চরিত্রহীনা পর্ব ৮

‘চরিত্রহীনা’ পর্ব-৮
.
লেখক : Mahian Khan
.
আগের ৭ পর্বের লিঙ্ক কমেন্টে দেওয়া হবে 🙂
.
তিন্নির চেয়ে থাকা দেখে জাভেদ বেশ লজ্জাবোধ করে।
.
– সরি কিন্তু আপনাকে নিষেধ করা সত্ত্বেও আপনি কেন কাজ করতে গেলেন? আপনাকে কেমন লাগছে একবার দেখেছেন? এরকম অবস্থায় আপনাকে অযথা কাজ করতে বলল কে? এদিকে আসুন।
.
জাভেদ তিন্নির হাতটা ধরে তিন্নিকে ড্রইংরুমে নিয়ে আসল।
.
– এখানে সোফায় চুপচাপ বসুন।
আমি তো বলেছি যে আমি সামলিয়ে নিব, তাহলে? একবার বিশ্বাস করে দেখুন।
.
তিন্নি গালে হাত দিয়ে বেশ শোকাহত ভঙ্গিমায় সোফায় বসে পড়ল। তিন্নিকে এরকম শোকাহত অবস্থায় দেখে জাভেদের বেশ মায়া হয়।
.
– আচ্ছা সরি রাগ করলেন নাকি? আমিতো আপনার খারাপের জন্য বলিনি,বলেছি?
.
তিন্নি কিছু বলে না একেবারে নিশ্চুপ থাকে। কিন্তু নিশ্চুপ চেহারাটা যেন অভিমানে পূর্ন।
.
– আচ্ছা আসুন। কিন্তু পিয়াজ কাটার প্রয়োজন নেই। ধারালো সব কিছু থেকে বিরত থাকতে হবে, রাজি আছেন?
.
– না ইচ্ছা করে না।
.
তিন্নির নাক মুখ থেকে একগাদা অভিমান বেয়ে পড়ছে। অভিমানী তিন্নি যেন এক অদ্ভুত সুন্দরি।
.
– ঠিক আছে সরি বললাম তো এবার আসুন।
.
– বললাম তো আপনি যান।
.
– চুলায় তো খাবার, প্লিজ সময় নষ্ট না করে আসুন প্লিজ।
.
রাগে তিন্নি লাল হয়ে বেশ জোরে চেঁচিয়ে ওঠে,
.
– আপনার কি কানে ডিস্টার্ব?
.
তিন্নির মাথা যে এবার চুলায় পরিনত হয়েছে তা বুঝতে জাভেদের দেরি নেই। এখন তর্ক দূরে থাক এখন তিন্নির সাথে কোনো কথা বলার মানে হল, চুলার বৃদ্ধি করা।চুপচাপ একেবারে চোরের মত জাভেদ রান্নাঘরে চলে যায়।
.
– বাবা কি বদ মেজাজ! যাক ঐখানে বেশীক্ষণ না দাড়িয়ে বেশ ভাল করেছি।
.
রান্নায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে জাভেদ। রান্নায় ব্যস্ত জাভেদ তার পিঠে হঠাৎ হাতের স্পর্শ অনুভব করে। ফিরে তাকিয়ে দেখে তিন্নি। জাভেদ ফিরে তাকানোতে তিন্নি বেশ জোরে হাসা শুরু করে। হাসিটা জাভেদের কাছে বেশ রহস্যময়ী কেননা সে জানে না, তিন্নি ঠিক কি কারণে হাসছে।
.
– আপনি দেখি বললেন আসবেন না।
.
– হুম বলেছিলাম কিন্তু আবার এসেছি। কোনো প্রব্লেম?
.
– না এমনিতে জিজ্ঞেস করলাম।
.
শুধু তিন্নির হাসিকে না তিন্নিকেই জাভেদের রহস্যময় মনেহয়।
.
– কি অদ্ভুত মেয়েরে বাবা! কখন কি বলে কিছুই বুঝি না।
.
– কি ভাবছেন?
.
– কিছু না।
.
– আমি কিন্তু আপনার রান্না পর্যবেক্ষন করতে এসেছি।
.
– না রান্না শিখতে এসেছেন?
.
