তোমাকে চাই পর্ব -০৯

#গল্পের_নাম_তোমাকে_চাই
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ৯
অধরা বাসার বাহিরে পা রাখতেই কেউ তার হাত পিছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো অধরা মনটা আনচান করে উঠলো।সে পিছন ফিরে দেখলো রক্তিম দাড়িয়ে আছে তার হাত ধরে অধরা এবার রেগে গিয়ে বললো,
~আপনি তো দেখছি বড্ড অসহ্য লোক এভাবে হাত ধরে দাড়িয়ে আছেন কেন?
রক্তিম বাঁকা হেসে বললো,
~আমার ইচ্ছা হয়েছে তাই।
অধরা বললো,
~অনেক নাটক দেখিয়েছেন আর কোনো নাটক আমি দেখতে চাই না।
তৈয়ব হোসেন বললেন,
~রক্তিম,এখন কিন্তু অনেক হয়ে যাচ্ছে তুমি তো ছোট বাচ্চা নও যে জেদ ধরে বসে আছো আশেপাশের লোক দেখছে।
রক্তিম ভাবলেশহীন ভাবে বললো,
~তাতে আমার কিছু যায় আসে না চাচা।আপনি ভালো মতো জানেন আমি মানুষদের কথা কানে নেই না।
পৃথুলা এগিয়ে এসে বললো,
~অধরার কথা তো কানে নেও সে কী বলেছে শুনোনি?
রক্তিম বললো,
~আমি ঠিক শুনেছি আর কে তাকে এসব বলিয়েছে তাও জানি পৃথুলা তুই যদি হাজার চাল চালতে পারিস আমি কী একটা চাল চালতে পারবোনা?
পৃথুলা ঘাবড়ে গিয়ে বললো,
~কীসব আবোলতাবোল বলছো?আমি কী করেছি?
রক্তিম পৃথুলার কথা অগ্রাহ্য করে অধরাকে বললো,
~তুই এতো বোকা কেন?চাচা বাবার থেকে টাকা নিয়েছে তা ঠিক আছে কিন্তু সেই টাকার বিনিময়ে চাচীর সব গহনা বাবার কাছে আর শোন দোকান কোথাও যাবে না আমি তা গ্যারান্টি দিচ্ছি।
অধরা অবাক নয়নে রক্তিমের দিকে তাকিয়ে রইলো জোহোরা খাতুন মিনমিন করে বললেন,
~সব জলে ভেসে গেলো আমার।
অধরা বললো,
~তবুও আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবোনা।
রক্তিম শাওনের দিকে ইশারা করতেই সে মুচকি হেসে কোথাও চলে গেলো রক্তিম বললো,
~ঠিক আছে কোনো সমস্যা নেই।
তখনই রক্তিম অধরার হাত ধরে তাকে আচমকা কোলে তুলে নিলো এতে সবাই অবাক হয়ে গেলো শাওন ততক্ষণে গাড়ি নিয়ে হাজির। রক্তিম এক সেকেন্ডও দেরি না করে অধরাকে গাড়িতে তুলে নিলো শাওন ধুম সে গাড়ি চালাতে শুরু করলো চোখের পলকে ধুলোয় মিশে গেলো গাড়িটা সবাই অবাক নয়নে সেখানে দাড়িয়ে রইলো।
রক্তিম অধরাকে কোলে নিয়েই গাড়িতে বসে আছে তা দেখে শাওন মিটমিট করে হাসছে অধরা এখনো অবাক হয়ে আছে।রক্তিমের কথায় তার ধ্যান ভাঙ্গলো রক্তিম বললো,
~শাওন,সামনে শওকত আছে ওকে গাড়িতে তুলে নিস।
অধরা এবার চিল্লিয়ে বললো,
~আপনি একটা খারাপ লোক।আমাকে দিয়ে আসেন মায়ের কাছে।
রক্তিম অধরাকে পাশের সীটে বসিয়ে দিয়ে বললো,
~বিয়ে হবে তারপর যাবে।
অধরা বললো,
~বিয়ে করবোনা কেন করবো আপনাকে বিয়ে?
রক্তিম শাওনকে বললো,
~শাওন তুই একটা গাড়টা সাইড করে রাখ আর শওকত কাছেই আছে ওর সাথে গিয়ে কথা বল।
শাওন মুচকি হেসে বললো,
~ok bro.
শাওন গাড়ি থেকে নামতেই রক্তিম অধরাকল বুকের সাথে মিশিয়ে বললো,
~আমি তো জানি আমি খারাপ কোনো ভালো গুন আমার নেই সেই খারাপ আমি টাকেই তো তুই ভালোবাসিস।
অধরা রক্তিমের শার্ট চোখের পানিতে ভিজিয়ে দিলো রক্তিম বললো,
~তুই কী মনে করিস আমি সব ভুলে গেছি সেই ছোটবেলায় যখন দাদী বলতো তুই আমার বউ হবি তখন তুই লজ্জা পেয়ে চাচীর শাড়ির আঁচল ধরে দাড়িয়ে থাকতি।আমি তো সেসময় থেকে নিজেকে তোর বর মেনে নিয়েছি তোর ডাইরির প্রতিটা ভাজে আমি তাও আমি জানি।আমাকে তুই এতোও বোকা ভাবিস না সময়ের সাথে সাথে আমরা বড় হয়েছি কিন্তু আমাদের অনুভূতি সেই একই আছে। কী এখনো আমার দূরে ঠেলে দিবি?আমি তোকে ওয়াদা করছি সব ঠিক করে দেবো একবার আমাদের বিয়েটা হয়ে যাক তারপর সব ঠিক করে দিবো।
রক্তিম কথা বলা শেষ করে অধরার দুবাহুডর ধরে বললো,
~ঠিক আছে আমি তোকে বাসায় দিয়ে আসবো কিন্তু মনে রাখবি আর কোনো দিন এই রক্তিম হোসেনের চেহারা দেখতে পারবিনা।
বলেই রক্তিম গাড়ি থেকে নামতে নিবে তখনই অধরা রক্তিমের শার্ট খামচে ধরে বললো,
~আমারও সব মনে আছে কিন্তু বড় চাচী আমাকে মেনে নিবে না।
রক্তিম অধরাকে আবার জড়িয়ে ধরে বললো,
~বলেছিনা সব ঠিক করে দিবো ভরসা রাখ আমার উপর।
অধরা রক্তিমকে দুহাতে জড়িয়ে ধরলো রক্তিম অধরার চুলে ঠোঁট ছুঁইয়ে বললো,
~ভালোবাসি প্রেয়সী ❤️❤️।
অধরা রক্তিমের বুকে মুখ গুজে বললো,
~আমিও ❤️।
রক্তিম মুচকি হেসে অধরার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।

