#তোমাতেই_আমি_মগ্ন 🌸
#পর্ব_০৪
#লেখক_ঈশান_আহমেদ
অন্না তার বাড়িতে চলে আসলো।বাড়িতে আসলে দেখলো তিথি,দিশা আর নিতু বসে আছে।অন্নার আগমনে তাদের মুখে হাসি ফুটলো।তিনজনে দৌড়ে এসে অন্নাকে জড়িয়ে ধরলো।অন্না-ও হাসি দিয়ে তিনজনকে জড়িয়ে ধরলো।
আমরা কত ভয় পেয়ে গেছিলাম জানিস?(দিশা)
তোকে কতবার কল করছি তুই ধরিসনি।তারপরে আজকে আবার ভার্সিটিতে গেলি না।(তিথি)
আমরা ক্লাস করে তোর বাসায় আসলাম তারপরে দেখি তুই বাড়িতে নেই।(নিতু)
হয়েছে রে বাবা!এবার একটু থাম।আমাকে বলতে দে।(অন্না)
জ্বি বলুন মহারাণী।(দিশা)
আমার মোবাইল কালকে দিয়ে অফ।আমি চার্জেই দেই নাই।তাহলে ফোনটা ধরবো কিভাবে!(অন্না)
আর আমি ভেবেছিলাম তুই ফোন অফ করে রেখেছিস।(নিতু)
অনেক ভাবা-ভাবি হয়েছে।অনেক বেলা হয়ে গেছে প্লাস আমার প্রচুর খিদে পেয়েছে।আই নো তোরাও না খেয়ে এসেছিস।এখন চল আমরা একসাথে খাবো।(অন্না)
তিন বান্ধবী হা হয়ে অন্নার দিকে তাকিয়ে আছে।
কি রে এভাবে কি দেখছিস তোরা?(অন্না)
অন্না তোর মুড ঠিক আছে?(তিথি)
একদম।(অন্না)
ওয়াও!যাক তাহলে তুই কিছুটা স্বাভাবিক তো হলি।(দিশা)
অন্না মুচকি হাসলো।উপরে যতই ভালো থাকার অভিনয় করুক না কেন!সে তো জানে সে ভালো নেই।
তারপরে আজকে আবার ওই ছেলের মুখোমুখি হতে হলো।
//
বিকেলবেলা,
আবির গার্ডেনে বসে চা খাচ্ছে।তবে তার বড্ড ইচ্ছা করছে অন্নাকে একটি বার দেখতে।তবে অন্না তো তাকে দেখলে বিরক্ত হয়।যাতে আবিরের কষ্ট আরও দ্বিগুণ হয়ে যায়।
হঠাৎ আবিরের মোবাইলে কল আসলো।তাকিয়ে দেখে নিশান ফোন করেছে।আবিরের একমাত্র বেস্টফ্রেন্ড।আবির হাসি মুখে কলটা রিসিভ করলো।
কি রে দোস্ত!কি খবর তোর?(নিশান)
এই তো কোনমতে চলছে ব্রো।(আবির)
তা তোর প্রিয়তমা ইয়ে মানে আমাদের ভাবির কি খবর?যার জন্য কানাডা ছেড়েই চলে গেলি।(নিশান)
সে আছে তার মতো।(আবির)
তোর কথার তো আগামাথা কিছু বুঝলাম নাহ্।(নিশান)
তোর ওই মাথায় আমার কথা ঢুকবে না।সো বুঝতেও হবে না।(আবির)
ওকে রিলাক্স।শোন আমি কালকে দেশে আসছি।(নিশান)
তো আয় কে নিষেধ করেছে তোকে!(আবির)
তুই খুশি হোসনি?(নিশান)
সত্যি বলতে একটুও নাহ্।(আবির)
এই আমার বেস্টফ্রেন্ড?(নিশান)
আবির জোরে হেসে দিল।নিশান-ও হাসছে।
\/
বান্ধবীদের বিদায় দিয়ে অন্না তার রুমে এসে বিছানায় বসলো।অন্না নিরব দৃষ্টিতে একভাবে চেয়ে আছে জানালার দিকে।জানালা দিয়ে হালকা শীতল হাওয়া বয়ে যাচ্ছে।অন্না চোখ বন্ধ করে বয়ে যাওয়া হাওয়া অনুভব করার চেষ্টা করছে।
হঠাৎ তার ঘোর কাটলো মঈন সাহেবের ডাকে।মঈন সাহেব নিচে থেকে অন্নাকে ডাকছে।অন্না কিছু একটা ভেবে নিচে গেলো।নিচে গিয়ে দেখলো আবির বসে আছে।সঙ্গে আকরাম সাহেব-ও এসেছেন।
অন্নার ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও তাদের সামনে গেল।অন্না মুচকি হেসে আকরাম সাহেবকে সালাম করলো।উনি সালামের উত্তর দিলেন।
কেমন আছো তুমি মা?(আবিরের বাবা)
জ্বি আঙ্কেল আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।আপনি কেমন আছেন?(অন্না)
এই তো চলে যাচ্ছে।(আবিরের বাবা)
অন্না কিছুক্ষণ আকরাম সাহেবের সাথে কথা বলে নিজের রুমে চলে আসলো।কারণ আবিরের সাথে বারবার চোখাচোখি হচ্ছিল।যাতে অন্না কিছুটা অস্তিত্ব বোধ করছিল।
রুমে এসে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে অন্না।আবির এসে অন্নার দরজায় টোকা দিলো।অন্না পিছনে ফিরে দেখলো আবির দাঁড়িয়ে আছে।
আপনি এখানে কেন এসেছেন?আমার আর এক কথা বারবার বলতে ভালো লাগছে না।প্লিজ আপনি চলে যান।আর আপনি এখনো অনেক কিছুই জানেন না।(অন্না)
কি জানার কথা বলছো তুমি অনুলতা?(আবির)
অন্না কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
কিছু নাহ্।আপনি আমার রুম থেকে চলে যান।(অন্না)
রিলাক্স অনুলতা।আমি জাস্ট তোমাকে একটা কথা বলতে এসেছিলাম।(আবির)
কি বলবেন আপনি?ওই তো একই কথা তাই-না?(অন্না)
আবির মুচকি হেসে বললো,
এতোটা হাইপার হয়ো নাহ্ অনুলতা।আমি তো তোমাকে একটা কার্ড দিতে এসেছি।আর আমি একবার যেটা বারণ করি সেটা আর দ্বিতীয় বার করি নাহ্।(আবির)
অন্না কিছুক্ষণ আবিরের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,
কিসের কার্ড?(অন্না)
আমাদের সিলিটের কোম্পানি অনেক বড় একটা ডিল সাইন করেছে।তাই সিলেটের কোম্পানিতে বাবা একটা পার্টি থ্রো করেছে।(আবির)
এখন কি এই পার্টির জন্য আমাদের সিলেট যেতে হবে?(অন্না)
যেতে তো হবেই।যতই হোক তোমার বাবা আর আমার ডে কিন্তু বেস্টফ্রেন্ড।তোমাদের তো যেতেই হবে।(আবির)
বাবা কি বলেছে?(অন্না)
আঙ্কেলও যাওয়ার কথা বলেছেন।কারণটা তুমি।তোমার নাকি মন ভিষণ খারাপ।তাই আঙ্কেল-আন্টি যেতে রাজি হয়েছেন।(আবির)
এতো মানুষ থাকতে এই কার্ড দিতে আপনাকেই আমার রুমে আসতে হলো?(অন্না)
সবাই গল্পে বিজি আছে।তাই বাবা বললো আমাকে, কার্ডটা তোমাকে দিতে।(আবির)
অন্না কার্ডটা নিয়ে নিলো।
কার্ড দেওয়া শেষ আপনি এখন আসতে পারেন।(অন্না)
অন্না কথাগুলো বলে আবিরের দিকে থেকে মুখ ঘুরিয়ে ফেললো।আবির মুচকি হেসে অন্নার পিছনে গিয়ে দাঁড়ালো।
এতোটা অবহেলা করো নাহ্ অনুলতা।কখন হারিয়ে যাবো টেরও পাবে নাহ্।তখন আবার কষ্ট পেয়ো না কিন্তু!বাই দ্যা ওয়ে কার্ডটা যত্নে রেখো।নাহলে পার্টিতে ঢুকতে দিবে না সিকিউরিটিরা।(আবির)
আবির অন্নার রুম থেকে বের হয়ে চলে গেল।অন্নার অশস্তি লাগছে।আবিরের প্রতিটা কথা তার বুকে গিয়ে লেগেছে।সে তো চায় না আবির তার থেকে হারিয়ে যাক।কিন্তু সে এখন কি করবে!
!!!
সোফায় বসে সিগারেট টানছে ফাহাদ।আর ধোঁয়া ছাড়ছে।সকালে ঘটে যাওয়া সব কিছু মিলিয়ে সে বিগড়ে আছে।একদিকে ডিল ক্যান্সেল তার উপরে অন্নার থাপ্পড়।প্রতিশোধের আগুনে জ্বলছে ফাহাদ।
হাই ফাহাদ।(মিমি)
হঠাৎ করে মিমি এসে ফাহাদের গলা জড়িয়ে ধরলো।ফাহাদ রাগে এক ঝটকা দিয়ে মিমিকে তার থেকে দূরে সরিয়ে দিলো।
তোকে কতবার বলেছি এমন গায়ে এসে পড়বি নাহ্।তুই তো কোন কথাই শুনিস না।(ফাহাদ)
এতো মেয়ের সঙ্গ পেলে তো আমাকে আর তোর ভালো লাগবে নাহ্।(মিমি)
ফাহাদ চোখ রাঙিয়ে মিমির দিকে তাকালো।সিগারেট নিচে ফেলে দিয়ে উঠে দাঁড়ালো।
তোকে ইউজ করা শেষ।তুই এখন ওল্ড হয়ে গেছিস।তোর কোন মূল্য নেই আমার কাছে।তারপরেও বেহায়ার মতো কেন আসিস আমার কাছে?(ফাহাদ)
আমি তোকে ভালোবাসি ফাহাদ।(মিমি)
মিমির কথায় ফাহাদ জোরে হেসে দিলো।
ভালোবাসা মাই ফুট!এইসব প্রেম-ভালোবাসার কোন দাম নেই আমার কাছে।আমার তো মেয়ে হলেই চলে যায়।(ফাহাদ)
মিমি ফাহাদের হাত ধরে বললো,
ফাহাদ প্লিজ এমনটা করিস না।আমি তোকে অনেক ভালোবাসি।তুই এইসব বাজে কাজ ছেড়ে দে।দেখ আমরা দুজনে অনেক ভালো থাকবো।(মিমি)
ফাহাদ ঝটকা দিয়ে মিমির হাতটা ছাড়িয়ে ফেললো।
আমি যেমন আছি তেমনই থাকবো।আর আমার যা ইচ্ছা হবে তাই করবো।(ফাহাদ)
ফাহাদ হেঁটে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো।মিমি দাঁড়িয়ে চোখের জল ফেলছে।
কেন তোকে ভালোবাসলাম আমি ফাহাদ?তোর কাছে তো ভালোবাসা মানে মেয়েদের শরীর।তা ছাড়া কিছুই নাহ্।মিমি)
মিমি চোখ মুছে ফাহাদের বাড়ি থেকে বের হয়ে চলে গেল।
/\/\/\
কি রে ফোন ধরতে এতো টাইম লাগে তোর?(নিতু)
আরে আমি নিচে ছিলাম।(অন্না)
কি করছিস এখন?(নিতু)
এই তো চা খাচ্ছি।(অন্না)
মুড ভালো আছে?(নিতু)
হু আছে।(অন্না মুখটা মলিন করে বললো)
কাল ভার্সিটিতে আসবি?(নিতু)
না রে কালকে সিলেটে যাবো।(অন্না)
হঠাৎ কিসের জন্য?(নিতু)
অন্না তারপরে নিতুকে সবটা বললো।
এই তাহলে আমাদের তিনজনের জন্য তিনটা কার্ডের ব্যবস্থা করে দে।আমরাও যাবো তোর সাথে প্লিজ।(নিতু)
আরে কার্ডের ব্যবস্থা করতে হলে আমাকে আবির বাবুর সাথে কথা বলতে হবে।(অন্না)
বল তাহলে সমস্যা কি?(নিতু)
নাহ্ আমি উনার সাথে কথা বলতে পারবো না।(অন্না)
তাহলে আমিও তোর সাথে কথা বলবো নাহ্।(নিতু)
উফ!তোর জ্বালায় আর বাঁচি নাহ্।ফোন রাখ আমি আবির বাবুকে কল করি।(অন্না)
ওকে মিসেস.আবির বাবু।(নিতু)
মাইর খাবি কিন্তু আমার কাছে।(অন্না)
নিতু খিলখিল করে হেসে ফোনটা কেটে দিলো।
অন্না ফোনটা হাতে নিয়ে বসে আছে।তার হাত রীতিমতো কাঁপছে আবিরকে কল করতে।তবে কিছুটা বাধ্য হয়েই সে আবিরকে কল করলো।
অন্যদিকে,
আবির বসে বসে অফিসের কাজ করছে।কফিতে চুমুক দিচ্ছে আর একটা একটা করে ফাইলের পেজ উল্টাচ্ছে।হঠাৎ করে মোবাইলটা বেজে উঠলো।তাকিয়ে দেখে তার সুপরিচিত নামটা ভেসে উঠেছে ‘অনুলতা’।আবির কিছুটা অবাক হলো।কারণ অন্না কখনোই তাকে কল করে না।বলা যায় আবিরের ফোনে অন্নার নাম্বারটা শপিজ হিসেবে সাজানো।
আবির সাত-পাঁচ ভাবা বাদ দিয়ে কলটা রিসিভ করলো।ওই পাশ থেকে অন্নার মধুর কণ্ঠে ফেসে আসলো,
আবির বাবু।(অন্না)
ডাকটা শুনে আবির মুচকি হাসলো।
হুম বলো অনুলতা।(আবির)
আপনার কাছে আমার একটা অনুরোধ আছে।(অন্না)
‘অরবিণী ইসলাম অন্না’র আবির চৌধুরীর কাছে অনুরোধ আছে?আর ইউ সিরিয়াস?নাকি জোকস করছো?(আবির)
আপনি ভালো করেই জানেন আবির বাবু আমি সহজে মজা করি না।(অন্না)
আচ্ছা ওকে তুমি কি বলবে সেটা বলো।(আবির)
আমার আরোও তিনটা কার্ড লাগবে।(অন্না)
কিসের জন্য?(আবির)
আমার বান্ধবীরা আমাদের সাথে যেতে চাইছে।(অন্না)
ওকে কাল যখন যাবো তখন দিয়ে দিবো।তুমি তাদের জানিয়ে দিও।(আবির)
আচ্ছা আল্লাহ হাফেজ তাহলে রাখি।(অন্না)
একটা কথা বলি?(আবির)
জ্বি বলুন।(অন্না)
কালকে পারলে একবার শাড়ি পড়ো।(আবির)
অন্না আবিরের কথায় থমকে গেলো।আবির তাকে শাড়ি পড়তে বলছে কেন?এতো অবহেলার পরেও কেনই বা এই আবির এমন করে?অন্না কিছুতেই বুঝতে পারে না।যতই সে চাচ্ছে আবিরের থেকে দূরে সরে যেতে সেই আবির তার আরো কাছে চলে আসছে।
শাড়ি পড়বো কেন?(অন্না)
ভয় পেও না অনুলতা।আমি তোমাকে প্রপোজ করবো নাহ্।জাস্ট অনেকদিন হলো তোমায় শাড়ি পড়া অবস্থায় দেখি না।তাই বললাম।এখন বাকিটা তোমার ইচ্ছা।আল্লাহ হাফেজ।(আবির)
অন্না আর কিছু না বলে ফোনটা কেটে দিল।
//
আবির মুচকি হেসে দাঁড়িয়ে আছে।সে জানে অন্না তার কথা ফেলবে নাহ্।অন্না নিশ্চিত শাড়ি পড়েই আসবে।
কিছু কিছু জিনিস দূর থেকেই সুন্দর।আমি না হয় তোমায় দূর থেকেই ভালোবেসে যাবো আর তোমার সৌন্দর্য্য উপভোগ করবো অনুলতা।(আবির)
“””””””””
প্রচন্ড ঘুম আসছে অন্নার।তবে তার মাথায় একটা জিনিস ঘুরপাক খাচ্ছে।সে কি শাড়ি পড়বে নাকি পড়বে নাহ্!সে চায় আবিরকে কষ্ট দিতে কিন্তু আবার চায় না।আবিরকে কষ্ট দিলে যে সে নিজেও কষ্ট পায়।
#চলবে………………………………..
[