#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#সিজন ৩
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
#পর্ব_৮
সাফাত এগিয়ে এসে অমিতের কলার ধরে বলে, দেখ অনেকক্ষণ ধরে তোর এসব কথা শুনে চলেছি। আমার সাথে যা করেছিস তার জন্য ক্ষমা করে দিলেও। আমার বাবার নামে আর একটা খারাপ কথা বললে আমি তোকে এখানেই মেরে পুঁতে দিবো।
অমিত নিজের কলারটা সাফাতের হাত থেকে ছাড়িয়ে নিতে নিতে বলে,
আমাকে মারলে মারবে সমস্যা নেই। কিন্তু সবকিছু শোনার পর তোমাদের বাবাকে কী করবে? তোমাদের সাথে আমি এমনটা করতে চায়নি। কিন্তু কী করবো কোনো উপায় ছিল না। তিশান আহম্মেদকে কষ্ট দিতে হলে যে তোমাদের আঘাত করতে হবে। তোমাদের বাবার পাপের শাস্তি তোমরা পেলে। তোমাদের বাবার জন্য আজকে তোমাদের এই অবস্থা। আমারও এই অবস্থার জন্য তোমাদের বাবাই দায়ী।
কণা দুই পা পিছিয়ে যায়। আদিয়াত পিছন থেকে কণাকে আগলে নেয় নিজের বাহুডোরে। কণা আদিয়াতের বাহু খামছে ধরে। নিজের ঠোঁট কামড়ে ধরে বলে,
আপনার সাথে আমার আব্বু কী অন্যায় করেছিল? যার শাস্তি সরুপ আপনি আমাদের জীবন ধ্বংস করে দিলেন।
তোমার আব্বু অনেক বড় অন্যায় করেছে। আমার কাছ থেকে আমার সবচেয়ে প্রিয় মানুষটাকে কেড়ে নিয়েছে। যাকে আমি নিজের জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসতাম। তাই তো তোমাদের জীবনও আমি ভালোবাসাহীন করে দিতে চেয়েছিলাম। তোমরা যখন ভালোবাসার মানুষকে নিজের করে না পাবার জন্য ছটফট করতে তখন তিশান আহম্মেদ নিজের ছেলে মেয়ের কষ্ট দেখে ধুকে ধুকে মরতো। তাই তো তোমাদের দুজনের কাছ থেকে আমি তোমাদের ভালোবাসার মানুষকে কেড়ে নিয়েছিলাম। ছোঁয়া যখন বলেছিল তোমাকে মেরে ফেলার কথা তখন আমি এসিড নিক্ষেপের প্লেনটা দিয়েছিলাম।
এতটুকু শুনে রাগে আদিয়াতের কপালের রগ ফুলে ওঠে। অমিতকে মারার জন্য এগিয়ে আসতে নিলেই কণা আটকে নেয়। সে অমিতের মুখে সব শুনতে চায়।
খুন করলে তো তুমি একবারে মরে যেতে। তাতে তো তিশান আহম্মেদের এতো কষ্ট হতো না। প্রথম কিছুদিন কান্না কাটি করতো পরে ঠিক হয়ে যেতো। কিন্তু এসিড নিক্ষেপ করলে তিশান আহম্মেদ প্রতি মুহুর্তে কষ্ট পাবে। যতবার ঐ ঝলসানো মুখের দিকে তাকাবে ততবার কষ্ট পাবে। বুকের ভিতর চিন চিন ব্যথা অনুভব করবো। ভিতরে ভিতরে গুমড়ে মরবে। তাই তো এই অবস্থা করেছিলাম তোমার। আর সাফাতকে। সাফাতকে মারার জন্য আমি এক্সিডেন্ট করায়নি। ওকে প্যারালাইজড বা কোমায় পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য এক্সিডেন্ট করেছিলাম। কিন্তু সাফাতের তো কৈ মাছের প্রাণ। এতো বড় এক্সিডেন্টের পরও সুস্থ স্বাভাবিক ভাবে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তারপর আমি ডক্টরকে টাকা খাইয়ে সাফাতের ফেইক রিপোর্ট তৈরি করি। সেই রিপোর্টে ছিল সাফাত এইডস রোগে আক্রান্ত। এটা জানার পরেই তো সাফাত নিজের জীবনে কাউকে জড়াতে চায়নি। দুই দুইটা মেয়ে তার জন্য পাগল থাকার পরও চির কুমার থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। নিজের ভালোবাসার মানুষ বন্যাকে অন্য একজনের হাতে তুলে দেয়। আর অহি যে তাকে পাগলের মতো ভালোবাসে। তাকেও সে বার বার ফিরিয়ে দিয়েছে। বার বার ভাসোবাসার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। যে রোগের কারণে এতকিছু সেই রোগই তো তার শরীরে নেয়।
কণা বলে, কেনো করলেন আপনি এতোকিছু।
বলবো বলবো। অবশ্যই সব বলবো। তোমাদের বাবার অতীত সম্পর্কে তোমাদের তো জানতে হবে। তিশান আহম্মেদের জন্য আমি আমার মাকে হারিয়ে ফেলেছি।
পাশ থেকে হেলাল রহমান বিষ্ময় ভরা কন্ঠে বলে, তুই এসব কী বলছিস অমিত? তিশানের জন্য তুই কীভাবে তোর মাকে হারিয়েছিস? এসব কী আজে বাজে কথা বলছিস।
মাকে না মায়ের মতো ফুফিকে হারিয়েছি। ফুফি তো আমার আরেক মা ছিল। যে মায়ের কাছে আমার বেড়ে ওঠা বড় হওয়া। যে আমাকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছে। আমার সমস্ত পৃথিবী জুড়ে ছিল আমার ফুফি আম্মু। তিশান আহম্মেদ আমার সেই ফুফি আম্মুকে কেড়ে নিয়েছিলেন। মেরে ফেলেছিল আমার ফুফি আম্মুকে যার জন্য আমি কখনোই উনাকে ক্ষমা করবো না।
