তানের অস্তিত্ব নিয়ে যে প্রশ্ন করেছে এতে তোমার ভাইয়ের এমন রিয়েক্ট করাটা স্বাভাবিক। যদি আমার সন্তানকে বা তোমাক কেউ অপমান করে আমি ও ঠিক এই ভাবেই রিয়েক্ট করতাম।
প্রাপ্য কথা শুনে অরনি কান্নার বেগ বাড়তে লাগলো। প্রাপ্য অরনিকে কান্না করতে দিয়ে আবার বললো…
প্রাপ্যঃ অরুসোনা শোনো এমন তো হতে পারে ৪বছর আগে ভাব… অন্তু আপুর সাথে যা কিছু হয়েছে তার পেছনে অন্য সত্যি লুকিয়ে আছে। এমন তো হতে পারে আয়ান ভাইয়া এটা নিজের ইচ্ছা করে নি কেউ তার অসহায়তার সুযোগ নিয়ে তাকে দিয়ে করিয়েছে। একটা বার ভাবো পরে যদি সত্যি জানতে পারো আয়ান ভাইয়া কিছু করে নি তখন নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে না।
প্রাপ্য প্রতিটা কথা অরনি মনে গেথে যায় সে সব শুনে চুপ হয়ে যায়। অরনি প্রাপ্য বুক থেকে মাথা তুলে প্রাপ্য দিকে তাকিয়ে থাকে কিছু সময় প্রাপ্য মুচকি হেসে অরনির চোখের জল মুছে বলতে লাগলো…
প্রাপ্যঃ তোমার ছোট মাথায় কিছু ঢুকাতে হবে না। তুমি শুধু চেষ্টা করো আয়রা ভাবির খেয়াল রাখতে আর কিছু দিন পর তুমি ফুপিমণি হবে। তাই এসব না ভেবে ভাবির দিকে যত্ন নাও বুঝেছো।
অরনির নাক টেনে বললো অরনি ফিক করে হেসে মাথা নাড়ায়। প্রাপ্য আবার অরনিকে তার বুকে নিয়ে মনে মনে বলে… তুমি অনেক কিছু জানো না অরুসোনা যখন সব জানবে তখন নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে না। বলে কপালে ভালোবাসর স্পর্শ এঁকে দিলো অরনি মুচকি হেসে তাকে জড়িয়ে ধরে। (আসলে বাড়ির ঘটনার জেরে প্রাপ্যর সাথে দেখা বা কথা হয় না। আজ প্রাপ্যর সাথে দেখা করতে এসে সব বললো প্রাপ্যকে আর প্রাপ্য তাকে সামলালো)….
____________________________________
অন্তু আপনি ঠিক আছেন তো কথাটা বলে রোদ অন্তুর দিকে তাকায়। রোদের কথায় অন্তু তার দিকে তাকিয়ে মলিন হেসে বললো….
অন্তুঃ আমি ঠিক আছি। আমার কিছু হয় নিই।
রোদ অন্তুর কথায় সন্তুুষ্ট হলো না সে পুনরায় বললো… না আপনাকে কিছুদিন ধরে দেখছি কেমন মন মরা হয়ে আছেন। বাড়িতে কি কিছু হয়েছে।
অন্তুঃ না কিছু হয় নি।
বলে চুপ করে থাকে রোদ বুঝলো অন্তু কিছু বলবে না তাই সে ও চুপ করে গেলো। আজ আর্ট ক্লাস থেকে বাড়ির ফেরার পথে রোদ অন্তুকে এসব জিজ্ঞেস করছিলো। অন্তুর কোলে আনভি ঘুমিয়ে আছে অন্তু আনভির মাথায় হাত বুলাছে কিন্তু তার মন অন্য দিকে। সে কিছুতেই মন বসাতে পারছে না অন্য কিছুতে তার বার বার আয়ানের কথা গুলো মনে পড়ছে, আয়ানের বলা কথাতে রাগ, অভিমান, কষ্ট স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিলো। অন্তু আর ভাবতে পারছে না সব কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে তার কাছে, কি সত্যি কি মিথ্যা সে সে জানে না কিন্তু কিছুতো একটা আছে সে বুঝতে পারছে না….
________________________________
সন্ধ্যার দিকে,,,,
অন্তু আর অরনি আয়রার রুমে আসে দেখে আয়রা বসে আছে। অন্তু চার বছর পর এই রুমে এসেছে অনেক স্মৃতি আছে এখানে আয়ানের সাথে তার কিন্তু অরনি মাঝে মাঝে আসে ঠেলায় পরে। আয়রা তাদের কে দেখে অবাক হয় সবচেয়ে বেশি অবাক হয় অন্তুকে দেখে অরনি মাঝে মধ্যে আসলেও অন্তু কখনো তার রুমে আসে না। আয়রা উত্তেজিত হয়ে বললো…
আয়রাঃ তোমার আমার রুমে আসো আসো আমার পাশে বসো আমি বোর হচ্ছিলাম কিন্তু তোমরা এসে ভালো করেছো।
তারা দুজন মৃদু হেসে বেডে আয়রার পাশে বসলো। অরনি ইতস্তত করে বললো…ভাবি তোমার রুমে ক্যামেরা মানে ভাইয়া দেখছে বুঝি?
