তুমি আসবে বলে পর্ব -৬০+৬১+৬২+৬৩

#তুমি আসবে বলে
#অপেক্ষার প্রহর
#Sondha Halder
#পর্ব-৬০

অন্তু কোথায় যাচ্ছো তুমি… তারাহুরো করে বলতে বলতে বেলকনি থেকে দৌড়ে আসলো অর্ণব। অন্তু দরজার কাছে থেকে এমন কথা শুনে পিছন ঘুরে দেখে অর্ণবকে তারাহুরা করে তারদিকে আসছে। অন্তু দুপুর থেকে অর্ণবকে দেখছে সে কোথাও একলা যেতে গেলে সে কেমন হাসফাস করছে আর তাকে যেতে দিচ্ছে না একলা কোথাও। অন্তু বিরক্ত নিয়ে বললো…

অন্তুঃ কি হয়েছে কি তোমার আজ। দুপুর থেকে দেখছি এমন অস্থির হয়ে আছো, আর আমার কোথাও যেতে দেখলে তোমার এমন লাগছে কেন আমি কি বাচ্চা যে হারিয়ে যাবো।

অন্তু কথাশুলো বলে দম নিলো। এদিকে অর্ণব নিজের মাথা চুলকিয়ে মিনমিনে বলো… এই রে এখন রনোচন্ডীকে রাগিয়ে ঠিক হলো না, জানি না এখন সে কি কি ঝড় আমার ওপর দিয়ে দেবে।

অন্তু অর্ণবের কথাশুলো বুঝতে না পেরে বলো…. কি বলছো জোরে বলো।

অর্ণবঃ মানে বলছি কোথায় যাচ্ছো তুমি?

অন্তুঃ আনভিকে নিতে ভাবির রুম থেকে।

অর্ণবঃ ঠিক আছে যাও। তারাতাড়ি এসো কিছু কথা বলার আছে তোমার সাথে।

অন্তু আর কিছু বলো না সে চলে যায় আনভিকে আনতে, অর্ণব তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে শ্বাস ছাড়া। না জানি কি হবে সামনে…
______________________________________

আনভিঃ মামি ভাইয়ের দাঁত নাই কেন? আমার সাথে কথা বলে না কেন? সেকি আমার সাথে রাগ করেছে।

বলে অয়নের গায়ে হাত দিয়ে নড়তে লাগলো আর অয়নে হাসতে লাগে। এদিকে আনভির কথা শুনে আয়রা আর আয়ান হাসতে লাগলো, আনভির মিষ্টি মিষ্টি কথা শুনে তারা হাসতে লাগে কি বলে মেয়েটা অয়ন মাত্র ৪মাস বয়স সে কিনা কথা বলবে, তার নাকি দাঁত উঠবে। আয়রা বললো…

আয়রাঃ আনভিসোনা অয়ন ভাইয়া এখনো অনেক ছোট্ট তাই সে কথা বলতে পারে না আর তার দাঁত এখন উঠবে না। সে যখন একটু বড়ো হবে তখন সে সব করতে পারবে বুঝলে…

আনভি কি বুঝলো না বুঝলো সে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললো। এদিকে আয়ান আনভির দিকে তাকিয়ে থাকে তার সামনে ছোট্ট অন্তু বসে আছে মনে হচ্ছে। আয়ান বললো…

আয়ানঃ আনভিসোনা এদিকে আসো আমার কাছে।

আনভি অয়নের থেকে সরে এসে আয়ানের কাছে যায়। আয়ান তাকে নিজের কোলে বসিয়ে নিয়ে বললো… আনভিসোনা আমাকে চিনতে পারো নাই এখনো।

আনভি মাথা নাড়িয়ে বললো… না, তা দেখে আয়ান বললো… আমি তোমার ছোট্ট মামু। যে তোমার সাথে ফোনে কথা বলতো আর তুমি মামু মামু করে পাগলামি করতে সেই মামু এখন চিনেছো।

আনভি আয়ানের কথা শুনে খুশি হতে লাগলো সে সব সময় তার মামুকে দেখতে চায়তো আর আজ সেই মামু তার সামনে দেখে তার খুশি ধরছে না। আনভি আয়ানকে জড়িয়ে ধরে তার গালে চুমু খেতে লাগলো, আনভির কাজে আয়রা আর আয়ান বিস্মিত তার আনভিকে এভাবে আয়ানকে আদর করতে দেখে। আনভি বলো..

আনভিঃ মামু আমি তোমার কথা সবাইকে বলতে চায়ছি কিন্তু ভুলে গেছি। আদি মামুকে দেখে তোমার কথা মনে পরতো কিন্তু বলতে পারিনি। তুমি আমাকে আগে বলনি কেন তুমিই আমার ফোনদেওয়া মামু। আমি রাগ করেছি কিন্তু।

আয়ান আনভির অভিমান দেখে তাকে আদর করে বললো… সরি আনভিসোনা আমি এতো এতো কাজে ছিলাম বলার সময় হয়নি। এখন বলছি তাই তুমি রাগ করে থেকো না ওকে সোনা

আনভি হেঁসে বলো.. ওকে।

আয়ানঃ মামুনি এই কথা কাউকে বলো না আমি আগে তোমার সাথে কথা বলতাম ওকে।

আনভি মাথা নাড়িয়ে বলো কেন? আয়ান বলো… এটা আমাদের সিক্রেট তাই। আনভি আয়ানের কথা মনে সে কাউকে বলবে না বলে দেয়। তাদের কথার মাঝে অন্তু এসে বললো…

অন্তুঃ আনভিমা চলো ঘুম ঘুম দিয় পাপা ওয়েট করছে।

অন্তুর কথায় সবাই তার দিকে তাকায় আনভি বেড থেকে নেমে অন্তুর কাছে গেলে সে তাকে কোলে তুলে নেয় তারপর আয়রাকে বলো…

অন্তুঃ ভাবি আনভি অয়নকে মারেনি তো, আসলে অনেক দুষ্টুমি করে তো তাই বলছি।

আয়রাঃ তোমার মেয়ে অয়নের কিছু করেনি সে তো অয়নে দাঁত নেয় কেন? অয়ন কথা বলে না কেন তার সাথে এমন অনেক প্রশ্ন করে মাথা ব্যাথা করে দিলো। বলো তো অন্তু এর উত্তর কি দেবো তাও বুঝিয়েছি কিন্তু কি বুঝলো যানি না।

আয়রার কথা শুনে অন্তু হাসতে হাসতে বলো… আনভিমা অয়ন এখনো ছোট্ট তাই কথা বলতে পারে না তুমি একটু ওয়েট করো দেখো সে তোমার থেকেও বেশি কথা বলবে।

আনভিঃ মাম্মা ভাইকে আমার নিয়ে যাবো না আমাদরে বাড়িতে।

অন্তুঃ নিয়ে যাবো তো তোমার অরনি খালামনি সাথে তোমার চাচ্চুর বিয়ে হবে তখন ভাইকে নিয়ে যাবো।

আনভি কিছু বলো না সে অন্তুর গলা জড়িয়ে ধরে থাকলো। আয়রা বললো… অন্তু প্রাপ্য বাসায় চলে গেছে।

অন্তুঃ হ্যাঁ ভাবি রাতের খাবারের পর চলে গেছে তুমি তখন অয়নকে নিয়ে রুমে ছিলে। বাড়িতে গিয়ে ফোন দিয়েছিলো।

আয়রাঃ ঠিক আছে তুমি যাও গিয়ে ঘুমিয়ে পরো কাল তো তুমি বাড়ি চলে যাবে। বাড়িতে গিয়ে আবার বিয়ের কাজ শুরু করতে হবে কেন যে সবাই বিয়ে দেবার জন্য এতো তারাহুরো করছে। মাত্র ২ সপ্তাহে মধ্যে কেমনে অরনি বিয়ের কাজ শেষ হবে।

অন্তুঃ ভাবি চিন্তা করো না সব হয়ে যাবে। তুমি অয়নেক ঘুমপারাও আমি গেলাম।

অন্তু যেতে নিলে আয়ান তাকে থামিয়ে বললো… অন্তু রোদ তোমাকে কিছু বলেছে কি?

অন্তুঃ না তো কেন কি বলবে?

আয়ানঃ কিছু না তুমি রুমে যাও সোজা কোথাও যাবে না।

অন্তু মিনমিন করে বললো.. সবাই শুধু আমাকে নিয়েই কেন পরেছে। আরে ভাই আমি কি ছোট্ট বাচ্চা নাকি ধুর ভালো লাগে না।

আয়ান অন্তুর মিনমিনানি শুনে বললো… তুমি এখনো ছোট্ট বাচ্চায় আছো আমাদের কাছে তাই চুপচাপ রুমে যাও সোজা।

আয়ানের কথা শুনে অন্তু মুখ ভেংচি কেটে চলে যায়। অন্তু ভেংচি কাটা দেখে আয়ান আয়রা জোরে জোরে হাতে লাগলো। আয়ান হাসতে হাসতে বলো…

আয়ানঃ পাগলি এখনো বাচ্চাই রয়ে গেলো।

আয়রাঃ আয়ান অন্তু আগের মতো হচ্ছে তাইনা। এইসব শুধুমাত্র অর্ণব ভাইয়ার চেষ্টায় হয়েছে তিনি অন্তুকে এতোটা ভালোবাসেন যে সব করতে পারে তার জন্য। অন্তু যেন এই ভাবে থাকে সব সময়।

আয়ানঃ হ্যাঁ অর্ণব তার ভালোবাসা দিয়ে অন্তুকে আগের মতো করেছে। কিন্তু সামনে যা হবে সেটা থেকে অন্তুকে কিভাবে রক্ষা করবে যানি না।

আয়রাঃ ভাইয়া ঠিক অন্তুকে নিজের জীবন দিয়ে রক্ষা করবে দেখে নিও।

আয়ান কিছু বলো না আয়রা অয়নকে ভালোভাবে শুয়ে আয়ানকে জড়িয়ে ধরে থাকে। সে জানে আয়ান এখন অন্তুকে নিয়ে চিন্তিতো, আজাদ মির্জা নতুন কি করবে তারা কেউ যানে না কিন্তু সে ভয়ানক কিছুতো করবে। আয়ান আয়রাকে জড়িয়ে ধরে সে ভাবে…. সব কিছু ঠিক করতে হলে আজাদ মির্জা শাস্তি দরকার তাকে জেলে না হয় মৃত্যু হলে সবাই শান্তিতে থাকবে। আয়ান মনে মনে ডিসিশন নিয়েছে এবার যদি অন্তুর কোন ক্ষতি হয় সে নিজে রুখে দাঁড়াবে আজাদ মির্জা বিরুদ্ধে, সে অন্তুকে রক্ষা করতে সব কিছু করতে রাজী আছে……
________________________________

অর্ণব আনভিকে কোলে নিয়ে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু আনভি কিছুতেই ঘুমাতে চাচ্ছেনা, সে তার মাম্মার কাছে ঘুমাবে বলে জেদ ধরেছে আর অন্তু ওয়াশরুমে গিয়েছে। অর্ণব বললো…

অর্ণবঃ আম্মু আগে তো এমন জেদ করতে না আমার কাছে লক্ষীমেয়ে মতো ঘুমাতে কিন্তু মাম্মা আসার পর থেকে দেখছি তুমি তোমার মাম্মার মতো জেদি হয়ে গেছো।

আনভিঃ পাপা আমি কি মাম্মাকে বলবো তুমি তাকে জেদি বলছো।

আনভির কথা শুনে অর্ণব তারাতাড়ি বলো… কি করতে যাচ্ছো আম্মু, পাপাকে কি মেরে ফেলতে চাও মাম্মাকে এটা বলে। তোমার মাম্মার যে রাগ না জানি তার হাতের সামনে যা কিছু পাবে সেটা দিয়ে আমার মাথা ফাটিয়ে দেবে। তাই পাপার কথা মাম্মাকে বলো না আম্মু

অর্ণবের কথা শুনে আনভি খিলখিল করে হাসতে লাগলো। অর্ণব আবার আনভিকে ঘুমাতে লাগলো কিন্তু ফল সরুপ ফলাফল শূন্য তাই সে আর চেষ্টা করলো না। অন্তু ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে দেখে আনভি এখনো ঘুমায় নি সে ভ্রু কুঁচকে বললো…

অন্তুঃ অর্ণব আনভি এখনো ঘুমায়নি কেন?

