প্রেমানুভূতি পর্ব -০২

গল্পের নামঃ #প্রেমানুভূতি
#পর্বসংখ্যা_০২_০৩
লেখনীতেঃ #ফারিহা_জান্নাত

গল্পের নামঃ প্রেমানুভূতি
পর্বসংখ্যা_০২
লেখনীতেঃ ফারিহা জান্নাত

রাতের আকাশে বৃষ্টি নেমেছে। ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টির শব্দে চারদিকটা মোহময়ী লাগছে। বৃষ্টির ফোৃটা পড়ার সাথে সাথে যেন গাছগুলো আরও সজীব হয়ে উঠছে। মহুয়া দোলনায় বসে বৃষ্টির পানি ছুঁয়ে দেখছে। ঠান্ডার দিনে ঠান্ডা পানি দিয়ে খেলতে বেশ মজাই লাগছে তার।
আদনানের আসার আওয়াজ পেয়ে তাড়াতাড়ি ভেজা হাতটা শাড়িতে মুছে ফেললো সে। আদনান বারান্দায় ঢুকে মহুয়াকে এমন রোবটের মতো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক হলো। মেয়েটা প্রতিনিয়ত তাকে অবাক করে দিচ্ছে।

– “এভাবে ঠান্ডার মধ্যে বসে আছেন যে? ঠান্ডা লাগছে না?”

মহুয়া নড়েচড়ে বসলো। ধীর কন্ঠে বলল,

– “না,তেমন একটা ঠান্ডা লাগছে না। ”

– “আচ্ছা,তাহলে এখানেই বসা যাক।”

আদনান পাশে থাকা সোফাগুলোর একটাতে বসলো। গলা ঝেড়ে বলা শুরু করলো,

– ” বিয়েটা একেবারেই হুট করে হয়ে গেছে। বলা যায় অনেকটা তাড়াহুড়ার মাঝেই, তাই আমার কিংবা আপনার তেমন কোন কথা-বার্তা কিংবা দেখা-সাক্ষাৎ হয় নি। মানে দাঁড়ায় এটাই আমাদের প্রথম দেখা। তাই হয়তো আপনি বেশ আনইজি ফিল করছেন। প্লিজ বি ইজি, এটা এখন থেকে আপনারও বাড়ি। আপনি নিজের খুশিমতো যা খুশি করতে পারেন। কেউ কিছু বলবেনা, তবে উল্টাপাল্টা কাজ মানে ধরুন এমন কোন কাজ যাতে আপনার ক্ষতি হবে সেরকম কিছু করলে কিন্তু আমি আর আম্মু দুজনেই খুব বকবো।
এন্ড, ক্যান উই বি ফ্রেন্ডস?”

মহুয়ার দিকে হাত বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো আদনান। ইতস্তত করে মহুয়া আদনানের হাত হালকা ছুঁয়ে বললো, “ইয়াহ্ শিউর!”
আদনান মুচকি হেসে বলল, “আমারা যেহেতু আমি কি আপনার সম্পর্কে কিছু জানতে পারি? সত্যি কথাই বলছি আমি আপনার সম্পর্কে তেমন কিছুই জানি না। আম্মু বলেছিলো কিন্তু আমার মনে নেই!”

মহুয়া আকাশের দিকে তাকি ধীরে বলল, “আমার পুরো নাম মহুয়া চোধুরী। বাবাই আমার নামটা রাখেন। আমার জন্মের ঠিক দুইবছর পর আমার মা মারা যায়। তাই মায়ের সাথে তেমন কোন বিশেষ স্মৃতি আমার নেই, তার চেহারাও খুব একটা মনে নেই। তবে ছবিতে দেখেছি বহুবার। মা মারা যাওয়ার পরের তিনবছর আমি দাদীর কাছে মানুষ হয়েছিলাম। তারপর আমার যখন পাঁচ বছর তখন আমার দাদী হার্ট অ্যাটাক করে মারা যান। তারপর থেকেই আমি একা। বাসার মোট চারটা সার্ভেন্ট ছিলো আমার দেখাশোনার জন্য। এত সার্ভেন্ট, এত খেলনা, এত আয়োজন আমাকে ঘিরে কিন্তু সেসবে আমার বিন্দুমাত্র আগ্রহ ছিলো না। বাবা সকালে অফিসে চলে যেতেন, ফিরতেন রাত করে। আমি ততক্ষণে ঘুমিয়ে যেতাম। তাই বাবার সাথে একবাড়িতে থাকলেও দেখা-সাক্ষাত, কথা বলা খুব কম ছিলো। বাড়িতে কোন আত্নীয়-স্বজন ও আসতো না তেমন। বয়স ছয় হলেই আমাকে স্কুলে ভর্তি করে দেওয়া হয়। স্কুলে যখন সবাই বন্ধুদের সাথে মিশতো তখন আমি বেঞ্চের এককোণে বসে থাকতাম। নিজ থেকে গিয়েও যে কারো সাথে কথা বলতে হয় তা আমি জানতাম না, এখন জানি কিন্তু পারিনা। ”

