ভালোবাসি বলেই তোমাকে প্রয়োজন পর্ব -১১

#ভালোবাসি_বলেই_তোমাকে_প্রয়োজন
লেখক-এ রহমান
পর্ব ১১

সাদা মাটা আয়োজন চলছে। সীমান্ত বলে দিয়েছে তার মা খুব একটা জাঁকজমক আয়োজন করতে চান না। তারা শুধু মা ছেলে আর তার বোন আসবে। আংটি পরিয়ে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করেই চলে যাবে। সারিয়ার বাবা দুপুরে খাবার আয়োজন করেছেন। সাদা মাটা হলেও আপ্যায়নটা ঠিকঠাক তো করতেই হবে। এতো বড় মানুষ আসছেন তাদের বাসায়। সারা রাত এই বিষয়টা নিয়ে ভীষণ চিন্তিত ছিলেন। ঠিক মতো ঘুমাতে পারেন নি। কিন্তু সকালে উঠেই যখন শারমিন খবর দিলো যে সারিয়া বিয়েতে রাজি হয়েছে। তার খুশীর কোন অন্ত ছিল না। তখনই বের হয়ে গিয়েছিল বাজারে। পাশেই তাদের খালার বাড়ি। ফোন করে ডেকে পাঠিয়েছে। কি করবে কিভাবে করবে সব কিছু নিয়ে ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠেছে। তিনি যেন কোন কিছুতেই সস্তি পাচ্ছেন না। সব কিছুই তার এলোমেলো মনে হচ্ছে। শারমিন তার খালাকে সাহায্য করছে। সারিয়া সকাল থেকে ঘর থেকে বের হয়নি। তার বাবা উঁকিঝুঁকি মেরে শারমিন কে বললেন
–সারিয়া কি করছে? ঘুমচ্ছে এখনো?

শারমিন মৃদু হাসল। বলল
–না বাবা। উঠেছে। এমনিতেই বসে আছে।

তার বাবা চিন্তিত কণ্ঠে বলল
–ওকে একটু তাড়াতাড়ি রেডি করে দিস মা। ওনারা আসার আগেই। নাহলে এসে অপেক্ষা করবে বিষয়টা কেমন দেখায় না?

শারমিন প্রশস্ত হাসল। সকাল থেকেই তার বাবা এমন করছে। প্রতিটা বিষয় নিজে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছেন। যেন উনি না দেখলেই সব এলোমেলো হয়ে যাবে। ওনার চিন্তাটা শারমিন ধরতে পেরেই বলল
–তুমি এতো ভেব না তো। সব ঠিক থাকবে দেখো। আমি আছি খালা আছে। এতো ভাবার কিছু নেই বাবা। আর ওনারা এমনিতেও খুব ভালো মানুষ। এতসব কিছু ধরেন না।

তার বাবা মাথা নিচু করে মৃদু হাসল। বলল
–মেয়ের বাবা আমি। চিন্তা তো হবেই রে মা। তাদের জত্ন আত্তিতে কোন কমতি থাকলে মেয়ে যে আমার সুখি হবে না। আমাকে তো মেয়ের সুখ নিশ্চিত করতেই হবে।

শারমিন হাসল। আসলেই তার বাবা মেয়েদেরকে নিয়ে অনেক ভাবেন। বলল
–আমি দেখছি বাবা।

তার বাবা মাথা নাড়লেন। শারমিন ঘরে গেলো। দেখল সারিয়া বিছানায় বসে মাথা এলিয়ে দিয়ে আছে। গভীর ভাবে কি যেন ভাবছে। শারমিন দরজার কাছ থেকেই বলল
–তুই তো সকাল থেকে কিছু খাস নি। খাবি না?

কথাটা সারিয়ার কান অব্দি পৌঁছল না। সে এতটাই ভাবনায় বিভোর। শারমিন কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে এগিয়ে গেলো তার কাছে। মাথায় হাত দিতেই চমকে উঠলো। তাকিয়ে অস্থির কণ্ঠে বলল
–কি হয়েছে?

শারমিন অবাক হয়ে গেলো। কয়েকবার পলক ফেলে বলল
–কিছু হয়নি রিয়া। কি ভাবছিস তুই?

সারিয়া একটা শ্বাস ছেড়ে বলল
–কিছু না আপু। কি যেন বলছিলে?

শারমিন বুঝতে পারল সারিয়া এড়িয়ে যাচ্ছে। তাই আর কথা বাড়াল না। বলল
–তোকে খাইয়ে দেই?

