অপ্রত্যাশিত ভালোবাসা পর্ব -২৮ ও শেষ পর্ব

গল্প : #অপ্রত্যাশিত_ভালোবাসা
লেখক : #কাব্য_মেহেরাব
পর্ব :#২৮(শেষ পর্ব)

৭ দিন পর আমাকে রিলিজ করে হসপিটাল থেকে। মেহেরাব কিছু দিন অফিস যাওয়া সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়। আর তত দিন পর্যন্ত অফিসের সব দায়িত্ব নিজের কাঁধে নেয় অমিত বাবু। মেহেরাব , আমি, রামু চাচা অমিত সবাই মিলেই বাচ্চা দুটিকে নিয়ে হাসি ঠাট্টাইয় মেতে থাকি সব সময়। সবাই অনেক খুশি।

প্রায় 30 বছর পরে এই বাড়িতে ছোট বাচ্চার আগমন ঘটেছে তাও এক সাথে দুই টি বাচ্চার।কান্নাকাটি হাসা হাসির শব্দে সারা দিন পার হয়ে যায়। রামু চাচা সংসারের সম্পূর্ণ হাল ধরে নেন আমাকে কোন কাজ করতে দেন না, শুধু বাচ্চা দুটো দিক ভালো করে যত্ন নিতে বলেন।

বেশ কিছুদিন পর আমি জানতে পারি অমিত বাবু মেহেরাব কে বলছেন, অফিসের ক্লাইন্ট রা তার সাথে সরাসরি মিট করতে চায় কিন্তু মেহেরাব কিছুতেই অফিসে যেতে রাজি হয় না। এটা অফিসের জন্য অনেক বড় লোকসানের সম্মুখীন হতে হবে পরবর্তীতে এটাও বলেন, তবুও সে যেতে রাজি হয় না।

এটা শুনে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম তার অফিসে যাওয়ার প্রয়োজন। তার পর মেহেরাব কে অফিসে যাওয়ার জন্য ফোর্স করি, আর বলি এইভাবে আর কতদিন চলবে? কিন্তু মেহরাবের একই কথা আমার অনেক কষ্ট হয়ে যাবে এক হাতে দুই টি বাচ্চা মানুষ করতে। এতে করে যদি তার অফিস পুরো ভ্যানিশ হয়ে যাই তবুও আমাকে কষ্ট ফেলে সে অফিসে মনোযোগি হতে পারবেন না। তাছাড়াও আমি একা একটি মেয়ে কি করে ২ টি বাচ্চা কে সামলাবো ।এটাই ছিল তাঁর সবথেকে বড় দুশ্চিন্তার বিষয়।

কিছুদিন আমি দুইটা বাচ্চা কে সুন্দরভাবে দেখভাল করছিলাম। কিন্তু আসলেই একা একটি মানুষ হয়ে দুটি বাচ্চা দেখা অসম্ভব হয়ে পড়ে ছিলো আমার কাছে। বাচ্চা দুইটি প্রচুর কান্নাকাটি করত খিধে পেলেই। ডাইপার একটু এদিক-ওদিক নষ্ট হলে সাথে সাথে কান্না জুড়ে বসতো একটাকে সামলাতে গেলে অন্যটা কান্না করত কি যে বড় মসিবদে পড়েছিলাম বলে বুঝতে পারবো না।মেহেরাব কে বলতে পারছিলাম না বিষয়টা। তারপর দেখা যায় দুই টি বাচ্চাকে খাওয়াতে গেলে প্রায় সারারাত জেগে থাকতে হয়। এক সময় নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়ছিলাম।

