#ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️
লেখিকা – #আদ্রিয়া_রাওনাফ
পর্ব – ৪৫
চারপাশের হৈ চৈ এর শব্দ ভেসে আসতেই পূর্ণতা টিপ টিপ করে চোখ খুলে তাকিয়ে বালিশের সাইড থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে স্ক্রিনে ট্যাপ করতেই দেখল ১১ টা বাজে ।
সময় দেখে শোয়া থেকে একলাফে উঠে বসে ভাবতে শুরু করল ,
– আজ তো গায়ে হলুদ । নিশ্চয়ই সব আত্মীয় স্বজনরা আসতে শুরু করেছে তাই তো এত শোরগোল ।
তারপর বিছানা থেকে নেমে দাঁড়াতে দাঁড়াতে ভাবল ,
– ইশশ , কাল রাতে মেহেদী দেওয়ার অনুষ্ঠান আড়াইটায় শেষ হয়েছিল বলেই তো ঘুমাতে ঘুমাতে আরো দেড়ি হয়ে গেল । অন্যদিন হলে তো আম্মু ডেকে ডেকে কান পঁচিয়ে ফেলত । আজ বাদে কাল বিয়ে বলেই হয়তো আম্মু আমাকে ঘুম থেকে আগে ভাগে ডেকে তোলে নি ।
ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হতেই ফোনে কল বেজে উঠল ।
পূর্ণতা ফোনটা হাতে নিয়ে দেখল প্রেনা কল করেছে । কলটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে প্রেনার গলা শোনা গেল ,
– উঠেছিস ? আমার কিছু কাজিন এসেছে । ওরা তোর সাথে দেখা করতে চাইছে ।
– ওও , আচ্ছা আমি রেডি হয়ে নিচে আসছি , তুই গল্প কর ।
– রেডি হয়ে তুই নিচে আসবি মানে ? ব্রেকফাস্ট করেছিস ?
– না । মাত্রই তো উঠলাম ।
– আচ্ছা , তাহলে সোজা বুফে তে চলে আয় । আমরা এখানেই আছি ।
– আচ্ছা ।
পূর্ণতা রাতের ড্রেসটা চেঞ্জ করে একটা ব্ল্যাক ইউথ হানি ইয়োলো কালার ড্রেস পড়ে নিয়ে চুলটা খোপা করে ওরনাটা গলায় ঝুলিয়ে রুম থেকে বের হয়ে দরজাটা লক করে নিচে নেমে সোজা মাঠ পেরিয়ে রেস্টুরেন্টের দিকে এগিয়ে গেল ।
রেস্টুরেন্টের কাছাকাছি পৌঁছাতেই প্রেনার সাথে দেখা হলো । প্রেনা পূর্ণতা কে জড়িয়ে ধরে হেসে তারপর ওর হাত ধরে কাজিনদের সামনে নিয়ে গিয়ে ওদেরকে উদ্দেশ্য করে বলল ,
– এই যে আমার সুন্দরী বেষ্টু !
পূর্ণতা প্রেনার কাধে বারি মেরে বলল ,
– নিজে কি কম সুন্দর নাকি ?
প্রেনার কাজিনরা এগিয়ে এসে বলল ,
– সত্যিই , তুমি দেখতে খুব সুন্দর !
পূর্ণতা হেসে বলল ,
– ধন্যবাদ ।
এরই মধ্যে কোথা থেকে জিব্রান এসে ওদের কথা শুনে দাঁত কেলিয়ে বলল ,
– শুধু কি পূর্ণতা ই সুন্দর ? নাকি আমিও সুন্দর ??
জিব্রানের কথা শুনে প্রেনার বোনেরা প্রেনার দিকে ভ্রু কুচকে তাকাতেই প্রেনা হেসে বলল ,
– এটাই জিব্রান ভাইয়া ! পূর্ণতার ভাই ! উনিও আজকের বরদের তালিকায় থাকা একজন ব্যক্তি !
এই কথা শুনে প্রেনার বোনেরা হেসে বলল ,
– আহারে , এভাবে আমাদের ছ্যাকা দিলি । ভাইয়ার উপর ক্রাশ খেতে না খেতেই শুনি ভাইয়ার বিয়ে অলরেডি ঠিক তাও আজকে । এর চেয়ে দুঃখের আর কি হতে পারে ?
পূর্ণতা , প্রেনা আর জিব্রান ওদের কথা শুনে হু হা করে হেসে উঠল ।
জিব্রান হাসি থামিয়ে বলল ,
– ওকে , পরে কথা হচ্ছে । আমার প্রচুর ক্ষুধা পেয়েছে । আমি এখনো ব্রেকফাস্ট করি নি ।
পূর্ণতা বলল ,
– তাহলে তোমার সাথে আমাকেও নিয়ে চলো ভাইয়া । আমিও ব্রেকফাস্ট করি নি ।
– ঠিক আছে চল ।
পূর্ণতাও জিব্রানের মতো সবাইকে বিদায় জানিয়ে সেখান থেকে জিব্রানের সাথে রেস্টুরেন্টের দিকে গেল ব্রেকফাস্ট করবে বলে ।
ব্রেকফাস্ট টেবিলে শুধু জিব্রান আর পূর্ণতা । পূর্ণতা বলল ,
– ভাইয়া !
জিব্রান ফোনে স্ক্রলিং করতে করতে ব্রেকফাস্ট করছিল । পূর্ণতার ডাক শুনে সাড়া দিতে বলল ,
– বল ।
– আমাকে শেষ বারের মতো খাইয়ে দিবে !!
পূর্ণতার মুখে হঠাৎ এমন কথা শুনে জিব্রান ফোনের দিক থেকে চোখ উঠিয়ে পূর্ণতার দিকে তাকালো । দেখল পূর্ণতা এক গাল হেসে ওর দিকে তাকিয়ে আছে । কিন্তু জিব্রানের বুঝতে বাকি নেই যে ছোট বোনের এই হাসি মাখা আবদারের পেছনে বুক ভরা কষ্ট লুকিয়ে আছে ।
জিব্রান ফোনটা টেবিলে রেখে পূর্ণতার মুখের সামনে খাবার তুলে বলল ,
– হা কর ।
পূর্ণতা হা করে ভাইয়ের হাত থেকে খাবার টা মুখে নিয়ে ধীরে ধীরে চিবাতে চিবাতে বলল ,
– তুমি খুশি তো ??
জিব্রান আবারো পূর্ণতার মুখে খাবার দেবে বলে প্লেটে রেডি করতে করতে বলল ,
– খুশি মানে !! অসম্ভব খুশি ! তুই জানিস না তুই আমাকে ঠিক কত বড় একটা চিন্তা থেকে মুক্ত করেছিস !
এই বলে পূর্ণতার মুখের সামনে আবারো খাবার তুলে ধরলো ।
পূর্ণতা আবারো খাবারটুকু মুখে নিয়ে বলল ,
– তুমি খুশি হয়েছো এইজন্য আমিও খুশি । আমি তো বোন হিসেবে কখনো তোমাকে কোনো হেল্প করতে পারিনি কারন আমার মাথায় বুদ্ধি-জ্ঞান কম । আমি বোকা । আমি নিজের ভালো মন্দ ই বুঝি না , তোমাকে কি করে হেল্প করতাম বলো ?
জিব্রান অপর হাতটা দিয়ে পূর্ণতার মাথায় হাত রেখে বলল ,
– তোকে অনেক জ্বালিয়েছি তাই না রে ? কত কথা বলেছি ! কত বকা দিয়েছি ! দুষ্টুমি করে কত কিছু বলেছি ! তোর সেসব শুনে খুব খারাপ লেগেছে তাই না রে ??
কিন্তু দেখ শেষে তুই ই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সুখটাকে আমার কাছে এনে দিতে সক্ষম হলি । কারন , তুই এখন বুঝতে শিখেছিস , এখন তুই আর বোকা নেই । রাস্তা ঘাটে চলতে গেলেও মিনিমাম ডিফেন্স টুকু জানিস । পড়াশোনার পাশাপাশি সব দিকেই এগিয়ে আছিস ।
Now , I’m proud of you my LiL sis…♥️
জিব্রানের কথা গুলো শুনে পূর্ণতা আর কষ্ট গুলো বুকে চেপে রাখতে পারলো না । হু হু করে কেঁদে জিব্রান কে জড়িয়ে ধরে বলল ,
– ভাইয়া , তুমি যেও না প্লিজ । প্লিজ তুমি যেও না । তুমি চলে গেলে কে আমাকে কথা শোনাবে ? কে আমাকে জ্বালাবে ? কে আমার সাথে দুষ্টুমি করবে ? কে ই আদর করে তোমার মতো “পুচকি” বলে ডাকবে ?? বলো ভাইয়া বলো ! চুপ করে থেকো না । কি করে একা একা থাকবো ? কি করে ? তোমার মতো তো কেউ পারবে না আমাকে আর মাকে আগলে রাখতে ! কেউ পারবে না !!