_________________♥_________________

অধরা,রক্তিম,শাওন,শওকত এখন দাড়িয়ে আছে কাজী অফিসের সামনে অধরা রক্তিমের হাত শক্ত করে জড়িয়ে রেখেছে।শাওন বললো,
~ভাইয়া সব ব্যবস্থা হয়ে আছে কাজটা শেষ করে নেও।
রক্তিম বললো,
~তা তো করবোই।
শাওন তার ফোনের দিকে তাকিয়ে বললো,
~এই ইরাটা আমায় পাগল তুলে করেছে কখন থেকে ফোন করছে যেমন লাগছে ওর বিয়েতে ওকে দাওয়াত দেয়নি।
শওকত বললো,
~এভাবে বলোনা বেচারী ছোট মানুষ।
শাওন তার এক ভ্রু উঠিয়ে বললো,
~আজকাল ইরার হয়ে তুমি অনেক কথা বলছো ব্যাপারটা ভালো ঠেকছে না।
শওকত আমতা আমতা করে বললো,
~ধূর মিয়া তুইও কী বলছিস?ওই দেখ ফারাবি আর মাহদিও এসে পরেছে
শাওন সামনে তাকিয়ে দেখলো আসলেই ফারাবি আর মাহাদি এসে পরেছে।রক্তিম আর অধরা কাজীর সামনে বসে আছে কিছুমুর্হূতের মধ্যেই তাদের বিয়ের কার্যক্রম সম্পন্ন হলো অধরা একবার রক্তিমের দিকে তাকালো রক্তিম অধরার হাত শক্ত করে ধরে তাকে বললো,
~আমরা আজ বাসায় যাবো না ফারাবির ফার্ম হাউসে থাকবো।
অধরা বললো,
~বাবা- মা?
রক্তিম বললো,
~তাদের শাওন সব বলে দিবে আগামীকাল আমরা বাসায় যাবো।
অধরা আর কিছু বললো না চুপচাপ গাড়িতে বসে পরলো রক্তিম তার পাশে বসে পরলো শাওন তাদের র্ফাম হাউসে রেখে বাসায় চলে গেলো।
ফারাবি রক্তিমকে ফার্ম হাউসের চাবি দিয়ে বললো,
~আমি খাবার রান্নাঘরে রেখেছি আর শোন তোর জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে দেখলে খুশি হবি।
রক্তিম কিছু বলবে তার আগেই ফারাবি চলে গেলো রক্তিম চাবি দিয়ে গেইট খুললো তারা ভিতরে ডুকলো রক্তিম অধরাকে বললো,
~তুমি ফ্রেশ হয়ে নেও রুম ওইদিকে।
অধরা বললো,
~আপনি আমাকে তুমি কেন বলছেন?
রক্তিম বললো,
~গাধী তুমি আমার বউ এখন কেন তুই করে বলবো?
অধরা মুখ ফুলিয়ে বললো,
~বউকে কেউ গাধীও বলে না।
রক্তিম হেসে অধরার গালে ঠোঁট ছুইয়ে দিতেই অধরা গালে হাত দিয়ে রক্তিমের দিকে তাকিয়ে রইলো।রক্তিম বললো,
~রুমে তোর সব প্রয়োজনীয় জিনিস রাখা আছে ফ্রেশ হয়ে নে।
অধরা রুমের দরজা ঠেলে ভিতরে ডুকতেই তার চোখ ছানাবড়া পুরো রুম ফুল দিয়ে সাজানো বিছানায় হার্ট শেপ ফুল দিয়ে সাজানো।অধরা রুম থেকে বের হয়ে আসলো সে দৌড়ে রুম থেকে রক্তিমের কাছে চলে আসলো।হাপিয়ে হাপিয়ে বললো,
~রুমে এসব কী সাজিয়েছেন?
রক্তিম ভ্রুকুচকে বললো,
