৩৩+৩৪ ও শেষ

#তুই_শুধু_আমার_ভালোবাসা
#Hridita_Hridi
#পর্ব৩৩

থাপ্পড় খেয়ে শাফিন কিছু বলতে যাবে তখনি বর্ষা বলে। পৃথিবীতে অনেক খারাপ লোক দেখেছি। অনেক নিচুস্তরের মানুষ দেখেছি কিন্তু তোর মতো, আর তোদের ফ্যামিলির মতো এত নিচু মনের মানুষ, এতোটা জঘন্য মনের মানুষ আমি দ্বিতীয়টি দেখিনি। শয়তানও তোদের কার্যকলাপ দেখে লজ্জা পেয়ে যাবে। আমি আইনি ব্যাবস্থা নেওয়ার আগেই তুই এখান থেকে বেরিয়ে যা, তা না হলে কিন্তু সারাটা জীবন জেলখানায় পঁচে মরতে হবে।

রেগে গিয়ে চিল্লিয়ে, গরগর করে এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলে বর্ষা।বর্ষার এমন রুপ দেখে শাফিন একটু ভরকে যায়।
মনে মনে ভাবে আর বেশি বাড়াবাড়ি করাটা ঠিক হবে না। শেষে আবার নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে টানাহেঁচড়া শুরু হয়ে যাবে। এটা ভাবতে ভাবতে এদিক ওদিক তাকালো শাফিন।
দেখলো সবাই বর্ষাকে নিয়ে ব্যাস্ত সবাই ওকে শান্ত হতে বলছে। সেই সুযোগে শাফিনও চম্পট দিলো।

কিছুক্ষণের মধ্যেই বর্ষণ এসে হাজির। বর্ষণকে দেখে সবাই বর্ষাকে আর বর্ষণকে একা রেখে চলে গেলো।বর্ষার রাগে দুঃখে চোখে জল চলে আসে।

বর্ষণ বর্ষার দুই গালে হাত দিয়ে মুখটা উঁচিয়ে ধরে বলে কি হয়েছে আমার পরীটার! মন খারাপ কেন। বর্ষণের কথা শুনে বর্ষার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরে।

বর্ষণঃ আরে আরে! আবার চোখের পানি ফেলে!চোখের জল মুছে দিয়ে বলে এর আগে কি বলেছিলাম মনে নেই বুঝি!
ঠিক আছে ব্যাপার না। মনে না থাকলে আমি আবার মনে করিয়ে দিচ্ছি। আমি বলেছিলাম, আমার পরীটা যেন কোন অবস্থাতেই চোখের জল না ফেলে। তার চোখের জল আমাকে বড্ড অস্থির করে তোলে।সহ্য করতে পারিনা আমি তার চোখের জল। তা এবার কি জানতে পারি আমার পরীটার মন খারাপ কেন?
বর্ষণের কথা শুনে বর্ষা তখন সব কথা বলতে শুরু করে। বর্ষণ তখন সব শুনে সে তো বুঝলাম। কিন্তু একটা বিষয় বুঝতে পারছি না, আমার এই ছোট্ট পরীটা এতোটা বড় আর এতোটা সাহসী কবে হয়ে গেলো, যে একটা কালপ্রিট কে মেরে তাড়িয়ে দিতে পারলো। বর্ষাও বর্ষণের সাথে দু একটা কথা বলতে বলতে স্বাভাবিক হয়ে যায়।

রাতে মেহেদী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। পার্লার থেকে বিউটিশিয়ান এসেছে সবাই মিলে আনন্দ মজাতে মেহেদী অনুষ্ঠান পার করেছে। মেহেদী শেষে সবাই যার যার মতো চলে যায়। সবুজ ও এসেছিল আজকের মেহেদী অনুষ্ঠানে।

সবুজের বাসা অনেক দুরে বলে রাফসানদের বাসায় সবুজের বিয়ের সকল ব্যাবস্থা করা হয়েছে। রাফসানের পরিবার এসেছে বর্ষণদের বাসায় আর বর্ষণের মম আছে বর্ষাদের বাসায়।

সকাল থেকে গায়ে হলুদের ধুম পরে গিয়েছে। সবাই খুব ব্যাস্ত। কারণ লোকজন কম তাই কাজের চাপটা একটু বেশি। একটা বিয়ে হলে তো কোন কথা ছিল না। কিন্তু বিয়ে তো হচ্ছে চারটা। আই মিন এক আত্নীয় স্বজনরা আর কতো বাড়ি দৌড়াবে বলুন তো!

