#আমি_তোমার_গল্প_হবো🍁
লেখিকা- মাহিয়া তাহসীন মেরিন
পর্ব:::২৯+৩০(শেষ)
সাহিল হন্ন হয়ে রুমে প্রবেশ করে দেখে অনুরিমা রুম অন্ধকার করে রকিং চেয়ারে বসে আছে। সাহিল ধীরে ধীরে তার কাছে এসে, ” মম, তুমি এখানে শান্তিতে বসে আছো? ওদিকে ড্যাডকে পুলিশ ধরে নিয়ে না জানি কি করছে…। ”
সাহিলের কথা শুনে অনুরিমা ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়িয়ে, ” সাহিল। বাবা আমার, আমাদের এখন আর কিছুই করার নেই। বুঝতে পেরেছো তুমি? ”
” এসব কি বলছো, মম? কেনো কিছু করার নেই? ”
অনুরিমা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে, ” তোমার বাবা অনেক টাকার ডিল নিয়ে বিজনেস করেছিলো। এখন ডিলাররা আমাদের ব্যাংক একাউন্টগুলো সিল করে দিয়েছে। তোমার ড্যাডকে ছাড়াতে হলেও অনেক টাকার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কোথায় পাবো এতোগুলো টাকা? ”
সাহিল কথাগুলো শুনে কিছু একটা ভেবে, ” আমি কিছু জানি না মম। তোমার যেভাবেই হোক কোন এক ভাবে ড্যাডকে ছাড়াতে হবে। আমিও দেখছি কি করা যায়। তুমি দরকার হলে আশ্বিনের কাছেও টাকা চাইবে। ”
অনুরিমা অবাক হয়ে, ” আশ্বিনের কাছে টাকা চাইবো? তোমার মনে হয় আশ্বিন তোমার ড্যাডকে ছাড়াতে এতোগুলো টাকা দিবে? ”
” কেনো দিবে না? তুমি গিয়ে বলবে এই পরিস্থিতিতে আমাদের সাহায্য করতে। আর তুমি তার মা, তার টাকার উপর তোমার অধিকার আছে। ”
অনুরিমা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে, ” মা! এতোগুলো বছর পর আমি তার কাছে মায়ের অধিকার নিয়ে যাবো, আর আশ্বিন খুশি হয়ে আমাকে সাহায্য করবে। তাই না? একটা কথা শুনে রাখো, আশ্বিনকে হাজার অনুরোধ করলেও তোমার বাবাকে ছাড়াতে সে কোন সাহায্যই করবে না। ”
সাহিল রেগে গিয়ে, ” কেনো করবে না? ”
” কারণ, তোমার ড্যাড আশ্বিনের বাবাকে মেরে ফেলেছিল। ”
হঠাত কথাটা বলায় সাহিল স্তব্ধ হয়ে যায়। সে অবাক হয়ে, ” কিহহ? ”
” হ্যা, তোমার ড্যাড। তোমার ড্যাড একজন খুনি। আমার চোখের সামনে উনি আকাশকে মেরে ফেলেছিলো। তুমি সব সময় জানতে চাইতে না, কেনো আমি তোমার ড্যাডকে এতো ঘৃণা করি? এটাই মূল কারণ তোমার ড্যাডকে ঘৃণা করার। হ্যা মানছি, আমি একটা সময় অন্ধ হয়ে তোমার ড্যাডের কথায় আকাশকে ছেড়ে এসেছিলাম, কিন্তু আকাশকে খুন করতে চাইনি। ”
অনুরিমার কথা শুনে সাহিল স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হঠাত তাদের বাসার বাইরে থেকে হৈচৈ শুনে দুজন নিচে নেমে এসে দেখে কয়েকজন লোক দাঁড়িয়ে আছে।
অনুরিমা ভ্রু কুঁচকে, ” কে আপনারা? এভাবে না বলে চলে এসেছেন কেনো? ”
