#সমাধি ♦️
#প্রথম_পর্ব।
#সেলিনা_আক্তার_শাহারা
____________________________
“- অনু!!
এই যে অনু!!!!
কি মন কোথায় তর???
— রাসেদ ভাইয়ের ধমকে অনু কিছুটা নারাজ।
সেই সকাল বেলা ঘুম থেকে জাগিয়ে পড়তে বসিয়েছে এই রাসেদ ভাই।ভেবেছিলাম আজকে ছুটির দিন বেশ আরামে ঘুমাবো.নাহ তা হল না।
এই রাসেদ আমার ঘুমের শত্রু।কুত্তা কোথাকার।
“-মনে মনে গালাগালি শেষ হলে এবার খাতার দিকে নজর দে।এভাবে চললে পরিক্ষায় গোল্লা পাবি,তাও বড় সাইজের।
এখনও তর মাথায় গনিতের “গ” ঢুকাতে পারলাম না।
–অনু হাই তুলতে তুলতে হেয়ালিপনায় ব্যাস্ত। জেনো রাসেদের কথা কানো ঢুকছেই না।
“- কথার মাঝখান দিয়ে হাজির হল আকলিমা বেগম,আকলিমাকে দেখে রাসেদের শুকনো হাসি,ওহহ আন্টি!!
চায়ের কাপটা রাসেদের সামনে রেখে আকলিমা অনুর মাথায় আল্ত চর দিয়ে বলে উঠলো ভালো করে পড়,মাথা মোটা মেয়ে কোথাকার।
—–★★
“-অনু আকলিমা ও মালেকের মেয়ে,আরেকটা ছেলেও আছে তাদের তপু।তপু ক্লাস 5 এ।
আর অনু ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে।
আর এই যে অনুর রাসেদ ভাই, সে এবাড়িতেই থাকে।
তেমন কোন রক্তের বাধন তো নেই, বলতে গেলে রাসেদ আশ্রিতা এখানে।
“-অনুর মা বাবা তখন গ্রামে থাকতো।অনু তখন দুনিয়ার আলো দেখেনি। সদ্য বিয়ে করে মালেক আকলিমাকে ঘরে তুলেছে।
রাসেদ তখন ছোট, আর ছোট হলেও তখনকার কথা তার অল্প অল্প মনে হয়।
এই মালেক এক নাম্বারের জুয়ারি ছিলো। জুয়ায় সব শেষ করেছে।ঘরে খাবারও থাকতো না,তাও সে জুয়া ছারতে নারাজ।
রাসেদের বাবা একজন কৃষক।বাড়ির পাশে কেউ অভুক্ত তা সইতে পারত না।
তাই মাঝে মধ্যে এই রাসেদকে দিয়ে তাদের ঘরে খাবার পাঠাতো। বলতে গেলে অর্ধেক মাসের খাবার রাসেদের পরিবার থেকেই আসতো।
তখন মালেক মিয়া না সবাই জুয়াইরা মালেক্কা বলে ডাকতো অনুর বাবাকে। রাসেদের পরিবার তেমন সচ্ছল নয়, শুধু মনের দিক দিয়ে বেশ বড়।টাকা পয়সায় নয়।
আর টাকা পয়সাই সব নয় মানুষের জন্যে।তা গ্রামের মধ্যে বাস্তব রূপ ছিলো তারা।
-” অনু যখন জন্ম নিলো তখন মালেক জুয়া ছেরে দেয়,তবে ছরার আগে বেশ ভালো টাকার জুয়ায় জিতে ছিলো।
আর সেই অল্প টাকা নিয়ে গ্রাম ছেরে এই শহরে এসেছিলো।
আর এখন মালেক্কা থেকে মালেক সাহেব হয়েছে।
আর রাসেদের পরিবার সেই আগের মতই।রাসেদের একটা বোন আছে গ্রামে,আর মা বাবা।
তাদের ছেরেই শহরে এসেছে একটা চাকরির জন্যে।
মেধায় অতুলনিয় রাসেদ।
মালেক রাসেদকে চাকরি দিবে দিবে বলে ২ বছর ধরে বাড়ির অর্ধেক চাকর বানিয়ে রেখেছে।বাজার করা।ফুলের বাগানে পানি দেয়া। তপু আর অনুকে পড়ানো। এর বিনিময়ে ডাল ভাত জুটে কাজের লোকেরা খেতে বসলে তখন। মালেকের হিসাব পাক্কা এসব করার জন্য কাউকে রাখলে মাসে ১০/১৫ হাজার খুয়াতে হবে।আর রাসেদকে পেটে ভাতে।
রাসেদ চায়না থাকতে,তবে একটা মায়া তাকে আটকে রেখেছে।আর এই শহরে চেনা জানা কেউ নেই যাবে কোথায় সে!
