ভালোবেসে থাকবো পাশে পর্ব -১৭+১৮

#ভালোবেসে_থাকবো_পাশে💝
#পর্বঃ_১৭
#লেখিকা_ইসরাত_জাহান_ইমা

আরিয়া তূর্যের উদ্দেশ্যে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,, ভা..ভালোবাসি! আমিও আপনাকে ভালোবাসি।

আরিয়ার কথা শুনে তূর্য একটা বিশ্ব জয়ের হাসি দিল। হাসি মুখে আরিয়ার দিকে ফিরে তাকালো। তার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে তার আরুপাখি তাকে মেনে নিয়েছে। সে তো ভেবেছিলো আরিয়া কখনো তাকে মেনেই নিবে না।

–কী দেখছেন এমন করে?(আরিয়া)

–আমার আরুপাখিকে!(তূর্য)
–এত দেখার কী আছে?(আরিয়া)

–আরুপাখি আমার সত্যিই বিশ্বাস হচ্ছে না তুমি আমাকে ভালোবাসো। তুমি সত্যি সত্যি আমাকে ভালোবাসো তো!(তূর্য)

–“হুম” বলেই আরিয়া মাথা নিচু করে ফেলল।

আরু তুই কবে থেকে ভাইয়ার প্রেমে পড়লি?(আহিল)

আহিলের কথা শুনে চমকে উঠলো। সে বিস্ফোরিত চোখে আহিলের দিকে তাকলো! আরিয়া এতক্ষণ ভূলেই গেছিলো তাদের পাশে যে আরো কেউ দাঁড়িয়ে আছে।

–এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?(আহিল)
–এ..এমনি!(আরিয়া)

–তোতালাচ্ছিস কেন? আর বললি না তো ভাইয়াকে কবে থেকে ভালোবাসিস?(আহিল)

–তোকে বলবো কেন?(আরিয়া)

–যা যা বলতে হবে না। তোরা রোমান্স কর আমরা যাই।(আহিল)

–এই না না দাঁড়া আমিও আসি?

তখনি তূর্য আরিয়ার হাত ধরে বলল,, আরুপাখি আর একটু থাক প্লিজ! আর বল যে কবে থেকে আমাকে ভালোবাসো?

–আমি কয়েকদিন আগে আপনার মানে অচেনা লোকটির প্রেমে পড়েছিলাম। তার দেওয়া প্রতিটি চিঠি আর মেসেজ পড়ার সময় মনে হতো এত টা ভালো কেউ কাউকে কীভাবে বাসতে পারে। যখন চিঠি গুলা পড়তাম তখন মনে হতো এই অচেনা লোকটাকে আমার খুব দরকার। আমার অনুভূতিরা আমাকে জানান দিচ্ছিলো এই লোকটাই কখনো আমাকে ছেড়ে যাবে না। আবার মনে হতো রাতুলের মতো সেও যদি আমাকে ঠকায়! দ্বিতীয় কাউকে ভালোবাসাটা কী ভুল হবে সেটা নিয়ে সবসময় কনফিউজড থাকতাম। ভাবতাম যখন অচেনা লোকটা আমার সামনে আসবে তখন কী করে তাকে ফিরিয়ে দিবো৷ তবে আমি আপনাকে ভালোবাসে ফেলেছিলাম।(আরিয়া)

আরিয়ার কথা শুনে তূর্য মুচকি হাসলো। আরিয়াকে টেনে নিয়ে সোফায় বসালো পাশে সে নিজেও বসলো। আরুপাখি শুনে,,
একটা কথা আছে__তুমি আবারো প্রেমে পড়বে, ভুলে যাবে সকল ঠকে যাওয়ার যন্ত্রণা! যদি মানুষটা সঠিক হয় তবে ভালোবাসাটা মন্দ নয়। ভালোবাসা জিনিসটা খুব মূল্যবান। খুবই মূল্যবান। এতোটাই যে যাকে তাকে কখনই এই ভালোবাসার স্থানটা দেয়া উচিৎ না, যেই মানুষটা ওই ভালাবাসার যোগ্য না তাকে তো কখনই না, ভূলেও না। হোক সেটা বন্ধুত্বে বা অন্য যেকোনো সম্পর্কে। যখন কোনো মানুষ নিজ থেকে বলে সে তোমার যোগ্য নয়, তার মানে আসলেই সে তোমার যোগ্য নয়! এইক্ষেত্রে কখনই অর বা বাট মাথায় আনা উচিত না। সে এটা বলতে পারছে কারন তার তোমার প্রতি কোনো চাওয়া পাওয়া নেই,তোমাকে হারানোর কোনো ভয় নেই! যার পাশে তুমি থাকতে চাও, যাকে এতো ভালোবাসতে চাও, আগলে রাখতে চাও, যার প্রতি এতো মায়া – এতো প্রেম সেই মানুষটার মধ্যে যদি তোমাকে হারানোর কোনো ভয় না থাকে তবে সে তোমাকে পেতে পারেনা! সে কোনোভাবেই তোমার যোগ্য না। অনেকদিন তোমার পাশে থাকার পর এরা হুট করেই তোমাকে বলে ফেলতে পারে “তোমাকে কখনই চাইনি আমি, বলেছিলাম চাই? ভালোবাসি? ” এইটুকুও আটকাবে না! তারা তোমাকে কষ্ট দেয়ার কোনো সুযোগ ছাড়বেনা। এমন ভাবে আঘাত করবে যেটা হয়তো তাদের কাছ থেকে তুমি কখনো কল্পনাও করতে পারোনি! কিন্তু আমরা ভুলটা করে বসি একটা জায়গাতেই! এই ধরণের মানুষগুলোকেই আমরা আমাদের সবকিছু দিয়ে পবিত্র ভাবে ভালোবেসে বসি। হুট করেই বড্ড বেশি ভালোবেসে বসি! আর ঠিক সেই সময়টাতেই এই সোকল্ড অযোগ্য মানুষ গুলো তাদের বহুরুপ এর কিছু অংশ বিশেষ দেখাতে শুরু করে এবং প্রমাণ করে দেয় যে সোকল্ড না, আসলেই এরা অযোগ্য। এই ধরনের মানুষ থেকে যতটুকু নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা যায়, তার থেকে অনেক বেশি দূরত্ব বজায় রাখাটাই শ্রেয়। পবিত্র ভালোবাসা গুলো কখনই এই ধরনের মানু্ষগুলোর কাছে প্রাণ পায়না। কখনও পাবেনা। এটাই সত্য! চিরন্তন সত্য! কাউকে ভালোবাসার অনুভুতি, তাকে যত্নে রাখার অনুভূতি যেমন খুব সুন্দর ঠিক তেমনি ভূল মানুষগুলোর জন্য ভালোবাসার এই সুন্দর,পবিত্র অনুভূতি আসাটা অনেক বড় একটি অভিশাপ। ভালো থাকুক পবিত্র অনুভুতিগুলো, পবিত্র ভালোবাসাগুলো! নিভৃতে, আবেশে ও একান্ত অনুভবে। আজ থেকে মনে করবা রাতুল নামের কেউ কখনোই তোমার ছিল না। অতীত নিয়ে পড়ে থাকলে ভবিষতে কোনো উন্নতি করতে পারবা না। যারা অতীত ভুলে গিয়ে বর্তমান আর ভবিষ্যতকে আঁকড়ে ধরেছে তারাই আজ সফল মানুষ। আমি সব সময় তোমার পাশে আছি। আর সবসময় #ভালোবেসে_থাকবো_পাশে💝