অর্ণব অন্তুর কথা পিছন ঘুরে তারকে দেখে থমকে যায়, মেয়েটা দিনে দিনে আরো সুন্দর হয়ে যাচ্ছে, তারকে আকৃষ্ট করে বার বার, অন্তু আগের তুলনায় একটু গোলুমুলো হয়ে গেছে, তাকে দেখলেই বার বার আদর করতে চায়, যেমন এখন করছে অন্তু মুখে ওপর বিন্দু বিন্দু জলরাশী তার রুপকে মোহিত করছে। অর্ণবের চাহুনি দেখে অন্তু লজ্জা পায় সে গলা ছেড়ে বলো…

অন্তুঃ আমাকে দেখা বাদ দিয়ে যা বলছি সেটার উত্তর দাও আনভির পাপা।

বলে অন্তু মুখ টিপে টিপে হাসতে লাগলো। অর্ণবের হুঁশ আসে সে মুচকি হেসে বলো… কি আর করবো বলো জান দিনে দিনে তো তুমি আমাকে তোমার রুপে মারছো কিন্তু আজ তো একেবারে মারতে চাও তাই বলে এই ভাবে এসেছো। এটা ঠিক না জান আমার তো তোমাকে এভাবে দেখে হার্ট অ্যাটাক হবার অতিক্রম হয়ে গেছে।

অন্তু ব্যাঙ্গ করে বলো… ও ও তাই।

অর্ণবঃ ইস এভাবে বললো না বুকের বা পাশটা বিদুৎতের গতিতে ছটফট করছে।

অন্তুঃ এসব ছাড়ো আনভি ঘুমায়নি কেন?

অর্ণবঃ তোমার মেয়ে তোমার ছাড়া ঘুমাবে না। এসে তোমার মেয়েকে ঘুম আনাও।

অন্তু মুখ মুছে আনভিকে কোলে নিলে আনভি বলে… মাম্মা আমার ভাই কবে আসবে?

আনভির কথা শুনে অন্তু আর অর্ণব দুজনের মুখ চাওয়া চাইয়ি করে বললো… আসবে মা তুমি ঘুমাও।

বলে অন্তু তাকে ঘুম আসাতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর সে ঘুমালে সে তাকে নিয়ে বেডে শুয়ে পরে, অর্ণব রুম লক করে লাইট ওফ করে এসে অন্তুর পেছনে শুয়ে তার ঘাড়ে মুখ রেখে বললো….

অর্ণবঃ জান চিন্তা করো না আনভির ভাই আসবে খুব জলদি আসবে।

অন্তুঃ হুমমম।

অর্ণব কিছুক্ষণ নিরব থেকে নিজের সাথে যুদ্ধ করে সে অন্তুকে আজাদ মির্জা সত্যি বলতে সক্ষম হয়। অর্ণব অন্তুকে বললো…

অর্ণবঃ জান তোমাকে একটা সত্যি বলবো প্লিজ সবটা শুনে রিয়েক্ট করবে না। আসলে জান আমাদের সাথে যা কিছু হয়েছে সেটা আয়ান করেনি সেটা করেছে তোমার আব্বু আজাদ মির্জা, সে নিজের আধিপত্য বিস্তার করতে আমাদের ভালোবাসাকে বলিরপাঁঠা করেছে। সে ভালো মানুষ না, সে শুধু নিজের স্বার্থ ছাড়া কিছু বঝেনা, সে অনেক ভয়ংকর মানুষ, দু’মুখো সাপ সবার সামনে ভালো কিন্তু পেছনে খারাপ। সে অনেক পাপা কাজের সাথে যুক্ত তুমি বিশ্বাস করতে পারবে না সে কি কি করেছে। জান প্লিজ আয়ানকে মাফ করে দাও ছেলেটা অনেক কষ্টে আছে, তোমাকে আয়ান অনেক ভালোবাসে। অন্তু কিছু তো বলো।

এদিকে অর্ণবের কথা শুনে অন্তু একেবারে নিশ্চুপ হয়ে যায়, অন্তুকে কথা বলতে না দেখে অর্ণব ঘাবড়ে যায়। তার মনে ভয় হচ্ছে অন্তুর কিছু হয়ে যায়নি তো, সে ভয়ার্ত চেহারা অন্তুকে তারদিকে ঘুড়াতেই সে বিমূঢ়, বিস্ময়, অবাক, কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যায় অর্ণব মাথায় হাত দিয়ে তাকিয়ে আছে অন্তুর ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে। সে হাসবে না কাদবে বুঝতে পারে না, এই মেয়ে এতো ঘুমকাতুরে কেন তাকে যে সে এতো কথা বলেছে তারমানে সে কিছু শোনে নি। অর্ণব হতাশ হয়ে অন্তুকে তার বুকে নিয়ে বললো…

অর্ণবঃ এতোটা শান্তি নিয়ে তোমাকে ঘুমাতে দেখে, তোমাকে সত্যি বলতে ইচ্ছে করছে না। তুমি যখন তোমার আব্বু সত্যি যানবে তখন কি হবে আল্লাহ জানে…..

অর্ণব অন্তুর কপারে চুমু দিয়ে তার আর আনভিকে ভালো ভাবে কোম্বল দিয়ে ঘুমিয়ে গেলো…
_______________________________________

মানিক তুমি যা বলছো সব কি প্রমাণ সহকারে বলছো। আমি কিন্তু প্রামণ চায় এসবের পেছেনে কে… বলে আজাদ মির্জা গর্জে উঠে। আজাদ মির্জা কথা শুনে মানিক ভয়ার্ত কন্ঠে বললো…

মানিকঃ স্যার আপনার সন্দেহ সঠিক ছিলো রোদ চৌধুরী আসলে অর্ণব আহমেদ। মি.চৌধুরী ছেলে রোদতো অনেক আগে মারা গিয়েছে সেটা কেউ জানে না, তাই তিনি অর্ণবকে পেয়ে রোদের চেহারা অর্ণবকে দিয়ে তার ছেলে বানিয়ে রেখেছে। আর তার মেয়ে অন্তুর মৃত মেয়ে আনভি। আর এসবের পেছনে আয়ান, আদি আর অর্ণব আছে, অন্তু এখনো আপনার সত্যি জানে না। আর আপনার অবৈধ ব্যবসা সব ধংসা করে অর্ণব আর আয়ান এতে সাহায্য করেছে।

একদমে কথাগুলো বলো মানিক আর এদিকে মানিকের কথায় আজাদ মির্জা গম্ভীর হয়ে বসে থেকে উচ্চ স্বরে হাসতে লাগলো যাকে বলে পাগলের মতো হাসি। আজাদ মির্জা হাসির শব্দ শুনে মানিক ভয়ার্ত হয়ে যায় সে জানে তার স্যার কতটা ভয়ানক হতে পারে, তার স্যারের মাথায় অনেক বড় কিছু চলছে। আজাদ মির্জা বললো…

আজাদঃ মানিক অনেক দিন ধরে কোনো মৃত্যুখেলায় মাতিনি এখন মনে হচ্ছে মৃত্যুলীলায় মাতে হবে। তুমি তৈরি থেকে অনেক কিছু করতে হবে অনেকের কাছ থেকে হিসাব নিতে হবে। আমি তোমাকে বলবো কি কি করতে হবে তুমি তাই করবে।

মানিকঃ জ্বি স্যার

আজাদ মির্জা ফোন রেখে রকিং চেয়ারে বসে ভাবতে লাগলো ২মাস আগের কথা। তার মনে প্রথমেই সন্দেহ হয়েছিলো কিছু একটা তার অগোচর হচ্ছে কিন্তু কি হচ্ছে সেটা তিনি বুঝতে পারছিলো না কিন্তু হঠাৎ আদি রোদের সাথে অন্তু বিয়ে দেবার জন্য উঠে পরাতে তার সন্দেহ হয় কিন্তু অন্তু যখন এক কথায় রোদকে বিয়ে করতে রাজী হয় তখন তার মনের সন্দেহ গাঢ় আকার নেয়। যে অন্তু অর্ণব বলতে পাগল সে কিভাবে রোদকে বিয়ে করতে রাজী হলো তাও কিছু না বলে, আর তার কাছে কিছু দিন ধরে অন্তুর হাবভাব পরিবর্তন লাগছিলো, আর্ট ক্লাস বলে সারাদিন বাইরে থাকা সে সব বুঝছিলো কি ধরতে পারছিলে না। তাইতো নিজের মনের সন্দেহ মেটাতে তিনি মানিকে দিয়ে এতো কাঠখর পুরিয়ে সত্যি জেনেছে। আজাদ মির্জা বললো…

আজাদ মির্জাঃ আমার রাস্তাতে যে আসবে তাকে শেষ করতে আমার হাত কাঁপবে না। সেখানে নিজের সন্তান কেন না হয়, আমি এই এখন যেই জায়গাতে আছি সেটা তৈরি করতে অনেক কিছু করতে হয়েছে অনেক কিছু। আমি এতো সহজে তো ছাড়ার পাত্র না। প্রথম বার নিজের ছড়ানো খেলায় হারতে বসেছিলাম কিন্তু না এখন তাদের কে হারতে হবে, তোমরা কেউ আজাদ মির্জা আসল রুপ দেখনি। আমি কতোটা ভয়াবহ হতে পারি তোমাদের জন্য তোমরা কেউ কল্পনাও করতে পারবে না। কাউকে ছারবো না, কাউকে না। নিজের অধিপতি, শাসন, পাওয়ার, সম্মান, ব্যবসা সব রখাতে আমি সব করতে পারি যেমনটা অন্তুর বেলাতে করেছি। মেয়েটা ভুল করেছিলো তাই তো ভুলের শাস্তি দিয়েছে, অন্তুর জন্য তার কোটি টাকা ডিল ছিলো বলে অন্তুকে আশিকের সাথে বিয়ে দিতে চায় আর সে নারী পাচারে বড় লিডার হতে পারতো কিন্তু মেয়েটা প্রেম করে বসে, তাইতো তাকে শিক্ষা দিতে সে আয়ানকে ব্যবহার করে অর্ণবকে অন্তুর কাছে থেকে সরাতে চেয়েছিলো কিন্তু আয়ান তাকে ডাবলকরস করেছে তিনি অনেক পরে জানে। তাইতো সবার সামনে ভালো হয়ে আয়ানকে খারাপ বানিয়েছে কিন্তু অন্তু প্রেগ্ন্যাসির আর তার মায়ের জেদের কারনে সে আশিকের সাথে বিয়ে দিতে পারেনি আর আশিকও গধপ ছেলে না বুঝে বাড়ি বয়ে এসে যা নয় তাই বলে গেলো। সব তো ঠিক ছিলো কিন্তু মাঝখান থেকে আবার এই অর্ণব এসে তার ব্যবসা লাঠে তুলেছে, তার অধিকাংশ কালো ব্যবসা পুলিশ বন্ধ করেছে এতে তার কোটি কোটি টাকা লুকশান হয়েছে। এর খেশারোত সবাইকে ভোগ করতে হবে করতে হবে।

