তুই শুধু আমার ভালোবাসা পর্ব -২৯+৩০

#তুই_শুধু_আমার_ভালোবাসা
#Hridita_Hridi
#পর্ব২৯

রিং পরানো হয়ে গেছে, বর্ষা আর বর্ষণ পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে। তখন রমা বেগম আর নিপু এসে দরজায় দাঁড়ায়।

নিপু বলে অবশেষে, শ্রাবনের মেঘ বর্ষণের বারিধারায় বর্ষাতে ভেসে গেলো।

বর্ষা লজ্জায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে।

তখন রমা বেগম বলে কিন্তু আমি তো শাফিনের আম্মাকে বলে দিয়েছি বিয়ের কথা।

বর্ষা তখন অবাক হয়ে বর্ষণের মমের দিকে তাকায় আর বলে বিয়ের কথা বলে দিয়েছো মানে?

রমা বেগমঃ হুম, তুই তো বললি মেঘু! যে তুই শাফিনের সাথে বিয়েতে রাজি আছিস। আমি শাফিনের আম্মাকে সেটাই বলেছি। আগামীকাল ওরা আসবে তো দিনক্ষণ ঠিক করতে।
তুই সুন্দর করে শাড়ি পরে সেজেগুজে রেডি হয়ে থাকিস।
আমি বরং যাই খাবারের মেনু ঠিক করি।আর বর্ষণ শোন, বর্ষার বিয়ের সব দায়িত্ব কিন্তু তোর। বিয়ের সকল দিক তুই দেখবি আর হ্যা সাগরকে আর সবুজকেও বলবি বিয়েতে থাকতে। বিয়েতে কতো দায়িত্ব বলতো!আর নিপু তুই কিন্তু গেস্টদের দিকটা দেখবি। আর আমি যাই কতো কাজ পরে আছে বলতো!

রমা বেগমের কথা শুনে বর্ষা অসহায়ের মতো বর্ষণের দিকে তাকিয়ে আছে। বর্ষণ কিছু না বলে শুধু মিটিমিটি হাসছে আর তার মমের কথায় সায় দিয়ে যাচ্ছে।

বর্ষা তো এবার কান্না করে দেবে এমন অবস্থা। বর্ষা রমা বেগমকে উদ্দেশ্য করে বলে, মামনী আমি শাফিন ভাইয়াকে বিয়ে করতে…

রমা বেগমঃ জানি তো মা! তুই শাফিনকে বিয়ে করতে চাস।আর বলতে হবে না। তোর জন্মের পর থেকে তোকে দেখে আসছি।তোকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছি। তোর মা বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে তোর চাওয়া, ইচ্ছা – অনিচ্ছা কোনদিন অপূর্ণ রাখিনি। আজ লাইফের ইম্পর্ট্যান্ট একটা ডিসিশন নিয়েছিস সেটা মেনে নিবোনা তা তো হয়না বল!

রমা বেগমের এই কথাগুলো শুনে বর্ষা রমা বেগমকে জরিয়ে ধরে কান্না শুরু করে দেয়।কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বলে মামনী, আমি তোমাদের ছেড়ে থাকতে পারবোনা। আমি শাফিনকে বিয়ে করতে চাইনা। আমি তোমার ছেলের উপর রাগ দেখিয়ে তখন ঐ কথাটা বলেছিলাম। তাছাড়া আর আমি কি করতাম বলো! তোমার ছেলে অন্য কাউকে জীবনসঙ্গিনী করবে আর আমি এখানে থেকে সেটা কি করে মেনে নিবো বলো। আমি তোমার ছেলেটাকে খুব ভালোবাসি মামনী।

সরি মামনী আর এমনটা করবোনা তুমিও আর অভিমান করে থেকোনা আমার উপর প্লিজ প্লিজ। এইযে কান ধরেছি দেখো।

রমা বেগম এবার হাসতে হাসতে বলে ওরে ফাজিল মেয়ে, আমি তোর হবু শ্বাশুড়িমা হই আর তুই কিনা আমার কাছে বলছিস তুই আমার ছেলেকে ভালোবাসিস!

