টক ঝাল মিষ্টি পর্ব -১০

#টক_ঝাল_মিষ্টি (পর্ব ১০)
নুসরাত জাহান লিজা

কোনো পূর্বাভাস ছাড়া প্রায় বিধ্বস্ত মুখাবয়বে মেয়েকে বাসায় ফিরতে দেখে শায়লা এবং জামান দম্পতি বেশ ঘাবড়ে যান। শায়লা অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করেন,

“তুই হঠাৎ? আজ আসবি আগে কিছু বললি না তো!”

“নিজের বাসায় আসতে গেলেও এখন এ্যাপয়েনমেন্ট নিয়ে আসতে হবে, মা?”

শায়লা অপ্রস্তুত হয়ে গেলেন, জামান বললেন,
“আচ্ছা, এসেছিস, রেস্ট নে। পড়ে শোনা যাবে তো। যা ঘরে যা।”

লাবণ্য বিরস মুখে নিজের ঘরে চলে গেল।

“কী হয়েছে বলো তো? আমার কিছু ভালো লাগছে না।” স্ত্রীর প্রশ্নের উত্তরে জামান বললেন,
“মেয়ে মাত্র এতটা পথ জার্নি করে এলো। একটু ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করি আমরা। এখনই এত অস্থির হচ্ছো কেন শায়লা?”

“হ্যাঁ, যত অস্থিরতা সব শুধু আমার। তোমার আর কী! গায়ে বাতাস লাগিয়ে ঘোরো, যাও।”

“এখন অন্তত তোমার বাঁকা কথা বন্ধ করো শায়লা। মেয়ে বড় হয়েছে, ওর নিজের কিছু স্পেস দরকার। সেটা অন্তত দেই।”

শায়লা আর কথা বাড়ান না, কিন্তু তিনি চিন্তাটা মাথা থেকে সরিয়ে দিতে পারেন না। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামলেও মেয়ে যখন দরজা খুলল না, তখন জামানও আর নিশ্চিন্ত থাকতে পারলেন না। কতক্ষণ দরজা ধাক্কা দিলেন। ওপাশ থেকে শুনলেন,
“এত অস্থির হবার মতো কিছু হয়নি৷ আমাকে একটু একা থাকতে দাও তোমরা।”

তারা বসার ঘরে এসে বসলেন। এরপর অনিকেতকে ফোন করলেন, কিন্তু ফোন বন্ধ। দিশেহারা হয়ে শেষমেশ অনিকেতের মা রাহেলাকে ফোন করলেন শায়লা,
“রাহেলা আপা, অনিকেতের সাথে আজ আপনার কথা হয়েছে?”

“না আপা। লাবণ্যকেও ফোন করেছিলাম একটু আগে। দুজনেরই ফোন বন্ধ৷”

“লাবণ্য আমাদের বাসায়।”

“কী বলেন? কাল দুপুরেও তো ওর সাথে কথা হলো আমার। কী বলল লাবণ্য?”

“আসার পর থেকেই দরজা বন্ধ করে বসে আছে। আমার কিছু ভালো ঠেকছে না আপা।”

“এটা কেমন কথা। আচ্ছা আপা, আপনি টেনশন করবেন না। আমি দেখি অনির সাথে কথা বলে।” রাহেলার গলায়ও উদ্বেগ।

“ঠিক আছে আপা। শফিক ভাইয়ের সাথেও একটু কথা বলা দরকার।”

“হ্যাঁ, আমি দেখছি।”

ফোন রেখে আর স্বামীর সাথেও কথা বললেন না। ভালো লাগছে না কিছু, এই মেয়ে সব সময় এমন হুটহাট সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে। কী হয়েছে তাও খোলাসা করছে না!

***
সাময়িক এই মুক্তিতে অনিকেতের যত আনন্দ হবার কথা তার চাইতে কয়েকগুণ বিশাল বিষাদী এক ঝড় ওর ভেতরটাকে লণ্ডভণ্ড করে দিতে লাগল। মাথাটা ভীষণ ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। পুরো বাসায় যেন প্রেতপুরীর শূন্যতা। রাতে ফোনটা খুলতেই শফিকের ফোন এলো।

“অনি, কী অবস্থা? সব ঠিকঠাক?”