জিব্রান ও পারলো না ছোট্ট বোনের এই মায়াভরা কথা শুনে নিজের মনকে সামলাতে । চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে পূর্ণতা কে জড়িয়ে ধরে বলল ,
– কাদিস না পুচকি ! তুই যদি আমাকে এভাবে দুর্বল করে দিস আমি তো যেতে পারবো না রে ! আর আমি যদি যেতে না পারি তাহলে তো বাবার আমাদের ব্যবসাটা এই বয়সে একার পক্ষে সামলাতে কষ্ট হয়ে যাবে । সবার কথা ভেবেই তো আমাকে যেতে হচ্ছে রে । কিন্তু আমি তো আর সারাজীবনের জন্য তোদের ছেড়ে যাচ্ছি না , আমি তো আসবো প্রতিবছর । নাহলে আমার পুচকি কাকে ‘ভাইয়া’ বলে ডাকবে ??
দুজনই দুজনকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাদছে ।
চারিপাশে থেকে আধিরা আনজুম , মিলি রহমান , শিউলি রহমান , নাজমা বেগম , ইশিতা আলম , প্রেনা , আয়মান , ফাহিম , তাসিন , আবরন , নাদিরা , জল , রুহি , নীরা , সায়ন এবং কিছু লোকজন ভিড় করে এই ভাই বোনের ভালোবাসা দেখছে । তবে কেউ আটকাচ্ছে না । কাদুক ওরা , কাদুক । এই ভালোবাসা যেন চিরকাল অটুট থাকে । পৃথিবীর সমস্ত ভাই বোনের সম্পর্ক গুলো যেন এমনই হয় । হাজার লড়াই ঝগড়ার মাঝেও যেন সত্যিটা একইরকম থাকে ।
সবার চোখের কোনে পানি জমেছে । তবে মিলি রহমান , শিউলি রহমান , প্রেনা , জল , নাদিরা এরাও জিব্রান আর পূর্ণতার মতোই চোখের পানি ছেড়ে কাদছে ।
জিব্রান আর পূর্ণতা কান্না থামিয়ে আশেপাশের পরিস্থিতি দেখে শান্ত হয়ে গেল । জিব্রান পরিস্থিতি ঠিক করতে হেসে পূর্ণতা কে বলল ,
– আরে পুচকি ! তোর বিয়েতে কি আরো এক ট্রাক শুটকি উপহার চাস ??
পূর্ণতা জিব্রানের কথা শুনে হেসে বলল ,
– শুটকির পেছনে লুকিয়ে থাকা চকলেট খেতে খেতে তোমার বোনের দাঁত সব পোকায় কেটে ফেলবে তখন কে বিয়ে করবে তোমার বোনকে ??
জিব্রান বলল ,
– সায়ন !! তুই কি আমার বোনের ফোকলা দাঁত দেখে বিয়ে করতে রাজি আছিস ?
সায়ন হেসে সামনে এগিয়ে গিয়ে বলল ,
– ইশশ , ঠ্যাকা নাকি ? ছবিতে ক্যাটরিনা দেখিয়ে অস্ট্রেলিয়া থেকে বাংলাদেশ নিয়ে এসে যদি বলো সখিনাকে বিয়ে করতে তাহলে আমি কি রাজি হবো নাকি ?
আবরন বলল ,
– আয় হায় , তাহলে পূর্ণতা বিয়ে না করলে তো আমার বিয়েটাও ক্যান্সেল । আর আমার বিয়ে ক্যান্সেল মানে তো জলের বিয়েও ক্যান্সেল ।
জল বলল ,
– তাহলে মাঝখান থেকে আমাকে আর সায়ন ভাইকে কষ্ট দিয়ে লাভ হবে কি ?
আবরন বলল ,
– কষ্ট না দিয়ে একটা কাজ করা যেতে পারে । যেহেতু সায়ন কষ্ট করে এসেছে তাহলে সায়নের সাথে তুমি বিয়ে করে নাও জল । তাহলে সায়নকে খালি হাতে ফিরে যেতে হলো না আর তোমাকেও কষ্ট পেতে হলো না ।
আবরনের লজিক শুনে সেখানে উপস্থিত সবার মুখে হাসির রোল দেখা দিল । কিন্তু আবরনের কথা শুনে জল হেসে সায়নের দিকে তাকাতেই দেখল সায়নও ওর দিকে তাকিয়েই হাসছে ।
সায়ন বলল ,
– আবরন কিন্তু আইডিয়াটা খারাপ দেয় নি !
জিব্রান বলল ,
– তবে রে !! তুই আমার বোনকে বিয়ে না করে এখন মত বদলাচ্ছিস ??
সায়ন হেসে বলল ,
– আ’ম জাষ্ট কিডিং ব্রো !!
সবাই হেসে উঠলো ।
…………………………………………………
বিকেল সাড়ে ৫ টা ,
গায়ে হলুদের জন্য আজও রেস্টুরেন্টের দোতলাতেই বড় স্পেস আছে বলে নতুনভাবে ডেকোরেশনের কাজ করা হচ্ছে ।
সবার প্যারেন্টস অতিথি আপ্যায়নের কাজে ব্যস্ত সাথে বিয়ের বর-কনেদের গার্ডিয়ানরা নিজেদের ছেলে মেয়ের ড্রেস আপ এবং সাজ গোজের ব্যাপার নিয়ে কথা বার্তা চালাচ্ছে ।
পূর্ণতার রুমে পার্লার থেকে আসা কিছু মেয়ে এবং প্রেনা আছে । আর নাদিরার রুমেও পার্লারের মেয়েরা সাথে ওর কাজিনরা আছে । এদিকে জলের কোনো রিলেটিভস নেই । তাই শাদমান চৌধুরী জলের কিছু ফ্রেন্ডসদের ইনভাইট করে আগে ভাগেই জলের সাথে থেকে হেল্প করার জন্য চলে আসতে বলেছিলেন । এখন ওর রুমে সাজিয়ে দেওয়ার জন্য পার্লারের মেয়েরা এবং ওর কিছু বান্ধবীরা আছে ।
পূর্ণতা কে পার্লারের মেয়েরা সাজাতে সাজাতে বলল ,
– আপু , আপনাকে আপনার হবু বর বলেনি কিভাবে সাজলে সুন্দর লাগবে ?
পূর্ণতা বলল ,
– না ।
প্রেনা বলল ,
– ছেলেরা বোঝে নাকি কিভাবে সাজলে মেয়েদের সুন্দর লাগবে ?
– হ্যা , বোঝে তো । উনি উনার মনের মতো চিন্তা করে যেভাবে আপনাকে সাজতে বলবে সেভাবে সাজলে দেখবেন আপনাকে খুবই সুন্দর লাগবে !
পূর্ণতা বলল ,
– আমাকে বলে নি । আপনি আমাকে হালকা সাজ দিয়ে দিবেন !
প্রেনা বলল ,
– হলুদের দিন হালকা সাজলে সুন্দর লাগবে নাকি ?? আপু আপনি ওর কথা না শুনে আমার কথা শুনুন । গাঢ় সাজ দিয়ে দিন ওকে , নাহলে তো বিয়ের কনের গায়ে হলুদ বলে মনে হবে না ।
পূর্ণতা বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে দরজার সামনে দৌঁড়ে গিয়ে দরজা খুলে বের হয়ে যেতে যেতে বলল ,
– আল্লাহর ওয়াস্তে মাফ ও চাই , দোয়া ও চাই । আমাকে তোমরা সবাই মিলে শাক চুন্নি সাজাতে এসো না প্লিজ ।
প্রেনা পূর্ণতা কে পালাতে দেখে দৌড়ে ওর পেছনে যেতে যেতে বলল ,
– পূর্ণতা ! পাগলামি করিস না !! একটু পরই স্টেজে যাওয়ার জন্য ডাকবে । তোর জন্য আমিও কিন্তু এখনো রেডি হই নি ।
পূর্ণতা পেছনে তাকিয়ে প্রেনার কথা শুনতে শুনতে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে যাচ্ছিল কিন্তু হঠাৎ সিড়ি বেয়ে ওপরে আসা কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে উল্টে পড়তেই যাচ্ছিল কিন্তু সেই ব্যক্তি ওর কোমড় পেঁচিয়ে ওকে ধরে নিল ।
প্রেনা ঘটনা দেখে চিৎকার করে চোখ বন্ধ করে সেখানেই থেমে গেল এই ভেবে যে পূর্ণতা হয়তো পড়ে গিয়েছে ।
পূর্ণতা তাকিয়ে দেখল যে আবরন ওকে ধরে রেখেছে । আবরন রেগে বলল ,
– এভাবে কেউ দৌঁড়ায় ? তুমি কি এখনো বাচ্চা ? আরেকটু হলেই তো পড়ে যাচ্ছিলে । আজ বাদে কাল বিয়ে আর সে এখনো দৌঁড়াদৌঁড়ি করছে । কোথায় যাচ্ছিলে এভাবে দৌঁড়ে ?