বলে চেয়ারে বসে আরামে আগামীতে কি করবে ছক কশতে থাকে। নতুন কি ঝড় বয়ে আনবে অন্তু অর্ণবের জীবনের আজাদ মির্জা, অন্তু অর্ণবের ভালোবাসা কি নতুন কোনো বড় ষড়যন্ত্রের শিকার হতে চলেছে, তারা কি শান্তিতে বসবাস করতে পারবে নাকি সারাজীবনের মতো আলাদা হয়ে যাবে…..
#তুমি আসবে বলে
#অপেক্ষার প্রহর
#Sondha Halder
#পর্ব-৬১

আজ আকাশে থালা ভরতি একফালি চাঁদ উঠেছে, চাঁদের আলো চারিদিকে ঝকঝকে করছে। নভেম্বর মাসে হারকাপানো শীতটা এখনো ভালোভাবে পরেনি, কিন্তু শীতের আমেজ পরে গেছে, ভাবাপিঠা, নানানরকম নকশি পিঠার উৎসে মেতেছে, নতুন ধানের চালের তৈরি পিঠার স্বাদে মেতেছে সবাই। রাতে ঠান্ডা বাতাস বইছে শো শো করে, অন্তু অর্ণবের কোলের মাঝে ভালোভাবে বসে তাকে জড়িয়ে ধরলে অর্ণব চাদরটা সুন্দর করে অন্তু আর তাকে মুরিয়ে নিয়ে চাঁদ দেখতে থাকে বেলকনির দোলনায় বসে। অন্তু অর্ণবের বুকে মাথা রেখে চোখ বুজে আছে আর অর্ণব তাকে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে গল্প করছে, আনভি রুমে ঘুমাছে। অর্ণব বললো…

অর্ণবঃ জান তোমার অসুবিধা হলে রুমে চলো এভাবে থাকলে তো ঠান্ডা লেগে যাবে।

অন্তুঃ উহু না আমার ভালো লাগছে আমি যাবো না। তোমার কি কষ্ট হচ্ছে আমার ভার নিতে, লাগলে তাইলে আমি এখনি উঠে যাচ্ছি।

অর্ণবঃ তোমার ভার আমি সারাজীবন নিতে পারি। তাই ফালতু কথা বলবে না।

অন্তু কিছু বলো না সে চুপটি করে শুয়ে থাকে অর্ণবের বুকে। অর্ণব তাকে বলে… আজ ডক্টর দেখিয়ে আসলে কি বলো ডক্টর আমাকে বলে না তো।

অন্তুঃ কিছু বলো না শুধু টেস্ট দিয়েছিলো কিছু তাই সেগুলো করেছি, রিপোর্ট আসতে দেড়ি আছে। তুমি গিয়ে রিপোর্ট নিয়ে এসো আমি যাবো না আর হসপিটালের গন্ধ ভালো লাগে না।

অর্ণবঃ ঠিক আছে আমি সময় করে গিয়ে নিয়ে আসবো। জান বাবাইকে বিরক্ত করনি তো হসপিটালে গিয়ে, আমি জানি তোমার হসপিটালের যেতে ভালো লাগে না, কিন্তু কি করবো বলো আমিই যেতাম তোমার সাথে কিন্তু দরকারি কাজের জন্য যেতে পারিনি সরি।

অন্তুঃ না বাবাইকে বিরক্ত করিনি আসলে আমার শরীলটা খরাপ লাগছিলো তাই আজ বাবাইকে নিয়ে গিয়েছিলাম এতে তোমার দোষ কথায়। অর্ণব চুপ থাকো ভালো লাগছে না প্লিজ শক্ত করে জড়িয়ে ধরো।

অর্ণব আর কথা বাড়ায় না সে অন্তুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে থাকে, অর্ণব বুঝতে পারছে অন্তুর কিছু হয়েছে কেমন মন খারাপ করে আছে। হঠাৎ অন্তু ফুপিয়ে কেঁদে ওঠে, অন্তু কান্না শুনে অর্ণব হচকিয়ে যায় সে ব্যস্ত হয়ে বললো…

অর্ণবঃ জান কি হয়েছে কান্না করছো কেন? কোথায় কষ্ট হচ্ছে বলো আমাকে? জান আমার কোনো কথায় বা কাজে তুমি কষ্ট পেয়েছো তাইলে আমাকে বলো?

অন্তু আস্তে আস্তে বললো… অর্ণব আমার ভালো লাগছে না কেন যেন মনে হচ্ছে তোমাকে আর আনভিকে ছেড়ে আমি কোথাও চলে যাবো। আমি তোমাদের ছেড়ে কোথাও যাবো না প্লিজ, আমার অনেক ভয় হচ্ছে। কিছুদিন ধরে অবল তাবোল স্বপ্ন দেখছি, মাথার মধ্যে কিসব উদ্ভাট চিন্তা আসছে। অর্ণব আমি যাবো না কোথাও…

বলে ফুপিয়ে কান্না করতে থাকে অন্তু। অর্ণব অন্তুর কথা আর কান্না দেখে তার বুকের মধ্যে উতালপাতাল করছে, বুকটা জ্বলছে সে অন্তুকে কি বলে সান্ত্বনা দেবে সে ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না। তার মনেও তো একি ভয় জেঁকে বসেছে সামনে কি হবে, আল্লাহ না করুক কোনো অঘটন ঘটে তাইলে সে কি করবে। অর্ণব অন্তুকে ঘুরিয়ে চোখ মুছিয়ে দিয়ে তার নেত্রপাতায় চুমু দিয়ে বললো….

অর্ণবঃ কিছু হবে না জান কিছু না। তুমি সারাদিন একলা বাড়িতে থাকো তাই এসব ভাবো, এটা কখনো সত্যি হবে না। অর্ণবের বুক থেকে অন্তুকে কেউ আলাদা করতে পারবে না কেউ না। তুমি একটু ঘুমাও তাইলে ভালো লাগবে।

অন্তুঃ আই লাভ ইউ। আই লাভ ইউ অর্ণব

অর্ণবঃ আই লাভ ইউ জান..[ বলে অন্তুর কপালে চুমু খাই]

অর্ণব অন্তুকে শক্ত করে তার বুকের মাঝে লুকিয়ে রাখে যানো কোথাও হারিয়ে না যায়। অর্ণবের চোখের কোণে ঘেষে পানি পরছে, সে যতই অন্তুকে সান্ত্বনা দিক না কেন, সে তো নিজেকে সান্ত্বনা দিতে পারছে না। অন্তু ঘুমিয়ে গেলে অর্ণব তাকে কোলে করে রুমে এনে বেডে শুয়ে দিয়ে তার পাশে বসে তার হাত ধরে বলে…

অর্ণবঃ তোমাকে আমি কিছু হতে দেবো না জান। তোমার কিছু হবার আগে আমি সেটা মাথা পেতে নেবো। তুমি নিশ্চিন্তে ঘুমাও আমি আছি তো তোমার সাথে তোমার ঢাল হয়ে।

বলে অন্তুকে ভালো ভাবে ভেকে দিয়ে সে উঠে দাড়ায় ফোন নিয়ে আয়ানকে ফোন দিলো, তাকে আজাদ মির্জা আগামী পদক্ষেপ সস্পকে সব কিছু জানতে হবে না হলে সে কিছু করতে পারবে না। সে অন্তুকে এতোটা কষ্ট দেখতে পারবে না তাকে একটা নিরাপদ জীবন দিতে চায় সেখানে আজাদ মির্জা ছায়া ও থাকবে না। থাকনে শুধু নিশ্চিতে বাঁচা আশা, ভালোবাসা, খুনসুটি, আনন্দে….
______________________________________

অরুসোনা প্লিজ দাড়াও আমার কথাটা তো শোনো। প্লিজ রাগ করে যেওনা… কথাটি বলে প্রাপ্য অরনির পিছু পিছু যেতে লাগলো। এদিকে অরনি প্রাপ্য ওপর রেগে তারাতাড়ি যেতে নিলে সে হচট খেয়ে পরতে নিলে প্রাপ্য দৌড়ে এসে তাকে ধরে নেয়। প্রাপ্য অরনিকে ধরে দাড় করিয়ে ধমুক দিয়ে বললো…

প্রাপ্যঃ এই মেয়ে দেখে চলতে পারো না আর আমি কখন থেকে তোমাকে দাঁড়াতে বলছি তুমি দাড়াছো না কেন? এতো জেদ কিসে থেকে আসে তোমার।

অরনি রেগে গজগজ করে বলো… কিসে থেকে আসে রাগ তাইনা এই বজ্জাত ছেলে তোর আসার কথা কখন আর তুই আসছিস কখন। এভাবে চলে তো দেখছি আমাকে বিয়ে আসরেও তোর জন্য ওয়েট করতে হবে। আমি বুঝি না তুমি প্রতিবার লেট কেন করিস। থাকো তুমি কথা বলতে ইচ্ছে করছে না বাই…

অরনি কথাটা বলে চলে যেতে নিলে প্রাপ্য তার হাত ধরে তার কাছে নিয়ে এসে দাঁড় করিয়ে বললো…

প্রাপ্যঃ কেন দেড়ি হয় সেটা না জেনে কোথায় যাচ্ছো তুমি আগে জেনে যাও তারপর যেও। ভাবির শরীর ভালো থাকে না বলে ভাইয়া ফ্যাক্টারিতে যেতে পারে না তাই আমি যাই, আজো গিয়েছিলাম তাই দেড়ি হয়ে গেছে। আর কি যেনো বলে বিয়ের আসরে লেট হবে আগে না আমি বিয়েতে সবার আগে গিয়ে উপস্থিত হবো কেননা বাসোর ঘরে তো জেতে হবে সেটার তর আর সইছেনা।

প্রাপ্য বেলাগাম হীন কথা শুনে অরনির লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে থাকে এটা দেখে প্রাপ্য হাসতে লাগে। অরনি লজ্জা দাবিয়ে রেখে বললো..