আদনান মহুয়াকে থামিয়ে বলে উঠলো, “তা আপনার সাথে কথা বলেই বুঝতে পেরেছি।”

মহুয়া মৃদু হেসে আবারো বলা শুরু করলো, “বইয়ের বাহিরে আমার নিজের কোন আলাদা জগৎ নেই। বাবা পরিক্ষার খারাপ করা চাইতেন না তাই কখনো পড়াশোনার চেয়ে বেশি গুরুত্ব কোন কিছুতে দেই নি। এর বাহিরে আমার কোন গল্প নেই। পরিবার, অনুষ্ঠান, আনন্দ, এসবের কোন কিছুই আমি কখনো উপভোগ করিনি।”

কথা শেষ করেই নিজের চোখের কোনের জমে থাকা পানিটুকু মুছে ফেললো মহুয়া। আদনান অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, “তাহলে বিভিন্ন অনুষ্ঠানগুলো? মানে ঈদের সময় কি করতেন?”

মহুয়া মলিন হেসে বলল, ” পরিবারহীন মানুষের আবার ঈদ হয় নাকি? ওইদিন বাড়িতে খালি ভালো রান্বা হতো এর বেশি কিছুই না। কারন বাবা বাহিরে বের হতে দিতেন না।”

মহুয়া আগের কথা মনে করে আর কান্না করতে চায় না। কিন্তু সেসব কথা মনে হলেই কান্না আসে। কোনভাবেই আটকাতে পারে না। আজও তাই হলো। ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো সে। আদনান মহুয়ার কান্না শুনে হতভম্ব হয়ে রইলো। ধীর পায়ে উঠে তার মাথায় হাত বুলিয়ে থাকলো।
মহুয়া নাক টেনে কাঁদছিলো, মাথায় কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে থমকে দাঁড়ালো। এটাই! এটাই তো সে চেয়েছিলো, কেউ তার দুঃসময়ে এভাবে পাশে থাকুক, তাকে শান্তানা দিক। কিন্তু কখনও কাউকে পাইনি। আজ আদনানের এমন কাজে তার অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে, ভালোলাগার অনুভূতি।

আদনান মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো, “আপনাকে আমি আর কষ্ট পেতে দেবো না মহুয়া!”

_________

সকালের সূর্যের আলো মুখের উপর পড়তেই ঘুমটা ভেঙে গেলো মহুয়ার। কাল রাতে তার ঘুম ভালো ঘুম হয়েছে। হওয়ারই কথা, কান্নার পর তো ঘুম ভালো হয়। জানালার পর্দা হালকা ফাঁক করে দেখলো সকাল এখনো পুরোপুরি হয়নি। চট করে হাত-মুখ ধুয়ে নামাজটা পড়ে ফেললো সে।
কাল রাতে কান্না যখন থামাতে পারছিলো না আদনান তাকে বকে-ধমকে কান্না বন্ধ করিয়ে শুয়িয়ে দিয়েছে। আদনানের ভয়ে মহুয়ার কোন উচ্চবাক্য করতে পারে নি।

