‘চরিত্রহীনা’ পর্ব-৯
.
লেখক : Mahian Khan
.
আগের ৮ পর্বের লিঙ্ক কমেন্টে দেওয়া হবে 🙂
.
জাভেদ তিন্নির হাত দুটো ধরে তিন্নিকে সরিয়ে দেয়। জাভেদ সরিয়ে দেওয়ায় তিন্নি যেন তার একমাত্র আশ্রয়স্থল থেকেও বিতাড়িত হল। তিন্নির গাল দুটো কাঁদতে কাঁদতে প্রায় টকটকে লাল হয়ে ওঠে।
.
– আচ্ছা কান্না বন্ধ করুন। চুপচাপ সোফায় বসুন।
.
– বসব না,আপনার কোনো অসুবিধা?
.
– আমি কিছুই বুঝলাম না আপনি আবার রাগ হয়ে উঠলেন কেন? কিছুক্ষণ পর পর আপনি এরকম আচরণ করেন কেন?
.
– আমার ইচ্ছা হয় তাই করি। আপনার কি তাতে?
.
– ঠিক আছে না বসলে না বসুন। দাড়িয়ে থাকুন তাহলে
.
তিন্নি প্রচন্ড রাগের সাথে দাড়িয়ে থাকে। তিন্নি এতটা রাগে আর অভিমানে দাড়িয়ে আছে যেন কেউ তাকে টেনেও বসাতে পারবে না। জাভেদ তিন্নির জন্য একগ্লাস পানি নিয়ে এসে তিন্নির সামনে দাড়ায়।
.
– পানিটা খেয়ে ফেলুন রাগ আর টেনশন দুটোই কমবে।
.
জাভেদের কথাগুলো তিন্নির কানে স্পর্শ করা মাত্র তিন্নি একেবারে সিংহ থেকেও হিংস্র হয়ে ওঠে। জাভদের হাত থেকে গ্লাসটা নিয়ে সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে গ্লাসটাকে দেয়ালের উপর ছুড়ে মারে। কাচের গ্লাসটা না হলেও কয়েকশ টুকরায় বিভক্ত হয়ে গিয়েছে। গ্লাসের পানিগুলো বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গিয়েছে। পানিগুলোর ছড়ানো-ছিটানো অবস্থা দেখলে কোনো আঁকাবাঁকা ক্ষুদে নদীর কথা মনেহতে পারে। হয়ত অনেকে বলবে যে,”এত ছোট নদী হয় কিভাবে?” প্রশ্ন যৌক্তিক তবে পানির অদ্ভুত গতিপথ কেন জানি কোনো অদ্ভুত নদীর কথাই বারবার স্মরণ করিয়ে দেয়।
.
গ্লাসের পানিগুলো এসে জাভেদের পায়ের সাথে বাধাপ্রাপ্ত হয়। এতক্ষণে অন্য কোনো ব্যক্তি হলে নি:সন্দেহে একটা চিল্লাচিল্লি, ঝগড়াঝাটি এমনকি বিষয়টা গায়ে হাত দেওয়া পর্যন্ত চলে যেত পারত বিষয়টা। জাভেদ খুব একটা রাগী ব্যক্তি না কিন্তু তাই বলে এতকিছু সহ্য করার মত ব্যক্তিও না। একেবারে মূর্তির মত স্থির হয়ে পানিগুলোর দিকে চেয়ে থাকে। বেশ জোরে একটা নি:শ্বাস ছেড়ে তিন্নির দিকে তাকায়। হয়ত নি:শ্বাসের সাথে মনের মধ্যে স্থির হয়ে থাকা রাগ গুলো বের করে দেয়। তিন্নির দিকে তাকানো মাত্র তিন্নির চোখ থেকে আবার ঝর্নার প্রবাহ শুরু হয়ে যায়।
.
– এবার কাঁদছেন কেন? এবার কি করলাম?
.
জাভেদের কথাগুলো তিন্নির চোখের পানির বেগ আরো কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়।নিজের রাগ আর থামাতে না পেরে এবার বেশ জোরে জাভেদ চিল্লিয়ে ওঠে,
.
