টক ঝাল মিষ্টি পর্ব -১১

#টক_ঝাল_মিষ্টি (পর্ব ১১)
নুসরাত জাহান লিজা

অনিকেত পড়েছে অথৈ সাগরে, আকণ্ঠ ডুবে গিয়ে এখন হাঁসফাঁস অবস্থা। এই বিপাক থেকে মুক্তি পেতেই হোক কিংবা নিজের দোষ কিছুটা হালকা করার জন্যই হোক, গত দুই সপ্তাহে ভেবে ভেবে সে সব দায় তার অবচেতন মনের ঘাড়ে চাপানোর অপচেষ্টায় নেমেছে।

অনিকেতের থিওরি মোতাবেক, বিয়ের পর থেকে বেশিরভাগ সময় ওকে কোনঠাসা হয়ে থাকতে হয়েছিল বলে লাবণ্যর উপরে অসম্ভব একটা রাগ জমা হয়েছিল। সেটা সময়ের সাথে সাথে অনবরত কেবল বেড়েই গেছে। ওর অবচেতন মন লাবণ্যকে প্রধানতম প্রতিদ্বন্দ্বীর জায়গা কখন দিয়েছে সে বুঝতে পারেনি! সাময়িক একটা বন্ধুত্ব তৈরি হলেও সাব-কনশাস মাইন্ডের একটা অংশ প্রি-ইন্সটলড শত্রুতা ডিলিট না করে জিইয়ে রেখেছিল। শাহেদ যখন উস্কে দিচ্ছিল তখন মনের একটা অংশ তার বিরোধিতা করলেও সেই শত্রুতা জিইয়ে রাখা অংশটা কথাগুলোকে লুফে নিল এবং কনশাস মাইন্ডের পুরো নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিল। নিজের স্বপক্ষে অবচেতনেই একটা ঘটনা ঘটার অপেক্ষায় রইল। লাবণ্যর সেদিন দেরি করে আসা ঢোলে বারি পড়ার মতো কাজ করল, সেটার তালে তালে সে নিজেও নাচতে শুরু করল।

সেদিন সে আধাঘণ্টা আগেই অফিস থেকে বেরিয়েছিল বা ফোনেও চার্জ ছিল না এই বিষয়গুলো বেমালুম ভুলে গিয়ে অবচেতন মনের প্ররোচনায় পা দিয়ে বিশাল বড় ব্লান্ডার করে ফেলল। সবটাই অবচেতন মনের ষড়যন্ত্র!

প্রথমদিন মনে মনে জয়োল্লাসও করেছিল, প্রথমবার জয় কিনা! কিন্তু কিছুদিন যেতেই উপলব্ধি করল যেটাকে নিজের জয় ভেবেছিল সেটা আদতে বিশাল বড় হার। নইলে আনন্দ না হয়ে হৃদয়টা পুড়ছিল কেন! অদ্ভুত একটা জ্বালাপোড়ায় সে দগ্ধে মরছিল! এই জয় তো হারের চাইতে কষ্টদায়ক! এমন জয় তো সে চায়নি! নিজের বোকামি ধরতে বেশ দেরি করে ফেলেছে।

কিন্তু বোকামি শোধরানোর চাইতে খেসারত দিতেই বেশি পছন্দ করল অনিকেত। রণাঙ্গনে নামার আগে তো পর্যাপ্ত অস্ত্রশস্ত্র চাই, আস্তাবলে ঘোড়া চাই, সৈন্য-সামন্ত চাই৷ ‘ঢাল নেই তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দার’ হয়ে যুদ্ধে নেমে গেলেই তো হলো না! তাই দিন যায়, সপ্তাহ গড়ায় সে নিজের আস্তানা ছাড়ে না। লাবণ্যর সামনে দাঁড়ানোর সবচাইতে বড় অস্ত্র সাহস, সেটাই এখনো আহরণ করে উঠতে পারছে না। সে এমন ভীতু কী করে হয়ে গেছে বুঝতে পারছে না! কস্মিনকালেও সে কাউকে তোয়াজ করে চলেছে বলে মনে পড়ে না। কিন্তু এবার শঙ্কায় মনটা সংকুচিত হয়ে গেছে। সময় নেবার আরেকটা কারণ হলো লাবণ্যর অভিমান কিংবা রাগ যাই থাকুক তাকে সময় দেওয়া। কে জানে সময়ের সাথে যুঝতে যুঝতে তাতে কিছুটা মরিচা ধরে ভোঁতা হয় কিনা!

