মুহুর্তে পর্ব -০১

#মুহূর্তে
পর্ব-১
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা

“তোমার লজ্জা লাগে নি আমার সাথে এমন কিছু করতে? অন্য একটা মেয়ের গর্ভে তোমার সন্তান…..ছিঃ! তুমি একবারও আমার এবং আমাদের বাচ্চার কথা চিন্তা করো নি?” কবিতার এমন প্রশ্নে চুপ হয়ে গেল সামনে দাঁড়ানো লোকটা। অফিস থেকে এসেই এমন একটা পরিস্থিতির সামনে পড়তে হবে এই কথা সে ভাবতেও পারে নি। আতঙ্কে, অপরাধে, শঙ্কায় তার গলা শুকিয়ে গেছে। কবিতার এমন প্রশ্নে কী উওর দিবে সে?

সে চোখ উঠিয়ে লুকিয়ে একবার কবিতার দিকে তাকাল। কান্নায় তার চোখ দুটো ফুলে গেছে। চোখ এবং চোখের আশেপাশে সবটা লালচে হয়ে গেছে। রাগে তার দাঁত কাঁপছে। তার ঠোঁট কেটে রক্ত ঝড়ছে। তার ফর্সা মিষ্টি মুখটা রাগে লাল হয়ে গেছে। তার ডান হাতটাও সম্পূর্ণ রক্তাক্ত। সমানে রক্তের ধারা বয়ে যাচ্ছে। সে আবারও আর্তনাদ করে প্রশ্ন করে, “আমি উওর চেয়েছি, উওর দেও আমাকে।”
কবিতার হাতের রিপোর্টটা সে লোকটার মুখের উপর ছুঁড়ে মারে , “এই রিপোর্টের মানে কী? এই রিপোর্টটা কী সত্যি?”
কিছু সময় পর সে উওর পায়, “হুম সত্যি।”
উওরটা শুনতেই কবিতার আটকে থাকা নিশ্বাস গভীর ভাবে বেরিয়ে আসে। তার নিশ্বাসটা কাঁপা-কাঁপা। দৃষ্টি ঘোলা। নিজেকে সামলাতে না পেরে কবিতা মেঝেতে বসে বসে। সারা কক্ষে বিভিন্ন জায়গায় পরে ছিলো ভাঙা কাঁচ। কবিতা বসতেই তার হাতে পায়ে ঢুকে পড়ে কিছু কাঁচের টুকরো। কিন্তু কবিতা ‘টু’ শব্দও করে না।

লোকটা তার দিকে এগিয়ে এসে তাকে ছুঁতে নিলেই কবিতা কঠিন গলায় বলে, “আমাকে স্পর্শ করার চেষ্টাও করবে না। আমি তোমার চেহেরা দেখতে চাই না। চলে যাও এইখান থেকে।”
লোকটা কি মনে করে তবুও সেখানে দাঁড়িয়ে রইলো কিছুক্ষণ। তারপর চলে গেল।

কবিতা সেখানেই বসে ছিলো। রুমের বাহিরে থেকে তার দুই ছেলে মেয়ের কান্নার শব্দ শোনা যাচ্ছে। তবুও কবিতা দৌড়ে যেয়ে তাদের কান্না থামাচ্ছে না। এই মুহূর্তে সম্পূর্ণ পৃথিবীটা মিথ্যে লাগছে তার। যে মানুষটার জন্য সে তার জীবনের এত বড় ত্যাগ করলো অবশেষে সে মানুষটাই তার সাথে এমন বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারলো? আচ্ছা সে অতীতে সে অন্য সিদ্ধান্ত নিলেও আজ কি তার সাথে এমন হতো?
____________________