হলুদের আয়োজন করা হয়েছে বর্ষাদের বাসার ছাদে। আর শুধু বর্ষা আর নিপুর জন্য নয়, বর্ষণ আর সবুজের জন্য ও স্টেজ সাজানো হয়েছে। একি ছাদে চার জনের ই গায়ে হলুদের ব্যাবস্থা করা হয়েছে।
অবশ্য প্ল্যানটা করেছিল বর্ষণ। আর সেটা কার্যক্রম করেছে সাগর নদী আর ঋতু।মানে বর্ষণের মমকে রাজি করিয়েছে ওরা।

সন্ধ্যায় গায়ে হলুদ। পুরো বাড়ি লাইটিং করা। চারিদিকে আলো ঝলমল করছে। সবাই ছাদে হলুদ দেওয়া নিয়ে ব্যাস্ত।শুধু বর্ষা আর নিপু নেই। কারণ বর্ষণের মম বলেছে ওরা রুমেই থাকবে আগে সবুজ আর বর্ষণকে হলুদ মাখানো হবে। তারপর নিপু আর বর্ষাকে এখানে আনা হবে। ততক্ষণ ওরা রুমে বসে থাকবে। তবে ওদের একা রাখা হয়নি। বর্ষার পাশে নদী আর নিপুর পাশে ঋতু বসে আছে।

এদিকে বর্ষণকে হলুদে ডুবিয়ে দিয়েছে রাফসান, সাগর আর সবুজ। পুরো মুখে হলুদ মেখে ভুত করে দিয়েছে রাফসান। সাগর আর সবুজ বললো আমরাই বা বাদ যাবো কেন? বলে ওরাও হলুদ মাখাতে শুরু করে দেয়। বর্ষণ কিছু বলতে যাবে তখন রাফসান উঠে বলে, নো নো আজ তো তুই আর সবুজ কিছু বলতে পারবিনা! তোরা এখন বিয়ের পাত্র, আই মিন বিয়ের পাত্রদের মুখে রুমাল চেপে রাখতে হয়, নো টকিং ওকে। বর্ষণ আর কিছু বলেনা। বর্ষণের সাদা গেঞ্জি টা পুরো হলুদ হয়ে গিয়েছে।

বর্ষণদের হলুদ দেওয়ে শেষ এখন বর্ষা আর নিপুর গায়ে হলুদ। নদী হলুদের সবকিছু নিয়ে ছাদে চলে যায়। বর্ষা রুমে বসে আছে একা।

হঠাৎ লোডশেডিংয়ে পুরো বাড়ি অন্ধকার হয়ে যায় । বর্ষা উঠে হাতড়াতে হাতড়াতে দরজার দিকে যাচ্ছে। কারণ ক্যান্ডেলটা রেখেছে নদী। কোথায় যে রেখেছে আর বর্ষা অন্ধকারে কোথায় খুঁজবে। তার থেকে ভালো হবে নদীকে জিজ্ঞেস করে নেওয়া।

দরজার সামনে যেতেই কেউ একজন এসে বর্ষার হাত ধরে। এতে বর্ষা খুব ভয় পেয়ে যায়। বর্ষা চিৎকার করবে তার আগেই ছেলেটা বর্ষার মুখ চেপে ধরে। বর্ষা আর কিছু বলতে পারেনা, তবে বর্ষা বুঝে গিয়েছে এটা কার কাজ।বর্ষা ভয়ে এক পা একপা করে পিছিয়ে যাচ্ছে। ছেলেটিও বর্ষার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। পিছতে পিছতে দেওয়ালে গিয়ে ধাক্কা খেয়ে থেমে যায় বর্ষা। ছেলেটিও বর্ষার একদম কাছে দাঁড়িয়ে আছে।
ছেলেটি কিছু না বলেই বর্ষার কাঁধে মুখ ডুবিয়ে দেয়। বর্ষা নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু ফলাফল শুন্য। কিছুক্ষণ পরে বর্ষার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে,আমার পরীটার গায়ে প্রথম আমিই হলুদ ছুঁইয়ে দিলাম। তারপর আবার বলে, তোকে কতোবার বলেছি মেঘু! আমার থেকে নিজেকে ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা কখনো করিসনা। তাতে কোন লাভ হবেনা।