– আরে এত ন্যাকামো কেন করেন? কিছুই করলাম না শুধু শুধু ভ্যা ভ্যা করে কাদছেন কেন?
.
জাভেদ থেকেও অন্তত পক্ষে ১০ গুণ গতিতে একেবারে সিংহের মত তিন্নি গর্জিয়ে ওঠে।
.
– আমি কাঁদছি তাতে আপনার সমস্যা কোথায়? আপনি অযথা আমার জীবনে আসলেন কেন? আপনি আমার পাশের বাসায় আসলেন কেন? এজন্য তো এসব ঝামেলা। আপনি আমার জীবনে ঝামেলা বাড়াতে এসেছেন আর কিছু না।
.
কথাগুলো যে জাভেদের রাগ বৃদ্ধি করে না,এমন না। তিন্নির কথাগুলো জাভেদের মাথা যথেষ্ট গরম করে তোলে কিন্তু মাথার উষ্ণতাকে মাথার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখে একেবারে শান্ত কন্ঠে তিন্নিকে বলে,
.
– আমি নাহলে ঝামেলা বুঝলাম কিন্তু গ্লাসের কি দোষ ছিল?
.
জাভেদের এই কৌতুকময় প্রশ্ন তিন্নির সহ্যের বাধ একেবারে ভেঙে দেয়।
.
– ধুর আপনি একটা ফালতু একদম ফালতু।
.
এই কথাটুকু বলে নিজের রুমে গিয়ে ঠাস করে দরজাটা আটকিয়ে দেয়।
.
জাভেদের উষ্ণ মাথাও শীতল হয়ে আসতে থাকে। তিন্নির প্রতি কোনোভাবে জাভেদ নিজের রাগ টিকিয়ে রাখতে পারে না। আবার একবার একটা জোরে নি:শ্বাস ছেড়ে সোফায় বসে পড়ে।
.
– ও আল্লাহ! মানুষের জীবন কত বিচিত্র! কত কষ্ট, নির্যাতনের মধ্যে আমাদের এই জীবনটা কাটাতে হয়। মেয়েটাকে আর কি দোষ দিব? দোষ তো মেয়েটার ভাগ্যের, মেয়েটার কপালের। ১৮-১৯ বছরের একটা মেয়ে নাহলে এত কষ্ট সহ্য করবে কেন? আসলে অন্য কোনো মেয়ে হলে আরো এই অবস্থায় অবশ্যই এতদিনে প্রেমিককে ঘৃনার চোখে দেখত। কিন্তু তিন্নি রনিকে একেবারে স্বর্গীয় পর্যায়ে ভালোবাসে। আমার মত একজন সাধারন মানুষ এই ছোট একটা মস্তিষ্ক দিয়ে তিন্নি আর রনির ভালোবাসাকে ব্যাখা দিতে পারব না। ছেলেটাকে ভাল করে দাও আল্লাহ, এই ছেলেটা হয়ত তিন্নির বেচে থাকার কারণ। এতটুকু একটা মেয়ে বয়সের তুলনায় হাজার গুন কষ্ট সহ্য করছে। তাকে আত কত শাস্তি দিবা? এত কষ্টের পর মেয়েটার ধৈর্যের বাধ ভাঙেনি। আজকাল ছেলে মেয়েরা তো সামান্য বাবা-মায়ের সাথে, বয়ফ্রেন্ডের সাথে, গার্লফ্রেন্ডের সাথে সামান্য ঝগড়া হলেও সুইসাইড করে,৮-১০ টা ট্যাবলেট খায়, হাত কাটে,গাঞ্জা টানে আরো কত কিছু। এই মেয়েটা জীবনে পরিস্থিতির স্বীকারে বেশ কিছু ভুল করলেও এই টাইপের ছেলে মেয়ে থেকে হাজার-লাখ গুণ ভাল। আল্লাহ মেয়েটাকে আর কষ্ট দিয় না।
.
