#ষোড়শীর প্রেমের মায়ায়!
#লেখিকাঃতামান্না
#পর্ব_তিন
–” আমার মেয়ের কারোর সঙ্গে কথা বলতে হবে না। আমি আছি না, আমি আমার মেয়েটাকে দেখে রাখবো। তুই জানিস না তোর কিছু হলে তোর এই মায়ের কষ্ট হবে। আমার তো তুই ছাড়া কেউ নেই! তুই ও যদি চলে যাস আমি কি করবো! আমার মত নিসন্তানের তো তুই সব!”
–” কে বলেছে তুমি নিসন্তান মামি? তোমার কাছ থেকে যে আমি গন্ধ পাই! মা, মা, গন্ধ মামি! এই গন্ধ যে একজন মায়ের কাছ থেকেই পাওয়া যায় তুমি জানোনা?” আবেগে পুষ্পিতার চোখ দিয়ে পানি পরতে লাগল। সেই চোখের পানিগুলোকে মুছে, স্নিগ্ধার কপালে, গালে অজস্র চুমু দিতে লাগলেন তিনি। পুষ্পিতাকে কেউ দেখলে বলবে এ যেন পূর্ণ জননী! পরম মমতায় স্নিগ্ধাকে বুকে আগলে রেখেছেন তিনি।
সাজ্জাদ সাহেব এসেছিলেন স্নিগ্ধার সঙ্গে কথা বলতে।এসেই দেখলেন তার সহধর্মিনী এখানে এসে আবার কাদছে। উফফ, এই বউটাকে নিয়ে সে আর পারেনা। সব সময় তার চোখে পানি থাকবেই, মেয়ে মানুষের এই এক সমস্যা সারাদিন কোনকিছু হলেই শুধু কেদেঁ কেটে ভাসিয়ে দেয়।
–“কি ব্যাপার তুমি এখানে কি করছো? আর ভাগ্নি তুই স্যরি এখন তো আমাদের বাড়ির বউ, তা তুমি এখানে কেন বউমা ? শাশুড়ি আর দাদি শাশুড়ির সঙ্গে দেখা করে আসো। কাল তো আবার ঢাকায় ফিরতে হবে, এখন
কথা বলে আসো।”
–” তোমার কি সব জায়গায় মজা করতেই হবেই?”
–” ওমা! মজা করলাম কোথায়? ও তো বউমা হয় আমাদের তাই না? বউমা যাও এক কাপ চা বানিয়ে আনো!”
–” এই খবরদার,তুমি আমার মেয়েকে চা বানাতে বলবে তো! এই তুই যাবি না,আমি বানিয়ে নিয়ে আসছি। বলেই
চা বানাতে চলেগেলেন তিনি।
–” ও মা তুই কাদছিস, সর্বনাশ করেছে! এতবার চোখের জল ফেলিস কি করে?”
–” তোমার ও মা, ডায়োলগ থেকে কমই চোখের পানি ফেলি!”
–” ও মা তাই নাকি? তা মামনি কান্নাকাটি একটু বন্ধ করো, তোমার নানা যা করেছে ভেবেই করেছে, তোমাদের ভালোর জন্যই করেছে মা!”
–” আমি জানিনা মামা ”
–” না জানলেও তোমাকে জানতে হবে। তুমি সবই জানো আমরা এখন কি একটা পরিস্থিতিতে। বাবা কখনো কোন ওয়াদার খেলাপ করে না, ওয়াদা ভঙ্গ করা কখনোই তিনি পছন্দ করেন না। তাই তিনি তোমাদের সম্পর্ক ভাঙ্গতে ও দিবে না, আশাকরি আমার আদরের ভাগনী ও আমাদের বাড়ীর নববধূ হিসেবে বলবো অহেতুক সম্পর্কটা ভাঙ্গনের দিকে নেওয়ার চেষ্টা করবে না!” চায়ের কাপ নিয়ে স্নিগ্ধার রুমে প্রবেশ করলেন পুষ্পিতা, স্বামীর উদ্দেশ্যে এক কাপ চা এগিয়ে দিয়ে বলে উঠলেন –
–” তোমার কি কাজ নেই আজ?” চমকে উঠে পুষ্পিতার দিকে তাকালেন সাজ্জাদ সাহেব।
–” তা কেন হবে না?”