পূর্ণতা আবরনকে ধরে ওর পেছনে গিয়ে লুকিয়ে বলল ,
– আমাকে বাঁচান !
আবরন বলল ,
– কেন ? কি হয়েছে ?
– প্রেনা আমাকে ভুতের মতো সাজিয়ে দিতে চাইছে । আমি এত সাজতে রাজি না ।
– আর ইউ সিরিয়াস ! এই জন্য দৌড়ে পালাচ্ছিলে ?
– হু ।
প্রেনা আবরনের গলা শুনে চোখ খুলে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে দেখল আবরন আর ওর পেছনে পূর্ণতা দাঁড়িয়ে আছে ।
পূর্ণতা প্রেনাকে দেখে বলল ,
– এই যে শাকচুন্নিটা চলে এসেছে আমাকে ধাওয়া করতে করতে !
আবরন প্রেনার দিকে তাকিয়ে বলল ,
– তোমরা এখনো বাচ্চাদের মতো করো !
প্রেনা বলল ,
– ভাইয়া , একদম আমার দোষ দেবেন না ! আজ পূর্ণতার গায়ে হলুদ আর সাজবে না বলে জিদ ধরেছে ।
পূর্ণতা বলল ,
– একদম মিথ্যা বলবি না প্রেনা ! আমি একবারো বলেছি যে সাজবো না । আমি বলেছি হালকা করে সাজবো কিন্তু তুই পার্লারের মেয়েদের বলেছিস আমাকে গাঢ় সাজ দিয়ে দিতে ।
আবরন বলল ,
– ঠিক আছে পূর্ণতা । তুমি আমার সাথে চলো আমি ওনাদের বলে দিচ্ছি ।
পূর্ণতা বলল ,
– কি বলবেন ?
– গেলেই বুঝবে । চলো ।
– আচ্ছা ।
আবরন পূর্ণতা আর প্রেনাকে সাথে করে নিয়ে পূর্ণতার রুমের দিকে এগোতে লাগল । প্রেনা যেতে যেতে আবরনকে জিজ্ঞেস করল ,
– ভাইয়া , আপনি আপনার বাংলো ছেড়ে এই বাংলোতে কি করেন ?
– আরে আমি জিব্রান ভাইয়ার কাছে যাচ্ছিলাম । আমাদের জন্য জেন্টস পার্লার থেকে ছেলেদের ডেকে আনা হয়েছে । কিন্তু ওরা ভাইয়ার রুমে সবাই । ওদের সাথে কথা বলতেই এদিকে আসা ।
– ওও ।
পূর্ণতার রুমে প্রেনা আর পূর্ণতা ঢুকে ভেতরে বসতেই আবরন দরজার কাছে দাঁড়িয়ে পার্লার থেকে আসা মেয়েদের উদ্দেশ্য করে বলল ,
– পূর্ণতা এমনিতেই সুন্দর ! ওকে আরো সুন্দর বানাতে গিয়ে ভুত বানানোর কোনো দরকার নেই । জাষ্ট হালকা একটা সাজ দিয়ে দিন যেন হলুদের কনে বলেই মনে হয় ।
পার্লারের মেয়ে গুলো হেসে হেসে বলল ,
– প্রথমেই আপুকে জিজ্ঞেস করেছি যে আপনার বর কিভাবে আপনাকে দেখতে চায় তা বলেছে কিনা , তাহলে আমরা সেভাবেই সাজাবো । কিন্তু আপু তো বলল , আপনি নাকি কিছু বলেন নি ।
এই বলে আবারো হাসলো ওরা ।
পূর্ণতা মেয়েগুলোর কথা শুনে বরফের মতো জমে গিয়েছে ।
আবরন শুধু প্রেনা কে উদ্দেশ্য করে বলল ,
– বোঝাও এদের । আমি গেলাম ।
আবরন চলে যেতেই প্রেনা বলল ,
– আরে তোমরা না জেনে বুঝে কি যে বলে ফেললে ! এটা তো পূর্ণতার বর না । এটা জল আপুর বর , মানে আমাদের আরেক কনের বর । পূর্ণতার বর তো সায়ন ভাইয়া ।
ওরা সরি বলে পূর্ণতা কে সাজাতে শুরু করলো । কিন্তু প্রেনার কথাগুলো পূর্ণতার মনে গিয়ে বিঁধলো তবুও কিছু বলে তা প্রকাশ করলো না । হাসি মুখে ই সেজে নিল ।
…………………………………………………
অবশেষে সব কনেদের আর বরদের হলুদের পোশাক পড়িয়ে এক এক করে নিয়ে গিয়ে স্টেজে বসানো হলো ।
জিব্রান আর সায়ন একই পাঞ্জাবি পড়েছে । হালকা হলুদ পাঞ্জাবিতে সাদা রং এর কাজ করা পাঞ্জাবির গলায় ও বুকে । ওরা দুজন সেইম লুকে হলুদ মাখাতে স্টেজে এসে বসেছে । জিব্রানের বন্ধুরা সব এসেছে । ওরা ই জিব্রান আর সায়নকে নিয়ে এসে স্টেজে বসিয়েছে ।
এদিকে আবরন পড়েছে হলুদ পাঞ্জাবি যাতে লাল , কালো এবং কালো সুতোর কাজ করা । পাঞ্জাবির হাতা ফোল্ড করে ড্যাশিং লুক নিয়ে বন্ধুদের সাথে এগিয়ে আসতেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাই ওর দিকে তাকালো । আবরনকে ফাহিম , তাসিন আর আয়মান সাথে করে নিয়ে এসেছে ।
হলুদের জন্য আজ মুখোমুখি দুটো স্টেজ বানানো হয়েছে । একপাশে তিন বর একসাথে বসবে । অপরটাতে তিন কনে একসাথে বসবে ।
আবরন গিয়ে জিব্রানের পাশে বসতেই সব সেই স্টেজের সামনে গিয়ে ভিড় করলো ছবি তুলবে বলে ।
জিব্রান বলল ,
– আবরন , তুই মাঝে বস । তুই একটু ইউনিক লুকে এসেছিস । আমি আর সায়ন তো সেইম , তো আমরা তোর দুপাশে বসি ।
– ঠিক আছে । যেভাবে বলবে ।
সবাই এখন তিন বরের সাথে ছবি তুলছে ।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকল ছোট থেকে বড় ছেলেরা একই ডিজাইন এবং একই রং এর পাঞ্জাবি পড়েছে । ওদের সবার পাঞ্জাবি কলাপাতা রংএর আর তাতে ম্যাজেন্ডা রং এর ডিজাইন করা । আর হলুদের কনেরা বাদে বাকি সকল ছোট থেকে বড় মেয়েরা পড়েছে ম্যাজেন্ডা রং এর শাড়ি যেগুলোর পাড় এবং আঁচল কলাপাতা কালার ।
আর সব বাবারা পড়েছে একই রকম অ্যাশ কালারের পাঞ্জাবি এবং সব মায়েরা সেই সাথে ম্যাচিং করে অ্যাশ কালারের শাড়ি যাতে মেরুন পাড় আর আঁচল সম্পূর্ণ মেরুন রং এর ।
সবাই রেডি হয়ে স্টেজের সামনে উপস্থিত । শুধু বাকি হলুদের কনেরা এবং তাদের সাথের কাজিন এবং বান্ধবীরা ।
তিন কনে কে একসাথে সবাই মিলে স্টেজের দিকে নিয়ে যেতেই সবাই সেই দিকে লক্ষ্য করে চিল্লিয়ে উঠে পেপার বোম্ব ফাটাতে শুরু করলো ।
নাদিরার জন্য জিব্রানের সাথে ম্যাচিং করেই শাড়ি কেনা হয়েছিল । কাচা হলুদের সাথে সাদা মিক্স করা আঁচল আর পাড় । তাই ওকে গাঁজরা আর গোলাপ ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে ।
এদিকে জলের জন্য কেনা হয়েছিল হলুদের সাথে সবুজ পাড় এবং আঁচলের শাড়ি । ও সেটাই পড়েছে সাথে গোলাপ ফুল দিয়ে ওকে গহনা বানিয়ে পড়ানো হয়েছে ।
আর অবশেষে রয়েছে পূর্ণতা । ওকে পড়ানো হয়েছে টাটকা হলুদের সাথে লাল টকটকে আঁচল এবং লাল পাড়ের শাড়ি । ওর গোলাপ ফুলে এলার্জি তাই আর ওকে ফুল দিয়ে সাজানো হয় নি । মিলি রহমান আর আধিরা আনজুম পছন্দ করে কিছু গহনা কিনেছিলেন সেগুলো ই পড়িয়ে ওকে হালকা সাজে স্টেজে এনে বসানো হলো ।
নাদিরাকে মাঝে বসতে দিয়ে জল আর পূর্ণতা দুজন দুইপাশে বসলো ।
সবাই উপস্থিত হতেই শুরু হলো হলুদের অনুষ্ঠান ।
প্রথমে তিন ছেলের বাড়ির লোকজন এলো তিন মেয়েকে হলুদ ছোঁয়াতে । তিন বাটিতে আলাদা আলাদা ভাবে হলুদ এনে তিন ছেলের তিন মা তাদের পুত্র বধুকে হলুদ ছোঁয়াতে এলো । এরপর এলো তিন বাবা তিন পুত্রবধুকে হলুদ ছোঁয়াতে । পূর্ণতা কে একজন অচেনা লোক হলুদ ছোয়াচ্ছিল । পূর্ণতা বলল ,
– আপনি কি ….
