#ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️
লেখিকা – #আদ্রিয়া_রাওনাফ
পর্ব – ৩৭
আবরন পূর্ণতার পড়া কমপ্লিট করে দিয়ে জিব্রানের রুমে চলে গেল । জিব্রান আর সায়ন একসাথে বসে কথা বলছিল । আবরন জিব্রানের রুমে ঢুকে ওর পাশে বসতেই সায়ন সেখান থেকে উঠে চলে আসলো ।
আবরন রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই পূর্ণতা বই খাতা সব গুছিয়ে আরো কিছু পড়া কমপ্লিট করছিল ।
পূর্ণতা টেবিলে বসে পড়ছিল হঠাৎ ওর রুমের দরজায় টোকা পড়তেই পূর্ণতা নড়েচড়ে বসে বলল ,
– কে ?
বাহির থেকে আবরনের গলা শোনা গেল ।
– আমি ।
– ওও , আচ্ছা । আসুন ।
আবরন রুমের দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই পূর্ণতা দেখল ওর হাতে অনেক শপিং ব্যাগ । পূর্ণতা ভ্রু কুচকে আবরনকে জিজ্ঞেস করল ,
– কি এগুলো ?
আবরন বলল ,
– তোমার পাগলামী করে করা শপিং এর ব্যাগ ।
পূর্ণতা হাসলো ।
ওকে হাসতে দেখে আবরন বলল ,
– এর মধ্যে কিন্তু আমারও ভাগ আছে ।
– আমি জানি ।
– আমার ভাগ আমাকে কখন দেবে ?
– প্রতিদিন ভার্সিটিতে যাওয়ার সময় একটু একটু করে দিয়ে যাবো ।
– মনে থাকবে তোমার ?
– থাকবে ।
আবরন দাঁত কেলিয়ে বলল ,
– মনে না থাকলে কিন্তু তোমার বাসায় প্রতিদিন পড়াতে এসে আমার ভাগেরটা আমি ঠিকই বুঝে নিব আর সাথে তখন পানিশমেন্ট হিসেবে আরো কিছু বোনাস দিতে হবে ।
পূর্ণতা হেসে উত্তর দেবে তার আগেই সায়ন হঠাৎ পূর্ণতার রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে পূর্ণতা কে উদ্দেশ্য করে বলল ,
– পূর্ণতা ! তুমি কি ব্যস্ত ?
পূর্ণতা ইচ্ছে করেই বলল ,
– পড়ছি ! দেখতেই তো পাচ্ছেন ।
সায়ন এক গাল হেসে বলল ,
– আমি তো দেখছি তুমি খোশগল্প করছো !
সায়নের কথা শুনে আবরন বলল ,
– পূর্ণতা ! আমার কাজ আছে । সবার বাসায় সবার জিনিস গুলো দিয়ে আসতে হবে । আমি যাচ্ছি ।
পূর্ণতা চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল ,
– না , একটু পরে যান । আপনি বসুন এখানে ।
এই বলে সায়নকে উদ্দেশ্য করে বলল ,
– আমি ফ্রি আছি ! কি বলবেন বলুন ।
সায়ন বলল ,
– আমি না , বলবে তো খালু !
পূর্ণতা ভ্রু কুচকে বলল ,
– খালু বলবে মানে ?
– তোমার বাবা তোমায় ডেকেছে ।
– ওহ , ঠিক আছে । আপনি যান । আমি যাচ্ছি বাবার কাছে ।
– না , খালু তোমাকে সাথে করে নিয়ে গিয়ে ওনার রুমে পৌঁছে দিতে বলেছে ।
পূর্ণতা বির বির করে বলল ,
– যত্তসব ঢং ! আমি জীবনেও বিশ্বাস করি না যে বাবা বলেছে এই কথা ! হুহ ।
আবরন বলল ,
– আঙ্কেল ডেকেছে তো । তুমি যাও । আমাকেও যেতে হবে ।
পূর্ণতা আবরনের দিকে তাকিয়ে বলল ,
– না , আপনি যাবেন না । আমার আরেকটু প্রবলেম আছে সেটা দেখিয়ে দিয়ে তারপর যাবেন । আপনি বসুন , আমি বাবার সাথে কথা বলে আসছি ।
আবরন উপায় না পেয়ে পূর্ণতার খাটে বসে রইল ।
পূর্ণতা রুম থেকে বেরিয়ে সায়নের সাথে নিজের বাবা মায়ের রুমের দিকে গেল ।
রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে পূর্ণতা বলল ,
– বাবা , ডেকেছো ?
আফতাব উজ্জামান মিলি রহমানের সাথে কথা বলছিল । পূর্ণতার শব্দ শুনে ওকে বলল,
– হ্যা , ডেকেছি । ভেতরে আয় ।
পূর্ণতা ভেতরে যেতেই আফতাব উজ্জামান বললেন ,
– বস এখানে । তোর সাথে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কথা বলার জন্য তোকে সায়নকে দিয়ে ডেকে আনলাম ।
সায়ন বলল ,
– খালু , তোমরা কথা বলো । আমি জিব্রান ভাইয়ার রুমে গেলাম ।
– ঠিক আছে ।
পূর্ণতা বলল ,
– কি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কথা বলতে ডেকেছো বাবা ?
আফতাব উজ্জামান নড়ে চড়ে বসে মিলি রহমানের দিকে তাকিয়ে তারপর পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে বললেন ,
– মা , তুই তো জানিস ই বাবা মা কখনো তার সন্তানের খারাপ চায় না । তারা যা ডিসিশন নেয় তা সব কিছু ভেবে চিন্তেই ।
পূর্ণতা বলল ,
– হু ।
মুখে “হু” বললেও মনে মনে ভাবলো ,
– বাবা হঠাৎ এত কঠিন কঠিন কথা বলছে কেন ?
আফতাব উজ্জামান মিলি রহমানের দিকে আবারো তাকালেন । মিলি রহমান বললেন ,
– আহ , চুপ করে গেলে কেন ? বলো , সব ওকে খুলে ।
আফতাব উজ্জামান মিলি রহমানের কথা শুনে পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে আবারো বলতে শুরু করলেন ,
– মা , তুই তো অনেক বড় হয়েছিস এখন ! সব ই বুঝিস ! তুই তো জানিস ই যে আমি জিব্রান কে ব্যবসার হাল ধরতে এবার নিজের সাথে করে ফ্রান্স নিয়ে যাবো । তখন তো তুই আর তোর মা একা হয়ে যাবি ।
পূর্ণতার বুঝতে বাকি নেই আফতাব উজ্জামান কি বলতে চাইছেন । তাই আফতাব উজ্জামান কথা বলে শেষ করার আগেই পূর্ণতা বলল ,
– আমাকে আর মাকে সাপোর্ট করার জন্য কেউ নেই এখানে তাই আমাকে বিয়ে করতে হবে যেন আমার হাজবেন্ড আর হাজবেন্ডের ফ্যামিলি আমাদের জন্য সাপোর্ট হিসেবে থাকে ।
এটাই তো তুমি বলতে চাইছো না বাবা ?