– মানে কি? আমি রান্না করতে পারি না সেটা বুঝাতে চেলেন?
.
– হাহাহহাহা মুহূর্তে আপনার মেজাজের এত পরিবর্তন হয় কেন?
.
– জানি না।
.
– ঠিক আছে বসুন চুপচাপ আর প্লিজ ধারালো কিছুর কাছাকাছি যাবেন না।
.
– বুঝলাম না, আমি কি ছোট বাচ্চা?
.
– আমি কি বলেছি?
.
তিন্নির বারবার এভাবে রেগে যাওয়ায় চেহারার ভঙ্গিমার অদ্ভুত পরিবর্তন দেখে জাভেদ আর নিজের হাসি থামাতে পারে না।
.
– কি ব্যাপার হাসছেন কেন? পাগল নাকি?
.
তিন্নির কথাটা শুনে জাভেদের হাসির বেগ আরো বৃদ্ধি পেতে থাকে।
.
– ধুর আসলেই আপনার মাথায় ডিস্টার্ব।
.
রাগে প্রায় অগ্নিকুন্ড হয়ে তিন্নি রান্নাঘর ত্যাগ করে।
জাভেদ নিজের হাসিকে কোনোভাবে থামাতে পারে না।
.
– মেয়েটা তো পেট্রল থেকেও ডেঞ্জারাস। হালকা একটু তাপ পেলেই ধাউ ধাউ করে জ্বলে ওঠে।
.
(১৭)
.
টানা অনেকক্ষণ রান্না শেষে জাভেদ শেষ পর্যন্ত অসাধারণ মাংস ভুনা আর খিচুড়ি টেবিলে পরিবেশন করে। তিন্নি এখনো রাগে অগ্নিকুণ্ড হয়ে আছে। প্লেট পরিবেশন থেকে শুরু করে সবকিছু জাভেদ নিজ দায়িত্বে করল, একেবারে প্রফেশনালের মত।
.
– কি ব্যাপার খাবেন না? এত কষ্ট করে রান্না করলাম শুধু আপনার জন্য।
.
– আমার ক্ষুধা নেই। আপনি খেয়ে ফেলুন।
.
– যার জন্য এত সময় কষ্ট করলাম সে যদি না খায়, আমি খেয়ে করব কি?
.
বেশ অভিমানী দৃষ্টিতে তিন্নি অন্যদিকে তাকিয়ে আছে।
.
– আচ্ছা আপনাকে একটা সুযোগ দিতে চাই।
.
– কি? আপনি এত ডিস্টার্ব করতেছেন কেন?
.
– আপনার আমাকে যত গালিগালাজ করতে ইচ্ছা করছে মন খুলে করুন।
.
– আবার ফাজলামি?
.
– না, এতে করে আপনার মন হালকা হয়ে যাবে, সব রাগ বের হয়ে যাবে।
.
– আপনার প্রব্লেমটা কি?
.
– আমি কি কোনো প্রব্লেমের কথা বললাম? আমি তো আরো আপনার রাগ কমানোর জন্য একটা সহজ পদ্ধতি বর্ননা করলাম।
.
অদ্ভুতভাবে তিন্নির মুখে একটা মুচকি হাসি ফুটে উঠল।
তিন্নির হাসিটা দেখে জাভেদ বুঝতে পারে যে, তিন্নির মাথা এখন যথেষ্ট শীতল হয়ে আসছে।
.
– না খেলে, কি আর করার? বাসায় যেতে হবে,এত কষ্ট সব বৃথা হয়ে গেল। বাসায় গিয়ে আবার কে রান্না করবে ! গিয়ে ৩ টা বিস্কুট খেয়ে নাক টেনে ঘুম দিব।
.
– বুঝলাম আর বাহানা দিতে হবে না।
.
চুপচাপ তিন্নি উঠে গিয়ে টেবিলে বসে। তিন্নির ইশারা বুঝতে জাভেদের বাকি নেই। তাড়াতাড়ি গিয়ে তিন্নির প্লেটে খাবার পরিবেশন করে। জাভেদও একেবারে কম ক্ষুধার্ত না। কোনোরকম তিন্নির খাবার পরিবেশন করেই আলোর গতিতে নিজের প্লেটে খাবার নিয়ে একেবারে আলোর গতিতেই সব খাবার হাওয়া করে দেয়।
.
