তুমি আসবে বলে পর্ব -৭০+৭১+শেষ

#তুমি আসবে বলে
#অপেক্ষার প্রহর
#Sondha Halder
#পর্ব-৭০

অর্ণব আমি আর হাটতে পারছি না প্লিজ একটু বসি কোথাও…. কথাগুলো হাঁপিয়ে হাঁপিয়ে বললো অন্তু। এদিকে অন্তুকে হাঁপাতে দেখে অর্ণব তার কাছে এসে তাকে ধরে একটা বসার জায়গায় তাকে বসিয়ে পানি এগিয়ে দিলো। অন্তু পানি নিয়ে খেতে নিলে অর্ণব তার কপালের ঘাম মুছে দিতে লাগলো আর সেটা অন্তু অড়চোখে দেখছে। সকালে অর্ণব অন্তুকে নিয়ে তাদের বাড়ির পাশে পার্কে তাকে নিয়ে হাটতে এসেছে। কিছুক্ষণ হাটার পরে অন্তু হাপিয়ে যায় তাই এই কথাশুলি বলে। অন্তুর পানি খাওয়া শেষে হলে অর্ণব বললো….

অর্ণবঃ জান খারাপ লাগছে কি তোমার? লাগলে বললো

অন্তুঃ আমি বাড়ি যাবো আর হাটতে মন চাচ্ছে না প্লিজ আনভির পাপা…

অন্তু কিউট ফেসে বলা কথা শুনে অর্ণব হাসে। অর্ণবকে হাসতে দেখে অন্তু বুঝে যায় তার কাজ হয়ে গেছে, সে এখন একটু ও হাসতে পারছে না তাই বাড়ি যাবে তাই অর্ণবকে বললো। অর্ণব অন্তুকে ধরে ওঠায় তারপর তার হাত ধরে হাটা ধরে বাড়ির দিকে……
____________________________________

দিদিয়া সকাল সকাল কোথায় গিয়ে ছিলি তুই আর জিজু… বাড়িতে আসতেই অরনি প্রশ্ন করলো অন্তুকে
সে। অর্ণব অন্তুকে ছেড়ে দিয়ে ভেতরে চলে যায় আর অরনি অন্তুর দিকে এখনো তাকিয়ে আছে উত্তরের আশায়। অন্তু বললো…

অন্তুঃ অর্ণব আমাকে নিয়ে হাটতে গিয়েছিলো। কিন্তু কেন কি হয়েছে?

অরনিঃ আনভি ঘুম থেকে উঠে তোকে না পেয়ে কান্না করছিলো আর বলছিলো তুই না-কি আবার তাকে ছেড়ে চলে গেছিস। আমি অনেক কষ্টে কান্না থামিয়েছি তার, এখন দেখ প্রাপ্য কাছে আছে….

অরনি কথাটা বলে কিচেনে চলে যায়। অন্তু আস্তে আস্তে হলরুমে গিয়ে দেখে প্রাপ্য আনভিকে নিয়ে ফোনে গেম খেলছে, অন্তু এগিয়ে গেলো তাদের কাছে। অন্তুকে আসতে দেখে প্রাপ্য বললো…

প্রাপ্যঃ ভাবি কোথায় গিয়েছিলেন আনভি আপনাদের দু’জনকে খুজছিলো তো।

অন্তুঃ ভাইয়া একটু হাটতে গিয়েছিলাম।

বলে আনভিকে অন্তু কোলে নিলো। প্রাপ্য হেসে উঠে চলে গেলো সেখান থেকে। অন্তু আনভিকে নিয়ে তার রুমে চলে যায়, আনভি এখনো পর্যন্ত অন্তুর সাথে একটা কথাও বলছে না দেখে অন্তু বুঝতে পারলো সে তার সাথে রাগ করেছে। অন্তু তাকে নিয়ে বেডে বসে বললো…

অন্তুঃ আনভুমা কথা বলবে না মাম্মামের সাথে। এতো রাগ করেছো মাম্মামের সাথে।

আনভি অভিমানী স্বরে বললো… তুমি আর পাপা আমাকে না নিয়েই চলে গেলে কেন? আমি তোমাদের কতো খুজিছি যানো।

অন্তু আনভির অভিমান বুঝে বললো… সরি মা আর হবে না এবারের মতো মাফ করে দাও

আনভি মুখ ফুলিয়ে বললো…. না করবো না।

অন্তু অনেক বার বুঝাতে চাইলো আনভিকে কিন্তু সে একটুও বুঝলো না। অর্ণব ওয়াশরুমের দরজায় দাড়িয়ে সবটা দেখছে আর হাসছে, আনভি আর অন্তু দু’জনি যে জেদি কেউ কাউকে ছাড় দেয় না। অর্ণব টাওয়ালটা রেখে বেডে গিয়ে বসে আনভিকে তার কোলে নিয়ে তার কানে কানে কিছু বলছে যা শুনে আনভির চেহারায় একটা আনন্দের রেশ আসছে। অন্তু বাপ-বেটির এভাবে দেখে অবাক হয় সাথে খারাপও লাগে যে আনভি অর্ণবকে বেশি ভালোবাসে তার থেকে। অন্তু নিজেকে ঠিক করে বুঝার চেষ্টা করে অর্ণব আনভিকে কি বলছে যা শুনে আনভি এতো খুশি হচ্ছে। আনভি সব শুনে উৎফুল্ল হয়ে বললো…. সত্যি পাপা আমার ভাই হবে?

আনভির কথা শুনে অন্তু বুঝলো অর্ণব তাকে তাদের বেবির কথা বলছে আনভিকে তাই সে এতো খুশি। অর্ণব হেসে বললো…. হ্যাঁ আম্মু তোমার ভাই হবে। মাম্মার কাছে শোনো।

আনভি অন্তু মুখের দিকে তাকিয়ে আছে সে কি বলবে তা জানার জন্য। অন্তু হেসে বললো… হুম মা তোমার ভাই হবে। অয়ন ভাইয়ের মতো ছোট একটা ভাই। তুমি না সারাক্ষণ বলতে ভাই কবে আসবে, তাকে কোলে কবে নেবে, আদর কবে করবে। তোমার ভাই আর কিছু দিনের মধ্যে তোমার কাছে চলে আসবে তখন তাকে নিয়ে তুমি যা যা বলতে তাই তাই করো ওকে মা।

আনভি খুশিতে অন্তুকে জড়িয়ে ধরে তা দেখে অর্ণব অন্তু হাসতে লাগলো। তাদের মেয়ে যে এতো ভাই পাগল হবে তারা জানতো না, আনভি সব সময় অয়নকে দেখলে বলতো তার ও ভাই হবে সে ও তাকে কোলে নেবে, আদর করবে, সবাই আনভি কথায় হাসতো এখন তো সত্যি সত্যি আনভির ভাই আসছে তাই সে তার আনন্দ ধরে রাখতে পারছে না….

আনভিঃ আমার ভাই আসবে কি মজা আমার ভাই আসবে। আমি সব সময় তাকে আদর করবো একটু ও মারবো না তাকে ভালোবাসবো তাই না মাম্মাম। আমি তো তার বড় বোন হবো, আছা মাম্মাম সে কি আমাকে ভালোবাসবে?

অন্তুঃ হে মা তেমাকে তোমার ভাই অনেক ভালোবাসবে।

অর্ণবঃ আম্মু ভাই তো তোমার মাম্মার ছোট টামিতে তাই মাম্মাকে কষ্ট দিও না তাইলে তোমার ভাইও কষ্ট পাবে।

আনভি চোখ ছোট ছোট করে বললো…. ভাই মাম্মার টামিতে।

অন্তুঃ হুম মা আমার টামিতে তোমার ভাই।

আনভি অন্তুর পেটে হাত দিয়ে বললো… ভাই তোমাকে আমি কষ্ট দেবো না তুমি তাইলে মাম্মাকে কষ্ট দিও না। মাম্মা অনেক কষ্ট করেছে বুঝলে। আই লাভ ইউ ভাই

বলে অন্তুর পেটে চুমু দেয়। এদিকে ছোট আনভির কথা শুনে অর্ণব অন্তু হতভম্ব হয়ে যায়, তাদের ছোট আনভি এখন অনেক বড় হয়ে গেছে হবেই না কেন এখনতো সে ৪ বছরের হয়ে গেছে। আনভি অন্তুর গলা জড়িয়ে ধরে তার ভাই আসলে কি কি করবে বলছে আর অন্তু তার জবাব দিচ্ছে। অর্ণব তাদেরকে এভাবে দেখে খুশি হয় তার দুনিয়া তো এরা দুজনে এরা খুশি থাকলে সেও খুশি থাকে আর তারা কষ্টে থাকলে সেও কষ্টে থাকে। অর্ণবের এখনো মনে আছে যখন অন্তু তারা বেবি মারা যাবার কথা জেনে যায় তখন তাকে সামলানো খুবি কষ্ট কর ছিলো কিন্তু আনভি জন্য সব কষ্ট সহজ হেয়ে যায়…..