তখনি ছোঁয়া বলে উঠলো,, আরু কোনো চিন্তা করিস না আমরাও তোর পাশে আছি। রাতুল তোর অতীতের কালো একটা অধ্যায়। সেই অধ্যায়টা তারাতাড়ি জীবন থেকে মুছে ফেল।

–হুম! অনেকক্ষণ হয়েছে বাহিরে আসছি এখন বাসায় যেতে হবে।(আরিয়া)

–হুম আরুপাখি যাও। সাবধানে থাকবা, নিজের খেয়াল রাখবা আর একদম কান্না করবা না। যখনি মন খারাপ লাগবে আমাকে ফোন করবা। যেখানে যেতে মন চাইবে আমাকে বলবা। মনে থাকবে?(তূর্য)

–হুম মনে থাকবে!(আরিয়া)

–বাহ্ বাহ্ আরু এখন কী আমরা পর হয়ে গেলাম নাকি?(সায়ান)

–আরে না ভাইয়া তোমরা সবসময় আমার আপনেই থাকবা৷ এই শিশুকে পেয়ে তোমাকে ভুলে যাব নাকি! বলেই আরিয়া জিহ্বায় হালকা কামড় দিয়ে মনে মনে বলল,, এই রে আবার শিশু। এখন নির্ঘাত গালি দিবে।

–আরুপাখি আবার শিশু! আচ্ছা বলো তো আমারে কোন দিক দিয়ে তোমার শিশু মনে হয়?(তূর্য)
–আসলে হয়েছে কী!(আরিয়া)

–না বললে জানবো কেমনে?(তূর্য)

–আরে পুরো টা বলতে তো দিন!(আরিয়া)

— হু বলো!
–আসলে আপনার পুরো নাম টা তো শিশির আহমেদ তূর্য! আর আমি সেই শিশির থেকে শিশু বলি। এই যেমন সবাই আমাকে ভালোবেসে আরু ডাকে।😁(আরিয়া)

–ওহ্ আচ্ছা তার মানে তুমিও আমাকে অনেক আগে থেকেই ভালোবাসো!(তূর্য)

–আরে এটা কখন বললাম?(আরিয়া)

–এই তো মাত্র বললা সবাই তোমাকে ভালোবেসে আরু ডাকে আর তুমি তো আমাকে আরো কয়েকদিন আগে থেকেই শিশু ডাকো।(তূর্য)

–ধ্যাৎ আপনার সাথে কথা বলে পারবো না। বাসায় যাই।(আরিয়া)

–হুম সাবধানে যেও আর পৌঁছে একটা কল দিয়ো।(তূর্য)

–আচ্ছা বাই। ছোঁয়া আর অন্তু তো চল।

_____________________
বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে শুয়ে আছে আরিয়া তখনি তূর্য ফোন দিয়েছে।
–আস্সালামু আলাইকুম!(আরিয়া)

–ওয়ালাইকুম সালাম। কী করো?

–শুয়ে আছি। আপনি কী করেন?

–আমিও শুয়ে আছি। খাইছো?

–জ্বী। আপনি বাসায় গেছেন?

–হ্যাঁ। বাসায় কখন গেছো? আর বাসায় পৌঁছে ফোন কেন দাও নি?

–আসলে আমি ভূলে গেছিলাম। আর হবে না এমন।

–কয়দিন পর তোমার জন্য আরেকটা সারপ্রাইজ আছে আরুপাখি।

–কী সারপ্রাইজ?

–সেটা সময় হলেই জানতে পারবা।

–আচ্ছা!

–রেস্ট নাও এখন। পরে কথা হবে। বাই। টেক কেয়ার।
–হুম বাই।

____________
দু’দিন পর,,

রাতে খাবার খেয়ে শুয়ে আছে আরিয়া তখনি ওর মা আসলো।

আরু ঘুমিয়ে গেছিস?

–না আম্মু! কিছু বলবে?
–হ্যাঁ। শুন মা কাল তোকে দেখতে আসবে আর তোর বাবা আমাকে এটা বলতেই পাঠালো তোর কাছে।

–আম্মু হঠাৎ করে এটা কপন বলছো? আব্বু তো বলছিলো পড়া লেখা শেষ করে নিজের পায়ে দাঁড়াবো। তারপর বিয়ের কথা ভাববে!

–শুন মা জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে উপরওয়ালার হাতে, আমরা আর কী করতে পারি বল। আর দেখতে আসলেই তো বিয়ে হয়ে যাই না!

–ঠিক আছে আম্মু তোমাদের যা খুশি করো আমি আর কিছু বলবো না।

–প্লিজ মা রাগ করিস না!

আরিয়া আর কিছু না বলেই শুয়ে পড়লো। যখন বুঝলো ওর আম্মু চলে গেছে তখনি তূর্যের ফোনে কল দিলো আরিয়া! তূর্য কল বেক করলো!

–আরুপাখি কী করছো?

আরিয়া কিছু না বলে কান্না করছে।

–আরে আরুপাখি কান্না করছো কেন? বলো প্লিজ কী হয়েছে?(তূর্য)

–আম্মু বলছে কাল নাকি আমাকে দেখতে আসবে। যদি পছন্দ হয়ে যায় তখন কী করব?(আরিয়া)

–কী আর করবে! বিয়ে টা করে নিবে।(তূর্য)

–কী….!! কী বলছেন আপনি? মাথা ঠিক আছে আপনার?

–হ্যাঁ আরিয়া আমার মাথা একদম ঠিক আছে!(তূর্য)

তূর্যের মুখে পুরো নাম শুনে আরিয়া অবাক। সে এখনো ঘোরের মধ্যেই আছে। তূর্য কী বলছে সে কিছুই বুঝতে পারছে না।

–আরিয়া “ভালোবাসলেই কি তাকে পেতে হবে? “”না”” কোনো সংবিধানে তো লেখা নাই ভালোবাসলে তাকে পেতেই হবে। ভালোবাসার মানুষ টা কে পেয়ে গেলেই যে ভালোবাসা পাওয়া হয়ে যায় তেমন টা কিন্তু নয়। থাক না কিছু অপূর্ণতায়। ভালোবাসা পেয়ে গেলে সেটায় জং ধরবে না কিসের গ্যারান্টি আছে, ভালোবাসা পেয়ে গেলে তো অবহেলা বাড়ে, ভালোবাসা পেয়ে গেলে ভালোবাসার কদর কয়জন বোঝে। কিন্তু যে ভালোবাসায় অপূর্ণতা থাকে সে ভালোবাসা ১০০% খাটি হয়। যারা বা যাদের ভালোবাসার পূর্ণতা মেলে নি তারাই যানে প্রকৃত, প্রেম কি, ভালোবাসা কি, আবেগ, অনুভূতি কি। অপূর্ণতা না থাকলে এতো জোরালোভাবে ভালোবাসার কদর মানুষ করতো না। তাই থাক না কিছু ভালোবাসা অপূর্ণতায়।