– সায়নের বাবা । সাহেদ হাসান ।
পূর্ণতা সালাম দিয়ে বলল ,
– আপনি কখন এলেন ! দেখা ই হলো না !
সাহেদ হাসান মুচকি হেসে পূর্ণতার কপালে হলুদের ছোঁয়া দিয়ে বলল ,
– আমি সকালেই এসেছি । কিন্তু জার্নি করে আসায় নিজের রুমে ঘুমাচ্ছিলাম মা ।
– ওও ।
কথা শেষ করে তিন বাবা স্টেজ থেকে নেমে যেতেই তিন বাটি হলুদ নিয়ে আবার তিন মেয়ের দুই মা গেল ছেলেদের হলুদ ছোঁয়াতে । কারন , জলের মা অনুপস্থিত । তাই জলের মায়ের জায়গায় মিলি রহমান আবরনের গায়ে হলুদ ছোঁয়ালেন ।
আবরনকে যখন হলুদ ছোঁয়ানো হচ্ছিল আবরন হেসে হলুদের ছোঁয়া নিচ্ছিল । বিষয়টা পূর্ণতার চোখে পড়তেই ওর মন বলল ,
– কি হাসি খুশি ভাবে উনি হলুদের ছোঁয়া নিচ্ছেন ! হয়তো এই অনুষ্ঠানে সবাই খুশি শুধু আমি বিহীন ।
নিজের কষ্টটাকে কোনো মতে চাপা দিয়ে সবার সাথে হাসি মুখেই ছবি তোলা ও হলুদের ছোয়া নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল পূর্ণতা ।
উভয় পক্ষের আসল ব্যক্তিদের হলুদ ছোঁয়ানোর পর্ব শেষ হতেই সবাই এক এক করে গিয়ে উভয় পক্ষকে হলুদ ছোঁয়াতে শুরু করল ।
এরপর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছেলে মেয়েরা নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ করে মজা করতে করতে হলুদ ছোঁয়া ছোঁয়ি করলো ।
রাত ১২ টা ,
হলুদ ছোঁয়ানোর পর্ব শেষ হতেই সব বর কনে কে স্টেজ থেকে নামিয়ে এনে সবাই নাচ গানের মজা নিতে মেতে উঠল ।
সবাই যখন ব্যস্ত অনুষ্ঠানে এর ফাঁকে জিব্রান নাদিরাকে হলুদ ছোয়াতেই নাদিরাও জিব্রানের গালে হলুদ লাগিয়ে দৌড়ে আবার সবার সাথে ভিড়ে মিশে গেল যেন জিব্রান ওর ওপর প্রতিশোধ নিতে না পারে ।
এদিকে সবাই মজা করলেও পূর্ণতা দাঁড়িয়ে আছে একপাশে । সবার সাথে দেখা হলে টুকটাক কথা বলছে কিন্তু নাচ গান করছে না , মজাও নিচ্ছে না ।
আবরন বিষয়টা খেয়াল করতেই ভিড়ের মাঝে পূর্ণতা কে টেনে সোজা এই রুম থেকে বাহিরে বের করে নিয়ে গিয়ে সোজা সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে সুইমপুলের কাছে এনে দাঁড় করালো । আবরনের এমন আচরনে পূর্ণতার রাগ লাগছিল । তাই রাগ করেই বলল ,
– কি সমস্যা আপনার ? হঠাৎ হঠাৎ টেনে নিয়ে যান কেন ??
আবরন পূর্ণতার হাত চেপে ধরে ওকে কাছে এনে বলল ,
– সবাইকেই কম বেশি হলুদ লাগিয়েছি কিন্তু তোমাকে লাগানো হয় নি !
– তো !
– তো কি ! হলুদ লাগাবো এখন !
পূর্ণতা আবরনের কাছ থেকে নিজের হাত ছাঁড়িয়ে চলে যেতে যেতে বলল ,
– হলুদ লাগাতে এখানে আনতে হয় নাকি ? উপরে লাগালে কি হতো ?
আবরন পূর্ণতার হাত ধরে আবারো ওকে আগের জায়গায় এনে দাঁড় করিয়ে বলল ,
– উপরে তো তোমার খাটাশ বর টা আছে । যখন দেখবে আমি তোমাকে হলুদ লাগাচ্ছি তখন তেড়ে এসে তোমাকে আমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যাবে ।
– তাহলে আর কি করবে ? আপনি নিজের বউকে ফেলে অন্যের বউকে গিয়ে হলুদের ছোঁয়া দিবেন ……….
পূর্ণতা বলে শেষ করার আগেই আবরন পূর্ণতার পেটে ঠান্ডা হলুদের ছোঁয়া দিতেই পূর্ণতা চোখ বন্ধ করে কথা বলা বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নিতে শুরু করলো ।
আবরন হেসে বলল,
– কি যেন বলছিলে ? চুপ করে গেলে কেন ?
পূর্ণতা বলল ,
– ছাড়ুন আমাকে । কি হচ্ছে টা কি ? আপনি এমন কেন করেন ?
আবরন আরেক দফা হলুদ পূর্ণতার গালে ছোঁয়াতেই যাচ্ছিল কিন্তু পূর্ণতা আবরনের হাত ধরে ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল ,
– আপনি আর আমাকে এই হাত দিয়ে ছোঁবেন না । আপনার কোনো অধিকার নেই আমাকে এই হাত দিয়ে ছোঁয়ার ।
আবরন হাত উঁচু করে বলল ,
– ওকে ফাইন । হাত দিয়ে ছোঁবো না ।
এই বলে পূর্ণতার কাছে গিয়ে পূর্ণতা বুঝে উঠার আগেই নিজের গালে লাগানো হলুদ ওর গালে ঘষা দিয়ে লাগিয়ে দিয়ে বলল ,
– হাত দিয়ে ছুঁতে বারন করেছো , গাল দিয়ে নয় ।
এই বলে আবরন হেসে উঠল ।
পূর্ণতা কান্না করে বলল ,
– আপনি একটা বাজে লোক । অসম্ভব রকমের বাজে লোক !
– ঠিক বলেছো । এই জন্যই তো এমন জায়গায় হলুদ লাগিয়েছি যে কেউ খুঁজেই পাবে না ।
এই বলে হাসতে হাসতে সেখান থেকে চলে গেল ।
আবরন চলে যেতেই পূর্ণতা পেটের কাছ থেকে শাড়ি সরিয়ে দেখল আবরনের পাঁচ আঙ্গুলের দাগ হলুদ লেগে আছে পেটে । পূর্ণতা আবরনের আঙ্গুল বরাবর নিজের হাত পেটে রেখে আঙ্গুল গুলো সে বরাবর দিয়ে মনে মনে বলল ,
– কেন আপনি বুঝতে পারছেন না যে আমি আপনাকে ভালোবাসি ! আপনি ভালোবাসার নাটক করলেও আমি সত্যিই আপনাকে ভালোবাসি । কেন বোঝেন না আপনি ?? কেন ??
এই বলে চোখ থেকে বেরিয়ে যাওয়া পানি টুকু মুছে নিয়ে আবারো রেস্টুরেন্টের দোতলায় ফিরে গেল পূর্ণতা ।#ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️
লেখিকা – #আদ্রিয়া_রাওনাফ
পর্ব – ৪৬
পূর্ণতা ভেতরে যাওয়ার পথেই জলের সাথে সিড়ির সামনে দেখা হলো । জল পূর্ণতা কে থামিয়ে দিয়ে বলল ,
– তোমার সাথে একটা কথা আছে !
পূর্ণতা ভ্রু কুচকে বলল ,
– বলো , কি বলবে ?
জল পূর্ণতার কাছে এগিয়ে বলল ,
– এখানে বলা যাবে না ।
– কি এমন কথা ?
– জাষ্ট ৫ মিনিট সময় নিবো । প্লিজ !
– আচ্ছা , কোথায় গিয়ে বলবে , বলো ?
জল বলল ,
– আমার সাথে এসো ।
পূর্ণতা জলের পেছন পেছন গিয়ে বাংলোর পেছনের দিকটায় গেল । পূর্ণতা বলল ,
– এখন বলো , কি বলতে এখানে আনলে ?
জল পূর্ণতার হাত ধরে বলল ,
– তুমি কি এই বিয়েতে খুশি পূর্ণতা ?
জলের প্রশ্ন শুনে পূর্ণতা জলের কাছ থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে অন্যদিকে ফিরে মাথা নিচু করে স্বাভাবিক কন্ঠে বলল ,
– হঠাৎ এই প্রশ্ন ?