৩মাস আগে,,,

সেদিন হসপিটালের অন্তু বেঁচে গেলেও ডক্টর তাকে বেড রেস্ট নিতে বলে আর বেবি নেবা থেকে দূরে থাকতে বলে কিছু বছরের জন্য। কেননা তার শরীল অনেকটা দূর্বল ছিলো, অর্ণব তাই করে সে অন্তুকে বাড়িতে নিয়ে এসে সম্পূর্ণ রেস্টে রাখে তাকে আজাদ মির্জা জেল, শাস্তি কথা বলে না তাকে। ওই ঘটনার ১৫ দিনের মাথায় অর্ণব প্রাপ্য সাথে অরনির সিম্পল ভাবে বিয়ে দিয়ে চৌধুরী বাড়িতে নিয়ে আসে এতে কারোর অমত ছিলো না কেননা তাদের মনে অন্তুকে নিয়ে চিন্তা আর আজাদ মির্জা ভয় ছিলো যদি তিনি কিছু করেন তাই। অরনি চৌধুরী বাড়ি আসলে অর্ণবের সুবিধা হতো সে নিজের কাজ করতো আর অরনি অন্তুর খেয়াল রাখতো। আস্তে আস্তে অন্তু ভালো হতে লাগলো সাথে অর্ণব তাকে আজাদ মির্জা চিন্তা থেকে দূরে রাখতে প্রাইভেট ভার্সিটিতে ভর্তি করে দেয় যাতে সে টেনশনে না নেয় আর তার গ্রেজুয়েশনটা কমপ্লিট হয়। হঠাৎ একদিন অন্তুর হাতে তার প্রেগ্ন্যাসির রিপোর্ট আসে যেটা অর্ণব হসপিটাল থেকে নিয়ে এসেছিলো কিন্তু এতো চাপে সে সেটা অন্য কোথাও রাখতে পারেনি। আর সেটা অন্তু দেখে ফেলে সেটা দেখে অন্তু একেবারে ভেঙে পরে আর অন্তুকে ভেঙে পরতে দেখে অর্ণব ও ভেঙে পরে সে অন্তুকে অনেক বুঝিয়েছিলো তাদের আর বেবি লাগবে না কিন্তু অন্তু কিছুতেই মানবে না। অর্ণব ভালোবেসে, রাগ করে, মিনতি করে কোনো ভাবে অন্তুকে নরমাল করতে পারে না তখন আনভি অন্তুকে কষ্ট পেতে দেখে অন্তুকে ভালোবেসে বললে…

আনভিঃ মাম্মা ও মাম্মা আমার ভাই লাগবে না আমি শুধু তোমাকে চাই। তুমি আর পাপা থাকলে আমার কাউকে লাগবে না, তুমি কান্না করো না আমার ভালো লাগে না তোমাকে কান্না করতে দেখে। আমার কষ্ট হয় প্লিজ মাম্মা আমাকে ভালোবাসো তাই হবে আমি তোমাকে ভালোবাসবো তাই হবে…

অন্তু সেদিন আনভিকে জড়িয়ে ধরে অনেক কান্না করে তারপর একে বারে নরমাল হয়ে যায় তার দেখে অর্ণব ও মনে করে অন্তু বেবির কথা ভুলে গেছে। কিন্তু না সে ভুল ছিলো অন্তু তার মান থেকে বেবির কথা ভোলাইনি সে অর্ণবের কাছে এসেছে। অর্ণবের না করা সত্বেও কিন্তু অন্তু মানতে নারাজ তাই অর্ণব নিজের প্রটেকশন নিয়েছে কিন্তু অন্তু সেটা হতে দেয়নি আর না অর্ণবকে বুঝতে দিয়েছে। এসবের কিছু দিন পরে আজাদ মির্জা মারা যায় আর অন্তু কেমন যেন হয়ে যায় সে আজাদ মির্জা কবরের কাছে গিয়ে বসে থাকতো বাড়িতে আসতো না এসব অর্ণব মানতে পারতো না তাই সে অন্তুকে তার নিজের মতো ছেড়ে দেয় কিন্তু তার পেছনে গোয়েন্দা লাগায় যাতে তার কাছে অন্তুর সব খবর চলে আসে….

অন্তুর কথায় অর্ণবের ভাবনা কাটে। অর্ণব অন্তুর দিকে তাকিয়ে দেখে সে নাস্তা করতে ডাকছে তাই সে কিছু না বলে তার সাথে নিচে চলে যায়…..
______________________________________

হই হুল্লোড়ে মেতে উঠেছে চৌধুরী বাড়ি সবাই। কিছুক্ষণ পূর্বে আদি, আদিবা, আয়ান, আয়রা, অয়ন, নাহিদ সবাই চৌধুরী বাড়িতে এসেছে। এখানে আসার মূল কারন অন্তু বাড়ি ফিরেছে আর সে এখন ঠিক আছে তাই অর্ণব সবাইকে তাদের বাড়িতে দুপুরের খাবারে জন্য দাওয়াত দিয়েছিলো আর তারা সবাই এাখনে এসেছে। সবাই দুপুরের খাবার খেয়ে ড্রইংরুমে বসে আড্ডা দিচ্ছে, আনভি অয়নকে নিয়ে খেলছে মি.চৌধুরী দুপুরে খেয়ে ঘুমাতে গিয়েছে। অন্তু, আয়রা, আদিবা ড্রাইনিং টেবিল গুছাচ্ছে আর গল্প করছে আর অর্ণব সবার সাথে কথা বলছে। তাদের কথার মাঝে নাহিদ জোর জোর অন্তুকে বলছে….

নাহিদঃ অন্তু আজ যদি সানা আসতো তাইলে তোমার রান্নার ভক্ত হয়ে যেতো। আহ্ কি স্বাদের রান্না মন চায় খাই আর খাই….

নাহিদের কথা শুনে অন্তু মুচকি হাসি দেয়। আজ সানা আসতে পারেনি তার বেবি মানে নাহিদ আর সানার মেয়ে সায়রা একটু অসুস্থ তাই আসতে পারেনি। নাহিদের কথা শুনে অর্ণব বললো…

অর্ণবঃ শালা তোর শুধু খাই আর খাই। এই সারা রান্না কি এতো খারাপ যে আমার বউরে এতো প্রশংসা করছিস তুুই। দাঁড়া আমি সারাকে সবটা বলছি।

অর্ণবের কথা শুনে নাহির তারাতাড়ি করে বললো… মামা প্লিজ এমনটা করিস না, না হলে আমি আর রাতে খেতে পারবো না আজ…

নাহিদের কথা শুনে সবাই উচ্চ স্বরে হসতে লাগলো। নাহিদ ভালো ছেলের মতো বসে রইলো। অন্তু তাদের জন্য মিষ্টি নিয়ে আসলে সবাই তা নিয়ে খেতে লাগলো, অন্তু অর্ণবের পাশে গিয়ে বসে সাথে আয়রা, আাদিবা ও অন্য সোফাই বসে। অন্তু অর্ণবকে ইশারায় কিছু বলতে বলছে কিন্তু অর্ণব বলবে না বলছে তা দেখে অন্তু মুখ ফুলালো। অন্তুর মুখ ফুলানো দেখে অর্ণব মুচকি হেসে সবাইকে বললো…

অর্ণবঃ আমার কিছু বলার ছিলো।

আদিঃ হে হে বলো কি বলবে।

আদির কথায় সবাই সায় দিলে অর্ণব বললো… তোমাদেরকে এখানে আনবার মূল উদ্দেশ্য অন্তুর বাড়ি আসা হলেও আরো একটা কারন আছে…

অর্ণবের কথা মানে কেউ বুঝতে পারে না। তাদের কি জন্য অর্ণব এখানে ডেকেছে, যদি অন্তুর বাড়ি ফেরের খুশিতে না কি অন্য কিছু। অর্ণব সবার পরিস্থিতি বুঝতে পেরে বললো…

অর্ণবঃ তোমাদের আমি ডেকেছিলাম শুধু অন্তু বাড়ি ফেরার খুশিতে কিন্তু কাল রাতে অন্তু আমাকে আমার জীবনে আরো একটা খুশি দিয়েছে যেটা আমি তার থেকে আশা করিনি কিন্তু সে এটা দিয়েছে। শুধু সে এটা করেছে আমার আর আনভির জন্য, এই খুশিটার জন্য অন্তুকে যতবার ধন্যবাদ দেবো ততো বেশি দিতে মন চাইবে। অন্তু আমাকে আবার বাবা হবার সুখ দিয়েছে, আমি আবার বাবা হবো আর অন্তু মা। অন্তু প্রেগন্যান্ট।

অর্ণবের কথায় সবাই স্তব্ধ কেননা সবাই কমবেশি জানে অন্তুকে ডক্টর বেবি নিতে বারণ করেছে তাই, কিন্তু এই কথাটা কেউ সহজে হজম করতে পারে না। আদি কথাটা শুনে উঠে দাড়িয়ে বললো…

আদিঃ অন্তুপাখি তুমি কি পাগল হয়ে গেছো। তোমাকে না ডক্টর বেবি নিতে বারণ করেছে তাইলে এটা কি করলে। আর অর্ণব তুমি অন্তুকে কেন বুঝাতে পারলে না এতে তার লাইফ রিস্ক আছে বেবিটা নিলে তা না করে তুমি আনন্দে সহকারে এটা সবাইকে বলছো।

অর্ণবঃ ভাইয়া বেবিটা অন্তু জেনে বুঝে নিয়েছে আর আমি এটা জানতাম না। জানলে এটা করতে দিতাম না তাকে কিন্তু অন্তু বেবিটা নিতে চাচ্ছে সে আমার কথা শোনেনি। আর আমি ডক্টরের সাথে কথা বলে নিয়েছি তিনি অন্তুকে সাবধানে থাকতে বলেছে আর একটা রেগুলার চেক-আপ মধ্যে থাকতে বলছে।

আদি কিছু বলতে যাবে তার আগে আদিবা তাকে থামিয়ে দেয় তার হাত ধরে। আদি আদিবার দিকে তাকালে সে ইশারায় শান্ত হতে বলে, তা দেখে সে নিজেকে শান্ত করতে লাগলো। আয়ান বললো…

আয়ানঃ বোনু এটা কি?