নামাজ পড়া শেষ করে মহুয়া বাড়িটা ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো। নতুন বউ হিসেবে এমন করা উচিত না কিন্তু নিজের কৌতুহল দমাতে পারছে না। রান্নাঘরের সামনে আসতেই দেখলো দুইজন মহিলা কাজ করছে। মহুয়া হাসিমুখে তাদের দিকে এগিয়ে গেলো। তাদের সাথে অনেকটা জোরাজুরি করেই সে সকালের নাস্তাটা বানালো
আগে যখন সে বাড়িতে একা থাকতো প্রায়ই নিত্যনতুন রেসিপি ট্রাই করতো, সেই ধারাবাহিকতায় তার মোটামুটি সব রান্নাই জানা।

খাবারগুলো সব টেবিলে সাজিয়ে দিয়ে রুমে ঢুকে বিছানায় বসলো সে। মাথার ঘোমটা ফেলতেই আদনান ঘুম ঘুম স্বরে তার হাত হালকা করে জড়িয়ে ধরে বলল,

-” আপনি কোথাশ ছিলেন মহুয়া? আমি আপনাকে ঘুৃম থেকে উঠে পেলাম না কেন?”

চলবে,
ছোট পর্বের জন্য দুঃখিত।

বারগুলো সব টেবিলে সাজিয়ে দিয়ে রুমে ঢুকে বিছানায় বসলো সে। মাথার ঘোমটা ফেলতেই আদনান ঘুম ঘুম স্বরে তার হাত হালকা করে জড়িয়ে ধরে বলল,
– “আপনি কোথায় ছিলেন মহুয়া? আমি আপনাকে ঘুৃম থেকে উঠে পেলাম না কেন?”

মহুয়া হতভম্ব হয়ে নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে রইলো। হাত ছাড়ানোর জন্য একটু ছটফট করলে আদনান হাতটা আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,
– “কি ব্যাপার উত্তর দিচ্ছেন না যে? আপনি কোথায় ছিলেন?”

মহুয়া লজ্জায় গুটিশুটি হয়ে নিচু স্বরে উত্তর দিলো,
– “আমি বাড়িটা ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম। কোন কাজ ছিলো না তো তাই।”

মহুয়া ভেবেছিলো তার এমন কাজে আদনান রেগে যাবে। ভীত চোখে তার দিকে তাকাতেই আদনান হেসে বলে,
– “বাড়ি পছন্দ হয়েছে?”

মহুয়া নিজেও হেসে মাথা নাড়ালো। আদনান মহুয়ার হাত ছেড়ে উঠে বসে আড়মোড়া ভেঙে জিজ্ঞেস করলো,
– “আপনার কি বাড়ির জন্য মন খারাপ লাগছে?”

মহুয়ার মুখটা সাথে সাথে মলিন হয়ে গেলো। ছলছল চোখে আদনানের দিকে তাকিয়ে বললো,
– “না আমার মন খারাপ করছে না। আমি এই বাড়িতেই ভালো আছি। আর কখনো ওই বাড়িতে আমি যাবো না, যাবো না, যাবো না।”

আদনান মহুয়ার দিকে অবাক হয়ে তাকালো। মহুয়া চোখ নামিয়ে নিলো। চলে যেতে নিলেই আদনান হাত ধরে আটকে বললো,
– “আমরা না ফ্রেন্ড। ফ্রেন্ডের কাছে কিছু লুকাতে হয় না। আমি স্পষ্ট দেখতে পারছি আপনি কিছু লুকাচ্ছেন। ধুমধাম মনের কথাটা বলে দিন তো।”

মহুয়া ধুমধাম কথাটা শুনে হেসে দিলো। তারপর আবার নাক টেনে বললো,
– “বাবার কাছে আমি আর যাবো না। তিনি আমাকে না জানিয়ে দেশের বাহিরে চলে যাচ্ছে। আমি জানি তিনি একবার চলে গেলে আর ফিরবে না। তাই আমিও আর উনার কাছে যাবো না।”

আদনান অবাক হয়ে বলল,
– “সত্যি কি আঙ্কেল মানে বাবা চলে যাবে? আপনি সিউর?”