জল পূর্ণতার সামনে গিয়ে ওর কাধে হাত রেখে বলল ,
– আমি জানি তুমি এই বিয়েতে খুশি নও । কারন , তুমি আবরনকে ……..
পূর্ণতা জলকে থামিয়ে দিয়ে বলল ,
– আমি সায়নকেই বিয়ে করবো !
জল কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল ,
– ভেবে বলছো ? নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মেরো না পূর্ণতা !
– আমার জীবনের সব ডিসিশন আমি ভেবে চিন্তেই নেই ।
– না , পূর্ণতা । তুমি জোরপূর্বক এই ডিসিশন নিয়েছো । এখনো সময় আছে । ভেবে দেখো ।
পূর্ণতা কিছুটা বিরক্তিকর কন্ঠে বলল ,
– আরে এত ভাবাভাবির কি আছে ? আমি সায়নকেই বিয়ে করবো বলে যখন ঠিক করেছি , তখন এটাই ফাইনাল ।
তারপর জলের দিকে তাকিয়ে বলল ,
– তোমার এত ভাবতে হচ্ছে কেন ? তুমিও আবরনকে ভালোবাসো আর আবরনও তোমাকে ভালোবাসে !
জল হেসে বলল ,
– না , আবরন কখনোই আমাকে ভালোবাসে নি । আর আমি আবরনকে একসময় ভালোবাসতাম এখন আর বাসি না ।
– তারমানে তুমি এই বিয়েতে রাজি নও ?
– এই প্রশ্নের উত্তরটা ডিপেন্ড করছে তোমার উপর !
– কেন ?
– তুমি যদি সায়নকে বিয়ে না করে আবরনকে বিয়ে করো , তাহলে আমাকে আর এই বিয়েটা করতে হবে না । আমার এই বিয়েটা করার কোনো ইচ্ছা নেই , যদিনা কেউ আমাকে জোর করতো । এখন পরিস্থিতির শিকার হয়ে এই বিয়েটা করতে হচ্ছে ।
– তুমি কি বলতে চাইছো ??
– পূর্ণতা , এটাই যে আমি অন্য কাউকে পছন্দ করতে শুরু করেছি । আমি আবরনকে আর ভালোবাসি না । এই বিয়েটা আমাকে আবরনের জিদের জন্য করতে হচ্ছে ।
– আবরনের কি জিদ ? কি বলছো , আমিতো কিছুই বুঝতে পারছি না ।
– আবরন তোমাকে প্রমিজ করেছিল যে তোমার যেদিন বিয়ে হবে ঠিক একই দিনে ও নিজেও বিয়ে করবে । তোমার বিয়ে তো সায়নের সাথে কিন্তু আবরন কাউকে খুঁজে না পেয়ে আমাকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে । আর সবার ধারনা , আমি তো ওকে আগে থেকেই ভালোবাসি । আমার তো এই বিয়েতে মত আছেই । তাই কোনো কিছু না বুঝে শুনেই আমার সাথে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে দিল সবাই ।
পূর্ণতা জলের কথা শুনে মনে মনে বলল ,
– তারমানে তো আবরন নিজ থেকেই তোমাকে বিয়ে করতে চাইছে । উনি যদি আমাকেই ভালোবাসতো , তাহলে আমাকেই বিয়ে করতে চাইতো । আমার এই জীবনে কত বড় একটা ভুল আমি করে বসেছি , আর সেটা হলো উনাকে ভালোবেসেসি । এখন বুঝতে পারছি মানুষ আত্মহত্যা কেন করে ??
কিন্তু আমি সবাইকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেব আমি আমার ম্যারিড লাইফ নিয়ে হ্যাপী এবং আমি সঠিক ডিসিশন নিয়েছি । আমি আর কাদবো না । আর কাদবো না । জোর করে ভালোবাসা যায় না । আর যা ই হোক , এ বিয়েটা আমি করবোই । আমাকে কেউ আটকাতে পারবে না ।
জল পূর্ণতা কে চুপ করে থাকতে দেখে বলল ,
– বলো , পূর্ণতা ! তুমি কি আবরনকে বিয়ে করবে ?
পূর্ণতা ভাবনা থেকে বেরিয়ে বলল ,
– কখনোই না । আমি সায়নকেই বিয়ে করবো । আমি কেন তোমার মন বাঁচাতে গিয়ে আরেকজনের মন ভেঙে দিবো ! আমার পক্ষে সম্ভব না ।
– তোমার ভুল হচ্ছে । তুমি শুধু আমার না , সাথে আবরনেরও মন ভাঙছো ।
– না , উনি যখন তোমাকেই বিয়ে করতে রাজি তাহলে আর মন ভাঙার কি আছে ? সরি , আমার পক্ষে মত বদলানো সম্ভব না । তুমি পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও আপু । ক্ষমা করে দিও !
এই বলে পূর্ণতা সেখান থেকে চলে গেল ।
…………………………………………………
দেখতে দেখতে অবশেষে আজ বিয়ের দিনটা চলেই এলো । হেরিটেজ রিসোর্ট টার পরিবেশ আজ পুরো রমরমা আর অসাধারণ ভাবে সাজানো হয়েছে চারিদিক । বাচ্চারা সবার আগে রেডি হয়ে খেলা ধুলা শুরু করেছে , বড়রা সবাই কাজে ব্যস্ত , তাই এদিক ওদিক দৌড়াদৌড়ি করছে । চারিদিকে হেরিটেজের ম্যানেজারসহ বাকি কর্মকর্তারা বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত । আর আজ হেরিটেজের পেছন দিকটাতে বিশাল বড় যে এরিয়া রয়েছে সেই এরিয়াতে খোলা আকাশের নিচে সব ব্যবস্থা করা হয়েছে । খোলা জায়গার এক পাশে কৃত্রিম একটা লেক । চারিদিকে বড় বড় গাছপালা । সেগুলোর কান্ড গুলো কে নানারকম রঙিন নেট ও বাতি দিয়ে সাজানো হয়েছে । পরপর তিনটি স্টেজ পাশাপাশি বানানো হয়েছে যেখানে তিন জুটিকে বসানো হবে বিয়ের পর । পূর্ণতা নিজের রুমের পেছনের বারান্দায় দাঁড়িয়ে এসব কিছুই দেখছিল ।
এই বারান্দা ছেড়ে সামনের বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াতেই দেখল সব গুলো বাংলোই মরিচা বাতি দিয়ে সাজানো হয়েছে । আউট লোকজন আসবে বলে আজ মোইন গেইটটাও খোলা রাখা হয়েছে এবং সেখানে কিছু সিকিউরিটি গার্ডও আছে এবং চেকপোস্ট ও বসানো হয়েছে । দূর থেকে মনে হচ্ছে ছোট্ট একটা গেইট , তা দিয়ে পিঁপড়ার সারি সারি দল ভেতরে আসছে এক এক করে ।
সামনের সুইমিংপুল সহ মাঠটাতে বিয়ে পড়ানো হবে তা ডেকোরেশন দেখেই বোঝা যাচ্ছে । এখানে দুইপক্ষের জন্য আলাদা স্টেজ করা হয়েছে এবং দুটি স্টেজেই তিনটি করে সোফা রাখা আছে । মাঝে সাদা পাতলা পর্দা টানানো হচ্ছে । পর্দার একপাশের স্টেজে তিন বর এবং পর্দার অপর পাশের স্টেজে তিন কনেকে বসানো হবে । দুই স্টেজের পাশে এবং পেছনে জায়গা রাখা হয়েছে লোকজনের জন্য ।
চারিদিকটা চোখ বুলিয়ে দেখতে দেখতেই হঠাৎ পূর্ণতার রুমের দরজায় নক করার শব্দ ভেসে আসতে শুরু করলো । পূর্ণতা বারান্দা লাগিয়ে ভেতরে গিয়ে লুকিং গ্লাসে চোখ রাখতেই দেখল বাহিরে প্রেনা দাঁড়িয়ে আছে ।
পূর্ণতা দরজা খুলে দিতেই প্রেনা কিছু প্যাকেট হাতে নিয়ে ভেতরে ঢুকে বলল ,
– গোসল করতে যা ।
– এত সকালে ?
– ১০ টা বাজে । এত সকাল কই ? আর আজকের দিনটা কি অন্য সব দিনের মতো নাকি ? আজকে তো তিন তিনটা বিয়ে । ভাবতেই আমার যে কি আনন্দ হচ্ছে !
পূর্ণতা বলল ,
– তাই নাকি ? বাই দ্য ওয়ে , এগুলো কি এনেছিস ?
– ওহ , ভালো কথা মনে করেছিস । আমি তো প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম ।এগুলো আন্টি পাঠালো । এখানে বিয়ের গহনা আছে । এগুলো পড়িয়ে দিতে বলল ।
– এত গুলো একা আমি পড়বো ?