বর্ষা বাচ্চাদের মতো গাল ফুলিয়ে রমা বেগমকে বলে তো তাতে কি হয়েছে । সবার আগে তুমি আমার মামনী,আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।

রমা বেগম বর্ষার গালে হাত দিয়ে গাল টেনে আদর করে বলে অবশেষে আমার শ্রাবণের মেঘুপাখিটা যে বুঝতে পেরেছে তাকে, এতেই আমি অনেক খুশি। এটা বলে রুম থেকে বের হয়ে যেতেই দরজার পাশে গিয়ে আবার ঘুরে দাঁড়ায় রমা বেগম। বর্ষাকে বলে শোন মেঘ কাল তোকে আমার কিছু বলার আছে। আর এটা জানা তোর খুব জরুরি বলে আমি মনে করি।

রাতের খাবার খেয়ে সবাই যে যার রুমে চলে যায়।বর্ষাও নিজের রুমে বসে এক মনে তাকিয়ে তার হাতের রিংটা দেখছে। এতোটাই ভাবনায় ডুবে আছে যে কখন বর্ষণ এসে পাশে বসেছে বর্ষা টেরই পায়নি।

কিছুক্ষণ পরে বর্ষণ উঁহুম উঁহুম করে গলা খাকরি দিয়ে বলে ম্যাম আপনার যদি রিংটা দেখা হয়ে থাকে তাহলে এদিকে একটু তাকাতে পারেন।

বর্ষণের কথায় চমকে উঠে বর্ষা তারাহুরো করে হাতটা আড়াল করে বলে ত্ তু তুমি কখন এলে ভাইয়া?

বর্ষণ একটু ঘুৃম ঘুম ভাব করে বলে কতোক্ষণ আর হবে, এইতো মাত্রই এলাম ঘন্টা খানেক সময় হবে হয়তো।ভাবলাম তোর ভাবনার দুয়ারে বুঝি তালা ঝুলছে তাই নক করলাম তা না হলে তো আমিই ঘুমিয়ে পরতাম। আমি একটা কথা ভাবছি জানিস তো? এটাকে তুই একটা ইম্পর্ট্যান্ট ডিসিশন ও বলতে পারিস।

বর্ষা তখন জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে বর্ষণের দিকে তাকিয়ে বলে কি ডিসিশন!

বর্ষণ তখন সিরিয়াস হওয়ার ভব ধরে বললো, আমাদের বিয়ের পর এই রিংটা বিক্রি করে দিবো।তারপর যে টাকা হবে সেটা দিয়ে একটা পারফিউম কিনে রাখবো।

বর্ষা অবাক হয়ে বলে কেন! পারফিউম কিনবে তো ঠিক আছে কিনে নাও তবে আমার রিং বিক্রি করেই তোমায় পারফিউম কিনতে হবে কেন!

বর্ষণ তখন ইনোসেন্ট মুখ করে বলে কেন আবার, এই এক ঘন্টায় অন্তত এটুকু বুঝে গেছি এই রিংটা তোকে কতোটা ভাবনায় ডুবিয়ে রাখতে পারে। তাই এটা বিক্রি করে পারফিউম কিনে যদি আমি গায়ে মাখি তাহলে তুই আমার টানে না হোক তোর রিং এর টাকায় কেনা পারফিউম এর টানে হলেও আমার কাছে থাকবি আমাকে নিয়ে ভাববি।

বর্ষণের কথা শুনে বর্ষা ভ্রু কুচকে বলে কি! কি বললে দাঁড়াও তোমায় দেখাচ্ছি মজা বলেই বর্ষণের বুকে কিল ঘুষি মারতে থাকে।
বর্ষণ বলে আহ! লাগছে তো,বলেই হাসতে হাসতে বর্ষাকে বুকে জরিয়ে ধরে।

গল্প করতে করতে বর্ষা এলোমেলো হয়েই ঘুমিয়ে পরে। বর্ষণ ঠিক করে শুইয়ে দিয়ে বর্ষার কপালে একটা চুমু এঁকে দিয়ে লাইট অফ করে রুম থেকে বেরিয়ে আসে।

সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তার টেবিলে বসে নাস্তা করছে সবাই। আজ একটু দেরি করেই নাস্তার টেবিলে বসেছে। কারণ বর্ষণ আর তার পাপা আজ অফিসে যাবেনা বর্ষাও ভার্সিটিতে যাবেনা। সবাই আজ বাসায় থাকবে।শুধু এরাই নয় সাগর আর নদীও এসেছে বর্ষণদের বাসায়।
সাগরকে দেখে অবাক না হলেও নদীকে দেখে ভীষণ অবাক হয়ে যায় বর্ষা।তবে নদী কেন এসেছে তা জানতে চাইলে নদী বলে তুই আজ ভার্সিটি যাসনি বলে চলে এলাম। বর্ষাও আর কিছু বলেনি।

নাস্তা শেষ হলে রমা বেগম বলে মেঘু তোকে অনেক কথা জানানোর আছে আয় আমার সাথে, বলেই বর্ষাকে নিয়ে উপরে উঠে যায়। সেটা দেখে বর্ষণ, নিপু আর রায়হান সাহেব,সাগর,নদী ও পিছে পিছে যায়।

রমা বেগম বর্ষাকে নিয়ে গিয়ে একটা তালাবদ্ধ রুমের সামনে দাঁড়ায়। এখানে দাঁড়াতে দেখে বর্ষা তো অবাক হয়ে রমা বেগমের দিকে তাকায়। কারণ এ রুমটা কখনো খোলাই হয়না। বর্ষার তো মনে পরেনা যে কোনদিনও একটা সেকেন্ডের জন্য হলেও ও এই রুমটা খুলতে দেখেছে। তবে মামনী আজ কেন এই রুমটার সামনে এনে দাঁড় করালো।
বর্ষাঃ কাঁপা গলায় বলে মামনী! তুমি এখানে নিয়ে এলে কেন আমাকে? কি আছে এখানে? আগে তো কখনো এই রুমটা খুলতে দেখিনি এমনকি এই রুমের চাবিটা পর্যন্ত তুমি চাবির সেটের সাথে রাখোনি শুধুমাত্র তোমার কাছে রেখেছো তবুও লুকিয়ে। আর আজ তুমি নিজে এখানে নিয়ে এলে আমাদের?

রমাঃ হুম আমি নিয়ে এলাম আজ। কারণ এই রুমের মধ্যেই আছে তোর সকল প্রশ্নের উত্তর।

রমা বেগম দরজা খুলতে যাবে তখন ই বর্ষার ফোন বেজে ওঠে। বর্ষা ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে শাফিন কল করেছে। বর্ষা ফোন রিসিভ না করে কল কেটে দেয়।
বর্ষা কল কেটে দিয়েছে দেখে শাফিন আবার ফোন দেয়।
বর্ষাও কল কেটে দেয়। বার বার এমন করায় বর্ষা বিরক্ত হয়ে ফোন সুইচঅফ করতে যাবে তখনই রমা বেগম জিজ্ঞেস করলো কে ফোন করেছে?

বর্ষা বর্ষণের দিকে একবার তাকিয়ে মাথা নিচু করে বলে শাফিন ভাইয়া।

রমা বেগম বললো তুই ফোন রিসিভ কর। দেখ কি বলে আর শোন ওর মায়ের সাথে আগেই তোর কথা বলার দরকার নেই। আগে আমার সাথে তোর সব কথা শেষ হবে তার পর তুই কথা বলবি শাফিনের মায়ের সাথে।

বর্ষা রমা বেগমের কথায় সায় দিয়ে শাফিনের ফোন রিসিভ করে হ্যালো বলতেই শাফিন অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করে এতোটা সময় ফোন কেন ধরিসনি? কেন বার বার ফোন কেটে দিচ্ছিলি? ওখানে কি কেউ তোকে কিছু বলেছে? বর্ষণ কিছু বলেছে তোকে? আজ ভার্সিটি আসিসনি কেন?