অন্তু কাঁদো কাঁদো গালয় বললো… ভাইয়ু, দাদাভাই তোমরা জানো আমি একটা বেবির জন্য কতটা ডেস্পারেট ছিলাম কিন্তু আমার ভুল বসতো আমার আগের সন্তানটা মারা যায় কিন্তু আমি সেটা মানতে পারিনি তাই আমি অর্ণবকে না জানিয়ে এটা করেছি। এতে অর্ণবের দোষ নেই সে আমাকে অনেক বার বুঝিয়েছে ভালো করে, রেগে কিন্তু আমি মানি নিই। আমার বেবিটা লাগবে এতে যা হবার হবে…

অন্তু কথাশুলো বলে কান্না করতে লাগলো অর্ণব তাকে ধরে আছে। অন্তুর কথা শুনে সবাই ভাবছে হে সে যা বলছে সেটা সত্যি অন্তু একটা বেবির জন্য অনেক কষ্ট পেয়েছে এখন যদি তারা তার সাথে রাগ করে তাহলে এতে তার খতি হবে তাই আদি আর আয়ান গিয়ে তার বোনকে জড়িয়ে ধরে। অর্ণব সেখান থেকে একটু দূরে দাড়ায় গিয়ে, অন্তু তার ভাইয়কে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো। আদি, আয়ান তার বোনকে শান্তো করতে লাগলো কিন্তু সে কান্না করেই যাচ্ছে। হঠাৎ আনভির রাগি কন্ঠ শুনে অন্তুর কান্না থেমে যায়, সবাই আনভির দিকে বিস্মিত নিয়ে তাকিয়ে থাকে যে এই পিচ্চি বলে কি…

আনভিঃ তোমরা আমার মাম্মাকে কেন কাদাছো। যানো না আমার মাম্মামের টামিতে আমার ভাই আছে সে তো কষ্ট পাছে। ছাড়ো আমার মাম্মাকে, আসো আমার কাছে মাম্মা এরা সবাই পচা, এরা শুধু তোমাকে কাদায় আমি তোমাকে আদর করে দেবো।

আনভির পাকা পাকা কথা শুনে সবাই ফিক করে হেসে ফেলে। অন্তু কান্না থামিয়ে আনভির কাছে গিয়ে তাকে আদর করে বললো…

অন্তুঃ আনভুমা আমি কান্না করছি না আর না তোমার ভাই কষ্ট পাচ্ছে। তার এতো কেয়ারিং আপুমনি থাকতে সে কেন কষ্ট পাবে হুম।

আনভি চোখ ছোট ছোট করে বললো… সত্যি তো?

অর্ণব তাদের কাছে এসে বললো… সত্যি আম্মু

আনভি তাদের কথা শুনে খুশি মনে অয়নের কাছে চলে যায়। আদিবা বললো…

আদিবাঃ যাগে ভালোই হলো আনভির একটা ভাই আসবে, আনভি খুশি হবে। দোস্ত সুধা মুখে এতে বড় নিউজটা দিয়ে দিলি, একটু মিষ্টি মুখতো করালি না।

অন্তু আদিবাকে পিন মেরে বললো… আমি তো খুশির খবর দিয়ে সুধা মুখে রেখেছি কিন্তু তুই তো খালি সুধা না আরো অনেক কিছু বাকিতে রেখেছিস। আমি কবে ফুপি হবো বলতো?

অন্তুর কথা শুনে আদি কাশতে লাগলো এদিকে আদিবা একেবারে চুপ লাজ্জা পেয়ে। তাদেরকে এভাবে দেখে সবাই হাতে লাগলো, অর্ণব অন্তুর কানে কানে বললো…

অর্ণবঃ খুশি তো তুমি?

অন্তুঃ অনেক খুশি.. তুমি?

অর্ণবঃ তুমি খুশি মানে আমি খুশি…

বলে অন্তুকে এক হাত দিয়ে এক পাশে জড়িয়ে ধরে। অন্তু অর্ণবের মুখের দিকে তাকেয়ে সে যে কতটা খুশি তার অনুভব করতে পারলো। সে তো এটাই চেয়েছিলো তাদের ছোট একটা সুখের সংসার আর হাজারো সুখ,খুশি, ভালোবাসা। সে সেটা পেয়েও গেছে তাদের ভালোবাসার রংমহলে…….
#তুমি আসবে বলে
#অপেক্ষার প্রহর
#Sondha Halder
#পর্ব-৭১

রাতে নিস্তব্ধ আকাশে হঠাৎ মাঝ রাতে বৃষ্টি নেমে এলো চারিদিকে। বৃষ্টির ঝুম ঝুম শব্দে হঠাৎ অন্তুর ঘুম ভেঙে যায়, সে নড়েচড়ে ওঠে কিছুটা। চোখে এখনো ঘুমের রেশ কাটেনি কিন্তু তার এখন ঘুমাতে ইচ্ছে করছে না তাই সে উঠে বসে শোয়া থেকে। অন্তু তার পাশে ঘুমন্ত আনভিকে দেখে হাসতে লাগলো মেয়েটা পুরোই তার গুন পেয়েছে সে ঘুমালে তার কোন হুশ থাকে না যে সে কিভাবে ঘুমাছে আর কোথায় ঘুৃমাছে, এই যে এখন যেমনটা হচ্ছে আনভি ঘুমিয়ে ছিলো প্রাপ্য কাছে কিন্তু এখন সে তার কাছে আছে সেটা আনভি বুঝতেও পারছে না। অন্তু আনভির মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো মেয়েটা এখন অনেকটা বড় হয়ে গেছে, বুঝতে শিখেছে, হবেই না কেন সময় কি আর থেমে থাকে সে তো তার গতিতে চলে। দেখতে দেখতে সময় চলে গেছে ৮ মাস, আনভি এখন ৫ বছর বয়স, আনভি আগের তুলনায় এখন বেশি পাকা হয়ে গেছে আর তার মাম্মার মতো সুন্দরী। অন্তুর এখন ৯মাস চলছে পেটা অনেকটা বেরে গেছে আগের তুলনায় বেশি কিউট আর সুন্দর হয়েছে। অন্তু আনভির গায়ে চাদরটা ভালো ভাবে দিয়ে তার কপালে চুমু দিলো, মেয়েটা সারা দিন অনেক ছুটাছুটি করে সে এখন স্কুলে যাবা শুরু করেছে আর স্কুল থেকে এসেই সারাখন অন্তুর পিছু পিছু থাকে তার ভাই কি করছে? কবে আসবে? সেটা নিয়ে পরে থাকে আর অন্তুর খেয়াল রাখে। অন্তু আনভিকে যতো দেখে ততো অবাক হয় কেননা আনভি সবটা অন্তু গুন, আচারণ পেলেও একটা বিশেষ গুনে সে তার পাপার থেকে পেয়েছে সেটা হলো সে তার মাম্মাকে ভীষণ ভালোবাসে যেমনটা অর্ণব অন্তুকে করে। অন্তুর কিছু হলে আনভি তো অস্থির হয়ে যায় যেমনটা অর্ণবের হয়, অন্তু শুধু বাপ-মেয়ের কান্ডকারখানা দেখে হাসে আর ভাবে সে অনেক ভাগ্যবতী যে তার স্বামী আর তার সন্তান তাকে চোখে হারায়। অন্তু আনভির থেকে চোখ সরিয়ে এবার অর্ণবের দিকে তাকায়, অর্ণব ঠোঁট উল্টে ঘুমিয়ে আছে। অন্তু তাকে দেখে খুব মায়া হলো সারা দিন অফিস করে ক্লান্ত শরীলে নিয়ে বাড়িতে এসে রেস্ট নেওয়া বাদে, সে তার খেয়াল রাখে, তার সব আবদার পূরন করে, তার মুড সুইং হলে সে সবটা ঠান্ডা মাথায় মেনে নেয়। অর্ণব কিছু মনে করে না সব কিছু নিরবে সহ্য করে নেই নেবেই না কেন সে তো অন্তু সব আবদার, বাচ্চামি, গাগলামি, মুখ ফুলানো, রেগে থাকা সবটা ইনজয় করে। অন্তু অর্ণবের এলোমেলো চুলে তার হাত বুলাতে লাগে আর তাকে দেখতে থাকে। ঘুমের মাঝে কাউকে মাথায় হাত বুলিয়ে অনুভব করতেই সে হুর মুড়িয়ে উঠে বসে অস্থির ও চিন্তিত স্বরে বললো…

অর্ণবঃ কি হয়েছে তোমার? ব্যথা করছে? কোথায় ব্যথা করছে? আমাকে বলো আমি ডক্টরকে ফোন করছি। জান বেশি কষ্ট হচ্ছে বলো আমাকে?