রামু চাচা একদিন আমাকে বলেন যদি দুইটা মেয়ে সার্ভেন্ট নেওয়া হয় বাচ্চা দু’টোকে দেখভালের জন্য তাহলে আমার কোন কষ্ট হবে না। আমারও মনে হল রামু চাচা ঠিক কথাই বলছেন। মেহেরাব কে বলে দুই টি ফিমেল সার্ভেন্ট রাখা হলো আমাদের বেবি দুই টার জন্য। সার্ভেন্ট দুই টি আমাদের ছেলে মেয়ে দুটিকে খুব ভালোভাবে দেখাশোনা করেন সব সময় তাদের কাছেই থাকে বাচ্চা দুটি। শুধু খাওয়ার সময় আমি বাচ্চা দুটিকে নিজেই খাইয়ে দি। খুব ভালোভাবেই দিন কাটছিল আমার । বাচ্চা দুটির নাম রাখলাম, ছেলে টির নাম প্রান্ত মেহেরাব আর মেয়েটির নাম প্রীতি মেহেরার। প্রান্ত আর প্রীতি সারাদিন থাকত ওই সার্ভেন্ট দের কাছে, তারপর আমি একা হয়ে পড়ি। একা একা খুব বোরিং লাগতো আমার ।মেহেরাব বাসায় ফিরতো রাত আটটার পর । সারাদিন প্রায় একা একাই থাকতে হতো। শুধু বাচ্চা কে খাওয়ানোর সময় ছাড়া।

ইতিমধ্যে অমিত বাবুর সাথে যেই মেয়েটা সম্পর্ক ছিল সেই মেয়েটা অমিত বাবু কে বিয়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করেন।সিদ্ধান্ত নিলাম অমিত বাবুর বিয়ে টা করিয়ে দিবো, তারপর এই বাড়িতে আমরা তাকে আনবো । অমিত কে কোথাও যেতে দিবো না। আমার একজন সাথি ও পাওয়া যাবে।
*
*
*
*
সময়-এক্ষণ সন্ধ্যা আটটা। বেলকনিতে দাড়িয়ে আছি আমি। একটু পরেই মেহরাব চলে আসবে । মানুষের জীবনটা কি অদ্ভুত তাইনা? সময়ের সাথে সাথে মানুষ সহ সব কিছু কিভাবে পাল্টে যায় কেউ ধারণাও করতে পারে না তা ।এত কিছুর মাঝে প্রবীশ কে খুব মিস করছিলাম। রাগী জেদি একগুঁয়ে টাইপ মানুষ টা কথায় কথায় কত রকম ভাবে কত মিসবিহেব টাই না করতো।মানুষটা যদি আজ ও প্রবীশ থাকতো‌ তাহলে এই পরিবেশ টা হয়তো অন্য রকম হয়ে উঠতো। প্রবীশ থেকে মেহেরাব হওয়ার সাথে সাথে প্রায় পুরোটাই পাল্টে গিয়েছিলেন প্রবীশ বাবু।

মেহেরাব : কি ব্যাপার এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন একা একা এভাবে ঠান্ডা বাতাসের মধ্যে?

মেঘা : (পিছনে ঘুরে মেহরাব কে দেখে আমি বললাম) ওহ আপনি এসে গেছেন? আমি আরো আপনার পথ চেয়ে বসে আছি…

মেহেরাব : কি ব্যাপার বলতো? আমি গাড়িতে করে এলাম, এত হর্ন বাজালাম তুমি টের পেলেনা না আমি এসেছি?

মেঘা : আসলে একটু বেখেয়ালী হয়ে গিয়েছিলাম…..(দেখলাম মেহরাবের হাতে পিছনে কিছু একটা লুকানো) পিছনে আপনার হাতে কি ……?

মেহেরাব : হ্যাঁ ……(আমার সামনে এসে আমার কাঁধে তার দুই হাত রেখে বললেন)এতটাই বেখেয়ালি হয়ে গেছো যে আজকের দিনটা কি, সেটাই ভুলে গেছো।

মেঘা : (ভুরু কুঁচকে প্রশ্ন করলাম) আজকে ….? আজকের আবার কি?

মেহেরাব : আমি বলব না…… আজকে তুমি বলো আজকে কি?

মেঘা : (একটু বিরক্তি নিয়ে বললাম)সপ্তাহের তিন-চার দিন কিছু না কিছু নিয়ে এসে বলেন আজকে এই দিন আজকে ঐদিন এখন আমি বুঝবো কি করে আজকে কোন দিন?