ফোনের স্পিকার অন থাকায় সবাই শাফিনের কথা শুনতে পেয়েছে।বর্ষণ তো রেগে চোয়াল শক্ত করে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রেখেছে।

বর্ষা তখন বলে আরে ভাইয়া এতো প্রশ্ন করলে কি করে জবাব দিবো বলো? ধিরে ধিরে বলো তবেই না তোমার প্রশ্নের জবাব দিতে পারবো। আর শুনো এখানে কেউ আমায় কিছু বলেনি ইনফ্যাক্ট বর্ষণ ভাইয়াও কিছু বলেনি। আর আমি একটু ব্যাস্ত ছিলাম বলে ফোনটা বার বার কেটে দিচ্ছিলাম।
আমি আজ ভার্সিটি যাবোনা। আমি একটু পার্সোনাল কাজে আটকে গেছি আগামীকাল যাবো।

শাফিনঃ আম্মা তোর সাথে কথা বলতে চায়।

বর্ষাঃ বলবো আগে ফ্রী হয়ে নেই তারপর। আচ্ছা আমি এখন রাখি বলে ফোন রেখে দেয় বর্ষা।

রমা বেগম রুম খুলে দিতেই বর্ষার সাথে সাথে সবাই রুমের মধ্যে ঢুকে পরে।রুমে ঢুকেই বর্ষা নদী আর সাগর অবাক হয়ে যায়।#তুই_শুধু_আমার_ভালোবাসা
#Hridita_Hridi
#পর্ব৩০

এটা দেখে তো মনে হচ্ছে কারও বেডরুম , তাহলে এটা তালাবদ্ধ করে রাখার কি প্রয়োজন ছিল? এটা বর্ষার মাথায় এলেও মুখ ফুটে বললো না। কারণ এটা বেডরুম হলেও কার বেডরুম সেটা বোঝা যাচ্ছে না। বোঝা যাবেই বা কি করে সব কিছু তো ঢেকে রাখা।

এসব ভাবনার মাঝেই রমা বেগম নিপুর সাথে সব কিছুর উপর থেকে পর্দা সরিয়ে দিলো।পর্দা সরাতেই বর্ষার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। এটা কি ঠিক দেখছে না কি ভুল। এগুলো তো সব তার মায়ের বিয়ের ছবি। আর শুধু বিয়ের নয় বিয়ের আগের ও অনেক ছবি আছে।

বর্ষার বাবা মায়ের ব্যাবহারের জিনিস ও এ রুমে আছে। রমা বেগম ওয়ার্ডরোব খুলে একটা পুরাতন এ্যালবাম আর একটা ডায়েরি বের করে আনে।

বর্ষা তখন বর্ষণের মমকে জিজ্ঞেস করলো আমার পাপা আর মমের বেডরুম এটা! কিন্তু আমাদের বাসা থাকতে এখানে কেন? আর এসব কথা মম আমাকে কখনো বলেনি কেন?

রমা বেগম তখন বলল এখানে বোস সব কিছু বলছি তোকে।
বর্ষা কিনা না বলে বেডের উপর বসে পরে। রমা বেগম তখন সব কথা বর্ষাকে বলতে শুরু করে। বর্ষার চারপাশে ঘিরে আছে নিপু, নদী, সাগর,বর্ষণ, রায়হান খান আর পাশে বসে আছে রমা বেগম।

…………………

ফ্ল্যাশব্যাক-

বর্ষণের মম( রমা বেগম) আর বর্ষার মম( মহবুবা ইসলাম) ছিলো দুজন বেস্ট ফ্রেন্ড। রমার বিয়ে হয়ে গিয়েছিল ইন্টার মিডিয়েটে থাকতে। তাই বিয়ের পড়েও পড়াশোনা চালিয়ে যায় রমা। এতে সহযোগিতা করতো মাহবুবা। ক্লাসের নোট, টিচারের লেকচারের কপি এগুলো সব রমাকে দিতো সে।এভাবে রায়হানের বাসায় যাওয়া আসাটা বেশি হতে থাকে মাহবুবার।আবার মাসুদ মানে বর্ষার বাবা হলো রায়হানের ক্লোজ ফ্রেন্ড। ছোট্ট বেলা থেকে ওদের বন্ধুত্ব। রায়হানের সাথে মাঝে মাঝে মাসুদও যেতো মাহবুবার কাছ থেকে নোট কালেক্ট করতে।

