মেঘের আড়ালে বৃষ্টি পর্ব -১৩

#মেঘের_আড়ালে_বৃষ্টি
#তেরো
#প্রজ্ঞা_জামান_দৃঢ়তা

বাইকের লোকটা আর কেউ না “প্রয়াস”।

রোদ অগ্নিমূর্তি হয়ে বলল, “এভাবে কেউ কাউকে তুলে আনে!”

“আমি আবার তোমাকে কখন তুলে আসলাম! আমিতো তোমাকে নিয়ে আসলাম। ”

“এটাকে তুলে আনাই বলে।”

প্রয়াস আর রোদ এখন আগ্রাবাদের লেমন গ্রাস রেস্টুরেন্টে বসে আছে। প্রয়াস তখন কিছু না বলে তাকে একরকম তুলে নিয়ে আসে রিকশা থেকে। যনি শুধু বোকার মত চেয়ে দেখছিল। এতটা অবাক হয়েছিল যে চেয়েও কিছুই বলতে পারেনি। কারণ প্রয়াসের মত এতো ব্যাক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষ এমন গুন্ডামি করতে পারে। এটা নিশি বা রোদ কেউ ভাবেনি! রোদও কিছু বুঝতে পারেনি কী হচ্ছে! কোনোকিছুই সে বলতে পারেনি।

রোদকে হাত ধরে বাইকে এনে বসিয়ে চলে আসে আগ্রাবাদে লেমন গ্রাস রেস্টুরেন্টে।

এখানে আজ কোনো লোক দেখতে পাচ্ছে না।
দেখে মনে হচ্ছে এটা হয়তো কিছুক্ষণের জন্য শুধু একজনের জন্য বুক করা হয়েছে। আর সে প্রয়াস আর কেউ নয়। যে টেবিলটায় তারা বসেছে, খুব সুন্দর করে সজ্জিত করা হয়েছে। সব লাইট অফ শুধু হরেক রকমের ক্যান্ডেল জ্বালানো আছে। তাই এখানকার সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। পরিবেশ টা কেমন রোমাঞ্চকর মনে হচ্ছে। হরেক রকম ক্যান্ডেল এর আলো রোদের মুখে পড়ায়। রোদকে অন্যরকম ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে নানা রকম রঙের একটা মেয়ে বসে আছে প্রয়াসের সামনে। ক্যান্ডলের আলোতে তাকে অপুর্ব দেখাচ্ছে।

রোদ নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। এখন আর কিছুই বলছে না। এমন একটা জায়গায় সে একা একটা ছেলের সাথে বসে আছে বিষয়টায় কেমন অস্বস্তিকর।তার উচিত এখন রাগ করা,কারণ এভাবে একটা ছেলে তাকে এখানে নিয়ে এসেছে। তারই অনুমতি ছাড়া। তার রাগ করাই উচিত। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে সে রাগ করতেই পারছেনা!

বরং তার আরও কেমন একটা অকারণ ভালো লাগা মনের একোণ – সেকোণ খেলে যাচ্ছে। কেমন একটা ঘোর ঘোর লাগছে। এত সুন্দর একটা অনুভুতি হচ্ছে। ভাবছে তবে কী আমি মানুষটাকে ভালবেসে ফেলেছি! সিনেমায় দেখেছে সে এমন শুধু ভালবাসলেই হয়।

প্রয়াস কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, “আমার না গভীর রাতে গান গাইতে খুব ইচ্ছে করে। কিন্তু একা একা গাইতে ইচ্ছে করেনা। তুমি কী আমার গভীর রাতের গান গাওয়ার সঙ্গী হবে?”

রোদ চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে প্রয়াসের দিকে। তার সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। বিস্ময়ে তার চোখ গোল গোল।

প্রয়াস কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার বলল, “জানো আমার মা সবসময় বলে তার নাকি সব কাজ করতে ভালো লাগে। শুধু মাথায় তেল লাগাতে ইচ্ছেই করে না। রোদ তুমি কী আমার মায়ের চুলে তেল লাগিয়ে দেয়ার দ্বায়িত্বটা নেবে?”