– খাবারটা সত্যি অসাধারণ ছিল। জীবনে প্রথম কোনো ছেলের হাতে এত অসাধারণ খাবার খেলাম।
.
– হুম, তার মানে আপনি এর আগে কখনো হোটেলে খান নি।
.
– মানে কি?
.
– হোটেলের বাবুর্চিরা কি মেয়ে?
.
– আপনি আসলেই মানুষের মাথা নষ্ট করে দিতে পারেন। সবকিছুতেই আপনার কিছু না কিছু উদ্ভট কথা বলতে হবে।
.
– মাত্র খাবার খেয়ে উঠলেন, আবার রাগ? এবার ওসব কথা বাদ দেই একটা সিরিয়াস প্রশ্ন জিজ্ঞেস করব?
.
– কি?
.
– আপনার কি মনেহয় না, রনিকে বিষয়টা জানানো উচিত? মানে, আপনি যে প্রেগন্যান্ট সেটা কি রনিকে জানানো উচিত না?
.
– কিন্তু কেন?
.
– রাগ করবেন না কিন্তু সন্তান তো রনির। অন্তত পক্ষে তাকে বিষয়টা জানানো উচিত নাকি?
.
– রনি যদি তাহলে কোনো উল্টা পদক্ষেপ নেয় দায়ভার কি আপনি নিবেন? না আপনি বলতে চাচ্ছেন যে, রনি বিষয়টার দায়ভার নিক? আমি তো আগেও বলেছি, আমার সাহায্যর কোনো প্রয়োজন নেই।
.
– আরে বাবা! আপনি বিষয়টা সম্পুর্ন নেগেটিভলি নিলেন। আমি শুধু বললাম সেই ছেলেটার তো জানা উচিত নাকি? আপনি এখানে বসে অসাহয়ের মত দিন রাত কষ্ট করবেন আর সে সেখানে বসে দিন রাত আরামে কাটিয়ে দিবে?
.
– আপনি জানেন কিভাবে রনি সেখানে আরামে কাটাচ্ছে? আপনি মাত্র ২-৩ দিন আমাকে চিনেন। রনি সম্পর্কে আপনার কাছ থেকে আমার কিছু শেখার প্রয়োজন নেই।
.
– স্বাভাবিক আপনি আমার থেকে আপনার প্রেমিক সম্পর্কে আপনি ভাল জানেন। আমি শুধু ব্যক্তিগত কিছু মতামত দিলাম আর কিছু না।
.
– এরকম মতামতের কোনো প্রয়োজন নেই।
.
– তার মানে আপনি একা এই কষ্ট ভোগ করতে চান?
.
– জ্বী, আমার কোনো অসুবিধা নেই যদি আপনার ঝামেলা হয় তাহলে চলে যান।
.
– ঠিক আছে আপনার কোনো অসুবিধা না থাকলে আমার কেন থাকবে? আশাকরি আমার কথাগুলোতে মাইন্ড করেননি। বাই দ্যা ওয়ে আমার মোবাইল নাম্বারটা লিখে রাখতে পারেন, যদি জরুরী কোনো সময় প্রয়োজন হয় এজন্য লিখে রাখতে পারেন।
.
– আমার তো মোবাইল নেই নাম্বার লিখে কি করব?
.
– আপনি দেখি বললেন আপনাকে নাকি ঐ ছেলেটা ১১ হাজার টাকা দিয়ে মোবাইল কিনে দিয়েছিল?
.
– হুম দিয়েছিল এখন সেই মোবাইলের ফসিল আলমারিতে পড়ে আছেন।
.
– মানে আপনি কোনো মোবাইল ব্যবহার করেন না?
.
– না, রনি যেদিন বাসা ছেড়ে চলে গিয়েছিল তারপরের দিন ওকে অনেকবার ফোন দিচ্ছিলাম কিন্তু ধরেনি তাই রাগে ভেঙে ফেলেছিলাম।
.
– মানে এই অবস্থায় আপনার কাছে মোবাইল নেই?
.
– না।
.
জাভেদ তিন্নির দিকে অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে।
.