অরনি মুখ ছোট করে বললো আয়রা শব্দ করে হেসে বেড সাইড থেকে একটা ফোন বের কে তাদের সামনে দেখিয়ে বললো… তোমার ভাইয়া আজ তার ফোন থুয়ে আমার ফোন ভুল করে নিয়ে গেছে। তাই চিন্তা করো না সে দেখবে না।
হঠাৎ আয়রার হাতের চাপে ফোনের স্ক্রিনের আলো জ্বলে উঠে তখন অন্তুর চোখে পরে আয়ানের ফোনে ওয়ালপেপারে ছবির ওপর অন্তু বিস্ময় হয় তাকিয়ে আছে ছবির দিকে। সে ভাবতেও পারেনি আয়ান এখনো এই ছবি তার ওয়ালপেপারে রেখেছে। (ছবিটা এমন অরনি আর অন্তুর চুল বিনুনি করা সেটা আয়ানের দুহাত দিয়ে দুজনের চুল ধরে হাসছে আর তারা রাগি লুক দিচ্ছে ছবিটা আদি তুলে দেয়) অন্তু রুমটা ভালো করে দেখে তার চোখ যায় বুকসেল্ফের ওপরে সেখানে বই যের জায়গায় আছে আচারে কৌটা। যে ছেলে তার প্রতিটা বই তাদের হাত দিতে দিতো না যত্ন করে রাখতো সে এখন ওখানে আচার রেখেছে ভাবা যায়। অন্তু চাপা কন্ঠে আয়রাকে বললো…ভাবি ওখানে বই ছিলো কিন্তু এখন ওখানে আচার। কিন্তু ভাইয়া তো তার বই যত্নে রাখতো।
আয়রাঃ হে জানি কিন্তু আমার জন্য সে বাই গুলো কাটুনে করে অন্য কোথাও রেখেছে আর ওখানে আচার রেখেছে। আমি অনেক মানা করি কিন্তু আয়ান শুনলো না বলে বেবি আসার পর আমার দিয়ে না-কি সব বই আবার ওখানে রাখবে।
বলে হাসতে লাগলো সাথে অন্তু আর অরনি। অরনি আমতা আমতা করে বললো…ভাবি কিছু না মনে করলে একটা কথা বলবো?
আয়রাঃ বললো..
অরনিঃ আপনার সাথে ভাইয়ার কি ভাবে পরিচয় হয়। আমার ভাই যে রাগি আর মেয়েদের থেকে ১০হাত দূরে থাকতো সে তোমাকে তার জীবনের থেকেও কেমন করে ভালোবাসলো।
আয়রা হেসে বললো…হে তোমার ভাই অনেক রাগি কিন্তু তোমার ভাইকে আমি টাইট দিয়েছি। জানো প্রথম যেদিন আয়ানেকে দেখি সে দিন ওকে আমি কশিয়ে একটা থাপ্পড় মারি…
আয়রার কথা শুনে অন্তু অরনির চোখ বের হয়ে আসার ক্রম। আয়রা যা বলো তা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে আয়ানকে কেউ থাপ্পড় মারবে আর সে ছেড়ে দেবে ভাবা যায়। আয়রা তাদের অবস্থা দেখে বলতে লাগললো……
আয়রাঃ আমার প্রথম দিন ছিলো ভার্সিটিতে আমি আমার বান্ধবী মিম এক সাথে যাচ্ছিলাম হঠাৎ আমার ওরনায় টান পরতেই….
আয়রা আর মিম কথা বলতে বলে ক্লাসে যাচ্ছিলো তখন হঠাৎ আয়রার ওরনায় টান পরতেই সে কিছু না ভেবেই পিছন ঘুরে সামনে থাকা ব্যক্তিকে থাপ্পড় মারে। থাপ্পড়ের শব্দে সবাই তাদের দিকে তাকায় আর ভয় পেয়ে যায় কেন না আয়রা ভার্সিটির ভিপি আয়ান মির্জাকে থাপ্পড় মারে। আয়ান রেগে আয়রার দিকে তাকালে আয়রা বললো…
আয়রাঃ এটা কি ধরনের অসভ্যতামি আমার ওরনা ধরে টান দিলেন কেন আপনি।
আয়ান রাগে গজগজ করতে করতে বললে…আপনি দেখেছেন আমি ওরনা ধরে টান দিয়েছি?
আয়ানের কথাতে আয়রা ভরকে যায় ওরনার দিকে তাকিয়ে দেখে তার ওরনা গাছের সাথে লেগে আছে। আয়রা ভিতু মুখ নিয়ে আয়ানের দিকে তাকালে আয়ানের রাগি চোখ দেখে ভয় পেয়ে যায়। মিম এতখন এসব দেখে ভয়ে সেটিয়ে যায় সে আয়ানকে ভালো ভাবে জানে তাই আয়রা হাত ধরে নিয়ে যেতে যেতে বললো…
মিমঃ এটা কি করলি তুমি। তুই জানিসি উনি কে?
আয়রা মাথা নাড়িয়ে না করে সে আসলে যানে না। মিম মাথায় হাত দিয়ে বলে… ছেলেটা আয়ান মির্জা ভার্সিটির ভিপি আর আমাদের ডিপার্টমেন্ট ৩য় বর্ষের স্টুডেন্ট। তোর কপালে শনি আছে আয়রা বেবি।
মিমের কথা শুনে সত্যি আয়রার হাত পা কাপতে লাগলো। আয়ান যদি রেগে তার ভার্সিটি থেকে বের করে দেয় তাইলে কি হবে সে অনেক কষ্ট ভর্তি হয়েছে এখানে ভাবতেই চোখে জল জমতে থাকে। এদিকে আয়ান রাগে গা ঘিন ঘিন করছে মাথার চুল মুঠো বন্দী করে বললো…
আয়ানঃ মাহফুজ এই মেয়েটা সব ডিটেইল আমার চাই আজকের মধ্যে। এতো বড় সাহস হয় কি করে এই মেয়ের আমাকে এই আয়ান মির্জাকে থাপ্পড় মারা ওকে এর শাস্তি পেতেই হবে…
মাহফুলঃ ঠিক আছে আমি কালকের মধ্যে বলছি।
আয়ানঃ তুমি যে কেউ হও না কেন আমাকে থাপ্পড় মারার শাস্তি তোমাকে পেতে হবে মিস.