এই সময়টুকুতে একটা জিনিস ভেবে সে ভীষণ বিস্মিত, দেয়াল ঘেঁষে না ঘুমালে ঘুম হচ্ছে না। রাতে এপাশ ওপাশ করে ঘুমালেও ঘুম ভেঙে দেখে সে দেয়ালের কাছাকাছি গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে। কী আশ্চর্য! কী আশ্চর্য! অনেক চেষ্টা করেও ভেজা তোয়ালে বিছানায় রাখতে পারে না, এই প্রিয় বদ অভ্যাস ওকে ছেড়ে বহু ক্রোশ দূরে পালিয়ে গেছে! ঝালহীন পানসে তরকারিটাও আর বিস্বাদ লাগে না।

সেও লাবণ্যর মতো সব লিখে রাখবে, এই ভেবে কাগজকলম নিয়ে টেবিলে বসে মনের মাধুরি মিশিয়ে নিজের মানসিক পরিবর্তনের তারতম্য মনে করে করে লিখতে বসল। এটা সে লাবণ্যকে দেবে।

সবচাইতে বড় এবং উল্লেখযোগ্য যে উপলব্ধি হয়েছে তা হলো ভয়ংকর বদমেজাজি মেয়েটাকে ছাড়া তার কিছুতেই চলবে না! দমবন্ধ করা ছটফটিয়ে মরার সমতূল্য অনুভূতি নিয়ে কী বাঁচা যায়! ওর সীমানায় বাতাসে থাকে অক্সিজেনটুকু দজ্জাল মেয়েটা সাথে করে নিয়ে চলে গেছে! সে তো মানুষ, যদিও কিঞ্চিৎ বোকা মানুষ, তাই বলে কী অক্সিজেন ছাড়া বাঁচা যায়! অক্সিজেন ফেরত আনতেই হবে, শ্বাস টানার জন্য, সুষ্ঠচিত্তে নিজের বাঁচার জন্য!

হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার কথা মনে পড়ল, লাবণ্য সেই অদ্ভুত বাঁশিওয়ালা। আর অনিকেত মোহগ্রস্ত শ্রোতা, সেই মন্ত্রমুগ্ধ করা সুর যেদিকে যায় তার পিছু নিয়েই তাকে চলতে হবে! ভালোবাসা বুঝি এমনই এক জাদুকরী সুর, হাসায়, কাঁদায়, নিঃস্ব করে, পূর্ণ করে!

লেখা শেষ করে শুয়ে পড়ল। লাবণ্য যাবার দিন জ্বর এসেছিল, তার ব্যপ্তি ছিল ঘুম থেকে উঠা পর্যন্তই। কিন্তু গতকাল থেকে ছ্যাঁচড়া জ্বর বাবাজি আবার হানা দিয়েছে। যদিও প্রবল পরাক্রমে আসেনি, হালকা জ্বর। ফোনের রিংটোন বাজতেই উঠে বসল, চার্জ দিয়ে রেখেছিল, খুলতে মনে ছিল না। আজকাল যা ভুলো মন হয়েছে!

মুহিত ফোন করেছে প্রায় মাসখানেক পরে, কীসের একটা প্রজেক্ট ছিল দেশের বাইরে। এমনিতে প্রায় এক দুই সপ্তাহ পরপরই কথা হয়।

“কী অবস্থা তোর অনি?”

“আমি ভালো নেই রে মুহিত।” কাতর গলায় বলল অনিকেত।

“তোকে একদিন বলেছিলাম না যে নিজের জন্য গর্ত খুঁড়লে তাতে নিজেরই ঠাঁই হয়? এবার মিলল তো? তা তোর তো ভালই হয়েছে বল, এখন ঘর ভরা স্বাধীনতা, বিরক্ত করার কেউ নেই?”