একনাগাড়ে কথাগুলো বলতে থাকে অর্ণব। এদিকে অন্তু অর্ণবের কাজে অবাকে তার চোখ ছলছল করে উঠলো সে ভাবে ছেলেটা তাকে এতোটা কেন ভালোবাসে? আর তাকে নিয়ে এতোটা কেন চিন্তা করে? যে তার একটা স্পর্শ পেতে সে তার ঘুম ছেড়ে উঠে তাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলো। এটা আজকের নয় এটা অন্তুর প্রেগন্যান্ট হবার পর থেকে হয়ে আসছে, অন্তু কি লাগবে না লাগবে, তার অসুবিধা-সুবিধা, তাকে ডক্টর দেখানো, তার রাত-বেরাতের করা সব পাগলামি, তার এই খাবার ওই খাবার, এখানে যাবো ওখানে না, রাগ, কান্না, হাসি, মুডসুইং সবটা সে এই ৮মাসে সে নিরবে সহ্য করে গেছে কোন টু শব্দ টুকু করেনি। যেমনটা আজকে হলে অন্তু শুধু তাকে ভালোবেসে তার মাথায় হাত বুলাতে গিয়েছিলো কিন্তু অর্ণব ভেবেছে তার কিছু হয়েছে তাই তো সে এতোটা ভয় আর অস্থির হয়ে গেছে। অন্তুকে কান্না করতে দেখে অর্ণব যেনে আরো পাগল হয়ে গেলেও সে তো ধরেই নিয়েছে অন্তুর কিছু হয়েছে কিন্তু সে তো এটা জানে না যে তার পাগলামো গুলো অন্তুর মনে তার প্রতি আরো সম্মান, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা বাড়িয়ে দেয়। অর্ণব এবার ভয়ার্ত চেহারা বললো…

অর্ণবঃ জান কান্না করছো কেন? প্লিজ বলো কি হয়েছে তোমার? আমার কিন্তু ভয় হচ্ছে এখন। তোমার কি পেটে ব্যথা করছে কিন্তু ডক্টর যে বলো এখনো একটু সময় আছে বেবি হবার। চলো এখনি হসপিটালে যাবো তোমার কষ্ট আমি সহ্য করতে পারবো না চলো…

বলে অর্ণব উঠতে নিলে অন্তু তার হাত ধরে তার কাছে বসায়। অর্ণব তার কাজে ভ্রু কুচকে তাকালো সে বুঝতে চায় অন্তু এমনটা করছে কেন? তার যদি কষ্ট হচ্ছে তাইলে তাকে কেন বলছে না? আর তাকে কেন হসপিটালে নিতে বাধা প্রদান করছে। অন্তু অর্ণবকে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে, তাকে কান্না করতে দেখে অর্ণব বিচলিত হতে লাগলো কিন্তু কিছু বলতে পারলো না, অন্তু অর্ণবকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো…

অন্তুঃ এতো কেন ভালোবাসো আমাকে তুমি? কেন এতো চিন্তা করো আমাকে নিয়ে? আমি কি এতো ভালোবাসা পাবার যোগ্য অর্ণব..

অন্তু কথাগুলো বলে জোরে নিঃশ্বাস নিলো। অর্ণব তার কথা শুনে তাকে জড়িয়ে ধরে তার গলায় কয়েকটা কিস করে বললো….

অর্ণবঃ যোগ্য কি না জানি না জান কিন্তু তুমি আমার প্রান তোমাকে ছাড়া আমার এই শরীল আচল। আমি শুধু জানি এই অন্তু নামক পাগলীটাকে আমি পাগলের মতো ভালোবাসি কারণে অকারণে। জান তোমার কি হয়েছে বলবে আমাকে, আমার চিন্তা হচ্ছে খুব।

অন্তু নাক টেনে বললো… কিছু হয়নি আমার আমি ঠিক আছি। হঠাৎ বৃষ্টি শব্দে ঘুম ভেঙে যায় তাই উঠে পরি। তোমাকে ক্লান্ত শরীলে ঘুমাতে দেখে কষ্ট লাগছিলো তাই তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলাম কিন্তু তুমি তাতে আমাকে নিয়ে ভয় পেয়ে গেলে সরি আমি এমটা করতে চাইনি।

অর্ণব স্তির হয় যায় অন্তুর কথায় সে অন্তুর গলা থেকে মুখ সরিয়ে নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে তার চোখের জল মুছে দিলো কিন্তু কিছু বললো না। অন্তু ও তার কান্না থামিয়ে চুপ করে থাকে। কিছুখন পরে অর্ণব বললো…

অর্ণবঃ কিছু খাবে? আমি কিছু নিয়ে আসবো।

অন্তুঃ হুমম খাবো..

অর্ণবঃ কি খাবে?

অন্তু ছোট বাচ্চার মতো বায়না ধরে বললো… চকলেট খাবো প্লিজ…

অর্ণব হাসলো তা দেখে অন্তু হাসলো। অর্ণব অন্তুর কপালে চুমু দিয়ে উঠে গেলো চকলেট আনতে। অন্তুর জন্য সে অনেক কিছু নিয়ে এসে রাখে ফ্রিজে কেননা অন্তুর এসব খেতে ভালো লাগে তাই। অর্ণব চকলেট নিয়ে এসে অন্তুকে দিলে সেটা সে নিয়ে খেতে লাগলো আর অর্ণব তা দেখতে লাগলো। অর্ণব যত অন্তুকে দেখে তার আবদার, ভালোবাসা, আবেগে সব ততো তার প্রতি বৃদ্ধি পেতে থাকে, এই পাগলিকে পেতে তাকে অনেক কিছু করতে হয়েছে অনেক কষ্ট পেতে হয়েছে। এখন যখন তাকে তার পাশে পেয়েছে তখন সে নিজেকে স্বার্থকে মনে করে, সে অন্তুর অবাদ্ধ ভালোবাসা, কেয়ারিং, পুরো অন্তুকে তার কাছে পায়ছে, সে মন খুলে ভালোবাসতে পেরেছে, আবদার করতে পেরেছে, আদর করতে পারছে আর কি চাই তার সে তো না চাইতে অন্তু তাকে সব কিছু দিচ্ছে। অর্ণব অন্তুকে দেখে ফিক করে হসে দেয় তা দেখে অন্তু মুখ ফুলিয়ে থাকে। অর্ণব অন্তু ঠোঁটের চারিপাশে লেগে থাকা চকলেট হাত দিয়ে মুছে দিয়ে বললো…

অর্ণবঃ আমার পাগলি বাবুটা এখনো পুরোই বাচ্চা আছে। এভাবে কেউ চকলেট খায় আনভিও তোমার থেকে ভালো করে চকলেট খায়। এই তুমি এখনো এভাবে চকলেট খেলে তো আমার ছেলে পুরোই চকলেট পাগল হবে তার বোনে আর মায়ের মতো। এটা ঠিক না জান তুমি ছেলে-মেয়ে দুজনকে চকলেট পাগল করে দিবে তো।

অর্ণবের কথা শুনে অন্তু ফিক করে হেসে দেয়। কারন সে আর আনভি দুজনি চকলেট পছন্দ করে আর অর্ণবের ভয় যে তাদের ছেলেও চকলেট পছন্দ করবে। অন্তু সাবধানে উঠে অর্ণবের কোলে বসে তার গলে জড়িয়ে ধরলে অর্ণব তার কোমর জড়িয়ে ধরে এতে তাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে কেননা অন্তু পেট অনেকটা বড় হয়েছে তাই। অন্তু অর্ণবের নাকে নাক ঘষে বললো…

অন্তুঃ তাতে কি হয়েছে তোমাকেও চকলেট পাগল বানিয়ে দেবো। তাইলে তো পুরো ফ্যামেলি চকলেট পাগল হয়ে যাবে ভালো হবে না আনভির পাপা…

অর্ণব অন্তু অধরে তার ঠোঁট ছুঁয়ে বললো… দুষ্টু হয়ে যাচ্ছো কিন্তু দিনে দিনে তুমি জান…

অন্তুঃ তোমার জন্য তো সব..

অর্ণবঃ আই লাভ ইউ জান..

অন্তুঃ আই লাভ ইউ আনভির পাপা..

অর্ণব হাসলো অন্তু ও। অন্তু ওভাবে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে যায়, অর্ণব অন্তুকে ঘুমাতে দেখে তাকে বেডে ঠিক করে শুয়ে দিতে তার শাড়ি পেট থেকে সরে যায় , অর্ণব তা দেখে মুচকি হাসে মেয়েটা সত্যি পাগল, পাগল না হলে এই আবস্থাতে কেউ শাড়ি নামক ঝামেলে পরে। অন্তু শুধু অর্ণবের জন্য শাড়ি পরে কারন অর্ণব শাড়ি পছন্দ করে তাই শতো ঝামেলা হলেও অন্তু শাড়ি পরবে অর্ণবের জন্য, অর্ণব অনেক বার মানা করা স্বত্বেও সে পরে। অর্ণব অন্তুর শাড়ি ঠিক করে দিয়ে তার গায়ে কম্বল দিয়ে বললো…

অর্ণবঃ জান তোমার এই পাগলামি, আবদার, বাচ্চামো, ভালোবাসা এসব পাবার জন্য তো এতো লড়াই করলাম এখন যখন এসব পেলেম তখন মনের মাঝে একটা ভয় হয় যদি হঠাৎ আবার সব হারিয়ে যায় তখন? তখন কি ভাবে থাকবো! আমি জানি এমনটা হবে না এখন আমি এটা হতে দেবো না প্রমিস। আই লাভ ইউ জান। এভাবে পাগলামি করো সারাজীবন আমি তোমার সব পাগলামি মাথা পেতে মেনে নেবো।

কথাগুলো বলে সে অন্তু আর আনভিকে চুমু দিয়ে তাদের পাশে শুয়ে পরে…. এদিকে রাতের আকাশে বৃষ্টি আস্তে আস্তে কমতে লাগলো…নতুন ভোরের আগমনী হতে লাগলো নতুন কিছু স্বপ্ন নিয়ে নতুন কোন আশা নিয়ে…
______________________________________

দোস্ত তুই এই অবস্থাতে ও কি সুন্দর শাড়ি পরে থাকিস কিন্তু আমাকে দেখে আমি জামাটাও ভালো ভাবে কেরি করতে পারছি না…. বলে মুখ লটকালো আদিবা। আদিবার কথা শুনে আয়রা, অন্তু, অরনি হাসতে লাগলো, মেয়ে মহলদের এভাবে হাসতে দেখে সব ছেলে তাদের দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করছে আসলে কি হলো কিন্তু কিছু না বুঝতে পেরে তারা সবাই আবার নিজের কথাতে ব্যস্তে হয়ে গেলো। আসলে সবাই মিলে চৌধুরী বাড়িতে আড্ডা দিচ্ছে, অন্তু শরীলটা ভালো লাগছিলো না সকাল থেকে তাই অর্ণব সবাইকে তার বাড়িতে ডাকে আর সবাই অন্তুর কথা শুনে তাদের কাজ থুয়ে চলে আসে। আরে আরে আরে আপনাদের বলতে ভুলে গেছি আদিবা বলো না তার এই অবস্থা মানে সে ৫ মাসের প্রেগন্যান্ট, সেদিন অন্তুর খোচা শুনে আদিবা আদি ঠিক করে তাদের বেবি লাগবে তাই তারা বেবি প্ল্যানিং করে আর এখন সে ৫ মাসের প্রেগন্যান্ট। অন্তু বললো…

অন্তুঃ বেস্টু তুই পারিসো বটে। সেদিন আমার কথা তোর এতো গায়ে লাগলো যে কয়েক মাসের ব্যবধানে তুই আমাকে ফুপি বানিয়ে দিচ্ছি। লাভলি… আমার দাদাভাই তো দেখছি অনেক ফাস্ট..