অরনিঃ ওসব বাদ দাও ৬ দিন পর বিয়ে সেই খেয়াল আছে তোমার। বিয়ের শপিং এখনো করা হলো না তো, কবে করবে শপিং।

প্রাপ্যঃ আগে ক্যাফেতে গিয়ে বসি তারপর সব প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি। এভাবে রাস্তার মাঝে ভালো লাগছে না।

অরনি প্রাপ্যর কথায় সমতি দেয় তার দুজন সামনের ক্যাফেতে গিয়ে বসে। (আসলে অরনি প্রাপ্য সাথে দেখা করতে এসেছিলো বিয়ের শপিং আর টুকিটাকি কি কি করতে হবে বলে কিন্তু প্রাপ্য আসতে লেট করে প্রতিবারের মতো তাই সে রেগে চলে যেতে লাগে তখন প্রাপ্য এসে এসব বলে) প্রাপ্য বলে…

প্রাপ্যঃ আসলে ব্যস্ত ছিলাম একটু ভাবি আর আনভির পাসপোর্ট নিয়ে ঝামেলা হচ্ছিল তাই। সেটা ঠিক করতে গিয়ে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হচ্ছে, তোমার পাসপোর্ট ও ভাইয়া করতে বলছে তাই একটু সময় হচ্ছে। বিয়ের পর আমরা সবাই চলে যাবো এখান থেকে আর তোমার ৪র্থ বর্ষের এক্সাম তুমি এসে দিয়ে যাবে এসব নিয়ে বাড়িতে কথা হচ্ছে তাই শপিং করতে দেড়ি হচ্ছে কিন্তু কাল পাকা শপিং যাবো।

এদেশ ছেড়ে চলে যাবার কথা শুনে অরনি মন খারাপ হয়ে যায়, বাবা-মা, দিদুন, দাদাভাই, ভাইয়া, ভাবি, অয়নকে ছেড়ে একে বারে চলে যেতে হবে তাকে ভাবতেই কান্না পাছে। অর্ণব সবাইকে বলেছে বিয়ের পরের দিন তারা সবাই লন্ডনে তাদের সেখান কার বাড়িতে চলে যাবে একেবারের জন্য। এটা শুনে সবার মন খারাপ কিন্তু কেউ আর কিছু বলতে পারেনি। প্রাপ্য অরনির মন খারাপ দেখে বললো…

প্রাপ্যঃ অরুসোনা কষ্ট পেওনা আমরা আবার এসে সবার সাথে দেখা করে যাবো কিন্তু আমাদের এখান এখান থেকে যেতে হবে। ভাবি আনভির সেফটির বেপার তাই মন খারাপ করো না, তুমি জানো ভাইয়া ভাবিকে নিয়ে কতোটা প্রটেক্টিভ।

অরনি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে। অরনি প্রাপ্য কিছু সময় কথা বলে চলে যায়….…
______________________________________

আব্বু আর কিছু লাগবে তোমার…. বলে অন্তু চায়ের কাপ আজাদ মির্জা দিকে বাড়িয়ে দিলো। আজাদ মির্জা হেসে কাপটা নিয়ে চুমুক দিয়ে বলো…

আজাদ মির্জাঃ না ছোট্ট আম্মাজান তুমি বসো আমার কাছে। বাড়িতে কেউ নেই কেন?

অন্তু আজাদ মির্জা কাছে বসে বলো… বাবাই একটু সামনে হাটতে গিয়েছে, প্রাপ্য আর রোদ অফিসে। আমি একা না মালা আছে সে কিচেনে আছে।

আজাদ মির্জা ভালোভাবে বাড়ির চারপাশটা দেখে বলো… আনভি কোথায় তাকে দেখছিনা তো?

অন্তুঃ এখনি এসে যাবে এতখন রং দিয়ে ছবি আকছিলো হাত ধুতে গিয়েছে। এসে পরবে তুমি আসবে একবার ফোন করে বলতে আমি কিছু তৈরি করে রাখতাম।

আজাদ মির্জা শুধু হাসলো, অন্তু তার সাথে কথা বলতে থাকে। (আজাদ মির্জা হঠাৎ বিকেলের দিকে চৌধুরী বাড়িতে আসে, কি কারনে আসে অন্তু জানে না কিন্তু বাড়িতে কাউকে না দেখে খুশি হয় কিন্তু মালা আছে বলে রাগ হলো মনে মনে যা প্ল্যান করে এসেছিলে তা হবে না ভেবে) তাদের কথার মাঝে আনভি এসে, সে আজাদ মির্জাকে দেখে তার কাছে গিয়ে বললো….

আনভিঃ নানুভাই তুমি কখন এলে?

আজাদ মির্জা আনভিকে তার কোলে বসিয়ে মিষ্টি করে বললো… এসেছি তো অনেকক্ষন কিন্তু তুমি এতোখান কোথায় ছিলে নানুভাই।

আনভি মুখ ফুকিয়ে বলো… রং তুলছিলাম কিন্তু রং যাচ্ছিলো না।

আজাদ মির্জা হেসে আনভির দিকে এক বক্স চকলেট দিয়ে বলো… এটা তোমার জন্য পছন্দ হয়েছে।

আনভি চকলেট নিয়ে খুশি হয়ে বলো… অনেক পছন্দ হয়েছে নানুভাই

অন্তুঃ আব্বু এতো চকলেট কেন নিয়ে আসতে গেলেন বাসায় অনেক আছে তো।

আজাদ মির্জাঃ তোমাকে তো কথা বলতে বলিনি আমার আর আমার নানুভাইয়ের মাঝে তাই চুপ থাকো তুমি। নানুভাই তোমার আর কিছু লাগলে আমাকে বলো ঠিক আছে।

আনভিঃ ঠিক আছে।

অন্তুঃ আব্বু দিদুন কেমন আছে আর বাড়ির সবাই?

আজাদ মির্জাঃ আম্মাজান ভালো আছে আর বাড়ির সবাই ও। অরনির বিয়ে নিয়ে সবাই ব্যাস্ত তাই তোমার সাথে দেখা করতে আসতে পারে না।

অন্তুঃ এখানে বিয়ে নিয়ে সবাই ব্যাস্ত।

তারা দু’জনে আরো কিছুখন কথা বলতে থাকে। এদিকে অর্ণব অফিস থেকে তাড়াতাড়ি বাড়ি এসে আজাদ মির্জাকে তার বাড়িতে দেখে চমকে যায়, সে তাকে এখানে দেখবে আশা করেনি কখনো। অর্ণব বিস্ময় নিয়ে আজাদ মির্জা দিকে তাকিয়ে থাকে কি সুন্দর করে অন্তু আর আনভিকে নিয়ে হাসি খুশিতে মেতে আছে কিন্তু তার এই হাসি খুশি মুখের আড়ালে কতোটা জঘন্য, ভয়ানক মানুষ লুকিয়ে আছে সেটা সে ছাড়া উপস্থিত কেউ জানে না। অন্তু হঠাৎ অর্ণবকে দেখে উঠে গিয়ে বললো…

অন্তুঃ কখন আসলে তুমি? আমি তো তোমাকে দেখিই নি আসতে? তুমি আমাকে ডাক দিলে না কেন?

অর্ণব আজাদ মির্জা দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে অন্তুর দিকে তাকায়, মেয়েটা কতটা হাসি খুশি লাগছে তার আব্বু এসেছে বলে কিন্তু যখন আজাদ মির্জা সত্যি জানবে তখন কি হবে এই হাসি থাকবে তো তার মুখে। অর্ণব মৃদু হেসে বলো…..

অর্ণবঃ এইতো এইমাত্র এসেছি। তোমার আব্বু কখন এসেছে বাড়িতে আর বাবাই কোথায়?

অন্তুঃ বাবাই বাড়িতে নেই আর আব্বু আধা ঘণ্টা আগে এসেছে। তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো আমি কফি নিয়ে আসছি।

অর্ণবঃ ফ্রেশ পরে হবো তুমি কফি নিয়ে আসো।

অন্তু অর্ণবের হাত থেকে ব্যাগ নিয়ে চলে যায় কফি আনতে। এদিকে আজাদ মির্জা অর্ণবকে দেখে বাঁকা হাসে সেই হাসি অর্ণবের চোখে লাগে। অর্ণব তার কাছে গিয়ে তাকে সালাম দিয়ে বলো…

অর্ণবঃ আপনি আসবেন আগে বলতেন তাইলে আমাদের সুবিধা হতো।

আজাদ মির্জাঃ এদিকে কাজ ছিলো তাই অন্তুকে দেখতে এলাম। তোমার মেয়ে ভারি মিষ্টি রোদ মনে হয় মায়ের মতো হয়েছে তাইনা।

অর্ণব ভ্র-কুচকে বললো… হ্যাঁ আনভি তার মায়ের মতো হয়েছে।

আজাদ মির্জা আনভির গালে হাত বুলাতে বুলাতে বলো… মেয়েকে আর মেয়ের মাকে সাবধানে রেখো, না জানি কখন কি হয়ে যায়।

আজাদ মির্জা কথা শুনে অর্ণব থমকে যায় কি বলেন তিনি এইমাত্র মা মেয়েকে সাবধানে রাখবে মানে তিনি কি তাকে বাড়ি বয়ে এসে থেট দিচ্ছে। অর্ণব বললো… মানে?

আজাদ মির্জাঃ মানে কিছু না এখনতো বাচ্চাদের অনেকে ক্ষতি করে তাই বলছি একা একা কোথাও পাঠিয়ো না।

অর্ণব কিছু বলতে যাবে তার আগে অন্তু এসে পরে তাই সে কিছু বলতে পারে না। তা দেখে আজাদ মির্জা শয়তানি হাসি দিয়ে বললো…

আজাদ মির্জাঃ ছোট আম্মাজান আজ তাইলে আসি পরে আবার আসবো।

অন্তুঃ সেকি আব্বু তোমার জামাই তো এইমাত্র এলো কথা বলো পরে যেও।

আজাদ মির্জাঃ না ছোট আম্মাজান পাটি অফিসে কাজ আছে। তাই যেতে হবে এখন তো যাওয়া আসা লেগেই থাকবে জামাই বলে কথা।

অন্তুঃ তাও

আজাদ মির্জা আনভিকে কোলে থেকে নামিয়ে অন্তুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে অর্ণবের কাছে এসে নিচু স্বরে বললো… কথাটা মনে রেখো মেয়ে আর মেয়ের মাকে সাবধানে রেখো। সামনে যা হতে চলেছে তার জন্য প্রস্তুত থেকো বাবাজীবন। আসি…

বলে আজাদ মির্জা চলে যায়, এদিকে অর্ণব তার কথার আগা মাথা না বুঝলেও এটা বুঝতে পারছে সমনে তাদের ঘোর বিপদ। না সবাইকে বলতে হবে ব্যাপারটা, আজাদ মির্জা কাচা খেলোয়াড় না সে তার সত্যি যেনে গেছে না হলে এসব বলতো না কিছুতেই বলতো না। অর্ণব অন্তুকে একবার দেখে নেয়ে সে আনভির সাথে ব্যস্ত তাই সে আদিকে ফোন করতে লাগে তাকে সব বলতে লাগলো, কথা বলে ফোন রেখে অন্তুর দিকে তাকিয়ে বললো…

অর্ণবঃ জান তোমাকে আমি এখান থেকে দূরে নিয়ে যাবো তার আগে এই আজাদ মির্জা পাপের সাম্রাজ্য গুঁড়িয়ে দিতে হবে। অনেক মানুষের ক্ষতি করেছে এবার সেই ক্ষতির মাসুল দিতে হবে তাকে…

বলে সে অন্তুর কাছে গিয়ে অন্তু আরো আনভিকে নিয়ে তাদের রুমে চলে যায়….