– সারাজীবন তো পড়তে বলে নি । শুধু আজকের দিনটা ই । তুই কথা না বলে গোসল করতে যা । নাদিরা ভাবি আর জল তো অলরেডি সাজ গোজ ও শুরু করে দিয়েছে ।
– হুম । যাচ্ছি ।
– আমি একটু পর আবার আসছি ।
– ঠিক আছে ।
…………………………………………………
পূর্ণতা কে মিলি রহমান , ইশিতা আলম , প্রেনা এবং পার্লারের মেয়েরা মিলে জোরজবরদস্তি করে সাজিয়ে গুজিয়ে মেরুন লাল রং এর লেহেঙ্গা এবং ব্লাউজ পড়িয়েছে যাতে সোনালি রং এর গর্জিয়াস কাজ করা । সেই সাথে ম্যাচিং করে সাজানো হয়েছে । আজ আর পূর্ণতার কথা কেউ শোনেনি , একদম বিয়ের সাজেই সাজানো হয়েছে ওকে । চুল স্ট্রেইট আর কার্ল করতে গিয়ে পার্লারের মেয়েগুলোকে পূর্ণতার মুখে হাজার বকাঝকা শুনতে হয়েছে । কিন্তু অবশেষে পূর্ণতা কে সাজিয়ে গুজিয়ে চুল ঠিক করে লেহেঙ্গা পড়ানো সম্ভব হয়েছে । পূর্ণতা বলল ,
– এত ভারি লেহেঙ্গা পড়ে তো আমার দম বেরিয়ে যাচ্ছে !!
প্রেনা বলল ,
– দেখেছো আন্টি , এই জন্য তোমাকে আর আম্মুকে ডেকে এনেছি । ও আমার সাথে প্যান প্যান ঘ্যান ঘ্যান করবে বলেছিলাম না ? এখন সামলাও !!
পূর্ণতা বলল ,
– বাকিরা কি পড়েছে ?
ইশিতা আলম বললেন ,
– নাদিরা আর জল ও সেইম লেহেঙ্গা পড়েছে । আর বাকি মেয়েরাও একেক জন্য একেক রকম গর্জিয়াস লেহেঙ্গা ই পড়বে । আর আমরা আম্মুরা পড়বো শাড়ি ।
– আর ছেলেরা ?
মিলি রহমান বললেন ,
– সেটা বাহিরে গেলেই দেখবি । এখন কথা না বাড়িয়ে রেডি হ । চলো ভাবি , আমরা যাই ।
ইশিতা আলম বললেন ,
– চলো ।
ওনারা চলে যেতেই পূর্ণতা কে সবাই মিলে একটা একটা করে গহনা , কানের দুল , নাকের নথ , বিছা , টিকলি , চুড়ি সব পড়ানো শুরু করা দিল । অবশেষে মাথায় ওরনা দিয়ে ঘোমটা টেনে পড়িয়ে বাকি ওরনা শরীরে ভাজ মতো পড়িয়ে দেওয়া হলো ।
প্রেনা বলল ,
– তোকে আজ অসম্ভব সুন্দর লাগছে রে পূর্ণ । কারো নজর যেন না লাগে ।
পূর্ণতা মুচকি করে হাসলো । তারপর বলল ,
– তুই রেডি হ ।
– এখানেই সব নিয়ে এসেছি । এখনই রেডি হচ্ছি ।
– তুই রেডি হতে হতে সবাই বিয়ে করে হানিমুনে চলে যাবে ।
প্রেনা দাঁত কেলিয়ে হেসে পার্লারের মেয়েদের সামনে সাজতে বসে পড়ল ।
অবশেষে প্রেনা ও রেডি । প্রেনা পড়েছে অরেঞ্জ কালার ব্লাউজ যার উপর সোনালি ও মেজেন্ডা কাজ করা আর ফুল লেহেঙ্গা মেজেন্ডা কালার যার উপর সোনালি কাজ করা গর্জিয়াস ভাবে । আর ওরনাটা কমলা আর মেজেন্ডা শেডের যা এক কাধে ভাজ করে তারপর পড়ানো হয়েছে ।
অবশেষে প্রেনা , প্রেনার সব কাজিন , নাদিরার কাজিন , রুহি , নীরা এবং আরো কিছু মেয়ে মিলে তিন কনে কে একসাথে নিয়ে বাংলো থেকে এক সঙ্গে বেরিয়ে আসতেই অপর অন্য বাংলো থেকে আয়মান , ফাহিম , তাসিন , অয়ন , জিব্রানের সকল বন্ধুসহ আরো কিছু ছেলেরা মিলে তিন বরকে একসাথে নিয়ে বেরিয়ে এলো । দুপাশ থেকে দুই দল বেরিয়ে আগে থেকে সাজানো দুই স্টেজের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে আর হৈ চৈ করছে সবাই মিলে । আপাতত মাঝের পর্দাটা দুপাশে সরিয়ে ফাঁকা রাখা হয়েছে উভয় পক্ষকে দেখার জন্য ।
নাদিরা , পূর্ণতা , জল চোখ তুলে অপর পক্ষের দিকে তাকাতেই দেখল জিব্রান , আবরন আর সায়ন তিনজনই একই রকমের শেরোয়ানি পড়েছে ওদের সাথেই ম্যাচিং করে অর্থাৎ মেরুনের ওপর সোনালি কাজ করা । সেই সাথে সোনালি পাগড়ি আর সোনালী ওরনা শেহেজাদী স্টাইলে পড়েছে ।
উভয় পক্ষকেই মুখোমুখি ৬ ফুট দূরত্বে থাকা স্টেজে বসাতেই ওপর থেকে হাজার হাজার পেপার বোম্ব এক সাথে ফেটে উঠল ।
সবার মাঝে হৈ চৈ দেখা দিয়েছে । এরই মধ্যে ফাহিম মাইক হাতে নিয়ে বলল ,
– সবাই শান্ত হও ।
সবাই হৈ চৈ বন্ধ করে শান্ত হয়ে গেল ।
তারপর ফাহিম বলল ,
– এবার ধীরে ধীরে বরপক্ষ এবং কনে পক্ষ আলাদা হয়ে যাও ।
প্রেনা এপাশ থেকে মাইক হাতে নিয়ে বলল ,
– ফাহিম ভাই দাঁড়ান । বরপক্ষ আর কনেপক্ষ নাহয় আলাদা হলো । আর যারা উভয়পক্ষ ?? যেমন আমি ই কিন্তু উভয় পক্ষ । আমি কোন দলে যাবো ?
ফাহিমের হাত থেকে তাসিন মাইক হাতে নিয়ে বলল ,
– না না , মেয়েরা ঐদিকেই থাকো । ছেলেরা এই দিকেই থাকুক । মানে ছেলে vs মেয়ে । আই মিন বর vs কনে ।
জিব্রান উঠে দাঁড়িয়ে তাসিনের থেকে মাইক নিয়ে বলল ,
– তোরা মেয়েদের সাথে পাংগা লাগাস না । পরে কিন্তু তোদের ভাগ্যে বৌ জুটবে না ।
জিব্রানের কথা শুনে সবাই হেসে উঠল ।
মেয়েদের পক্ষ থেকে নাদিরা বলল ,
– তোমরা চিন্তা করো না । জিব্রান বাদে বাকি সবাই ই আমার ভাই । so , ভাইদেরকে বোন হেল্প করবে না তা তো হতেই পারে না ।
আবরন বলল ,
– ওও ভাবী , আমাদের হেল্প করতে গিয়ে আবার বাঁশ দিও না যেন !
সবাই হেসে উঠলো আবরনের কথা শুনে । নাদিরা হেসে বলল ,
– আমি মোটেও তেমন কিছু করবো না । জাষ্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ ।
এই বলে মাইকে কিছুটা জোরেই বলল ,
– ফাইম এবং তাসিন আমার ছোট্ট দুইটা ভাই । আমার দুই ভাই এর ফ্যামিলি আজ এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত আছে । তাদেরকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলতে চাই । প্লিজ , আপনারা মনোযোগ দিয়ে শুনবেন ।
নাদিরার কথা শুনে ফাহিম আর তাসিন ভয় পাচ্ছে । ভয়ে কাপাকাপি করছে প্রায় । আবরন ওদেরকে কাপতে দেখে বলল ,
– ভয় পাচ্ছিস নাকি ?
ফাহিম বলল ,
– পাচ্ছি তো ।
আবরন হেসে বলল ,
– নিজেরাই তো পন্ডিতি করে দল ভাগ করলি । এখন সামলা ঠেলা !
তাসিন বলল ,
– আমরা কি জানতাম নাকি ?