এতোক্ষণে বর্ষা বুঝতে পারলো বর্ষণ তার ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে হলুদ লাগিয়ে দিচ্ছিল! বর্ষা তখন বর্ষণকে বলে এটা আবার কেমন হলুদ দেওয়া হুমমম্।মানুষ হলুদ মুখে লাগায়, হাতে লাগায় পায়ে লাগায় কিন্তু গলায়,আর ঘাড়ে হলুদ লাগায় সেটা তো কখনো শুনিনি।

বর্ষার কথা শুনে বর্ষণ একটু ভাব নিয়ে বলে এটা হলো ইউনিক স্টাইল, বুঝলেন তো ইউনিক ম্যাডাম।
আর আপনার মুখে যদি হলুদ মাখাই তাহলে তো সবাই জেনে যাবে যে আমি আপনাকে হলুদ মাখিয়েছি। কিন্তু আমি তো সেটা চাইনা। আমি চাই এটা শুধু আমার মেঘুপরীটাই জানুক আর এটা সারাজীবন মনে রাখুক বলেই একটা হাসি দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
বর্ষণ বেরিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে বিদ্যুৎ চলে আসে। সারা ঘর, সারা বারি আালোয় আালোয় ভরে ওঠে।

বর্ষা তো মাথয় হাত দিয়ে বেডে বসে পরে আর ভাবে তবে কি এটা বর্ষণের ই কাজ! লোডশেডিং করিয়ে সবাইকে ব্যাস্ত রাখা!
এসব ভাবনার মাঝেই নদী এসে বললো চল ছাদে যেতে হবে সব ঠিকঠাক করে রাখা হয়েছে।
বর্ষা আর কিছু না বলে হুম বলে ঘাড় নেড়ে সায় দিয়ে নদীর সাথে ছাদে চলে যায়।

প্রথমে বর্ষাকে হলুদ মাখাতে যায় রমা বেগম আর রায়হান সাহেব। রমা বেগম বর্ষার কপালে একটা চুমু দিয়ে বলে মাশাআল্লাহ! আমার ছেলের পরীটাকে তো আজ সত্যিকারের পরী লাগছে।
তারপর নিপুকেও হলুদ মাখিয়ে দিয়ে উঠে যেতেই একে একে সবাই হলুদ দিতে থাকে।

হলুদের অনুষ্ঠান শেষ করে সবাই নিচে চলে আসে। বার্ষা আর নিপুও রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পরে।

সকাল থেকে সারাটা বাড়ি জুড়ে হৈচৈ, আড্ডা আর ব্যাস্ততা। বাগানের একপাশে ফাঁকা জায়গায় প্যান্ডেল করা হয়েছে সেখানে খাওয়া দাওয়ার ব্যাবস্থা করা হয়েছে। একপাশে রান্নার তোরজোর চলছে।

ড্রইং রুমে বর বসার ব্যাবস্থা করা হয়েছে। অনেক সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে রুমটা।
বিয়ের কাজ সম্পন্ন হলো খাওয়া দাওয়া কমপ্লিট করে এখন বিদায়ের পালা। নিপু বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠে বসেছে। গেস্টরাও কিছু বিদায় নিয়েছে। এখন বর্ষার পালা।বর্ষাকে আর কি বিদায় দেবে। বর্ষাতো রমা বেগমের কাছেই যাচ্ছে । বর্ষা দাঁড়িয়ে আছে গাড়ির জন্য পেছন থেকে বর্ষণ আচমকা বর্ষাকে কোলে তুলে নিয়ে হাঁটতে শুরু করে। বর্ষা অবাক হয়ে বর্ষণের দিকে তাকিয়ে থাকে।