“এই তো, চলছে।” নিজের কথাটা নিজেরই বিশ্বাস হলো না।

“শুনলাম লাবণ্য মা ওদের বাসায়। হুট করে এভাবে চলে এসেছে কেন?”

“মামা, সেটা তোমাদের লাবণ্যকে জিজ্ঞেস করো, কেউ যেতে চাইলে তাকে আমি কী করে আটকাব?”

অনিকেতের এখনো মনে হচ্ছে লাবণ্য সামান্য কারনেই এত বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ সে কী এমন বলেছে! ওর সাথে মেয়েটা এতদিন যা করেছে, তাতে তো এতদিনে অনিকেতকে নির্বাসনে চলে যেতে হতো।

“কাল রাহেলা যাবে তোর বাসায়। আমি বিশ্বাস করতে চাই এর পেছনে তোর নির্বুদ্ধিতার ইন্ধন নেই।”

অনিকেতের সহসাই মেজাজ খারাপ হলো, এই মেয়ে চলে গিয়েও শান্তি দিচ্ছে না৷ যার যেমন ইচ্ছে ওকেই সব চাপিয়ে দিচ্ছে। যত দোষ নন্দ ঘোষ!

এখনো মাথা ব্যথা চড়ে যাচ্ছে। এই শীতের রাতেও তাই গোসল করে ফেলল। একটু বেশি সময় ধরে ভিজল। বেরিয়ে এসে ভেজা তোয়ালেটা বিছানায় রাখতে গিয়েও কেন যেন রাখতে ইচ্ছে করল না। স্ট্যান্ডে ঝুলিয়ে এসে শুয়ে পড়ল, চোখ ভেঙে ঘুম আসছে। গা কাঁপিয়ে জ্বর আসছে বুঝতে পারল, সবই গতকালের বৃষ্টিতে ভেজার ফল।

***
সকাল সকাল লাবণ্যকে বেশ প্রাণবন্ত দেখা গেল, তবে চোখের নিচের মলিনতা তার মনে চলা ভাঙচুরের কিছুটা হলেও জানান দিচ্ছে৷ সে ঠিক করেছে অনিকেতের কথা আর ভাববে না। বাবা-মায়ের উপরেও ওর চাপা একটা ক্ষোভ তৈরি হয়েছে৷ বেশ ভালোই তো ছিল নিজের নির্ঝঞ্ঝাট জীবনে। তারাই তো ধরে বেঁধে ওই জিলাপির কারিগরের সাথে ওর জীবন জুড়ে দিল, এই অল্প কয়েকদিনে তার জন্য এক পৃথিবী মায়া জমে গেল। সেই মায়া এমন প্রগাঢ় যে চাইলেও তাকে বিস্মৃতির আড়ালে ঠেলে দেওয়া যায় না! কেমন টনটনে ব্যথা হয়ে টানতে থাকে!

বাবা শফিক আঙ্কেলের সাথে কথা বলতে গেছেন। লাবণ্য মায়ের ঘরে এসে ঢুকল। তার মুখাবয়ব এখনো দুশ্চিন্তাক্লিষ্ট। লাবণ্য হেসে বলল,
“মা, কী ভাবছ এত?”

“তোরা বাপ-বেটি তো আমাকে দুশ্চিন্তায় ফেলেই খুশি থাকিস।” অভিমান হয়েছে তার।

“আচ্ছা মা, বাবা আর তুমি তো সারাক্ষণ ঝগড়া করো, কখনোই একমত হতে পারো না। তারপরও একসাথে এতগুলো বছর কী করে কাটিয়ে দিলে?”

শায়লা মৃদু হাসলেন, “আমরা ধুন্ধুমার ঝগড়া করেছি, মুখ দেখাদেখি বন্ধ হয়েছে। আগে রাগ করে বাবার বাড়িতেও চলে গিয়েছি। পরে কী হয়েছে জানিস? তোর বাবা রাত-বিরেতে হলেও সেখানে গিয়ে উপস্থিত হতো। একবার তো রাত দুইটায় বাড়ির গেটে অনবরত ধাক্কা। সবাই উদভ্রান্ত, না জানি ডাকাত পড়ল। মেয়েরা সব জড়োসড়ো হয়ে বসে রইল। তোর নানা আর মামারা মিলে এগিয়ে গেল, লাঠিসোঁটা, দা-বটি, তোর নানার শিকারের জন্য একটা বন্দুক ছিল সেটাও নিয়ে গেট খুলে তো থ। তোর বাবা দাঁড়িয়ে আছে। আমার তো লজ্জায় মাথা কাটা গেল! ভাবিরা মুখে চাপা হাসি নিয়ে যে কী টিপ্পনী কেটে কথা শুনিয়েছিল! মানুষটা বরাবরই এমন। যতই হম্বিতম্বি করুক, আমাকে ছাড়া তার চলে না। এই মানুষটাকে ফেলে কোথায় যাব বল?” মা’র চোখ-মুখ কেমন চকচক করছে, বাবাকে কখনো বুঝতে না দিলেও তার জন্য যে এক পৃথিবী ভালোবাসা জমে আছে সেটা সেখানে স্পষ্ট। তিনি নিজেও কী বাবাকে ছাড়া থাকতে পারেন!