বলে হাসতে লাগলো জোরে জোরে কিন্তু পেটে ব্যথা অনুভব হতে সে হাসি থামিয়ে দেয় কিন্তু আস্তে আস্তে হাসে। এদিকে অন্তু কথা আদিবা কপট রাগ দেখাই সবাইকে, তারপর ফিক করে হেসে বললো…

আদিবাঃ তোর দাদাভাই বেবি নেবে বেবি নেবে বলে এখন থেকে না সেই বিয়ের অনেক আগে থেকে বলতো। আমি কিছু করতাম না কিন্তু আমার ও তখন মনে হলো বেবিটা লাগবে তাই নিলাম। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি কতোটা কষ্ট করতে হয় বেবি নিলে। আদি, মা, দিদুন, চাচী,আয়রা সবাই খেয়াল রাখছে কিন্তু মাঝে মাঝে হাপিয়ে উঠি..

অরনিঃ ভাবি দাদাভাই কি বাবু নেবে কিছু বলেছে তোমাকে?

আদিবাঃ তার মেয়ে চায়। সে মেয়ে মেয়ে বলে পাগল তার না-কি আম্মু লাগবে তাও অন্তুর মতো ভাবা যায় তার পাগলামি।

বলে হাসতে লাগলো। অন্তু সবটা শুনে আদির দিকে তাকায় তার দাদাভাই তাকে অনেক ভালোবাসে তা না হলে তার মেয়ে তার মতো হতে বলতো না। সে তার দাদাভাই অনেক ভালোবাসে তার জন্য। আয়রা বললো…

আয়রাঃ তা ডক্টর কি বলেছে মেয়ে হবে না-কি ছেলে হবে আদিবা..

(আদিবা আর আয়রার সম্পর্কে যতোই ভাবি আর জা হোক না কেন আদিবা সব সময় আয়রাকে তার বড় বোন মনে করে। তাই সে আয়রাকে তার নাম ধরে ডাকতে বলে এতে কারোর সমস্যা হয় না)

আদিবাঃ আপু ডক্টর বলেছে টুইস্ট হবে…

আদিবার কথা শুনে অরনি জোরে বললো… কিকককক..

অরনির কথা শুনে সবাই তার দিকে বিরক্ত নিয়ে তাকায় তা দেখে অরনি কাঁদো কাঁদো মুখে বললো… তোমরা সবাই বেবি নিচ্ছো কিন্তু ওই প্রাপ্য আমাকে বেবি নিতে দেবে না এখন। বলেছে মাস্টার্স কমপ্লিট না হওয়া পর্যন্ত বেবি নেবে না। আমি বেবি নেবো দিদিয়া তোর দেবরকে বল আমি বেবি নেবো।

অরনির কথায় আদিবা আর আয়রা হাসতে লাগলো। অন্তু বিরক্তি নিয়ে বললো… টেনে দেবো এক চর বেয়াদব মেয়ে একটা। ভাইয়া যা বলেছে তাই ঠিক পড়াশোনা শেষ কর তারপর সব হবে। আদিবা ভাইয়া জানে এই কথা।

আদিবাঃ হুমম জানে কাল ডক্টর বলেছে তা শুনে আদি অনেক খুশি হয়েছে কিন্তু কাউকে এখনো বলা হয়নি কিন্তু এখন বলাম। তোরা খুশি না…

সবাই এক সাথে বলে…. অনেক খুশি….

সবাই এক সাথে হেসে উঠলো। তাদের হাসির শব্দ শুনে আয়ান, আদি, প্রাপ্য, অর্ণব তাদের কাছে এসে সবাই সবার বউদের কাছে গিয়ে বসলো। অর্ণব অন্তুকে কেমন করতে দেখে বললো…

অর্ণবঃ জান খারাপ লাগছে?

অন্তুঃ না

অন্তুর কথা শুনে অর্ণব আর কিছু বললো না কিন্তু এদিকে অন্তুর শরীল আরো খারাপ হতে লাগলো কিন্তু সে কাউকে বুঝতে দিলো না সে সবার কথা দিকে মন দিলো… আদি বললো..

আদিঃ আয়ান আর আমার নতুন একটা প্রজেক্ট লন্স হবে সামনের মাসে।

অন্তুঃ কংগ্রেস দাদাভাই।

অর্ণবঃ কংগ্রাচুলেশন দাদাভাই, আয়ান

আয়ানঃ থ্যাঙ্ক ইউ বোনু, অর্ণব

প্রাপ্যঃ অরু মিষ্টি নিয়ে এসো সবার জন্য..

প্রাপ্য কথা শুনে অরনি তাই করলো সে কিচেন থেকে মিষ্টি নিয়ে এসে সবাইকে মিষ্টি খাওয়াতে লাগলো। আয়ান বললো…

আয়ানঃ বোনু আনভি কোথায়? তাকে তো দেখছি না?

অন্তুঃ ভাইয়ু আনভি স্কুলে গেছে বাবাই তাকে আনতে গেছে একটু পরে চলে আসবে।

আদিঃ অন্তুপাখি তোমার শরীল এখন কেমন?

অন্তুঃ এখন ভালো দাদাভাই।

আয়রাঃ অর্ণব ভাইয়া অন্তুকে কি আমরা নিয়ে যাবো মির্জা বাড়িতে।

আয়রা কথা শুনে সবাই চুপ হয়ে যায়। অন্তু মুখটা ছোট হয়ে যায় কারন অর্ণব তাকে সেদিনের পর থেকে মির্জা বাড়িতে যেতে দেয় না। অর্ণব বললো…

অর্ণবঃ ভাবি আপনি চিন্তা করবেন না আমি অন্তুর খেয়াল রাখবো ঠিক ভাবে। যদি দরকার পরে তাইলে আপনার সবাই এখানে এসে অন্তুর খেয়াল রাখবেন কিন্তু অন্তুকে আমি মির্জা বাড়িতে কেন তাকে আমার থেকে দূরে কোথাও যেতে দেবো না সরি।

আয়রাঃ কিন্তু ভাইয়া…

আয়রাকে কিছু না বলতে দিয়ে আয়ান বললো… অর্ণব বোনুকে কেউ তোমার থেকে নিয়ে যাবে না। দরকার পরলে আমরা সবাই আসবো তুমি চিন্তা করো না।

অর্ণবঃ ধন্যবাদ আয়ান।

সবাই হাসে খুশি ভাবে কথা বলতে লাগালো। কিন্তু এদিকে অন্তু পেটে হাত দিয়ে চোখ মুখ খিঁচে বসে আছে তার শরীল অস্থির লাগছে, জোরে জোরে নিঃশ্বাস টানতে লাগলো। অন্তুকে এভাবে দেখে অর্ণব তাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে অস্থির হয়ে বললো…

অর্ণবঃ অন্তু এই অন্তু কি হলো তোমার? এমন করছো কেন তুমি?

অর্ণবের কথা শুনে সবাই অন্তুর দিকে তাকালে ঘাবড়ে যায় কেননা অন্তুর শরীল খারাপ করছে আর তা দেখে অর্ণবের অবস্থা খারাপ হচ্ছে। অন্তু চোখ থেকে অঝরে জল গড়িয়ে পরছে, সারা শরীলে ঘেমে যাচ্ছে আর অর্ণবকে কিছু বলতে চাচ্ছে কিন্তু পারছে না বলতে। অর্ণব অন্তুকে এভাবে দেখে পাগল পার হতে লাগলো, তার মাথা কাজ করছে না কি হয়েছে তার। অন্তু অনেক কষ্টে বললো…

অন্তুঃ অ র্ণ ব পেটে ব্যা থা ক রছে.. প্লি জ কিছু ক রো

আর কিছু বলতে পারছে না। অন্তু ভাঙা গলার কথা শুনে অর্ণবের ভেতটা ধক করে ওঠে। অন্তুর এখন তো পেন ওঠার কথা না তাইলে কি ভাবে এমনটা হলো। অন্তুর ব্যাথা সহ্য করতে না পেরে জোরে জোরে কান্না করতে লাগলো, অন্তু কান্না শুনে অর্ণবের হুশ আসে সে অন্তুর পাঁজাকোলে করে তুলে নিলে অন্তু তার গলা জড়িয়ে ধরে রাগলো। অর্ণব তারাতাড়ি করে গাড়িতে গিয়ে বসলো পিছে অন্তুকে নিয়ে সামনে আয়ান প্রাপ্য বসে হসপিটালে নিয়ে গেলো। তার পিছু পিছু বাকি সবাই যেতে লাগলো আর মির্জা বাড়িতে অন্তু খবর দিয়ে দিলো….
#তুমি আসবে বলে
#অপেক্ষার প্রহর
#Sondha Halder
#অন্তিম-পর্ব