কথাটা বলে চলে যায় সেখান থেকে আর মাহফুজ আর তার দল শুধু শুনলো তারা জানে এই মেয়ের কপালে অনেক কষ্ট আছে। তারা সবাই চলে যায় এক এক করে…
#তুমি আসবে বলে
#অপেক্ষার প্রহর
#Sondha Halder
#পর্ব-৩১
হায় আল্লাহ করছো কি তুমি এটা প্রথম দেখায় থাপ্পড় মারলে। তাইলে তো তোমার কপালে সত্যি শনি পরেছে ভাবি বলে উঠলো অরনি অন্তু চোখ বড় বড় করে আয়রার দিকে তাকিয়ে আছে। আয়রা মুচকি হেসে বললো…
আয়রাঃ করেছে তো তোমার ভাইয়া। আমার জান প্রান জ্বলিয়ে দিয়েছিলো।
অন্তুঃ কি বললো কি করছিলো।
আয়রা মৃদু হেসে আবার বলতে লাগলো….
সেই কাহিনী হবার পর আয়রা ভয়ে ভয়ে থাকতো না জানি কখন আয়ান তার ওপর প্রতিশোধ নেবে ভেবে। একদিন মিম ভার্সিটিতে না আসায় আয়রা একা ক্লাস করতে বাইরে বের হলে কেও তাকে ধরে ফাঁকা ক্লাস রুমে নিয়ে যায়। হঠাৎ এমন হওয়ায় আয়রা ভয় পেয়ে যায় কিন্তু যখন আয়ানকে সামনে দেখে তখন আত্মা উড়ে যায় কেন না আয়ানের রাগি মুডে ছিলো। আয়রা কাদো কাদো মুখ করে বললো…
আয়রাঃ ভাইয়া সেদিনের জন্য সরি আমি ইচ্ছে করে করিনি প্লিজ। আপনি যদি বলেন আমি সবার সামনে ক্ষমা চেয়ে নেব কিন্তু আমাকে রাস্টিকেট করবে না। অনেক কষ্টে এখানে ভর্তি হয়েছি একটু বুঝুন প্লিজ।
বলে মাথা নিচু করে কান্না করতে লাগলো। এদিকে আয়রাকে কান্না করতে দেখে হতবাক হয়ে যায় সাথে অবাক চোখে আয়রার দিকে তাকিয়ে আছে। আয়রার কান্নাকৃত মুখের প্রাণে আয়ান মুগ্ধ নয়নে উপভোগ করছে তার কাছে আয়রা কে কান্নাপরী লাগছে। আয়ান আনমনে আয়রার কাছে গিয়ে আয়রার চোখের জল মুছে দিয়ে তার গালে টুপ করে চুমু খায়। এদিকে আয়ানকে কাছে আসতেই আয়রা অস্থির হতে লাগলো কিন্তু আয়ানের করা কাজে সে হতবিহ্বল হয়ে যায় তার শরীর ঠান্ডা জমে বরফ হয়ে যায়। আয়রা মুখ দেখে আয়ান হাতে লাগলো সে বলে…
আয়ানঃ তোমাকে আমি বের করবো না কিন্তু ছাড়বো না। আজ থেকে তুমি আমার মনে বন্দী এখান থেকে ছাড়া পাবে না আর একটা কথা আমার থেকে দূরে যাবার চেষ্টাও করো না এর ফল ভালো হবে না।
বলে আয়রাকে কিছু বলতে না দিয়ে চলে যায়। এদিকে আয়রা আয়ানের কথা শুনে থ মেরে যায় কি বলে গেলে সে আগা মাথা কিছু বুঝলো না কিন্তু এটা বুঝতে অসুবিধা হলো না আয়ান তাকে ছাড়বে না কিছুতেই।
আয়রার কথা শুনে অন্তু আর অরনি বিস্ময় হয়ে যায়। অরনি নিজের হাতে চিমটি কেটে দেখে সত্যি কি না হাতে ব্যাথা পেতেয় মৃদু চিতকার দিয়ে বললে…
অরনিঃ ভাবি কি বললো দ্বিতীয় দেখাতে কিস ও মাই গড। দিদিয়া আমায় ধর আমি গেছি।
বলে অন্তুর দিকে পরতে নিয়ে অন্তু ধরে নেয়। আয়রা আবার বললে…
ওই ঘটনার পর থেকে ভার্সিটির সবাই তাকে ভাবি ভাবি করে ডাকতো। কিন্তু আয়রা আয়ানের থেকে দূরে দূরে থাকতো কিন্তু আয়ান আয়রার সব সময় নিজের কাছে কাছে রাখার চেষ্টা করতো। আয়রা সব খবর আয়ান নেয় সে জানতে পারে আয়রার যার কাছে মানুষ হচ্ছে তারা তার আসল মা-বাবা না তারা তার মামা-মামী আর তার আসল মা-বাবা মারা গেছে। আয়রার মামী একটা খানাস মহিলা আয়রাকে দিয়ে সব কাজ করাতো ঠিক মত খেতে দিতো না পড়াশোনাও করাতে চায় নি কিন্তু আয়রার নিজের চেষ্টায় করছে। সব শুনে আয়ান আয়রার প্রতি দূর্বল হতে লাগলো দেখতে দেখতে কয়েক মাস হয়ে যায়। আয়ান আয়রাকে তার মনে কথা বলতে আয়রাকে নিয়ে নিরিবিলি জায়গা যায়।