– “আমি একেবারে সিউর। বাবা তো টিকিটও কেটে ফেলেছে। আগামী মাসের পহেলা জানুয়ারী ফ্লাইট। আমি বাবা ঘরে লুকিয়ে গিয়ে দেখে ফেলেছি।”

মহুয়া অভিমানী স্বরে কথাগুলো বলল। আদনান চিন্তায় পড়ে গেলো। মোর্শচেদ চৌধুরী চলে গেলে মহুয়া আবারো একা হয়ে যাবে। ঠিক একা নয়, কারন তার সাথে তো এখন তার নতুন পরিবার সবসময় থাকবে কিন্তু তার নিজের পরিবারের কথা কোন না কোনভাবে মনে পড়বেই।
আদনান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
– “আচ্ছা আমি দেখছি ব্যাপারটা। আপনি নিচে যান, আম্মুর সাথে কথা বলুন, ভালো লাগবে। ”

মহুয়া সায় জানিয়ে নিচে চলে গেলো। মহুয়া চলে যেতেই আদনানের ফোনে কল আসলো। আদনান রিসিভ করে বলল,
– “আমার ফ্লাইটটা ক্যানসেল করো। আমি পরে আসবো, তারিখ ঠিক জানি না।”

_________

মহুয়া রুম থেকে বের হয়ে চোখে-মুখে দুইবার পানি ঝাপটা দিয়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে কেঁদে দিলো। পরিবার থেকেও পরিবারহীনের মতো বেঁচে থাকার মতো কষ্ট কি আর আছে!
জোরে একটা শ্বাস নিয়ে চোখটা আরেকবার ধুয়ে নিয়ে মুখে একটা হাসি টেনে ড্রয়িংরুমের দিকে এগোলো।

শিল্পী খাতুন ড্রয়িংরুমে এসে পুরো টেবিল ভর্তি এতো খাবার দেখে চমকে গেলেন। সার্ভেন্টদের ডেকে ডাকতেই তারা সরাসরি বলে দিল তারা কিছু করেনি সব মহুয়া করেছে।
তখনই মহুয়া সেখানে এসে উপস্হিত হলো। সার্ভেন্টদের ইশারায় কোন কিছু বলতে নিষেধ করলেই শিল্পী খাতুন তার দিকে ফিরে তাকান। মহুয়া চুপচাপ মাথা নিচু করে ফেলে। শিল্পী খাতুন হেসে তার দিকে ফিরে তাকান। মহুয়াকে কাছে ডাকলে সে গুটিগুটি পায়ে তার দিকে এগিয়ে যায়। চোখ-মুখ বাচ্চাদের কুঁচকে রেখেছে দেখে শিল্পী খাতুন হেসে ফেলেন। তার হাসির শব্দ শুনে মহুয়া আস্তে আস্তে চোখ খুললো।
শিল্পী খাতুন হেসে বলেন,
– “আমাকে না বলে এতকিছু করা হয়ে গেছে! বাবাহ্, তা আম্মা কাজ করতে গিয়ে আপনি কোন ব্যাথা পান নি তো?”

মহুয়া মাথা নেড়ে বলল,
– “না আন্টি আমি কোন ব্যাথা পাই নি। একদম ফিট এন্ড ফাইন আছি।”

শিল্পী খাতুন মহুয়া মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
– “ব্যাথা পান নি তা বুঝলাম। কিন্তু আপনি আমাকে আন্টি ডাকছেন কি জন্যে? আমাকে কি আম্মু হিসেবে পছন্দ হয় নি?”

মহুয়া ব্যস্ত হয়ে বলল,
– “আরে না না আন্টি! উপস সরি আম্মু, আসলে কোনদিন কাউকে আম্মু ডাকিনি তো তাই। ”

মহুয়া মুখ ছোট করে মাথা নিচু করে রইলো। শিল্পী খাতুন জোরে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মুখে হাসি টেনে বলল,
– “আগে বলো নি তো কি হয়েছে? এখন থেকে আমিই তোর আম্মু। আমাকে আম্মু ছাড়া অন্য কিছু ডাকলে আমি কিন্তু খুব রাগ করবো হুমম।”

মহুয়া হাসি মুখে মাথা নাড়লো। শিল্পী খাতুন তাকে বাহিরে নিয়ে গিয়ে নিজের করা বাগান দেখাতে লাগলেন। আদনান হাত-মুখ ধুয়ে বের হয়ে বারান্দায় যেতেই দেখলো মহুয়া আর শিল্পী খাতুন কোন একটা বিষয় নিয়ে হাসাহাসি করছে। আদনান বিস্মিত হয়ে তাদের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে দেখলো তার জীবনের প্রথম ও দ্বিতীয় নারীটিকে।