সাত বছর আগে,
“কবিতা….এই কবিতা বাসের সময় হয়ে যাচ্ছে তো। কখন উঠবি?”
“এইতো মা আমি একবারে তৈরি।”
মা রুমে আসে কাবিতাকে উঠানোর জন্য। কিন্তু এখন তাকে দেখে হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। যে মেয়েকে সকালে একশোবার উঠানো লাগতো সে আজ নিজ থেকেই উঠে এত আগে তৈরি হয়ে নিয়েছে। মা ভ্রু কপালে তুলে জিজ্ঞেস করে, “বাহ আমাদের থেকে দূরে যাবার এত জলদি তোর? বলার আগেই তৈরি হয়ে নিলি।”
কবিতা দৌড়ে এসে মা’কে জড়িয়ে ধরে। তার গালে একটা চুমু খেয়ে বলে, “মা দেখো তোমাকে ছেড়ে যেতে কষ্ট হচ্ছে কিন্তু এই হিটলারের জেল থেকে বের হচ্ছি দেখে আমার সেই লেভেলের শান্তি লাগছে। এত শান্তি লাগছে যা বলে বুঝাতে পারব না। আহ মনে হচ্ছে জীবনের আঠারো বছর জেলখানায় থাকার পর আজ মুক্ত হচ্ছি। কী শান্তি!”

কবিতা ভীষণ চঞ্চল ও মিশুক প্রকৃতির মেয়ে। সারাক্ষণ মজা করা, হাসি-খুশি থাকা, ঘুরে বেড়াতে তার ভালো লাগে। কিন্তু এই পরিবারে এমন কোনো স্বাধীনতা সে পায় নি। এর বিশেষ কারণ তার বড় ভাই কবির। কবিরের কাছে তার দায়িত্ব ও নিয়ম সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এবং সে চায় বাসার সবাই তার কথা অনুযায়ী উঠুক বসুক। ব্যাপারটা কবিতার কাছে ভীষণ বিরক্তিকর লাগে। তাই সে অনেক আবদার করে তার ভার্সিটির পড়াশোনা ঢাকায় করার অনুমতি নিয়েছে। সেখানে তার খালাতোবোন তাহিরা এবং তার দাদীর সাথেই থাকবে কবিতা।

কবিতার কথা শুনে তার মাথায় আলতো করে মারে ওর মা।
“এভাবে বলে ফাজিল মেয়ে?”
“কীভাবে বললাম? আর মিথ্যা কি বলেছি? তোমার বড় ছেলেকে দেখে মনে হয় বাসায়ও জেলখানা খুলে রেখেছে। পুলিশগিরি করতে হলে তার থানায় যেয়ে করুক। কিন্তু না। আমি এই করতে পারব না, এই খেতে পারব না, এই পরতে পারব না। আর কয়দিন থাকলে মনে হয় নিশ্বাসেরও হিসাব নিবে। একবার ঢাকা যাই, জীবনটা নিজের মতো বাঁচব।”
“নিজের ভাইয়ের ব্যাপারে এমন বলে?”
“আমার সাথে হিটলারগিরি করলে আমি এই ভাবেই বলব।”

এমন সময় বাহির থেকে কবিতার বড় ভাইয়ের কন্ঠ শোনা যায়। কবিতা তার গলা শুনে বিরক্ত হয়ে বলে, “শয়তানের নাম নিলাম আর শয়তান হাজির। তোমার এই শয়তান একশো বছর বাঁচবে, ধ্যুর।”

আবারও কবিতার বড় ভাই কবিরের ডাক পড়ে। এইবার কবিতা দৌড়ে যায় কবিরের কাছে। যেয়েই তার ভাবসাব পরিবর্তন হয়ে যায়। সে ভদ্রভাবে তার ভাইয়ের সাথে যেয়ে জিজ্ঞেস করে, “ভাইয়া ডেকেছ?”
“হ্যাঁ, শুনো আমার কাজ আছে তাই তোমাকে বাসে উঠিয়ে দিয়ে আসতে পারব না। আবির তোমাকে নিয়ে যাবে। আর সেখানে যেয়ে নিজের ভদ্রতা হারিয়ে বসবে না। বাবা মা বলায় তোমায় যেতে দিচ্ছি। এছাড়া তোমার জন্য একটা বিয়ের প্রস্তাব এসেছে ঢাকা থেকে। আমারও ছেলে ভালো লেগেছে। এই কারণেও তোমাকে ঢাকায় পাঠানো। এই কারণে ভুলেও কোনো ছেলের আশেপাশে যাবে না। বিয়ে ঠিক হলে তোমাকে জানানো হবে। বুঝেছ কি বলেছি?”
কবিতা দ্রুত মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ উওর দেয়।
“ঠিকাছে আমি যাচ্ছি। সাবধানে যাবে।”
“জ্বি ভাইয়া।”