” আমরা কোর্টের অনুমতি নিয়ে এসেছি। এই দেখুন। শাহিন হাসাদের ডিলের রুল অনুযায়ী এই বাসা এখন আমাদের দখলে। আর এই বাসা কাল নিলামে উঠানো হবে। আপনাদের এক ঘন্টা দেওয়া হলো প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে নেওয়ার। ”
সাহিল অবাক হয়ে, ” এসব কি বলছেন? এই বাসা আমাদের। কোথাও যাবো না আমরা। এখনি বেরিয়ে যান। ”
” দেখুন কোর্টের রুল না মানলে কিন্তু আমরা কঠোর হতে বাধ্য হবো। ”
সাহিল রেগে গিয়ে কিছু বলতে চাইলে অনুরিমা তাকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে।
🌻🌻
অধরা, আশ্বিন আর দাদি একসাথে টিভির সামনে বসে আছে।
শাহিন হাসাদের বাসা তারা দখল করেছে। অনুরিমা আর সাহিলকে বাসার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। অধরা স্তব্ধ হয়ে কিছুক্ষণ টিভির দিকে তাকিয়ে আশ্বিনের দিকে ফিরে শান্ত কণ্ঠে, ” আশ্বিন…। ”
আশ্বিন কথাটা শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে বসে হঠাত উঠে চলে যায়। দাদি মন খারাপ করে আশ্বিনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
” ছেলেটা জীবনে তার মায়ের কাছে শুধু একটু ভালোবাসাই চেয়েছিলো। মায়ের ভালোবাসা! এতো অবহেলার পরেও, এই পৃথিবীতে আশ্বিন তার মাকেই সবথেকে বেশি ভালোবাসে। কিন্তু, দেখ তার ভাগ্য…। ”
কথাটা বলে দাদি মাথা নেড়ে ধীরে ধীরে তার রুমে চলে যায়। অধরা চুপচাপ বসে কিছু একটা ভেবে উঠে দাঁড়ায়।
——————
অনুরিমা আর সাহিলকে বাসা থেকে বের করে দেওয়ার পর তারা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। সাহিল একে একে অনেকেই ফোন করে সাহায্য চাইছে কিন্তু কেউ তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসছে না। অনুরিমার ফ্রেন্ড সার্কেলের মাঝে তাদের অবস্থা নিয়ে হাসাহাসি শুরু হয়ে গিয়েছে। এতোদিনে তারা আজ পরিবারের অভাব বুঝতে পারছে।
হঠাত কেউ একজন তাদের সামনে এসে দাঁড়াতেই অনুরিমা মাথা তুলে তার দিকে তাকিয়ে কিছুটা অবাক হয়ে যায়, ” তুমি এখানে? ”
অনুরিমার কথা শুনে সাহিল পাশে ফিরে দেখে অধরা দাঁড়িয়ে আছে। সাহিল অবাক হয়ে, ” অধরা? ”
অধরা স্বাভাবিক ভাবেই তাদের দিকে এগিয়ে এসে, ” আমি জানি আপনারা আমাকে এখানে দেখে অবাক হচ্ছেন। হয়তো ভাবছেন সুযোগ বুঝে আমি আপনাদের নিয়ে কথা শোনাতে এসেছি। ”
অধরার কথাগুলো তারা এতোক্ষণ চুপচাপ শুনছিল। অধরা একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে, ” মামুনী, আমি জানি আশ্বিনের সাথে আপনারা যা করেছেন সেটা অন্যায়। তবে এই মুহূর্তে এইসব কথা বাদ দিয়ে শুধুমাত্র মনুষ্যত্বের কারণে আমি আপনাদের সাহায্য করতে চাই। ”
সাহিল অবাক হয়ে, ” তুমি আমাদের সাহায্য করবে? কি সাহায্য করবে? ”
অধরা কিছুক্ষণ চুপ থেকে, ” তেমন বিশেষ কোন সাহায্য না। আপনাদের এই মুহূর্তে একটা আশ্রয়ের প্রয়োজন। আমার একটা ফ্ল্যাট আছে। আপনারা চাইলে সেখানে থাকতে পারেন। আশা করি আপনাদের কোন সমস্যা হবে না। ”
