গোধূলি বেলায় তুমি পর্ব -০৫

#গল্প_গোধূলি_বেলায়_তুমি
#Writer_Ritu_Bonna
#পর্ব_৫

ছিঃ আপনার লজ্জা করছে না, এত ঘৃণিত কাজ করার পরে আবার তা নিজের মুখে স্বীকার করতে। আপনি মানুষ না জানোয়ার,,,,,

আভিয়ান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,, আমি জানোয়ার হলে তোমাকে এই জানোয়ারকেই বিয়ে করতে হবে। এছাড়া যে তোমার কাছে অন্য কোন পথ নেই। এখন কথা না বাড়িয়ে যাও রেডি হয়ে এসো।

আমি রাগে ওইভাবেই চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি।

আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আভিয়ান রাগে বলে, তুমি যাবে না নাকি নিজের ভাইয়ের উপর আরো অত্যাচার হতে দেখবে???

আমি কিছু না বলে চুপচাপ ওয়াশরুমে চলে গেলাম। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছি। চোখের কাজল পুরো লেপ্টে গেছে। কান্না করার ফলে মুখের মেকাপ নষ্ট হয়ে গেছে।চুল গুলো সব এলোমেলো হয়ে আছে। নিজেকে নিজেই চিনতে পারছি না। কাল কত খুশি ছিলাম এই বিয়ে নিয়ে আর আজ আমার মনে শুধুই বিষন্নতা ছাড়া আর কিছু নেই। নিজের পরিবারকে বাঁচাতে এক প্রকার বাধ্য হয়ে এই বিয়েটা করা।আমি বেশি দেরি না করে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আসলাম।

ওয়াশরুমের দরজা খোলার শব্দে আমি সেদিকে তাকালাম।আদ্রিজার দিকে তাকাতেই আমি থমকে গেলাম।এখন মুখে কোন মেকাপ নেই, ছোট ছোট চুলগুলো কপালের সামনে এসে রয়েছে, ফ্রেস হওয়ার ফলে তাকে অনেকটা সিগ্ধ লাগছে।তাকে এভাবে দেখে আমি অনেকটা ঘোরের মাঝে চলে গেছি। তাকে অনেক সুন্দর লাগছে, আমি তার দিক থেকে চোখই ফিরাতে পারছি না।

আভিয়ানকে এভাবে আমাকে তাকাতে দেখে আমার খুব অস্বস্তি হতে লাগলো। আমি জোরে ওয়াশরুমের দরজা লাগালাম।

দরজা লাগানোর শব্দে আভিয়ানের ঘোর কাতে। সে অন্যদিকে তাকিয়ে বলে,, আমার সাথে নিচে চলো। আভিয়ান আর কিছু না বলে দরজা খোলে হাঁটা শরু করে,,,,,

আমি কোন কিছু না বলে পুতুলের মতোন আভিয়ানের পিছু পিছু যেতে লাগলাম।ডয়িং রুমে এসে এবং আমাকে ইশারার বসতে বলে সেও বসলো। আমি সুফায় বসতেই আভিয়ান কাজিকে বললো বিয়ে পড়ানো শুরু করতে। এখানে আরোও অনেকেই আছে কিন্তু তাদেরকে আমি চিনি না। আমি সেদিকে আর দৃষ্টি দিলাম না। কাজী বিয়ে পড়ানো শুরু করলেন। আমি বাধ্য হয়ে কবুল বললাম, বিয়ে হয়ে গেলো। এমন এক জনের সাথে আমি এই প্রবিত্র সম্পর্কে আবদ্ধ যাকে আমি মনে প্রাণে ঘৃণা করি। যাকে কখনো আমি আমার নিজের স্বামী হিসেবে মানতে পারবো না।

বিয়ে শেষ হয়েছে অনেকক্ষন হয়ে গেছে। আমি এখনো ওই ভাবেই সুফায় বসে আছি। চোখ দিয়ে অঝোড়ে পানি পড়ছে।