কাল এমন কিছু হতে চলেছে যে অর্ণব অন্তুর জীবন সম্পূর্ণ পাল্টে যাবে। তারা তো আর জানে না তাদের জীবনকে নরক করতে আজাদ মির্জা কি ছক কশেছে। তাদের ভালোবাসা কি আবার ভাঙ্গতে চলেছে, তারা কি আবার আলাদা হয়ে যাবে… কি হবে তাদের সাথে।
#তুমি আসবে বলে
#অপেক্ষার প্রহর
#Sondha Halder
#পর্ব-৬২

অর্ণব আজ কাজে না গেলে হয় না প্লিজ… মিষ্টি কন্ঠে কথাগুলো বললো অন্তু। অন্তুর কথা শুনে অর্ণব তার দিকে তাকিয়ে অন্তুকে কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে কিছু না বলে সে তার গলার টাইটা বাধতে লাগলো। এদিকে অর্ণব তার কথা সম্পূর্ণ রুপে ইগনোর করতে দেখে অন্তু রাগে ফুঁসতে থাকে কিন্তু সে নিজের রাগ কন্ট্রোল করে অর্ণবের কাছে গিয়ে অর্ণবের হাত থেকে টাইটা নিয়ে সে নিজে অর্ণবের গলায় বাঁধতে লাগলো আর আড়চোখে অর্ণবকে দেখতে লাগলো। এদিকে অর্ণব বিমূঢ়, বিস্ময় হচ্ছে অন্তুর সকল কাজে। সকাল থেকে অন্তু কেমন অন্যরকম লাগছে তার কাছে, মিষ্টি করে কথা বলছে, রাগও করছে কিন্তু সেটা দেখাচ্ছে না, কিছুতো তার মনে চলছে কিন্তু অর্ণব সেসব দেখেও না দেখার ভান করছে। অন্তু টাইটা বেধে দিলে অর্ণবের কোট পড়াতে পড়াতে সে আবার বললো…

অন্তুঃ আনভির পাপা আমার কথা শুনছো না কেন? আজ অফিসে না গেলে হয় না প্লিজ, আমার সাথে শপিংমলে চলো না। কিছু কেনাকাটা করবো…

অর্ণব অন্তুর মাথা থেকে পা পর্যন্ত দেখে নিলো অন্তু লাল একটা জামদানী শাড়ি পরেছে, চুল সুন্দর করে বাধা, হালকা সেজেছে, তাকে দেখে কিউট লাগছে। অর্ণবকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে অন্তু লজ্জা লাল হতে লাগে তা দেখে অর্ণব মুচকি হেসে বললো…

অর্ণবঃ জান আজ না, অন্য কোনো দিন যাবো। আমার আজ কাজ আছে তার ওপর প্রাপ্য আজ অফিসে যাবে না, বাবাই অন্য কাজে ব্যস্ত। তাই আমাকে অফিসে যেতে হবে, আমি প্রাপ্য কে বলে দিচ্ছি তোমার যা যা লাগবে সে কিনে দেবে।

অন্তু মিনমিন করে বললো… আজ যদি আমি মরে যাই তাইলে অন্য কোনো দিন কোনো দিন কাকে নিয়ে যাবে হুম..

অন্তুর মিনমিনানি স্পষ্ট অর্ণবের কর্ণপাত গেলো, তা শুনে অর্ণবের চোয়াল শক্ত হতে লাগলো সে রাগে গজগজ করে অন্তুর বাহু চেপে ধরে তাকে তার কাছে নিয়ে আসে। অকাম্মসিক বাহু চেপে ধরায় অন্তু ব্যাথায় কুঁকড়ে যায়, সে সামনে তাকিয়ে ভয় পেয়ে যায় কেননা অর্ণবের চোখে হিংস্র হতে লাগে রাগে। অন্তু ভয়ার্ত চেহারা নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকলে অর্ণব রাগক্ত কন্ঠে বললো…

অর্ণবঃ আজ যা মুখে এনেছো এনেছো ফরদার এই কথা তোমার মুখে আসেছে তাইলে জেন্ত পুতে ফেলবো। এই মেয়ে তুমি মরলে আমি কি বেঁচে থাকবো তোমার কি মনে হয়, আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না তাই মরলে তোমার সাথে মরবো আর বাচলে তোমার সাথে বাঁচবো।

অন্তু অর্ণবের কথা শুনে ছলছল চোখে তার দিকে তাকিয়ে থাকে সে ভাবে ছেলেটা তাকে কতোটা ভালোবাসে আজ যদি সে মরেও যায় আফসোস হবে না কেননা সে এমন একজনকে ভালোবেসেছে যে কিনা তার জন্য মরতেও পারে। অর্ণব অন্তু চোখে জল শুষে নিয়ে তার চোখের পাতায় চুমু দিয়ে বললো….

অর্ণবঃ জান এমন করে আর বলো না দেখো এখনো আমার বুকের মধ্যে কেমন ধরপর ধরপর করছে তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে শুনে। যদি সত্যি তাই হয় তাইলে তো এই হৃদস্পনধন থেমে যাবে। জান আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি তাই তোমাকে কিছু হতে দেবো না।

অন্তুঃ সরি মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে আর হবে না।

অর্ণবঃ ঠিক আছে।

বলে তাকে জড়িয়ে ধরে থাকে অর্ণব। এদিকে অন্তু অর্ণবের হার্টবিট শুনছে, যেটা তার একটা কথায় এতোটা ফাস্ট হয়ে গেছে। হঠাৎ অর্ণবের ফোনে ফোন আসলে অর্ণব অন্তুকে ছেড়ে দিয়ে অন্তুকে বলে…

অর্ণবঃ জান দেখোতো কে ফোন করেছে আমি সব গুছিয়ে নিই ততখনে। আমার মনে হয় আদি ফোন করেছে..

অন্তু মাথা নেড়ে সেদিকে যায়, আর অর্ণব তার অফিসের ব্যাগ গুছাতে লাগলো। অন্তু ফোন ধরে নাম দেখতে নিলে আয়ানের নাম অর্ণবের ফোনে দেখে স্তব্ধ হয় যায় একমুহূর্তে জন্য, সে ভাবছে আয়ান কেন অর্ণবকে ফোন করবে, অর্ণবের সাথে কি দরকার তার, না-কি নতুন করে কিছু করতে চাচ্ছে অর্ণবের সাথে, তার মনে অর্ণবকে হারানোর ভয় হচ্ছে, তার হাত-পা কাপতে লাগলো। এদিকে অর্ণব তার কাজ শেষ অন্তুকে দেখলে সে ঘাবড়ে যায় হঠাৎ করে অন্তুর কি হলো সে এমন করছে কেন?। অর্ণব গিয়ে অন্তুকে বেডে বসিয়ে পানি খাইয়ে দিয়ে তাকে শান্তো করতে করতে বললো….

অর্ণবঃ রিলাক্স জান কিছু হয়নি তোমার কিছু না। এখন একটু শান্তো হয়ে বললো কি হয়েছিলো তোমার এমন কাঁপছিলে কেন তুমি?

অন্তু কাঁপা কাঁপা গলায় বলো… আ আয়ান ভা ভাইয়া ফোন দিচ্ছে কেন তোমাকে? কি দরকার তার তোমার সাথে প্লিজ বললো। উনি কি তোমার সত্যি জেনে গেছে, সে কি আবার তোমাকে আমার থেকে কেরে নেবে অর্ণব। আমি কিছুতেই এটা হতে দেবো না তুমি আয়ান ভাইয়ার ফোন ধরবে না।

অর্ণব বুঝতে পারে আয়ান তাকে ফোন দিয়েছে আর সেটা সেই অন্তুকে আগ বাড়িয়ে দেখিয়েছে তাই তার অবস্থা এমন। এখন সে কিভাবে অন্তুকে বুঝাবে আয়ান কেন তাকে ফোন করছে, সে কি করে বোঝাবে তাকে তার কাছ থেকে আয়ান না আসলে আজাদ মির্জা সরিয়ে দিতে চায়। এসবের পেছনে আয়ান না আজাদ মির্জা আছে আয়ান তো শুধু গুটি মাত্রর। অর্ণব অন্তুকে তার বুকের মাঝে নিয়ে তার পিঠে হাত বুলিয়ে বলো…

অর্ণবঃ জান আয়ান হয়তো শপিং করা নিয়ে কথা বলতে ফোন দিয়েছিলো তুমি হয়তো বেশি ভাবছো। জান আয়ান আমাদেরকে আলাদা করতে পারবে না, তুমি নিশ্চিন্তে থাকো ভয় পেওনা।

অন্তুঃ অর্ণব আমার কেন যেন মন মানছে না কিছুতেই, তুমি আজ অফিসে যেওনা। বার বার মনে হচ্ছে কিছু একটা ঘটবে যেটা ঘটলে সবার জীবন পালটে যাবে, আমি আমার জীবন পাল্টাতে চায় না আমি তোমার আর আনভির সাথে থাকতে চায়। আমার ভালো লাগছে না মন বড়ো কু-ডাকছে।

অর্ণবঃ এসব কিছু হবে না সব তোমার মনের ভুল। আজকাল তুমি আমাকে নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করো তাই এসব ভাবছো এর বেশিনা। আর আজ বিয়ের শপিং না হলে বিয়েতে কি অরনি ভুত হয় থাকবে।

অর্ণবের কথায় সে শান্তি পেলো না কেন বার বার মনে হচ্ছে সে অর্ণবের থেকে দূরে চলে যাবে। অন্তু জোরপূর্বক হাসে অর্ণব তা দেখে মলিন হেসে ফোন নিয়ে একটু দূরে গিয়ে আয়ানকে ফোন দিয়ে কথা বলা শেষে বললো…

অর্ণবঃ ঠিক আছে আমি সেখানে সময় মতো পৌঁছে যাবো। রাখছি…

বলে ফোন রেখে অন্তুর দিকে তাকালে সে দেখে অন্তু তার দিকে ভ্রু-কুচকে তাকিয়ে আছে। অন্তুকে তাকিয়ে থাকতে দেখে অর্ণব হচকে যায় তার মনে হয় অন্তু সব শুনে ফেলেছে কিন্তু তাকে ভুল প্রমান করে অন্তু বলো…

অন্তুঃ প্রাপ্য ভাইয়া ডাকতে এসেছিলো। তুমি তখন কথা বলছিলে তাই ডিস্টার্ব করিনি।

অর্ণবঃ আনভি কোথায় তাকে তো দেখছি না।

অন্তুঃ নিচে আছে চলো..