বর্ষাকে এমন করে তাকিয়ে থাকতে দেখে বর্ষণ বলে এভাবে তাকি থাকলে নতুন করে আবার প্রেমে পরে যাবে বউ।
বর্ষণের মুখে বউ ডাক শুনে বর্ষার বুকের ভেতর কেমন একটা করে ওঠে। লজ্জায় লাল হয়ে বর্ষণের বুকেই মুখ লুকায় বর্ষা।
বর্ষণ বাসার গেটে ঢুকতেই রাহেলা বেগম মিষ্টি নিয়ে আসে।বর্ষাকে কলে নিয়েই মিষ্টি মুখ করে সোজা উপরে চলে যায়। রাফসান দৌড়ে গিয়ে রুম খুলে দিলে বর্ষণ বর্ষাকে নিয়ে বেডে বসিয়ে দেয়। বর্ষা তো লজ্জায় মাথা তুলছেই না মাথা নিচু করে বসে আছে। বর্ষণ ও বেডের একপাশে বসে আছে।
বর্ষণের পিছে পিছে নদী, সাগর, রাফসান আর ঈশিতা ঢুকে পরে। তারা তো গান প্লে করে এলোপাতাড়ি নাচতে শুরু করে।
নাচ শেষে বর্ষণের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে ঈশিতা বলে এখন ট্রিট দাও।
বর্ষণ অবাক হয়ে বলে ট্রিট! কিন্তু কিসের ট্রিট দিবো?

ঈশিতাঃ নিজেকে খুব চালাক ভাবো তাইনা, সেই তো বউকে নিয়ে রুমে ঢুকে ঢুকে পরলে তা সব নিয়ম কি ভুলে গেছো!
আর ভুলে গেছো তো গেছো সেটা আমি বলছি না, আমি যে এতো সুন্দর করে নেচে তোমায় বিনোদন দিলাম সেটার জন্য ট্রিট দাও।

বর্ষণঃ কিহ্! এটা এতো সুন্দর নাচ! এর জন্য আমায় ট্রিট দিতে হবে! উল্টে আপনি যদি আমায় ট্রিট দিয়ে এই নাচ দেখতে বলেন তবুও আমি দেখবো না। আমি তো আমার পরীর নাচে মুগ…আউচ! বলেই থেমে যায় বাকিটুকু আর বলতে পারেনা।
বলবে কি করে বর্ষা তো চিমটি কেটে থামিয়ে দিয়েছে।

ঈশিতাঃ ওহ্ রিয়েলি! ঠিক আছে, ট্রিট চাইনা আজ তো আমি এই রুম থেকে বের হচ্ছি না তার পর দেখি আমার দেবর আমায় ট্রিট না দিয়ে কি করে থাকে। এই কথা বলেই ঈশিতা বর্ষার পাশে গিয়ে শোয়ার মতো ভাব করতেই। বর্ষণ পকেট থেকে কার্ড বের করে দিয়ে ঈশিতার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে এই যে, ভাবি ডেবিট কার্ড ক্রেডিট সব আছে যা খুশি শপিং করবেন আগামিকাল, আর মনে চাইলে এক্ষুনি যান তাতেও আমার প্রবলেম নাই। বিনিময়ে শুধু যেটা করতে চাইছেন সেটা করবেন না।

বর্ষণের কথায় বর্ষা ছাড়া বাকিরা শব্দ করে হেসে ওঠে। বর্ষা তো লজ্জায় গুটিসুটি মেরে বসে আছে।

নদীঃ বর্ষণ ভাইয়া আমার কিন্তু স্পেশাল গিফট চাই। আমায় কথা দিয়েছিলেন।আপনার এসবের পেছনে কিন্তু আমিই আছি..
#তুই_শুধু_আমার_ভালোবাসা
#Hridita_Hridi
#পর্ব৩৪(শেষ পার্ট)

নদীর এমন কথা শুনে বর্ষণ হাসতে হাসতে বলে সেটা আর মনে করিয়ে দিতে হবেনা। অবশ্যই তোমার জন স্পেশাল গিফট আছে। আর একটা নয় দু দুটো গিফট পাবে তুমি।

সাগর বর্ষণের কথা শুনে একটু অভিমানি কন্ঠে বলে হুম যতো হেল্প তো শালীকাই করেছে বন্ধু তো কিছু করেনি!