এভাবেই দুজনের পরিচয়। এ পরিচয় থেকেই প্রেম।পড়াশোনা কমপ্লিট করে একসময় দুজনেই সিদ্ধান্ত নিলো তারা বিয়ে করবে। কিন্তু মাসুদের পরিবার মানে বর্ষার দাদুবাড়ির কেউ রাজি হয়নি। তারা মাহবুবাকে বাড়ির বউ করবেনা বলে মাসুদকে অন্য জায়গায় বিয়ে দেবে বলে পাত্রী ঠিক করে।

মাসুদ বাড়ির সবার বিপক্ষে গিয়ে তাদের সকলের অমতে মাহবুবাকে বিয়ে করে। সাক্ষী হিসেবে আমরা দুজন ছিলাম মানে( বর্ষণের মা আর বাবা)।সবাই বউ নিয়ে মাসুদের বাসার গেটে হাজির হলাম বর্ষণও ছিল আমাদের সাথে। বর্ষণের বয়স তখন পাঁচ বছর।

মাসুদের বাসায় কেউ এ বিয়ে মেনে নেয়নি। নানা ধরনের বাজে কথা বলে তাড়িয়ে দেয় গেট থেকে। শুধু বাজে কথাই নয়, মাসুদের বড় ভাই আর বড় ভাইয়ের বউ মানে শাফিনের আম্মা তেড়ে আসে মারতে । শাফিন তখন এক বছরের শিশু বাচ্চা। মাসুদ প্রতিবাদ করেছিল বিনিময়ে ওকে অনেক বড় খেসারত দিতে হয়েছিল এটা বলেই থেমে যায় রমা।

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার বলতে শুরু করে, সেদিন মাসুদের ফ্যামিলি মাসুদকে দুর দুর করে তাড়িয়ে দিলেও আমি আর রায়হান ওদেরকে রাস্তায় ফেলে আসতে পারিনি। আশ্রয় দিয়েছিলাম এই বাসায়। দুদিন পরে মাসুদ অফিসে গেলে তাকে অফিস থেকে বের করে দেয় শাফিনের বাবা। বর্ষার দাদুকে দিয়ে সব সম্পত্তি নিজের নামে করে নেয় সে।

বর্ষার বাবা সেদিন বাসায় এসে মানসিক ভাবে একদম ভেঙে পরে। তখন বর্ষণের বাবা এগিয়ে গিয়ে কাঁধে হাত রাখে।দুই বন্ধু একসাথে আমাদের বিজনেস দেখাশোনা করছিলো।সেটাও সহ্য হয়নি শাফিনের বাবার সে উঠে পরে লেগে থাকে আমাদের কোম্পানির পেছনে। এতে আমাদের কোম্পানি অনেক বড় লসের সম্মুখীন হয়।এতে আমাদের পরিবারকে অনেকটা ভোগান্তির মধ্যে পরতে হয়। তারপর আবার অনেক কষ্টে বিজনেসটাকে দাঁড় করায় দুই বন্ধু মিলে।

দুই আড়াই বছরের মাথায় বর্ষা যখন ওর মায়ের গর্ভে তখন বর্ষণ শুধু বলতো ও ভালো মা তুমি আমায় একটা সুন্দর ফুটফুটে ভালো মেয়ে ডল গিফট করবে। আমি সবসময় সেই ডলটাকে আগলে আগলে রাখবো। সবসময় খেয়াল রাখবো সেই ডলের।

যখন তোর জন্ম হলো তখন কাউকে কোলে নিতে দেয়নি বর্ষণ। আগে ও কোলে করেছিলো তোকে।সেদিন সবথেকে বেশি খুশি হয়েছিল বর্ষণ। ও বলতো আমি চেয়েছি বলেই আল্লাহ এই ডলটাকে দিয়েছে।

কিছুদিন পরে মাহবুবা বাবার বাড়ির সম্পদ বিক্রি করে টাকা এনে দেয় মাসুদকে আর লোন নিয়ে আলাদা করে ব্যাবসা শুরু করে মাসুদ। কয়েক বছরেই অনেক ভালো পজিশন হয় মাসুদের বিজনেস সেক্টরে। মাসুদ তখন আলাদা ফ্ল্যাট কিনে সেখানে শিফট হয়ে যায়। তবে ফ্ল্যাটটা ইচ্ছে করেই আমাদের ফ্ল্যাটের পাশেই নেয় মাসুদ।