“মুহিত, মা ফোন করে আমাকে কথা শোনাচ্ছে, মামা একটু পর পর ফোন করে ঝাড়ি দিচ্ছে, তুইও তাদের মতো শুরু করলি। আরে আমি তো বুঝতে পেরেছি যে ভুল করেছি, তাই বলে তোরা সবাই মিলে আমাকে একেবারে চিড়ে চ্যাপ্টা করে ফেলছিস। আমি কই যাব বল?”

“তুই সত্যিই নিজের ভুল বুঝতে পেরেছিস অনি? পৃথিবী ঠিকঠাক ঘুরছে তো?” সারাজীবন অনিকেত নিজেকে সঠিক ভেবে এসেছে সেই বোধকে কিঞ্চিৎ খোঁচা মারল মুহিত।

“ফাজিল, কই একটা ভালো সাজেশন দিবি, তা না! সাধে কী আর তোকে শত্রু বলি!” এবার অনিকেতের বেশ খানিকটা ধৈর্যচ্যুতি ঘটল।

“লাবণ্য কেন এতটা রেগে গেছে, বলতো? দেখি তুই কতটা সমঝদার হয়েছিস!”

“আমি ওকে অযথাই অনেক উল্টাপাল্টা কথা শুনিয়েছি। তুই তো জানিস রাগলে আমার মাথা ঠিক থাকে না। কী বলি নিজেও জানি না।”

“তুই এখনো বুদ্ধুই আছিস রে অনি৷ তোর ভবিষ্যৎ অন্ধকার!”

“ফাজলামো করবি না ব্যাটা, যা বলার সরাসরি বল।”

“তুই শাহেদের কথায় ইনফ্লুয়েন্সড হয়ে ওকে যে কথাগুলো বলেছিস এগুলোতে সে বেশি কষ্ট পেয়েছে। তোর নিজের চোখ নাই? অনুভূতি নাই? ব্যাটা, বউকে এতদিনে চিনিসনি, একটা টাউট লোকের কথায় মেয়েটাকে আজেবাজে কথা বলেছিস। এটাই ওর সবচাইতে কষ্টের জায়গা।”

অনিকেত কিছু বলার আগে মুহিত আবারও বলতে শুরু করল, “শুনলাম শাহেদের বউ পরশু ডিভোর্স ফাইল করেছে, জানিস? যে নিজের পরিবারের মানুষের মূল্য দেয় না, সে তোর কত ভালো চায় বুঝ এবার!”

“তাই নাকি? জানতাম না তো। অবশ্য ওইটা আজ অফিসে আসেনি।”

“শোন অনি, অনেকেই অনেককিছু বলে, বলবে৷ কিন্তু তুই কোন কথাটা নিবি কোনটা ফেলে দিবি এটা তোকেই ঠিক করতে হবে। এটুকু বুদ্ধি না থাকলে তো মুশকিল। তুই তো বাচ্চা ছেলে না যে ধরে ধরে কেউ তোকে বলবে এখন এটা কর, এখন ওটা কর। একটু মাথা খাটা, সম্পর্কের যত্ন করতে হয়। দুটোতে সুখী কিনা সেটা দেখবি, কোথাও সমস্যা হলে সেটার মূল খুঁজে বের করে সল্যুশন করার চেষ্টা করবি। এভাবেই বছরের পর সংসার টেকে। তোদের ভেতরের ব্যাপার ভুল মানুষের সাথে শেয়ার কেন করতে হবে, আর করেছিস করেছিস, তার কথাকে কেন এত প্রায়োরিটি দিতে হবে? লাবণ্য ঠিকই বলে তোর মাথায় ঘিলু নেই।” মুহিতের একটানা বলা কথাগুলো খুব মন দিয়ে শুনল অনিকেত।

“তারমানে লাবণ্যর সাথে এরমধ্যে কথা হয়েছে তোর? কী বলল বল না?” অনিকেত সহসাই অস্থিরতা অনুভব করল।

“কী আর বলবে? তুই যে অন্য একটা নম্বর থেকে ওকে ফোন করিস সেটা তুই কিনা কনফার্ম হওয়ার জন্য ফোন করেছিল।”

“হায় হায়! ও বুঝতে পেরেছে ওটা আমি ছিলাম?” হাঁক ছেড়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে অনিকেতের, কিন্তু কান্নাকাটি করলে খুব বাজে দেখাবে বলে করল না!

