#গল্পের_নাম_তোমাকে_চাই
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ১৪
আইয়ুব হোসেন নিজ ঘরে বসে চিন্তা-ভাবনায় ব্যস্ত জোহোরা খাতুন ঘরে এসে বিছানায় বসে বললেন,
~যা করেছেন তা একবার রক্তিম জানলে সব শেষ করে দিবে আপনার।
আইয়ুব হোসেন নিজ স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললেন,
~ছেলে আমার গুনও সব আমার কিন্তু আফসোস বুদ্ধিটা একটু কম।
জোহোরা খাতুন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন,
~আমার ছেলে লোভী না মানবতা তার মধ্যে আছে।
আইয়ুব হোসেন বললেন,
~তা তো দেখতেই পাচ্ছি।অধরা কত কিছুর মালিক তুমি জানো?
জোহোরা খাতুন ভ্রুকুচকে বললেন,
~আপনি কী কোনোদিন বলেছেন আমায়?
আইয়ুব হোসেম স্মিত হেসে বললেন,
~বাবা মারা যাওয়ার আগে এই কাজটা না করে যেতেন তাহলে হয়তো আজ আমার মনে তার জন্য কোনো ক্ষোভ থাকতো না।
জোহোরা খাতুন বললেন,
~আপনাকে কে তো বাবাজান ঠকিয়ে জাননি সব দিয়ে গেছে।
আইয়ুব হোসেন ঠান্ডা মাথায় বললেন,
~জোহোরা পরম প্রিয় স্ত্রী আমার, বাবা অধরাকে গ্রামের সব জমি লিখে দিয়েছে এবং কী আমাদের যে ফ্যাক্টরি আছে তাও অধরার নামে।আর শোনো অধরা যদি মারা যায় তাহলে এসব চলে যাবে এতিম খানায়। কিন্তু যদি অধরা নিজ ইচ্ছা শেচ্ছায় কাউকে এই সব সম্পত্তি দিয়ে দেয় তাহলে সে পারমানেন্ট মালিক হয়ে যাবে।আমি আজ তাই করতে চেয়েছিলাম চুপিসারে সব কিছু আমার নামে করে নিয়ে ওই মেয়েটাকে গলা টিপে মেরে ফেলতাম।কারণ ওই মেয়ের জন্য আমার বাবা আমাকে চড় মেরেছিল তুমি হয়তো জানোনা বাবা মৃত্যুর কিছুদিন আগে সবকিছুর দলিল করে ফেলেছিল তখন আমি সব জেনে যাই বাবাকে জিজ্ঞেস করলে সে একটা উত্তর দেয় এটা অধরার পাওনা।তাহলে আমি কেন এতো কম পাবো তাই প্ল্যান করেছিলাম অধরাকে মেরে ফেলবো।
জোহোরা খাতুন এক নজরে স্বামীর দিকে তাকিয়ে আছে এতোটা অমানুষ কীভাবে হলো সে?কিছু সম্পত্তির জন্য এতো নিচে ছিহ।আইয়ুব হোসেন বললেন,
~তোমার মনে আছে আমরা গ্রামে গিয়েছিলাম বাবার মৃত্যুর চারদিন আগে সেখানেই অধরা পানিতে পরে গেছিলো।সে পা পিচলে পরে যাইনি আমি তাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছিলাম।কিন্তু তৌহিদ ওকে বাঁচিয়ে ফেলেছিলো সেদিন রাতে বাবা আমাকে তার কক্ষে ডেকে নিয়ে যায় আর সেখানে জানতে পারি বাবা সব জেনে গেছে আমাকে থাপ্পড় মেরে বলেছিল, অধরা থেকে দূরে থাকতে। ওইদিন কিছু না বললেও আমি সব প্রতিজ্ঞা করেছিলাম অধরা এই দুনিয়ায় আর থাকবেনা।
জোহোরা খাতুন কাঁদতে কাঁদতে বললেন,
~আপনার পায়ে পরি এসব ভুলে যান সংসারে আর অশান্তি করবেন না।
আইয়ুব হোসেন বললেন,
~একজন মরলে কোনো কিছু যায় আসেন আর রক্তিমকে সুন্দরী একটা মেয়ে বিয়ে করালে সে ভুলে যাবে অধরাকে।
রক্তিম অধরার চুল মুছে দিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলো।রক্তিম বললো,
~ক্ষুধা লেগেছে?