আভিয়ান আমার হাত ধরে বলে,,,, চলো। আজ থেকে আমরা আবার নতুন করে সব শুরু করবো। আগে যা হয়েছে সব ভুলে যাও।

আমি ক্রোধের দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে বলি ছাড়েন আমার হাত। আমাকে স্পর্শ করবেন না।আমি মানি না এই বিয়ে। আপনি আমাকে জোর করে বিয়ে করেছেন। আমি জাস্ট আপনাকে সহ্য করতে পারছি না। মুক্তি চাই আমি আপনার কাছ থেকে।আমাকে মুক্তি দেন,,,,

আভিয়ান হাত আরো শক্ত করে ধরে শান্ত স্বরে বলে,, আমার থেকে তুমি কখনো মুক্তি পাবে না। সারাজীবন তোমাকে আমার সাথেই থাকতে হবে সেটা তোমার ইচ্ছায় হউক বা অনিচ্ছায় আই জাস্ট ডোন্ট কেয়ার বন্যা। তাই তুমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাকে মেনে নেও আর এটাই তোমার জন্য বেস্ট ডিসিশন হবে।

আমি রাগে চিল্লিয়ে বলি,,, আপনাকে আমি কখনোই মেনে নিবো না। আপনি শুধু আমাকে জোর করতে পারবেন আমার ভালোবাসা আপনি কোন দিনই পাবেন না।

,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

হঠাৎ করে সাফিনের ফোন বেজে উঠে, সে বিরক্ত হয়ে ফোন রিসিভ করে। লোকটির কথা শুনেই সাফিনের মুখে হাসি ফুটে উঠে। সে আর দেরি না করে লোকটির দেওয়া ঠিকানা দ্রুত চলে যায়। দারোয়ান বাড়িতে ঢুকতে না দিলে সে এক প্রকার জোর করেই বাড়িতে প্রবেশ করে। ভিতরে ঢুকতেই সে থমকে যায়। এক মুহূর্তের জন্য সে স্তব্ধ হয়ে যায়। রাগে তার চোখ – মুখ লাল হয়ে যায়। সে হাত মুঠোয় করে চোখ বন্ধ করে রাগ কন্ট্রোল করে। সে দ্রুত গতিতে সামনে গিয়ে আভিয়ানের হাত থেকে আদ্রিজার হাত ছাড়িয়ে নেয়। সে রুক্ষ স্বরে বলে,,, আদ্রিজা শুধু আমার। ওকে স্পর্শ করার অধিকার শুধুই আমার। আমি ছাড়া ওকে অন্য কেউ টার্চ করতে পারবে না। যদি অন্য কেউ তাকে স্পর্শ করার চেষ্টা করে তবে আমি তার হাত কেটে রেখে দিবো।

সাফিনের কথা শুনে আভিয়ান বাঁকা হাসে পরে গম্ভীর স্বরে বলে,,, এখন আদ্রিজার উপর শুধুই আমার অধিকার আছে। সে শুধুই আমার। আমার থেকে কেউ ওকে আর আলাদা করতে পারবে না। আদ্রিজা এখন আমার স্ত্রী। শরীয়ত অনুযায়ী আমি তাকে বিয়ে করেছি।

আভিয়ানের কথা শুনে সাফিন অবাক হয়ে আদ্রিজার দিকে তাকায় পরে রুক্ষ স্বরে বলে,, আদ্রিজা কখনোই নিজের ইচ্ছায় তোকে বিয়ে করতে পারে না। সে আমাকে ভালোবাসে তুই জোর করে তাকে বিয়ে করেছিস্। তোকে পুলিশে দিলেই এখন বিয়ের সব ভূত মাথা থেকে চলে যাবে।

আভিয়ান শান্ত স্বরে বলে,,, আদ্রিজা আজও আমাকেই ভালোবাসে আর নিজের ইচ্ছায় সে আমাকে বিয়ে করেছে। আদ্রিজা কিছু বলতে যাবে তার আগেই আভিয়ান তার কানে কানে বলে,,, তোমার ভাই এখনো আমার লোকেদের কাছে বন্দী তাই যা বলবে ভেবে চিন্তে বলবে,,,,,