আয়ানঃ দেখ আমি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কথা বলতে পারি না তাই সোজা সুজি বলছি। আমি তোমাকে ভালোবাসি অনেক ভালোবাসি। আমি তোমার বিষয় সব জেনে তোমার কাছে এসেছি এখন তুমি বলো কি করবে।
আয়রাঃ আমাকে দয়া দেখাছেন হে আমি কষ্টে আছি বলে আমাকে দয়া দেখাছেন। আপনি বড় লোকের ছেলে এখন আমার আপর মন পরেছে তাই ভালোবাসি বলছেন কাল অন্যর ওপর মন পরলে তাকে বলবেন তখন আমার কি হবে। আমি তো সব দিয়ে হারাবো তাই বলছি আমার থেকে দূরে থাকবেন।
বলে ওখান থেকে চলে যায়। আয়ান আয়রার কথা শুনে থ মেরে দাড়িয়ে থাকে আয়রা বলা কথা তার মনে কষ্ট হচ্ছে কিন্তু সে আয়রাকে জোর করবে না তার জন্য অপেক্ষা করবে। আয়ান এরপর আয়রার থেকে দূরে দূরে থাকতো কিন্তু আয়রা আয়ানের অনুপস্থিত কেমন কাদাতো তাকে। আয়ান দূর থেকে আয়রাকে খেয়াল রাখতো, তার পিছু নিতো কিন্তু আয়রাকে বুঝতে দিতো না। এর মাঝে আয়রার ফর্ম ফিলাপের ডেট দেয় কিন্তু আয়রা টাকার সমস্যা জন্য সেটা ফিলাপ করতে পারে না, তাই প্রিন্সিপালের কাছে বলে কিন্তু সেও কিছু করতে পারে না। আয়রা হতাশ হয়ে যায় এসব কথা আয়ানে কানে গেলে সে সব ব্যবস্থা করে। এসব কথা যখন আয়রা জানতে পারে তখন আয়রা আয়ানকে খুজতে লাগে অনেক খুজে দেখে তার দল নিয়ে গাছের নিচে দাড়িয়ে কথা বলছে আয়রা সেখানে গিয়ে আয়ানকে বললে….
আয়রাঃ আপনার সাথে কিছু কথা বলতে চায় আপনার কি সময় হবে।
আয়ান আয়রাকে দেখে বুঝতে পারে সে টাকার নিয়ে কথা শোনাবে তাই বললো…বলো..
আয়ানকে ভুল প্রমাণ করে আয়রা সবার সামনে আয়ানকে জড়িয়ে ধরে তার গালে চুমু দিয়ে বললো… আই লাভ ইউ….
বলে দৌড়ে চলে যায় এদিকে সবাই চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে সব কান্ড দেখতে লাগলো। এদিকে আয়ান আয়রার কাজে হতবাক আয়রা যে এটা করবে ভাবতেও পারে নি আয়ান। আয়রা চলে যেতেই আয়ান হেসে ফেলে। তাদের দল থেকে একজন বললো…মামা ভাবি তো তার মনের কথা বলে চলে গেলো।
আরেক জন্যঃ হে মামা এখন তো চুটিয়ে প্রেম হবে।
আয়ান সবাইকে ধমুক দেয় তারা সবাই চুপ হয়ে যায়। তারপর শুরু হয় আয়ান আর আয়রা চুটিয়ে প্রেম। দেখতে দেখতে আয়রা ৩য় বর্ষ আর আয়ানের ফাইনাল এক্সাম চলে আসে। হঠাৎ আয়রা মামী তার বিয়ে দিতে চায় তখন আয়ান কাওকে কিছু না বলে আয়রাকে বিয়ে করে নেয় আর যে আয়রাকে বিয়ে করতে চায় তাকে মেরে ভয় দেখিয়ে পগার পার করে…
আয়রাঃ বুঝলে তো তোমার ভাইয়া আমাকে কি কি করে তার জীবনে এনেছে।
অরনিঃ হে বুঝতে পেরেছি আগে কেন সব সময় এতো ফোনে ফুসফুস করে কথা বলতো। তাই না দিদিয়া।
অন্তুঃ হে ঠিক আমার তো এক দিন ভাইয়াকে চেপে ধরেছিলাম কিন্তু সে আমাদের কে মিথ্যা বলে পালিয়ে যা। এখন বুঝলাম সেদিন তোমার সাথেই কথা বলছিলো।
অন্তুর কথা শুনে আয়রা হাসতে লাগলো। হঠাৎ সেখানে আয়ানের আগমন হয়ে হাতে ৩টা প্যাকেট নিয়ে এসে বললো…
আয়ানঃ আয়রা এই নাও তোমার রসমালাই..