অধরার কথা শুনে অনুরিমা কিছুক্ষণ একধ্যানে তার দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিয়ে, ” অধরা, আমাদের এই বিপদে তুমি আমাদের সাহায্য করতে চেয়েছো, এটাই আমাদের কাছে অনেক বড় পাওয়া। তবে, তোমার কথাটা আমরা মানতে পারলাম না মা। আশ্বিন জানলে খুব রাগ করবে। তাছাড়া…। ”
অধরা তাকে থামিয়ে দিয়ে, ” আশ্বিন রাগ করবেন না। আমি উনাকে সামলে নিবো। আর মামুনী এই মুহূর্তে এমন জেদ করবেন না। হাজার হোক আপনি আমার মায়ের মতো, আমি একজন মেয়ের দায়িত্ব পালন করতে চাই। ”
অনুরিমা প্রথমে না করতে চাইলেও সাহিলের দিকে তাকিয়ে এক প্রকার বাধ্য হয়েই অধরার কথায় রাজি হয়।
🌻রাতে🌻
অধরা রুমে বসে একটা বই পড়ছিলো হঠাত ফোনে কথা বলতে বলতে আশ্বিন প্রবেশ করে।
” আচ্ছা, ঠিক আছে। কাল কিন্তু খুব সাবধানে নানাভাইকে নিয়ে আসবে ফাহাদ। আমি কোন ধরনের ঝামেলা শুনতে চাই না। হুম, বাই। ”
আশ্বিন কথা বলে ফোন রেখে অধরার পাশে বসে একটু রাগী লুকে অধরার দিকে তাকিয়ে, ” অধরা, তুমি কি আমাকে কিছু বলতে চাও? ”
অধরা আশ্বিনের দিকে আড়চোখে একবার তাকিয়েই বুঝে ফেলে সে কোন বিষয়ে তাকে জিজ্ঞেস করছে। সে একটু নড়ে চড়ে বসে, ” ইয়ে মানে, ক…কি বলবো? ”
আশ্বিন একটু রাগী কণ্ঠে, ” অধরা! তুমি আমাকে একবার জিজ্ঞেস না করেই কিভাবে এমন কাজ করতে পারলে? ”
” আশ্বিন, আমি কি এমন করেছি? তাদের শুধু একটা মাথা গুঁজার আশ্রয় দিয়েছি, এটাই। হ্যা মানছি, আপনি মামুনীকেও শাস্তি দিতে চান। এখন সেই মুহুর্ত আসেনি আশ্বিন। এতোটাও নিষ্ঠুর হবেন না, তাহলে আপনার মাঝে আর উনার মাঝে পার্থক্য কি থাকবে? ”
আশ্বিন অধরার কথা চুপচাপ শুনে কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে উঠে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। অধরা তার যাওয়ার দিকে মন খারাপ করে তাকিয়ে থাকে।
————–
আজ সকালেই শাহিনের বাসা নিলামে উঠানো হয়েছে। অনেকেই এসেছেন এই বাসা কেনার জন্য। অনুরিমা আর সাহিল বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে তাদের শেষ আশ্রয় হারিয়ে যেতে দেখছে। হঠাত কেউ একজন সর্বোচ্চ দামে বাড়িটা কিনে ফেলে। অনুরিমা নিরবে চোখের পানি ফেলে সেই দৃশ্য দেখে।
” মম, চলো এখান থেকে। এখানে দাঁড়িয়ে থেকে আর লাভ নেই। একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে। ”
” কিছুই ঠিক হবে না, বাবা আমার। এইসব আমাদের অন্যায়ের কর্মফল। পাপ কাউকে ছাড় দেয় না বাবা। কাউকে না। ”
অনুরিমার কথা শুনে সাহিল বুঝতে পারছে সে মানসিকভাবে অনেকটা ভেঙে পড়েছে। তাই সে অনুরিমাকে ধরে চলে আসতে নিতেই পিছন থেকে কেউ একজন তাদের ডাক দেয়। তারা পিছনে ঘুরে দেখে তাদের বাড়ির ক্রেতা মুচকি হেসে দাড়িয়ে আছে।