ওদের এমন কথা শুনে বর্ষণ বলে হুম সব কিছু তোরাই করেছিস। আমি এই মাত্র এন্ট্রি নিলাম।
বর্ষণের কথা শুনে রাফসান, ঈশিতা আর নদী হাসতে থাকে, আর বর্ষা কিছু না বুঝে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। সাগর কোমরে হাত দিয়ে ইনোসেন্ট মুখ করে তাকিয়ে আছে সবার দিকে।

বর্ষণের রুম থেকে বের হয়ে রাফসান রোহিতকে ফোন করে।রোহিত- ঋতু নিপুর সাথে গিয়েছে। সেখানে সবুজকে কি কি বিপদে ফেলেছে সেটা শুনতেই ফোন দিয়েছে। রাফসান রোহিতের সাথে কথা বলতে বলতে নিচে চলে আসে। রাফসানের পিছে পিছে সবাই নিচে চলে আসে।

সবাই রুম থেকে বের হওয়ার পরে বর্ষা বেড থেকে নামতে যাবে, একচুুয়েলি এতো ভারি গহনা শাড়ি নিয়ে অসস্থিতে আছে বর্ষা। তাই চেঞ্জ করতে হবে, তখনই বর্ষণ ওকে কোলে তুলে নেয়। বর্ষণকে এভাবে কোলে নিতে দেখে বর্ষা বলে কি করছো কি নামাও। একটু কড়া গলায় বর্ষা বলে, কোলে করে এ বাসায় আনতে বলেছিলাম কিন্তু সবসময় কোলে নিয়ে ঘুরতে বলিনি নামিয়ে দাও আমায়।

বর্ষার এমন কথা শুনে বর্ষণ বলে বাব্বাহ মাত্র কয়েক ঘন্টায় এতোটা পরিবর্তন! গুড গুড!
বর্ষণের কথায় বর্ষা আর কোন জবাব দিলোনা। বর্ষণ তার পরীকে নিয়ে গিয়ে বেলকনিতে বসায়।

বর্ষা তো বেলকনিতে গিয়ে অবাক হয়ে যায়। আবছা আলোতেও পুরো বেলকনিটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে । অনেক সুন্দর করে সাজানো হয়েছে বেলকনিটা। একপাশে ফুলের টব রাখা আছে সারি সারি।সেখানে বর্ষণ আর বর্ষার পছন্দের সব ফুলের গাছ। ফুলের সুন্দর ঘ্রাণে মৌ মৌ করছে চারপাশটা।ফুল দিয়ে পুরো ব্যালকনি সাজানো হয়েছে। টাইসের উপর বড় করে লাভ শেপ করে ফুল দিয়ে সাজানো। মাঝে গোলাপের পাপড়ি দিয়ে লেখা ” শ্রাবণের মেঘ”।

বর্ষা তো এসব দেখে অবাকের চরম সীমায় পৌঁছে গিয়েছে।
বর্ষণ, বর্ষার হাতে সেই ডায়েরি টা তুলে দেয়। যেটার প্রতিটি পাতা তার পরীকে নি লেখা। যার প্রতিটা শব্দে আছে ভালোবাসার ছোঁয়া। তার মেঘুপাখির পছন্দ, অপছন্দ, ভালোলাগা মন্দ লাগা সব কিছুই লেখা আছে এখানে!

বর্ষণ ডায়েরি টা বর্ষার হাতে দিয়ে বলে, এটা যদি আগেই খুলে দেখতিস তাহলে, শাফিন কখনোই এসব করার সাহস পেতোনা।

ডায়েরির কয়েকটা পাতা পড়েই বর্ষার চোখ বড় বড় হয়ে যায়। ধ্যান ভাঙে বর্ষার।
সে বর্ষণকে উদ্দেশ্য করে বলে তু তুমি এটা কোথায় পেলে! এটা তো তোমার পাওয়ার কথা নয়!