মেহেরাব : অন্য দিন আর এই দিন কি এক হলো..? বড্ড আনরোমান্টিক তুমি…..!(মুখটা মলিন একটু অভিমান দেখিয়ে বললো)

মেঘা : থাক আপনি বড্ড রোমান্টিক আমি মানছি…! এখন দয়া করে বলবেন আজকে কি দিন…?

মেহেরাব : সত্যি তোমার মনে নেই…?

মেঘা : (তার হাত দুটি হাত আমার কাঁধ থেকে সরিয়ে বেলকোনি থেকে রুমের মধ্যে ঢুকতে ঢুকতে বললাম )না মনে নেই…!

মেহেরাব : (আমার পিছন পিছন আসতে আসতে বলল) আচ্ছা আগে এটা বলো, বাবুরা কোথায়…?(পিছন থেকে আমাকে জড়িয়ে ধরে)

মেঘা : আজ সকাল সকাল ঘুমিয়ে পড়েছে দুই জনই।

মেহেরাব : আরে বাহ !আজ তাহলে পরিবেশ,পরিস্তিতি,পরিজন,প্রিয়জন ,প্রীতি প্রান্ত সবাই চায় আমি আজকের রাত টা আমার মত করে মন ভরে ভালোবাসতে পারি। বুঝতে পেরেছো? ( পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে আমার গালের সাথে নিজের গাল স্পর্শ করে।)

মেঘা : আহ্ কি হচ্ছে কি ?(কনুই দিয়ে পেটে গুতা মেরে বললাম)

মেহেরাব : আউউচ (পেটে হাত দিয়ে সরে গেল)

মেঘা : এবার বলুন আজকে কিসের দিন? (নিজের মাজায় হাত দিয়ে জানতে চাইলাম)

মেহেরাব : বলছি তার আগে এটা পড়ে এসো ….
(হাতে থাকা প্যাকেট টি আমার সামনে ধরে বলল)

মেঘা : আজকে আবার ….(ঠোঁট বাঁকিয়ে প্যাকেট হাতে নিয়ে বললাম)

মেহেরাব : হিম তবে আজ একটু স্পেশাল দিন,তাই অন্য দিনের তুলনায় আজ তোমাকে অনেক বেশী সাজতে হবে। তার আগে অযু করে আসো , একসাথে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়বো তারপর শুরু হবে রোআআমান্স….

মেঘা : এই দাঁড়ান দাঁড়ান আজকে কি বলেন তো…?(দুই ভ্রু এক করে জানতে চাইলাম)

মেহেরার : এখনো বুঝতে পারছ না…? তাহলে শোনো আজ আমাদের প্রথম ম্যারেজ অ্যানিভার্সারি ….

মেঘা : 😳😳…(চোখ বড় বড় করে তাকালো মেহেরাবের দিকে।) সত্যি আমি একদম ভুলে গেছি….(অনুনয়ের সুরে বললো)

মেহেরাব : ঠিক আছে মেরীজান সারাদিন যেই ধকল তোমার উপর দিয়ে যায়, ভুলে যাওয়াটাই স্বাভাবিক।

মেঘা : ….(মেহেরাবকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললাম) আমি চাই সারা জীবন আপনি আমাকে এইভাবে ই ভালোবাসবেন…

মেহেরাব : আমার শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত তোমাকে এই ভাবে ভালবেসে যাব। (তোমার কাছ থেকে জেনেছি ইসলামে আছে হাশরের দিন যাকে সবচেয়ে বেশি ভালবাসবে, তার সাথে ই হাশরের ময়দানে তোমাকে দাড় করাবে। আমি সেই হাশরের ময়দানে তোমাকেই চাইবো আমার পাশে।

মেঘা : এত ভালবাসেন আমাকে…?

