অপ্রত্যাশিত ভালোবাসা পর্ব -০৫

গল্প:#অপ্রত্যাশিত_ভালোবাসা
লেখক:#কাব্য_মেহেরাব
পূর্ব: ০৫

আমি জানি তুমি ফিরবেনা আর,
ধরবেনা এ হাত!!
তবু অপেক্ষায় থাকি,
থাকতে ভাল লাগে।।
তুমি হয়তো জানো না,
কিছু পাবো না জেনেও,
অপেক্ষা করার মাঝে
অনেক আনন্দ আছে,
আছে একটা স্বস্তি !!
কারন
, অন্তত আর হারানোর ভয় থাকে না ।
সেই অপেক্ষার চিন্তার মাঝে !!

চোখ বন্ধ করে কথাগুলো মনে মনে বললাম।চোখ খুলে তাকালাম আয়নার দিকে। আমার জীবনটা বদলে গেছে। কেটে গেছে ১৫ টা মাস।আয়নায় নিজেকে পরিপাটি ভাবে সাজিয়ে তুলছি। সাজতে এখন আমারখুব ভালো লাগে। তবে নিজের জন্য নয়, অন্যের জন্য। হ্যাঁ আমি এখন একজন অন্ধকার গলির সবথেকে ফেমাস রানি ডালিয়া। যার জন্য অন্ধকার জগতের পুরুষেরা পাগল বললেই চলে।

সেদিনের পর থেকে আমি এই চার দেয়ালের মাঝে বন্দীনি হয়ে গেছি। মোমিনা আপাকে রহিমা খালার চিকিৎসা করায়। চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে গেলেও মাস তিনেক পরে তিনিও মারা যান ।এইচআইভি পজিটিভ এর কারণে। চার পাঁচ দিন না খেয়ে শুধু কান্নাই করেছিলাম আমি। আমাকে পানি ছাড়া আর কিছুই খেতে দেয়নি। পেটের জ্বালা নাকি বড় জালা। আসলেই তাই। ক্ষুধার তাড়নায় ছটফট করতে থাকতাম। কিন্তু আমার এই ছটফটানি দেখার জন্য কেউ ছিলনা। থাকবে কী করে? আমার যে কেউ নেই। ক্ষুধার তাড়নায় একসময় নিজের হাত পা কামরাতাম, আবার ব্যথায় কুঁকড়ে নিজেকে গুটিয়ে নিতাম।কিন্তু ওই পাষণ্ড রহিমা খালার মন গলাতে পারেনি।

একদিন রহিমা খালা আমার ঘরে এসে আমাকে তার এই পাষণ্ড রূপ দেওয়ার কারণটা বলেন।তার জীবন ও নাকি আর পাঁচটা সাধারণ মহিলার মতনই ছিল। স্বামী-সন্তান নিয়ে সুখের সংসার করছিল। কোন এক দুর্ঘটনায় তার স্বামী চাকরিটা চলে যায়। অভাবে দিন কাটতে থাকে। চারিদিকে ধার-দিনা সুদ-আসলে টাকা নিয়ে কোনোরকম সংসার চালাত। এটাও বেশিদিন টিকলো না। অসৎ পথ অবলম্বন করল তার স্বামী। বিভিন্ন ধরনের নেশা করতে শুরু করে। টাকার লোভে একসময় নিজের সন্তানকে বিক্রি পর্যন্ত করে দেয়। রহিমা খালার সেদিন আত্মহত্যা করতে গিয়েছিল। কিন্তু ভাগ্য সেদিন তার স্বাদ দেইনি।নেশাগ্রস্ত পুরুষের কাছে সন্তান স্ত্রী কোন কিছুই ইম্পরট্যান্ট হয় না যতটা তারা নেশায় বুঁদ থাকে। অতিরিক্ত লোভের কারণে সে তার মালিকের কাছ থেকে টাকা চুরি করে নেয় যখন তারা জানতে পারে তাকে বের করে দেয়। যখন নেশা করার জন্য টাকা ঘরে অবশিষ্ট ছিল না তখন নিজের স্ত্রীকে এই অন্ধকার জগতে এনে বিক্রি করে দিয়েছিল। হাউমাউ করে কেঁদে ছিলো সেদিন রহিমার খালা ।তার আর্তনাদ শুনে নি কেউ ।একসময় নিজেও এই জগতে নিজেকে মানিয়ে নিলেন। এই অন্ধকার জগতে কেউ নিজের ইচ্ছায় আসেনা। কোনো না কোনো কারণবশত এইখানে টাইম মিলে তাদের। কান্নাকাটি করে একসময় নিজেরাই আনন্দের সহিত এই কাজগুলো করে।