-ভালোবাসলে তাকে পেতেই হবে এমনটা মনে করে ভালোবাসতে যেও না। ভালোবাসাটা তো এমন হওয়াই উচিত যে ভালো বাসার মানুষ টা থাকুক না তার নিজের মতো করে, যার সাথে থাকলে সে সুখি হয়, যার সাথে থাকলে সে হাসিখুশি থাকে, যার কাছে সে তার মানসিক শান্তি পায় থাকুক না সে তার সাথে, তবু ও সে ভালো থাকুক। সমস্যা কোথায় আমি ও যে বাতাস থেকে অক্সিজেন নেই তুমি ও সেই বাতাস থেকেই অক্সিজেন নিয়ে বেঁচে আছো, তাহলে আমরা আলাদা কোথায়। বরং সে দূরে থাকলে তাকে কতোটা ভালোবাসা যায় সেটাই উপভোগ করাই উচিৎ নয় কি। থাকুক না সেথায় বিরহ আর বেদনা, বিরহে ও কিন্তু সুখ মেলে জানো তো।

এমন ও হাজারও উদাহরণ আছে যারা অপূর্ণতা দিয়েই জীবন পরিচালনা করেছে, কাউকে গভীরভাবে ভালোবেসে শুধু অনুভব করে গেছে, অন্য কাউকে কিন্তু সঙ্গী করে নি। তাদের ভালোবাসা পূর্ণতা পায় নি বলে কি তাদের ভালোবাসা টা মিথ্যা হয়ে গেছে? না”” বরং এটা বলা যায় যাদের ভালোবাসায় অপূর্ণতা মেশানো থাকে তারা প্রকৃত পক্ষেই ভালোবাসতে জানে। অপূর্ণতায় ও ভালোবাসা টিকে থাকে যুগ যুগান্তর। রাধা, তো কৃষ্ণের জন্যই পাগলিনী ছিলো, মীরা তো কৃষ্ণ কেই ভালোবাসতো, কিন্তু কৃষ্ণ এদের কারোর ই হয় নি। তাই বলে কি তাদের ভালোবাসায় খাদ ছিলো? না খাদ ছিলো না তারা সত্যিকার অর্থেই ভালোবেসেছিলো।

–মাঝে মাঝে সময়, পরিস্থিতি এমন হয় যে চাইলে ও ভালোবাসার মানুষটাকে আপন করে, নিজের করে পাওয়া যায় না। তাই বলে ভালোবাসায় খামতি নয়, বরং এক বুক ভালোবাসা নিয়ে ও অপূর্ণতা মেনে নিতে হয়। বুক ভরা ভালোবাসা জমে থাকলে ও দূরত্বে চলে যেতে হয়। দূরত্ব বাড়ে, সম্পর্ক ছিন্ন হয়, নতুনত্ব যোগ হয়, পরিবর্তন হয় কিন্তু ভালোবাসাটা ঠিক ই থেকে যায় কোথাও না কোথাও। তাই সব ভালোবাসা পূর্ণতার মাপকাঠিতে মাপা উচিৎ নয়, অপূর্ণতায় ও ভালোবাসা হয়, অপূর্ণতায় ও ভালোবাসা টিকে থাকে।”
আমাদের ভাললবাসাটাও অপূর্ণতায় টিকে থাকুক। বিয়ে টা করে নিয়ো।(তূর্য)

–আমার বিয়ের কথা শুনেই আপনার ভালোবাসা শেষ। বাহ্ বাহ্ এটাই আপনার প্রকৃত ভালোবাসা তাই না। আসলে আমার কপাল টাই খারাপ। আর কী বলেছিলেন যার কাছে যে মানসিক শান্তি পায় থাকুক না সে তার সাথে। যদি বলি আমি মানসিক শান্তি টা আপনার কাছেই পাই তখন কী বলবেন? (আরিয়া)

–আরিয়া দেখো মা-বাবার কথা মতো বিয়ে করলে সুখে-শান্তিতে থাকবে!(তূর্য)

–ওহ্ আচ্ছা তাই না! এটাই আপনার ভালোবাসা! ঠিক আছে প্রবলেম নেই। ভালো থাকুন। বাই!

ফোন কেটে দিয়ে আরিয়া মনে মনে ভাবলো,, আমাদের জীবনে কিছু কিছু মানুষ আসে আলো অন্ধকারের মতো। কেউ জীবনটা সারাজীবন আলোকিত করে রাখে। আবার কেউ কেউ জীবনটা অন্ধকারে ঢেকে দেয়। এমন অন্ধকার ভেদ করে কোনোদিন আলোক রশ্মি দেখা যায়না। অন্ধকার মন আর মুখোশের প্রতিচ্ছবি জীবনটা বিষময় করে তোলে। তূর্য ও আমার জীবনে আলোর মতো আসলো! কিছু দিন জীবনটাকে আলোকিত করে দিয়েছিলো। এখন আবারও অন্ধকারে একা ফেলে চলে গেলো। আব্বু-আম্মুর কাছেও বোঝা হয়ে গেছি হয়তো তাই বিয়ের জন্য পাগল হয়ে গেছে।

কিছুক্ষণ পর আহিলকে ফোন দিলো, কিন্তু আহিল ফোন রিসিভ করছে না। তাহলে আহিলও কী তাই চাই।

কান্না করতে করতে আরিয়া ঘুমিয়ে গেলো।

#চলবে…..!!!

[যারা চাইছিলেন তূর্য আর আরিয়াকে মিলিয়ে দিতে এখন তারা বাঁশ নেন।🐸 আমাকে কেউ কিছু বলিয়েন না। যা করার তূর্য করছে! আমি কিছু করি নাই। ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। হ্যাপি রিডিং ]

নামাজ কায়েম করুন। আল্লাহ হাফেজ।#ভালোবেসে_থাকবো_পাশে💝
#পর্বঃ_১৭
#লেখিকা_ইসরাত_জাহান_ইমা

আরিয়া তূর্যের উদ্দেশ্যে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,, ভা..ভালোবাসি! আমিও আপনাকে ভালোবাসি।

আরিয়ার কথা শুনে তূর্য একটা বিশ্ব জয়ের হাসি দিল। হাসি মুখে আরিয়ার দিকে ফিরে তাকালো। তার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে তার আরুপাখি তাকে মেনে নিয়েছে। সে তো ভেবেছিলো আরিয়া কখনো তাকে মেনেই নিবে না।

–কী দেখছেন এমন করে?(আরিয়া)

–আমার আরুপাখিকে!(তূর্য)
–এত দেখার কী আছে?(আরিয়া)

–আরুপাখি আমার সত্যিই বিশ্বাস হচ্ছে না তুমি আমাকে ভালোবাসো। তুমি সত্যি সত্যি আমাকে ভালোবাসো তো!(তূর্য)

–“হুম” বলেই আরিয়া মাথা নিচু করে ফেলল।

আরু তুই কবে থেকে ভাইয়ার প্রেমে পড়লি?(আহিল)

আহিলের কথা শুনে চমকে উঠলো। সে বিস্ফোরিত চোখে আহিলের দিকে তাকলো! আরিয়া এতক্ষণ ভূলেই গেছিলো তাদের পাশে যে আরো কেউ দাঁড়িয়ে আছে।

–এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?(আহিল)
–এ..এমনি!(আরিয়া)

–তোতালাচ্ছিস কেন? আর বললি না তো ভাইয়াকে কবে থেকে ভালোবাসিস?(আহিল)

–তোকে বলবো কেন?(আরিয়া)

–যা যা বলতে হবে না। তোরা রোমান্স কর আমরা যাই।(আহিল)

–এই না না দাঁড়া আমিও আসি?

তখনি তূর্য আরিয়ার হাত ধরে বলল,, আরুপাখি আর একটু থাক প্লিজ! আর বল যে কবে থেকে আমাকে ভালোবাসো?