” আপনাদের কিছু বলার আছে আমার। ”
সাহিল অনুরিমার দিকে একবার তাকিয়ে, ” বলুন। এক মিনিট, আপনিই আমাদের বাসাটা কিনেছেন না? হুহহ, আপনাকে অনেক অভিনন্দন। ”
তিনি মুচকি হেসে, ” জি না। এই বাড়িটা আমি না, আমার স্যার কিনেছেন। আর অদ্ভুত ব্যাপার কি জানেন? তিনি এই বাড়িটা মিসেস অনুরিমার নামে কিনেছেন। মানে এখন থেকে আপনারা এই বাসায়ই থাকতে পারবেন। এই নিন চাবি। ”
অনুরিমা আর সাহিল উনার কথা শুনে যেন আকাশ থেকে পড়ে। অবাক হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে সাহিল, ” আপনার স্যার আমাদের নামে কেনো কিনেছেন? ”
” এটা তো স্যারই ভালো জানেন। ”
কথাটা বলে উনি চলে যেতে নিতেই অনুরিমা বলে ওঠে, ” আপনার স্যারের নাম কি? ”
উনি পিছনে ফিরে মুচকি হেসে, ” আশ্বিন চৌধুরী।
ওহ, স্যার এই চিঠিটা আপনাকে দিতে বলেছেন। ”
কথাটা বলেই তিনি চলে যায়। অনুরিমা নামটা শুনে কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে যায়। কাপা কাপা হাতে চিঠি খুলে দেখে,
” মিসেস শাহিন হাসাদ ওরফে অনুরিমা, জানি আমার কর্ম কান্ড দেখে খুব অবাকই হচ্ছেন। হয়তো ভাবছেন আমি এমন কাজ কেনো করেছি? আসলে কি বলুন তো, আপনি আমাকে সবসময় অবহেলা করে গেলেও, আমি আপনাকে পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি ভালোবেসেছিলাম। আমার ড্যাড বলে, যাকে ভালোবাসো তার অবহেলায় কষ্ট পেলেও তার বিপদে কখনো মুখ ফিরিয়ে নিও না। আমি শুধুমাত্র আমার ড্যাডের কথা রাখতেই আপনাকে সাহায্য করেছি। কিন্তু একে আমার দূর্বলতা ভেবে ভুল করবেন না। আপনার জন্য আমি ড্যাডকে হারিয়েছি। আর এর শাস্তি পাওয়া রইলো। ”
অনুরিমা চিঠিটা পড়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। যাকে সারাজীবন ধরে অবহেলা করে গিয়েছে, সেই ছেলেই আজ মায়ের বিপদে এগিয়ে এসেছে। একটা ভুল সিদ্ধান্ত মানুষের জীবনের কতোটা কষ্ট দেয় আজ বুঝতে পারছে সে।
🌻🌻
আশ্বিন অফিসে বসে ফাইল চেক করছে হঠাত নানাভাইকে নিয়ে ফাহাদ রুমে প্রবেশ করে। নানাভাইকে দেখে আশ্বিন মুচকি হেসে তার কাছে এসে, ” নানাভাই আসতে কোন সমস্যা হয়নি তো? ”
” না। একদম সমস্যা হয়নি। ফাহাদের কাছে শাহিনের কথা শুনলাম। এখন কি করতে চাইছো? ”
আশ্বিন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নানাভাইকে তাদের প্ল্যানের কথা খুলে বলে।
” ঠিক আছে। আমরা তাহলে আজই পুলিশের কাছে যাই। চলো। ”
—————
আশ্বিন নানাভাই আর অর্ণব মিলে পুলিশের কাছে অভিযোগ করে। সকল প্রমাণ আর নানাভাইয়ের জবানবন্দি নিয়ে তারা এই বিষয়ে মামলা দায়ের করে।