মোবাইলটা বের করে জাভেদ সময় দেখে।
.
– বাবা প্রায় সোয়া সাতটা বেজে গিয়েছে! এটা কিভাবে সম্ভব! এখন আসলে বাসায় যাওয়া উচিত।
.
সোফা ছেড়ে উঠে দাড়িয়ে দুই এক পা হেটে আবার কোনো এক অজানা কারণে সোফায় বসে পড়ে। হয়ত তিন্নিকে নিয়েই কিছু একটা মাথায় ঘুরছে।
.
– এই অবস্থায় মেয়েটাকে রেখে যাব? এটা উচিত হবে? আফটার অল, ও তো একটা মানুষ। আজকে যেরকম আচরণ করেছে এর আগে কখনো করেনি। সম্পুর্ন পাগলের মত এতক্ষণ আচরণ করছিল। রনিকে মেয়েটা যেভাবে ভালোবাসে সেটা অকৃত্রিম। যদি তিন্নি কোনো উল্টাপাল্টা পদক্ষেপ নেয় তাহলে? এতদূর মেয়েটা সহ্য করেছে অস্বীকার করি না কিন্তু মানুষের মন পরিবর্তন হওয়া তো মুহূর্তের ব্যাপার। আমি বরং একটু সময় বসি। বাসায় গিয়ে আর কি কাজ? আজকে এমনিতেও বৃষ্টি, রাস্তায় যে পানি উঠেছে তার মধ্যে পড়াতে যাওয়ার কোনো মানে হয় না। বাইরে থেকে সুন্দর বাতাসও আসতে আছে আমি বরং চুপচাপ বসি। বাসায় একটু পর যাব আনে।কিন্তু এতটা সময় কাটাব কিভাবে? পকেটে ৩-৪টা সিগারেট আছে কিন্তু তা এখানে বসে টানা একেবারে অনুচিত। অন্য মানুষের বাসায় তার উপর আবার একটা প্রেগ্ন্যান্ট মেয়ের বাসায়। ধুর! তাহলে সময় কাটবে কিভাবে?
.
নিজেকে উপায়হীন মনেকরে শেষমেশ মোবাইল বের করে ক্লাশ অফ ক্লানস খেলায় জাভেদ মগ্ন হয়ে পড়ে।
.
(১৯)
.
রাত প্রায় ১২টা বাজতে চলল। জাভেদের দুচোখ ঘুমে প্রায় নিভু নিভু অবস্থা। ফেইসবুক, ক্লাশ অফ ক্লানস ইউটিউব চালাতে চালাতে মোবাইলের ইন্টারনেট,চার্জ দুটোই শেষ হয়ে গিয়েছে। একটানা এত মোবাইল চালানো হয়েছে যে দুচোখ এখন শুধু বৃত্তের মত ঘুরপাক খাচ্ছে কিন্তু তিন্নির এখনো দেখা নাই।
.
– রাত প্রায় ১২টা বাজে এখনো মেয়েটা রুমে বসে কি করে? ঘুমায় নাকি? এতক্ষণ রাগ করে ভিতরে বসে থাকা অসম্ভবের উপর অসম্ভব। অবশ্যই ঘুমিয়ে আছে। কিন্তু প্রায় ৪-৫ ঘন্টা বসে আছি একটু ‘টু’ শব্দ পর্যন্ত শুনলাম না। গিয়ে দিরজা নক করব? যদি অযথা ঘুম ভেঙে যায়? আবার উল্টাপাল্টা কোনো পদক্ষেপ যদি নিয়ে থাকে? তাহলে? আবার দরজা খুলে যদি দেখে রাত ১২টা পর্যন্ত এখানে বসে আছি তাতেও তো বিষয়টা বিশ্রী দেখাবে। যাক এমনিতেই সারাদিন চিল্লাচিল্লির উপর থাকে আরেকটু চিল্লাচিল্লি সহ্য করা যাবে অসুবিধা নেই।
.