এখনো চুপ রোদ! তার দৃষ্টি শূন্যে!

আরও কিছুক্ষণ চুপ থেকে প্রয়াস বলল, “আমার বোনের নাকি বাসায় বসে থাকতে বোর লাগে। তার গল্প করার কেউ নেই। এই রোদ তুমি কি আমার বোনের গল্প করার সাথী হবে?

আমার বাবা সবসময় বলেন, “প্রয়াস আমি একজনের হাতে চা খেতে খেতে বিরক্ত হয়ে গেছি। তুই যদি চাস অন্য একজনের হাতের চা টেস্ট করতে পারি? রোদ তুমি কি আমার বাবার জন্য চা বানানোর সেই অন্য একজন হবে?”

রোদ কিছু না ভেবে প্রয়াসকে জড়িয়ে ধরে। প্রয়াস আচমকা এমন আক্রমনের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না। তাই তার কয়েক মুহুর্ত লেগে যায় বুঝতে যে তাকে প্রথমবারের মত কোনো মেয়ে জড়িয়ে ধরেছে। তাও যাকে সে ভালবাসে সে।

আচ্ছা এমন অবস্থায় একজন পুরুষের কেমন অনুভুতি হওয়া উচিত ঠিক আমার যেমন হচ্ছে এমন?মনে হচ্ছে পৃথিবীর সব সুখ তাকে ঘিরে ধরেছে। সব মায়া তার স্পর্শে মিশে যাচ্ছে। কেমন নেশা মিশে যাচ্ছে এই মেয়েটার নিঃশ্বাসের বাতাসে। যেন মাদকতায় চেয়ে আছে চারপাশ। রোদের শরীরের আলাদা একটা ঘ্রাণ সে পাচ্ছে। এই ঘ্রাণ সে মাঝে মাঝে ঘুম থেকে উঠলে অনুভব করত। আজ সে বুঝতে পারছে এটা কীসের ঘ্রাণ সে অনুভব করছে। হ্যাঁ এটাই তার জীবন সঙ্গীর গায়ের চিরচেনা সেই ঘ্রাণ।

প্রয়াস শক্ত করে ধরে আছে রোদকে। রোদ ও একইভাবে ধরে আছে প্রয়াসকে।
প্রয়াস রোদকে একটু আলগা করে ধরে। রোদের মুখ দুহাতে ধরে নিজের দিকে করে,রোদ একটু তাকিয়ে দেখে, আবার নিচের দিকে তাকায় লজ্জায়।

এই এক পলকের দেখায় রোদ দেখে প্রয়াসের চোখ আগের বারের মত রক্তবর্ণ হয়ে আছে।
হঠাৎ তার মাথায় আসে ওইদিন হয়তো প্রয়াসের তার জন্যই এমন হয়েছে। এসব ভাবতেই তার গায়ে কাঁটা দিচ্ছে।

খরায় শুস্ক মাটিতে হঠাৎ মেঘের আড়াল থেকে বৃষ্টি নামলে যেমন শান্তি অনুভব করে খরায় চৌঁচির হওয়া মাটি। ঠিক তেমনই অনুভব করছে দুটি পিপাসায় কাতর মন। আজ যেন সেই মেঘের আড়াল থেকে নেমে এসেছে অনাকাঙ্ক্ষিত সেই বৃষ্টি। যার অপেক্ষা এতদিন করেছে।

রোদ নিশ্চয়ই তাকে ভালবাসে তাই তাকে জড়িয়ে ধরেছে। যদি ভাল না বাসতো এভাবে জড়িয়ে ধরতো কি? তাহলে এভাবে কিছু না বলে চলে গেলো কেন? অদ্ভুত ব্যাপার। চিন্তায় প্রয়াসের ঘাড়ের রগ ফুলে উঠেছে। রোদ তাকে খারাপ ছেলে ভাবছে না তো। হুট করে কেন যে এটা করলো সে। তাই নিজেকে বসে বসে দোষ দিচ্ছে। যদি রোদ তাকে ছেড়ে চলে যায়!

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here