আফতাব উজ্জামান পূর্ণতার মুখে অগ্ৰীম কথা গুলো শুনে কিছুটা চমকে উঠলেন ।
মিলি রহমান বললেন ,
– তোর পড়াশোনার কোনো ক্ষতি কিন্তু আমরা চাই না পূর্ণ ! এই ভরসা টুকু আমাদের উপর করতে পারিস । তোকে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে দেবে বিয়ের পরেও এমন কারো সাথেই কিন্তু আমরা তোর বিয়ে দেব । এ বিষয়ে তুই একদম নিশ্চিন্ত থাকতে পারিস ।
পূর্ণতা বলল ,
– তোমাদের মুখে মুখে আমি কখনো তর্ক করি নি আর কখনো করবো না তা তোমরা ভালো করেই জানো । তোমরা যা চাইবে তা ই হবে । কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে ।
আফতাব উজ্জামান ভ্রু কুচকালেন । মিলি রহমান বললেন ,
– কি শর্ত ?
– শর্তের কথা পরে বলবো । আগে তোমরা আমার একটা প্রশ্নের জবাব দাও , আমি যদি আমার নিজের বিয়ের আগে তোমাদের কাছে লাষ্ট কিছু একটা আবদার করি তোমরা কি তা আমাকে দিবে ?
আফতাব উজ্জামান বললেন ,
– তুই একবার চেয়েই দেখ না ! যা চাইবি তা ই দিতে রাজি আছি ।
– ওকে , তাহলে আমার শর্তটা তোমাদের এখন বলি ।
আফতাব উজ্জামান এবং মিলি রহমান দুজনই আগ্ৰহ নিয়ে পূর্ণতার দিকে তাকালেন পূর্ণতা কি শর্ত বলবে তা শোনার জন্যে ।
পূর্ণতা বলল ,
– বাবা , ভাইয়াকে ফ্রান্স এ তুমি সাথে করে নিয়ে যাওয়ার আগে ভাইয়াকে বিয়ে করাতে হবে এবং তা ভাইয়ার পছন্দের পাত্রীর সাথে । আর ভাইয়ার বিয়েটা আমার বিয়ের সাথে একই দিনে হবে । তুমি কি রাজি ?
আফতাব উজ্জামান পূর্ণতা কে বললেন ,
– কে রে পাত্রী টা ? কার সাথে আমার ছেলেটার এত ভাব হয়েছে ?
– তোমরা ভালো করেই চিনো । কিন্তু আগে বলো তোমরা রাজি কিনা ! যদি রাজি থাকো তাহলে আমি ও বিয়ের জন্য প্রস্তুত ।
মিলি রহমান বললেন ,
– মেয়েটা কে আগে বলবি তো !
– উহু । আগে আমার কথার জবাব দাও ।
আফতাব উজ্জামান বললেন ,
– ওকে , কথা দিলাম । জিব্রানকে বিয়ে করিয়েই তারপর ওকে আমি আমার সাথে করে নিয়ে যাবো ।
পূর্ণতা খুশি হয়ে বলল ,
– সত্যি বলছো ?
– হ্যা , আমি কখনো আমার কথার খেলাপ করেছি ।
পূর্ণতা খুশি হয়ে বলল ,
– ইয়েএএএএএ !
মিলি রহমান বললেন ,
– এখন মেয়েটা কে তা তো বল ?
– নাদিরা আপু ।
– নাদিরা ! ওও ঐ যে জিব্রানের কলিগ ?
– হু ।
আফতাব উজ্জামান বললেন ,
– ঠিক আছে , এ বাড়ির এক মাত্র বউকে যখন তোরা দুই ভাই বোন মিলে আগে থেকেই পছন্দ করে রেখেছিস তাহলে আমরা আর না বলবো না । তুমি কি বলো মিলি ?
আফতাব উজ্জামান এর কথা শুনে মিলি রহমান হেসে বললেন ,
– হু । আমার ও কোনো আপত্তি নেই ।
পূর্ণতা খুশি হয়ে মনে মনে ভাবলো ,
– যাক , আবরনের কাজটা আমি ই নাহয় করে দিলাম । কিন্তু আমার বিয়েটা কি উনার সাথেই হবে ? মনে তো তাই হচ্ছে , কারন বাবা আর আম্মু দুজনই উনাকে খুব পছন্দ করেন । আর বিশেষ করে আম্মু তো আগে একবার আমাকে বলেছে ও যে আবরনকে ছেলে হিসেবে আমার কেমন লাগে ? একটা ছেলে হিসেবে ও কি পারফেক্ট কিনা ! আমার মতে উনার মতো ছেলে আজ কাল হয় ই না ।
নাহ জলদি শেষ করতে হবে । উনাকে না আমার রুমে বসিয়ে রেখে এসেছি ।
ভাবনা বাদ দিয়ে পূর্ণতা বলল ,
– ঠিক আছে । এখন বলো আমার বিষয়ে কি যেন বলছিলে বাবা !
আফতাব উজ্জামান বললেন ,
– তোর বিয়ের কথা !
– হু , বলো এখন ।
আফতাব উজ্জামান বললেন ,
– আগে তোর মনের কথা শুনি ! তোর কি কোনো ছেলে পছন্দ করা আছে ?
বাবার প্রশ্ন শুনে পূর্ণতা মনে মনে বলল ,
– পছন্দ তো আছে একজন কিন্তু আমি জানি না সে আমার ভাগ্যে আছে কি নেই ! তাই বলবো না তোমাদের । যদি ভাগ্যে থেকে থাকেন তাহলে তো তোমাদের মুখ থেকেই উনার নামটা শুনবো ।
পূর্ণতা ভাবনা ছেড়ে বলল ,
– না , আমার কোনো পছন্দ নেই । তোমরা যার সাথে পছন্দ করে আমাকে বিয়ে দেবে আমি তাকেই বিয়ে করবো । কারন আমি জানি , তোমরা কখনো ই আমার খারাপ চাও নি আর কখনো চাইবে ও না ।
আফতাব উজ্জামান বললেন ,
– তাহলে আমরা যাকে পছন্দ করে রেখেছি তোর জন্য তার সাথেই তুই বিয়েতে মত দিবি ?
– হু বাবা ।
মিলি রহমান বললেন ,
– শোন মা ! তোর খালামনি ফোন দিয়ে বলেছে যে সে চায় তোকে তাদের বাড়ির বড় বউ হিসেবে নিয়ে যেতে ।
মিলি রহমানের কথা শুনে পূর্ণতার মাথায় যেন আকাশ টা ভেঙে পড়ল , আর ওর পায়ের নিচ থেকে মাটি টাও বোধয় সরে গেল ।
পূর্ণতা বলল ,
– খা..খালামনি বলতে ! কো..কোন খালামনি , আম্মু ?