–আমি কয়েকদিন আগে আপনার মানে অচেনা লোকটির প্রেমে পড়েছিলাম। তার দেওয়া প্রতিটি চিঠি আর মেসেজ পড়ার সময় মনে হতো এত টা ভালো কেউ কাউকে কীভাবে বাসতে পারে। যখন চিঠি গুলা পড়তাম তখন মনে হতো এই অচেনা লোকটাকে আমার খুব দরকার। আমার অনুভূতিরা আমাকে জানান দিচ্ছিলো এই লোকটাই কখনো আমাকে ছেড়ে যাবে না। আবার মনে হতো রাতুলের মতো সেও যদি আমাকে ঠকায়! দ্বিতীয় কাউকে ভালোবাসাটা কী ভুল হবে সেটা নিয়ে সবসময় কনফিউজড থাকতাম। ভাবতাম যখন অচেনা লোকটা আমার সামনে আসবে তখন কী করে তাকে ফিরিয়ে দিবো৷ তবে আমি আপনাকে ভালোবাসে ফেলেছিলাম।(আরিয়া)

আরিয়ার কথা শুনে তূর্য মুচকি হাসলো। আরিয়াকে টেনে নিয়ে সোফায় বসালো পাশে সে নিজেও বসলো। আরুপাখি শুনে,,
একটা কথা আছে__তুমি আবারো প্রেমে পড়বে, ভুলে যাবে সকল ঠকে যাওয়ার যন্ত্রণা! যদি মানুষটা সঠিক হয় তবে ভালোবাসাটা মন্দ নয়। ভালোবাসা জিনিসটা খুব মূল্যবান। খুবই মূল্যবান। এতোটাই যে যাকে তাকে কখনই এই ভালোবাসার স্থানটা দেয়া উচিৎ না, যেই মানুষটা ওই ভালাবাসার যোগ্য না তাকে তো কখনই না, ভূলেও না। হোক সেটা বন্ধুত্বে বা অন্য যেকোনো সম্পর্কে। যখন কোনো মানুষ নিজ থেকে বলে সে তোমার যোগ্য নয়, তার মানে আসলেই সে তোমার যোগ্য নয়! এইক্ষেত্রে কখনই অর বা বাট মাথায় আনা উচিত না। সে এটা বলতে পারছে কারন তার তোমার প্রতি কোনো চাওয়া পাওয়া নেই,তোমাকে হারানোর কোনো ভয় নেই! যার পাশে তুমি থাকতে চাও, যাকে এতো ভালোবাসতে চাও, আগলে রাখতে চাও, যার প্রতি এতো মায়া – এতো প্রেম সেই মানুষটার মধ্যে যদি তোমাকে হারানোর কোনো ভয় না থাকে তবে সে তোমাকে পেতে পারেনা! সে কোনোভাবেই তোমার যোগ্য না। অনেকদিন তোমার পাশে থাকার পর এরা হুট করেই তোমাকে বলে ফেলতে পারে “তোমাকে কখনই চাইনি আমি, বলেছিলাম চাই? ভালোবাসি? ” এইটুকুও আটকাবে না! তারা তোমাকে কষ্ট দেয়ার কোনো সুযোগ ছাড়বেনা। এমন ভাবে আঘাত করবে যেটা হয়তো তাদের কাছ থেকে তুমি কখনো কল্পনাও করতে পারোনি! কিন্তু আমরা ভুলটা করে বসি একটা জায়গাতেই! এই ধরণের মানুষগুলোকেই আমরা আমাদের সবকিছু দিয়ে পবিত্র ভাবে ভালোবেসে বসি। হুট করেই বড্ড বেশি ভালোবেসে বসি! আর ঠিক সেই সময়টাতেই এই সোকল্ড অযোগ্য মানুষ গুলো তাদের বহুরুপ এর কিছু অংশ বিশেষ দেখাতে শুরু করে এবং প্রমাণ করে দেয় যে সোকল্ড না, আসলেই এরা অযোগ্য। এই ধরনের মানুষ থেকে যতটুকু নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা যায়, তার থেকে অনেক বেশি দূরত্ব বজায় রাখাটাই শ্রেয়। পবিত্র ভালোবাসা গুলো কখনই এই ধরনের মানু্ষগুলোর কাছে প্রাণ পায়না। কখনও পাবেনা। এটাই সত্য! চিরন্তন সত্য! কাউকে ভালোবাসার অনুভুতি, তাকে যত্নে রাখার অনুভূতি যেমন খুব সুন্দর ঠিক তেমনি ভূল মানুষগুলোর জন্য ভালোবাসার এই সুন্দর,পবিত্র অনুভূতি আসাটা অনেক বড় একটি অভিশাপ। ভালো থাকুক পবিত্র অনুভুতিগুলো, পবিত্র ভালোবাসাগুলো! নিভৃতে, আবেশে ও একান্ত অনুভবে। আজ থেকে মনে করবা রাতুল নামের কেউ কখনোই তোমার ছিল না। অতীত নিয়ে পড়ে থাকলে ভবিষতে কোনো উন্নতি করতে পারবা না। যারা অতীত ভুলে গিয়ে বর্তমান আর ভবিষ্যতকে আঁকড়ে ধরেছে তারাই আজ সফল মানুষ। আমি সব সময় তোমার পাশে আছি। আর সবসময় #ভালোবেসে_থাকবো_পাশে💝

তখনি ছোঁয়া বলে উঠলো,, আরু কোনো চিন্তা করিস না আমরাও তোর পাশে আছি। রাতুল তোর অতীতের কালো একটা অধ্যায়। সেই অধ্যায়টা তারাতাড়ি জীবন থেকে মুছে ফেল।

–হুম! অনেকক্ষণ হয়েছে বাহিরে আসছি এখন বাসায় যেতে হবে।(আরিয়া)

–হুম আরুপাখি যাও। সাবধানে থাকবা, নিজের খেয়াল রাখবা আর একদম কান্না করবা না। যখনি মন খারাপ লাগবে আমাকে ফোন করবা। যেখানে যেতে মন চাইবে আমাকে বলবা। মনে থাকবে?(তূর্য)

–হুম মনে থাকবে!(আরিয়া)

–বাহ্ বাহ্ আরু এখন কী আমরা পর হয়ে গেলাম নাকি?(সায়ান)

–আরে না ভাইয়া তোমরা সবসময় আমার আপনেই থাকবা৷ এই শিশুকে পেয়ে তোমাকে ভুলে যাব নাকি! বলেই আরিয়া জিহ্বায় হালকা কামড় দিয়ে মনে মনে বলল,, এই রে আবার শিশু। এখন নির্ঘাত গালি দিবে।

–আরুপাখি আবার শিশু! আচ্ছা বলো তো আমারে কোন দিক দিয়ে তোমার শিশু মনে হয়?(তূর্য)
–আসলে হয়েছে কী!(আরিয়া)

–না বললে জানবো কেমনে?(তূর্য)

–আরে পুরো টা বলতে তো দিন!(আরিয়া)

— হু বলো!
–আসলে আপনার পুরো নাম টা তো শিশির আহমেদ তূর্য! আর আমি সেই শিশির থেকে শিশু বলি। এই যেমন সবাই আমাকে ভালোবেসে আরু ডাকে।😁(আরিয়া)

–ওহ্ আচ্ছা তার মানে তুমিও আমাকে অনেক আগে থেকেই ভালোবাসো!(তূর্য)

–আরে এটা কখন বললাম?(আরিয়া)

–এই তো মাত্র বললা সবাই তোমাকে ভালোবেসে আরু ডাকে আর তুমি তো আমাকে আরো কয়েকদিন আগে থেকেই শিশু ডাকো।(তূর্য)

–ধ্যাৎ আপনার সাথে কথা বলে পারবো না। বাসায় যাই।(আরিয়া)

–হুম সাবধানে যেও আর পৌঁছে একটা কল দিয়ো।(তূর্য)

–আচ্ছা বাই। ছোঁয়া আর অন্তু তো চল।

_____________________
বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে শুয়ে আছে আরিয়া তখনি তূর্য ফোন দিয়েছে।
–আস্সালামু আলাইকুম!(আরিয়া)

–ওয়ালাইকুম সালাম। কী করো?