সাফিন আভিয়ানের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আদ্রিজার দিকে তাকিয়ে বলে,,, তুমি আমার সাথে চলো। ওকে আমি দেখে নিবো।

আমি আপনার সাথে যেতে পারবো না। আমি এখানেই থাকবো।

তোমাকে ভয় পেতে হবে না। আভিয়ান আমাদের কিছু করতে পারবে না। আমি পুলিশকে সব জানিয়ে এসেছি এখন চলো। আর এই বিয়ের ও কোন মূল্য নেই, জোর করে বিয়ে করা যায় না।

আদ্রিজা শান্ত স্বরে বলে,, আমি নিজের ইচ্ছায় আভিয়ানকে বিয়ে করেছি। আমি আজও তাকে ভালোবাসি। তাইতো এত বছর পরেও সে যখন এসে বললো আমাকে এখনো ভালোবাসে, ওইসবে তার কোন দোষ নেই,সে আমাকে বিয়ে করতে চায়। প্রথমে আমি রাজি হই না কিন্তু একটা সময় আমি রাজি হয়ে যাই। তার সাথে পালিয়ে আসি আর নিজের ইচ্ছায় তাকে বিয়ে করি। আমাকে ক্ষমা করে দেন, আমি আমার কথা রাখতে পারি নি।

আমার সাথে মজা করছো তাই না। আমি বিশ্বাস করি না এইসব। তুমি এখনি আমার সাথে যাবে আমি আর অন্য কিছু শুনতে চাই না। আর কিছু না বলে সাফিন আদ্রিজার হাত ধরে ওকে নিয়ে যেতে চায়।

আদ্রিজা জোরেই বলে,, হাত ছাড়েন।

সাফিন আদ্রিজার কথা না শুনে তার হাত টেনে তাকে নিয়ে যেতে চায়। আভিয়ান সাফিনের থেকে তার হাত ছাড়িয়ে বলে,,,তোর সাহস তো কম না আমার সামনেই আমার বউয়ের হাত ধরে নিয়ে নিয়ে যেতে চাইছিস্।এই মুহূর্তেই এখান থেকে বের হয়ে যা নয়তো তোকে পুলিশে দিতে আমার দেরি হবে না।

সাফিন কিছু বলার আগেই আদ্রিজা বলে,, আভিয়ানকে আবার নিজের চোখের সামনে দেখে আমি বুঝতে পারি আমি কখনোই ওকে ভুলে যেতে পারি নি। আপনাকে হয়তো আমি কোন দিনই ভালোবাসি নি তাই তো আভিয়ানকে পেয়ে আপনার কথা আমার একবারের জন্যও মনে হয় নি। আপনি এখান থেকে চলে যান আর এটাই আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো হবে।

সাফিন আভিয়ানের দিকে তাকাতেও আভিয়ান বাঁকা হাসে। সাফিন সব বুঝে যায় এই সব কিছুই আভিয়ানের সাজানো। সে কিছু করতে চেয়েও পারছে না।সে মনে মনে বলে,, তোকে আমি দেখে নিবো।তুই প্রস্তুত থাক। এই সাফিনের যা চাই তা চাই -ই। জোর করে হলেও আমি আদ্রিজাকে তোর কাছ থেকে ছিনিয়ে নিবো আর তোর এখন অবস্থা করবো যে মৃত্যুর জন্য ছটফট করবি কিন্তু মরতে পারবি না।

সাফিন ক্রোধের দৃষ্টিতে আভিয়ানের দিকে তাকিয়ে চলে যায়।

সাফিন চলে যেতেই আদ্রিজা ফ্লোরে বসে পরে। কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে তার জীবনটা পুরো ওলট-পালট হয়ে গেছে।

.
.
চলবে,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here