বর্ষণ ঠোঁট বাকিয়ে হেসে বর্ষার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে ভালোোবাসি তোকে বুঝেছিস তুই! ভালোবাসি তোকে! তুই কি করিস কোথায় যাস সব কিছু আমার জানা। কথাটা বলেই সোজা হয়ে দাঁড়ায় বর্ষণ।
চব্বিশ ঘণ্টা তুই আমার এখানে থাকিস(বুকের বাম পাশে হাত দিয়ে কথাটা বলে বর্ষণ)। সেই ছোট্ট বেলা থেকে আমার পরীটাকে আমি দেখে আসছি। তার প্রতিটা কথা প্রতিটা পদক্ষেপ আমার জানা।

প্রথম দিন ভার্সিটি থেকে আসার পরে তোর থেকে তোর ফোন টা নিয়েছিলাম মনে আছে তোর?
সেদিন তোর ফোন নিয়ে তেমন কিছু করিনি জাস্ট নদীর কন্টাক্ট নম্বর টা নিয়েছিলাম আর তোর আইডি পাসওয়ার্ড টা নিয়েছিলাম।

প্রতিদিন ঘুমানোর আগে তোর আইডি চেক দিতাম আমি। তবে হ্যা তুই কারো সাথে কথা বলিস কি না সেটা দেখার জন্য নয়। তোকে কেউ বাজে কথা বলে কি না। অযথা কেউ নক করে কি না সেটা জানার জন্য।
কারণ আমার কলিজাকে কেউ ডিস্টার্ব করুক সেটা আমি কখনোই চাইনি।

আর নদীর থেকে তোর সারাদিনের খোঁজ খবর নিতাম। নবীনবরণের বিষয়টাও নদীই আমায় বলেছিল।সে জন্যই সকল কাজ গুছিয়ে দুদিন আগেই দেশে ফিরে এসেছিলাম।
আমার পরীকে আমি অন্যের সাথে সহ্য করতে পারি না। আমার বুকে খুব কষ্ট হয়, কলিজায় লাগে।

আবার শাফিনকে নিয়ে যে তোকে বকাঝকা করেছিলাম ভুল বুঝেছিলাম সে ভুলটাও নদীই ভেঙে দিয়েছিল।বলেছিল যাকে ভালোবাসেন তাকে এতোটুকুও বিশ্বাস করতে পারলেন না!
নদীই হলো আমাদের সেই শুভাকাঙ্ক্ষী।

বর্ষণের কথা শুনে বর্ষা হা হয়ে যায়।বর্ষণকে বললো কই পেতনী টা তো কখনো এসব বলেনি আমায়! অবশ্য আমার সন্দেহ হয়েছিল ওর ওপর। আমরা কোথায় যাই কি করি সেটা ও জানতো কি করে।

বর্ষণঃ হুম, ম্যাম সেটা আপনার বর ই জানাতো। বলেই এক চোখ টিপে দুষ্টু একটা হাসি দেয়। বর্ষণ হাত বাড়িয়ে দেয় বর্ষার দিকে বর্ষা হাত ধরে উঠে দাঁড়ায়।

একটা লাল গোলাপ নিয়ে বর্ষার খোঁপায় গুঁজে দিয়ে বলে পরীকে সবসময় ফুলেতেই মানায়।

হঠাৎ বর্ষণ বর্ষার সামনে এক হাঁটু মুড়ে বসে বর্ষার হাতটা টেনে আঙুলে একটা রিং পরিয়ে দেয়। ওভাবেই বসে বর্ষণ বর্ষাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
ভালোবাসাকে কিভাবে বর্ণনা করা যায় আমি জানিনা। কবি সাহিত্যিক হয়তো তাদের কাব্যিক ছন্দে বিভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছে ভালোবাসার।
কিন্তু আমি এতো কিছু বুঝিনা, বুঝতে চাইও না। আমি শুধু জানি আমার ভালোবাসা মানে হলো তুই। আমার চারপাশ ঘিরে শুধু তুই, আমার মনের রাজ্য জুড়ে শুধু তোর আনাগোনা, সেখানে শুধু তোরই রাজত্ব।আর তোর চারপাশটা ঘিরে শুধু আমার অস্তিত্ব, তোর মনে শুধু আমারই রাজত্ব।