~কী সাজিয়েছি মানে?
অধরা বললো,
~সবই তো করে রেখেছেন আগে থেকে।

________________♥________________

রক্তিম বললো,
~চলো দেখে আসি কী সাজিয়েছি আমি?
অধরা বললো,
~আপনি যান।
রক্তিম মাথা চুলকে রুমের দিকে হাঁটা ধরলো দরজা ঠেলে ভিতরে ডুকতেই রক্তিমের মুখ হা হয়ে গেলো রক্তিমের বুঝতে বাকি রইলো না এসব কে করেছে।রক্তিম কার্বাড থেকে অধরার সব জিনিসপত্র নিয়ে অধরার কাছে চলে গেলো অধরা সেখানেই দাড়িয়ে আছে।রক্তিম অধরার হাতে সব দিয়ে বললো,
~অন্য রুমটায় চলে যাও আমি সব পরিষ্কার করে দিচ্ছি।
অধরা আর কোনো কথা না বলে অন্য রুমে চলে গেলো।রক্তিম দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ঝাড়ু হাতে নিয়ে কাজে লেগে পরলো আর মনে মনে ফারাবিকে গালি দিতে লাগলো তার জন্য বিয়ের প্রথম দিন ঘর ঝাড়ু দিতে হচ্ছে।
শাওন বাসায় পৌছে সবাইকে সব বলে দিয়েছে শাওনের কথা শুনে জোহোরা খাতুন মাথায় হাত দিয়ে বসে পরলো।পৃথুলা ঘর বন্দি হয়ে বসে রইলো আইয়ুব হোসেন বললেন,
~যা হয়েছে তা নিয়ে কথা বলে লাভ নেই রক্তিম কোথায়?
শাওন বললো,
~আগামীকাল চলে আসবে।
তৈয়ব হোসেন বললেন,
~কালকে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারবোনা শাওন।আমার মেয়ে কোথায়?
শাওন বললো,
~চিন্তা করবেন না চাচা অধরা ঠিক আছে।
পুরো বাসায় নিস্তব্ধতা ছেয়ে পরেছে সবাই চুপচাপ হয়ে গেছে।ইরা শাওনের ঘরে গিয়ে বললো,
~ভাইয়া আমাকে কেন বাদ দিলে?
শাওন বললো,
~সবকিছু তাড়াহুড়া করে করা হয়েছে তাই আর কী।
ইরা বললো,
~অবশেষে তাদের বিয়েটা হয়ে গেলো আমি অনেক খুশি।
শাওন বললো,
~আমিও।
রক্তিম ঘর পরিষ্কার করে ফোন নিয়ে ফারাবিকে কল করে আচ্ছা মতো ঝেড়ে রুমে আসতেই অবাক হয়ে গেলো। অধরা আয়নার সামনে দাড়িয়ে আছে হালকা গোলাপী রঙ্গের ড্রেস পরেছে সে তাকে দেখতে একদম একটা তড়তাজা ফুলের মতো লাগছে।
অধরার নজর আয়নায় পরতে সে দেখতে পেলো রক্তিম তার দিকে তাকিয়ে আছে অধরা নিচু স্বরে বললো,
~খাবার কী রান্না করতে হবে?
রক্তিমের ধ্যান ভেঙ্গে গেলো সে বললো,
~নাহ ফারাবি দিয়ে গেছে টেবিলে রাখা আছে।
অধরা বললো,
~রাত অনেক হয়েছে খাবার খেয়ে শুয়ে পরি।
রক্তিম বললো,
~অবশ্যই।
অধরা আর রক্তিম খাওয়া শেষ করে রুমে চলে আসলো অধরা বিছানায় গুটিশুটি হয়ে শুয়ে পরলো রক্তিম সোফায় শুয়ে পরলো।