মনের বিরুদ্ধে গিয়ে জাভেদ,তিন্নির দরজায় ২-৩ বার নক করে। তিন্নির কোনো সাড়া নেই। ভয়ে জাভেদের শরীর প্রায় ঠান্ডা হয়ে আসে এবার বেশ জোরে দরজায় একটা টাক দেয়।
.
– কে?
.
জাভেদের ঠান্ডা হয়ে আসতে থাকা দেহ মুহূর্তে সমগ্র দেহে উষ্ণতার ছোয়া পেয়ে যায় শুধু মাত্র তিন্নির ‘কে’ শব্দটা শুনে।
.
– আমি।
.
‘আমি’ শুনে তিন্নির আর বোঝা বাকি নেই জাভেদ বাহিরে দাঁড়ানো। চোখে অনেক ঘুম থাকা স্বত্তেও তিন্নি বিছানা থেকে উঠে দাড়ায়। মনে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে থাকে। হালকা ভয়ও লাগে। তবুও সাহস করে দরজাটা খুলে ফেলে।
.
– আপনি এই রাতে এখানে আসলেন কিভাবে? এখনো বাসায় যান নি?
.
– আপনি এতটা রাগে ছিলেন তার উপরে কোনো সাড়াশব্দ পাইনি। চিন্তা হচ্ছিল তাই সোফায় বসে ছিলাম। ভাবলাম,আপনিও একটা মানুষ। যদি কোনো উল্টাপাল্টা কিছু হয়ে যেত আমি কখনো নিজেকে ক্ষমা করতে পারতাম না। প্লিজ নেগেটিভলি নিবেন না, শুধু আপনাকে দেখার জন্য বসে ছিলাম। তার উপর দরজা খোলা রেখেও যাওয়ার সাহস হচ্ছিল না।
.
– উল্টাপাল্টা বলতে আপনি সুইসাইড বুঝিয়েছেন?
.
– না তা বোঝাব কেন? প্লিজ এবার আর রাগ করবেন না। প্লিজ আমার কোনো কথাকে আর নেগেটিভলি নিয়েন না।
.
– আচ্ছা, ধন্যবাদ প্লাস সরি। আমি আপনার সাথে আসলেই সারাদিন অনেক খারাপ ব্যবহার করি কিন্তু আপনাকে অনেক অদ্ভুত লাগে আমার এই রাগ,উল্টাপাল্টা কথাতে আপনি কখনো আমার উপর পাল্টা রাগ করেন না। চুপচাপ এগুলো সহ্য করেন কিভাবে?
.
– আমি অতটা রাগী ব্যক্তি না। জীবনে এই পর্যন্ত আসতে অনেক শিক্ষা নিয়েছি। হুটহাট রাগ দেখালে কি সব সমাধান হয়ে যায়? আর সবচেয়ে বড় শিক্ষা নিয়েছি আপনাকে দিয়ে। আপনি নিজেকে দেখুন না। জীবনে কত কষ্ট, যুদ্ধ করেছেন কিন্তু কখনো উল্টাপাল্টা কোনো স্টেপ নেন নি। সব প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে যোদ্ধার মত দাড়িয়ে আছেন। সামান্য ব্রেকাপ, ঝগড়াঝাঁটি নিয়ে পর্যন্ত আজকাল মানুষ কত উল্টাপাল্টা পদক্ষেপ নেয়।
.
– আসলে আমার জীবনকে, আমার কর্মকান্ডকে কেউ কখনো এত সুন্দরভাবে ব্যাখা দেয়নি। কেউ না।
.
– আবার কেদে দিচ্ছেন? আপনার চোখের সাথে কি সমুদ্রের সাথে সংযোগ আছে? নাহলে একটা মানুষ এত কাদে কিভাবে?
.
– সরি।
.
– কিন্তু কেন?
.
– আপনার সাথে প্রচুর খারাপ ব্যবহার করি, প্লিজ মাফ করুন।
.