কবির যাওয়ার পর হাফ ছেড়ে বাঁচে কবিতা। সোফায় হাত পা ছড়িয়ে বলে, “মা কি খেয়ে জন্ম দিয়েছিলে তোমার এই ছেলেকে?”
“ও যা বলছে তোর ভালোর জন্য বলছে। দুইভাইয়ের একমাত্র বোন তুই। তোর প্রতি একটু প্রটেক্টিভ তো থাকবেই।”
“বুঝেছি মা, মাফ করো। আমার কাছে তোমার ছেলেকে নিয়ে আর কিছু বলব না যাও। আমি দেখে আসি আবির ভাইয়া তৈরি হয়েছে না’কি? যত দ্রুত সম্ভব এই জেলখানা থেকে মুক্তি চাই আমি।”
.
.
তীব্র ঝড় বাহিরে। আকাশের বুকেতে আকস্মাৎ ভাবে আলো জ্বলে উঠে। বাড়ির বাহিরে এম্বুলেন্স। চারপাশে এখনো অন্ধকার অথচ আশেপাশে ভীড় জমা। চারতলা থেকে একটি মহিলাকে নিয়ে এসে তাকে এম্বুল্যান্সে ভরা হয়। মহিলাটির পিছনে দৌড়ে এলো একটি বাচ্চা ‘মা’ ‘মা করে ডাকতে ডাকতে। বাচ্চাটির বয়স তিন। সে চলন্ত এম্বুল্যান্সের পিছনে ছুটে যেতে চায়। তবে এর পূর্বে এক অল্পবয়সী মেয়ে এসে তাকে ধরে নেয়। মেয়েটা তাদের ধরে হাঁটু গেড়ে বসে শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করে, “এভাবে কেউ গাড়ির পেছনে যায়? তোমাদের কিছু হয়ে গেলে?”

তিনবছরের বাচ্চাটা তোঁতলিয়ে বলে, “আপু আপু মা তোতায় গেতে?”
“মা একটু সময়ের জন্য বাহিরে গেছে কাজে। এইতো এসে পড়বে।”
“তেন গেতে?”
“পড়ে বলছি। আগে বলো তোমরা খেয়েছ?”
ছেলেটা মাথা নাড়িয়ে ‘না’ বলে।
“ঠিকাছে, আপুর সাথে চলো। আগে খেয়ে নিবে, তারপর আপু মা’য়ের কাছে নিয়ে যাব।”

আশেপাশে হাজার কথার গবেষণা চলছে মাত্র এম্বুল্যান্সে যাওয়া মহিলাটাকে নিয়ে। মহিলাটা বিষ খাওয়ার কারণে তাকে হাস্পাতালে নিয়ে যাওয়া। এর হাজারো কারণ বের করা হচ্ছে। এই গভীর বিষয় নিয়ে গবেষণা করতে সবাই ব্যস্ত। কিন্তু মহিলাটার ছোট বাচ্চার দিকে কারও ধ্যান নেই। বাচ্চাটাকে দুই বিল্ডিং পর নিয়ে গেল তাহিরা।

তাহিরা অনার্স থার্ড ইয়ারের স্টুডেন্ট। বয়স একুশ বছর। শ্যামলা মায়াবী গায়ের রঙ, টানা দুই চোখ, তীক্ষ্ণ কিন্তু মিষ্টি হাসি তার। সে এই এলাকায় নিজের দাদীর সাথে থাকে চৌদ্দ বছর বয়স থেকে। যখন তার বাবা মা’য়ের মৃত্যু হয় কার-এক্সিডেন্টে। তার দায়িত্ব কোনো আত্নীয় নিতে না চাওয়ায় শেষ পর্যন্ত বুড়ো দাদিরই তাকে সামলাতে হয়।