লাবণ্যর বুকে হাহাকার জমা হলো, অনিকেত তো একদিন কেটে যাবার পরেও একটা ফোন পর্যন্ত করল না। মিসড কল এ্যালার্ট চালু করে ফোন বন্ধ করে রেখেছিল। অন্তত ঠিকঠাক পৌঁছেছে কিনা তাও তো জানার জন্য ফোন করতে পারত। অভিমানে ওর বুক ভারি হয়ে আসে।

“কী হয়েছে বলবি মা?” মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করলেন শায়লা।

লাবণ্য সবকিছু খুলে বলল। মায়ের কোলে মাথা রেখে কান্নায় ভেঙে পড়ল। মা পরম যত্নে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। মায়েরা সন্তানের জন্য কতটা মমতা জমিয়ে রাখে! মাতৃস্নেহে মনটা আবারও আর্দ্র হয়ে এলো। কষ্টগুলো বুঝি কিছুটা ঘনীভূত হলো।

“শোন, তোকে একটা গল্প বলি। বহুবছর আগে এক সদ্য কৈশোর পেরোনো তরুণীর ভালোবাসার গল্প। তখন ভরা বর্ষা মৌসুম ছিল। বানের জলে চারপাশে ভেসে যাচ্ছে, হলুদ-সাদা কদম ফুলে ছেঁয়ে ছিল প্রকৃতি। সেই ষোড়শী তরুণীর কদম ফুল খুব পছন্দ। তার দুঃসম্পর্কের এক আত্নীয়ের বাড়ি তখন পানিতে ডুবে গেছে। তারা সেই তরুণীর বাড়িতে ভাড়া উঠল কয়েকমাসের জন্য। পুরনো আমলের দোতলা বনেদী বাড়ির ছাদের সাথে লাগোয়া দুটো কদমফুল গাছ। হাত বাড়ালেই ধরা যেত, সে তখন ছাদেই ঘাঁটি গাড়ল। সেই চিলেকোঠাতে সদ্য আসা পরিবারের এক তরুণও তখন ঘাঁটি গেড়েছে। এটা তার অজানা ছিল। একদিন ছাদে বিছিয়ে রাখা পাটির উপরে একটা বই পেল মেয়েটা। রবি ঠাকুরের ‘শেষের কবিতা’। কৌতূহল থেকেই সে বইটা হাতে নিয়ে সেখানে বসেই পড়তে শুরু করল। সন্ধ্যায় আযান দিলে মেয়েটাকে ঘরে ফিরতে হবে, তাই সে বইটা সাথে করে নিয়ে গেল, লাবণ্যর ব্যক্তিত্বের প্রেমে বন্ধনহীন অমিত তখন পাগলপারা। কিশোরী মনে তখন অমিতের জন্য ভালোলাগা তৈরি হলো। সেদিন বই শেষ করে তবেই ঘুমাতে পেরেছিল সে। পরেরদিন আবার ছাদে আসার সময় সে বইটা হাতে করে নিয়ে এলো। ছাদে আসতেই একগুচ্ছ কদমফুল হাতে দাঁড়িয়ে থাকা তরুণকে দেখে সহসা ক্ষণকালের জন্য মনে হয়েছিল এই বুঝি অমিত। সে একান্তই তার। কোনো কেতকী যেন এই ভালোবাসায় ভাগ না বসাতে পারে, তাদের যুগল পথচলায় যেন কখনো বিঘ্ন না ঘটে৷ পথ বেঁকে গেলে সে মরে যাবে। ঘোর ভাঙল ছেলেটার কথায়, ‘আমি ভেবেছিলাম আমার বইটা চুরি হয়ে গেছে। এখন চোরকে চোখের সামনে দেখলাম।’ মেয়েটি সেদিন বলেছিল, ‘এই বই আমি ফেরত দেব না। এটা এখন থেকে আমার।” কাছে এগিয়ে তার হাত থেকে ছোঁ মেরে কদমগুচ্ছ নিয়ে দৌড়ে নেমেছিল সিঁড়ি ভেঙে। এমন দুঃসাহস সে কই পেয়েছিল কে জানে!”