বলে সামনে তাকাতেই বিস্মিত হয় অন্তু অরনিকে দেখে। এদিকে আয়ানের কন্ঠ শুনে সবাই তার দিকে তাকায়। অন্তু মাথা নিচু করে নেয় আয়ান মাথা চুলকিয়ে ভেতরে এসে আয়রার দিকে প্যাকেট গুলো এগিয়ে দিলো তার চোখের ইশারায় কি যেন বলো তা দেখে আয়রা হেসে ফেলে। আয়ান বললো…
আয়ানঃ তুমি রসমালাই খাও আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
বলে ওয়াশরুমের দিকে গেলে আয়রা জোরে বললো… আয়ান টাওয়াল আর জামাকাপড় না নিয়ে কোথায় যাও। আমি কিন্তু দিতে পারবো না নিজে নিয়ে যাও।
বলে ঠোঁট চেপে হাসতে লাগলো প্রতি বার ভুলে যায় সব কিছু নিতে তখন আয়রাকে দিতে হয়। আয়ান সব কিছু নিয়ে ওয়াশরুমের চলে যায়। এদিকে তাদের কে দেখে অন্তু অরনি হাসতে লাগলো। আয়রা রসমালাই বক্স খুলে খেতে লাগলো তখন অরনি বললো…
অরনিঃ ভাবি ভাইয়ার তো রসমালাই পছন্দ করে না সে বাড়িতে ও কখনো রসমালাই নিয়ে আসে না।
আয়রাঃ জানি কিন্তু আমার পছন্দ তাই নিয়ে আসে। ও দাড়াও (বলে বাকি প্যাকেট অন্তুকে একটা আর অরনিকে একটা দিলো আর বললো) এসব তোমাদের, অন্তুর কালোজামা আর অরনির জিলাপি আছে তোমরা নিলে খুশি হবো।
তারা প্যাকেট নিয়ে কিছুখন কথা বলে চলে যায় আর আয়রা খেতে লাগলো। কিছুখন পর আয়ান মাথা মুছতে মুছতে বেরিয়ে দেখে অন্তু অরনি নেয় তখন আয়ান বললে…
আয়ানঃ ওরা চলে গেছে।
আয়রাঃ হ্যাঁ
আয়ান টাওয়াল রেখে রুম লক করে এসে আয়রার কোলে মাথা রেখে বেবির সাথে কথা বলতে লাগলো আর মাঝে মাঝে আয়রার পেটে চুমু খেতে লাগলো। আয়রা আয়ানের কাজে হাসতে লাগলো আর আয়ানের মাথায় হাত বুলাতে লাগলো। আয়ান বললো…
আয়ানঃ ওরা কেন এসেছিলো
আয়রাঃ আমার সাথে গল্প করতে
আয়ান আর কিছু বললো না আর না আয়রা। আয়ান ভালো করে শুয়ে আয়রাকে বুকে নিয়ে শুয়ে থাকে আয়রা কিছু বলতে চেয়েও বলো না। সে জানে এখন আয়ান ক্লান্ত তাই চুপ করে থাকে। এক সময় তারা দুজনি ঘুমিয়ে যায়…..
__________________________________
রোদঃ হ্যাঁ আমি বুঝছি তোমার কথা কিন্তু আমি এখন কি করবো বলো। যে ফাইলটা আমার কাছে ছিলো সেটা এখন নেই সেই ফাইল এখন মির্জাদের হাতে।
রোদ ফোনে কারোর সাথে কথা বলতে বলতে সারা ঘর পায়চারি করছে। ওপাশ থেকে কিছু বলে রোদ আবার বলে…
রোদঃ আমি জানি ফাইলটা ইম্পর্টেন্ট ছিলো আমি তো বিশ্বাস করে ফাইলটা নিউজপেপারের ছাপাতে দিয়েছিলাম কিন্তু হলো তার উল্টা। কিন্তু এতো টেনশন করে লাভ নেয় ফাইলটার আরেক কপি আছে সেটা কেও জানে না।
ওপাশ থেকেঃ————-
রোদঃ হুমম কাল আমাদের সবাইকে মির্জা বাড়িতে দাওয়াত আছে। আমাদের প্রজেক্ট দ্রুত কাজ হচ্ছে তাই আদি মির্জা আমাদের তাদের বাড়িতে দাওয়াত দিয়েছে।
ওপাশ থেকেঃ—————
রোদঃ আনভি ভালো আছে। অন্তুর সাথে মিশে গেছে আনভি আর অন্তুও আনভির প্রতি দূর্বল হয়ে গেছে।
ওপাশ থেকেঃ————–
রোদঃ দাড়াও দিচ্ছি আনভিকে। সে এখন ঘুমানো বাদে পুতুল খেলছে (বলে আনভির কাছে গিয়ে বললে) আম্মু মামু ফোন করেছে কথা বললো।
আনভি চোখে মুখে খুশির নিয়ে ফোন নিয়ে কথা বললো… মামু এতো দিন পর আমার কথা মনে পরলো বুঝি।
ওপাশ থেকেঃ——–
আনভি মুখ গোমরা করে বললোঃ হে তোমার এক কথা শুধু তুমি আমার সাথে দেখা করতে আসো না কখনো শুধু ফোনে কথা বললো। মামু তোমাকে তো আমার দেখতে ইচ্ছে করে তাই না।
ওপাশ থেকেঃ———–
আনভি উচ্ছাস নিয়ে বললোঃ সত্যি তুমি আসবে ঠিক আছে আমি ওয়েট করবো। পাপার সাথে কথা বললো।
রোদ ফোন নিয়ে বললোঃ ঠিক আছে রাখছি সাবধানে কাজ করবে আর পারলে মির্জার কালো ব্যবসা সম্পর্কে যা যানা হয়েছে সব ধরে ধরে সবার সামনে নিয়ে আসো।
ওপাশ থেকেঃ——————
রোদঃ কালকের জন্য তৈরি থাকলাম আশা করি কাল কিছু একটা হবে। তুমি কাল ছোট একটা বোম ফেলো আমি তার চেহারা রং পাল্টেতে দেখতে চাই। বাই..
বলে ফোন রেখে দেয় রোদ তারপর আনভিকে পুতুল খেলতে দেখে হাসলো মেয়েটা ঘুমানো বাদে এখন পুতুল খেলবে বলে জেদ ধরেছে। মেয়েটা পুরোই মায়ের মতো জেদ পেয়েছে যখন যা বলবে তখন তাই করবে। রোদ মনে মনে কালকের জন্য ছক কোশলো, কাল কিছুটা মির্জার চেহারা রং পাল্টেতে পারলে তার মনের ক্ষত মিটবে। রোদ আনভির টেন্ট ঘরে এসে আনভিকে কোলে নিয়ে বেডে শুয়িয়ে বলে…
রোদঃ আম্মু এখন খেলে না অনেক রাত হয়েছে আর কাল তো ভালো আন্টি বাড়ি যাবো তাইলে না ঘুমালে যাবে কেমন করে।
আনভিঃ তুমি ঠিক বলেছো পাপা এই তো আমি ঘুমালাম।
বলে চোখ বন্ধ করে নেয় আনভির কান্ড দেখে রোদরে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটলো। লাইট বন্ধ করে আনভিকে বুকের সাথে লেপ্টে নিয়ে পাড়ি জমায় ঘুমের দেশে…..