আর গ্রামে গিয়ে অসুস্থ বাবার ঘাড়ে বসার চেয়ে এখানে চাকর হওয়াই ভালো।হয়তো বাবার মনে আশাটা রবে ছেলে একদিন চাকরি পাবেই পাবে।
টাকা আসলে মানুষের রূপ পাল্টে যায়, তা মালেক আর তার স্ত্রী নমুনাই ধরা হক।
নয়তো যাদের দয়ায় এক বেলা খেতো তাদের ছেলেকে এভাবে অবহেলার মানেই হয় না।
তবে অনু!! অনুর কথা আবার আলাদা।রাসেদের জন্য আলাদা মায়া ওর।
—
সংসার বড়!”রাসেদের বাড়িতে যাতে কিছু টাকা পাঠাতে পারে সে জন্য বাহিরে কয়েকটা টিউশনি নিয়ে নিলো। কিছু টাকাতো পাওয়া যাবে।
“-★★_______
” রাসেদ ভাই আমার না ঘুম পাচ্ছে।
— রাসেদ চা টা শেষ করে অনুর মায়া ভরা মুখটা দেখে নিলো।আসলে এই মায়ায় কি রাসেদ আটকে??
না না এসব ভাবা পাপ। অনু আমার চাইতে অনেক ছোট।আমি তাদের আশ্রিতা,মাঝে মধ্যে মাথায় কি যে আসে।
যাই হক অনুকে দেখে বেশ মায়া হল,তাই আজকের মত অনুর ছুটি।
ছুটি শুনতেই রাসেদের গাল টিপে অনুর উল্লাসী গলা।ও রাসেদ ভাই আপনি কত্ত ভালো।।
——-★
“- আকলিমা বেগমের কথা মত সকাল সকাল বাজারের থলি হাতে বেরিয়েছে রাসেদ।
পেটে প্রচন্ড খুদা, খাওয়ার জন্য তো কিছু চাই সে টাকা কই!!
— শত ধাক্কা উপেক্ষা করে রাসেদ বাড়িতে এসেছে
সবার খাওয়া শেষে কাজের দুই ছেলের সাথে খেতে বসেছে,।
আলু ভাজি/ ডাল/ পল্ট্রি মুরগীর মাংস।
“- দূর থেকে কেউ দেখছে তাকে। দেখার শেষ নেই, তাই দেখেই যাচ্ছে। রাসেদ ভাইকে দেখতেই ইচ্ছে করে বার বার।কলেজে গিয়েও একই ইচ্ছা।
“- আপু এখানে লুকিয়ে কি দেখিস!
তপুর ডাকে অনু ভয় পেয়ে গেলো পিচ্ছিটা এত পাকন্না কে?? যখন তখন অসময়ে হাজির হয়।
রাসেদ শব্দ পেয়ে পিছন ফিরতেই সব হাওয়া।
_____
এখন আর বসে থাকার সময় নেই,
এখানে আঙ্কেলের ভরসায় আর চলবে না।বাড়িতে বেশ সমস্যা,বোন বড় হচ্ছে, প্রচুর টাকা চাই।তাই চুপি চুপি চাকরির জন্য অনেক জায়গাই আবেদন করেছে রাসেদ।
আজকে একটা ইন্টারভিউ আছে। আচ্ছা যদি ইন্টারভিউ তে টিকে যাই, আর এখানে আমায় থাকতে না দেয়, তাহলে একজনের মুখ দেখবো কি করে??