বর্ষণ তোকে খুব আদর করতো, তোর সকল আবদার পুরণ করতো এই জন্য তুই বর্ষণকে বলেছিলি, ভাইয়া তুমি আমায় বিয়ে করবে? তাহলে আমি সবসময় তোমার সাথে সাথে থাকতে পারবো। বর্ষণ কিছু না বলে চুপ ছিলো বলে তুই অনেক কান্না করেছিলি। তখন তোর মা মাহবুবা এসে তোদের দুজনের মাথায় হাত রেখে বলেছিল, হ্যা তোমার বর্ষণ ভাইয়া তোমাকে বিয়ে করবে কিন্তু তার জন্য তো তোমায় বড় হতে হবে।এটা শুনে তুই বষণকে বলেছিলি ভাইয়া, আমায় বিয়ে করে কিন্তু গাড়িতে আনবানা।এ কথা শুনে বর্ষণ সহ আমরা সবাই অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। তখন বর্ষণ তোকে জিজ্ঞেস করেছিলো তাহলে আমার এই পরীটা কি হেঁটে হেঁটে আসবে?
এ কথা শুনে তুই বলেছিলি হেঁটে কেন আসবো, তুমি আমায় কোলে করে নিয়ে আসবে।এই জন্যই তো তোমার বাসার পাশেই আমার বাসা।তোর এমন কথা শুনে সবাই হেসেছিলাম সেদিন।

তারপর তোর বাবা মায়ের এক্সিডেন্ট হলো হসপিটালে নেওয়ার পরে ১৮ ঘন্টার মধ্যে তোর মা মারা যায় আর ২৬ ঘন্টার মাথায় তোর বাবা মারা যায়। তবে মারা যাওয়ার আগেই উকিল ডেকে মাসুদের কোম্পানির সকল কাগজ পত্র বর্ষণের নামে করে দেয়।তোর বাবা শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করার আগে বর্ষণের হাত ধরে বলেছিলো বাবা বর্ষা তোমার দায়িত্ব এ দায়িত্ব টা থেকে তুমি কখনো পিছিয়ে এসোনা। তোর মা আমার হাত ধরে বলেছিলো আমার মেয়েটাকে কখনো চোখের জল ফেলতে দিসনা। আর যদি কখনও প্রয়োজন হয় তাহলে আমার ডায়েরি টা ওকে দিস।

এই জন্য বর্ষণ তোদের বাসায় তোকে যেতে দেয়না। সেখানে গেলে তো তুই কান্না কাটি করবি। এখন তোর মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে এতোদিন এই রুমটার কথা তোকে বলিনি কেন? এটাও তোর মায়ের নিষেধ ছিল কারণ এসব দেখলে তোর ফ্যামেলির কথা তুই জানতে চাইবি। তোর ফ্যামেলির এমন আচরণের কথা তোর মা তোকে জানাতে চায়নি।

তখন সাগর একটা অডিও রেকর্ড শোনায় সবাইকে যেখানে স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে শাফিন আর তার মায়ের কথা। বর্ষাকে তারা বাড়ির বউ করে নেবে শুধু মাত্র সম্পত্তির লোভে, ভালোবেসে নয়।এটা শুনে তো বর্ষার রাগ দ্বিগুণ থেকে বেড়ে সাতগুণ হয়ে যায়।

বর্ষণ তখন বলে হুম আমি মালয়েশিয়ায় গিয়েছিলাম তোদের কোম্পানির একটা প্রবলেম সলভ করতে।

বর্ষা কিছু না বলে ডায়েরি আর এলবামটা নিয়ে চুপচাপ রুমে চলে যায়। রুমে বসে বর্ষা ওর মায়ের ডায়েরি পড়ছে আর চোখের জল ফেলছে। আজ খুব কষ্ট হচ্ছে বর্ষার। খুব মনে পরছে তার মা বাবাকে। বর্ষণ গিয়ে ডায়রি নিয়ে রেখে দেয় আর বলে এমন করে কষ্ট পাবি বলে আগে থেকে কিছু বলতে দেইনি তোকে।
আমার ডলটার যদি মন খারাপ থাকে তাহলে আমার মন কি ভালো থাকতে পারে?

চলবে…..

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here