অর্ণবকে কিছু না বলতে দিয়ে সে নিচে চলে যায়, অর্ণব হতাশ হয়ে তাকিয়ে থাকে অন্তুর যাওয়ার দিকে সে নিশ্চিত অন্তু তার কথা শুতে পেয়েছে। মেয়েটা আয়ানকে মাফ করেনি আবার নিজের কাছে থেকে দূরেও সরিয়ে দেয়নি, না জানি কবে ঠিক হবে। বলে সে ব্যাগ নিয়ে নিচে চলে যায়…….
_______________________________________

আম্মু মাম্মাকে জ্বালাবে না, পারলে চাচ্চুকে জ্বালাবে যতো খুশি ততো… বলে আনভিকে আদর করে দেয় অর্ণব। অর্ণবের কথা শুমনে আনভি আর অন্তু হাসতে লাগে কিন্তু প্রাপ্য মেয়েদের মতো গাল ফুলায়ে বলে…

প্রাপ্যঃ ভাইয়া এসব কি শিখাছিস আনভিপরীকে। সে মটেও আমাকে জ্বালাবে না তাইনা আনভিপরী…

আনভিঃ হুমমম চাচ্চু আমি কাউকে জ্বালাবো না আমি এখন বড়ো হয়ে গেছি। তাইনা মাম্মা

অন্তুঃ হ্যাঁ আমার আনভি মা বড়ো হয়ে গেছে।

অর্ণবঃ আম্মু মলে এদিক ওদিক দৌড়া দৌড়ি করবে না সব সময় সবার সাথে থাকবে। আর চাচ্চু তোমার সব ড্রেস কিনে দেবে। প্রাপ্য আনভি আর অন্তুর খেয়াল রাখিস কিছু জেনো হয় না তোর ভরসায় পাঠাছি।

প্রাপ্য আশ্বস্ত করে বললো… কিছু হবে না ভাইয়া আমি সব সামলে নেবো চিন্তা করিস না।

অর্ণব মাথা নাড়ায় প্রাপ্য কথায়। প্রাপ্য চলে যায় গাড়ি বার করতে শপিংমলে যাবে সেখানে আদি, অরনি, আদিবা তাদের জন্য ওয়েট করছে। এদিকে অর্ণব আনভিকে সারামুখে চুমু দিয়ে আদর করে দিতে লাগে অন্তু বাপ মেয়েকে মন ভরে দেখতে লাগে। অর্ণব আনভিকে কোলে নিয়ে অন্তুর কাছে গিয়ে তার কপালে গাঢ় ভাবে তার অরধ ছুয়ে দেয়, অন্তু চোখ বন্ধ করে নিলো সেই স্পর্শে। অর্ণব তাকে ছেড়ে বললো…

অর্ণবঃ আই লাভ ইউ জান..

অন্তুঃ আই লাভ ইউ

অর্ণব চলো বলে তাদেরকে নিয়ে বাইরে নিয়ে আসে। অন্তু প্রাপ্য আর আনভি অন্য গাড়ি করে যায় আর অর্ণব অফিসে চলে যায় তার গাড়িতে। এদিকে তাদের জন্য যে মরন ফাঁদ পাতা আছে তারা কেউ সেটা বুঝতে পারে না…..
______________________________________

অরু প্লিজ আর না, আমার ভালো লাগছে না আর ঘুরতে দেখ আনভি কেমন নেতিয়ে পরছে। তুই এখান থেকে যে কোন শাড়ি পছন্দ করে নে….. বলে অন্তু আনভিকে ভালোভাবে তার সাথে জড়িয়ে নেয়। সেই সকাল থেকে দুপুর হয়ে যাচ্ছে তাও অরনির শাড়ি পছন্দ হচ্ছে না, সবার কেনাকাটি শেষ এখন অরনির শাড়ি নিলেয় হয়, কিন্তু এই মেয়ের শাড়ি পছন্দ হচ্ছে না। অরনি অসহায় মুখ করে সবার দিকে তাকায় সবাই বিরক্ত নিয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে সে মিনমিনিয়ে বলো…

অরনিঃ আমি কি করবো বলো বিয়ে তো একবার করবো তাইলে শাড়ি নিজের পছন্দের কেন কিনবো না।

আদিঃ কিনতে মানা করেছে কে তোকে বুড়ি কিন্তু তুই দেখে সবার হয়ে গেছে শপিং কিন্তু তোর একটা শাড়ির জন্য সারা শপিংমল ঘুরতে হচ্ছে।

অরনি এবার সত্যি খারাপ লাগছে তার জন্য তো দেড়ি হচ্ছে না হলে তারা আগেই চলে যেতো। সে আবার শাড়ি দেখতে লাগলো সব শেষে একটা মেরুনকালারে একটা শাড়ির পছন্দ করে সবাই যেন হফ ছেড়ে বাচে। আদি সবাইকে নিয়ে লাঞ্চ করতে শপিংমলের রেস্টুরেন্টটে নিয়ে যায় সেখানে। সবাই বসে খেতে লাগলো কিন্তু অন্তু কেমন ছটফট করছে বার বার ফোন করেছে অর্ণবকে কিন্তু তার ফোন বন্ধ। শেষ বারের মতো ফোন করলে তাও বন্ধ, অন্তু হতাশযুক্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে অফিসে ফোন করে বললো…

অন্তুঃ হ্যালো আমি মিসেস চৌধুরী বলছি আপনাদের রোদ স্যার অফিসে আছে কি, থাকলে একটু দিন তো ফোনটা তাকে..

ওপাশ থেকেঃ ম্যাম স্যার অফিসে ছিলো এতখন কিন্তু কি একটা কাজে সে বের হয়েছে এখনো আসেনি তিনি। স্যার আসলে আপনাকে ফোন করতে বলবো।

অন্তু হ্যাঁ বলে ফোন রেখে দেয় তার মন বলছে অর্ণব আয়নের সাথে দেখা করতে গেছে। এতোখন সবই অন্তুকে কথা বলে দেখে আদি বললো…

আদিঃ অন্তুপাখি কি হয়েছে তোমার?

অন্তুঃ কিছু না দাদাভাই

আদিঃ তাইলে খাচ্ছো না কেন?

অন্তুঃ খাচ্ছি তো

বলে সে খেতে লাগে অন্তুকে এমন দেখে আদি অবাকে হলো সে বুঝলো না অন্তু এমন অন্যমনস্ক হয়ে আছে কেন। তারা সবাই খেয়ে বাইরে আসে আদি, আদিবা, প্রাপ্য, অরনি আগে আগে গাড়ির কাছে যাচ্ছে আর অন্তু আনভিকে কোলে নিয়ে পিছু পিছু কথা বলতে বলতে যাচ্ছে। আনভি বললো…

আনভিঃ মাম্মাম পাপা আমাদের সাথে এলো না কেন। আমি পাপার সাথে কথা বলবো না..

অন্তু মুচকি হেঁসে বললো… পাপা কাজে ব্যস্ত তাই তো আসতে পারেনি মা। কিন্তু বাড়িতে গিয়ে পাপাকে অনেক বকে দেবো।

আনভিঃ সত্যি

অন্তুঃ সত্যি

আনভিঃ মাম্মাম আমার জামা কেমন হয়েছে।

অন্তুঃ ভালো হয়েছে মা তোমাকে ড্রেসটাতে পরী লাগবে।

অন্তুর কথায় আনভি খিলখিল করে হাসে অন্তু মেয়ের হাসি দেখে তার মাথার সব চিন্তুা ভুলে আনভিকে আদর করে দিয়ে যেতে লাগলো। হঠাৎ তাদের সামনে কিছু লোক চলে আসায় অন্তু চমকে যায়, সে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলে ওই লোকগুলোর মধ্যে থেকে একজন আনভিকে অন্তুর কোল থেকে কেরে নিলো অন্তু বুঝতে পারলো না হঠাৎ কি হলো, যখন বুঝলো তখন সেই লোকের কাছ থেকে আনভিকে নিতে লাগলো এদিকে আনভি কান্না করছে অন্তুর চোখে জল নিয়ে আসে পাশে আদিকে খুজতে লাগলো কিন্তু কাউকে পেলো না, সে কান্না করতে করতে বলো…

অন্তুঃ প্লিজ আনভিকে আমার কাছে দিন। কি চায় আপনাদের কেন আমার মেয়েকে নিয়ে যাচ্ছে। প্লিজ ও বাচ্চা ভয় পাছে প্লিজ।

লোকগুলো তার কথায় হাসতে লাগলো অন্তু বার বার আনভিকে নিতে লাগলে সে নিতে পারে না তা দেখে লোকগুলো আনন্দ পেলো। এদিকে আনভি কান্না করতে করতে বললো…

আনভিঃ আমাকে ছাড়ো আমি মাম্মার কাছে যাবো। পচা আঙ্কেল ছাড়ো

তাদের মাঝে একজন বলো… সরি মামুনি তা হবে না তোমাকে নিয়ে যেতে ওপর থেকে অর্ডার আছে। তাই কান্না করে না সোনা।

অন্তু তাদের কথা শুনে বিস্মিত হয় কে আনভিকে নিয়ে যেতে বলেছে লোকগুলো কে। তাদের সাথে কার শত্রুতা আছে যে আনভিকে নিয়ে বলবে। অন্তু চিতকার করে আদি, প্রাপ্য কে ডাকতে লাগলো..

অন্তুঃ দাদাভাই যলদি আয় আমার আনভিকে কেউ নিয়ে যাচ্ছে। আনভিকে দিয়ে দিন মেয়েটা ভয় পাচ্ছে। মা তোমার কিছু হবে না আমি আছি তো কান্না করে না মাম্মাম তোমাকে কিছু হতে দেবে না। কি হলো দিন ওকে

বলে আনভিকে নিতে লাগলে অন্তুর মাথায় কেউ ভাড়ি কিছু দিয়ে আঘাত করে। অন্তুর চোখের সামনে সব অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে সে কয়েক কদম গিয়ে সে পরে যায় মাটিতে, মাটিতে পরে সে অস্পষ্ট স্বরে বললো… আ আনভি

আনভিঃ মাম্মাম ছাড়ো মাম্মাম কাছে যাবো ছাড়ো

বলে কান্না করতে লাগলো আনভি। ওই লোকগুলো কাউকে ফোন করে বলো… আয়ান বস কাজ হয়ে গেছে বাচ্চাটাকে নিয়ে আসছি। আর অর্ণবে আপনার বলা জায়গায় আসতে বলছে…

বলে ফোন রেখে লোকগুলো চলে যেতে লাগে আনভিকে নিয়ে। আনভি বার বার কান্না করে অন্তুর কাছে আসতে চাচ্ছে। এদিকে অন্তু ওই লোকগুলো সব কথা শুনে সেখানেই অজ্ঞাত হয়ে যায়…….