– মাফ করার কিছু নেই আপনার খিটখিট করা, রাগে থাকাটা স্বাভাবিক। আপনি কান্না বন্ধ করুন প্লিজ। আপনি বরং বসুন। আমি খাবার গরম দিব? সেই সন্ধ্যা থেকে কিছু খান নি।
.
– না লাগবে না আপনি অযথা এত কষ্ট করবেন কেন?
.
– কষ্ট না কোনো কষ্ট না।
.
– মোটেও না। আমি নিজেই খাবার গরম দিব। খবরদার রান্নাঘরে যাবেন না। ইটস আ থ্রেট।
.
তিন্নি যখন থ্রেট দিয়েছে বিষয়টা নিয়ে বাড়াবাড়ি অবশ্যই ভয়াবহ রুপ ধারণ করতে পারে। তাই নিজের পরাজয় স্বীকার করে বেশ নরম স্বরে জাভেদ বলে,
.
– আচ্ছা আমি আসি তাহলে।ভালোভাবে থাকবেন। কোনো ঝামেলা বা কোনোকিছু প্রয়োজন হলে নির্দ্বিধায় ডাকবেন। নাম্বারটা লিখে রাখুন প্লিজ।
.
– এখন লাগবে না কালকে নিব।
.
– কিন্তু কেন?
.
– আমার ভাললাগে না, তাই।
.
অহেতুক তর্ক মানে তিন্নি আবার যুদ্ধ শুরু করে দিবে। তাই একেবারে নিশ্চুপভাবে পরাজয় স্বীকার করে তিন্নির বাসা থেকে বেরিয়ে আসে। জাভেদের দুচোখ ঘুমে ভারি হয়ে এসেছে। দরজাটা খুলে শুধু কোনোরকম পায়ের স্যান্ডাল দুটো জোরে ছুড়ে মেরে, দরজাটা ঠাস করে আটকিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে। বিছানায় মাথা রাখা মাত্র জাভেদ একেবারে গভীর ঘুমে চলে যায়। অবশেষে সারাদিন খাটুনির পর একটু শান্তির ছোয়া পেল জাভেদ।
.
(২০)
.
চোখে খুব একটা ঘুম না থাকায় আর রনির চিন্তায় সারা রাত তিন্নির খুব একটা ঘুম আসেনি। রাত তিনটার দিকে একটু ঘুমের মত পড়লেও সকাল সাতটায় মোবাইল বেজে ওঠার কারণে ঘুম ভেঙে যায়।
.
– এত সকালে কে ফোন দিতে পারে?
.
ঘুম থেকে উঠে মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখে রনির চাচাত ভাইর নাম্বার। তিন্নির খুশির কোনো সীমা থাকে না। চোখের সব ঘুম মুহূর্তে গায়েব হয়ে যায়। ফোন রিসিভ করা মাত্র তিন্নির সব থেকে প্রিয় কন্ঠ শুনতে পায়।
.
– হ্যালো।
.
– রনি? রনি তোমার কি হয়েছে তুমি কোথায়? রনি রনি! তুমি ঠিক আছ?
.
– ঠিক থাকব কিভাবে? বল তো? তোমাকে ছাড়া ঠিক থাকা আসলে সম্ভব বলে তোমার মনেহয়?
.
– তোমার কি হয়েছে তুমি নাকি এক্সিডেন্ট করেছ? বেশী ব্যাথা পেয়েছ নাকি?
.
– সামান্য একটা সি.এন.জির সাথে এক্সিডেন্ট তাতে আর কি ব্যাথা? ১-২ সপ্তাহে ঠিক হয়ে যাব। তুমি আমার কাছে নাই এটাইতো প্রকৃত ব্যাথা এই ব্যাথা থেকে কিভাবে নিজেকে মুক্ত করব? বল তো? আমার আর বাচতে ইচ্ছা করে না।
.
– এরকম কথা ভুলেও মুখে আনবা না, ভুলেও না। নাহলে, বিশ্বাস কর আমি এখানে থাকতে পারব না,পাগল হয়ে যাব।
.
– ঠিক আছে কিন্তু কান্না করতেছ কেন? এই কান্নার শব্দ শুনলে আমি বাচব কিভাবে?