_________

অন্যান্য দিনের চেয়ে আজকে মহুয়াদের বাসার পরিবেশটা বেশ ভিন্ন। কিছু আত্নীয় ছিল তারাও সকাল সকাল উঠে চলে গেছে। বাড়িরা এখন একদম ফাঁকা। মহুয়া নেই বলে অনেক সার্ভেন্ট বিদায় করে দিয়েছেন মহুয়ার বাবা মোর্শেদ চৌধুরী। হাতে গোনা দুই-একজন আছে। তারাও নিজেদের মতো ব্যস্ত।

মহুয়ার ঘরটায় বসে আছে মোর্শেদ চৌধুরী। তার একমাত্র মেয়ে এবং একমাত্র আপনজন আজ তাকে ছেড়ে চলে গেছে। মেয়েকে ভালোবাসলেও তার প্রকাশ বিন্দুমাত্র করেন নি। স্ত্রী শোকে এতটাই পাথর হয়ে গেছিলেন নিজের মন-মর্জির ছাড়া কারো কথা শুনতেন না। সবসময় নিজের মতো অফিস সামলিয়েছেন, বাহিরে কাজ করেছেন। মহুয়ার জন্য অনেকগুলো সার্ভেন্ট আর টাকা খরচ করে তিনি মনে করেছেন তার দায়িত্ব শেষ। কিন্তু আজ তার কেমন যেন অনুতপ্ততা কাজ করছে যার কোন মূল্য নেই। মহুয়ার পড়ার টেবিলের দিকে চোখ যেতেই দেখলেন কালো রঙের কাগজে মোড়া একটি মোটা ডায়েরী।
কৌতুহলী হয়ে ডায়েরীটা তুলে নিতেই ভিতর থেকে একটা অতি পুরোনো কাগজ বের হয়ে এলো। কাগজে গুটি গুটি অক্ষরে লিখা –

আচ্ছা বাবা কি আমাকে ভালোবাসে না। সবার বাবা তাদের কত ভালোবাসে,স্কুলে নিয়ে যায়। আর আমার বাবা তো আমার সাথে কথাই বলে না ঠিকমতো। বাবা শুধু আমাকে খেলনা কিনে দেয়। আমি তো এতো খেলনা চাই না, আমি চাই প্রতিদিন বিকালে বাবার সাথে পার্কে ঘুরতে যেতে। আমি চাই বাবা আমাকে প্রতিদিন একবার খায়িয়ে দেবে, আমাকে স্কুলে নিয়ে যাবে। তাহলে আমিও আমার সব ফ্রেন্ডদের দেখিয়ে দিতে পারবো আমার বাবাও আমাকে অনেক আদর করে। কিন্তু বাবা তো এসবের কিছুই করে না। আমার অনেক কান্না পায় বন্ধুদের মুখে বাবাকে নিয়ে এসব কথা শুনতে, খুব খারাপ লাগে। আমি কতদিন রাতে ঘুমানোর আগে কান্না করি, কিন্তু বাবা তো কিছুই জানে। একদিন আমি অনেক ভালো রেজাল্ট করে একটা চাকরি করবো। তারপর অনেক টাকা হবে, তখন নিশ্চয়ই বাবা আমায় ভালোবাসবে!”

– মহুয়া চৌধুরী,
২০-০২-২০১০

সাত বছর বয়সী মহুয়ার এমন লিখা আর আবদার দেখে পাথর বনে গেলেন মোর্শেদ চৌধুরী। তার অবহেলার ফল মেয়েটার শৈশব নষ্টের কারন। তিনি যদি মহুয়ার দিকে আরেকটু নজর দিতেন তাহলে এমন কিছুই হতো। টাকা দিয়ে নাকি মহুয়া ভালেবাসা কিনবে, তাও আবার নিজপর বাবার ভালোবাসা!

চলবে,
ভুলক্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পে কোন অসঙ্গতিপূর্ণ বিষয় পেলে সঠিক করে দেয়ার অনুরোধ রইলো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here