“বুঝতে না পারার কী আছে? তুই প্রত্যেকদিন একই সময়ে ফোন করবি, তাও কথা বলবি না, এটা না বোঝার তো কিছু নেই। সবাই তো আর তোর মতো মগজ উল্টে ঘিলু কোল্ড স্টোরেজে রেখে দেয় না।”

“তুই লাবণ্যর মতো ত্যাড়া কথা কেন বলছিস মুহিত? একটা সাজেশন দে না, কী করে স্যরি বলব রে?”

“সেটা তো মামা আমি বলব না। তোর বউ, তুই ক্ষেপিয়েছিস, তুই জানিস কী করবি না করবি! এক কাজ কর, তোর কোল্ড স্টোরেজে রাখা ঘিলুটা বের করে মগজে ভালো মতো সেট কর, এরপর এতদিন ধরে অকেজো ব্রেনের মরিচা সরিয়ে একটু কাজে লাগার সুযোগ দে। আর যা করার দ্রুত কর প্লিজ। আরেকটা কথা, ভুল করে সেটা স্বীকার করলে কেউ ছোট হয়ে যায় না, বুঝলি?”

মুহিত কল কেটে দিয়েছে, অনিকেত যেন মহাসমুদ্রে ডুবন্ত মানুষ। তবে আর দেরি করা যাবে না, যা হয় হোক, আগামীকাল অফিস শেষ হলেই ছুটি নিয়ে বিকেলে বাঁশিওয়ালার ডেরায় হানা দেবে, সুরটা বড্ড বেশি টানছে!

***
লাবণ্য অদ্ভুত এক অসুখে পড়েছে, রাতে ঘুম হয় না। অনেক সাধাসাধি করেও না। পরে গিয়ে সে সমস্যাটা ধরতে পেরেছে। ওই চূড়ান্ত গাধাটা ওর অভ্যাস খারাপ করে দিয়েছে। নাক ডাকার শব্দে সে ওকে থেকেও জ্বালিয়ে মেরেছে, এখন না থেকেও জ্বালাচ্ছে। ওর বাবা বহুবছর আগে একটা গল্প শুনিয়েছিলেন, সেখানে একটা লোক একটা কারখানার পাশে থাকতে এসেছিল, প্রথমদিকে মানিয়ে নিতে পারেনি। কিন্তু সেখানে অনেকদিন থাকার ফলে নাকি তার এমন অবস্থা হয়েছিল যে সে আর শান্ত পরিবেশে ঘুমাতে পারত না।

এমন হলে তো মারাত্মক বিপদ! এ কেমন অভ্যস্ততা!

অনিকেত আরেকটা গাধামি করেছে, লাবণ্য জানে না এমন একটা নাম্বার থেকে কয়েকদিন থেকে ঠিক রাত সাড়ে এগারোটায় কল দিচ্ছে। দ্বিতীয় দিনেই সে ধরে ফেলেছে। এই বয়সে এসে একজন তরুণকে টিনএজ পোলাপানের মতো আচরণ মোটেও মানায় না!

কিন্তু দেখা গেল আজ সাড়ে এগারোটা বাজতেই লাবণ্যর মন কেমন উতলা হলো, ফোন হাতে নিয়ে বসে রইল। কিন্তু আজ অপেক্ষা বৃথা গেল৷ দেড়টা পর্যন্ত আশায় ছিল যে কল আসবে, কিন্তু এলো না! মন খারাপ হলো। সে-ও কী কিশোরী হয়ে যাচ্ছে! নইলে মনে এমন উথাল-পাতাল কেন!

