#ভালোবাসি_বলেই_তোমাকে_প্রয়োজন
লেখক-এ রহমান
পর্ব ১২
অরন্যর কথাটা বিস্ফোরকের মতো কাজ করলো। সবার চোখ অক্ষিকোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম। জামাই আবার কে? আর বিয়েই কখন হল? কৌতূহল নিয়ে তাকিয়ে আছে অরন্যর দিকে। সবার মনে একই প্রশ্ন। অরন্য নিজের হেয়ালি ছেড়ে এবার থমথমে গম্ভীর কণ্ঠে সারিয়ার বাবাকে বলল
–আমাকে না জানিয়ে আমার বউকে অন্য কারো সাথে বিয়ে দেবার জন্য আমি আপনার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারি সেটা কি জানেন না? না জানলে জেনে রাখুন। আমি কিন্তু সব কিছু করতে পারি।
সারিয়ার বাবা সরু চোখে তাকালেন। কৌতূহলী কণ্ঠে বললেন
–তোমার বউ মানে? কে তোমার বউ?
অরন্য হাতে ধরে থাকা কাগজটা এগিয়ে দিয়ে বলল
–এটা দেখুন। দেখলেই সব বুঝতে পারবেন।
সারিয়ার বাবা মনোযোগ দিয়ে কাগজটা পড়লেন। ম্যারেজ রেজিস্ট্রি পেপার। সেটাতে সারিয়া আর অরন্যর সাইন স্পষ্ট। মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো তার। কয়েক মুহূর্ত নীরব থেকে এগিয়ে সারিয়ার সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন। গম্ভীর গলায় বললেন
–এটা কি সত্যি?
সারিয়া বাক্রুদ্ধ হয়ে দাড়িয়ে আছে। দৃষ্টি তার কাগজটার দিকে স্থির। সব কিছু কেমন স্বপ্নের মতো লাগছে তার। অরন্যর সাথে তার এমন কোন সম্পর্ক তৈরিই হয়নি। আর বিয়ে তো অসম্ভব। সারিয়ার বাবা এবার কাগজটা মেয়ের দিকে মেলে ধরে হুঙ্কার ছেড়ে বললেন
–কথা বলছ না কেন? এটা কি সত্যি?
সারিয়া কেঁপে উঠলো। চোখের পাতা পিটপিট করে তাকাল। অরন্যর পাশে নিজের সাইনটা দেখেই পায়ের তলার মাটি সরে গেলো তার। বিয়ে কখন হল? আর কিভাবেই বা হল? কিছুই জানতে পারল না সে। তাহলে কি অরন্য মিথ্যে কাগজ বানিয়ে এনেছে? কিন্তু এটা তো অসম্ভব। কারন সাইনটা একদম আসল। তার করা। ওই পেপারে সারিয়ার সাইন কিভাবে এলো সেটা ভেবেই পাচ্ছে না। এরকম কোন কাগজে সে তো সাইন করেনি। হঠাৎ মনে পড়ে গেলো এগ্রিমেন্টের কাগজে অরন্য তার কাছ থেকে সাইন নিয়েছিল। আর সেদিন তাকে সব কাগজ গুলো পড়েও দেখতে দেয়নি। তাহলে সেদিনই কি অরন্য ধোঁকা দিয়ে তার সাইন নিয়েছিল এই কাগজে? কিন্তু কেন? এই বিয়ের নাটক করার কারন কি? আর সারিয়াকেই বা সবটা বলেনি কেন? ভাবতে ভাবতেই শারমিন বাবার হাত থেকে কাগজটা নিয়ে পুরোটা পড়ে দেখল। আনমনে হয়ে বলল
–এটা তো রিয়ার সাইন। তাহলে বিয়ে হয়ে গেছে?
সারিয়ার দিকে দৃষ্টি ফিরিয়ে আবার বলল
–এতো বড় একটা কথা তুই আমাদের কেন বলিসনি রিয়া?
শারমিনের কথা শেষ হতেই সারিয়ার গালে তার বাবা সজোরে থাপ্পড় মারলেন। সারিয়া ছিটকে পড়ে গেলো মেঝেতে। দাঁতে দাঁত চেপে বললেন
–আমি ভাবতেও পারছি না তুমি এমন কোন কাজ করবে। তোমাকে আমি যথেষ্ট স্বাধীনতা দিয়েছি। তার প্রতিদান এই দিলে? ছিহ! তোমাকে আমার মেয়ে বলে ভাবতেও লজ্জা হচ্ছে।
সারিয়া উঠে দাঁড়ালো। কেদে ফেলে বলল
–আমি এমন কিছুই করিনি বাবা।
সারিয়ার বাবা কোন কথা শুনলেন না। তিনি হাত উঠিয়ে মেয়েকে থামিয়ে দিয়ে বললেন
–তোমার কোন কথা শোনার মতো রুচি আমার নেই। আমাকে নিজের কোন সাফাই দিতে আসবে না। আমার যা বোঝার বুঝে গেছি।
সীমান্ত এগিয়ে এসে দাঁড়ালো ঠিক অরন্যর সামনে। কলার চেপে ধরে বলল
–এসব বাজে কথা বলে তুমি কি প্রমান করতে চাও? সত্যি সত্যি সারিয়াকে তুমি বিয়ে করেছ? তুমি কত বড় নাটক বাজ সেটা আমার থেকে ভালো এখানে কেউ জানে না। তাই বাকি সবাই তোমার কথার উপরে গুরুত্ব দিলেও আমি কিন্তু দিচ্ছি না। নিজের ভালো চাও তো এখান থেকে চলে যাও। নাহলে তোমাকে কিভাবে নাস্তানাবুদ করতে হয় সেটা আমার জানা আছে।
অরন্য অত্যন্ত শান্ত ভাবে হাসল। সীমান্তর হাত দুটো কলার থেকে নামিয়ে দিয়ে বলল
–রিলাক্স ব্রো। এতো উত্তেজিত হলে কিভাবে হবে? এখনো তো অনেক নাটক বাকি আছে। সেসব দেখার সময় তাহলে কি করবে বল?