তাহিরা বাচ্চাটাকে ঘরে নিয়ে এসে দরজা খুলে দেখে সেখানে ধ্রুব। ধ্রুব তার প্রতিবেশী এবং ছোটবেলার বন্ধু। তাহিরা ধ্রুবকে দেখে চোখ মুখ কুঁচকে তাকাল। ধ্রুব আয়েশে পা’য়ের উপর পা তুলে টিভি দেখছিলো। ধ্রুব তাদের দেখে জিজ্ঞেস করে, “হাস্পাতালে নিসে?”

উওর দেয় না তাহিরা। সে বাচ্চাটাকে প্রথমে রুমে নিয়ে খাইয়ে ঘুম পাড়ায় বহু কষ্টে তারপর এসে বসে ধ্রুবর পাশে। বিরক্তিকর গলায় বলে, “তুই মানুষ না’কি বলতো? একটা মহিলা সুসাইড করতে গেল আর তুই একটিবার উঠে আসলি না তাকে দেখতে। তোর মন না পাথর।”

ধ্রুব হেসে তাহিরার গাল দুটো টেনে বলে, “আরে আমার ফুলটুসি এত রাগ করে না। এখন এমন তো না যে আমি গেলে তার খাওয়া বিষের প্রতিক্রিয়া নষ্ট হয়ে যাবে।”
“ফাইজলামি না। তোর পাশের বাসার একজন মৃত্যু দরবারে ছিলো আর তুই এইখানে বসে টেবিলের উপর পা তুলে টিভি দেখছিস?”
ধ্রুব নির্দ্বিধায় শুয়ে পড়ে তাহিরার কোলে। যেন তার জন্য এই ব্যাপারটা ভীষণ স্বাভাবিক।

ধ্রুব তাহিরার হাতটা তার মাথায় রেখে বলল, “চুল টেনে দেয় ভীষণ মাথা ব্যাথা করছে।”
ভীষণ বিরক্ত হয়ে তাহিরা বলে, “আমি কি তোর বউ যে বললেই তোর চুল টেনে দিব?”
“এমন করছিস কেন? বৃষ্টিতে ভিজে মাথা প্রচন্ড ব্যাথা। তুই না টেনে দিলে কে দিবে বল? তুই ছাড়া আমার কে আছে?” অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ধ্রুব তাহিরার দিকে।
“তোর পনেরো বিশটা গার্লফ্রেন্ড। তাদের কল দিয়ে বল অথবা সারারাত যাদের সাথে পার্টি করে এসেছিস তাদের বল।”
তাহিরা তার হাত সরাতে নিলেই ধ্রুব তার হাত ধরে নেয়, “কিন্তু তুই ছাড়া কেউ আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আমার ভীষণ বিরক্তি লাগে। অসহ্য লাগে। তোর কোলে মাথা রাখার পর তুই যখন মাথায় হাত বুলিয়ে দিস তখন মনে হয় পৃথিবীর সকল চিন্তা হাওয়ায় মিশে গেছে।”
কথাটায় এমন কিছু একটা ছিলো যা তাহিরার ভেতরটা শান্তিতে ভরিয়ে দিলো। কিন্তু মুখে সে কিছু বলল না। চুপ করে ধ্রুবর চুলে হাত বুলিয়ে দিতে শুরু করলো।