রাতে আশ্বিন বাসায় ফিরে দেখে অধরা চুপচাপ বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। আশ্বিন কোনকিছু না ভেবে ধীরে ধীরে অধরাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। অধরা মুচকি হেসে, ” আশ্বিন, আপনি মামুনীকে অনেক ভালোবাসেন তাই না? ”
আশ্বিন দীর্ঘশ্বাস ফেলে, ” হয়তো। জানো, মানুষ এক অদ্ভুত ধরনের প্রাণী। কারণ মানুষ তাকেই সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে, যার কাছে সে শুধুই একজন অবহেলিত। আর আমিও তাদেরই একজন। ”
” যদি মামুনী আকাশ বাবা আর আপনি সবাই একসাথে থাকতেন, তাহলে আপনার গল্পটা হয়তো খুব সুন্দর হতো। তাই না? ”
” সবার জীবনের গল্প সুন্দর হয়না অধরা। আমার গল্পও কিছুটা অগোছালো। তবে আমি জানি এর শেষটা হবে সুন্দর। কারণ আমার শেষটা হবে তোমাকে ঘিরে। ”
কথাটা বলে মুচকি হেসে অধরার কপালে একটা চুমু দেয় আশ্বিন।
—————-
নানাভাই অনুরিমার সামনে বসে আছে। অনুরিমা মাথা নিচু করে বসে চোখের পানি ফেলছে। নানাভাই শান্ত কণ্ঠে, ” এতোগুলো বছর ধরে ভেবেছিলাম আমার অনুকে ওই শাহিন ব্লেকমেইল করে তার কাছে আটকে রেখেছে। আর আজ এতোগুলো বছর পর জানতে পারলাম আমার মেয়ে নিজেই ইচ্ছে করে….। ছিঃ বিষয়টা কতোটা লজ্জাজনক। আমি ভাবতেও পারিনি আমরা অনু এমন কাজ করবে। তোমার জন্যই আজ আকাশ….। আমি ক্ষমা করবো না তোমায়, কোনদিনও না। ”
কথাটা বলেই নানাভাই সেখান থেকে উঠে চলে আসতে আসতে চোখের পানি মুছে। অনুরিমা ধপ করে বসে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। আজ সে একদম একা। জীবনের পদে পদে তার ভুল বুঝতে পারবে সে।
সকল প্রমাণ আর নানাভাই এবং অনুরিমার জবানবন্দি দেওয়ার পর শাহিন এবং অনুরিমার আইনী ভাবে শাস্তি হয়। যদিও অনুরিমার শাস্তি শাহিনের তুলনায় কম। কেননা আশ্বিনের বিশেষ অনুরোধে তার শাস্তি কিছুটা কম হয়েছে।
শাহিনকে নিয়ে যাওয়ার সময় সে আশ্বিনের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। আশ্বিন মুখ শক্ত করে তার দিকে তাকিয়ে সেখান থেকে চলে আসে। অনুরিমা দূর থেকে একনজর অধরা আর আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে চলে যায়।
🌻চার বছর পর🌻
লাল টুকটুকে একটা সুন্দর জামা পরে ছোট্ট একটা বাচ্চা মেয়ে একপা একপা করে পুরো মাঠ জুড়ে হেঁটে বেড়াচ্ছে।
হঠাত আশ্বিন তার কাছে এসে তাকে কোলে তুলে নিয়ে, ” আরুহী আম্মু, তুমি তাহলে এখানে ঘুরে বেড়াচ্ছো। আর পাপা তোমাকে সব জায়গাতেই খুজে বেড়াচ্ছে। ”
আশ্বিনের কথা শুনে অবুঝ ছোট্ট আরুহী খিলখিল করে হেসে ওঠে। আশ্বিন মুচকি হেসে তার গালে চুমু খেয়ে, ” চলো যাই, মাম্মাম তোমাকে খুঁজছে। ”
আশ্বিন আরুহীকে নিয়ে এসে দেখে অধরা তাদের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে।