মিলি রহমান বললেন ,
– তোর কি ১৪ টা খালা । আরে বোকা , তোর ছোট খালামনি ।
– ছোট খালামনি ব..বড় ছেলে ! মানে সা..সায়ন ভ..ভাইয়া ?
মিলি রহমান বললেন ,
– হ্যা রে । আমাদের সায়ন । দেখতে শুনতে কিন্তু ছেলেটা মাশাআল্লাহ ! আর ব্যবহার ও সুন্দর । অস্ট্রেলিয়া তে পড়াশোনা করেছে । সব দিক থেকে ই কিন্তু ছেলেটাকে আমার আর তোর বাবার খুব পছন্দ হয়েছে ।
পূর্ণতা মুখে একটা শুকনো হাসি ফুটিয়ে বলল ,
– বাবা , তোমার ও পছন্দ হয়েছে ?
আফতাব উজ্জামান বললেন ,
– আমার পছন্দ হয়েছে বলেই তো ছেলেটাকে সেই অস্ট্রেলিয়া থেকে তোর কথা বলে এখানে ডেকে এনেছি !
পূর্ণতা বলল ,
– তুমি যে আমাকে কিছু না জানিয়েই সায়ন ভাইয়াকে ডেকে আনলে , আমি যদি এ বিয়েতে মত না দিতাম তাহলে কি করতে তুমি ?
আফতাব উজ্জামান হেসে পূর্ণতার মাথায় হাত রেখে বলল ,
– তোর উপর আমার সম্পূর্ণ বিশ্বাস ছিল যে তুই কখনো আমাদের কথা অমান্য করবি না । দেখলি তো তাই হলো !
পূর্ণতা শুকনো হাসি দিয়ে আফতাব উজ্জামান এর বুকে মাথা রেখে বলল ,
– বাবা , তোমার বিশ্বাস আমি কখনো ভাঙবো না , তুমি দেখে নিও । কখনো ভাঙবো না । তুমি আমাকে খুব ভরসা করো তাই না বাবা ?
আফতাব উজ্জামান মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন ,
– শুধু আমি না রে মা , তোর মা ও তোকে খুব ভরসা করে ।
পূর্ণতা বলল ,
– হু ।
পূর্ণতা মনে মনে ভাবছে ,
– তোমাদের ভরসার কাছে আমার এই মনটা আজ ভেঙে গেল । হয়তো ভাগ্য আমার এই কুলে গিয়েই ঠেকেছে ।
যত যা ই বলি , বুকটাতে কেমন যেন একটা ব্যথা অনুভব হচ্ছে ! একটা আজানা কষ্ট বুকটাকে যেন চিড়ে ফেড়ে দিচ্ছে ।
ভাবনা গুলো ভাঙা মনেই বন্দি করে নিয়ে মুখে একটা মিথ্যা হাসি ফুটিয়ে তুলে পূর্ণতা আফতাব উজ্জামান কে বলল ,
– ঠিক আছে , বাবা । তুমি আমার সাথে সাথে ভাইয়ার বিয়ের প্রস্তুতি ও নিয়ে ফেলো । আমি এখন যাচ্ছি । আমার কিছু পড়া কমপ্লিট করতে হবে ।
– ঠিক আছে মা । যা , মন দিয়ে পড়াশোনা কর । এসব নিয়ে আর তোকে মাথা ঘামাতে হবে না । যা হবে সব ঠিক ঠাক হবে । তুই যা ।
পূর্ণতা হাসি মাখা মুখ নিয়েই রুম থেকে বেরিয়ে ধীর পায়ে নিজের রুমের দিকে এগোতে লাগল ।
নিজের রুমের সামনে গিয়ে দেখল ভেতরে আবরন নেই । আবরনকে না দেখতে পেয়ে যেন ওর মনটা ছটফট ছটফট করছে একবার আবরনকে দেখার জন্য , একটু ছুঁয়ে দেখার জন্য ।
পূর্ণতা জিব্রানের রুমের দিকে এগিয়ে যেতেই দেখল সেখানে শুধু জিব্রান আর সায়ন বসে আছে । আশে পাশে আবরনের কোনো চিহ্ন নেই ।
পূর্ণতা কে দেখে জিব্রান বলল ,
– কিরে পুচকি ? পড়া শেষ ?
পূর্ণতার কান দিয়ে যেন জিব্রানের কথা ঢোকে নি । পূর্ণতা জবাব না দিয়ে উল্টো জিব্রান কে জিজ্ঞেস করল ,
– ভাইয়া , আবরন ভাইয়াকে কে দেখেছো ?
– আবরন তো আরো ১০-১৫ মিনিট আগে বাসা থেকে বেরিয়ে গেল । কেন ? কোনো দরকার ?
জিব্রানের কথা শুনে পূর্ণতা কিছুটা রাগি রাগি গলায় বলল ,
– উনাকে তো আমি বললাম একটু অপেক্ষা করতে , আমার কিছু পড়া বাকি আছে । উনি আমাকে না বলে হুট করে কেন চলে গেলেন ?
সায়ন বলল ,
– ওকে তো শুনলাম কার সাথে যেন ফোনে কথা বলছে ! মনে হলো জরুরি কোনো বিষয়ে কথা বলছিল ।
পূর্ণতা বলল ,
– কি বিষয়ে ! আপনি শুনেছেন কি ?
– না , সব শুনি নি তবে শুনেছি যে জল নামের কারো বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছিল ।
‘জল’ নামটা শুনতেই জিব্রান আর পূর্ণতা যেন ভরকে গেল । জিব্রান সায়নকে বলল ,
– তুই শিওর আবরন জল এর বিষয়ে কিছু বলছিল ?
সায়ন বলল ,
– আমি তো পূর্ণতা কে মামনির রুমে দিয়ে তোমার রুমের দিকেই আসছিলাম । আসার পথে ছেলেটাকে কথা বলতে শুনে বাহিরে দাঁড়িয়ে পড়ি । তখন যা শুনেছি তা ই তো বললাম ।
পূর্ণতার সব কেমন যেন অগাছালো লাগছে । পূর্ণতা কিছু না বলেই সেখান থেকে চলে যাচ্ছিল কিন্তু জিব্রান বলল ,
– পূর্ণতা ! তোর সাথে আমার কিছু কথা ছিল !
পূর্ণতা বলল ,
– ভাইয়া , পরে বলো । আমার মাথাটা খুব ধরেছে , আমি দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না ।
জিব্রান বলল ,
– বেশি খারাপ লাগছে ?