#তুমি আসবে বলে
#অপেক্ষার প্রহর
#Sondha Halder
#পর্ব-৩২
সকাল থেকে নানান আয়োজন চলছে মির্জা বাড়িতে। নানান রকমের খাবারের আয়োজন হয়েছে, হবেই না কেন দুপুর চৌধুরী পরিবারের দাওয়াত আছে মির্জা বাড়িতে। আদি রোদকে অনেক রিকুয়েস্ট করে তাদের বাড়িতে আসতে রোদ আর মানা করতে পারেনি তাই সে বাধ্য হয়ে হ্যা বলে। সকাল থেকে আজ মির্জা বাড়ির আয়ান বাদে প্রতিটা মানুষ বাড়িতে উপস্থিত আছে এমনকি নিহিতা মির্জা ও। নিহিতা মির্জাকে যখন কেউ নিতে যায়নি এবাড়ি থেকে তার বাবার বাড়িতে তখন তিনি নিজে চলে আসেন এবাড়িতে কিন্তু আকাশ মির্জা নিহিতার বাড়িতে আসা নিয়ে কোন কথা বলে নি, আর না বাকি কেউ বলেছে। আয়ান নিহিতা মির্জা সাথে কথা বলে না এতে নিহিতা মির্জা কষ্ট পেলেও আয়রাকে সে এখনো এর জন্য দোষ দেয়।
দেখতে দেখতে দুপুর হয়ে যায় রোদ তার পরিবার নিয়ে মির্জা বাড়ির সদরদরজা দাড়িয়ে আছে আনভি তার হাত ধরে দাড়িয়ে আছে পাশে প্রাপ্য মিষ্টি নিয়ে দাড়িয়ে আছে। রোদ পুরো মির্জা বাড়ির একবার চোখ বুলিয়ে দেখে নিয়ে তার ঠোঁটে ফুটে উঠলো বাঁকা হাসি। তারা সবাই বাড়ির ভেতরে গেলে আদি তাদের স্বাগতম করে বসতে বলে তারা সবাই বসলে আদি বলে…
আদিঃ আসতে অসুবিধা হয় নি তো?
রোদ হালকা হেসে বললো…. না
ড্রইংরুমে একে একে সবাই আসলে আদি তাদের সাথে পরিচয় করাতে বললে….
আদিঃ রোদ ইনি আমার দিদুন (আয়েশা মির্জা কে দেখিয়ে বলল)
রোদ মুচকি হেসে সালাম দিয়ে বললো… কেমন আছেন দিদুন। সরি আমি দিদুন বলাম আপনি কিছু মনে করবেন না।
দিদুন হাসি মুখে বললো…. না বাবা তুমি তো আমার নাতির মতো আমাকে দিদুন বলতে পারো আমি কিছু মনে করবো না। আর আমি ভালো আছি তুমি?
রোদ হেসে উত্তর দিলো। আদি একে একে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে আজাদ মির্জার সাথে পরিচয় করাতে নিলে রোদ কিঞ্চিৎ বাঁকা হসে কথা বলে রোদ….
রোদঃ আপনাকে কেই না চেনে আপনি তো জনগনের সম্মানিত নেতা। আপনাকে গরীব দুঃখীর কষ্ট ঘুচানোর কথা কেই না জানে। আপনার মতো সৎ নিষ্ঠাবান নেতা একজনো দেখি নি।
রোদর বাকা কথা উপস্থিত কেউ বুঝতে পারলো না। আজাদ মির্জা হেসে বললো…
আজাদ মির্জাঃ কি যে বলো বাবা আমি তো সামান্য জনগনের কর্মচারী আমি আমার কাজ করি তারা আমাকে একটু সম্মান করে তাই যথেষ্ট। তোমার ও অনেক নাম শুনেছি অল্প বয়সে এতো বড় বিজনেস করেছো এটা কি কম কথা। তা তোমার বাবা এলো না?
রোদঃ বাবাই কিছু কাজের জন্য বিদেশে গেছে কিছু দিনের মধ্যে চলে আসবে। আর এই হলো (প্রাপ্য কে দেখিয়ে বললো) আমার ভাই প্রাপ্য। কিছু দিন আগে অফিস জয়েন্ট করেছে আর আদির প্রজেক্ট ওই দেখা শোনা করে।
প্রাপ্য তাকে সালাম দেয় আজাদ মির্জা প্রাপ্য সাথে কথা বলে। টুকি টাকি সবার সাথে কথা হয় কিন্তু আনভি এক মনে বসে আছে তার বোর লাগছে বড়দের কথার মাঝে সে শুধু ভালো আন্টিকে খুজছে কিন্তু সে তাকে পায়নি তাই মন খারাপ করে আছে। দিদুন আনভিকে দেখে রোদকে বললে…
দিদুনঃ রোদ এই মিষ্টি মেয়েটা কে তার সাথে তো পরিচয় করালে না?