_________________♥_______________

তাদের মধ্যে আলাদা এক জড়তা কাজ করছে কী যেন তাদের বাঁধা দিচ্ছে।অধরার ঘুম আসছেনা সে এপাশ ফিরে দেখলো রক্তিম তার দিকে তাকিয়ে আছে।দুজনই অপ্রস্তুত হয়ে পরলে রক্তিম বললো,
~তোমার ঘুম আসছেনা?
অধরা বললো,
~বাসার কথা মনে পরছে?
রক্তিম বললো,
~বাসার কথা মনে পরছে কেন?তুমি তো খুব সুন্দর বাসা থেকে বের হয়ে গিয়েছিলে।
অধরা বললো,
~সেসময় তো রেগে ছিলাম তাই।
রক্তিম বললো,
~চন্দ্রবিলাস করবে?বারান্দা থেকে চাঁদটা খুব সুন্দর দেখা যায়।
অধরা বললো,
~ঠিক আছে।
দুজনই বারান্দায় গিয়ে দাড়ালো রক্তিম বললো,
~গান হলে মন্দ হয় না।
অধরা বললো,
~রুপকথার জগতে গানটা আমার খুব পছন্দ।
রক্তিম মুচকি হেসে তার ফোনে “রুপকথার জগতে” গানটা ছেড়ে দিলো অধরা গানের সাথে গুনগুন করছে আর চাঁদের দিকে তাকিয়ে রক্তিম তার দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে।
পৃথুলা রোকেয়া হোসেনকে ফোনে বলছে,
~মা,তুমি তো বলেছিলে সব তোমার প্ল্যান অনুযায়ী হচ্ছে তাহলে এটা কীভাবে হলো?
রোকেয়া হোসেন বললো,
~তুই চিন্তা করিস না মা আমি কাল সকালেই আসছি।
পৃথুলা বললো,
~সব শেষ হয়ে গেছে এখন এসে কী করবে?
বলেই সে খট করে ফোন রেখে দিলো বালিশে মুখ গুজে শুয়ে পরলো।
জোহোরা খাতুন কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললো,
~এখন কী হবে?আপনি রোকেয়া আপাকে কী জবাব দিবেন?
আইয়ুব হোসেন বললেন,
~আহা আমি কী ওদের নিজ ইচ্ছায় বিয়ে দিয়েছে রক্তিম নিজ ইচ্ছায় বিয়ে করেছে তুমি এতো ভেবো না তো।ঘুমাও আর ঘুমাতে দেও
জোহোরা খাতুন বিড়বিড় বললেন,
~অনেক বড় তুফান আসছে যা সবকিছু লন্ডভন্ড করে দিবে।আমাদের ধ্বংস দেখছি আমি

চলবে

(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন।ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো 🥰🥰।Happy Reading 🤗🤗)

(আমাকে এতো এতো বকা দিয়েছেন তাই তাদের বিয়েটা দিয়েই দিলাম এখন চকলেট দিয়ে যাবেন তাদের বিয়ের খুশিতে😊😊)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here