***
এই বাসায় থাকলে লাবণ্য পুরনো অভ্যাসবশত দরজা লক করে ঘুমায় না। আগে সে রাতে শুয়ে শুয়ে গল্পের বই পড়তে পড়তে ঘুমাতো, কখনো মা, কখনো বাবা এসে লাইট বন্ধ করে মাথার বালিশ ঠিক করে গুছিয়ে দিত। এখনো অভ্যাসটা রয়ে গেছে।

আজও রাত দেড়টার দিকে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে, ভেতরে তেমন ঠান্ডা না লাগলেও বাইরে কুয়াশায় আচ্ছন্ন। বহুদূরে কোথা থেকে শেয়ালের ডাক ভেসে আসছে, চাঁদটা মেঘে তলিয়ে গেছে। রাতটা কেমন মায়া মায়া, ফুলের গন্ধ সেই মায়া বাড়িয়ে দিয়েছে! এরমধ্যেই গেটের সামনে একটা রিকশা এসে দাঁড়াতে দেখল। এত রাতে কে এল! রিকশা থেকে নামতেই ল্যাম্পপোস্টের আলোয় মানুষটার অবয়ব স্পষ্ট হয়ে চোখে পড়ল, মুহূর্তেই মাথাটা কেমন যেন ঝিমঝিম করে উঠল।

অনিকেত রিকশাওয়ালার সাথে কিছু একটা নিয়ে কথা বলে ফোন বের করে কোথাও ফোন করছে, লাবণ্যর ফোনটা বেজে উঠল। ভেতরে গিয়ে ফোন হাতে নিয়ে আবার বারান্দায় এসে দাঁড়াল, কিন্তু কল রিসিভ করল না। টেক্সট মেসেজ আসতেই সেটাতে ক্লিক করল,

“লাবণ্য, কিছু খুচরা টাকা নিয়ে নিচে আসো না প্লিজ। রিকশা ভাড়া দিতে পারছি না।”

এবার লাবণ্য ফোন করতেই সাথে সাথে রিসিভ হলো,
“বাসার সবাই ঘুমিয়ে থাকলে ভাড়া কীভাবে দেওয়া হতো? রাত-বিরেতে রিকশায় উঠার আগে খুচরা টাকা আছে কিনা চেক না করে কেউ কীভাবে রিকশায় উঠে?”

লাবণ্য ভাব বাচ্যে কথা বলছে। আপনি, তুমির ধার ধারেনি। অনিকেত মাথা উঁচিয়ে ওর দিকে সরাসরি তাকিয়ে আছে, মুখটা কেমন মলিন মনে হচ্ছে৷ কিন্তু এখন এই মায়াকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না, তাহলে আবার মাথায় চড়ে বসবে। সহজে কিছু পেয়ে গেলে তা যত মূল্যবানই হোক, কেমন খেলো হয়ে যায়! তার অবমূল্যায়ন হয়!

“আমি তো কোনোদিনই কিছু ঠিক মতো করতে পারি না। অথচ এতদিন মনে মনে নিজেকে পারফেক্ট ভেবে এসেছিলাম।”

অনিকেতের কথাটা লাবণ্যর হৃদয়ের ব্যাথা বাড়ায়। এই ঠান্ডায় বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখা ঠিক হবে না৷ এতটা পথ এসেছে, নিশ্চয়ই ক্লান্ত।

তাই আর কথা না বাড়িয়ে টাকার সংখ্যা শুনে তা নিয়ে, গেটের চাবিটা নিয়ে নিচে চলে যায়। ভাড়া দিয়ে অনিকেতের দিকে আর তাকায় না, ইশারায় ভেতরে যেতে বলে সে গেট বন্ধ করে দোতলায় উঠে আসে। ততক্ষণে মা-বাবা উঠে পড়েছেন। সে অনিকেতের জন্য গেস্টরুম খুলে দিয়ে একবার আঁড়চোখে তাকিয়ে নিজের ঘরে এসে দরজা বন্ধ করে দেয়। হুহু হাহাকার করছে ভেতরটা, সে এখন কাঁদবে, খুব করে কাঁদবে!

অনিকেত শ্বশুর, শাশুড়ির পক্ষ থেকে জামাই আদর খেয়ে হৃষ্টপুষ্ট হোক। তারপর বিদায় হোক, লাবণ্য এই ছেলের চেহারা দেখবে না, কিছুতেই না। কী ভেবেছে, চেহারার এমন অসহায় হাল দেখে সে গলে যাবে! মোটেও না, লাবণ্য যেন-তেন কোনো ধাতু নয়, সে পৃথিবীর সবচাইতে কঠিন ধাতু। তাকে গলানো এত সহজ না!
……………
(ক্রমশ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here