ধ্রুব ফোন টিপছিলো। হঠাৎ করেই সে বলে উঠে, “যে মহিলাকে হাস্পাতালে নিয়ে গেছে তার নাম কি’রে?”
“লামিয়া আপুর কথা বলছিস?”
“হ্যাঁ। উনার স্বামী আরেকটা বিয়ে করে বসে আছে তা জেনেই উনি সুসাইড করেছেন।”
“কী!” চমকে উঠে তাহিরা। জিজ্ঞেস করে, “তুই জানিস কীভাবে?”
“আমার এলাকার কথা আমি না জানলে কে জানবে? শালাকে কাল ধরে দিব কয়টা মাইর। ওই মহিলারও দোষ আছে, এইসব ধোঁকাবাজ কুত্তার জন্য কে বলছিলো উনাকে জান দিতে যেতে?”
“তুইও তো কতগুলো প্রেম করে বেড়াস।”
“দেখ আমার সাথে ওই কুত্তাকে মিলাবি না। আমি কারও সাথে কমেটমেন্ট করি না। যাস্ট টাইমপাস। আর তা ওই মেয়েরাও জানে আর জেনেই কথা বলে। আর আমার জন্য কেউ নিজের জীবন দেওয়ার কথা ভাবে নাই, ওই জানোয়ারের জন্য একজন মরতে গেছে।”

তাহিরা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, “যাক তাহলে অন্যের জন্য চিন্তা করিস তুই। যেভাবে বসে ছিলি তা দেখে তো মনে হয়েছিলো তোর কিছু আসে যায় না।”
“ভুল ভাবছিস। কেউ বাঁচলে বা মরলে আমার কিছুই আসে যায় না। কিন্তু তুই এখন ওই মহিলাকে নিয়ে চিন্তা করবি, তার বাচ্চাকে নিয়ে ভাববি। এই চিন্তা করে তোর শরীর খারাপ হবে। তোর মন খারাপ হবে। আর আমি তোকে কষ্টে দেখতে পারি না। এই পৃথিবীতে আমার সবচেয়ে বেশি অসহ্য লাগে তোকে আর মা’কে কষ্টে দেখাটা।”
কথাগুলো শোনার সময় তাহিরার দৃষ্টি ছিলো ধ্রুবর ফোনে উপর। ধ্রুব একটি মেয়ের সাথে প্রেম আলাপে ব্যস্ত। এই ছেলেটার মাঝে অদ্ভুত এক গুণ আছে। সে তাহিরাকে একই সাথে কষ্ট ও সুখ দুটোর অনুভূতি করাতে পারে। এই সময়ই তার একইসাথে বুকের ভেতর প্রচন্ড ব্যাথা এবং প্রচন্ড সুখের অনুভূতি হচ্ছে।

তাহিরার আর কথা বাড়াতে মন চায় না। সে ফোন বের করে কল দেয় তার কাজিন কাবিতাকে। তার আজ ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার কথা। বাসে সে উঠেছে কি’না তার খবর নেওয়ার জন্যই কল দেওয়া। কবিতা কে ফোন দিতেই এক রিং-এ সে কল ধরে উৎসুক গলায় বলে,
“আপু… আপু আমি ঢাকায় আসছি। অবশেষে ওই জেলখানা থেকে বের হচ্ছি।”
“মানে তুই বাসে উঠে গেছিস?”
“তো কি? আপু জানো সারারাত এক্সাইটেড ছিলাম যে ঘুমই হয় নি। বড় ভাইয়ের জল্লাদখানা থেকে বের হচ্ছি অবশেষে।”
“আচ্ছা ঠিকাছে তাহলে আয় তোরা। আমি তোর অপেক্ষায় আছি।”

কবিতা কল রেখে পাশে তাকাতেই দেখে আবির আবার ঘুম দিয়েছে। মুহূর্তখানিক আগেও সে আবিরকে জাগ্রত দেখেছিলো। এখন আবার তাকে ঘুমাতে দেখে কবিতা বিড়বিড় করে বলল, “আমার দুই ভাই দুইটা আইটেম, ভাই রে ভাই। একটা শয়তান আরেকটা কুম্ভকর্ণ।”
কবিতা কানে হেডফোন লাগিয়ে নিজেও সিটে হেলান দিলো। কিছুক্ষণ পর কারও স্পর্শে চোখ খুলে কবিতার। সে পাশে তাকিয়ে দেখে একটি ছেলে তার পাশে দাঁড়ানো। ছেলেটা ইচ্ছা করে তার গায়ে ঘেঁষে দাঁড়িয়েছে। কবিতা একটু সরে বসতেই ছেলেটা আবারও তার সাথে ঘেঁষে দাঁড়ায়।