এতটুকু বলে শায়লা থামলেন, তিনি এই মধ্যবয়সে এসে আবার যেন ফেলে আসা সময়ে ফিরে গেলেন, যেখানে তার ভালোবাসার বীজ বপন করা হয়েছিল। লাবণ্য এই গল্পের মূলভাবটা জানে, তবে আজ যেন সেই অনুভূতি চোখের সামনে দেখছে! তাই আর বাঁধা দেয় না৷ মা তার মতো বলে চলেন,

“এরপর মেয়েটার নাওয়া খাওয়া শিঁকেই উঠল, দেশ ভাসছে বানের জলে, মেয়ের মনেও তখন ভালোবাসা বান ডেকেছে, প্রলয়ঙ্কারী কালবৈশাখী যেন তার ভেতরে তাণ্ডব নৃত্য করছে, এই ছেলেকে জীবনে না পেলে সে তখন জলে ডুবে মরবে এমন অবস্থা। কারণে, অকারণে তার ছাদে যাওয়া বেড়ে গেলে বাড়ির লোক বাঁকা চোখে দেখা শুরু করল। বাঁধা দিতে লাগল, ওমন পাগুলে স্রোত কী আর বাধ দিয়ে আটকানো যায়! ঠিকই দুকূল ছাপিয়ে প্লাবন আসে। ওই প্রান্তের উথাল-পাতাল ঢেউও টের পাওয়া যাচ্ছিল। এবার ঠেকানোর সাধ্যি কার! এরইমধ্যে বর্ষা বিদায় নিল, ছেলেটির বিদায় ঘণ্টা বেজে উঠল। কিন্তু মেয়ে গোঁ ধরে বসে রইল। তাদের একসাথে জুড়ে না দিলে সে দানা-পানি ছোঁবে না। আদুরে মেয়ের তুমুল জেদের কাছে শেষমেশ সবাই পরাস্ত হয়ে মেনে নিল। সপ্তাদশী মেয়েটা একটা অমোঘ বন্ধনে বাঁধা পড়ল। দুজনের মনেই তখন ‘শেষের কবিতা’র একটা লাইন আপ্তবাক্যের মতো বেজে উঠল, ‘পথ বেঁধে দিল বন্ধনহীন গ্রন্থি,
আমরা দু’জন চলতি হাওয়ার পন্থী’!”

লাবণ্য ভেবে পেল না, এমন মিষ্টি একটা ভালোবাসা কী করে এমন ধুন্ধুমার ভালোবাসায় রূপ নিল। কত রকম ভালোবাসাই না আছে এই অদ্ভুত মায়াময় জগতে!

অনিকেত কী ওকে এতটুকুও অনুভব করে না! ওর মনে যে শূন্যতা তার ছিটেফোঁটাও কী অনিকেতকে ছুঁয়ে দেবে কোনোদিন? অল্প কিছুদিনের একসাথে থাকাটা এখন ওর না থাকার হাহাকার হয়ে উথলে উঠছে! ভালোবাসায় এমন বিষাদ কেন আসে?

***
রাহেলা এসেছেন গতকাল, আসার পর সব শুনে তিনি ছেলেকে পাশে ডেকে বসালেন। এরপর বললেন,

“দেখ অনি, আমি তোকে তোর কী করা উচিত সেটা নিয়ে কিছু বলব না। আমি জানি তুই নিজেই সেটা বুঝবি। তবে বাবা, যারা নিজের ভুল নিজে ধরতে পারে, তার জন্য অনুতপ্ত হয়, তারা কখনো দুঃখী হয় না। কিছুদিন সময় নে। জোর করিস না মনের উপরে, তোর মনই বলে দেবে তোর কোনটা করা উচিত।”

অনিকেত মায়ের কোলে মাথা রেখে চুপচাপ শুনল। কিছু বলল না, তবে চোখে একটা ভয় আছে, সর্বস্ব হারানোর ভয়!