সায়ন বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পূর্ণতার দিকে এগিয়ে বলল ,
– আমি ধরে দিয়ে আসবো ? নাকি একা যেতে পারবে ?
পূর্ণতা মলিন মুখে জোড়পূর্বক হাসির রেখা টেনে বলল ,
– ধন্যবাদ । আমি নিজেই যেতে পারবো ।
পূর্ণতা কিছুটা দ্রুত পায়েই নিজের রুমে ঢুকে ভেতর থেকে দরজা টা অফ করে দিল ।
দরজা অফ করতেই আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না । বুক ফেটে কান্না করতে ইচ্ছে হচ্ছিল ওর , তাই করলো । পাগলের মতো কাদতে কাদতে আবরনের রেখে যাওয়া সেই শপিং ব্যাগ গুলো ছুড়ে ছুড়ে ফ্লোরে ফেলতে লাগল । সব ফেলতে ফেলতেই হঠাৎ স্বজোরে কিছু ভেঙে যাওয়ার শব্দ এলো । ভাঙার শব্দ পেয়ে পূর্ণতা ছোড়া ছুড়ি থামিয়ে কাদতে কাদতে নিচে বসে সেই প্যাকেটটা টেনে কাছে এনে দেখল এটাতে সেই ঝিনুকটা যেটার সাথে মিশে আছে আবরনের সাথে ওর কিছু বিশেষ মূহুর্ত্তের স্মৃতি ।
পূর্ণতা প্যাকেট থেকে ঝিনুকটা হাতে নিয়ে দেখল সেটা আছাড় খাওয়াতে জায়গায় জায়গায় ফাটল ধরেছে ।
পূর্ণতা তা দেখে ঝিনুকটাকে বুকে জড়িয়ে আরো জোরে জোরে কেদে উঠলো ।
…………………………………………………
সকাল ১১ টা ,
পূর্ণতা রেডি হয়ে বের হচ্ছিল ভার্সিটিতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে তখন জিব্রান পূর্ণতা কে বলল ,
– চল , আমি যাবো আজ তোকে ভার্সিটিতে দিয়ে আসতে !
পূর্ণতা বলল ,
– ঠিক আছে ।
জিব্রান বাইক চালাচ্ছে আর পূর্ণতা পেছনে চুপচাপ বসে আছে ।
জিব্রান হঠাৎ বাইকটা রোডের একপাশে সাইড করে বলল ,
– নাম বাইক থেকে ।
পূর্ণতা কোনো প্রশ্ন না করে নেমে দাঁড়ালো ।
জিব্রান বাইকের চাবি দিয়ে বাইকের ইঞ্জিনটা অফ করে বলল ,
– কাল থেকে তোর মুড ঠিক নেই দেখছি ! কি হয়েছে বল তো ?
পূর্ণতা বলল ,
– কিছুই হয় নি ।
– শোন , খেতে বসে বাবা বলছিল আমার জন্য নাকি মেয়ে দেখতে যাবে । বল তো এখন কি করি !
– চিন্তার কিছুই নেই । বাবা নাদিরা ভাবীকেই তোমার বউ করে আনবে ।
– সেটা কিভাবে ?
– যেভাবে হবার কথা সেভাবেই । এখন কথা না বলে আমাকে মেডিক্যাল এ দিয়ে এসো তো !
– ঠিক আছে । কিন্তু তোর কি হয়েছে ?
– কিছু না বললাম তো !
– ঠিক আছে । চল তাহলে ।
জিব্রান পূর্ণতা কে মেডিক্যাল এর গেইটে নামিয়ে দিয়ে বলল ,
– সাবধানে থাকিস । আমি অফিসে যাচ্ছি । আল্লাহ হাফেজ ।
– আল্লাহ হাফেজ ।
ভার্সিটির মেইন গেইট দিয়ে ভেতরে পা রাখতেই আবরন আর জলের সাথে দেখা হলো পূর্ণতার । জলকে এখানে দেখে পূর্ণতার উপর যেন আরো একবার আকাশ ভেঙে পড়ল । সব কিছু যেন ওর মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে । কোনো কিছুই ও বুঝতে পারছে না । #ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️
লেখিকা – #আদ্রিয়া_রাওনাফ
পর্ব – ৩৮
ভার্সিটির মেইন গেইট দিয়ে ভেতরে পা রাখতেই আবরন আর জলের সাথে দেখা হলো পূর্ণতার । জলকে এখানে দেখে পূর্ণতার উপর যেন আরো একবার আকাশ ভেঙে পড়ল । সব কিছু যেন ওর মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে । কোনো কিছুই ও বুঝতে পারছে না ।
জল পূর্ণতা কে দেখে দৌড়ে ওর কাছে এসে ওকে বলল ,
– পূর্ণতা ! কেমন আছো ?
পূর্ণতা কি বলবে বুঝতে পারছে না ।
তাই জলের থেকে কিছুটা দূরে পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা আবরনের দিকে পূর্ণতা তাকাতেই আবরন চোখ দিয়ে ইশারা করে বলল ,
– কথা বলো !
পূর্ণতা জলের দিকে তাকিয়ে বলল ,
– আলহামদুলিল্লাহ । তুমি কেমন আছো ?
– এতক্ষন খারাপ ছিলাম , এখন ভালো আছি ।
পূর্ণতা বলল ,
– কেন ?
জল পূর্ণতার হাত ধরে বলল ,
– আমি জানি তুমি আমার উপর এখনো রেগে আছো , আমি তোমার যে ক্ষতি করেছি তার পরে আমাকে ক্ষমা করা সম্ভব না । কিন্তু নিজেকে এখন পৃথিবীর তুচ্ছ ব্যক্তি মনে হয় নিজের কাছেই ।আমি জানি তুমি আমাকে ক্ষমা করতে পারবে না , অবশ্য আমি যা করেছি তা ক্ষমার যোগ্য ও না । তবুও তোমার সাথে দেখা করে নিজের মনের কথা গুলো তোমাকে জানিয়ে তোমার কাছে ক্ষমা চাওয়াটা অনেক জরুরি মনে হচ্ছিল । তাই তো আবরনের সাথেই আজ মেডিক্যাল এ আসলাম , নাহলে তো আমাকে মেডিক্যাল এ কেউ ঢুকতেই দিত না আর তাহলে এই ক্যাম্পাসে দাঁড়িয়ে সবাইকে সাক্ষী রেখে তোমার কাছে ক্ষমা চাওয়া ও হতো না ।
পূর্ণতা জলের হাতের উপর নিজের হাতটা রেখে বলল ,
– তুমি যা করেছো তা ঠিক নয় কিন্তু ভালোবাসার দিক থেকে ধরতে গেলে হয়তো বা ঠিক । তুমি আবরন ভাইয়াকে ভালোবাসো , তাই হয়তো তোমার মনে আমার প্রতি রাগ ক্রোধ জমেছে । সেই রাগ ক্রোধ থেকেই তুমি এমনটা করেছো । এটা ব্যাপার না । কিন্তু তোমার নিজের রাগ এবং ক্রোধের প্রতি কন্ট্রোল আনাটা জরুরি ।
আর বাকি রইল ক্ষমা করা কথা !!