–শুয়ে আছি। আপনি কী করেন?

–আমিও শুয়ে আছি। খাইছো?

–জ্বী। আপনি বাসায় গেছেন?

–হ্যাঁ। বাসায় কখন গেছো? আর বাসায় পৌঁছে ফোন কেন দাও নি?

–আসলে আমি ভূলে গেছিলাম। আর হবে না এমন।

–কয়দিন পর তোমার জন্য আরেকটা সারপ্রাইজ আছে আরুপাখি।

–কী সারপ্রাইজ?

–সেটা সময় হলেই জানতে পারবা।

–আচ্ছা!

–রেস্ট নাও এখন। পরে কথা হবে। বাই। টেক কেয়ার।
–হুম বাই।

____________
দু’দিন পর,,

রাতে খাবার খেয়ে শুয়ে আছে আরিয়া তখনি ওর মা আসলো।

আরু ঘুমিয়ে গেছিস?

–না আম্মু! কিছু বলবে?
–হ্যাঁ। শুন মা কাল তোকে দেখতে আসবে আর তোর বাবা আমাকে এটা বলতেই পাঠালো তোর কাছে।

–আম্মু হঠাৎ করে এটা কপন বলছো? আব্বু তো বলছিলো পড়া লেখা শেষ করে নিজের পায়ে দাঁড়াবো। তারপর বিয়ের কথা ভাববে!

–শুন মা জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে উপরওয়ালার হাতে, আমরা আর কী করতে পারি বল। আর দেখতে আসলেই তো বিয়ে হয়ে যাই না!

–ঠিক আছে আম্মু তোমাদের যা খুশি করো আমি আর কিছু বলবো না।

–প্লিজ মা রাগ করিস না!

আরিয়া আর কিছু না বলেই শুয়ে পড়লো। যখন বুঝলো ওর আম্মু চলে গেছে তখনি তূর্যের ফোনে কল দিলো আরিয়া! তূর্য কল বেক করলো!

–আরুপাখি কী করছো?

আরিয়া কিছু না বলে কান্না করছে।

–আরে আরুপাখি কান্না করছো কেন? বলো প্লিজ কী হয়েছে?(তূর্য)

–আম্মু বলছে কাল নাকি আমাকে দেখতে আসবে। যদি পছন্দ হয়ে যায় তখন কী করব?(আরিয়া)

–কী আর করবে! বিয়ে টা করে নিবে।(তূর্য)

–কী….!! কী বলছেন আপনি? মাথা ঠিক আছে আপনার?

–হ্যাঁ আরিয়া আমার মাথা একদম ঠিক আছে!(তূর্য)

তূর্যের মুখে পুরো নাম শুনে আরিয়া অবাক। সে এখনো ঘোরের মধ্যেই আছে। তূর্য কী বলছে সে কিছুই বুঝতে পারছে না।

–আরিয়া “ভালোবাসলেই কি তাকে পেতে হবে? “”না”” কোনো সংবিধানে তো লেখা নাই ভালোবাসলে তাকে পেতেই হবে। ভালোবাসার মানুষ টা কে পেয়ে গেলেই যে ভালোবাসা পাওয়া হয়ে যায় তেমন টা কিন্তু নয়। থাক না কিছু অপূর্ণতায়। ভালোবাসা পেয়ে গেলে সেটায় জং ধরবে না কিসের গ্যারান্টি আছে, ভালোবাসা পেয়ে গেলে তো অবহেলা বাড়ে, ভালোবাসা পেয়ে গেলে ভালোবাসার কদর কয়জন বোঝে। কিন্তু যে ভালোবাসায় অপূর্ণতা থাকে সে ভালোবাসা ১০০% খাটি হয়। যারা বা যাদের ভালোবাসার পূর্ণতা মেলে নি তারাই যানে প্রকৃত, প্রেম কি, ভালোবাসা কি, আবেগ, অনুভূতি কি। অপূর্ণতা না থাকলে এতো জোরালোভাবে ভালোবাসার কদর মানুষ করতো না। তাই থাক না কিছু ভালোবাসা অপূর্ণতায়।

-ভালোবাসলে তাকে পেতেই হবে এমনটা মনে করে ভালোবাসতে যেও না। ভালোবাসাটা তো এমন হওয়াই উচিত যে ভালো বাসার মানুষ টা থাকুক না তার নিজের মতো করে, যার সাথে থাকলে সে সুখি হয়, যার সাথে থাকলে সে হাসিখুশি থাকে, যার কাছে সে তার মানসিক শান্তি পায় থাকুক না সে তার সাথে, তবু ও সে ভালো থাকুক। সমস্যা কোথায় আমি ও যে বাতাস থেকে অক্সিজেন নেই তুমি ও সেই বাতাস থেকেই অক্সিজেন নিয়ে বেঁচে আছো, তাহলে আমরা আলাদা কোথায়। বরং সে দূরে থাকলে তাকে কতোটা ভালোবাসা যায় সেটাই উপভোগ করাই উচিৎ নয় কি। থাকুক না সেথায় বিরহ আর বেদনা, বিরহে ও কিন্তু সুখ মেলে জানো তো।

এমন ও হাজারও উদাহরণ আছে যারা অপূর্ণতা দিয়েই জীবন পরিচালনা করেছে, কাউকে গভীরভাবে ভালোবেসে শুধু অনুভব করে গেছে, অন্য কাউকে কিন্তু সঙ্গী করে নি। তাদের ভালোবাসা পূর্ণতা পায় নি বলে কি তাদের ভালোবাসা টা মিথ্যা হয়ে গেছে? না”” বরং এটা বলা যায় যাদের ভালোবাসায় অপূর্ণতা মেশানো থাকে তারা প্রকৃত পক্ষেই ভালোবাসতে জানে। অপূর্ণতায় ও ভালোবাসা টিকে থাকে যুগ যুগান্তর। রাধা, তো কৃষ্ণের জন্যই পাগলিনী ছিলো, মীরা তো কৃষ্ণ কেই ভালোবাসতো, কিন্তু কৃষ্ণ এদের কারোর ই হয় নি। তাই বলে কি তাদের ভালোবাসায় খাদ ছিলো? না খাদ ছিলো না তারা সত্যিকার অর্থেই ভালোবেসেছিলো।