– আচ্ছা ঠিক আছে। আমি এখন আসি। আল্লাহ হাফেজ।
.
– আল্লাহ হাফেজ।
.
জাভেদ দরজাটা খুলে চুপচাপ বাসায় চলে যায়।
.
– হে আল্লাহ! বাহিরে এত বৃষ্টি তারপর এত গরম ক্যামনে?
.
জাভেদ ফ্যানটা ছেড়ে সোফায় শুয়ে থাকে।
.
– বাবা তিন্নির ভয়াবহ রাগ! একটু কিছু বললেই একেবারে আগুন হয়ে যায়। কিন্তু হয়ত মানুষটা এরকম না, পরিস্থিতির স্বীকারে এরকম আচরণ করে। আমি হলে তো হয়ত এতদিন বেচেও থাকতাম না ঐ মেয়েতো তবু সুস্থ সুন্দর ভাবে দাড়িয়ে আছে।
যোগাযোগ করার মোবাইলটা পর্যন্ত ভেঙে গিয়েছে আসলে ঝামেলা,সমস্যা মেয়েটার জীবনকে একেবারে চারদিক থেকে ঘিরে রেখেছে। কিন্তু মোবাইলটা না থাকা আসলে মেয়েটার জন্য ভয়াবহ হতে পারে। এখন তিন্নি যে অবস্থায় আছে তাতে মোবাইল তার পাশে থাকা অত্যাবশ্যক। একটা এন্ড্রয়েড মোবাইলের আর কি দাম? চার – সাড়ে চার হাজারের মধ্যেই মোটামুটি ভাল একটা এন্ড্রয়েড সেট পাওয়া যাবে। তিন্নি রনিকে যেভাবে ভালোবাসে সেটা আসলে অকল্পনীয়। আমিও আন্দাজে ছেলেটাকে নেগেটিভলি নিয়েছি। তিন্নির কাছে তো মোবাইল ছিল না তাহলে রনিও বা ওর সাথে কিভাবে যোগাযোগ করবে? বৃষ্টিও শেষ হয়ে গিয়েছে, আকাশও প্রায় পরিষ্কার হয়ে আসছে। চার-সাড়ে চার হাজার খরচ করে তিন্নিকে একটা মোবাইল কিনে দিলে অসুবিধা কোথায়? আর কিনলে আজকের মধ্যেই কেনা উচিত। কালকে থেকে তো আবার ব্যস্ত জীবনযাপন শুরু হয়ে যাবে। তিন্নির এখন যে অবস্থা ওর কাছে মোবাইল থাকা আবশ্যক। বৃষ্টির কোনো ঠিকানা নেই। আবার শুরু হয়ে যেতে পারে তাড়াতাড়ি রওনা দেওয়া উচিত।
.
কোনোরকম গেঞ্জি পাল্টিয়ে একটা শার্ট গায়ে দিয়ে আলমারি থেকে টাকা নিয়ে আর ছাতাটা হাতে নিয়ে সোজা রওনা দেয় জাভেদ।
.
বৃষ্টি আসার সম্ভাবনা অনেকটা কম। আকাশে ক্রমশ উজ্জ্বল হতে থাকে। রোদের পরিমাণ ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকে। রিক্সাটা পেতে জাভেদের বেশ কষ্ট হচ্ছিল। অনেকখানি পথ হাটতে হয়েছিল কিন্তু শেষমেশ পেয়েছে। রিক্সাটায় বেশ আরামে জাভেদ বসে আছে। বৃষ্টির খুব একটা ভয় নেই। নাইম টেলিকমের সামনে রিক্সাটা থামিয়ে, রিক্সাওয়ালাকে ভাড়াটা দিয়ে দোকানে ঢোকে। দোকানে ঢুকে ইতিকে দেখে।
.
– কি ব্যাপার কেমন আছ?
.
– এইতো আছি তুই এখানে কি কর?
.
– এইতো মোবাইল কিনতে এসেছি।
.
– ক্যান আগের মোবাইলের কিছু হয়েছে?
.
– আরে না। এমনি চার-সাড়ে চারের মধ্যে একটা এন্ড্রয়েড কিনতে আসলাম।
.
– কিন্তু কেন?
.
– ঐ একজনকে গিফট করব।
.