ক্ষমা তো আমি সেদিনই সবাইকে করে দিয়েছি যেদিন সবাই আমাকে আবারো নতুন করে এই ভার্সিটিতে যথাযথ মর্যাদা দিয়ে ফিরিয়ে এনেছে ।
জল কান্না করে পূর্ণতা কে বলল ,
– আমি কি তোমাকে একটু জড়িয়ে ধরতে পারি ?
পূর্ণতা মুখে মলিন হাসি দিয়ে নিজেই আগে জলকে জড়িয়ে ধরল । জলও পূর্ণতা কে জড়িয়ে ধরে আরো কান্নার বেগ বাড়িয়ে দিয়ে বলল ,
– আমি অনেক খারাপ , অনেক খারাপ আমি । আমি তোমার সাথে অনেক বড় অন্যায় করেছি কিন্তু বিশ্বাস করো আমি নিজ থেকে এসব করি নি । আমাকে খারাপ বানানোর পেছনে আমার মা দায়ী । উনার জন্যই আমি এতটা নিচে নেমেছি । উনি কখনো আমার ভালো চায় নি । চেয়েছে শুধু মামার টাকাতে ভাগ বসাতে । তাই তো আবরনের পেছনে আমাকে লাগিয়ে মামার ছেলের বউ হিসেবে সেখানে পাঠাতে চেয়েছে । কিন্তু আবরনের প্রতি আমার ভালোবাসা টা সত্যি ছিল যেটা আবরন কখনো বুঝে নি , আর হয়তো বুঝবেও না । কারন , আবরন তো তোমাকে ভালোবাসে ।
জলের মুখে এই কথাটা শুনে পূর্ণতা জলকে ছেড়ে দাঁড়ালো ।
পূর্ণতা জলের দিকে তাকিয়ে ভাবছে ,
– আজ কিনা শেষ মূহুর্তে এসে আমাকে অন্য আরেকজনের মুখে শুনতে হচ্ছে যে উনি আমাকে ভালোবাসেন ! কেন ? কেন অন্যের মুখে ?? উনি নিজে কেন কখনো বলল না আমাকে এই কথাটা । তাহলে হয়তো আজ আমাকে অন্য একজনের সাথে বিয়ের জন্য মত দিতে হতো না ! ভালো তো আমি ও উনাকে বাসি কিন্তু কখনো বলি নি । আর হয়তো বা বলাও হবে না । আজ খুব কষ্ট হচ্ছে , খুব , খুব , খুব কষ্ট হচ্ছে । মন চাইছে উনাকে একটাবারের জন্যে জড়িয়ে ধরে বলি যে আমি আপনাকে চাই , শুধু আপনাকেই চাই । কেউ পারবে না আমাকে আপনার মতো করে বুঝতে এবং বোঝাতে । কেউ পারবে না আমাকে আপনার মতো করে হাসি খুশি রাখতে । কেউ পারবে না আমাকে আপনার মতো করে রেসপেক্ট করতে । কেউ পারবে না !!
ভাবতে ভাবতেই পূর্ণতার চোখ বেয়ে অঝোরে পানি ঝড়তে লাগল ।
আবরন পূর্ণতা কে কাদতে দেখে এগিয়ে এসে বলল ,
– তুমি কাদছো কেন ? কি হয়েছে ?
জল পূর্ণতা কে ধরে বলল ,
– আমাকে সামনে দেখে কি তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে ? তাহলে আমি চলে যাচ্ছি । তবুও তুমি কষ্ট পেয়ো না । প্লিজ ।
পূর্ণতা চোখের পানি মুছে জবাব দিল ,
– উহু । আমি তো কাদছি খুশিতে । এটা সুখের কান্না ।
আবরন পূর্ণতার কাছে এসে ওর চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল ,
– হয়েছে । কান্নাকাটি অফ করো ।
পূর্ণতা মাথা নাড়িয়ে “হু” বলে আবার বলল ,
– আপনার একটা কাজ আমি করে দিয়েছি !
আবরন ভ্রু কুচকে বলল ,
– কি কাজ ?
– ভাইয়া আর নাদিরা ভাবীর বিয়ের ব্যাপারে আমি বাবা আর আম্মুর সাথে কথা বলেছি !
আবরন চোখ কপালে তুলে বলল ,
– কিভাবে ?? আঙ্কেল আন্টি কি বলেছেন ?
– বাবা আর আম্মু রাজি হয়েছে ।
– সত্যি ?? কিভাবে সম্ভব ?? কি করে বলেছো !
পূর্ণতা মুখে মিথ্যা হাসি দিয়ে বলল ,
– আমি বাবাকে শর্ত দিয়ে রাজি করিয়েছি । বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছে । তখন বলেছি যে আমার বিয়ের সাথে যদি ভাইয়ার বিয়েও নাদিরা ভাবীর সাথে হয় , তাহলেই আমি বিয়ে করবো । আর তা নাহলে আমি বিয়ে করবো না ।
আবরন হেসে বলল ,
– বাহ , কি করেছো কি তুমি !! আমার তো মন চাইছে খুশিতে এখন তোমাকে নিয়ে গিয়ে তোমার পছন্দের সব খাবার খাওয়াই ।
পূর্ণতা হেসে মনে মনে বলল ,
– কিন্তু আমার বিয়েটা যে বাবা সায়ন ভাইয়ার সাথে ঠিক করেছে সেটা কি আপনি জানেন ! সেটা জানলে হয়তো আপনি খুশি হবেন না ।
আবরন বলল ,
– ঠিক আছে । তুমি ক্লাসে যাও । আজ ক্লাস শেষে আমরা একসাথে বাসায় ফিরবো ।
পূর্ণতা শুধু ছোট্ট করে বলল ,
– আচ্ছা ।
জল বলল ,
– ঠিক আছে আমি যাচ্ছি তাহলে ।
আবরন বলল ,
– কোথায় যাবে ? ক্লাস করবে না ? কয়দিন বাদে না পরীক্ষা ?
– আমাকে তো বহির্ভূত করা হয়েছে না ?
– না । করা হয় নি । সব ঠিক মতোই আছে । তোমার পূর্ণতার কাছে মাফ চাওয়ার কথা ছিল , পূর্ণতা তো মাফ করে দিয়েছে আর পূর্ণতা মাফ করেছে মানে সম্পূর্ণ ক্যাম্পাসের সবাই তোমাকে মাফ করে দিয়েছে এমনকি স্বয়ং আল্লাহ ও তোমাকে মাফ করে দিয়েছে ।
জল হেসে পূর্ণতা কে বলল ,
– তুমি খুব ভালো । আমি যে কি বলে তোমাকে ধন্যবাদ দিব !