সীমান্ত দাঁতে দাঁত চেপে বলল
–এসব নাটক বন্ধ করো অরন্য। তুমি যা বলছ সেটা কোনভাবেই সত্যি নয়।
সারিয়ার বাবার দিকে তাকিয়ে বলল
–আপনি কেন শুধু এই নাটক বাজ ছেলের কথা বিশ্বাস করছেন? সারিয়া এমন কাজ করতেই পারে না। অন্তত আমি এটা বিশ্বাস করি না। আর ওসব কাগজের কোন মুল্য নেই। কারন ওটা সারিয়াকে না জানিয়েই সাইন নেয়া হয়েছে।
অরন্য বাকা হাসল। বলল
–আপনি কিভাবে সিওর হচ্ছেন সারিয়াকে না জানিয়েই সাইন নেয়া হয়েছে? আমি যদি বলি এই বিয়েতে সারিয়ার মত ছিল। আর সারিয়া জেনে বুঝে সজ্ঞানে সাইন করেছে।
সীমান্ত উত্তেজিত হয়ে গেলো। চিৎকার করে বলল
–কারন ওই কাগজটা আমি তোমাকে তৈরি করতে বলেছিলাম। আর এগ্রিমেন্টের নামে আমার আর সারিয়ার সাইন নিতে বলেছিলাম। কিন্তু তুমি! তুমি আমার সাথে ডাবল গেম খেলেছ। তোমাকে তো আমি কোনভাবেই ছাড়ব না।
বলেই থামল। অরন্য সারিয়ার বাবার দিকে তাকিয়ে বলল
–শুনলেন তো? কেমন ছেলের সাথে মেয়ের বিয়ে ঠিক করেছিলেন? বাবা হিসেবে মেয়ের জন্য ছেলে সম্পর্কে সবটা যাচাই করা উচিৎ ছিল আপনার। কিন্তু আপনি সেটা না করেই সম্পদ দেখেই ছেলে নির্বাচন করে ফেলেছেন। বরাবরই আপনার সম্পদের উপরে লোভ তাই না?
অরন্যর শেষের কথাটা শুনে নড়েচড়ে উঠলেন সারিয়ার বাবা। স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকলেন তার দিকে। অরন্য দৃষ্টি ফিরিয়ে সীমান্তর দিকে তাকিয়ে বলল
–সারিয়া যে আমার স্ত্রী সেটা নিয়ে এখনো আপনার কোন সন্দেহ আছে? অবশ্য আপনার বিশ্বাস না করাতে সত্যিটা মিথ্যা হয়ে যাবে না। আর আমি আপনাকে কোন প্রমান দিতেও মানসিক ভাবে প্রস্তুত না।
বলেই সারিয়ার বাবার সামনে দাড়িয়ে বলল
–ওনাদের আপ্যায়ন শেষ হয়েছে। এখন সসম্মানে বিদায় দিন। তাহলেই সবার জন্য ভালো।
সীমান্ত আরও রেগে গেলো। উত্তেজিত হয়ে বলল
–আমার কোন প্রমান চাই না। তোমার কোন কথাই আমি বিশ্বাস করি না। তুমি এখান থেকে এই মুহূর্তে চলে যাও। সারিয়ার সাথে আমার বিয়ে হবে। আজ আমাদের এঙ্গেজমেন্ট।
অরন্য ঘুরে তাকাল। মৃদু হেসে বলল
–হু আর ইউ? আমি আমার শশুরের সাথে কথা বলছি। আর প্রমান দেখতে চাইলে ওনাকেই দেখাব। আর আমার মনে হয় আমাদের ফ্যামিলি ম্যাটারে বাইরের কেউ কথা বলা শোভা পায় না। আর কিসব আজেবাজে কথা বলছেন। আমি জতদুর জানি স্বামী বেঁচে থাকতে কোন স্ত্রী দ্বিতীয় বিয়ে করতে পারে না। আমি তো এখনো বেঁচে আছি। আর একদম আপনার সামনে। তাহলে কিভাবে সারিয়াকে বিয়ে করবেন। অজথা এসব নিয়ে ঝামেলা করবেন না। এখান থেকে চলে যান।
সীমান্তর মা এতক্ষন চুপ করে বসে শুনছিলেন। অরন্য কথা বলা শেষ করতেই তার মা উঠে দাড়িয়ে সীমান্তর কাছে এসে বললেন
–এখান থেকে চলো। এটা তাদের পরিবারের ব্যাপার। আমাদের নাক গলানোর কোন প্রয়োজন নেই।
সীমান্ত অবাক হয়ে বলল
–কিসব বলছ মা? আমরা যে কাজে এসেছি সেটা এখনো শেষ হয়নি।
সীমান্তর মা স্থির দৃষ্টিতে তাকালেন। গম্ভীর গলায় বললেন
–তোমার এতো অধপতন সীমান্ত? বিবাহিত মেয়েকে বিয়ে করতে চাইছ? এখানে তার হাসবেন্ড উপস্থিত। আর কোন কথা না। এখান থেকে এখনই চলো।
বলেই সীমান্তকে এক প্রকার টেনে বের করে নিয়ে গেলেন। আর কোন কথা বলার সুযোগ দিলেন না। সারিয়ার বাবা অরন্যকে বলল
–তোমার সাথে আমি একা কথা বলতে চাই। আমার সাথে এসো।
চলবে……