হেলাল রহমান নিজের ছেলের কথা শুনে অবাক হয়ে যায়। হেলাল রহমান অমিতের দিকে তাকিয়ে বলে,
তিশান কীভাবে মেহেরকে মেরেছে? তিশান তো মেহেরকে চিনতোই না। আমার তো মনে হয় তিশান মেহেরকে কখনো দেখেইনি।
আব্বু কিছু জানো না। কিচ্ছু জানো না। তিশান আহম্মেদ তোমাকেও বোকা বানিয়েছে। তোমার চোখে নিজের একটা ভালো ইমেজ তৈরি করে রেখেছে শুধু। তিশান আহম্মেদ বিশ্বাসঘাতক, বেঈমান। অন্যের ভালোবাসা, ইমোশন এসব নিয়ে খেলতে ভালোবাসে। বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও আমার ফুফি আম্মুর সাথে সম্পর্কে জড়ায়। শুধু প্রেমের সম্পর্ক পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকেনি। আমার ফুফিকে বিয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়ে তার সাথে ~~~ আমার বলতেও লজ্জা লাগছে। আমার ফুফি আম্মুও ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে নিজের বিবেক বুদ্ধি হারিয়ে ফেলে। অন্ধের মতো বিশ্বাস করতো তিশান আহম্মেদকে। কিন্তু তিশান আহম্মেদ সেই বিশ্বাস ভেঙে দেয়। একটা সত্যি জেনেই আমার ফুফি আম্মুর মন ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। যতদিনে ফুফি আম্মু জানতে পারে তিশান আহম্মেদ বিবাহিত। ততদিনে অনেক দেরি হয়ে যায়। ফুফি বুঝতে পারে নিজের ভিতর একটা অস্তিত্ব বেড়ে ওঠছে। সেটা অনুভব করতে পারে। তিশান আহম্মেদকে সেই কথা বললে উনি সোজাসুজি অস্বীকার করে দেয়। ফুফি আম্মু আর কোনো উপায় না পেয়ে সুইসাইড করে।
এতটুকু বলেই অমিত কেঁদে দেয়। অমিতকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে তার ফুফি আম্মুকে কতোটা ভালোবাসতো। কণা অমিতের কথা শুনে নাক মুখ কুঁচকে নেয়। তার বিশ্বাসই হচ্ছে না তার বাবা এতো জঘন্য কাজ করেছে। সাফাত লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। নিজের ছোট বোনের জামাইয়ে সামনে এভাবে নিজের বাবার সম্পর্কে এসব কথা শোনা কতোটা লজ্জার। হোক সেটা সত্য বা মিথ্যা।
তাই তো আমি তিশান আহম্মেদকে প্রিয়জন হারানোর কষ্টটা বুঝাতে চেয়েছিলাম। প্রিয়জনকে কষ্ট পেতে দেখলে কেমন লাগে সেটা অনুভব করাতে চেয়েছিলাম।
হেলাল রহমান ঠাস ঠাস করে দুইটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয় অমিতের গালে।
তুই এতোটা অমানুষ হয়ে গেছিস। যেটার ওপর ভিত্তি করে তুই ওদের এতো ক্ষতি করে গেছিস। সেটাই তো মিথ্যা। তিশান তো মেহেরকে চিনতোই না। মেহের তো ছিল একটা চরিত্রহীন মেয়ে।
অমিত রেগে বলে, বাবা তুমি আমার বিষয়ে যায় বলো না কেনো আমার তাতে কিছু আসে যায় না। কিন্তু আমার ফুফি আম্মুর ব্যাপারে উল্টা পাল্টা কথা বললে আমি মেনে নিবো না।
নিজের বোনের সম্পর্কে এসব কথা বলতে তোমার লজ্জা করছে না।
চুপ কর তুই। কতোটা জানিস তুই মেহেরের ব্যাপারে। আর মেহের আমার বোন? বোন তো বটেই। তবে আপন বোন নাহ আমার সৎবোন। আপন বোন হলে তো আমার এতো বড় ক্ষতি করতে পারতো না। মেহের আমাকে ছোটবেলা থেকেই সহ্য করতো পারতো না। কথায় আছে না পর কখনো আপন হয় না। পর তো পরই হয়। আমি ওকে এতো ভালোবাসতাম তবু ও আমাকে সহ্য করতে পারতো না। আমি ছিলাম শান্ত শিষ্ট আর ও ছিল উড়নচন্ডী, অভদ্র। তাই বাবা আমাকে একটু বেশিই ভালোবাসতো। যার কারণে আমি ওর চোখের বিষ হয়ে যায়। মেহের বড় হতে থাকে আর তার অভদ্রতামো বাড়তে থাকে। পার্টি করা ড্রিংকস করা ওর রোজকার রুটিন হয়ে যায়। রাত করে বাড়ি ফেরা। কখনো কখনো তো বাড়ি ফিরতোও না। অনেক ছেলের সাথে সম্পর্কে জড়ায় তার সাথে বিভিন্ন ধরনের খারাপ কাজে লিপ্ত হয়। তাই তো বাবা ওকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছিল। মেহের ভেবেছিল বাবা আমার জন্যই ওকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছে।
চলবে……..