.
– ঠিক আছে আমি কাদব না কিন্তু তুমি আগে এসব কথা বন্ধ কর। প্লিজ!
.
– তুমি কি ভাল আছ? প্লিজ আমাকে ক্ষমা কর। আমি এভাবে স্বার্থপরের মত আচরণ করেছি। মাত্র অল্প কয়েকটা টাকা রেখে গিয়েছি কিন্তু চিন্তা কর না আমি তোমাকে টাকা পাঠিয়ে দিব কয়েকদিনের মধ্যেই। আর সবচেয়ে বড় কথা আমি একটা মোবাইলের ব্যবস্থা করেছি এখন তোমার সাথে প্রতিদিন কথা বলতে পারব। ভিডিও চ্যাটও করতে পারব।
.
– মানে আমি তোমাকে প্রতিদিন দেখতে পারব, তাই না?
.
– হ্যা! আমিও তোমাকে দেখতে পারব। এর থেকে ভাল কিছু হতে পারে?
.
– না,কিছু হতে পারে না আর টাকার টেনশন কর না। আমি অনেকগুলা টিউশনি পেয়েছি।
.
– মানে? তুমি এভাবে কষ্ট করে থাকবা?
.
– আমি কষ্ট বলেছি? তোমাকে যদি দেখতে পাই তাহলে কষ্ট আবার কিসের?
.
– ফাও কথা বলবা না।
.
– ফাও কথা হবে কেন? প্লিজ তুমি অহেতুক ঝামেলা করবা না।
.
– ঝামেলা মানে? তুমি কষ্ট করবা আর আমি এখানে আরামে দিন কাটাব?
.
– এটা কষ্ট কিভাবে? তোমাকে দেখলে আমার কোনো কষ্ট থাকতে পারে? রনি একদিন আমরা আবার একসাথে থাকব না?
.
– থাকব অবশ্যই থাকব । তোমাকে ছাড়া আমি কি বাচব, তোমার মনেহয়?
.
– না, আমিও তো বাচব না।
.
– তাহলে? প্লিজ এবার কান্না বন্ধ কর।
.
– কিভাবে করব?
.
– তাহলে তুমি কি চাও? তোমার কান্নায় কষ্ট পাই, তা চাও?
.
– না।
.
– এইতো গুড গার্ল। একটু পর ফোন দিব। আম্মু আসতেছে। রাখি আল্লাহ হাফেজ। লাভ ইউ।
.
– আল্লাহ হাফেজ, লাভ ইউ টু।
.
আনন্দের অশ্রুতে তিন্নির দুচোখ ভিজে এসেছে। অবশেষে যেন তার মূল্যবান রনিকে সে ফিরে পেয়েছে। তিন্নি যেন এই পৃথিবীতে সবচেয়ে সুখি মানুষ এই মুহূর্তে। এই চরম আনন্দের ফাঁকে রনিকে বলা মিথ্যাগুলো তিন্নির হৃদয়ে খোঁচা দেয়।
.
– আমার জাভেদের অবদানগুলোকে এভাবে অস্বীকার করা কি উচিত হয়েছে? জাভেদ আমার কোনো পরিচিত ব্যক্তি না হয়েও আমার জন্য যত কষ্ট করছে আমি কি ওর অবদানগুলো অস্বীকার করে কোনো পাপা করেছি?
.
চরম এই আনন্দের ফাঁকেও তিন্নির মুখে অনুশোচনার ছায়া স্পষ্ট। অজানা কোনো কারণে তিন্নি ঘর থেকে বেরিয়ে জাভেদের বাসায় গিয়ে বারবার বেল বাজায়।
.
ঘুমে বিভোর জাভেদ টানা ৭-৮ বার বেলের শব্দ শুনে ঘুম আর টিকিয়ে রাখতে পারে না।
.
– কে? কে?
.
– আমি, প্লিজ দরজাটা খুলুন।
.
তিন্নির আওয়াজ শুনে জাভেদ বেশ ভয় পেয়ে যায়।
.