পাপা পাপা কোথায় তুমি দেখো ভাইয়ু কান্না করছে আমি কিছুতেই সামলাতে পারছি না। তুমি তারাতাড়ি এসো ভাইয়ু রাগ করে আমার চুল ছিঁড়ছে প্লিজ… কথাগুলো বলে আনভি ছোট অভির হাত থেকে নিজের চুলগুলো ছাড়াতে লাগলো। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না সে ব্যাথা পাচ্ছে কিন্তু সে তাও অভির কান্না থামানোর চেষ্টা করছে সে। (হয়তো আপনারা অভি কে চিন্তে পারছেন না তাই আমি বলে দিচ্ছি অভিকে, অভি হলো অর্ণব আর অন্তু ছেলে। তার বয়স মাত্র ১০মাস। বাকিটা পরে বলবো) আনভি কথা শুনে অর্ণব স্টাডি রুম থেকে তার রুমে চলে এসে দেখে আনভি অভির ছোট হাতের মুঠো থেকে তার চুল ছাড়াছে আর তার কান্না থামানোর চেষ্টা করছে। অর্ণব তা দেখে মুচকি হাসতে লাগলো এটা ভেবে অভি সব সময় আনভি চুল ধরে ছেড়ে কিন্তু এতে আনভি রাগ করে না সে আরো বেশি আনন্দ পায় আর বলে… আমার ভাই আমার চুল ছিড়ুক বা আমার গাল খামচাক এতে তোমাদের কি? আমার ভাই আমার আদরের লক্ষীসোনা তাই তাকে বকবে না, না হলে সবাইকে বকবো আমি। তখন আনভির কথা শুনে সবাই হতভম্ব হয়ে যায় কারন আনভি তার চুল ধরা বা ছেড়ে পছন্দ করে না। কিন্তু সে তার ভাইকে এতো ভালোবাসে যে তার পছন্দের জিনিস ও তার ভাইয়ের কাছে তুচ্ছো। অর্ণব গিয়ে অভি হাতের মুঠো থেকে অতি কষ্টে আনভির চুল ছাড়িয়ে নিয়ে অভিকে কোলে তুলে সে চুপ হয়ে যায়। এদিকে আভির থেকে নিজের চুল ছাড়া পেতেই আনভি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সামনে তাকিয়ে অভির কান্ড দেখে কাপট রাগ দেখিয়ে বললো…

আনভিঃ ওরে পাঁজি ছেলে আমাকে এতখন ইচ্ছে মতো জ্বলিয়ে এখন পাপার কোলে গিয়ে লক্ষীছেলে হয়ে গেছো তুমি। দাড়াও আজ মাম্মাকে তোমার নামে নালিস দেবো আমি..

আনভির কথা শুনে অভি কি বুঝলো জানি না সে ঠোঁট উল্টে কান্না করে দিলো তা দেখে অর্ণব তার পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো…

অর্ণবঃ না আব্বু আপুনি মাম্মাকে নালিস করবে না তুমি কান্না থামাও। সোনা ছেলে কান্না করে না।

কিছুখন হাত বুলালে সে চুপ হয়ে যায় তা দেখে অর্ণব আনভি ফিক করে এসে ফেলো। অর্ণব অভিকে বেডে বসিয়ে দিয়ে খেলনা এগিয়ে দিলো তার খেলার জন্য আর সে তাই নিয়ে খেলতে লাগলো (অভি এখন বসতে, হামাগুড়ি, আদো আদো কথা বলতে পারে। তার সামনে দুটো দাঁত ও হয়েছে আর সেটা দিয়ে সে আনভিকে কামরো দেয়) অর্ণব একবার আনভিকে দেখে মেয়েটা সবেমাত্র স্কুলে থেকে এসেছে, স্কুল ড্রেসও ছাড়েনি, আর সে তার ভাইয়ের কাছে চলে এসেছে। অর্ণব আনভিকে তার কোলে বসিয়ে বললো…

অর্ণবঃ আম্মু স্কুল থেকে এসে ইউনিফর্ম না চেঞ্জ করে ভাইয়ের কাছে কেন এসেছিলে। যদি মাম্মা দেখতো তাইলে তোমাকে বকতো তখন।

আনভিঃ ওফ ও পাপা আমি হাত মুখ ধুয়ে তারপর ভাইয়ুর কাছে এসেছিলা তাকে আদর করতে কিন্তু পাঁজি ছেলে আমাকে বার বার নতুন ভাবে জ্বালায় সারাখন। আমি আদর করে চলে আসতে নিলে সে আমার চুল টেনে ধরে সেটা ছাড়াতে গিয়ে সে কান্না করে দেয়। তাইতো না পেরে তোমাকে ডাকলাম আর মাম্মা আমাকে বলবে না বুঝলে পাপা..

অর্ণবঃ বুঝলাম আম্মু বুঝলাম। তোমার মাম্মা শুধু আমাকেই বকে সারাখন তোমাদেরকে না।

কথাটা আফসোস সুরে বললো অর্ণব। তা শুনে আনভি খিলখিল করে হাসতে লাগলো, তার পাপা আসলেই অবলা তার মাম্মা তাকে অকারনে বলে আবার ভালোও বাসে তাদের থেকে বেশি। অর্ণব বললো…

অর্ণবঃ আম্মু যাও ড্রেস চেঞ্জ করে আসো। নিশ্চয় খিদা লেগেছে আমি তোমার মাম্মাকে বলছি তোমার জন্য কিছু বানাতে।

আনভি মাথা নাড়িয়ে চলে যায় চেঞ্জ করতে। অর্ণব অভিকে কোলে নিয়ে নিচে এসে কিচেন দিকে যেতে লাগলো সেখানে তা গিন্নী রান্না করছে….
____________________________

সে তার গিন্নী কাছে যাক আর আমরা ঘুরে আসি ১০মাস আগে। সেদিন অন্তুকে নিয়ে অর্ণব হসপিটালে যায়। সেদিন অন্তুকে হসপিটালের নিয়ে যাও হয় খুবদ্রুত। ডক্টর তাকে দেখে ইমারজেনসি ভর্তি করায় আর ডক্টর মারিয়াকে ফোন করে অন্তু অবস্থা সম্পকে যানায় কারন অন্তু শারিরীক অবনতি হচ্ছে দেখে ডক্টর তাকে ওটিতে নিয়ে যাবে তখন অন্তু অর্ণবের হাত ধরে বলে…

অন্তুঃ অর্ণব আমি তোমার সাথে থাকতে চাই প্লিজ…

অর্ণব অন্তু কথা শুনে ভাঙা গলায় তাকে অশ্বাস্ত করে বললো… জান তোমার কিছু হবে না। আর কে বলেছে তুমি আমার সাথে থাকবে না তুমি নিশ্চয় আমার সাথে থাকবে। তুমি শুধু একটু কষ্ট করো, দেখবে এই কষ্টের পরে আমরা সুখ পাবো। তুমি তো তোমার বেবির বেরে ওঠা দেখতে চাও, তার অদো অদো মুখে মা ডাক শুনতে চাও তাইলে প্লিজ মনে জোর রেখো তোমার তুমি আমাদের সবার সাথে থাকবো তাই চিন্তা না করে দোয়া করো সব ঠিক হবে।

অন্তু মুচকি হাসে তা দেখে অর্ণবও হাসে কিন্তু তার মনে যে কি পরিমাণ দুঃচিন্তা হচ্ছে অন্তুকে নিয়ে সেটা সে কাওকে বুঝতে দিচ্ছে না। ডক্টর অন্তুকে ওটিতে নিয়ে যায় আর এদিকে অন্তু কথা শুনে আনভি আর মি.চৌধুরী ও হসপিটালে চলে আসে। অর্ণব আনভিকে কোলে করে দাড়িয়ে আছে আর সবাই বসে অন্তুর জন্য দোয়া করছে। বেশ কিছুখন পর ছোট বাচ্চার কান্নার শব্দে পেতেই সবাই চমকে যায়, সবার মুখে হাসি ফুটে ওঠে কিন্তু অর্ণব অন্তুর চিন্তাতে মগ্ন। ডক্টর মারিয়া ছোট বেবিকে নিয়ে এসে অর্ণবের সামনে দাড়ালে অর্ণব বেবিকে দেখতে লাগলো একদম তার মতো হয়েছে। তার চোখ থেকে অশ্রুকণা বেরিয়ে এলো, আনভি তার ভাইকে দেখে কি যে আনন্দ তার ছোট হাত সে ধরে রেখেছে আনভির ঠোঁটের কোণে হাসি যেনো কয়েক গুন বেরে গেছে। অর্ণব আনভিকে নামিয়ে বেবিকে কোলে তুলে নিলো হে সে আবার বাবা হবার অনুভব করছে, ছোট হাত, মুখ, একটা ছোট প্রান ইশশ কি সুন্দর ফিলিংস। অর্ণব বেবিকে চুমু দিয়ে ডক্টর মারিয়ার দিকে তাকালে সে বুঝতে পারে অর্ণব কি বলতে চাচ্ছে সে বললো…

মারিয়াঃ মি.চৌধুরী আপনার স্ত্রী একদম ঠিক আছে তাকে কেবিনে সিফট করা হয়েছে আপনি গিয়ে দেখতে পারেন।

কথা বলে তিনি চলে যান। অন্তু ভালো আছে সবাই শুনে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলো, অর্ণব তার জান ভালো আছে শুনে তার খুশি ডোবল হলো সে আনভিকে আর বেবিকে নিয়ে অন্তুর কেবিনের গিয়ে দেখে অন্তু ঘুমিয়ে আছে হয়তো একটু পরে জ্ঞান ফিরবে। অর্ণব আনভিকে অন্তুর পাশে বসিয়ে সে টুলে বসে থাকলো আর আনভি বেবিকে নানান ভাবে বিরক্ত করতে লাগলো আর অর্ণব তা দেখে মুচকি হাসছে। তার ছোট পরিবার আজ পূরণ হলো, অন্তু যা চেয়েছে সে সব পেয়েছে। আস্তে আস্তে চোখ মিলে তাকায় অন্তু, তাকানো সাথে সাথে অর্ণব আনভির হাসি খুশি মুখ দেখে তার ঠোঁটের কোণে স্মিত হাসি ফুটলো। অর্ণব অন্তুকে দেখে তাকে এক হাতে জড়িয়ে তাকে বসিয়ে দিলো আনভি তার মাম্মাকে উৎফুল্ল সাথে বললো…

আনভিঃ মাম্মা আমার ছোট ভাই হয়েছে। আমি খুব খুব খুশি মাম্মা আই লাভ ইউ সো মাচ..