আপন বলতে এখন আমার কেউ নেই। মান-সম্মান তো সেই কবেই চলে গিয়েছে। কাব্য কে আমি হয়তো হারিয়ে ফেলেছি। তবুও তাকে একবার নিজের চোখের দেখার তীব্র বাসনা জাগে আমার মনে। তার জন্য আমার একটা মাথা গোঁজার আশ্রয়ের প্রয়োজন।মাথা গোঁজার ঠাঁই যখন পেয়েছি, নিজের পাঁয়ে তা ঠেলে দিতে তো পারি না। ভাগ্য হয়তো আমার শেষ পরিচয় এটাই নির্ধারণ করেছে। এটাই সই। ক্ষুধার তাড়নায় নিজেই রাজি হয়ে যায় এই পথ অবলম্বন করতে।

রহিমা খালার নিজে আমায় এখানকার সব নিয়মকানুন শিখিয়েছেন। কিভাবে সাহেবদের মন জুগিয়ে চলতে হয়। কি করলে বাবুরা বেশি টাকা দেয়। খুব সুন্দর ভাবে আমি তো শিখে গেছি।

এখানে সবথেকে সুন্দরী এখন আমি। আমার জন্য আলাদা রুমের ব্যাবস্থা আছে।বড় বড় মালদার পার্টি কে আমার কাছে দেওয়া হয়। আমার ডিমান্ড অনেক বেশি কিনা তাই!

কষ্ট হয়েছিল সেদিন, ক্ষুধার যন্ত্রণায় নিজের ছটফট করছি এই মুহূর্তে আমার রুমে এক কাস্টমারকে পাঠানো হয়। তীব্র ক্ষুদার্থ ছিল সেই লোক যৌবনের পিপাসায়। আমি যে একটা মানুষ ছটফট করছি, সেদিকে তার বিন্দুমাত্র নজর ছিল না। আমাকে সেদিন খুবলে খেয়েছিল। সর্ব শরীরে শুধু নখের আচর, কামড়ের দাগ ক্ষতবিক্ষত ভাবে কামড়ানোর চিহ্ন বয়ে বেরিয়ে ছিলাম সেদিন। মেনে নিয়েছিলাম আমার এই ভবিতব্য।

এখন অন্য মেয়েদের থেকে আমার রেট -টা ডাবল। 19 বছরের তরুণ যুবতী আমি। পুরুষ মানুষের কামুকতা বাড়ানোর মতন একটা বয়স আমার এখন। আমার এখানে এসে কোন কাস্টমাররা অখুশি হন না। ইতিমধ্যে অনেক কাস্টমাররা অফার করেছে বিয়ের জন্য। তারা তো আর জানে না আমি বিবাহিত। অনেক সাহেব আছেন আমাকে এখান থেকে বের করে নিতে চাই। কিন্তু আমি যেতেই রাজি হয় না।

আমি যেখানেই যাই, যার জীবনে যাই, তার জীবনটা আমার জন্য নষ্ট হয়ে যায়। তাই কারো ডাকে সাড়া দি না। এখানে আমি দিব্য বেশ আছি। কোন কিছু হারানোর ভয় পেতে হয়না। কিচ্ছুটি অভাব নেই আমার এখানে। ভারী গহনা গাটি। রুমের ভিতর এসির ঠান্ডা হাওয়া। খাওয়ার জন্য ও আলাদা ব্যবস্থা।

এক কাস্টমার তো প্রতি রাতে আমার কাছে আসতেন,আমাকে ভালোবেসে ফেলেছেন কিনা? আমাকে নিয়ে নাকি হাজারটা স্বপ্ন দেখে, টাকার অভাব নাই তার। আসার সময় আমার জন্য দামী দামী গিফট নিয়ে আসে। হঠাৎ একদিন আসা বন্ধ করে দেয়। কিন্তু তার জন্য আমার কোনো চিন্তা হয় না। কেন হবে? তার মতন হাজার হাজার লোক ই আমার কাছে আসে। তাদেরকে নিয়ে যখন ভাবি না এনাকে নিয়ে কেন ভাববো?