রোদঃ দিদুন ও আনভি আমার মেয়ে। আম্মু বড়দিদার কাছে যাও।
আনভি পাপার কথা শুনে দিদুনের কাছে গেলে সে আনভিকে আদর করতে লাগলো আর বললো… রোদ তোমার মেয়ে ভারি মিষ্টি।
রোদঃ হে দিদুন।
সবাই আনভিকে নিয়ে মেতে উঠলো এক এক করে সবাই তাকে আদর করতে লাগলো এতে আনভি বিরক্ত হয়ে বললো…
আনভিঃ উফ তোমার আমাকে এতো এতো আদর করো না আমি বিরক্ত হচ্ছি। আমার গালটা লাল হয়ে গেলো চুমু খেতে খেতে…[বলে তার গালে হাত বুলাতে লাগলো]
আনভির কথা শুনে সবাই হাসতে লাগে। এতটুকু মেয়ে কি পাকা পাকা কথা। সবাই মুগ্ধ হয়ে আনভির কথা শুনে অরনি এসে আনভিকে কোলে নিয়ে বললো…
অরনিঃ এতো পাকা পাকা কথা কোথা থেকে শিখেছো আনভি বেবি।
আনভিঃ আমাকে বেবি বলবে না আমি মোটেও বেবি না। আমি যথেষ্ট বড় হয়েছি…[ হাত বুকে গুজে ফুল অ্যাটিটিউড নিয়ে বললো]
আনভির কথা শুনে সবাই উচ্চ স্বরে হাসতে লাগলো এতে আনভি নিজেকে ইনস্টল মনে করে মুখ গোমরা করে রাখলো। আজাদ মির্জা অরনিকে বলে আনভিকে তার কাছে দিতে অরনি আনভিকে তার কাছে দিলে সে আনভিকে কোলে নিয়ে বললে…
আজাদ মির্জাঃ তা দাদুভাই তোমার বুঝি আদর খেতে মন চায় না।
আনভিঃ খাতে চায়বে না কেন চায় তো কিন্তু এতো না যে ছোট একটা বাচ্চাকে তোমার আদর করে করে মেরে ফেলবে।
আজাদ মির্জাঃ তাই সবাইকে বলে দিচ্ছে তোমাকে যেনো আর না আদর করে এবার একটু হাসো।
আনভি তার কথায় হাসতে লাগলো। সবাই আনভিকে দেখে ভাবছে এতটুকু বাচ্চা কত সহজে সবার সাথে মিশে গেলো আর কি মিষ্টি করে কথা বলে। আদি অরনিকে অন্তুর কথা জিজ্ঞেস করলে বলে অন্তু আসছে। এদিকে প্রাপ্য অরনির দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে অরনি প্রাপ্য চাহনি দেখে লজ্জা পায় ইশারায় তাকাতে মানা করে প্রাপ্য তাই করে। অন্তু নিচে এসে দেখে আনভি তার আব্বু কোলে আর সবাই কথা বলছে। আনভি অন্তুকে দেখে আজাদ মির্জা কাছ থেকে নেমে গিয়ে অন্তুকে জড়িয়ে ধরে। অন্তুও আনভিকে কোলে তুলে গালে চুমু দিয়ে। আনভির কাজে মির্জা বাড়ির সবাই অবাক। অন্তু আনভিকে বলে…
অন্তুঃ আনভি মামুনি কেমন আছো?
আনভিঃ ভালো তুমি?
অন্তুঃ ভালো।
নিহিতা মির্জাঃ অন্তু তুমি কি আনভিকে আগে থেকে চেনো?
অন্তু আনভিকে নিয়ে এসে বলে… হ্যা চিনি পার্টতে দেখেছে আর আমার আর্ট ক্লাসে আনভির সাথে প্রতিদিন দেখা হয়।
নিহিতা মির্জাঃ ওও ভালো।
আনভিঃ ভালো আন্টি তোর রুম দেখবো। এখানে বোর হচ্ছি।
আদিঃ অন্তু অরনি তোরা ওদের কে বাড়িটা ঘুরে দেখে ততখনে খাবার পরিবেশোন করতে বলছি।
অন্তুঃ ওকে
রোদ প্রাপ্য অন্তুর আর অরনির সাথে ওপরে গেলো। রোদ অন্তুর পিছে পিছে তার রুমে যায় এদিক থেকে অরনি প্রাপ্য হাত ধরে ছাদে নিয়ে যায়। ছাদে এসে প্রাপ্য অরনির কোমর জড়িয়ে তার কাছে এনে বললে..
প্রাপ্যঃ তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছি সাদা জামাতে। মনে হচ্ছে কিছু একটা করি কি করি বলতো (একটু ভবে) হুম একটা কিস করি ওকে
প্রাপ্যর কথা শুনে অরনি তার কাছ থেকে নিজেকে ছাড়াতে লাগলো কিন্তু প্রাপ্য তাকে আরো নিজের দিকে নিতে লাগলো অরনি অসহায় মুখ করে বললো…
অরনিঃ প্রাপ্য বাড়িতে সবাই আছে কেউ দেখলে খারাপ ভাবে তাই তোমার রোমান্স পরে দেখালেও চলবে ছাড়ো প্লিজ
অরনির কথা সত্যি তাদের কে কেউ দেখলে যে কেউ খারাপ ভাবে তাই সে তাকে ছেড়ে দেয়। অরনি ছাড়া পেলে হাফ ছেড়ে বাচে এই ছেলেকে নিয়ে পারা যায় না যেখানে সেখানে ভালোবাসা দেখায় এখন যদি কেউ দেখতো তাইলে বাড়িতে হুল্লোড় বেধে যেতো। অরনি প্রাপ্যকে তাদের বাগান দেখাতে লাগলো..
এদিকে, রোদ অন্তু রুমে গিয়ে দেখে অন্তুর রুমে পরিপাটি করে গোছানো দেওয়ালে অন্তুর আঁকা ছবি ঝুলানো। বেড, কাবাড, ড্রসিংটেবিল, সব সুন্দর করে গোছানো রুমের হালকা পিংক রং দেওয়া। রোদের হঠাৎ চোখ যায় অন্তু পড়ার টেবিলে কিছু রং তুলি ছড়ানো সেটা দেখে মনে হচ্ছে অন্তু ছবি আঁকছিলো তার পাশে একটা ছবির ফ্রেম, ছবিটা দেখে ঠোঁটের কোণে তৃপ্তির হাসি ফুটলো ছবিটা অন্তু আর অর্ণবের। রোদ সেখান থেকে চোখ সরিয়ে অন্তু আর আনভির দিকে তাকায় তারা কি নিয়ে যেন কথা বলছে আর হাসছে। রোদ সেখানে যায় গিয়ে বলে….