– এত সকালে কি কারণে আসতে পারে? কিছু হল নাকি?
.
তারাহুড়া করে দরজাটা খোলা মাত্র তিন্নি জাভেদকে বেশ জোরে জড়িয়ে ধরে।
.
– থ্যাঙ্ক ইউ, থ্যাঙ্ক ইউ, থ্যাঙ্ক ইউ ভেরিইইইইই মাচ।
.
– আচ্ছা কি হয়েছে? এত সকালে আসলেন যে?
.
– আপনি আসলে একটা অসাধারণ লোক। আজকে শুধু আপনার জন্য আমি আবার বাচতে শিখেছি, এখানে দাড়াতে শিখেছি। আমার জীবনে আনন্দ,খুশি ফিরে পেয়েছি শুধু আপনার জন্য।
.
– ধন্যবাদ কিন্তু হয়েছে কি?
.
– রনির ফোন এসেছে। আজকে ওর সাথে কথা বলেছি। ও নাকি একটা মোবাইলের ব্যবস্থা করেছে। এখন নাকি রেগ্যুলার আমার সাথে ফোনে কথা বলবে, ভিডিও চ্যাটও নাকি করবে। এই সব সম্ভব হয়েছে শুধু আর শুধু আপনার জন্য। শুধু আপনার জন্য রনি আজকে আবার ফিরে এসেছে আমার জীবনে। আপনি আসলে একজন অসাধারণ মানুষ। আমি আপনার ঋণকে কখনো শোধ করতে পারব না। কখনো না।
.
– ঋণ শোধের কিছু নেই। আমি তো আপনাকে আগেই সব বলেছি।
.
– আপনি যে মানুষ তা আমার সত্যি বিশ্বাস হয় না।
.
– আবার কাঁদছেন?
.
তিন্নি আবার জাভেদকে বেশ শক্তভাবে জড়িয়ে ধরে। জড়িয়ে ধরে একেবারে অদ্ভুত ভঙ্গিমায় কান্না শুরু করে। সান্তনা হিশেবে জাভেদ শুধু তিন্নির চুলগুলোতে হাত বুলাতে থাকে।
.
– আচ্ছা বাবা ঠিক আছে। ঠান্ডা হন। প্লিজ ঠান্ডা হন।
.
জাভেদের দেহ থেকে নিজেকে সরিয়ে এনে বেশ মায়াবী ভঙ্গিমায় তিন্নি, জাভেদের দিকে চেয়ে থাকে।
.
– আপনি আসলেই অসাধারণ। একদিন একেবারে আপনার মত একটা অসাধারণ মেয়েকেই জীবনে পাবেন, বিশ্বাস করুন।
.
জাভেদ শুধু তিন্নির দিকে চেয়ে থাকে।তিন্নির কথাটা জাভেদের কানে বেশ জোরে আঘাত হাননে। তিন্নির নাকমুখে অস্থিরতার ছাপ স্পষ্ট।
.
– আচ্ছা আমি আসি, আবার কথা হবে।
.
– আচ্ছা ঠিক আছে।
.
মুহূর্তেই তিন্নি গায়েব হয়ে যায়। হয়ত রনির কলের অপেক্ষায় তিন্নি এতটা অস্থির। জাভেদ শুধু কল্পনা করতে থাকে তিন্নির চঞ্চল দেহটাকে,তিন্নির মায়াবী চেহারাটাকে
.
– মেয়েটার কথায় বিশ্বাসের কোনো কারণ নাই কেননা, আমি ভালোভাবে জানি, আমার কপালে কোনো প্রেমিকার নাম লেখা নাই।
.
দরজাটা আটকিয়ে জাভেদ ভিতরে আসে কিন্তু এখনো শুধু তিন্নিকেই কল্পনা করতে থাকে।
.
(বি.দ্র : দেরিতে দেওয়ার জন্য দু:খিত এবং পর্ব ১০ হবে ‘চরিত্রহীনা সিরিজের শেষ পর্ব।)