এভাবেই দিন পার হচ্ছিল আমার। হঠাৎ করে আমি একদিন অসুস্থ হয়ে পড়ি। মাথায় ব্যথা, বমি, পেটে ব্যথা অনেক রকম অসহ্য যন্ত্রণা ভোগ করছিলাম। রহিমা খালা কিছু একটা আন্দাজ করে আমাকে একটা টেস্ট দেয় করতে। টেস্ট টা ছিল আমার প্রেগনেন্সির। আমি কনসিভ করেছিলাম।

এই অন্ধকার জীবনে কোন মেয়ে আসতে চায়না নিজের ইচ্ছায়। তবে এখানে যারা আছে মাঝে মাঝে তাদের বাচ্চা জন্ম দেওয়ার সুযোগ পায়, মেয়ে সন্তানের আশায়। আমারও যেন কেমন একটা মায়া হতে লাগল। কাব্য আমার সাথে থাকলে হয়তো আমিও স্বাভাবিকভাবে মা হতে পারতাম। সুন্দর ছোট্ট একটা সংসার হতো আমাদের। কিন্তু এই কপালে তো কাব্যই নেই। সুন্দর সংসার কেমন করে হবে।

আমার জীবনের সব কাহিনী রহিমা খালার জানতেন। তাই তিনি আমাকে বলেছিলেন যদি আমি চাই বাচ্চাটা রেখে দিতে পারি। নিজের অস্তিত্ব হিসেবে। অনেক ভেবে চিন্তে দেখলাম আসলেই তাই। আমার নিজের বলে তো কিছু নাই। একটা সন্তান থাকলে আমাকে অন্তত মা বলে ডাকবে। এই লোভটা আমি সামলাতে পারিনি। বাচ্চাটা জন্ম দিতে রাজি হয়ে যায়।

বাচ্চাটা কনসিভ করার পরেও অনেক কাস্টমার আসে আমার কাছে তাদেরকে আমি ফেরত দিতাম না। কিন্তু পেটে ব্যথা টা অতিরিক্ত হওয়ার কারণে কিছুদিন রেস্ট নিতে বলে রহিমার খালা। আমিও রাজি হয়ে যায়।

অন্ধকার গলিতে সবকয়টি মেয়ে মিলে যতগুলো টাকা উপার্জন করতো আমি একাই তার থেকে বেশি উপার্জন করতাম। আমি অসুস্থ হওয়ায় সেটা আর হয়ে উঠছিল না। এতে বিরক্ত হয়ে যায় রহিমার খালা। কিন্তু কিছুই করার নেই। চার মাস অন্তঃসত্ত্বা আমি। ডাক্তারি পরামর্শ অনুযায়ী সন্তান জন্ম না দেওয়া পর্যন্ত আমি আর সহবাস করতে পারবোনা। মেনে নিলাম আমি।

হঠাৎ একদিন এই অন্ধকার গলিতে পা রাখল এক হিন্দু ৩২থেকে ৩৪বয়সের এক যুবক। উচ্চতা ৬ ফুট। গায়ের রং উজ্জল শ্যামলা। প্রচন্ড অহংকারী এবং অ্যাটিটিউড নিয়ে চলা একটি লোক। কোথায় এত কম বলে, কিন্তু চোখের ইশারায় অনেক কিছু বলে দেয়। যে ইশারা বুঝে না সে ও তার চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারবে সে কি বলতে চাই।লোকটির নাম প্রবীশ রায়। পেশায় তিনি কি করেন আমি তা জানিনা।

একটা মনের মত মেয়ে চায় আজ রাতের জন্য।প্রবীশবাবু কে তারে এক পরিচিত বন্ধুর মাধ্যম দিয়ে অমিত এখানে নিয়ে এসেছে। সিঁড়ি দিয়ে উঠতে আসার সময় অনেক মেয়েরা তার গায়ে ঢোলে পরছিল। খুব বিরক্তি নিয়ে তিনি উপরে উঠে আসেন। এইসব গায়ে পরা মেয়ে তার নাকি একদম সহ্য হয় না। অথচ এইসব মেয়েদের সাথে রাত কাটানোর জন্য তিনি এই অন্ধকার গলিতে এসেছে। ব্যাপারটা খুব অদ্ভুত তাইনা।