রোদঃ আম্মু হাসছো কেন?
আনভিঃ পাপা ভালো আন্টি পচা কথা বলেছে।
রোদ বুঝতে না পেরে অন্তু দিকে তাকায় অন্তু অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে রাখেছে। রোদ অন্তুকে বলে… আপনাকে অনেক ভদ্র মেয়ে মনে করেছিলা কিন্তু আপনি আমার মেয়েকে পচা কথা শেখাছেন।
অন্তু মুখটা ছোট করে বললো… মুখ ফোসকে বেরিয়ে গেছে সত্যি আমি কখনো বকি না হঠাৎ পায়ে ব্যাথা পেয়ে বলে ফেলেছি।
রোদ চোখ ছোট করে বললো…কি বলেছেন আপনি?
অন্তু রোদের দিকে তাকিয়ে মিন মিন করে বললো…বা*
অন্তুর কথা শুনে রোদ চোখ বড় বড় করে তাকায় এদিকে আনভি খিলখিল করে অন্তুর কোলে হাসতে হসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। রোদ কিছু বলতে যাবে তার আগে মিনু খালা এসে তাদের বলে…
মিনু খালাঃ অন্তু মা নিচে আম্মাজান যেতে বলো তোমাদের।
অন্তু যেন এই দাম আটকা পরিবেশ থেকে ছার পেলো তাকে যেতে বলে রোদকে নিয়ে নিচে যায়। রোদ আর কথা বারায় না নিচে গিয়ে দেখে সবাই বসে আছে খাবার টেবিলে শুধু আয়ার নেয় তার খাবার তার রুমে দিয়ে এসেছে। তার আসলে সবাই খেতে বসে। খাওয়ার মাঝে টুকি টাকি কথা বলছে অন্তু আনভিকে খাইয়ে দিচ্ছে। রোদ তাদেরকে দেখে একবার আজাদ মির্জা দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসে ঠিক তখনি আজাদ মির্জা ফোনে ফোন আসে সে ধরে যা শোনে তাতে তার মাথায় আকাশ ভেঙে পরে সে কাপা কাপা গলায় বলে…
আজাদ মির্জাঃ কখন হয়েছে এটা আর কারা কারা ধরা পরেছে। তোমরা কি করছিলে??
মানিকঃ স্যার হঠাৎ করে পুলিশ আসলে আমার কিছু বুঝে উঠার আগে সব হয়ে গেছে কিন্তু আমাদের লোক ধরা পরে নিই কিন্তু…
আজাদ মির্জা রেগে বললো…কিন্তু কি মানিক?
মানিক ভয়ে ভয়ে বললো… পুলিশ নিয়ে গেছে মেয়েগুলোকে স্যার।
আজাদ মির্জা খাওয়া থেকে উঠে দাড়ায় তাকে এই অবস্থায় দেখে সবাই হতভম্ব কেউ বুঝলো না হঠাৎ আজাদ মির্জা কি হলো। আজাদ মির্জা ভড়াত গলায় বললে… মানে এটা কি করে হলো?
মানিকঃ স্যার আপনি টেনশন করবেন না কোন মেয়ে কিছু বলবে না আর এতে আপনার নাম আসবে না। আপনি শুধু পারলে নিজের কাজ কিছু সময়ের জন্য বন্ধ রাখুন।
আজাদ মির্জাঃ ওকে ঠিক আছে। এই কাজ টা কারা করেছে কিছু জানতে পারলে???
মানিকঃ স্যার এটা আয়ানের কাজ না ওকে যে ডোস দেয়া হয়েছে ও এটা করবে না নতুন কেউ করেছে। সে আমাদের ব্যবসা সম্পর্কে অনেক কিছু জানে তাই সাবধানে করলাম।
আজাদ মির্জাঃ ওকে তুমি ফোন রাখো আমি পাটি অফিসে আসছি।
বলে ফোন রাখতেই আদি বললো… আব্বু তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেনো কি হয়েছে। আর কে ফোন করেছিলো?
আজাদ মির্জা ঘাম মুছে জোরপূর্বক হেসে বললো… কিছু না আমাকে এখনি পাটি অফিসে যেতে হবে। তোমরা খাও।
বলে কাউকে কিছু না বলেতে দিয়ে তিনি চলে যায়। এদিকে রোদ আজাদ মির্জা হবতম্ভ হয়ে যেতে দেখে বাঁকা হেসে খেতে লাগলো। সবাই চিন্তা বাদে খেতে লাগলো। খাওয়া শেষ সবাই ড্রইংরুমে বসে কথা বলছে অন্তু এখনো আনভিকে খাওয়াছে। মিনু খালা সবাইকে পায়েসের বাটি দিয়ে বলে…
মিনু খালাঃ এটা আমাদের অন্তু মা বানিয়েছে আপনাদের ভালো লাগবে।
রোদ মুচকি হেসে খেতে লাগলো আর সবার সাথে কথা বললো। হঠাৎ কিছু মনে করে বাটি রেখে দৌড়ে অন্তুর দিকে যেতে লাগলো। হঠাৎ রোদকে এভাবে যেতে দেখে সবাই হতভম্ব সবাই রোদের দিকে যেতে লাগলো গিয়ে দেখতে পারে আনভি কেমন যেন করছে। রোদ দৌড়ে আনভির কাছে গিয়ে দেখে আনভি নিঃশ্বাস নিতে পারছে না কেমন হাসফাস করছে আর অন্তু আনভিকে এমন করতে দেখে কান্না করতে লাগলো…..
চলবে….