ভারী বিরক্ত হয় কবিতা। সে একটু উঠে বাসে চোখ বুলিয়ে দেখে এখনো অনেকগুলো সিট খালি। তাই সে ছেলেটা জিজ্ঞেস করে, “ভাই সমস্যা কী আপনার? এতগুলো সিট থাকতে আমার সাথে ঘেঁষে দাঁড়াতে হবে আপনার?”
“ঘেঁষে দাঁড়াইসি? কী বলেন আপনে? আমি এখন নামমু তাই দাঁড়াইসি। মানে মাইয়া মানুষ দেইখা যা মন চায় তাই কইবেন?”

কবিতার আর কথা বাড়াতে রুচি হলো না। সে ভাবলো আবিরকে ঘুম থেকে তুলে সিট চেঞ্জ করবে। সে ভাবতে না ভাবতেই আভাস পেল ছেলেটা তার বুকে হাত দেবার চেষ্টা করছে। প্রথমে স্তব্ধ হয়ে যায় কবিতা কিন্তু পরের মুহূর্তেই উঠে ছেলেটার গালে কষিয়ে থাপ্পড় মেরে বলে, “জানোয়ারের বাচ্চা তোর সাহস কি করে হয় আমার গায়ে হাত দেওয়ার?”
“আরে…আরে আমি কি করলাম? এই মাইয়া তুই পাগল না’কি?”
“আমি পাগল?” কবিতা তাকে আরেকটা থাপ্পড় দিয়ে বলে, “তুই পারলে আমার কোলে উপর বসে পরিস, আমার শরীরে হাত দেস আবার মুখের উপর কথা বলোস তুই?”

এতক্ষণে আবিরের ঘুম ভাঙে কিন্তু ঠিক কি হচ্ছে সে বুঝতে পারছে না। এইখান কি নিয়ে ঝগড়া হচ্ছে তাও তার মাথায় ঢুকছে না।

কবিতা আবারও থাপ্পড় মারতে নিলে ছেলেটা তার হাত ধরে নেয়। তারপর রাগান্বিত দৃষ্টিতে কবিতার দিকে তাকিয়ে বলে, “শালী তোরে কিছু কই না দেখে লাই পাইয়া মাথায় নাচবি? কি ভাবছোস মাইয়া দেইখা তোরে মারমু না আমি? তোরে তো…..”
ছেলেটা কবিতার হাত এত শক্ত করে ধরে যেন তার মনে হচ্ছিলো তার হাড্ডিই ভেঙে যাবে। ব্যাথায় সে কুঁকড়ে উঠে। এর উপর উপর হাত তুলতে নিলেই কবিতা চোখ বন্ধ করে নেয়। কিন্তু সে কোনো ব্যাথা পায় না। তার হাতটাও ছেড়ে দেওয়া হয়। কবিতা আস্তে-ধীরে চোখ খুলে বিস্ময় নিয়ে। চোখ খুলতেই তার সামনে দেখতে পেল একটি যুবককে। সে ছেলেটার সে হাত শক্ত করে ধরে ছিলো যে হাত ছেলেটা এতক্ষণ কাবিতাকে মারার জন্য উঠিয়েছিলো। যুবকটা তার দিকে পিঠ করে থাকায় সঠিকভাবে চেহেরাটা দেখতে পারছিলো না কবিতা। হঠাৎ পাশ থেকে একটা পুরুষের কন্ঠ শোনা যায়,”তীর্থ ভাই ছেলেটাকে এমন মজা বুঝিয়ে দেন যেন এরপর অন্যকোনো মেয়ের দিকে খারাপ নজরে না তাকায় তার গায়ে হাত দেওয়া তো দূরের কথা।”

তীর্থ! এই তীর্থ নামক যুবকটি এতগুলো মানুষের মধ্যে তার জন্য এগিয়ে এসেছে? কবিতার হঠাৎ করে ইচ্ছা জাগলো এই তীর্থ নামক যুবকটাকে দেখার।

চলবে….

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here