–” তো চা খেয়ে কাজে যাও, আমি আমার মেয়ের সঙ্গে কিছু কথা বলবো।” পুষ্পিতার মুখে এমন কথা শুনে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলেন সাজ্জাদ সাহেব তারদিকে, তারপর উঠে চলেগেলেন, পুষ্পিতার এখন এমনই দশা তার সামনে যদি একটা ছোট্ট বাচ্চা এনে দেয় সে সারাদিন সেই বাচ্চা নিয়ে পরে থাকবে। স্নিগ্ধা তার কাছে থাকলে মনে হয় দুনিয়ার কিছুই তার লাগবে না। দীর্ঘ দশ বছরের সংসার তাদের, প্রথম অবস্থায় এমন ছিল না পুষ্পিতা, খুব সংসারি ছিলেন তিনি। সংসার জীবনের দশ বছরে ও যখন কোন সন্তান জন্ম নেয়নি তখন থেকেই পুষ্পিতা কেমন হয়েগেছে। দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে এলো তার, পুষ্পিতার এমন বদলে যাওয়া তার ভালো লাগে না। খুব ইচ্ছে করে তাকে আগের মত দেখতে।
____________________
ফোনে কথা বলছেন স্নিগ্ধার শাশুড়ি নাজমা বেগম।
স্নিগ্ধাকে তিনি আদর করেন, মেয়েটাকে তার ভিষণ ভালো লাগে, কিন্তু তা সম্পূর্ণ ভাগনির নজরেই, কিন্তু শশুর আর শাশুড়িকে বলতে পারেননি এইসব কথা, চুপ করে সব শুনেছেন। তাই তিনি এখন তাদের সবার উপর রেগে আছেন। বোনের সঙ্গে কথা বলছেন তিনি। নাক টেনে টেনে কেদেঁ কেদেঁ বলছেন –
–” শ্রাবণের বাবাকে কত করে বললাম, স্নিগ্ধার সাথে বিয়ে দিও না, মেয়েটাও ছোট ছেলেটাও কত ছোট, এখনো নিজের পায়ে দাড়াতে পারল না। তা নয় মেয়েটাকে আমার ছেলেটার ঘাড়েই চাপাতে হবে? জানো আপা শ্রাবণের বাবার সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলায় সে কি বলেছে?”
–” কি বলল সে?”
–” কি বলবে আমি এই কথা বলতেই আমাকেই বলে উঠলো – দোহাই লাগে বিবি! আর যাই বলো বাবার বিরুদ্ধে কিছু বলো না। তুমি তো চেনো বাবাকে,বাবা এক কথার মানুষ আর একরোখা মানুষ।
–” শাজাহান কিছুই বলল না?”
–” তুমি তো জানোই ও বাইরে রাগারাগী করে জোর গলায় চিৎকার করলেও। বাবার সামনে মেনি বিড়াল হয়ে যায়!”
–” আহারে তুই যেমন তোর জামাই তেমন। কত করে বললাম সংসারের বড় বউ তুই, একটু শক্ত হও,হাল ধর না একদম ছেড়ে দিলি। কি বোকা তুই, পুরুষ মানুষকে ভয় পাস?” মোবাইল ফোনের স্পিকার থেকে শুনা যাচ্ছে দৈত্যাকার কন্ঠে তার দুলাভাই বলছে –
“নাফিসের মা তোমার এত বড় সাহস, তুমি নাফিসকে আমার অঘোচরে দু শ টাকা দিছো!”
পাশ থেকে নাজমা বেগমের বড় বোন অত্যন্ত ছোট স্বরে বলে উঠলেন রাখি রে নাজমা।
“তোর দুলাভাই আবার টিভির রিমোট হারিয়ে ফেলছে।”
নাজমা বেগম বলে উঠলেন -” হ্যা যাও, দুলাভাইয়ের রিমোট খুজে দিয়ে আসো। বলেই নিজেই বলতেই লাগলেন আপা তোমার আর বড় বড় কথা গেল না।
___________________________
পানের বাটা নিয়ে বসেছে স্নিগ্ধার নানু, বুড়ো বুড়ি দুজন একসাথেই বসেছে। বুড়োর এখনো তেজ কমেনি, বড্ড অদ্ভুত ব্যাপার হলো, এত রাগী হওয়ার পরও তার ছেলে মেয়ে কেউই তার মত হয়নি। সবগুলো কেমন তার মত হয়েছে। বড় জনের রাগ হলো লোক দেখানো, ভিতরে কিছুই নেই, ছোটজন তার সারাদিন লোক হাসিয়ে বেড়ায়। আর এই বুড়ো! সারাদিন বুক ফুলিয়ে বেড়াবে আর ফোসফোস করতে থাকবে। খানিকটা সাহস সঞ্চার করে বলে উঠলেন –
–” ছেলে মেয়েগুলোকে ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়া কি খুব দরকার ছিল? বিয়ে যখন দিয়েছেন একদিন না একদিন মায়া ঠিকই বসেযেত। ঢাকায় গেলে ওরা আমাদের আড়ালে, এক সাথে থাকবে বলে মনে হয় আপনার?”
–” আমি যা করেছি ঠিকই করেছি, সাজ্জাদের বাসায় থাকলে দুজনের চালচলনের উপর নজর দেওয়া যেত।”
–” তা বুঝেছি, কিন্তু এত তারাতারি বিয়েটা দেওয়া কি প্রয়োজন ছিল?”