সারিয়া কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে মাথা নাড়ল। শারমিন বের হয়ে গেলো খাবার আনতে। রান্না ঘরে গিয়ে খালার সাথে টুকটাক কিছু কথা বলতেই তার বাবা হন্তদন্ত করে এসে বলল
–তাড়াতাড়ি কর। ওনারা ১ ঘণ্টার মধ্যে চলে আসবেন।

সবাই কাজের জোর বাড়িয়ে দিলো। শারমিন কোন রকমে খাবার নিয়ে ঘরে গেলো। ঢুকেই ব্যস্ত ভঙ্গীতে সারিয়ার মুখে তুলে দিতে দিতে বলল
–তাড়াতাড়ি খেয়ে নে রিয়া। তারপর তোকে রেডি করে দেবো। ওনারা কিছুক্ষন পরেই চলে আসবেন।

সারিয়া অসহায় চোখে তাকাল। শারমিন সেই দৃষ্টির অর্থ ধরতে পারলেও আমলে নিলো না। ভেবেই নিলো এখন সারিয়ার হয়তো বিষয়টা মানতে কষ্ট হলেও বিয়ের পরে সব ঠিক হয়ে যাবে। দুজন একসাথে ঘুরবে ফিরবে নিজেদেরকে জানবে তাহলেই আর কোন সমস্যা হবে না। তাড়াতাড়ি খাইয়ে দিয়ে বলল
–আমি এসে তোকে শাড়ী পরিয়ে দেবো।

সারিয়া মাথা নাড়ল। কোন কথা বলল না। শারমিন বের হয়ে যেতেই তার বুকের ভেতরটা কেমন শুন্যতা অনুভব করলো। চোখ ছলছল করে উঠলো। বন্ধ করতেই কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো। এলোমেলো অনুভূতি। ভীষণ ভাবে কারো শুন্যতা তার মাঝে বিরাজ করছে। কিন্তু কোনভাবেই কিছুই বুঝতে পারছে না। পায়ের আওয়াজ শুনেই চোখ মুছে ফেললো। শারমিন ভেতরে ঢুকে আলমারি থেকে একটা শাড়ী বের করে সারিয়ার সামনে ধরল। আনমনে হয়ে বলল
–সুন্দর না? এটা মায়ের শাড়ী। তুই পর না রিয়া।

সারিয়া উঠে দাঁড়ালো। শাড়িটার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে এগিয়ে এসে সেটা হাতে নিলো। সারা শাড়িতে হাত বুলিয়ে বুকের সাথে চেপে ধরল। জন্মের পর থেকে মায়ের সানিধ্য লাভ করার ক্ষমতা তার হয়নি। কিন্তু শাড়িটা বুকে চেপে ধরতেই মনে হল তার যেন মায়ের পরম আলিঙ্গনের সৌভাগ্য হল তার। এবার আর কান্নাটা ধরে রাখতে পারল না। ডুকরে কেদে উঠলো। তার মনে হল মা থাকলে হয়তো তার কষ্টটা বুঝতে পারতো। মায়ের কোলে মাথা রেখে কাদলে হয়তো কিছুটা হলেও তার কষ্টটা কমতো। তার কান্না দেখে শারমিনও নিজের চেপে রাখা কষ্টটা বের করে দিলো। বোনকে বুকে জড়িয়ে ধরে কেদে উঠলো। বেশ কিছুক্ষন ওভাবে থাকার পর শারমিন নিজেকে সামলে নিয়ে বলল
–আর দেরি করিস না। ওনারা চলে আসলে বাবা রাগ করবে।

———–
দুপুরের খাবার শেষ করে সোফায় বসে কথা বার্তা বলছেন সীমান্তর মা আর সারিয়ার বাবা। সীমান্ত এক পাশে বসে তাদের কথা শুনছে। তার বোন পাশেই বসে ফোনে কি যেন দেখছে। সীমান্তর দৃষ্টি অস্থির। এখন অব্দি সারিয়ার সাথে দেখা হয়নি। সে ঘরের ভেতরে। বের হয়নি। শারমিনও তার সাথেই আছে। কথা বার্তার এক পর্যায়ে সীমান্তর মা বললেন
–আসলে আমরা চাইছি বিয়েটা খুব তাড়াতাড়ি সেরে ফেলতে। ছোট আয়োজন করেই বিয়েটা হবে। খুব বেশী আয়োজন করতে চাইছি না। তাই আর দেরি না করে সামনে সপ্তাহেই যদি বিয়েটা সেরা ফেলা যায়।

সারিয়ার বাবা চমকে উঠলেন। বিস্ময়কর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন
–সামনে সপ্তাহে?