জিব্রান হেসে বলল ,
– আরে নাদিরা যখন কিছু বলবে অবশ্যই ভালো কিছু । তোরা শুধু শুধু টেনশন নিস না ।
ফাহিম আর তাসিন জিব্রানের কথা হজম করে নিয়ে নাদিরার দিকে তাকিয়ে ঢোক গিলল ।
নাদিরা ফাহিম আর তাসিনের দিকে তাকিয়ে হেসে মাইকে বলতে শুরু করল
………………
#চলবে ♥️
…………………………………………………
#ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️
লেখিকা – #আদ্রিয়া_রাওনাফ
বোনাস পর্ব
নাদিরা ফাহিম আর তাসিনের দিকে তাকিয়ে হেসে মাইকে বলতে শুরু করল ,
– আজ আমাদের গ্ৰুপের মধ্যে উপস্থিত তিন জুটির বিবাহ বন্ধনের অনুষ্ঠান । আমাদের মধ্যে আরেক মিষ্টি জুটি আয়মান আর প্রেনা । ওরা অলরেডি বিবাহিত । শুধু বাকি থাকে আমার ফাহিম আর তাসিন নামের এই ছোট্ট দুইভাই যারা প্রায় সাড়ে তিন বছর আগেই নিজেদের জীবনসঙ্গীনি কে খুঁজে নিয়েছে কিন্তু আজ পর্যন্ত কাউকে বলে উঠতে পারে নি নিজেদের মনের কথা । অপেক্ষায় আছে কখন তাদের ফ্যামিলি তাদের বিয়ের কথা বলবে !
যেহেতু , আমার দুইটা ভাই ই এখনো আবরন ভাইয়া আর আয়মান ভাইয়ার মতো পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে অর্থাৎ নিজেরা সেল্ফ ডিপেন্ডেন্ট হতে পারে নি তবে সামনে বড় ডাক্তার হতে যাচ্ছে তাই অপেক্ষা করছে সেই দিনটার । কিন্তু এদিকে আমার দুই ভাইয়ের প্রিয়তমারা , আই মিন রুহি এবং নীরা আমার মিষ্টি দুটো বোন যারা পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে কিন্তু কিছুদিন বাদেই হয়তো বাসা থেকে বিয়ের জন্য পাত্র দেখাদেখি শুরু হয়ে যাবে , তাদের প্যারেন্টসও আজকে উপস্থিত আছে । তো দুই পক্ষের প্যারেন্টসদের কে উদ্দেশ্য করে একটা কথাই বলবো ,
– ওদের আলাদা করবেন না প্লিজ । সাড়ে তিনবছর কিন্তু কম সময় না । এত গুলো বছর অপেক্ষা করেছে এবং ওরা সামনেও আরো অপেক্ষা করতে রাজি । ওদের এই অপেক্ষার ফল হিসেবে ভালো কিছুই দিন । ওদের সুখী হতে দিন । আই হোপ , আমার কথাটা সবাই ভেবে দেখবেন । প্লিজ , ওদের আলাদা করবেন না । আয়মান আর প্রেনার ফ্যামিলির মতো ওদের চাইলে ঘরোয়া ভাবে বিয়ে দিয়ে দিতে পারেন । ছেলেরা নিজ পায়ে দাঁড়ালে তখন নাহয় বৌ দের ঘরে উঠিয়ে দিয়ে গেলেন ।
নাদিরার কথা শুনে পুরো বিয়ের মহলে নিঃস্তব্ধতা দেখা দিয়েছে । এদিকে ফাহিম , তাসিন , রুহি আর নীরা কাদছে ।
পূর্ণতা আর জল স্টেজ থেকে নেমে দাঁড়িয়ে রুহি আর নীরাকে জড়িয়ে ধরল ।
ঐদিকে আবরনও স্টেজ থেকে নেমে দুইহাত দিয়ে ফাহিম আর তাসিন কাধে হাত রেখে বলল ,
– তোরা বোকার মতো কাদছিস কেন ?বিয়েতো পাকা হলো , এখন আমাদের বিয়েটাতে তো এনজয় করতেই পারিস !!
ফাহিম আর তাসিন চোখ মুছে আবরনকে জড়িয়ে ধরে বলল ,
– সত্যিই আমাদের অনেক ভাগ্য জানিস যে এমন কিছু ভাই বোন আর তোর মতো বন্ধু পেয়েছি । আজকালকার পৃথিবীতে এমন মানুষ হয় না রে । বন্ধুরা ও আজকাল স্বার্থের জন্য সব করতে পারে । ওদের কাছে বন্ধুত্বের কোনো দাম নেই , শুধু নামেই বেষ্ট ফ্রেন্ড , ক্লোজ ফ্রেন্ড । কিন্তু আমাদের মতো এমন বন্ধুত্ব হয়তো খুঁজে পাওয়াটা আজকাল বড়ই কঠিন ।
আবরন বলল ,
– হুম . Cause friendship never dies and true friends never gone ♥️
তারপর ফাহিমের হাত থেকে মাইক হাতে নিয়ে আবরন বলল ,
– So , let’s chill now guys …………
আবরন দুই নিজেদের স্টেজের সামনের খালি জায়গাতে মাঝে দাঁড়িয়ে বলল ,
– প্লে দ্য ফাস্ট সং অব আওয়ার লিস্ট !!
সাথে সাথে সাউন্ড বক্সে মিউজিক বেজে উঠতেই সবাই চিল্লিয়ে উঠল ,
জিব্রান আর সায়নও হেসে স্টেজ থেকে নেমে আবরনের দুইপাশে কোনাকোনি ভাবে পেছনে দাঁড়িয়ে গিয়ে একসাথে বলল ,
– Let’s go …..
গান বাজছে আর আবরন নাচতে শুরু করলো ,
Hey Ya… Hey Ya…
Hey Ya Heeriye Sehra Baandh Ke Main Toh Aaya Re
Hey Ya Doli Baarat Bhi Saath Mein Main Toh Laaya Re
আবরনের নাচার স্টেপ ফলো করে এবার ওর সাথে সাথে সায়ন আর জিব্রানও সেইভ ভাবে নাচতে শুরু করলো ।
Hey Ya Heeriye Sehra Baandh Ke Main Toh Aaya Re
Hey Ya Doli Baarat Bhi Saath Mein Main Toh Laaya Re
Ab Toh No Hota Hai Ek Roz Intezaar
Soni Aaj Nahi Toh Kal Hai Tujhko Toh Bas Meri Honi Re
Tenu Leke Main Javanga, Dil Deke Main Javanga…
সব ছেলেরা চিল্লিয়ে উঠে লাষ্ট স্টেপে ওদের সাথে তাল মিলিয়ে নাচতে শুরু করলো।
Tenu Leke Main Javanga, Dil Deke Main Javanga…
ওরা এইটুকু নেচে থামতে থামতেই পূর্ণতা মনে মনে বিপক্ষ দলের উপর রাগ দেখিয়ে মনে মনে বলল ,
– মিষ্টার শাহরিদ আহনাফ আবরন , আপনি মনে করেছেন এই বিয়েতে শুধু আপনি ই খুশি , আমি খুশি না । দেখিয়ে দিচ্ছি আপনাকে খুশি কাকে বলে !!
আবরন , জিব্রান আর সায়ন নাচ শেষ করতেই ছেলে মেয়ে উভয় পক্ষের সবাই চিল্লিয়ে উঠল । এমনকি জল আর নাদিরা ও খুশি হয়ে হাতে তালি দিল ।
এরই মধ্যে পূর্ণতা মাইক হাতে নিয়ে একা স্টেজ পেরিয়ে আবরনদের মুখোমুখি হয়ে মাঠে নেমে দাঁড়িয়ে সং প্লেয়ারকে দূর থেকে ইশারা করে পূর্ণতা মাথা নিচু করে গানের প্রথম লাইন গাইলো ,
– Bole Churiyan Bole Kangana …..
এইটুকু নিজ গলায় গাইতেই সবাই এবার আবরনদের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে পূর্ণতার দিকে তাকালো । পূর্ণতা আবরনের দিকে তাকিয়ে এক গাল হেসে মাইকটা প্রেনার দিকে ক্যাচ করতেই বাকি গান টুকু এবার সাউন্ড বক্সে বাজতে শুরু হতেই পূর্ণতা পেছনে তাকিয়ে জল আর নাদিরাকে নিচে নামতে বলল ।
Haay Main Ho Gayi Teri Saajna
Tere Bin Jiyo Naiyyo Lagda Main Te Margaiyaa
Lehja Lehja Dil Lehja Lehja
Lehja Lehja Soniye Lehja Lehja
পূর্ণতা গানের তালে নাচতে শুরু করতেই নাদিরা আর জলও পাশাপাশি দাঁড়িয়ে একই তালে নাতে শুরু করলো ,
Lehja Lehja Dil Lehja Lehja
Lehja Lehja Soniye Lehja Lehja
Bole Chudiyan Bole Kangana
Haay Main Ho Gayi Teri Saajna
Bole Chudiyan Bole Kangana
Haay Main Ho Gayi Teri Saajna
আবরন ঠোঁটে বাকাঁ হাসি দিয়ে পূর্ণতার নাচ দেখছে । পূর্ণতাও ইচ্ছা করেই আবরনের দিকে তাকিয়েই হেসে হেসে জোশ নিয়ে গানের তালে নাচছে আর ওকে বুঝাতে চাইছে ,
– আমিও আপনার মতোই খুশি এই বিয়েতে !