–মাঝে মাঝে সময়, পরিস্থিতি এমন হয় যে চাইলে ও ভালোবাসার মানুষটাকে আপন করে, নিজের করে পাওয়া যায় না। তাই বলে ভালোবাসায় খামতি নয়, বরং এক বুক ভালোবাসা নিয়ে ও অপূর্ণতা মেনে নিতে হয়। বুক ভরা ভালোবাসা জমে থাকলে ও দূরত্বে চলে যেতে হয়। দূরত্ব বাড়ে, সম্পর্ক ছিন্ন হয়, নতুনত্ব যোগ হয়, পরিবর্তন হয় কিন্তু ভালোবাসাটা ঠিক ই থেকে যায় কোথাও না কোথাও। তাই সব ভালোবাসা পূর্ণতার মাপকাঠিতে মাপা উচিৎ নয়, অপূর্ণতায় ও ভালোবাসা হয়, অপূর্ণতায় ও ভালোবাসা টিকে থাকে।”
আমাদের ভাললবাসাটাও অপূর্ণতায় টিকে থাকুক। বিয়ে টা করে নিয়ো।(তূর্য)

–আমার বিয়ের কথা শুনেই আপনার ভালোবাসা শেষ। বাহ্ বাহ্ এটাই আপনার প্রকৃত ভালোবাসা তাই না। আসলে আমার কপাল টাই খারাপ। আর কী বলেছিলেন যার কাছে যে মানসিক শান্তি পায় থাকুক না সে তার সাথে। যদি বলি আমি মানসিক শান্তি টা আপনার কাছেই পাই তখন কী বলবেন? (আরিয়া)

–আরিয়া দেখো মা-বাবার কথা মতো বিয়ে করলে সুখে-শান্তিতে থাকবে!(তূর্য)

–ওহ্ আচ্ছা তাই না! এটাই আপনার ভালোবাসা! ঠিক আছে প্রবলেম নেই। ভালো থাকুন। বাই!

ফোন কেটে দিয়ে আরিয়া মনে মনে ভাবলো,, আমাদের জীবনে কিছু কিছু মানুষ আসে আলো অন্ধকারের মতো। কেউ জীবনটা সারাজীবন আলোকিত করে রাখে। আবার কেউ কেউ জীবনটা অন্ধকারে ঢেকে দেয়। এমন অন্ধকার ভেদ করে কোনোদিন আলোক রশ্মি দেখা যায়না। অন্ধকার মন আর মুখোশের প্রতিচ্ছবি জীবনটা বিষময় করে তোলে। তূর্য ও আমার জীবনে আলোর মতো আসলো! কিছু দিন জীবনটাকে আলোকিত করে দিয়েছিলো। এখন আবারও অন্ধকারে একা ফেলে চলে গেলো। আব্বু-আম্মুর কাছেও বোঝা হয়ে গেছি হয়তো তাই বিয়ের জন্য পাগল হয়ে গেছে।

কিছুক্ষণ পর আহিলকে ফোন দিলো, কিন্তু আহিল ফোন রিসিভ করছে না। তাহলে আহিলও কী তাই চাই।

কান্না করতে করতে আরিয়া ঘুমিয়ে গেলো।
#ভালোবেসে_থাকবো_পাশে💝
#পর্বঃ_১৮
#লেখিকা_ইসরাত_জাহান_ইমা

এই আরিয়া উঠ এবার আর কত ঘুমাবি?

আরিয়া উঠে বসে বলল,, কী হইছে এভাবে চিল্লাচ্ছো কেন? একটু শান্তিতে ঘুমাতে দাও?

–এভাবে কথা বলছিস কেন? আর তোর চোখ-মুখ এভাবে ফুলে আছে কেন? রাতে ঘুমাস নি নাকি সারারাত কান্না করেছিস?

–এমনি ফুলে আছে আম্মু।

–যা ফ্রেশ হয়ে নিচে আয় নাস্তা করবি।
বলেই উনি চলে গেলেন।

আরিয়া ফোন টা হাতে নিয়ে দেখলো তূর্য কোন কল বা মেসেজ দিছে কী না! কিন্তু ফলাফল শূন্য তূর্য একটাও কল বা মেসেজ দেই নি।

— প্রতি দিন ঘুম থেকে উঠে আমাদের একটা রুটিন থাকে সেটা হচ্ছে প্রিয় মানুষ গুলোর মেসেজ বা ফোন কল চেক করা। আমরা জানি যে সে মানুষ গুলো ভুল করেও মেসেজ বা কল করবে না তাও আমার বেহায়ার মত চেক করি যদি ভুল ক্রমে মেসেজ আসে তাই যত অপেক্ষা। এগুলো সব মরিচীকার পিছে ছুটে চলা, একটা অদৃশ্য মায়ার আমাদের আটকে রাখছে। আমাদের ফোন এ যখন কল বা মেসেজ এর নোটিফিকেশন আসে তখন খুব অধীর আগ্রহে বুকটা কিছুটা সময়ের জন্য কেঁপে উঠে। আর এটা হচ্ছে সেই মানুষটির জন্য সারাজীবনের অপেক্ষার বহিঃপ্রকাশ। আমরা জানি সে মানুষ গুলো সব কিছু ব্লক করে সারা জীবন এর মত যোগাযোগ বন্ধ করে রেখেছে তাও অচেনা কোন নাম্বার থেকে কল আসলে মনে হয় ঐ মানুষটা কল করেছে। আর এটা হচ্ছে তাকে আর একবার নিজের করে ফিরে পাওয়ার আকুতি। আমরা যখন অন্য আইডি থেকে তাদের লুকিয়ে লুকিয়ে দেখি তখন আমাদের বুকফাটা নিঃশ্বাস গুলো যেন বের হতে চায় না। ঐ মানুষ গুলো জন্য যখন আমারা রাতের আঁধারে লুকিয়ে লুকিয়ে চোখের জলে নিঃশেষ হয়ে যাই তখন তারা গভীর ঘুমে তলিয়ে যায়। আর এটা হচ্ছে আমাদের গভীর ভালোবাসার নিশিথ পুরস্কার। ভালো থাকুক যারা নিঃস্বার্থ ভাবে আজ‌ও ভালোবেসে যাচ্ছে, ভালো থাকুক পৃথিবীর অভাগা মানুষ গুলো। আরিয়ার ভাবনার মাঝেই কল আসে। ভাবলো হয়তো তূর্য কল করেছে তাই তাড়াতাড়ি করে রিসিভ করতে গেল৷ ফোনের স্কিনে তাকাতেই দেখলো না তূর্য কল দেই নি ছোঁয়ার কল!

হ্যাঁ ছোঁয়া বল।(আরিয়া)

–আরু আন্টি সকালে ফোন দিয়ে বললো তোরে নাকি আজ দেখতে আসবে। আর যদি পছন্দ করে ফেলে তো আজকে আংটি পড়িয়ে রেখে যাবে?(ছোঁয়া)

–কী বলছিস এসব? আম্মু তো বললো শুধু দেখতে আসবে।(আরিয়া)

–হুম সেটা তো রাত অবধি জানতো।(ছোঁয়া)

–মানে?(আরিয়া)

–তারা নাকি আঙ্কেলকে সকালে ফোন দিয়ে বলছে তাদের যদি মেয়ে পছন্দ হয় তাহলে আজকেই আংটি পড়াবে!(আরিয়া)

–এবার একটু বেশিই বারাবাড়ি করছে আব্বু! দাঁড়া আমি ওদের সাথে কথা বলে আসছি। বলেই আরিয়া ফোন কাটতে নিবে তখনি ছোঁয়া বলল,, আরু শোন!