না না একজনের মুখ দেখবো বলো,তিন জন মানুষ যে তার মুখের পানে চেয়ে তা না দেখার ভান চলবে না।
ইন্টারভিউ সেরে কয়েকটা টিউশনি আছে তার পর বাড়ি ফিরবে।
——-
★
হলুদ রংঙের চেক শার্টটা পরে আবার বেরিয়েছে।গুন গুনে তিনতে শার্ট রাসেদের। গত ঈদে রাস্তার ফুটপাত থেকে ১০০ টাকা দিয়ে এনেছে।সাথে দুটো প্যান্ট। আর না হলে চলছিলোই না।
আবার মাঝে মধ্যে মালেক সাহেবের পুরাতন শার্টে তার চলে যায়।
“-
—- আজকে যা শিখতে বলেছি শিখেছিস!! আজকে বিকেলে কোন বাহানা চলবে না।তপু আর তুই তোদেরকে আজ মুরগী বানিয়ে বসিয়ে রাখবো।
” হালকা শাষনি গলা ঝেরে রাসেদ বের হয়েছে।
অনু একা একাই বির বির শুরু করল।আজকে মুরগী খেয়ে মুরগী বানাবে বললো,যদি গরু খায় তাহলে কি আমায় গরুর মত ঘাস খাওয়াবে??
আবল তাবল ভাবনা ভেবে অনুর হাসি… অহেতুক হাসিতে আকলিমা বেগম হা হয়ে আছে।ভূতে পেলে মানুষ অহেতুক হাসে শুনেছি।
—
-সারা দিনের কর্ম সেরে বাড়িতে রাসেদ।
“- তার ছাদের কোনায় চিলেকোঠার ঘরটায় একজন বসে রয়েছে। বিছানায় বই পত্র ছিটিয়ে নিজেকে বিজ্ঞানী সাজানোর হাপ ভাব।
ওমা চাঁদ আজ কোন দিকে? নিজে নিজেই পড়তে চলে এলি আজ!!
– অনু বইটা এমন ভাবে ধরে যেনো সে পড়ায় মগ্ন,আর এতটাই মগ্ন যে বইটা উল্টো তা খেয়ালই করল না।
“- যদি বইটা সোজা করে পড়তি তাহলে মনে হয় ভালো হত।
পকেটে হাত গুজে রাসেদের মসকরায় অনু লজ্জিত।
এখন কি করা!কেটে পরাই উওম ভেবে তাই করা হল।
আমি একটু আসছি নোট আনিনি।অনু কোন রকম রাসেদের চোখ এরাতে ঘর থেকে ছুটেছে।
“- বেশ ক্লান্ত, খিদেটাও না যা,যখন তখন পেয়ে যায়। শার্ট টা আলনায় রাখতেই আকলিমা হাজির।
“রাসেদ!!
-ওহ আন্টি আসুন না।
” কোথায় ছিলি সারাদিন??
— ওই টিউশনি সেরে একটু মুক্ত বাসাতে ঘুরছিলাম ছিলাম।
” হাত থেকে দুধের গ্লাস টা রাসেদের দিকে বারিয়ে দিলো আকলিমা।
দিনে দিনে চেহারার কি হাল করেছিস!
নে দুধ টুকু খেয়ে অনু আর তপুকে পড়াতে বস।
— আজনা ইচ্ছা করছে আন্টিকে জরিয়ে ধরতে,এত দিনে তার দিকে তাকালো।আর এই প্রথম দুধ খেতে দিলো। যাক ভালোই হল। বড্ড খিদে ছিলো এতে খিদে আর পুষ্টি দুই হবে।
“- আকলিমা চলে এলো, খাটে বসে গ্লাসটা মুখের সামনে নিতেই অনুর ঝাঝালো বজ্র কন্ঠ
রাসেদ ভাই!!!
– ভয় পেয়েই গিয়েছিলো রাসেদ,কি হল অনু!!
অনু রাগে খিপ্ত হয়ে রাসেদের দিকে তেরে এলো। আমার খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে আরামে বসে বাচ্চাদের মত দুধ খাওয়া হচ্ছে??
এক পলকে রাসেদের হাতের দুধের গ্লাসটা ছুরে ফেললো ফ্লোরে।
পড়ে থাকা দুধ টুকুর দিকে অসহায় হয়ে চেয়ে রয়েছে রাসেদ।কি এমন করলাম যার জন্য অনু আমার সাথে এমন টা করল??
অনু কি হয়েছে? খাবার নষ্ট করলি কেন? খেতে না দিলে নিয়ে নিতি ফেললি কেন??
বড্ড খিদে ছিলো পেটে।আমার মুখের খাবার টুকু ফেলে দিলি অনু?
-“অনুর চোখে যে পানি তা কি রাসেদ দেখছেনা? কেন অনু এমন করল তা না জেনেই, রাসেদ ভুল বুঝলো না তো??
★”(চলবো নাকি)★