মেহেরাব : তুমি জানো না সামান্য টুকু ভালোবাসার জন্য আমি সেই ছোটবেলা থেকে আজ ৩৫ টা বছর ছটফট করেছি কিন্তু তার বিনিময়ে কি কি পেয়েছি, তোমাকে কোনদিন ও বলতে পারবো না। তবুও এত টুকুই বলবো আমার অতীতের কিছু ঘৃণিত মানুষ দের জন্যই আমি তোমার উপর অত্যাচার করেছিল পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও।

মেঘা : আমি সব ভুলে গেছি। আপনার মাঝে আমি কাব্য কে খুজে পেয়েছি। এক জীবনে এর থেকে আর বেশি চাওয়ার কিছু নাই।

মেহেরাব : …….(আমার কপালে চুমু দিয়ে আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরল)

মেঘা : আচ্ছা আপনি তো আমাকে সব সময় সব কিছুই না বলতেই দেন কিন্তু আজকের এই বিশেষ দিনে আমি তো আপনাকে কিছু ই দিতে পারলাম না……

মেহেরাব : কে বলেছে তুমি আমাকে কিছুই দাওনি? আমাদের প্রথম ম্যারেজ এনিভার্সারিতেই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া তুমি আমাকে দিয়েছো আমার দুটি সন্তান।এর থেকে বড় পাওয়া আর কি হতে পারে বলো…?

মেঘা : এটা কিন্তু আপনি জোর করে নিয়েছেন… সবাই কি ভাববে বলুনতো…? বিয়ের এক বছর যেতে পারলো না একবছর হওয়ার আগেই বাচ্চা নিয়ে হাজির….

মেহেরাব : এমন কিছুই ভাববে না ।সবাই ভাববে তোমার বরটা একটু বেশি রোমান্টিক, অনেক রোমান্স করতে পারে। আরেকবার চেষ্টা করব কি বলো….?

মেঘা : কিহ 😳😳…?(চোখ পাকিয়ে তার দিকে তাকালাম)

মেহেরাব : কিহ না বলো জ্বি …..!আগে একটু রোমান্স করে নিই তারপর অন্য কথা ……. (কথাটি বলেই আমাকে কোলে উঠিয়ে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয় । শুরু হলো তার রোমান্টিক অত্যাচার।)

[ সবাই বুঝতে পারছেন প্রবীশ ই হচ্ছে মেহেরাব। তাহলে এবার আমি আমার মত করে বলি কিভাবে প্রবীশ মেহেরাব হয়ে উঠলো।

সেদিন মেঘাকে জোর করে শাড়ি পরিয়ে নিয়ে প্রবীশ বেরিয়েছিল মেঘার সাথে একাকী
প্রাইভেট টাইম দেওয়ার জন্য। মেঘার মনের ভাব বোঝার জন্য প্রকৃতির সুন্দর পরিবেশ থেকে আর ভালো জায়গা হতেই পারে না এটা ভেবে।

গাড়ি তে ওঠার পর থেকেই সারাটা পথ প্রবীশ এটা ওটা বলে মেঘার মন ভালো করার চেষ্টা করছিল। কিন্তু মেঘা নিশ্চুপ হয়ে সব শুনে ও না শোনার ভান করছিল। প্রবীশ মেঘার এমন কাজে বিরক্ত হয়ে যায়। গাড়িটা রাস্তার এক সাইড এ থামিয়ে নিজের পরা সিট বেল্ট খুলে দাঁতে দাঁত চিপে মেঘার দুই বাহু ধরে ঘুরিয়ে নিজের মুখের সামনে মুখ দিয়ে বলে

প্রবীশ : সমস্যাটা কি তোমার ?? সেই তখন থেকে আমি ননস্টপ বকেই যাচ্ছি আর তুমি হু হা ও তো দূরে থাক মাথাটা নেড়েও পর্যন্ত সাড়া দিচ্ছ না কেন ?

মেঘা : ….. ‌‌(হঠাৎ করে এমন ভাবে ধরাতে মেঘা ভয়ে তটস্থ হয়ে যায়)

প্রবীশ : কথা বলো ডেম ইট…!( জোরে হাতের বাজু চেপে ধরে বললেন)

মেঘা : (ভয়ে ভয়ে বলল) আমাকে একটা ব্রীজের কাছে নিয়ে যাবেন?