” বাবা মেয়ে দুজন মিলে আমাকে পাগল করে ছাড়বে। তাই না? জানো কখন থেকে আমি তোমাদের খুঁজছি? ”
অধরার বকা খেয়ে আশ্বিন মুচকি হাসি দিয়ে অধরার দিকে তাকিয়ে, ” আমি আমার একমাত্র প্রিন্সেসকে নিয়ে একটু ঘুরতে গিয়েছিলাম। তোমার পারমিশন নিতে হবে নাকি? তাই না আম্মু? ”
দাদি আর নানাভাই আশ্বিনের কথা শুনে মুচকি হেসে, ” হয়েছে আর রাগারাগি করতে হবে না। আমরা এতোদিন পর পিকনিকে এসেছি, এখানে অন্তত রাগ করো না। ”
অধরা দাদির কথা শুনে একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আশ্বিনের দিকে একবার রাগী চোখে তাকিয়ে চলে আসে। অনেকদিন পর পুরো পরিবার একসাথে ঘুরতে এসেছে। আরুহী খেলতে খেলতে এক পর্যায়ে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।
আশ্বিন অরুহীকে কোলে নিয়ে বুকের সাথে মিশিয়ে অধরার হাত ধরে হাঁটছে। লাল শাড়ি আর লাল চুড়ি হাতে কপালে ছোট্ট লাল টিপ একদম আশ্বিনের মনের মতো করেই সেজেছে অধরা। আশ্বিন মুচকি হেসে পকেট থেকে একটা গাজরা ফুল বের করে অধরার সামনে ধরে। অধরা এতোক্ষণ মুখ ফিরিয়ে রাখলেও হঠাত গাজরা ফুল দেখে অবাক হয়ে যায়। হঠাত তার মনে পড়ে যায় আশ্বিনের বলা একটা কথা,
” অধরা, চলো কোন একদিন দুজন মিলে দূর কোথাও ঘুরে আসি।
তুমি সেদিন লাল শাড়ি, লাল চুরি আর কপালে ছোট্ট লাল টিপ পড়ে আমার কাছে আসবে। আমি তখন মুচকি হেসে তোমার জন্য লুকিয়ে রাখা সেই বেলী ফুলের গাজরা তোমার খোঁপায় বেঁধে দিবো।
তারপর তোমার হাত ধরে একসাথে হেঁটে যাবো।
আমাদের গন্তব্য হবে এমন, যেখানে লোকসংখ্যা হবে ক্ষীণ।
যেখানে থাকবে না কেউ আমাদের কষ্ট দিতে।
থাকবে না কোন সমালোচনার ঢেউ, কেউ আর বলবে না আমায় একা। কারণ তুমি থাকবে আমার সাথে।
আমরা দুজন মিলে সাজাবো আমাদের গল্প। আশ্বিন আর অধরার ”
কথাগুলো মনে হতেই অধরা মুচকি হাসি দেয়। আশ্বিন মুচকি হেসে অধরার খোঁপায় গাজরা গেঁথে দেয়। তারপর অধরার হাত ধরে হাঁটতে শুরু করে। অধরা এক ধ্যানে আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে,
” আমাদের গল্পটা অগোছালো হলেও শেষটা হবে সুন্দর। অধরা আশ্বিন আর আরুহীর গল্প। আশ্বিন আপনার মতো আরুহীকে কেউ কখনো কষ্ট দিবে না। কারণ আমরা দুজন মিলে সবসময় তার পাশে থাকবো। ভালোবাসার এক নতুন রুপ নিয়ে আমি_তোমার_গল্প_হবো..। ”
কথাটা বলে অধরার কাধে মাথা রেখে মুচকি হেসে তার সাথে হাঁটতে শুরু করে অধরা। আশ্বিন মুচকি হেসে অধরার হাত শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
আজকের আকাশটা খুব সুন্দর। নিরিবিলি পরিবেশে দুজন একসাথে হেটে যাচ্ছে। যেখানে কষ্ট তাদের আর কাবু করতে পারবে না। দুজন ঢাল হয়ে দাঁড়াবে দুজনের। অধরা আর আশ্বিন মিলে সাজাবে তাদের গল্প।
@@@সমাপ্ত@@@