অধরা বললো,
~নাহ।
রক্তিম অধরার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
~দুপুরে কিছু খেয়েছিস? আমি খাবার খাইয়ে দিবো টেবিলে রাখা আছে।
অধরাকে ছেড়ে দিয়ে রক্তিম খাবার প্লেট নিয়ে এসে পরলো তার কাছে অধরা বসে পরলো। রক্তিম খাবার অধরার মুখে পুরে দিলো অধরা ছোট্ট মেয়ের মতো খাবার শেষ করলো।রক্তিম প্লেট রেখে হাত ধুইয়ে বললো,
~তোমার পরীক্ষা শেষ তাই আমি ভাবছি কিছুদিনের জন্য তুমি নানা বাড়ি থেকে ঘুরে আসো সঙ্গে আমি,শাওন,ইরা,প্রিয়া আর রায়হানও যাবে।
অধরা বললো,
~ওদের সাথে আরেকজনও ছিল রক্তিম।
রক্তিম অক্ষীযুগল উঠিয়ে অধরার দিকে তাকালো অশ্রুসিক্ত নয়নে অধরা তার দিকে তাকিয়ে আছে।রক্তিম অধরার বাহুডর ধরে বললো,
~সেই তিন নম্বর মানুষটাকে আমি অবশ্যই খুজে বের করবো অধরা।বিশ্বাস রাখ আমার উপর
অধরা বললো,
~আমি চাই সেই ব্যক্তিটাকে দেখতে এতো কাছের মানুষ আমাকে ধোঁকা দিচ্ছে।
___________♥___________
প্রিয়া রায়হান চলে এসেছে সকালবেলায় সবাই রেডি হয়ে গেছে ব্যাগ নিয়ে অধরার নানু বাসায় যাওয়ার জন্য। অধরার নানুবাসা গাজীপুর তাই তারা জলদি বের হচ্ছে শাওন শওকতকে ফোন করে আসতে বলেছে যাতে সেও যেতে পারে।রক্তিম আর অধরা ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে আসলো রুম থেকে।রক্তিম শওকতকে দেখে বললো,
~তুই এখানে?
শওকত বললো,
~শাওন আসতে বললো তোদের জয়েন করতে তাই এসে পরলাম।
রক্তিম এক গাল হেসে বললো,
~ঠিল আছে।সবাই রেডি তো?
তখনই পিছন থেকে জোহোরা খাতুন বলপ উঠলেন,
~রক্তিম তোর সাথে কথা আছে।
রক্তিম পিছন ফিরে মায়ের দিকে তাকালো রক্তিম জোহোরা খাতুনের কাছে গিয়ে দাড়ালো আর বললো,
~কী হয়েছে মা?
জোহোরা খাতুন বললেন,
~অধরাকে একা ছাড়বিনা ওর সাথে সাথে থাকবি আর শোন আমি কালকে সেখানে পৌছে যাবো তোর চাচীর সাথে।আজ যেতে চেয়েছিলাম তোর নানীর শরীর ভালো না তাই যেতে পারছিনা তাকে দেখে তারপর যাবো।
রক্তিম একটু অবাক হলো কিন্তু মুখে কিছু না বলে হালকা হেসে বললো,
~আমি দেখে রাখবো মা।
সবাই বাসা থেকে বের হয়ে আসলো জোহোরা খাতুন দোয়া করলো যাতে তার বাচ্চারা সহিসালামত বাসায় ফিরে আসে।গাড়িতে সবাই বসে পরলো রক্তিম অধরার পাশে বসে পরলো শওকত গাড়ি ড্রাইভ করছে তার পাশে আজ ইরা বসেছপ।আড়চোখে সে ইরাকে দেখে যাচ্ছে ইরা তা খেয়াল করে বললো,
~আপনি কী আমায় কিছু বলবেন শওকত ভাইয়া?