– কে সেই মেয়ে?
.
– আমি কোনো মেয়ের কথা বলসি?
.
– আরে আমি সব বুঝি মামা। ইদানিং ভার্সিটিতে আস না, ফেইসবুকে এক্টিভ থাক না তুই কোনো মেয়ের পাল্লায় পড়েছিস। আমি ১০০% শিউর। তো সেই মেয়ে কে?
.
– আরে বাবা এগুলা কি বল কিছুই বুঝি না। আমিতো এমনিতেই সারাদিন ব্যস্ত থাকি তুই বুঝি জান না।
.
– জানি কিন্তু আগে তো এত ব্যস্ত থাকতি না। প্লিজ দোস্ত নাম বল না মেয়েটার।
.
– আরে বাবা বললাম তো কেউ না।
.
– তাহলে কাকে গিফট দিবি।
.
– আরে আমার চাচাত ভাইকে
.
– কি! বিশ্বাস হয় না। হোটেলে চা খাওয়াতে গেলেও তোর হাত-পা কাঁপে হঠাৎ এত বড় দয়ালু হয়ে গেলি যে। প্লিজ সত্যি বল।
.
– আরে বাবা ওকে পড়াতাম তো লেখাপড়া কিছু করতে চাইত না তো মোবাইলের লোভ দেখিয়ে ভাল রেজাল্ট করিয়েছি। এখন ৫-৬ মাস ধরে শুধু মোবাইল, মোবাইল করে। পড়তেও চায় না। ভাবলাম একটা কিনে দেই।
.
– এখনো বিশ্বাস হয় না।
.
– অবিশ্বাস করলে আমার কিছু করার নেই। কিন্তু তুই এজায়গা কি কর?
.
– একটা হেডফোন কিনতে এসেছি।
.
– ওহ!
.
ইতি হয়ত জাভেদের কথা বিশ্বাস করে ফেলেছে। ইতিকে বোকা বানাতে পেরে গর্বে জাভেদের বুক ফুলে যায়।
.
জাভেদ দোকানে খুব একটা সময় নষ্ট না করে সাড়ে চার হাজার টাকা দিয়ে একটা এন্ড্রয়েড মোবাইল কিনে তারাহুড়া করে দোকান থেকে বেরিয়ে আসে। হয়ত ইতির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য। কিন্তু সেটা হয়ত কপালে লেখা ছিল না।
.
– এই জাভেদ এদিকে শোন।
.
– কি?
.
– আজকে তো রেস্টুরেন্টে খাওয়াতে হবে তাতে যা হোক।
.
– অন্য একদিন টাকা নাই।
.
– তুই আসলে একটা সেলফিশ বন্ধু। এত টাকা খরচ করে শুধুমাত্র গিফটের জন্য মোবাইল কিনতে পার কিন্তু একটু রেস্টুরেন্টে খেতে চেলাম তা পারবি না।
.
ইতির এতটা অভিমান মাখা বাক্যগুলোর কাছে জাভেদ পরাজিত হয়ে যায়।
.
– ঠিক আছে চল।
.
– না থাক।
.
– আচ্ছা সরি। এমনি ফাজলামি করেছি এবার চল।
.
মুহূর্তেই ইতির মুখে বিজয়ের হাসি। জাভেদকে পরাজিত করে জাভেদের পকেটকে লুট করার এক আনন্দের স্রোত ইতির নাক মুখ বেয়ে পড়ছে।
.
(১৮)
.
সন্ধ্যা পর্যন্ত ইতির হাতে লুট হয়ে বেশ শোকাহত হয়ে তিন্নির বাসায় বেল বাজায় জাভেদ। তিন্নি দরজা খুলতে একটু দেরি করে কিন্তু জাভেদ দ্বিতীয় বেল দেওয়ার আগেই দরজাটা খুলে দেয়।
.
– বিরক্তর জন্য দু:খিত। ঘুমে ছিলেন নাকি?
.
– না, বারান্দায় ছিলাম, খেয়াল করিনি।
.
– আপনার জন্য একটা গিফট এনেছি। প্লিজ এটা রাখুন।
.
– মানে কি? আপনি অযথা এতগুলো টাকা খরচ করে মোবাইল কিনলেন কেন?
.