প্রবীশ : ( এত কথা বলার পরেও যখন মেঘার মুখ থেকে কিছু বলখতে পারেনি, আর এখন সেই মেয়ে নিজের মুখে কোথাও যেতে চাইছে ।এটা শোনার পর প্রবীশের সব রাগ নিভে গেল) কোথায় যেতে চাও তুমি…?

মেঘা : সেই ব্রীজে যেখানে আমি আমার সব কিছু হারিয়ে ফেলেছি….(কতটা বলতে ই মেঘার চোখে পানি চলে আসে )

প্রবীশ : ঠিকানা বলো……

মেঘা : ঠিকানা টা বলে( প্রবীশ ও মেঘার সম্পর্কে জানতে চাই তাই কোনো দ্বিরুক্তি না করে মেঘার দেওয়া ঠিকানায় রোওনা দিলো।)

প্রবীশ : প্লিজ ফর গড সেক..! এভাবে হুট হাট করে আমাকে রাগিয়ে দিও না। ধৈর্য্য ক্ষমতা আমার বরাবরই খুবই কম।

মেঘা : …..(শুধু মাথা নেড়ে প্রবীশের কথায় সায় দিলাম।)

প্রায় 40 মিনিট পর সেই কাঙ্খিত জায়গায় চলে এসেছে এমন সময় প্রবীশ মেঘাকে বলে

প্রবীশ : তোমাকে খুব বিরক্ত করছি আমি তাই না?

মেঘা : বুঝতেই তো পারছেন…!(খাপছাড়া উত্তর দিলো )

প্রবীশ : ….…(স্মিত হেসে দিলো)

মেঘা : আপনার এমন হেংলামোপানা আপনার ক্যারেক্টার এর সাথে যাচ্ছে না। বড্ড বেমানান লাগছে।

প্রবীশ : কোনটা মেনে নিতে পারছো না, আমার এমন বদলে যাওয়া ব্যবহার নাকি আমাকে? (একটু হেসে বলে) কিচ্ছু করার নেই আমার ,বলেছিলাম না পুরো আমাকে সহ্য করতে হবে তোমার তাও সারাটা জীবন।

মেঘা : কোনদিনও সম্ভব নয়।

প্রবীশ : …….(মেঘার এমন জোর দিয়ে না, কথা বলায় প্রবীশ রেগে গিয়ে, জোরে গাড়ির ব্রেক কষে । )

মেঘা নিজেকে সামনের দিকে ঝুঁকে যাওয়া থেকে অনেক কষ্টে সামলে নিয়ে প্রবীশের দিকে তাকাতেই দেখে একটি মেয়ে দৌড়ে ব্রীজের দিকে যাচ্ছে। খুব সম্ভবত মেয়েটা কান্না করতে করতে দৌড়াচ্ছে। মেঘার কাছে বিষয়টা কেমন যেন লাগলো।মেঘা দ্রুত সিট বেল্ট খুলে গাড়ি থেকে বের হয়ে মেয়েটার পিছু ছুটলো।

প্রবীশ মেঘার এইভাবে দ্রুত গাড়ি থেকে বের হতে দেখে বুঝতে পারল না কি হচ্ছে। কয়েক সেকেন্ড স্তব্ধ হয়ে মেঘার চলে যাওয়া টা দেখলো। যখন বুঝতে পারলো মেঘা সামনে দৌড়ে যাওয়া ঐ মেয়েটার পেছনে ছুটছে, তখন প্রবীশ নিজেও গাড়ি থেকে বের হয়ে মেঘার পিছু পিছু দৌড়াতে লাগলো।

মেয়ে টা ব্রীজের কাছে যেয়ে রেলিং ধরে এক পা উঁচু করে তার উপর দুই পা তুলে দাঁড়িয়ে দুই হাত মেলে ঝাঁপ দিলো নীচে বয়ে যাওয়া পানির স্রোতে।

মেