#মেঘের_আড়ালে_বৃষ্টি
# চৌদ্দ
#প্রজ্ঞা_জামান_দৃঢ়তা
রোদ বাসায় এসেছে অনেক্ষণ হলো। তার শরীর মন থেকে সেই অদ্ভুত অনুভূতি যেন এখনো সরছে না।এখনো মনে হচ্ছে তাকে প্রয়াস স্পর্শ করে আছে। এখনো কোন এক অজানা ভালো লাগায় বারবার চমকে যাচ্ছে। এটা কেমন অনুভব! কই আগে তো কখনো এমন লাগেনি। তবে আজ কেন এমন হচ্ছে?এই অনুভূতির সাথে আমি পরিচিত নই। বুকের ভেতর থেকে কেমন ধকধক শব্দ আসছে। এখন যদি তার কার্ডিওগ্রাফ করে হার্ট বিট মাফা হয়,নির্ঘাত সে ধরা পড়ে যেত।
মেঘলা এসে অনেক্ষণ ধরে রোদের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা বোঝার চেষ্টা করছে। রোদ খাটের এক কোণে বসে আছে। রোদের রুমে দুটি সিঙ্গেল খাট আছে। একটা রোদের অন্যটা মেঘলার। রোদ এই মুহূর্তে নিজের খাটের এক কোণে বসে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। কিন্তু সে জানে না। দুটি চোখ তাকে গভীরভাবে লক্ষ্য করছে। রোদ প্রয়াসের সাথে সেই মুহুর্ত মনে করছে আর লজ্জায় তার মুখটা লাল, নীল বেগুনী হয়ে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে দু’হাতে মুখ ডেকে ফেলছে।
এসব দেখে মেঘলার চিন্তা হচ্ছে। এমন কাণ্ড করার মেয়ে তো রোদ না। এতো চাপা একটা মেয়ে কি না!এসব আজব কাজ কারবার করছে!
মেঘলা একটু ধাক্কা দিয়ে বলল, “কীরে আপুনি তোর কী হইছে? বাংলা সিনেমার নায়িকার মত এমন লজ্জাই বা পাচ্ছিস কেন? আর হাত দিয়ে মুখই বা ডাকছিস কেন? কেমন বোকা বোকা কাজ করতেছিস তুই জানিস? দাঁড়া আমি আম্মুরে ডাকি।”
বলেই এক পা বাড়াতেই মেঘলাকে রোদ ধরে ফেলে।
“প্লিজ। কলিজা বোন আমার আম্মুরে কিছু বলিস না।আমি তোরে বলতেছি।”
“ঝেড়ে কাশুন তো, ম্যাডাম বাংলা সিনেমার বোকা নায়িকা।”
“আগে তুই এসব নায়িকা বলা বন্ধ কর। কী সব নায়িকা নায়িকা করছিস বলতো?”
“আরে তুই যেভাবে মুখ ডেকে হাসছিস। লজ্জা পাচ্ছিস। এসবতো বাংলা সিনেমার ন্যাকা নায়িকারা করে।”
“চুপ করবি তুই? আচ্ছা করছি বল এবার কী এমন হয়েছে?”
“আমাকে একজন প্রপোজ করছে।”
“প্রপোজ!” বলেই মুখ হা করে আছে মেঘলা।
রোদ মুখটা হাত দিয়ে বন্ধ করে দিয়ে বলল, “এমন হা করে থাকলে মাছি ডুকবেরে বোন। আর এতো বড় করে হা করেছিস যে পুরো পৃথিবীটাই ঢুকে যাবে।”
“এই আপু তুই সবসময় আমায় এসব বাজে কথা বলিস কেন?”
“বল এখন কী বলবি? নয়তো আম্মুর কাছে যাচ্ছি।”
রোদ নিচের দিকে তাকিয়ে ওড়নায় গিট দিয়ে বলল, “প্রয়াস নামের একজনের কথা বলছিলাম যে তোকে। সেই আমাকে প্রপোজ করেছে।”
“কী বলিস? যাকে পিচ্ছি বলে ডাকছে তারই প্রেমে পড়ছে। বাহ ভালো তো। আসলে কবি সাহিত্যিকরা এমনি এমনি বলে যায়নি। ঝগড়া অথবা তিরস্কার করা মানুষগুলোই সেই মানুষটির প্রেমে পড়ে। এখন তোর মনে কী আছে সেটা বল?”
“আ-আ আমার মনে কী থাকবে? কিছু নেই। আমি ফ্রেশ হতে যাচ্ছি” বলে রোদ মেঘলাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়।
মেঘলা বলল, আমি জানি আপু তুই প্রেমে পড়ছিস। তোর চোখে মুখে যে সেই ছাপ স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি।কিন্তু আমাদের পরিবারে প্রেম মানে যে কষ্ট, সেটা যেন তোর সাথে না হয়। আর তুই যেমন বাবাকে ভালবাসিস তুই কী কোনোদিন বাবার কথার বাইরে যেতে পারবি?”
এসব ভাবতে ভাবতেই মেঘলার মুখে চিন্তার রেখা ভেসে উঠেছে।
★★★
প্রয়াস বাসায় এসে নিজেকে ঘর বন্দী করে রেখেছে। খুব চিন্তা হচ্ছে তার। রোদের কাছ থেকে কোনো পজিটিভ উত্তর পেল না । তার উপর এভাবে কিছু না বলে চলে যাওয়া দেখে খুব ভয় লাগছে তার। রোদের সাথে কথা বলতে না পারলে তার শান্তি লাগছে না।কীভাবে যোগাযোগ করা যায়। ভাবতেই মনে হলো কল দিয়ে কথা বলা যায়। মন খুশীতে নেচে উঠল।ফোন হাতে নিতেই মনের ভেতর জ্বলে উঠা বাতিটা দপ করে নিভে গেল।
“ইশ্! আমি এতো বোকা হলাম কী করে। এই কয়েকটা দিনেও আমি নাম্বারটা নিলাম না, রোদেলা থেকে। নিজের প্রতি নিজের রাগ হচ্ছে প্রয়াসের। এমন একটা বোকামি সে কী করে করতে পারে। অসহ্য লাগছে আমার। এখন কী যে করি।”
আগামী তিনদিন কলেজ বন্ধ। রোদ কলেজে ও আসবে না। এখন কী করব। কীভাবে যোগাযোগ করব রোদের সাথে? এসব ভাবতে ভাবতেই বিরক্ত হয়ে যাচ্ছি। বাকি তিনটি দিন কীভাবে কাটাব? আর ভাবতেই পারছিনা। রোদের বান্ধবীদের কাছে রোদের নাম্বার পাওয়া যাবে। কিন্তু তাদের সাথেই বা যোগাযোগ করবো কীভাবে? হঠাৎ ফোনের শব্দে হুস ফিরে প্রয়াসের। সকাল কল দিয়েছে কাল সকালে দেখা করতে বলছে। প্রয়াস দেখছি বলে কল কেটে দেয়। এই মুহুর্তে রোদের কথা ছাড়া মাথায় কিছুই আসছে না। শুধু রোদ তার মনে, মস্তিষ্কে আছে।ভাল্লাগছে না কিছু। এসব ভাবতে ভাবতেই কখন ঘুম চলে আসে প্রয়াস বুঝেনি। দুই রাত না ঘুমানোর জন্য আর এতটা পথ জার্নি করার জন্য হয়তো অনেক ক্লান্ত থাকায় ঘুম চলে আসছে। সেই ঘুম ভাঙে রাত একটায়। প্রয়াস দেখে এত সময় সে ঘুমিয়েছে। অথচ কেউ তাকে ডাকল না।
মা তো ডাকতে পারত। হয়তো ডেকেছে আমার যে ঘুম আমি উঠিনি। খুব ক্ষুধা লাগছে। বেডের পাশে সাইড টেবিলের উপর চোখ যেতেই দেখল খাবার রাখা আছে। প্রয়াস জানে তার জন্য খাবার রাখা থাকবে।তার মা এমনই।
খাবার খেয়ে আবার রোদ তার চিন্তায় চলে এলো। এবার সে ফেইসবুকে রোদের নাম দিয়ে সার্চ দেয়।কিন্তু রোদেলা নামের হাজারটা আইডি চলে আসে।
তারপর দেখলো রোদেলা নামের একটা আইডি সাবার মিউচুয়াল ফ্রেন্ড। তাড়াতাড়ি করে প্রয়াস সেই আইডিতে ঢুকে কিন্তু নেটওয়ার্ক স্লো বলে ঢুকতে পারছে না। তাড়াতাড়ি করলে এমনি হয়। যেখানে ধৈর্য্য ধরতে পারব না। সেখানে ধৈর্যের পরিক্ষা নেয়া হয়। ধুর ভালো লাগেনা।
এবার দেখলো আইডিটায় ঢুকতে পেরেছে। খুব খুশী হলো সে। কেন যেন তার মনে হচ্ছে এটাই রোদেলার আইডি। এই আইডিতে প্রোফাইলে দেয়া আছে একটা মেয়ের কানের একাংশ। ধবধবে সাদা কানে এন্টিকের একটা ঝুমকো। কিছু এলোমেলো চুল কানের পাশে হাত দিয়ে গুজছে। হাতের স্কয়ার শেপ নখ আর আঙুলের গঠন দেখে বুঝে গেলো। এটা আর কেউ না এটাই তার রোদেলা আইডি। মনের খুশীতে প্রয়াস ইয়েস বলেই খাটে লাফ দিল। লতার এমন আচরণে সে নিজেই অবাক হলো। প্রেমে পড়ে কী সে পাগল হয়ে যাচ্ছে। কী করছে। এতো রাতে এভাবে চিৎকার করলে বাড়ির সবাই উঠে যাবে। তার এই মিনিমাম কমন সেন্স লোপ পাচ্ছে। প্রেমে পড়লে ছেলেরা আসলে গাধা হয়ে যায় যেমনটা আমি হচ্ছি।
রোদেলা মেসেঞ্জারে একটা এসএমএস দিল।
“যদি ভুল করে থাকি তবে ক্ষমা করে দিও।
প্লিজ। তারপর ও কিছু বলো?”
প্রয়াস।
মেসেজ পাঠিয়ে অপেক্ষা করতে লাগে উত্তর এর জন্য। কিন্তু কোন উত্তর পাচ্ছেনা। এতো রাতে পাওয়ার ও কথা না।
রোদেলা লাস্ট সিন করেছে ১২ঃ৫০ মিনিটে।
তারমানে অল্প কিছুক্ষণ আগে। এখন কী করবে সে?
ভাবতে ভাবতেই রাত ৩টা। কিন্তু এইভাবে যেন সময়ই কাটছে না ভালো লাগছেনা তার।
কোন কোন বিখ্যাত মানুষ জানি বলেছিলেন,
“অপেক্ষামান সময় মৃত্যুর চেয়ে কষ্টকর।”
অপেক্ষার এক প্রহর যেন হাজার প্রহরের সমান।
অপেক্ষার প্রহর যেন কাটতেই চায়না।
জীবন আর জীবনের নিয়ম বড়ই অদ্ভুত!
চলবে