প্রবীশ এর বন্ধু অমিত, রহিমা খালার কাছে নিয়ে যায় প্রবীশ কে। অমিত রহিমা খালাকে বলে,প্রবীশ এর জন্য একটা টপ আইটেম এর ব্যবস্থা করতে। রহিমা খালা তখন বলেন, আসার সময় অনেকেই তো দেখলেন কাউকে পছন্দ হয়নি? প্রবীশ বিরক্তি নিয়ে অমিতের দিকে কটমট করে তাকায়। অমিত রহিমা খালাকে বলে ,এর থেকেও ভালো কি আছে? রহিমার খালা তখন বলে, আছে ছবি দেখবেন নাকি সরাসরি দেখবেন? অমিত প্রবীশের দিকে তাকায়। তারপর রহিমা খালার দিকে তাকিয়ে বলে,আগে ছবি দেখান। কথামত রহিমার খালা ওয়াডড্রোপ থেকে আট থেকে দশজনের ছবি বের করে, কিন্তু একটা ছবি ওখানে রেখে আসে।

খুব মনোযোগ সহকারে প্রবীশ রহিমা খালাকে পর্যবেক্ষণ করছিল। একটা ছবি যে তিনি রেখে এসেছেন, সেই বিষয়ে একটা কৌতুহল জাগলো তার মনে। ছবিগুলো অমিতকে দিয়ে বলল, দেখেন এগুলোর মধ্যে কোনো টা পছন্দ হয় কিনা? অমিত ছবিগুলো নিয়ে প্রবীশ এর সামনে যায়। একে একে সব ছবি দেখে প্রবীশ। মেয়েগুলো মোটামুটি দেখতে ভালো। কিন্তু একটাও যেন মনের মত নয়। আড়চোখে রহিমা খালার রেখে আসা ছবির দিকে তাকালো। রহিমা খালা প্রবীশ এর চোখ অনুসরণ করে তাকিয়ে দেখে তার রেখে আসা ছবির দিকে চেয়ে আছে। তাই রহিমা খালা বলল, বাবু এখান থেকে একটা পছন্দ করে নিন হতাশ হবেন না। সবাই খুব ভাল সার্ভিস দেয়।

প্রবীশ মুখ থেকে একটা বিরক্তিকর ” চ”সাউন্ড বের করল । তারপর বললো ওইখানে একটা ছবি রেখে এসেছেন আমি ঐ ছবিটা দেখতে চাই। এতে ঘোর বিরোধিতা করে রহিমার খালা। তিনি বলেন, সাহেব !এইখান থেকে মেয়ে বেছে নেন। ওই ছবিটা এখন কোন কাজের নয়। প্রবীশ বিরক্তিকর মুখ নিয়ে অমিত এর দিকে তাকালো। ভয়ে অমিত দূরত্ব রহিমা খালার সামনে গেল। আর বলল, কি খালা ?ছবি তো দেখতে চেয়েছে এতে রাজি হচ্ছে না কেন?দেখতে দিলে সমস্যা কোথায়?

রহিমা খালা তখন বলল, সাহেব ওই মাইয়াটা অসুস্থ, পোয়াতি তাই তাকে দেখানো কিছুতেই সম্ভব না। আর একটা পোয়াতি মেয়েকে দিয়ে আমি কিছুতেই এই কাম করতে পারবো না ।এমনকি তার ছবিও দেখাতে পারব না। তাছাড়া মাইয়াডা কিছুতেই রাজি হবে না।ডাক্টার মাইয়াডারে রেস্ট নিতে কইছে।

মেয়েটা অসুস্থ এটা শুনে প্রবীশের মুখে একটা শয়তানী হাসি প্রকাশ পেল। প্রবীশ আরো আগ্রহ নিয়ে অমিত কে কিছু ইশারা করে বললো। অমিত রহিমা খালাকে 5000 টাকা দিয়ে বললেন, খালা এইটা নাও আর ওই মেয়ের ছবিটা দেখাও।

অনেকদিন ধরে ডালিয়ার জন্য রহিমা খালার কোন ইনকাম হচ্ছে না। তারপর ওষুধ লাগে প্রতিদিন। একটা ছবি দেখতে চাওয়ার জন্য যদি 5000 টাকা পাই ,তাহলে মন্দ না। রহিমা খালা দ্রুত ছবিটা এনে প্রবীশের হাতে তুলে দেয়। প্রবীশ ছবিটা দেখে আড়াআড়ি অ্যাঙ্গেলে নিজের ভুরু কুঁচকে নেই। কিছু একটা ভেবে হাসি ফুটে ওঠে তার মুখে। দুই অঙ্গুল দিয়ে টোকা মেরে বলে এই মেয়েটার সাথে আমি মিট করতে চাই। কিন্তু মেয়েটা যেন ঘুনাক্ষরেও জানতে না পারে,তার সাথে আমি দেখা করতে চাই। কোনো প্রস্তুতি ছাড়াই আমি দেখা করতে চাই, এবং তা এক্ষুনি……

#চলবে ……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here