শওকত অনেকটাই হকচকিয়ে উঠলো সে আমতা আমতা করে বললে,
~নাহ তোমার সাইডের দৃশ্য অনেক সুন্দর তাই খেয়াল করলাম।
ইরা আর কিছু বললোনা শুধু শওকতের বোকা টাইপ কথা শুনে মুখ টিপে হাসলো। অধরা রক্তিমের কাঁধে মাথা রেখে বাহিরের দৃশ্য দেখছে রক্তিৃ চিন্তিত জোহোরা খাতুনের কথা শুনে আর কে সেই মানুষ যে অধরাকে কষ্ট দিচ্ছে তার ক্ষতি করতে চায়।
অধরা শীতল কন্ঠে বলে উঠলো,
~আমাকে যদি ওরা মেরে ফেলতো আজ আমি আপনার সাথে থাকতাম না।
রক্তিমের বুকটা কেঁপে উঠলো অধরার কথা শুনে সে অধরার হাত শক্ত করে ধরে বললো,
~এসব অলুক্ষুনে কথা বলবেনা অধরা।আমি কিন্তু হাত উঠিয়ে ফেলবো।
রক্তিমের কথা শুনে অধরা আর কিছুই বললোনা সে চুপচাপ হয়ে বসে রইলো।প্রিয়া রায়হানের পাশে বসে আছে রায়হান গেইম খেলতে ব্যস্ত তাই প্রিয়া বললো,
~সারাক্ষন গেইম গেইম আর কিছু আছে আপনার বউয়ের দিকে তাকাতে আপনার কী লাগবে বলুন তো?
রায়হান ফোন থেকে মাথা তুলে বললো,
~তাকালাম কী বলবে বলো?
প্রিয়া বললো,
~একটা কথা বলার আছে।
রায়হান বললো,
~বলো।
প্রিয়া বললো,
~আই’ম প্রেগন্যান্ট।
রায়হান চোখ বড় বড় করে প্রিয়ার দিকে তাকালো প্রিয়া হালকা হেসে বললো,
~গাধা এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?
রায়হান বললো,
~সত্যি?
প্রিয়া বললো,
~না মিথ্যা বলছি।
রায়হান বললো,
~সবাই জানে?
প্রিয়া বললো,
~মা জানে শুধু।
রায়হান বললো,
~ধন্যবাদ।আমি সবাইকে বলে আসি
রায়হান নিজ সীট থেকে উঠে চেচিয়ে বললো,
~আমি বাবা হবো আপনারা শুনেছেন আমি বাবা হবো।
প্রিয়া লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো অধরা আর রক্তিম অবাক হয়ে রায়হানের দিকে তাকিয়ে আছে।
শাওন বললো,
~বাহ বাহ ভাইয়া থেকে এখন মামা not bad.
________♥_________
অধরার নানুবাসায় পৌছাতে পৌছাতে বিকেল হয়ে পরলো গাড়ি থেকে বের হতেই অধরার বড় মামার সাথে দেখা পায়।অধরার বড় মামা এগিয়ে এসে রক্তিমের সাথে কুশলাদি করে বললেন,
~বাবারা তোমাদের জন্য আমরা অপেক্ষা করছি।তোমার মামী তো কতবার খোজ নিয়ে ফেলেছে।
রক্তিম বললো,
~আসলে মামা রাস্তায় জ্যাম ছিল তাই আসতে দেরি হয়ে গেছে।
অধরা বললো,
~মামা কেমন আছো?
অধরাকে দেখে অধরার বড়মামা বললেন,
~ভালো মা তোকে দেখে অনেক খুশি হয়েছে।
সবাই বাসার ভিতরে চলে গেলো অধরার ২মামা আর নানী এ বাসায় থাকে।ভিতরে ডুকে সবাই সোফায় বসে পরলো অধরার বড় মামী আর ছোট মামী এসে হাজির।তারা নাস্তা ট্রে টে সাজিয়ে নিয়ে এসেছে শাওন বললো,
~এটা একটা ভালো কাজ করেছেন মামীরা অনেক ক্ষুধা লেগেছে।
অধরা বললো,
~বড় মামী,নাদিয়া কোথায়?