পূর্ণতা বলল ,
– ধন্যবাদ দিতে হবে না , শুধু সবসময় ভালো কাজ করো তাহলেই হবে ।
-হুম ।
– আমি তাহলে ক্লাসে যাচ্ছি । আমার ক্লাস শুরু হতে বেশি দেড়ি নেই ।
আবরন বলল ,
– জলদি যাও । আর ক্লাস শেষে আমার সাথে দেখা করো ।
পূর্ণতা মাথা নেড়ে সেখান থেকে চলে গেল ।
নিজের মনটাকে কোনোভাবেই সামলাতে পারছে না । সব কেমন যেন গুলিয়ে যাচ্ছে । অনেক বেশি কষ্ট হচ্ছে ওর । আজকে একটা ক্লাস ছিল পূর্ণতার । কোনো রকম ক্লাসটা করে পূর্ণতা করিডোর দিয়ে একা একা হেঁটে বাহিরে বেরিয়ে আসছে । সাথে আজ প্রেনা নেই কারন প্রেনার অন্য বিষয়ের উপর অন্য রুমে ক্লাস হচ্ছে । এই বিষয়টা পূর্ণতার নেই । আর প্রেনার আজকে দুটো ক্লাস তাই ওর সাথে পূর্ণতা যেতে ও পারবে না ।
আনমনে হেঁটে করিডোর থেকে বেরিয়ে আসতেই হঠাৎ কেউ ডেকে উঠলো । পূর্ণতা পেছনে তাকিয়ে দেখলো প্রেনা ডাকছে ।
– কিরে , তোর ক্লাস শেষ ?
– একটা শেষ ! আরেকটা আছে ।
– ও । কিছু বলবি ?
প্রেনা ভালো করে পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে বলল ,
– তুই কান্না করেছিস ?
পূর্ণতা বলল ,
– না তো ।
– দেখ , আমার কাছে লুকিয়ে লাভ নেই ! কি হয়েছে বল !
– কিছুই না ।
– কিছু তো হয়েছে । চল বটতলায় আমার সাথে বসে সব খুলে বলবি ।
– কিছু হয় নি , কি বলবো ।
প্রেনা টানতে টানতে পূর্ণতা কে নিয়ে গিয়ে বটতলায় বসালো আর নিজেও ওর পাশে বসলো ।
– এখন বল তো সত্যি করে কি হয়েছে ?
– ভাইয়া আর নাদিরা ভাবীর বিয়ে ।
– সত্যি বলছিস ? তাহলে তুই খুশি না হয়ে আবালের মতো মন খারাপ করে আছিস কেন ?
– কারন ভাইয়ার বিয়ে আর আমার বিয়ে একই দিনে ।
– আরে বলিস কি রে ! এত ভালো সংবাদ গুলো এতক্ষন পর দিচ্ছিস কেন ? আবরন ভাইয়া কোথায় ?
– উনাকে দিয়ে কি কাজ ?
– তোর বিয়ে মানে তো ভাইয়ার ও বিয়ে ।
– আমার বিয়ের সাথে উনার বিয়ের কি সম্পর্ক ?
– ভাইয়া না বলেছে তোর আর ভাইয়ার বিয়ে একদিনেই হবে !
– হু , হয়তো দুষ্টুমি করে বলেছে ।
– উহু । সত্যি !
এরই মধ্যে ফাহিম , তাসিন আর আয়মান এসে হাজির ।
ফাহিম আর তাসিন মন খারাপ করে আছে । আর আয়মান ওদের দুজনকে নিয়ে কোনো বিষয়ে মজা নিচ্ছে ।
প্রেনা বলল ,
– কি হয়েছে দুই ভাইয়ার ?
আয়মান বলল ,
– সামনে একই দিনে তিনটা বিয়ে আর এদিকে আমাদের ফাহিম তাসিনের বিয়ে নিয়ে কেউ ভাবছেই না । তাই দুই বেচারার মন খারাপ !
ফাহিম বলল ,
– মজা নিস না আর । আমাদের কষ্ট তো তোরা বুঝবি না কারন তোর তো বিয়ের পর্ব শেষ , আর এদিকে সবার বিয়ে সামনে লাগলেও আমার আর তাসিনের বিয়ে নিয়ে কারো কোনো মাথা ব্যথা ই নেই ।
প্রেনা বলল ,
– সমস্যা নেই । সবার বিয়ে শেষ হলেই দেখবেন আপনাদের বিয়ের ও কথা চলছে ।
তাসিন বলল ,
– পূর্ণতা আর জিব্রান ভাইয়া , এরা কি লাকি ! দুই ভাই বোনের এক ই দিনে বিয়ে ! আর ঐদিকে আমাদের আবরনের ও বিয়ে !
ওদের মুখে বার বার আবরনের বিয়ে , আবরনের বিয়ে কথাটা শুনে পূর্ণতার কেমন যেন লাগছে । পূর্ণতা জিজ্ঞেস করল ,
– উনার বিয়েটা কার সাথে হচ্ছে ?
তাসিন বলল ,
– সেটা এখনো জানা যায় নি । কিন্তু বিয়ের ডেট আগেই ফাইনাল ।
পূর্ণতা বাদে সবাই একসাথে হেসে উঠল ।
পূর্ণতা বলল ,
– আমি আর আবরন ভাইয়া যে চিটাগাং গিয়ে কাপলের মতো নাটক করেছি সেটা কি আপনারা সবাই জানেন ?
আয়মান বলল ,
– সেটা জানা কথাই ! আবরন কখনো কাউকে এত ভালোবাসতেই পারে নি । সব বাহানা আর ঢং ছিল । আমাদের দেখানোর জন্য ।
সবাই আবারো হেসে উঠলো । সবার সাথে সাথে পূর্ণতা ও মিথ্যা হাসি মুখে এনে জড়ো করল । কিন্তু মনে মনে ভাবলো ,
– তারমানে আমাদের মাঝে কখনো কোনো ভালোবাসা ই ছিল না । যা ছিল সব নাটক আর বাহানা ।
এরই মাঝে আবরন এসে হাজির হলো সেখানে ।
– কিরে ! এত খুশি কেন ?
সবাই হাসি থামিয়ে আবরনের দিকে তাকালো । ফাহিম বলল ,
– শালা ! অবশেষে তোর মতো নিরামিষ ও বিয়ে করতে যাচ্ছে আর এদিকে আমি আর তাসিন আমিষ হয়েও খবর নেই !
আবরন হেসে বলল ,
– কি করবো ! পূর্ণতা জামানকে বড় গলায় কথা দিয়েছিলাম যে যেদিন ও বিয়ে করবে ঠিক একই দিনে আমিও বিয়ে করবো ।
প্রেনা বলল ,
– বাই দ্য ওয়ে , আবরন ভাইয়া নাহয় পাত্রী এখনো ঠিক করে নি কিন্তু পূর্ণতা ! এই , তোর বিয়ে কার সাথে হচ্ছে রে ! কে আমার দুলা ভাই ?
পূর্ণতা হেসে বলল ,
– আমার ছোট খালামনির বড় ছেলে ।
আবরন বাদে সবাই এক সাথে বলে উঠল ,
– oyeee hoyeee …. 🥳
প্রেনা বলল ,
– নাম কি ভাইয়ার ? আর দেখতে কেমন ?
পূর্ণতা বলল ,
– সায়ন । পুরো নাম জানি না । আর দেখতে …………
পূর্ণতা বলে শেষ করার আগেই আবরন বলল ,
– নিশ্চয়ই আমার মতো ড্যাশিং আর হ্যান্ডসাম না । তাই না ? কারন দুনিয়াতে আমি ওয়ান পিস ।
পূর্ণতা রেগে বলল ,
– জি না , আপনি তো দেখেই এসেছেন । সায়ন সব দিক থেকে আপনার চেয়ে এক লেভেল উপরে আছে ।
সবাই বলল ,
– ওয়াও । তাহলে তো আজই গিয়ে দেখতে হচ্ছে ।
পূর্ণতা বলল ,
– চলেন সবাই তাহলে ।
– ক্লাস শেষে যাবো ।
পূর্ণতা বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল ,
– ঠিক আছে । আমার ক্লাস শেষ । আমি বাসায় যাচ্ছি ।
আবরন বলল ,
– হ্যা , চলো । আমিও যাবো তোমার সাথে ।
– কি করতে ?
– কাজ আছে ।
– ওহ । চলুন তাহলে ।
আবরন আর পূর্ণতা সবাইকে বিদায় জানিয়ে মেইন গেইটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে । আবরন চিলড্ মুডে হেঁটে যাচ্ছে । কিন্তু পূর্ণতা তো ভেতর থেকে না চাইতেও ভেঙে পড়েছে । ওর মন চাইছে এখন একটা লং টাইম শাওয়ার নিতে আর বুক ফাটিয়ে চিৎকার করে কাদতে ।
ভাবনার মাঝেই হঠাৎ জল কোথা থেকে এসে যেন ওদের সাথে হাঁটতে শুরু করলো ।
আবরন বলল ,
– তুমি অনেক বদলে গিয়েছো জল !
জল হেসে বলল ,
– বদলে যাওয়াটা কি স্বাভাবিক না ?
– হুম ।
– আগের জল ভালো ছিল নাকি এখনকার জল তোমার কাছে ভালো মনে হচ্ছে ?
আবরন বলল ,
– আগে ম্যানারলেস ছিলে , এখন ভদ্র হয়েছো ।
– আমি খুব বাজে ছিলাম । কিন্তু বিশ্বাস করো তখনকার আমি টা হওয়ার পেছনে আমার আম্মু দায়ী ছিল । আর এখনকার আমি’র পেছনে আম্মুর কোনো হাত নেই । কারন জেলে এই কয়টা দিন একা থেকে বুঝতে পেরেছি আম্মু অনেক বড় সেলফিশ । আমার জানা ছিল না যে মা হয়ে কি করে সে তার মেয়েকে দিয়ে বাজে কাজ করাতে পারে ! সত্যিই , আমাকে আল্লাহ হেদায়েত না করলে হয়তো বা আমি আগের মতোই থেকে যেতাম । এইজন্য আল্লাহ কে কোটি কোটি থ্যাংকস ।
আবরন বলল ,
– হু , সবসময় এমনই থেকো ।
ওদের কথা শুনে পূর্ণতার মনে হচ্ছে ওদের দুজনের মাঝে পূর্ণতা এখন বোঝা ।
আবরন গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে পূর্ণতা কে বলল ,
– ওঠো ।
পূর্ণতা কে পেছনেই উঠে বসছিল কিন্তু আবরন বলল ,
– আমার গাড়িতে নতুন বসছো নাকি ? তুমি কি পেছনে বসো নাকি ?
– জল আপু কোথায় বসবে ?
জল বলল ,
– আমি যাবো না । তোমাদের এগিয়ে দিতে এলাম । আমার আরেকটা ক্লাস আছে ।
পূর্ণতা আবরনের দিকে না তাকিয়েই সামনের ডোর টা খুলে ভেতরে ঢুকে বসে ডোরটা নিজেই টান দিয়ে লাগিয়ে নিজেই সিট বেল্ট বেঁধে নিল । আবরন এসে ড্রায়ভিং সিটে বসে সিট বেল্ট বেঁধে গাড়ি ড্রাইভ করতে শুরু করলো ।
পূর্ণতা ইচ্ছে করেই চোখ বন্ধ করে সিটের সাথে হেলান দিয়ে আছে ।
৫ মিনিট পর আবরন গাড়ি থামিয়ে বলল ,
– নামো ।
পূর্ণতা চোখ খুলে আশেপাশে না তাকিয়ে নেমে দাঁড়াতেই দেখল এটা আজিমপুর না ।
আবরন গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়িয়ে এসে বলল ,
– চলো !
পূর্ণতা বলল ,
– এটা তো আপনাদের বাসা ! এখানে নিয়ে এসেছেন কেন আমায় ?
– আজকে আমাদের বাসায় আম্মু তোমাদের হোল ফ্যামিলি কে দাওয়াত দিয়েছে ।
– আমি তো জানি না । আম্মু তো কিছু বলে নি ।
– তুমি কি করে জানবে । তখন তো তুমি মেডিক্যাল এ ছিলে । শুধু তুমি না আমিও ছিলাম । আমাকে তো আম্মু ফোনে জানালো ।
– ওহ ।
পূর্ণতা মনে মনে ভাবল ,
– আজকেই এখানে আসতে হলো ! আমার মন চাইছে না উনার সামনে থাকতে আর আল্লাহ আমাকে বার বার উনার সামনে নিয়ে দাঁড় করাচ্ছে । কেন ? আমার কেন যেন খুব কষ্ট হচ্ছে । খুব কষ্ট হচ্ছে ! আচ্ছা , সবার সামনে যা দেখিয়েছি তা নাহয় নাটক ছিল , কিন্তু আমরা যখন একান্তে ছিলাম তখন কেন উনি আমার সাথে একই বিহেইভ করছিলেন ? কেন ?