Tere Bin Jiyo Naiyyo Lagda Main Te Margaiyaan
Lehja Lehja Soniye Lehja
He Lehja Lehja..Ohhh…..
পূর্ণতারা থামতে থামতেই সাথে সাথে আবার গান বাজতে শুরু করল ,
বলছি তোমার দিব্যি গেলে
আমি বড় শান্ত ছেলে
দেখছি তোমায় সুযোগ পেলে
শুনে বুঝি বিষম খেলে
আবরন গানের সাথে নাচতে নাচতে পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দিয়ে আবার নাচায় মনোযোগ দিল ।
পড়ে গেছি ইশ্ক -এ তে
আছি বড় risk-এ তে
খালিপিলি মিস করে যাই
একটু যদি মিশতো সে
রাগারাগি কম করে, মনটা নরম করে
SMS-এ হলেও যদি বলতো আমায় সে
আসো না, কেন বাসো না, ভালো লাগে না যে আমার
ও ক্ষতি কি বলো করেছি follow তোমাকে দু’ একবার
এই গানের কলিতে আবরন একাই নাচলো । পূর্ণতা এর পাল্টা জবাব দিতে গান চেঞ্জ করে নতুন গান দিতে ইশারা করতেই আবার আরেক গানের শুরু হলো , পূর্ণতা হেসে সায়নকে উদ্দেশ্য করে বলল ,
– This song is for you sylhet-e boy
সায়ন পূর্ণতার কথা শুনে হাসল । আবরন ভ্রু কুচকালো ।
গানের লাইন শুরু হতেই পূর্ণতা নাচতে শুরু করলো ,
আইলারে নয়া দামান
আসমানের ও তেরা
বিছানা বিছাইয়া দিলাম
শাইল ধানের নেরা
দামান বও দামান বও
দামান বও দামান বও
পূর্ণতা সায়নকে ইশারা করতেই সায়ন নাচতে শুরু করলো বাকি গানে ,
সিলেটি সুন্দরি করলো
মনতো আমার চুরি
Walking like a boss lady
Shaking all her চুড়িs, man
Shaking all her চুড়িs
Know that I’m gon’ be the one
To call you my wifey
দামান লইয়া আইমু বন্ধু
In a গরুর গাড়ি baby
সিলেটি ফেরারি baby
সিলেটি ফেরারি (huh)
সায়ন থামতেই পূর্ণতা আবার নাচতে শুরু করলো ,
আইলারে নয়া দামান
আসমানের ও তেরা
বিছানা বিছাইয়া দিলাম
শাইল ধানের নেরা
দামান বও দামান বও
দামান বও দামান বও
ওরা নাচ থামাতেই আবরন বাদে সবাই জোরে চিল্লিয়ে হাত তালি দিয়ে উঠল ।
আবরন জিব্রান কে বলল ,
– পূর্ণতা কি সিলেটি সুন্দরি ?
জিব্রান দাঁত কেলিয়ে বলল ,
– বিয়ে তো পাকা , তাই সায়ন সিলেটি বলে এখন ও হিসেবে পূর্ণতাও সিলেটি ।
আবরন বলল ,
– হুহ । আমিও দেখাচ্ছি । আমি কি পারি ।
এই বলে আবরন মাইক নিয়ে বলল ,
– চেঞ্জ দ্য সং ……
আবারো গান বাজতে শুরু হলো , আবরন জলকে উদ্দেশ্য করে বলল ,
– It’s out turn …. Get ready …
Sanan sanan, sanan sanan
Sanan sanan
Dholida
Dholida, dholida
Dhol haiya ma wage wage dholida …
সুর শেষ হতেই আবরন নাচতে শুরু করলো ,
Sanan sanan jaaye re jiya
Garbe ki raat mein
Choori khankayi toone
Aadhi hi baat mein
আবরন নাচ থামিয়ে জলকে ইশারা করতেই জল নাচতে শুরু করলো ,
Garbe ki raat piya
Dhadke mera jiya
Keh dena aj tu hai
Mere sth mei
এবার দুজন দুপাশ থেকে একসাথে নাচতে শুরু করলো ,
Dholida dhol wage, wage wage re
Dholida dhol wage, wage wage re
Haiya ma wage wage, dhol wage re
Haiya ma wage wage, dhol wage re
Dholida, dholida
Dhol haiya ma wage wage dholida
ওরা থামতেই সবাই হাত তালি দিল ।
প্রেনা বলল ,
– জিব্রান ভাইয়া , এইবার আপনার আর নাদিরা ভাবির টার্ন ।
জিব্রান আর নাদিরা হাসতেই সবাই হাসল ।
পূর্ণতা আর জল নাদিরা কে সামনে জায়গা দিয়ে পেছনে সরে দাঁড়ালো । এদিকে সায়ন আর আবরন পেছনে সরে জিব্রান কে ঠেলে ধাক্কিয়ে সামনে পাঠালো । আবরন বলল ,
– play the next duet song please ..
আবারো গান বাজতে শুরু করলো ,
Churaake dil mera goriya chali
Churaake dil mera goriya chali
Udaake nindiyaan kahan tu chali
Paagal hua, deewana hua
Paagal hua, deewana hua
Kaisi yeh dil ki lagi
জিব্রান নাচতে শুরু করে দিতেই সবাই হৈ চৈ করে উঠল আর নাদিরা হাসলো । নাদিরা নাচতে শুরু করল পরের প্যারায় ,
Ho, churaake dil tera chali main chali
Mujhe kya pata kahan main chali
Manzil meri bas tu hi tu
Manzil meri bas tu hi tu
Teri gali main chali
তারপর দুইজন একসাথে নাচতে শুরু করলো ,
Oh, churaake dil mera goriya chali
Churaake dil tera chali main chali
Abhi to lage hain chaahaton ke mele
Abhi dil mera dhadkanon se khele
ওরা থামতেই এবার আবরন বলল ,
– নিউ সং ……..
এবার রিমিক্স সং বাজতে শুরু করতেই আবরন , জিব্রান , সায়ন , পূর্ণতা , নাদিরা , জল দুইপাশ থেকে একসাথে নাচতে শুরু করলো ,
Dil meraa har bar yeh
sunne ko bekarar hai
Kaho naa pyar hai
Kaho na peyar hai
এবার দুপাশ থেকে সবাই ই এই গানে নাচতে শুরু করলো ,
Ha tumse pyar hai
kee tumse pyar hai
Inn pyaree baato me
anjana ikrar hai
গানের সাথে সাথে সবাই মুখে গাইতে গাইতে নাচছে ,
Kaho naa pyar hai
Kaho na peyar haaaaiiiiiii
Kaho na peyar haiii
Kaho na peyar haiiiii
নাচতে নাচতে আবরন আর পূর্ণতার চোখে চোখ পড়তেই পূর্ণতা চোখ সরিয়ে নিয়ে সায়নের দিকে তাকিয়ে হেসে নাচতে থাকল ।
………………………………………………..
অবশেষে সবাই হৈ চৈ শেষ করতেই ডাক পড়ল ,
– কাজী চলে এসেছে , কাজী চলে এসেছে ।
সবাই মিলে জলদি জলদি মাঝের পর্দাটা টেনে দিল । তিন বর পর্দার এক দিকে আর অপর দিকে পর্দার বিপরীতে তিন কনে ।
সব গার্ডিয়ান এখন সেখানে উপস্থিত । সবাই স্টেজের চারদিকে জড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ।
কাজী সাহেব একজন একজন করে বিয়ে পড়ানো শুরু করবে বলতেই পূর্ণতার মনে ধুক করে উঠল । এতক্ষন রাগ আর অভিমানের বশে খুশি হওয়ার নাটক করলেও এখন মনে হচ্ছে জীবনের সবচেয়ে বড় দামি জিনিসটাই ও হারাতে যাচ্ছে ।
কাজী সাহেব পর্দার ওপাশ থেকে জিব্রান এর বিয়ে পড়ানো শুরু করতেই এপাশে নাদিরা পূর্ণতার হাত চেপে ধরে বলল ,
– চিন্তা হচ্ছে ।
পূর্ণতা বলল ,
– চিন্তার কিছু নেই । আল্লাহ ভরসা ।
কাজী সাহেব ‘বিসমিল্লাহ’ বলে জিব্রানকে ‘কবুল ‘ বলতে বললেই জিব্রান আবরনের হাত চেপে ধরে এক নিঃশ্বাসে তিনবার কবুল বলে থামল ।
কাজী সাহেব ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলতেই সবাই ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে উঠল ।
সেই শব্দ শুনতেই নাদিরাসহ পর্দার এপাশে উপস্থিত সবাই খুশি হয়ে গেল ।
এরপর পরপর বাকি সবার বিয়েও সম্পন্ন হয়ে গেল ।
কিন্তু পূর্ণতা চোখের পানি ফেলতে ফেলতেই আর কষ্ট সহ্য করতে না পেরে ‘কবুল’ বলেই জ্ঞান হারালো ।
#চলবে ♥️
। ♥️