অন্তু মুচকি হেসে বললো… আই লাভ ইউ মা। ভাইকে কোলে নিয়েছো তুমি।

আনভিঃ হুমমম মাম্মা নিয়েছি। জানো মাম্মা তার হাত, পা কতো ছোট আমি তো ধরতেও পারিনি পাপা নিজের হাতে নিয়ে আমার কোলে দিয়েছে। জানো মাম্মা ভাইয়ে দাঁত নেই..

আনভির কথা শুনে অর্ণব বললো… আম্মু ভাইয়ের দাঁত উঠতে অনেক দেরি আছে চিন্তা করো না। এখন মাম্মার কোলে ভাইকে দিই।

আনভি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে। অর্ণব বেবিকে অন্তুর কোলে দিলে অন্তু তার হাত দিয়ে বাবুকে স্পর্শ করতে লাগলো হে সে এখন সদ্যবাচ্চার কোলে নেবার অনুভূতি পেয়েছে সে যা চেয়েছিলো সে তা পেয়েছে, তার ছোট হাত,পা, মুখ, গাল, চোখ সব জায়গায় অন্তু চুমুতে ভরিয়ে দিতে লাগলো তা দেখে অর্ণব তাকে একপাশ দিয়ে জড়িয়ে ধরলো। অন্তু অশ্রুসিক্ত চোখে অর্ণবের দিকে তাকিয়ে বললো…

অন্তুঃ অর্ণব আমাদের ছেলে। আমি তাকে ছুঁতে পারছি, আদর করতে পারছি, আমি তো এটাই চাইতাম সব সময়। অর্ণব…

আর বলতে পারলে না সে কান্নার ফলে অর্ণব আজ অন্তুকে কান্না করতে দিলো সে জানে আজ অন্তু তার জীবনের অনেক বড় খুশি পেয়েছে তাই তাকে থামানো যাবে না। আস্তে আস্তে সবাই অন্তুর সাথে দেখা করতে লাগলো আর ছোট বাবুকে কোলে নিতে লাগলো। অর্ণব অন্তু জীবনে এই বাবুকে ঘিরে চলতে লাগলো। অন্তু শখ করে তার ছেলের নাম রাখে অভি চৌধুরী।
______________________________

অন্তু এক মনে কিচেনে কাজ করছে, আনভি স্কুল থেকে এসেছে তার খিদে পেয়েছে তাই সে তারাহুলো করছে সব কিছুতে। অন্তুকে তারাহুরো করতে দেখে অর্ণব বললো…

অর্ণবঃ আরে আরে জান কি করছো কি তুমি। সাবধানে কাজ করো তোমার হাত লাগবে।

অর্ণবের কথা শুনে অন্তু একবার তার দিকে তাকিয়ে আবার নিজের কাজে মন দিয়ে বললো… অর্ণব প্লিজ ডিস্টার্ব করো না আনভির বোধয় খিদে পেয়েছে মেয়েটা স্কুল থেকে এসে এখনো কিছু খাইনি। আর তুমি অভিকে কেন কিচেনে নিয়ে এসেছো?

অর্ণবঃ জান তুমি একটু শান্ত হয়ে দাড়াও আমি বলছি কি হয়েছে। আমার দিকে তাকাও।

অর্ণবের কথা শুনেও না শোনার ভান করে অন্তু কাজ করতে লাগলো তার। অর্ণব অন্তুর দিকে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষণ সে বুঝতে পারে না মেয়েটা কেন তার কথা শুনতে চায় না। অন্তু এটা ওটা নিতে লাগলো আর অর্ণব এক মনে তার দিকে তাকিয়ে আছে লাল গোলাপি মিশ্রণে শাড়ি পরিধান, হালকা করে হাত খোপা করা, শাড়ির আঁচল কোমরে গুজে রাখা, বিন্দু বিন্দু ঘাম তার ঘারে আর মুখে চুয়ে পরছে আর সে মুখে আবার এক মনে কাজ করছে তা দেখে অর্ণবের চোখে ঘোর লেগে গেছে। অন্তু কাজ করতে করতে হঠাৎ অর্ণবকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভড়কে যায়, অন্তু উচু গলায় বললো…

অন্তুঃ কি করছো কি আনভির পাপা ছেলেটা ঘেমে যাচ্ছে তো।

অন্তুর কথা শুনে অর্ণবের হুঁশ হয়। অর্ণব বোকার মতো তাকিয়ে থাকলো তা দেখে অন্তু রাগ লাগছে সে রেগে বললো… তুমি যাবে কিচেন থেকে না-কি আমি কিছু করবো।

অন্তুকে তেরে আসতে দেখে সে তারাতাড়ি কিচেন থেকে বেডিয়ে যায়। তা দেখে অন্তু হাসতে লাগলো। অন্তু তার কাজ করতে লাগলো…
____________________________________

দুপুর-১ঃ৩০

ডাইনিং টেবিলের সবাই এক সাথে খেতে বসেছে, অন্তু সবাইকে খেতে দিচ্ছে আর সবাই খাচ্ছে। মি.চৌধুরী প্রাপ্যকে বললো..

মি.চৌধুরীঃ প্রাপ্য ডক্টর কি বললো। অরনিমা ঠিক আছে তো?

মি.চৌধুরী কথা শুনে সবাই প্রাপ্য দিকে তাকালো। প্রাপ্য সবার তাকানো দেখে ঘাবড়ে যায় সে আমতা আমতা করতে লাগলো আর এদিকে অরনি মাথা নিচু করে আছে। (আসলে কিছু দিন ধরে অরনি শরীল ভালো না তাই প্রাপ্য তাকে ডক্টর দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলো) অন্তু বললো…

অন্তুঃ অরু কি হয়েছে বলতো তুই। ভাইয়া তো কিছু বলতে পারছে না।

অন্তুর কথা শুনে অরনি একবার মাথা তুলে তাকিয়ে আবার মাথা নামিয়ে নিলো। অরনি আর প্রাপ্য কাজে সবাই বিরক্ত বোধ করছে কিন্তু কিছু বলতে পারছে না কেউ। তাদের মধ্যে থেকে আনভি মাছ ভাজা খেতে খেতে বললো…

আনভিঃ মাম্মা আমার নতুন ভাই বা বোন আসবে।

আনভির কথা শুনে সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে সে একটু আগে কি বলো সে বুঝতে পারলো না। অর্ণব আনভিকে বললো…

অর্ণবঃ আম্মু এই কথা কে বলো তোমাকে?

আনভিঃ কেন পাপা চাচ্চু বললো আমাকে।

আনভির কথা শুনে সবাই বুঝতে পারলো কি হয়েছে এখানে। অন্তু রাগি চোখে অরনির দিকে তাকায় অরনি চুপ করে খেতে লাগলো। তাদের কাজে সবাই ফিক করে হেসে ফেলো। অর্ণব প্রাপ্যকে বললো…

অর্ণবঃ ভাই কংগ্রেস, অরনি কংগ্রেস

প্রাপ্য+অরনিঃ থ্যাংক্সা ভাইয়া, থ্যাংক্স জিজু।

মি.চৌধুরীঃ ভালোই হয়েছে এখন আমার আরো একটা সঙ্গী হবে।

অন্তুঃ অরু আমাকে এই কথাটা বলতে পারলে না। দিদিয়া এতো পর হয়ে গেছে তোমার কাছে।

অরনি উঠে অন্তুকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বললো… না দিদিয়া এমন না। আমি সিউর হয় সবাইকে বলতে চাচ্ছিলাম তাই।

অন্তুঃ ধুর পাগলি আমি কিছু মনে করিনি। ভাইয়া কংগ্রেস

প্রাপ্যঃ ধন্যবাদ ভাবি।

সবাই অরনির বেবি নিয়ে অনেক খুশি। হেসে খেলে সবাই খেতে লাগলো…
_________________________________

রাত-১১টা,

অন্তু অভিকে ফিডিং করছে আর অর্ণবকে দেখছে। অর্ণব সারা রুম জুরে আনভিকে কোলে নিয়ে পাইচারি করছে তাকে ঘুমানোর জন্য। সারা দিন কাজ করে রাত যে একটু শান্তি পাবে ছেলেটা সেটাও পায়না অর্ণব কারন আনভিকে ঘুমানো জন্য তাকে পাইচারি করতে হয়। অর্ণব হঠাৎ অন্তুকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ইশারায় বলে কি হয়েছে তার ইশারা বুঝে অন্তু কিছু না বলে। অর্ণব আবার নিজের কাজ করতে লাগলো, কিছুক্ষণ পর অন্তুর ফোন বেজে উঠলে অন্তু তাড়াতাড়ি করে ফোন ধরে বললো..

অন্তুঃ হ্যা দাদাভাই কেমন আছো তুমি? বাড়ির সবাই কেমন আছে? অনিক অনিকা কেমন আছে?

আদিঃ ভালো আছি আমি। সবাই ভালো আছে, তোর ভাগ্নী ভাগ্না ও ভালো আছে? তোরা কেমন আছিস? অরনির কথা শুনলাম অনেক খুশি আমরা ওর জন্য। দাড়া সবাই কথা বলবে আমি ফোন লাউডে দিচ্ছি।

বলে ফোন রেখে দিলো টেবিলে, এতখন সবাই আদি চারিপাশে বসেছিলো অন্তুর সাথে কথা বলার জন্য। অন্তু অভিকে শুয়ে দিয়ে ভালো করে বসে কথা বলতে লাগলো সবার সাথে। দিদুন বললো…

দিদুনঃ অন্তু দিদিভাই বাচ্চারা কেমন আছে?