আবরন বলল ,
– তুমি কি এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি ? নাকি মন চাইছে আমার কোলে উঠে বাসায় গিয়ে নামতে ।
আবরনের কথায় পূর্ণতার ভাবনার ছেদ কাটলো । পূর্ণতা বলল ,
– তার কোনো দরকার হবে না । আমি হেঁটেই যেতে পারবো ।
– ঠিক আছে । যেমন তোমার ইচ্ছা । চলো ।
– হু ।
…………………………………………………
আবরনদের বাসায় ঢুকতেই দেখল সত্যিই সবাই এই বাসাতেই আছে । এমনকি সায়ন ও । পূর্ণতা আসতেই আধিরা আনজুম পূর্ণতা কে বলল ,
– এই যে , আমার আম্মা এসে গিয়েছে । কেমন আছিস রে মা ?
আধিরা আনজুমের প্রশ্ন শুনে পূর্ণতা বলল ,
– আলহামদুলিল্লাহ ।
তারপর মনে মনে ভাবলো ,
– এরা এত কেন ভালো ?আমার এখন সত্যিই বুক ফেটে কাদতে ইচ্ছে হচ্ছে ।
আধিরা আনজুম বললেন ,
– কিরে ! বিয়েতে মত দিয়েছিস নাকি তোর মা জোর করে বিয়ে করাচ্ছে ?
এই কথা শুনে পূর্ণতার চোখ বেয়ে টুপ টুপ করে পানি পড়তে লাগল ।
আধিরা আনজুম বললেন ,
– কাদছিস কেন মা ?
আবরন হেসে বলল ,
– সবাইকে ছেড়ে যেতে হবে তো এই জন্য বোধয় !
আধিরা আনজুম চোখ গরম করে আবরনকে বলল ,
– তুই যা এখান থেকে , ফাজিল ছেলে কোথাকার ! যা গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে ।
আবরন হেসে সেখান থেকে চলে গেল ।
আধিরা আনজুম মিলি রহমানকে উদ্দেশ্য করে বলল ,
– মিলি , মেয়ে তো কাদছে । তোর বুক পোড়াচ্ছে না !
মিলি রহমান হাসি মুখেই চোখ থেকে এক ফোটা পানি বাহিরে বের করে দিয়ে বললেন ,
– মেয়েকে তো আর বের করে দিচ্ছি না ঘর থেকে ! ও যেন ভালো থাকে তাই তো ভালো কারো হাতে ওকে আমানত হিসেবে তুলে দিচ্ছি ।
শাদমান চৌধুরী বললেন ,
– মা কেদো না । তুমি কাদছো আর আবরন তো বিয়ে করার জন্য উঠে পরে লেগেছে । ও নাকি সবাইকে প্রমিজ করেছে যেদিন তোমার বিয়ে ঠিক সেদিনই সে ও বিয়ে করবে ।
আফতাব উজ্জামান হেসে বললেন ,
– তাহলে তো এক দিনে তিনটা বিয়ে হবে বলে মনে হচ্ছে ।
মিলি রহমান বললেন ,
– তা ছেলের বউ হিসেবে কাকে পছন্দ করেছিস রে ? নাকি আবরন বাবার কোনো পছন্দ করা মেয়ে আছে ?
আধিরা আনজুম হেসে বলল ,
– পূর্ণতার যেমন সায়নের সাথে বিয়ে হচ্ছে ঠিক তেমনি আবরনের জন্য আমরা জলকেই বেছে নিয়েছি !
পূর্ণতার যেন আধিরা আনজুমের কথা শুনে দম বন্ধ হয়ে আসতে লাগল ।
মিলি রহমান বললেন ,
– জল ! তুই না জলকে আনবি না বললি ।
– না রে ! মেয়েটাকে এখন দেখিস নি তো তাই বুঝবি না , এখন ও অনেক বদলে গিয়েছে ।
শাদমান চৌধুরী বললেন ,
– আমি প্রথম থেকেই চেয়েছি জলের সাথে আবরনের বিয়েটা পাকা করতে , কিন্তু আমার বোনের জন্য জল নষ্ট হয়ে যাওয়াতে পরে বিষয়টা নিয়ে পিছিয়ে যাই সেটা তো জানেন ই । কিন্তু এখন মেয়েটা আর আগের মতো নেই । তবে আবরন আর জল দুজনের একজনও জানে না ওদের বিয়ের ব্যাপারে আমরা কথা বার্তা চালাচ্ছি । তবে এবার আর গত বারের মতো ভুল করবো না । জল বাসায় এলেই দুজনকেই আগে এ ব্যাপারে বলে তারপর সব পাকা করবো ।
পূর্ণতা আর পারছে না এই কথা গুলো শুনতে । পূর্ণতা বলল ,
– আম্মু , আমি বাসায় যাই । আমার খুব মাথা ব্যথা করছে আর খারাপ লাগছে ।
সায়ন বলল ,
– না , তুমি কোথাও যাবে না । তুমি আমার সাথে এখন হসপিটালে যাবে ।
পূর্ণতা বলল ,
– কেন ?
– তোমার প্রতিনিয়ত মাথা ব্যথা করে কেন তা আগে জানতে হবে । তুমি চলো আমার সাথে । এতো চাপ নাও কেন তুমি ? চলো আমার সাথে ।
– আম্মু , আমি কোথাও যাবো না । আমি এখানেই থাকবো ।
সায়ন বলল ,
– না , তুমি চলো আমার সাথে !
পূর্ণতা বলল ,
– না , আমি এখন কোথাও যাবো না ।
এরই মধ্যে আবরন এসে বলল ,
– তোমরা কি সবাই রেডি নাদিরা ভাবীদের বাসায় যাওয়ার জন্য ?
পূর্ণতা বাদে সবাই জবাব দিল ,
– হ্যা ।
পূর্ণতা বলল ,
– তোমরা কি আজই ভাইয়ার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে নাদিরা ভাবীদের বাসায় যাওয়ার প্ল্যান করেছো ?
মিলি রহমান বললেন ,
– হ্যাঁ ।
– কিন্তু ভাইয়া তো অফিসে !
আবরন বলল ,
– আমরা ভাইয়াকে ভাইয়ার অফিসের সামনে থেকে পিক করে নিয়ে যাবো ।
পূর্ণতা মনে মনে ভাবছে ,
– বদ লোক একটা ! সব প্ল্যান আপনার আগের থেকেই জানা কিন্তু আপনি কিছুই বলেন নি , না জানার ভান করেছেন । হুহ ! ভাল্লাগেনা ! এত প্যারা আমি আর নিতে পারছি না ।
সবাই রেডি হয়ে নিচে নামতেই দেখল আয়মান , ফাহিম , তাসিন , প্রেনা এবং জল সব ধরনের খাবার দাবার এর প্যাকেট নিয়ে নিচে হাজির ।
সবাই রেডি হয়ে আজও দুই গাড়ি ভরে একসাথে যাচ্ছে নাদিরাদের বাসায় ।
#চলবে ♥️