বড় মামী হেসে বললেন,
~কোচিং গিয়েছে এসে পরবে।
ছোট মামী বললেন,
~তোমাদের জন্য রুম ঠিক করে রেখেছি শাওন আর শওকতের জন্য উপরের রুম ঠিক করেছি আর প্রিয়া আর রায়হান আমাদের রুমের পাশে থাকবে।আর রক্তিম আর অধরা এই রুমে থাকবে ইরা নাদিয়ার রুমে থাকবে।
রক্তিম বললো,
~তা ঠিক আছে আমরা ম্যানেজ করে নিবো।
তারা নাস্তা করে যে যার রুমে চলে গেলো অধরা বিছানায় শুয়ে পরলো তার শরীরটা ভালো লাগছেনা।রক্তিম অধরাকে শুয়ে থাকতে দেখে বললো,
~আজ রাতে ছাদে পার্টি হবে এখানের পরিবেশটা কতো সুন্দর দেখেছো।আমরা ইনজয় করবো মজা করবো
অধরা কিছু বললো না চুপ করে শুয়ে রইলো রক্তিম অধরার পাশে এসে অধরার হাতটা টেনে তাকে উঠিয়ে দিয়ে বললো,
~অধরা,এভাবে বেপোরোয়া ভাব দেখাবে না আমি সবসময় থাকবোনা তোমাকে সামলানোর জন্য।
অধরা রক্তিমের কথা শুনে বললো,
~এভাবে কেন বলছেন?আপনাকে আমি কোথাও যেতে দিবোনা।
বলেই সে রক্তিমকে জড়িয়ে ধরলো রক্তিম দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে অধরার চুলে হাত বুলিয়ে দিলো।
________♥__________
শাওন বাড়ি থেকে একটু দূরে এসে সিগারেট ফুঁকছে তখনই বোরখা পরা এক যুবতী শাওনের সামনে এসে দাড়িয়ে বললো,
~আপনি সিগারেট খাওয়া শিখে গেছেন?
শাওন বোরখা পরো যুবতীর দিকে তাকিয়ে বললো,
~আমার সিগারেট খাওয়া দেখে আপনার এতো জ্বলে কেন?
যুবতী মেয়েটা বোরখার নেকাব সরিয়ে বললো,
~শাওন ভাইয়া আপনি আমাকে হয়তো চিনতে পারেননি।
শাওন যুবতীর মুখশ্রী দেখে হাতে থাকা সিগারেটটা হাত থেকে পরে গেলো আর বললো,
~নাদিয়া তুমি আসলে আমি তোমাকে চিনতে পারেনি।
নাদিয়া বললো,
~চলেন বাসায় এখানে এসব করছেন আমি বলে দিবো রক্তিম ভাইয়াকে।
শাওন বাঁকা হেসে বললো,
~প্রশিক্ষনটা তোমার রক্তিম ভাইয়া থেকেই পেয়েছি।
নাদিয়া বললো,
~এখন বাসায় চলে সবাই হয়তো আপনাকে খুজতে শুরু করে দিয়েছে।
নাদিয়া আর শাওন হাঁটতে হাঁটতে বাসার দিকে যাচ্ছে আর কথা বলছে।
অধরা তার নানুর ঘরে নানুর কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে অধরার নানু মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
~প্রিয়ার সুখবর শুনে খুব খুশি হয়েছি ওর জন্য এক বোয়েম আমের আচার দিয়ে দিবো।
অধরা বললো,
~আমিও অনেক খুশি হয়েছি কিন্তু তোমার সাথে রাগও করেছি তুমি কেন বিয়ের অনুষ্ঠানে আসো নি?
নানু মুখ আধার করে বললো,
~যাওয়ার ইচ্ছা সবার ছিল কিন্তু তোর মামারা তোর জন্য সোনার কিছু কিনতে পারেনি তাই আর আমরা যাইনি।
অধরা বললো,
~এতে কী হয়েছে নানু?তোমাদের দোয়াই সব
নানু বললেন,
~মানুষ তা বুঝবে না সোনা।তোর মা আর ২চাচি কাল আসবে।
অধরা বললো,
~জানি।
নানু মুচকি হেসে অধরার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।রাতের বেলা সব আয়োজন শেষ করে সবাই ছাদে বসে পরলো ইরা এক বাটি আমের আচার নিয়ে সিড়ি বেয়ে উঠতে লাগলো তখনই তার পা স্লিপ কাটলো আর হাতে থাকা আমের আচারের বাটি ছিটকে গিয়ে সামনে থাকা ব্যক্তিটির ওপর পরে ইরা সিড়ির রেলিং ধরে ব্যালেন্স করলো কিন্তু সামনে তাকাতেই ইরার চোখ ছানাবরা কারণ
চলবে
(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন।আর ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো 🥰🥰। Happy Reading 🤗🤗)