–” প্রয়োজন ছিল মানি? আলবাৎ ছিল, এখনকার যুগের ছেলেমেয়েরা কি তোমার আর আমার জন্য বসে থাকবে? কখন কি ঘটিয়ে বসে দুজনে মিলে। সেদিন রফিক মিয়ার ক্লাস এইটের মেয়ে একটা ছেলের সঙ্গে পালিয়ে গেছে, জানো তুমি? নানা ও দাদা হওয়ার থেকে সবচেয়ে বড় দায়িত্ব আমার নাতি নাতনিদের অভিভাবক হওয়া।
তাই আমি বুঝেই করেছি।”
–” তাই বলে বিয়ে পর্যন্ত এগিয়ে যাবে? ওদের আকদ পর্যন্ত করিয়ে রাখতে মানি আকদ করিয়ে রেখে কয়েক বছর পর বিয়ে দিতে।”
–” কি বলতে চাইছো গিন্নি? আমি কি ভুল কিছু করেছি?
বুড়োর চোখে মুখে রাগ ভেসে উঠেছে। বুড়ি ঢোক গিলে উঠলো। এই বুড়োর চোখ রাঙ্গানো দেখলে তার পেটের ভাত সব হজম হয়ে যায়।
____________________
শ্রাবণ রেডি হচ্ছে, কাল তার ঢাকায় ফিরতে হবে, আবারও ইউনিভার্সিটির ঝামেলায় জড়াতে হবে। যেকদিন ছুটি কাটাতে এসেছে এর মধ্যেই ওর বিয়ের বন্ধোবস্ত করে ফেলেছে দাদু, শ্রাবণ শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে ভাবছে। ছুটি না নিয়ে ঢাকায় থাকতো তাই ভালো হতো।
বন্ধুদের মধ্যে হতে কয়েকজন ফোন করে বলতে লাগল সে যেন আগেই চলে আসে। শ্রাবণ তাই তারাতারি করে রেডি হয়ে নিচ্ছে। আয়নায় মুখ দেখে ঘুরে ঘুরে, দেখছে না ভালোই লাগছে। হঠাৎ তার মুখটা কেমন শুকিয়ে এই টুকু হয়েগেল। কারন সে ভুলেই গেছে, আজ বাড়িতে দাদু আছে। আর দাদু তাকে বের হতে দিবে না। সব ভাবনাকে ফেলে সে পাশে জিমানো রঙ্গনকে ডেকে উঠলো –
–” রঙ্গণ,উঠ! একটু দেখ গিয়ে দাদু কি করছে। দাদু যদি ড্রয়িং রুমে থাকে ইশারা করিস আমি চলে আসবো রুমে।
আর যদি রুমে থাকে বলিস আমাকে ঠিক আছে!”
–” আচ্ছা ঠিক আছে!”
রঙ্গন দাদুর রুমে গিয়ে দেখল দাদু বা দাদি কেউই নেই।
এবার সে ড্রয়িং রুমে গিয়ে দেখল। বুড়ি আর বুড়ো দুজনে মিলে কথা বলছে।
বুড়ি পান বানাতে বানাতে বলছে –
–” আরে রাগ করছেন কেন? আমি কি সেই কথা বলছি।
আপনি যা করেন তা ভেবেই করেন। এখন যা হওয়ার হয়েগেছে। নিন পানটা খেয়ে নিন! বলেই বুড়োর হাতে এক খিলি পান এগিয়ে দিল। রঙ্গন দাদা-দাদির রুম থেকে বের হতেই তার মোবাইলে মেসেজ এলো, চেক করে দেখল বন্ধুর। বন্ধুর সঙ্গে কিছুক্ষণ চ্যাট করার পর, শ্রাবণের রুমে এসে বসল তারপর।
–” কিরে দাদুর খোজ করতে গিয়ে এতক্ষণ লাগে?”
–” দাদি দাদুর জন্য পান বানিয়ে দিচ্ছে আর দাদু খাচ্ছে। ভাই তুই বাসা থেকে বের হয়, মনে হয় দাদু ঘন্টা খানেক পর কথা বলে বের হবে।
শ্রাবণ রুম থেকে বেরিয়ে দরজার কাছে গিয়ে দাড়ালো রঙ্গণ দরজা বন্ধ করতে গেলে বলে দাদু আমাকে ডাকলে বলিশ!
–” তুই চিন্তা করিস না, দাদু এখন দাদির সাথে গল্প করছে। বুড়ো-বুড়ি দুজন ভালোই প্রেম করছে বলতেই কানে এলো কেউ বলে উঠলো –
“এই হতচ্ছাড়া বুড়ো কাকে বলছিস?”
চলবে।
!