বর্ষা বর্ষণের হাত ধরতেই বর্ষণ উঠে দাঁড়ায়। বর্ষণ উঠে বর্ষার কোমর জরিয়ে ধরে এক টানে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। আচমকা এমন হওয়ায় বর্ষা চোখমুখ খিঁচে বন্ধ করে আছে।বর্ষণ বর্ষার এতোটাই কাছে চলে এসেছে যে বর্ষণের গরম নিশ্বাস পরছে বর্ষার চোখমুখে।

বর্ষণ ধিরে ধিরে মুখটা বর্ষার কানের কাছে নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,তোকে বড্ড ভালোবাসি রে কলিজা।#তুই_শুধু_আমার_ভালোবাসা তোকে ছাড়া একটা মুহূর্ত ও আমি থাকতে পারবো না। আমি তোর জন্য নয় নিজের জন্যই তোকে চাই। শ্রাবণের আকাশে এই মেঘটাকে খুব প্রয়োজন। জানপাখি,একবার বলনা তুই শুধু আমার ভালোবাসা।

বর্ষা এতোক্ষণ ধরে স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। কারণ বর্ষণের কথাগুলো তাকে বাকরুদ্ধ করে দিয়েছে। একটা মানুষ কি করে একজনকে এতোটা ভালোবাসতে পারে তা বর্ষার অজানা। বর্ষার চোখের কোণ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পরে। এটা দুঃখের কান্না নয়, আনন্দের অশ্রু।বর্ষণের গাল ভেজা অনুভব করতেই বর্ষণ বর্ষার কানের পাশ থেকে মুখ সরিয়ে বর্ষার দিকে তাকাতেই বর্ষা বর্ষণের দুই গালে হাত দিয়ে মাথাটা নিজের দিকে ঝুকিয়ে বর্ষণের কপালের সাথে নিজের কপাল এক করে দিয়ে বলে ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি। খুব বেশি ভালোবাসি।আমি চাই আমার পাগলটা সবসময় এমন করেই আমায় ভালোবাসুক। সবসময় আমায় আগলে রাখুক আমার পাশে থাকুক।

বর্ষার কথায় বর্ষণ যেন আকাশের চাঁদটাকে হাতে পেলো।খুশিতে বর্ষার কপালে একটা ভালোবাসার পরশ এঁকে দিয়ে বর্ষাকে জরিয়ে ধরে। বর্ষাও দুহাতে জরিয়ে ধরে তার ভালোবাসার মানুষটাকে।

মাঝরাত রুমে যেতে হবে। বর্ষাকে নিয়ে রুমে যাবে তার আগেই বর্ষা বলে আমার একটা কথা আছে।
বর্ষণ বলে, বলো কি বলতে চাও।

বর্ষাঃ যতোদিন তৃতীয় কেউ না আসে ততোদিন ধরে প্রতিদিন তুমি আমায় কোলে নিয়ে বেলকনিতে আসবে আবার কোলে নিয়ে বেডরুমে যাবে।
বর্ষার বলতে দেরি বর্ষণের বর্ষাকে কোলে তুলতে দেরি হয়নি।বর্ষা তো অবাক হয়ে বর্ষণের গলা জরিয়ে বর্ষণের দিকে তাকিয়ে আছে। বর্ষণ চোখ দিয়ে ইশারা করে বর্ষাকে বাইরে তাকেতে বলে। বর্ষা বাইরে তাকাতেই হা হয়ে গেল।
বাইরে রংবেরঙের আতশবাজির ঝলক।তার মাঝে বড় বড় করে লেখা ভেসে ওঠে..
Congratulations

লেখাটা মুছে যেতেই আবার ভেসে ওঠে..
May your married life be happy 💕

সবশেষে ভেসে ওঠে
Happy Ending

_______সমাপ্ত_______

(

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here