নতুন কি ঝড় উঠতে চলেছে তাদের জীবনে। কেন আয়ান এটা করলো না-কি অন্য কিছু আছে এই ঘটনার মাঝে…. আনভির কি হবে আর অন্তু কিভাবে এই আঘাত সহ্য করতে পারবে। অর্ণব যখন এসব শুনবে তখন তার অবস্থা কি হবে….#তুমি আসবে বলে
#অপেক্ষার প্রহর
#Sondha Halder
#পর্ব-৬৩

মির্জা বাড়ির সবাই ব্যস্ত অন্তুকে নিয়ে, মেয়েটার জ্ঞান ফেরার কোনো কথায় নেই। দিদুন অন্তু মাথার কাছে বসে আছে সে অন্তুর মাথায় হাত বুলিয়ে তাকে ডাকছে কিন্তু তার কোনো সারা নেই। এদিকে সবার চিন্তিত অন্তুর সাথে কি হয়েছে আর আনভি কোথায়? আনভিকে কে নিয়ে গেছে?। এই কথাটা যদি অর্ণব যানতে পারে তাইলে তাকে সামলাবে কি করে সেই নিয়ে সবাই চিন্তিতো। তখন অন্তুর চিতকার শুনি আদি প্রাপ্য আদিবা অরনি চমকে যায় তারা বুঝতে পারে না কি হলো অন্তু যে সে চিতকার করছে। তারা সবাই দৌড়ে সেখানে গেলে দেখে অন্তু অজ্ঞাত অবস্থায় সেখানে পরে আছে আর তার আসে পাশে আনভিকে কোথাও পেলো না তারা। আদি তার বোনকে এমন দেখে সে তো পাগল হয়ে যাবার অতিক্রম আর এদিকে প্রাপ্য আনভিকে খুজতে লাগে কিন্তু কোথাও পায় না। তার ভয় হচ্ছে তার ভাই বার বার অন্তু আর আনভিকে দেখে রাখতে বলেছিলো কিন্তু সে দেখে রাখতে পারেনি তার গাফিলতির কারনে আজ আনভিকে পাওয়া যাচ্ছে না আর অন্তুর এই অবস্থা সে কি করে তার ভাইকে মুখ দেখাবে। আদি অন্তুর জ্ঞান ফেরাতে না পেরে তাকে নিয়ে মির্জা বাড়িতে চলে আসে এবং তার টিটমেন্ট করার কিন্তু এখনো তার জ্ঞান ফেরে না।

আদি রুম জুরে পায়চারি করছে আর অর্ণবকে ফোন করে এখানকার সব কথা বলছে, আদি কথা বলা শেষে ফোন রেখে ঘুড়লে আদিবা তার সামনে দাড়িয়ে থাকতে দেখে। আদি তাকে জড়িয়ে ধরে বললো…

আদিঃ আদু আমি কি করবো বুঝতে পারছি না। হঠাৎ কি এমন হলো যে অন্তুর এই অবস্থা হলো তার সাথে আনভি গায়েব হয়ে গেলো। অর্ণব সব শুনে পাগলো হয়ে গেছে সে কিছুতেই আনভির কথা মানছে না সে আসছে এসে অন্তুকে দেখে কি করবে জানি না। আর অন্তু জ্ঞান ফিরলে আনভির কথা বলে কি উত্তর দেবো কিছু বুঝতে পারছি না।

আদিবাঃ আদি প্লিজ ভেঙ্গে পরো না, তুমি ভেঙ্গে পরলে অন্তুকে সামলাবে কে। অর্ণব ভাইয়া এসব এতো সহজে মানতে পারবে না সে অন্তুকে এমন দেখতে পারবে না। প্লিজ শান্তো হও

আদিবার কথা শুনে আদি তাকে ছেড়ে দিয়ে অন্তুর দিকে তাকায় তার বোনের শুকনো মুখ দেখে তার ভেতরটা কেঁপে ওঠে। এদিকে প্রাপ্য এককোণায় দাড়িয়ে আছে তার মধ্যে অপরাধ বোধ কাজ করছে আজ তার খামক্ষেলাপে এই ঘটনাটা ঘটেছে, তার ভাই তাকে কখনো ক্ষমা করবে না যদি আনভির কিছু হয়ে যায় তাইলে তো তার ভাই মরে যাবে সে নিজের থেকে আনভিকে বেশি ভালোবাসে। অরনি প্রাপ্যকে দেখে সে বুঝতে পারছে তার মধ্যে কি চলছে, সে গিয়ে বললো…

অরনিঃ প্রাপ্য দিদিয়ার কিছু হবে না আর না আনভির দেখো সব ঠিক হয়ে যাবে। আনভিকে পাওয়া যাবে…

অরনিকে বলতে না দিয়ে প্রাপ্য বললো… কোথায় পাওয়া যাবে? কিভাবে পাওয়া যাবে? আমি মলের সব দিকে খোঁজ নিয়েছি কোথাও খোঁজ পেলাম না। অরু আমি ভাইয়ার সামনে কি ভাবে দাডাবো ভাইয়া আমাকে তাদের দ্বায়িত্ব দিয়েছিলো কিন্তু আমি সেই দ্বায়িত্ব ঠিক ভাবে পালন করতে পারলাম না।

অরনি কিছু বলতে যাবে তার আগে অন্তুর কথা শুমে সবাই তার দিকে তাকায়। এদিকে অন্তুর চোখের সামনে আনভির চেহারা ভেসে আসলে সে চিতকার দিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসে, সে চারিপাশে তাকিয়ে নিজের অবস্থান বুঝতে চেষ্টা করে, যখন বুঝে উঠলে তার সাথে হয়ে যাবা সব ঘটনার কথা মনে পরে যায় আনভির কথা ভেবে সে তারাতাড়ি করে উঠে চলে যেতে নিলে আদি তাকে ধরে বললো…

আদিঃ বোনু কোথায় যাচ্ছি তুই। তোর শরীল ভালো না তুই এখানে বস। আয়…

অন্তুকে নিয়ে বসাতে নিলে অন্তু তাকে বাঁধা দেয় সেটা দেখে আদি তার দিকে তাকায়, অন্তু চোখে জল নিয়ে বললো… দাদাভাই ওরা আনভিকে নিয়ে গেছে আমি অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি তোমাদের কেও ডাকলাম কিন্তু তোমরা কেউ আসোনি। দাদাভাই আনভি কান্না করছে, সে ভয় পাচ্ছে, আমার মেয়ের আমাকে দরকার তাই আমাকে জেতে দাও। আনভি কাছে যাবো আমি ছাড়ো….

বলে আদিকে তার থেকে ছাড়িয়ে দৌড়ে তার রুম থেকে বেরিয়ে যায় এদিকে অন্তুর আবস্থা দেখে সবাই কান্না করে দেয় মেয়েটা এতো কষ্টে পাবাট পরে একটু সুখ পেয়েছিলো কিন্তু তাও কারোর নজরে হারিয়ে যেতে বসেছে। সবাই অন্তুর পিছু যায়, এদিকে অন্তু নিচে এসে দরজার দিকে যেতে নিলে অর্ণবকে দেখে থমকে যায় সে দৌড়ে গিয়ে অর্ণবকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো। এদিকে অন্তুকে এভাবে দেখে অর্ণবের ভেতরটা দোমরে মুছরে যাচ্ছে, সবাই নিচে এসে উপস্থিত হয় প্রাপ্য তার ভাইয়ের দিকে তাকাতেও পারছে না। অন্তু কান্না করতে করতে বললো…

অন্তুঃ অর্ অর্ণব আমাদের মেয়ে…

আর বলতে পারে না কান্না করার ফলে এদিকে অন্তুকে রোদকে অর্ণব বলে সংবধন করায় নিহিতা, আকাশ কিংকর্তব্যবিমূঢ়, বিস্ময় হয়ে যায় কেননা তার তো অর্ণবের সত্যি জানতো না সবার মতো। অর্ণব অন্তুকে শান্তো করবার জন্য বলে…

অর্ণবঃ জান কান্না থামিয়ে বলো কি হয়েছে, আনভি কোথায় বললো..

অন্তুঃ অর্ণব আনভিকে ওরা নিয়ে গেছে। আমি জানি না ওরা কারা ছিলো আমার মেয়েটা কান্না করছিলো, আমার কাছে আসার জন্য কিন্তু তাকে আসতে দেয়নি। অর্ণব আমার মেয়েকে এনে দাও প্লিজ।

অর্ণবঃ অন্তু কান্না থামাও আমি আনভিকে কিছু হতে দেবো না সে ঠিক তোমার কাছে এসে যাবে। শান্তো হও

অন্তুঃ কিভাবে শান্তুো হবো ওরা আমার মেয়েকে নিয়ে গেছে তুমি বুঝতে পারছো না কেন? আনভি কান্না করছে, সে ভয় পাচ্ছে আমাকে ছাড়া। ফোর গড সেক আনভিকে এনে দাও আমার কাছে, ওরা না জানি আমার মেয়েকে কি করছে।

অর্ণব অন্তুকে শান্তো করতে পারছে না কিছুতেই সে বার বার আনভিকে আনতে বলছে, অর্ণবের চোখ থেকে পানি পরছে একদিকে আনভিকে পাচ্ছে না আবার অন্যদিকে অন্তু প্যানিক করছে। অন্তু কান্না করতে করতে হঠাৎ তার পাশে আয়ানকে দেখে সে কান্না বন্ধ করে সজা হয়ে দাড়ায়, তাকে এভাবে দেখে অর্ণব সহ বাড়ির সবাই ভয় পেয়ে যায়। অন্তু অজ্ঞান হবার আগে ওই লোকগুলোর কথা মনে পরে যেতেই তার চোখ দিয়ে আগুনে বেরতে থাকে সে সোজা আয়ানের কাছে গিয়ে তার শার্টের কলার চেপে ধরে তেজী গলায় বললো…

অন্তুঃ আমার মেয়ে কোথায়? আমার মেয়েকে ছেড়ে দাও, ও ছোট্ট অবুঝ বাচ্চা। সে কিছু বোঝে না প্লিজ যা করার আমার সাথে করো আমি কিছু বলবো না। তোমার লোকদের বলো আনভিকে ছেড়ে দিতে।

অন্তু কথা শুনে উপস্থিত সবায় হতভম্ব, বিস্মিত, হয় যায় এদিকে অন্তুর কথা আয়ান কিছু বঝতে পারে না তার লোক মানে সে কেন আনভিকে নিয়ে যায়বে। আয়ান অবাক হয়ে বললো…

আয়ানঃ মানে আমার লোক মানে কি অন্তু আর আমি কেন আনভিকে তুলতে যাবো পাগল হয়ে গেছিস না-কি তুই। যা নয় তাই বলছিস..