– অযথা না আজকে এমনিতে আপনার মনে বেশ আঘাত দিয়েছি আর দ্বিতীয়ত আপনার এই অবস্থায় আপনার কাছে একটা মোবাইল থাকা আবশ্যক। প্লিজ এটাকে রাখুন। খুব একটা দামি না। কিন্তু প্লিজ রাখুন।
.
– দামি না কমদামী জিজ্ঞেস করেছো?
.
মোবাইলের বাক্সটা তিন্নি নিজের হাতে নেয়।
.
– আপনার কাছে সিম আছে না?
.
– হুম আছে।
.
– মুলত আমি মোবাইলটা আপনাকে এনে দিয়েছি যাতে আপনি রনির সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। রাগ করবেন না, আমি আপনার প্রেগন্যান্সির ব্যাপার বলতে বলব না। আপনি রনিকে পাগলের মত ভালোবাসেন, আসলে রনিকে ছাড়া আপনার যে কত কষ্ট হয় তা আমি যথেষ্ট বুঝতে বুঝতে পারি। আপনার যেরকম কষ্ট হচ্ছে হয়ত ছেলেটারও হচ্ছে। আপনার কি ফোন করে ওর সাথে কথা বলা উচিত না?
.
– আপনি সত্যি অদ্ভুত। আমাকে আমার ব্যাবহারের জন্য ক্ষমা করুন কিন্তু রনির বাবা ওর মোবাইল ভেঙে ফেলেছে আর এত তাড়াতাড়ি কিনে দেওয়ারও কথা না। কিন্তু… আমার বান্ধবী তানিয়ার কাছে মাঝে রনিকে ফোন দিয়েছিল। ওটা ওর নাম্বার ছিল না। অন্য কারো ছিল।
.
– একবার ট্রাই করে দেখুন। যদি কপাল ভাল থাকে।
.
– থ্যাঙ্ক ইউ ভেরি মাচ। আপনি আসলেই একজন অতুলনীয় মানুষ। আপনার সাথে প্রায় সময় রাগ হয়ে যাই প্লিজ রাগ করবেন না।
.
– আরে বাবা আমি অত সহজে রাগ করি না।
.
– ভিতরে এসে বসুন।
.
জাভেদ ভিতরর গিয়ে সোফায় বসে পড়ে। তিন্নি আলমারি থেকে সিম বের করে মোবাইলে সিমটা ঢুকায়। তিন্নির নাক মুখে অস্থিরতা একেবারে স্পষ্ট। নাহ! তিন্নি কোনোভাবে আর ধৈর্য ধরতে পারে না। তারাহুড়া মোবাইলটা অন করেই প্রথমে তানিয়ার মোবাইলে ফোন দেয়। তানিয়ার নাম্বার তিন্নির মুখস্থ তাই টাইপ করতেও সময় লাগে না। ফোন দেওয়ার সাথে সাথেই তানিয়া মোবাইলটা ধরে।
.
– হ্যালো, তিন্নি?
.
– হ্যা,কেমন আছ? প্লিজ একটু হেল্প করবি?
.
– কি হেল্প।
.
– সেদিন রনি যেই নাম্বারটা দিয়ে ফোন দিয়েছিল সেটা একটু দিতে পারবি।
.
– মনে নাই তো আমার।
.
– ঐদিন নাকি ১০-২০ বার ফোন দিয়েছিল একটু খুজে দেখ। আমি শিউর তুই পাবি।
.
– আচ্ছা তাহলে একটু সময় দে।
.
– ঠিক আছে। কিন্তু প্লিজ তাড়াতাড়ি।
.
– ঠিক আছে আমি খুঁজে পেলেই ফোন দিব।
.
– আচ্ছা কিন্তু তাড়াতাড়ি।
.
তিন্নি মোবাইলটা কেটে দেয়।
.
– কী ব্যাপার নাম্বারটা পেয়েছেন?
.
– না, তানিয়া খুঁজতেছে। খুঁজে পেলেই নাকি ফোন দিবে।
.
– ওহ! আচ্ছা।
.