অন্তুঃ ভালো দিদুন। তোমরা সবাই এসো না তাদের দেখতে সেই কবে এসেছিলে।

আয়ানঃ বোনু আসবো আসবো। অর্ণব কোথায় ওকে অনেক বার ফোন করেছিলাম কিন্তু ফোন ধরলো না কেন?

অন্তুঃ ভাইয়ু অর্ণব আনভিকে ঘুম পারাছে হয়তে ফোন স্টাডি রুম রেখে এসেছে। কেন কিছু বলবে?

অন্তুর কথা শুনে সবাই চুপ হয়ে যায়। আয়ান আদিকে ইশারা কিছু বলতে বলছে কিন্তু সে বলতে চাচ্ছে না। পরিশেষে আয়রা বললো…

আয়রাঃ অন্তু তোমার আর ভাইয়ার সাথে কিছু কথা বলার ছিলো।

অন্তুঃ ভাবি কি হয়েছে? সিরিয়াস কিছু হয়েছে বাচ্চারা ঠিক আছে।

আদিবাঃ অন্তু বাচ্চারা ঠিক আছে। অন্য কিছু ছিলো বলার।

অন্তুঃ হ্যা বল

দিদুনঃ অন্তু দিদিভাই আমরা সবাই চাচ্ছি তোমার আর অর্ণবের বিবাহবার্ষিকী আমাদের মানে মির্জা বাড়িতে এবার করি। তুমি কি তাতে রাজি আছো?

দিদুনের কথায় অন্তু মুখ শুকিয়ে গেলে সেটা অর্ণব দেখছে কিন্তু কিছু বলছে না। অন্তু মিনমিয়ে বললো…

অন্তুঃ দিদুন তোমরা তো জানো অর্ণব আমাকে মির্জা বাড়িতে যেতে দেয় না তাইলে কি করে এটা হবে।

আদিঃ অন্তুপাখি অর্ণবের কথা আমরা এতো দিন মেনেছি কিন্তু এখন আর না। আনভি বার্থডে এখানে করতে চাইলাম কিন্তু সেটা অর্ণব করতে দিলো না তাই এখন এটা করতেই হবে।

আয়ানঃ বোনু তুই মন খারাপ করিস না আমি সকালে অর্ণব সাথে কথা বলে নেবো সে মানা করতে পারবে না এবার।

অন্তুঃ ওকে ভাইয়ু। এখন রাখছি সবাই ভালো থেকোও।

কথাটি বলে ফোন রেখে দিলো অন্তু। সে জানে ভাইয়ু যতোই বলুক না কেন অর্ণব কিছুতেই যেতে দেবে না সেখানে। অর্ণব আনভিকে শুয়ে দিয়ে অন্তুকে কোলে তুলে নিলো, হঠাৎ কোলে তুলাতে অন্তু ঘাবড়ে যায় কিন্তু যখন অর্ণবকে দেখলো তখন তার বুকে মাথা রেখে তার ঘাড় জড়িয়ে ধরলো। অর্ণব মুচকি হেসে অন্তুকে নিয়ে বেলকনিতে গিয়ে দোলনাতে বসলো অন্তুকে কোলে নিয়ে। তাদের মধ্যে নিরবতা নেমে এলো কেউ কারোর সাথে কথা বলছে না এক মনে চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে দুজনে। নিরবতা ভেঙে অর্ণব বললো…

অর্ণবঃ কি হয়েছে জান? মন খারাপ কেন?

অন্তুঃ কিছু না

অর্ণবঃ কিছুতো হয়েছে। বাড়িতে কথা বলার পর থেকে মন খারাপ করে আছো।

অন্তু মনে সাহস জোগার করে বললো… আনভির পাপা দাদাভাই আমাদের বিবাহবার্ষিকী পালন করতে চায় তাও মির্জা বাড়িতে।

কথাটা বলে চোখ বন্ধ করে নেয়ে অন্তু সে মনে করে এই বুঝি অর্ণব তাকে বকবে কিন্তু তাকে ভুল প্রমান করে অর্ণব শান্ত গলায় বললো…

অর্ণবঃ ঠিক আছে আমি দাদাভাইয়ের সাথে কথা বলে নেবনে এই বিষয়ে সকালে। তুমি মন খারাপ করে থেকো না।

অর্ণবের কথা শুনে অন্তু তাকে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে সে বিশ্বাস করতে পারছে না অর্ণব তাকে মির্জা বাড়িতে যেতে দিচ্ছে। অর্ণব তার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো.. পাগলি একটা এই কথায় কেউ মন খারাপ করে।

অন্তুঃ থ্যাংঙ্ক ইউ আনভির পাপা।

অর্ণব হাসলো কিন্তু কিছু বলো না। সময় আতি তারাতাড়ি চলে যায়, এই যে দেখতে দেখতে অর্ণব আর অন্তু বিয়ের ৬বছর হয়ে গেছে। এই বিয়ে নিয়ে অন্তু কি না নাকানি চুবানি খাইয়েছিলো অর্ণবকে ভাবতে হাসি পায় এখন তাদের। সবাই সবার জীবনে এগিয়ে গেছে অনেক, আদি আর আদিবার টুইনস বেবি হয়েছে একটা ছেলে একটা মেয়ে। ছেলের নাম অনিক মেয়ের নাম অনিকা। আয়ান আয়রাও হেপ্পি আছে অয়নকে নিয়ে, তাদের পরিবারেও নতুন অথিতি আসছে খুব শীগ্রই। দিদুন, চাচ্চু, চাচী সবাই ভালো আছে। নাহিদ আর সারা তার মেয়ে নিয়ে এখন চট্টগ্রাম থাকে, তারাও সুখে আছে। প্রাপ্য আর অরনি ও ভালো আছে। অর্ণব অন্তু ও তাদের ছোট কুঠিরে ভালোই দিন যাচ্ছে।

অর্ণবঃ জান..

অন্তুঃ হুমমম

অর্ণবঃ হেপ্পি ম্যারেজ এনিভারসিরি জান…

অন্তু চমকে তার দিকে তাকায়। রাত ১২বেজে গেছে তার মানে তাদের তো আজ ম্যারেজ এনিভারসিরি। কত কষ্টের পরে এই মূহুর্তে গুলি আসছে তাদের জীবনে। অর্ণব অন্তু অধরে নিজের অধর ছুয়ে দিয়ে বললো…

অর্ণবঃ জান তোমার মনে আছে আমাদের প্রথম দেখা। তুমি আমাকে না চিনে না জেনে আই লাভ ইউ বলছিলে।

অন্তু মাথা নাড়ায় তার মনে থাকবে না কেন সেদিনের কথা। সেদিনই তো তার জীবন পাল্টে দিলো সে এমন একজন অচেনা মানুষকে আই লাভ ইউ বলেছিলো যে কিনা তার জীবনে পরিনতো হয়েছে। অন্তু মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে। অর্ণব আবার বললো…

অর্ণবঃ আমি জানি সেদিন তুমি ইচ্ছে করে বলো নি তোমাকে র্যাগ দেওয়া হয়েছিলো তাই বলেছিলে। কিন্তু তোমার মুখে সেই ভালোবাসি শুনে আমি আমার অনুভূতি গুলো লুকাতে পারিনি। তারপর তোমার সাথে বন্ধুত্ব, তোমার আমার প্রতি অধিকার খাটানো আমার অনুভূতি গুলোকে ভালোবাসাতে রুপান্তর করে। এরপর সেদিন জ্বের ঘোরে তোমাকে কিস করতে যাও, তারপর নবীন বরণের দিন নিজের ভালোবাসা শিকার করা। আামদের ভালোবাসা, খুনশুটি, আমাদের বিয়ে, আমাদের কাছে আসা, আনভির কথা, সব কেমন তাড়াতাড়ি হয়ে যাওয়া তাই না। তারপর আমাদের বিচ্ছেদ অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটনা, আমাকে রোদ হয়ে তোমার জীবনে আসা, আমার সত্যি জানে, আবার বিয়ে আমাদের, তারপর অভি হবা। সব কিছু স্বপ্নের মতো লাগা।

অন্তুঃ হুমম। আমাদের ছোট জীবনে অনেক কষ্ট পেতে হয়েছে। কিন্তু এখন আর না আমাদের ভালোবাসা আর কোনো পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যাবোনা। আমাদের ভালোবাসা এখন ভালোবেসে যাবে…

অর্ণবঃ হ্যাঁ জান যাবে। আমি তোমাকে অনেক কষ্টে পেয়েছি তাই হারাতে চাইনা। আমি, তুমি, আনভি, অভি সবাই মিলে একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়বো। যেখানে কেনো কষ্ট থাকবে না থাকবে শুধু ভালোবাসা। আই লাভ ইউ জান..

অন্তুঃ আই লাভ ইউ অর্ণব..

অন্তু অর্ণবকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তার বুকের মাঝে লুকিয়ে থালো, অর্ণব অন্তুকে জড়িয়ে ধরে পারি জময়া নতুন একটা সুখের সন্ধানে। এই ভালোবাসা কখনো শেষ হবার নয় শুধু দিনে দিনে বাড়বে। অর্ণবের মনে অন্তুর জন্য অবাধ্য ভালোবাসা সমুদ্রে হাজারো ঢেউ হয়ে থাকবে। নতুন করে, নতুন ভাবে, নতুন রুপে তারা তাদের ভালোবাসা পূরণ করনে…. বেঁচে থাক তাদের ভালোবাসা এভাবেই…..

______________________সমাপ্ত___________________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here