সীমান্ত বলল
–জি। মা সেটাই চান। এখন আপনাদের মতামত পেলেই আমরা প্রস্তুতি শুরু করবো।

সারিয়ার বাবা একটু ভেবে আমতা আমতা করে বললেন
–আসলে এতো তাড়াতাড়ি। আমাদের একটু প্রস্তুতির ব্যাপার আছে।

সারিয়ার বাবা আর কথা এগুতে পারলেন না। সীমান্তর মা বাধা দিয়ে বললেন
–কিছুই প্রস্তুতি নিতে হবে না। আমাদের শুধু মেয়ে দিবেন ব্যস। আর কিছুই চাই না। আমাদের কোন ব্যাপারেই কোন সমস্যা নেই।

সারিয়ার বাবা হাফ ছেড়ে বাঁচলেও মাথার চিন্তাটা দূর হল না। তিনি ভাবতেই বসে গেলেন। এর মাঝেই সীমান্তর মা আবার বললেন
–মেয়েকে ডাকুন। আংটি পরার কাজটা শেষ করে ফেলি।

সারিয়ার বাবা উঠে গেলেন। ঘরে গিয়ে বেশ উতফুল্য কণ্ঠে বললেন
–সারিয়া বাইরে এসো মা। তোমাকে ডাকছে।

সারিয়ার বুকের ভেতরে আবারো হাহাকার শুরু হল। কিন্তু কোন কথা বলল না। বাবার কথায় পূর্ণ সম্মতি দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। তার বাবা ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। শারমিন সারিয়া কে নিয়ে গেলো। সোফায় বসিয়ে দিতেই সীমান্তর মা বললেন
–বাহ! মেয়ে তো খুব সুন্দর। আমার ছেলের পছন্দ আছে।

সারিয়া নিচের দিকেই তাকিয়ে থাকলো। বুকের ভেতরটা কেমন যেন লাগছে। এলোমেলো অনুভূতি। চোখ ভরে এলো তার। এখনই টুপ করে পানি গড়িয়ে পড়বে। এদিকে সীমান্ত স্থির দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। যেন প্রথমবার দেখছে। সারিয়া কে গোলাপি শাড়িতে অপূর্ব লাগছে। ভীষণ রকম সুন্দর। চোখ ফেরানো দায় হয়ে উঠেছে। সীমান্তর মা আরও কিছু বলার আগেই কলিং বেল বেজে উঠলো। সবাই স্থির হয়ে গেলো। ভাবল হয়তো দারোয়ান এসেছে কোন কারনে। সবার ভাবনার মাঝেই আরও একবার বেজে উঠতেই সারিয়ার বাবা বলল
–আমি দেখছি।

উঠে গিয়ে তিনি দরজা খুলে দিলেন। অপরিচিত একজন যুবককে দাড়িয়ে থাকতে দেখে বললেন
–কাকে চাই।

অরন্য মৃদু হেসে বলল
–আপনার সাথেই কথা বলতে এসেছি। ভেতরে এসে বলি।

সারিয়ার বাবা একটু ইতস্তত বোধ করলো। বলল
–আসলে আমার মেয়ের এঙ্গেজমেন্ট আজকে। মেহমান এসেছে বাসায়। তুমি যদি পরে আসতে বাবা।

অরন্য হেসে বলল
–ওনারা সবাই আমার পরিচিত। আপনি ভাববেন না।

সারিয়ার বাবা ভাবল হয়তো সীমান্তর কোন আত্মীয় হবেন। তাই আর দেরি না করে ভেতরে আসতে দিলো। অরন্য কে দেখেই সারিয়ার মনে কেমন অদ্ভুত অনুভূতি হল। অজানা ভালো লাগা ছেয়ে গেলো। কারণটা সারিয়ার কাছে স্পষ্ট নয়। তবে কেন জানি মনের মাঝে ক্ষীণ আশা জেগে উঠলো বিয়েটা ভেঙ্গে যাওয়ার। অজান্তেই ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠলো। সীমান্ত ভীষণ রেগে গেলো। রক্তিম চেহারা নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। দরাজ গলায় বলল
–তুমি?

অরন্য মৃদু হেসে বলল
–আমারই থাকার কথা ছিল। কিন্তু আপনি এখানে অজথাই নিজের সময় নষ্ট করতে এসেছেন মিস্টার সীমান্ত।

সীমান্ত আরও রেগে গেলো। এগিয়ে গিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল
–ঠিক করে কথা বল আমার সাথে। ভুলে যেওনা তুমি আমার এমপ্লয়ি।

–ছিলাম। এখন নাই। আপনি সেটা ভুলে যাচ্ছেন। যাই হোক আমি এখন আসল কথায় আসি। আমার এতো সময় নেই। অনেক কাজ বাকি আছে।

বলেই থামল। সারিয়ার বাবার দিকে তাকিয়ে বলল
–মেয়ের বিয়ে দিচ্ছেন। অথচ জামাইকে না জানিয়েই।

চলবে……

(রিচেক করা হয়নি। ভুল থাকলে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here