অন্তুঃ হ্যাঁ আমি পাগল হয়ে গেছি। তুই আমার সাথে আগে যা করেছিস আমি সবটা মাফ না করলেও সবটা ভুলে নতুন ভাবে চলতে চেয়ে ছিলাম। কিন্তু তুই সুধরানোর মানুষ না আবার আমার কাছে থেকে আনভিকে করে নিতে চাচ্ছিস। তুই জেনে গেছেস আনভি আমার মেয়ে, আমার আর অর্ণবের মেয়ে তাই এটা করলি। আমি তোর পায়ে ধরছি প্লিজ আনভিকে দিয়ে দে।

আয়ান হতভম্ব হয়ে যায় অন্তু কথায় সে এবার সবটা বুঝতে পারছে এটার পেছনে কে আছে, সে চুপ করে দাড়িয়ে থাকে তার বলার কোনো ভাষা নেয়। অর্ণব ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকে অন্তুর দিকে সে বুঝতে পারছে না সে আয়ানকে সরাসরি দোষারোপ করছে কেন। আয়রা অন্তু কথা শুনে আয়ানের কাছে এসে অন্তুকে ধরে তার দিকে নিয়ে বললো…

আয়রাঃ অন্তু আয়ান এটা করে নি তোমাকে কেউ ভুল বুঝিয়েছে। প্লিজ মাথা ঠান্ডা করে ভাবো আয়না কেনো আনভিকে আটকে রাখবে যেখানে সে…

আয়রাকে বলতে না দিয়ে অন্তু বললো…. আমি জানি আয়ানই এটা করেছে। ওই লোকগুলো আয়ানকে বস বলছিলো আর বলছিলো আনভিকে তার তুলেছে এখন অর্ণবকে তার বলা জায়গায় নিয়ে আসবে। তাইলে আমার কেমনে ভুল হবে আমি নিজের কানে সবটা শুনেছি। ভাবি আয়ানকে বললো আনভিকে দিয়ে দিতে না হলে…

আয়রাঃ না হলে কি অন্তু। মেরে ফেলবে আয়ানকে তাইলে মেরে ফেলো তাকে, সে তো অনেক আগেই মেরে গেছে এখন মারলেও মরবে কি না সন্দেহ আছে। অন্তু একটা কথা বললো তো কতটুকু চেনো তুমি আয়ানকে কতটুকু, কিছু ঘটনা তোমার চোখের সামনে ঘটেছে বলে তুমি ধরে নিলে সেটা আয়ান করেছে। এমনো তো হতে পারে এর পেছনে কলকাঠি অন্যকেউ নাড়িয়ে ছিলো, হতেও তো পারে তোমার আতি প্রিয় জন্য ছিলো এই কাজের পিছনে। তুমি পুরো সুত্যি না জেনে আয়ানকে কেনো দোষারোপ করছো….

আয়রা একদমে বলে চুপ হয়ে যায়। এদিকে আয়রার কথা শুনে অন্তু শান্তো চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে তার মাথায় আয়রার কথা গুলো শুধু ঘুড়ছে, যদি আয়ান না করে এসব তাইলে কে করেছে এসব আর তার আতি প্রিয় জন্য আবার কে? এদিকে সবাই আয়রা কথায় মৌনব্রত হয়ে দাড়িয়ে থাকে কেউ কিছু বলছে না। আয়ান আয়রাকে তার দিকে নিয়ে বললো…

আয়ানঃ আয়রা প্লিজ চুপ করো বোনু এসব ধাক্কা নিতে পারবে না তার কিছু হয়ে যাবে…

আয়রাঃ অন্তু যথেষ্ট ভালো আছে আয়ান তার কিছু হবে না। আর আমি কেন চুপ করবো অন্তুকে এই সত্যি জানতে হবে সে বার বার ভুল করে তোমাকে কষ্ট দেয় আমি সেটা সহ্য করতে পারবো না। আয়ান অনেক হয়েছে আর না, তুমি তোমার কাজে অনুতপ্ত ছিলে এমন কি তুমি তার শাস্তিও পেয়েছো। তাইলে এখন অন্তুকে জানতে হবে সবটা তাই আমি আজ সব সত্যি বলবো…

বলে সে অন্তুর কাছে গিয়ে বললো…. তুমি জানতে চাও না সত্যি ৪বছর আগে এমন কি হলো যে তোমার ভাইয়ু পাল্টে গেলো। সে কেনো তোমার সাথে অন্যায় করলো।

অন্তু মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে সে সত্যি সব জানতে চায়। সে আর এসব নিতে পারছে না তার সত্যি জানতে হবে। আয়রা বললো…

আয়রাঃ তুমি নিশ্চিয় জানো না ও সরি এ বাড়ি অনেকেই জানে না আমার ব্রেইন টিউমার হয়েছিলো, আমি মরতে বসেছিলাম…

আয়রার কথা শুনে অন্তু, অরনি, নিহিতা, আকাশ চমকে যায় তার এটা জানতো না কিন্তু বাকি সবাই জানতো।

অন্তুঃ ব্রেইন টিউমার মানে..

আয়রাঃ মানে আমি আর আয়ানে অনেক আগে বিয়ে করেছিলাম কিন্তু কেউ সেটা জানতো না। তোমার হয়তো মনে আছে দিদুনের জন্মদিনে আয়ান তারাহুরো করে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায় ( অন্তু মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে) সেদিন আমি ওকে ফোন করে বলি আমার মামি আমাকে জোর করে বিয়ে দিতে চাচ্ছে তাই সে যেনো আমাকে নিয়ে যায়। আয়ান তাই করে সে আমাকে তার ফ্ল্যাটে নিয়ে রাখে, আমাদের ছোট সংসার হয়, আমার সুখে ছিলাম, জানো অন্তু আমি বেবি কন্সেভ করি ভালোই ছিলো সব কিছু আয়ান বলেছিলো সে বাড়িতে বলবে আমাদের কথা, তারপর আমি এখানে নিয়ে আসবে কিন্তু তার আগে আমরা টিউমারে কথা জানা যায়। অনেক টাকা লাগে টিটমেন্ট করাতে, আয়ানের কাছে যা ছিলো সব টাকা শেষ হলে যায় তাই সে বাবার কাছে চায় তিনি দিয়ে দেন। কিন্তু একদিন বাবা বাড়িতে না থাকায় তার টাকা দরকার ছিলো কিন্তু সে কিছু করতে পারছিলো না সে তার চোখের সামনে আমাকে মরতে দেখছিলো কিন্তু কিছু করতে পারছিলো না। কিন্তু হঠাৎ তোমার আতি এক প্রিয় জন্য তার অসহায়তার সুযোগ নিতে চেয়েছিলো, সে তাকে বলে তোমাকে আর অর্ণব ভাইয়াকে আলাদা করতে হবে কিন্তু আয়ান তা করতে চায়নি। সে তোমাকে কষ্ট দিয়ে আমাকে বাঁচাতে চায়নি কিন্তু তিনি আয়ানকে বলে সে যদি কাজটা না করে তিনি অন্যকাউকে দিয়ে সেটা করাবে এতে তোমার ক্ষতি হলে হতো কিন্তু তার কিছু আসে যায় না এটা শুনে আয়ান ভয় পায় তোমার কিছু হতে সে দিতে চায়নি। তাই আয়ান তাকে বলে সে কাজটা করবে তিনি খুশি হয় কিন্তু আয়ান তোমাকে সর্বদা সেফে রাখতে চায়তো, আয়ান কিন্তু অর্ণব ভাইয়াকে ও সব বলতে চেয়েছিলো কিন্তু সুযোগ হয় নি, তার এক্সামের আর আমার শরীরিক আবস্থার জন্য। আয়ানের লোক কিন্তু অর্ণব ভাইয়াকে মারে নি মারেছিলো তোমার আতি প্রিয় জনের লোকেরা সেখান থেকে আয়ানই বাচায় অর্ণব ভাইয়াকে। এখন আসি আয়ান অর্ণব ভাইয়াকে গুলি মেরেছে সেটা নিয়ে, তুমি অর্ণব ভাইয়ার কাছে যেনে নাও কে তাকে গুলি মেরেছে। অন্তু তুমি সব সময় আয়ানকে দোষারোপ করেছো কিন্তু তুমি একটা বার ভেবে দেখেছো তোমার করা ব্যবহারে আয়ান কতোটা কষ্ট পায়। অন্তু বুঝতেও পারোনি আয়ানের ভেতরটা কতোটা ভেঙ্গে গিয়েছিলো যখন তার কাছে কেউ ছিলো আর না তাকে কেউ সামলিয়েছে কিন্তু তোমার কাছে ছিলো সবাই। তুমি জানতে চাও না আমার প্রথম সন্তানের কি হলো তাইলে শোনো সে আমার পেটে থাকতে মারা যায় আমার অবস্থা আরো করুন ছিলো আমি বাচবো কি মরবো ডক্টর ও জানতো না। জানো আমার আর আমার সন্তানে যে অবস্থাটা হয় সেটা দেখে আয়ান নিজেকে দোষারোপ করে সব কিছুর জন্য , সে মনে করে তার পাপের জন্য আল্লাহ তাকে এই শাস্তি দিয়েছিলো তার কাছে থেকে তার সন্তানকে কেরে নিয়েছে। আয়ান একেবারে ভেঙ্গে মোচড় গেয়েছিলো কিন্তু শুধু আমাকে বাচাতে সে বেঁচে ছিলো আমার মুখের দিকে সে তাকিয়ে সব ভুলে থাকতো কিন্তু দিন শেষে সে কষ্ট পেতো ভীষণ কষ্ট পেতো, সবটা আমি দেখতাম কিন্তু কিছু করতে পারতাম না….

বলে আয়রা কান্না করতে থাকে আয়ান তাকে নিজের সাথে জড়িয়ে নেয়। এদিকে সবাই আয়রার কথা স্তব্ধ তারা এটা কখনো জানতো না আর আয়রা আয়ান তাদেরকে বুঝতেও দেয়নি তাদের সাথে এতো কিছু হয়েছে। অন্তু আয়রা সব কথা শুনে স্তব্ধ, নিরব হয়ে যায় সে, তার কাছে সব কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে। যদি আয়ান আয়রা আর তাকে বাঁচাতে এমনটা করে তাইলে আব্বু তাকে মিথ্যা কেন বললো যে তার ভাগের সম্পত্তির জন্য আয়ান এসব করেছে। আয়রা কথা মিথ্যে বলে মনে হচ্ছে না তাই আব্বু, না সে আর বুঝতে পারছে না কিছু। আয়রার সন্তানের কথা শুনে অন্তু ভেতরটা কান্না করছে, সেও তো তার সন্তানের মৃত্যুর কথা শুনে কতটা কষ্ট পেয়েছিলো কিন্তু তার সন্তান জীবিত ছিলো কিন্তু আয়রা তো সন্তান তার পেটেয় মারা যায় তাইলে তার কতোটা কষ্ট হয়েছে আয়ানের কতোটা কষ্ট হয়েছে। সেখানে আয়ানের পাশে কেউ ছিলো না। অর্ণব এসে অন্তুর কাঁধে হাত রাখে অন্তু তার দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে বললো…

অন্তুঃ অর্ণব তোমাকে কে গুলি মেরেছিলো?

অর্ণবঃ অন্তু আয়ান আমাকে গুলি মারেনি এমনকি সেদিন যারা আমাকে মারছিলো তারা সবাই আমাকে বুঝাতে চেয়েছিলো যাতে আমি এখন এখান থেকে চলে যায়। কিন্তু আমি তখন সেটা বোঝার মধ্যে ছিলাম না কিন্তু আয়ান আমাকে গুলি মারেনি সেটা আমি দেখেছিলাম।

অর্ণবের কথা অন্তু নিস্তব্ধ হয়ে যা সে এখন বুঝতে পারছে কেন আয়ান বার বার বলতো তার চোখের সামনে যা ঘটেছে তার আরালে অনেক সত্যি লুকিয়ে আছে। আজ তার কথার মানে বুঝতে পারছে। অন্তু কাপা কাপা গলায় বললো…

অন্তুঃ ত তাইলে যে এ এটা করেছে সে কে?

অন্তুর কথায় সবাই সায় দেয় তারাও জানতে চায় কে এই জঘন্য কাজটা করেছে। অর্ণব ঢোক গিলে বললো….. অন্তু এসবের পেছনে আর কেউ না তোমার আব্বু মানে আজাদ মির্জা হাত রয়েছে….

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here