–হুম বল।

–তুই তূর্য ভাইয়াকে বেপারটা বল। আমার বিশ্বাস উনিই পারবে সব সামলাতে!(ছোঁয়া)

–হুম আমি তো তাকে রাতেই বলেছিলাম।(আরিয়া)

–তাহলে এত টেনশন করছিস কেন? ভাইয়া ঠিক সামলে নিবে। সো নো টেনশন বেবী! প্যারা নাই জাস্ট চিল!(ছোঁয়া)

— ভুল ধারণা তোর। উনি আমাকে রাতে বলেছে আব্বু, আম্মু যাকে বিয়ে করতে বলেছে তাকেই যেন বিয়ে করি!(আরিয়া)

–মানে টা কী? উনি তো তোকে পাঁচ বছর ধরে ভালোবাসে! এত অপেক্ষার পর না চাইতেই তোকে পেলো! তাহলে আজ সেই ভালোবাসাকে এত সহজে কীভাবে হারিয়ে যেতে দিচ্ছে!(ছোঁয়া)

–জানি না আমি কিছু। ফোনটাও অফ করে রাখছে!(আরিয়া)

–আহিলকে ফোন দে।

–রিসিভ করছে না। আমি হয়তো তূর্যের মোহ ছিলাম। ও হয়তো কখনো আমাকে ভালোইবাসেনি। যদি ভালোবাসতো তাহলে আজ আমার পাশে থাকতো। জানিস দুর থেকে দাঁড়িয়ে চাঁদটাকে খুব কাছের মনে হয়, কিন্তু কাছে গেলে বুঝা যায় চাঁদটা কত দুরে। যতই চাঁদের কাছে যেতে চাইবি ততই চাঁদটা তোর কাছ থেকে দুরে যেতে থাকবে৷ তেমনি, আমাদের আশেপাশে কিছু কিছু মানুষের অবস্থান দেখলে মনে হয় কত কাছে সে, কিন্তু যখন তুই সেই মানুষের কাছে যেতে চাইবি তখনই বুঝতে পারবি সেই মানুষটা তোর কাছ থেকে কতটা কাছে! তাই, কিছু কিছু মানুষ আছে যাদেরকে দুর থেকে দেখা বা অনুভব করাই ভালো, তাদের কাছে যেতে নেই তাহলে দেখবি সেই মানুষগুলোও তোর কাছ থেকে দুরে চলে যাবে। আমিও তূর্যকে ভালোবেসেছিলাম! ওর ভালোবাসা দেখে ভালোবাসতে বাধ্য হয়ে ছিলাম৷ আর এখন সে নিজেই আমার থেকে দূরে সরে গেছে।(আরিয়া)

— প্লিজ আরু কান্না করিস নাহ্!(ছোঁয়া)

–এখন আর আমার চোখ দিয়ে জল বের হয় না, হ্যা বিশ্বাস কর এখন আর কেউ আমাকে আঘাত করলে, হাজারটা নিন্দা, কটু কথা বললে ও আমার কষ্ট হয় না। বেরোয় না আমার চোখ দিয়ে জল। প্রতারকদের দেয়া আঘাতের কাছে পৃথিবীর সকল আঘাত ই তুচ্ছ, যেখানে হাসি মুখে সুখ খুজতে গিয়েছিলাম, সেখানে সুখ টা কেড়ে নিয়ে সবোচ্চ আঘাত টা করেছে, সেখানে অন্য কোনো আঘাতে আমার কষ্ট কি করে হবে বল? কি করে চোখে জল বেরোবে, জল তো ওর দেয়া আঘাত শুষে নিয়েছে। কতোই না ভালোবেসে ছিলাম যখন ওর অস্তিত্ব আমি উপলব্ধি করতে পারতাম। এখন ও ওকে উপলব্ধি করি হয়তো ভবিষ্যতেও করবো তবে আগের মতো আর সন্মান টা করতে পারব না। কি করে করবো বল প্রতারকদের কি সন্মান করা যায়।(আরিয়া)

এই আরু এখনও বসে আছিস কেন? আর কার সাথে কথা বলছিস?

— আম্মু ছোঁয়ার সাথে কথা বলছি।

আচ্ছা আমাকে ফোন টা দে আমি কথা বলছি। খাবি কখন তুই! অনেকটা বেলা হয়ে গেলো তো। আর তুই গিয়ে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আয়।
–এই নাও ফোন কথা বলতে থাকো। আমি যাই।

আরিয়া চলে যেতেই ওর আম্মু ফোন নিলো!
–হ্যালো ছোঁয়া! ও কিছু বুঝতে পারে নি তো।

–না আন্টি কিছুই বুঝে নি। তবে আন্টি, আরু আপনাদের ওপর আর ওনার উপর খুব অভিমান করছে।(ছোঁয়া)

–অভিমান করারই কথা। যাই হোক তুমি আর অন্তু তাড়াতাড়ি করে চলে এসো কিন্তু। রাখছি।

— আচ্ছা আন্টি।

আরিয়া ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে দেখলো ওর মা চলে গেছে। আরিয়া আবার শুয়ে পড়লো! কিছু ভালো লাগছে না তার। কিছুক্ষণ পর আরিয়ার আম্মু রুমে এসে দেখে আরিয়া কান্না করছে।

–কি হয়ছে আরু কান্না করছিস কেন?

— আম্মু আমি কী তোমাদের কাছে বোঝা হয়ে গেছি? এত তাড়াতাড়ি কেন বিয়ে দিতে চাইছো বলো!(আরিয়া)

— আরু মা তোকে তো কালকেই বলেছি জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে সব ওপর ওয়ালার হাতে। উনি ভাগ্যে যা লিখে রাখছেন তাই হবে।

— আম্মু তোমার কথা টা মানলাম। কিন্তু ভাগ্য তো কখনো আপনা-আপনি ধরা দেয় না। “ভাগ্যে থাকলো পাবো” এই আশায় বসে থাকলে তো জীবনে কখনোই কোন উন্নতি হবে না। আসলে আম্মু সৌভাগ্য নিয়ে কেউ পৃথিবীতে আসে না। কঠিন, কঠোর পরিশ্রম করেই বিরূপ ভাগ্যকে জয় করতে হয়। লক্ষ্য স্থির করে, সঠিক পদ্ধতিতে পরিশ্রম করলে সৌভাগ্য আপনা-আপনি ধরা দেয়। পৃথিবীতে এ পর্যন্ত যারা সফল হয়েছেন, তাদের সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছে পরিশ্রমের জাদু।(আরিয়া)

— আমি তোর কথা বুঝতে পারছি কিন্তু মা এখন তো না করতে পারবো না। আজ দেখতে আসবে। বিয়ে তো হবে না।

— কিন্তু আম্মু…….

— আর একটা কথাও শুনতে চাই না। যাও খাবার খেয়ে রুমে আসো৷ ছোঁয়া আর অন্তু আসবে ওরাই তোমাকে রেডি করবে।

আরিয়া তার মায়ের কঠোর কন্ঠে বলা কথা শুনে সে চুপসে গেলো। আর কোন উত্তর দিতে পারলো।

–তাড়াতাড়ি আসো।

— হুম আম্মু যাও আসছি।(আরিয়া)

অল্প খেয়ে আরিয়া রুমে চলে আসলো। রুমে আসতেই ফোন বেজে উঠলো। স্কিনে তাকিয়ে দেখে তূর্যের কল। মুহূর্তেই বুকের ভেতর ধুকপুকানি শুরু হয়ে গেলো। নিজের মন কে শক্ত করে ফোন রিসিভ করলো।

–হ্যালো আরুপাখি শুনতে পাচ্ছো?(তূর্য)

আরিয়া কিছু না বলে হাসতে লাগলো!