চাপ দিয়ে মানালে যদি অভাবটুকু না বুঝতে পারে, মনের টানে সিদ্ধান্ত নিলে সম্পর্কের মানে উপলব্ধি করতে পারবে। তাই তিনি এই বিষয়ে ছেলেকে আর কিছু বলেন না।

রাহেলা প্রথমদিন এসে ছেলেকে খাবার বেড়ে দিলেন। মা-ছেলে একসাথে খেতে বসলেন। অনিকেত খাবার মুখে দিয়ে বলল,

“মা, তুমি ঝাল একটু বেশি দিয়েছো খাবারে।”

রাহেলা অবাক হয়ে বললেন, “বরাবর যা দেই তেমনই দিয়েছি। তুই তো কখনো কিছু বলিসনি আগে।”

অনিকেত সহসা কিছুটা ম্রিয়মাণ হলো। ভাত নাড়াচাড়া করতে থাকা হাত থেমে গেল ক্ষণিকের জন্য, এরপর বলল,
“ঠিক আছে৷ সমস্যা নেই মা।”

রাহেলা ছেলের মধ্যে আরও কিছু বদল দেখেছেন। এখন খেয়েই উঠে যায় না, মায়ের সাথে সাথে এঁটো বাসনপত্র পরিষ্কার করে, চা বানালে সাথে সাথে কেতলি ধুয়ে রাখে। অফিস থেকে ফিরে কাপড় বদলে ছড়িয়ে রাখে না, সুন্দর করে গুছিয়ে রাখে।

সব দেখেশুনে তিনি চিন্তা করা বাদ দিয়েছেন। তার পাগলাটে, অগোছালো ছেলেটা একটু একটু করে গুছিয়ে উঠছে। মুখে ফুটে উঠা মলিনতা বলে দিচ্ছে লাবণ্যর অভাবটাও সে বুঝতে শুরু করেছে। তিনি সেটা আরও বেশি করে বুঝতে দিতে চান, তাই ছেলেকে রেখে তিনি ফিরে গেলেন। একাকিত্ব অনেক সময় নিজেকে খুঁজে পাবার মূলমন্ত্র হয়ে উঠে।

***
কিছুদিন আগে যাকে এতটা বিরক্তিকর আর অনাহুত মনে হচ্ছিল, দৃষ্টিসীমার মধ্যে তার না থাকাটাই আজ কেমন এক হিমালয় হাহাকার হয়ে হৃদয়ে জমা হচ্ছে। উত্তাল সমুদ্রের তোলপাড় মনকে অশান্ত করে তুলছে৷ লাবণ্য মাঝেমধ্যে যে রুমে থাকত সেখানে এলো আজ। ওর পড়ার টেবিলে বসল। একটা প্যাডের উপরে নানারকম আঁকিবুঁকি। সেটা হাতে নিতেই ভেতর থেকে একটা ছেঁড়া ভাজ করা কাগজ নিচে পড়ল।

হাতে নিতেই ‘সাংসারিক সমোঝতা স্মারক’ লেখাটা চোখে পড়ল। কৌতূহল বসত সেটা পড়তেই একটা অদ্ভুত অনুভূতি হলো! মিশ্র অনুভূতি, তাতে মিশে থাকল প্রাপ্তি, দ্বিধা, সংকোচ, অপরাধবোধ, সবশেষে হারানোর ভয়!

জীবনে প্রথমবার নিজেকে সত্যিকারের বুদ্ধু মনে হচ্ছে। আসলেই সে একটা হাঁদারাম, গাধা, মাকাল ফল। আরও অনেক বিশেষণ মাথায় আসছে৷ কিন্তু নিজেকে আর কত গালমন্দ করা যায়! বাকিটা লাবণ্যর জন্য তুলে রাখল।

যে ভয়ংকর মেয়ে, এত সহজে কী ক্ষমা পাওয়া যাবে। এক চিলতে হাসি ফুটে উঠল ঠোঁটের কোণে। নিজেকে বিদ্রুপ করে বলল,

“সামনে তোর জন্য ভয়াবহ কঠিন সময় অপেক্ষা করছে হাঁদারাম অনিকেত, ভয়ংকর কঠিন!”
………
(ক্রমশ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here