তিন্নি এতটাই অস্থির যে জাভেদ তাকে অহেতুক প্রশ্ন করে ডিস্টার্ব করে না। হাতে কলম আর খাতা নিয়ে তিন্নি ঘরের এমাথা ওমাথা অস্থির হয়ে হাটতে থাকে আর একটু পর পর জগ থেকে পানি পান করতে থাকে। যেন প্রতিটা মুহূর্ত তিন্নির কাছে এখন এক বছর। প্রায় ৮-১০ মিনিট পর তানিয়ার ফোন আসে। অস্থিরতায় তিন্নি উম্মাদ হয়ে যায়। আলোর বেগে কল রিসিভ করে।
.
– হ্যালো নাম্বারটা পেয়েছিস?
.
– হুম পেয়েছি তো।
.
– প্লিজ দোস্ত একটু তাড়াতাড়ি বল।
.
– আচ্ছা শান্ত হ, 017……….
.
– অনেক অনেক ধন্যবাদ। লাভ ইউ এ লট।
.
বুঝলাম কিন্তু কি হয়েছে? কোনো ঝামেলা হয়েছে?
.
– না এমনি।
.
মোবাইলটা কেটে দিয়েই খুশিতে তিন্নি প্রায় পাগল হয়ে যায়
.
– কি হয়েছে? নাম্বার পেয়েছেন?
.
– হ্যা পেয়েছি, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ,মোবাইলটা কিনে দেওয়ার জন্য।
.
তিন্নি কোনোভাবে আর ধৈর্য ধরতে পারে না। নাম্বারটা কোনোভাবে মোবাইলে উঠিয়েই নাম্বারটায় ফোন দেয়। ধরতে একটু দেরি হলেও শেষমেশ কেউ একজন ফোনটা ধরে।
.
– হ্যালো,এটা কি রনির নাম্বার।
.
– না কিন্তু আপনি কে? আমি রনির চাচাত ভাই।
.
– আমি তিন্নি। রনি কিছুদিন আগে এই নাম্বার থেকে ফোন দিয়েছিল।
.
– ও,আপনি! রনিতো সিরিয়াস এক্সিডেন্ট করেছে।
.
– কিভাবে?
.
– ঐ বাইকে এক্সিডেন্ট করেছে।
.
– এখন কি অবস্থা?
.
– হাসপাতালে।
.
– ওর নাম্বারটা দেওয়া যাবে?
.
– ওর কাছে তো মোবাইল নাই। চাচ্চু ওর মোবাইল ভেঙে ফেলেছে তো।
.
তিন্নি আর নিজেকে স্থির রাখতে পারে না। মোবাইলটা কেটে দেয়। ঘামে সারা শরীর ভিজে গিয়েছে।একবারে পাথর হয়ে দাড়িয়ে থাকে। জাভেদ তিন্নির এরকম অবস্থা দেখে তিন্নির পাশে দাড়ায়।
.
– কী হয়েছে? কোনো ব্যাড নিউজ প্লিজ অস্থির হবেন না। একজায়গা বসুন।
.
জাভেদকে জড়িয়ে ধরে তিন্নি একেবারে পাগলের মত করে কাদতে থাকে। তিন্নিকে এতটা শোকাহত হতে জাভেদ কখনো দেখেনি।
.
– কি হয়েছে? বলবেন তো।
.
– রনি নাকি এক্সিডেন্ট করেছে, প্লিজ আমাকে ওর কাছে নিয়ে যান। প্লিজ।
.
– আন্দাজে কিভাবে যাব।
.
– জানিনা আমি কিছু জানি না। প্লিজ রনির যদি কিছু হয়ে যায়?
.
– কিছু হবে না। আল্লাহ আছেন আপনি চুপচাপ বসুন।
.
জাভেদের শার্ট বেশ জোরে চেপে ধরে যেন কোনোভাবে জাভেদের বুক থেকে নিজের মাথা সরাতে ইচ্ছুক না। তিন্নির চোখের পানিতে জাভেদের শার্ট ভিজে যায়।তিন্নির নরম চুলে জাভেদ হাত বুলাতে থাকে। তিন্নির চোখের পানিগুলো কোনোভাবে বন্ধ হতে চায় না। জাভেদের এই শার্টটা হয়ত এখন এই পৃথিবীতে তিন্নির একমাত্র আশ্রয়স্থল।
.
(চলবে…..)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here