— কী হলো আরুপাখি এভাবে হাসছো কেন? কিছুটা বিস্ময় ভরা স্বরে বলল!

— তো আর কী করব! কাল রাতেই বিয়ের কথা শুনেই আরুপাখি রেখে আরিয়া বললেন! আবার এখন আরুপাখি! হাহাহা হাউ ফানি মিস্টার তূর্য!(আরিয়া)

— তাই বলে এভাবে হাসবে তুমি? তোমার হাসি শুনে মনে হচ্ছে গাছে বসে থাকা পেত্নী হাসছে! কিছু টা মজার স্বরে বলল তূর্য।

— তূর্যের কথা শুনে আরিয়ার বুক ফেটে কান্না আসছে। এমন সময় ওর মজা করার কোন মানে হয়! আরিয়া নিজের কান্না কন্ট্রোল করে তূর্যকে বলল__ একটা মানুষের আত্মা যখন মরে যায় তখন তাকে একমাত্র হাসিটাই বাঁচিয়ে রাখতে সাহায্য করে। হোক সেটা মিথ্যা,লোক দেখানো, বা ক্ষণিকের। আমাকে অন্ধকার থেকে ফিরিয়ে আনতে এই মিথ্যা হাসিটাও কিন্তু অনেক সাহায্য করবে। এমন না যে আমি চাইলেই অতীতের সব কিছু এক মুহুর্তে শেষ করে দিতে পারবো। আর বিষয়টা এমন‌ও না চাইলেই এই জীবন থেকে খুব সহজে মুক্তি পেয়ে যাবো। মুক্তি তখন‌ই পাবো যখন আমার সৃষ্টিকর্তা চায়। যেহেতু আমি চাইলেই এসব পাচ্ছি না সেখানে অযথা নিজেকে নিঃশেষ করার মত বোকামি না করাই ভালো। তবে কিন্তু আমি চাইলেই নিজেকে ভালো রাখতে পারি সেটা সাময়িকের জন্য হলেও। অল্প অল্প করে যদি নিজেকে ভালো রাখতে পারি তাহলে হয়তো আমার জয় নিশ্চিত। যে কাজ গুলো করলে আমি সাময়িক আনন্দ পাই, মিথ্যা করে হলেও হাসতে পারি সেই কাজ গুলো এপ্লাই করতেই পারি। মিথ্যা হাসির আড়ালে আমার নিঃসঙ্গতা গুলো লুকিয়ে রাখব। জীবন একটাই সব কিছুর সমস্যা যেহেতু আছে তার সলিউশন‌ও আছে শুধু আমাকে সেটা খুঁজে বের করতে হবে। জীবনে আর যাই হোক আধমরা হয়ে বাঁচতে খুব কষ্ট ভীষণ কঠিন। হোক না মিথ্যা হাসির মধ্যে দিয়ে জীবনকে উপভোগ করা।

— আরুপাখি এগুলা কী করে বলছো তুমি? ভালোবাসো না আমায়?(তূর্য)

— আমি একবারও বলেছি আপনাকে ভালোবাসি না? আর আমি কথা গুলা সত্যিই বলছি। আপনার যখন ইচ্ছে হবে আসবেন আবার যখন ইচ্ছে হবে চলে যাবেন! এতটাই সস্তা মনে হয় আমাকে? আপনি নিজেই তো রাতুলের দেওয়া ক্ষত, অতীতের স্মৃতি মুছে দিতে আমার জীবনে এসেছিলেন। এখন আবার আপনি নিজেই আরো একটা বড় ক্ষত তৈরি করে দিয়ে গেলেন! যাই হোক ভালো থাকবেন। আজকের পর থেকে আপনাকে আর ডিস্টার্ব করবো না। আল্লাহ হাফেজ। বলেই আরিয়া ফোন কেটে দিলো।

কিছুক্ষণ পর ছোঁয়া আর অন্তু আসলো। এসেই আরিয়াকে জড়িয়ে ধরলো। আরিয়া কোনো প্রতিক্রিয়া করলো না। ছোঁয়া আর অন্তু আরিয়ার মনের অবস্থা বুঝতে পেরে কিছু সময় চুপ করে থাকলো।

আরিয়া চল এখন তোকে সাজাবো।(ছোঁয়া)

আরিয়া ছোট করে জবাব দিলো,, হুম।

ছোঁয়া আর অন্তু মিলে আরিয়াকে রেডি করলো। আরিয়াকে কালো, আর খয়েরী রঙের শাড়ি পড়ানো হয়েছে। চুল গুলা খুপা করে দেওয়া হয়েছে আর মুখে হাল্কা মেকআপ, ঠোঁটে হাল্কা লিপস্টিক। এতেই আরিয়াকে দেখতে খুব ভালো লাগছে।

ওয়াও আরু তোকে খুব সুন্দর লাগছে রে। তোকে দেইখাই তো আমাদের না হওয়া জিজু ফিট খাইবো রে!(অন্তু)

প্রতিত্তোরে আরিয়া কিছু বললো না। শুধু একটা হাসি দিলো।

_____________________

পাত্র পক্ষের সামনে বসে আছে আরিয়া। তখন থেকে নিজের হাতে থাকা আংটি টা কে ঘুরাচ্ছে! এখান থেকে চোখ সরালেই মনে হয় পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। আশেপাশে কী হচ্ছে তা যেন সে শুনতেই পাচ্ছে না।

আজ শুধু আংটি পড়িয়ে দিয়ে যাবে।

দু’জন কে আলাদা করে কথা বলার জন্য বলা হলো। আরিয়ার আব্বু আরিয়াকে বলল,, আরু যাও মা। এই কথা টাও যেন আরিয়ার কর্ণপাত করতে পারলো নাহ্।

তখনি ছোঁয়া এসে আরিয়াকে ধরে রুমে নিয়ে গেলো।

আমরা যাই হবু জিজু! তুমি তোমার হবু বউ সামলাও।😁

__________________🕊️

সেই কখন থেকে দেখছি শুধু হাতে থাকা আংটির দিকেই তাকিয়ে আছো। আমাকেও তো একটু দেখো এবার আরুপাখি!

— আরুপাখি ডাক আর কারো পরিচিত কন্ঠ শুনে চমকে উঠলো আরিয়া।

কী হলো? আমার সাথে কথা বলবে না আরুপাখি?

— রুমে থাকা লোকটির দিকে তাকিয়ে আরিয়া অবাক হয়ে গেলো। বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,, মিস্টার তূর্য আপনি এখানে কেন? আর আমার রুমে কী করছেন?

— তোমার আব্বুই তো পাঠালো আমার হবু বউ মানে তোমার সাথে আলাদা করে কথা বলতে!(তূর্য)

— তার মানে আপনারই আমাকে দেখতে আসার কথা ছিলো?(আরিয়া)

— হুম আরুপাখি!(তূর্য)

— তাহলে আমাকে বললেন না কেন? কষ্ট কেন দিলেন?(আরিয়া)

— বলে দিলে কী আর সারপ্রাইজ থাকতো! তা বলো আমার সারপ্রাইজ টা কেমন লাগলো!(তূর্য)

— খুব জঘন্য! (আরিয়া)

#চলবে…!!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here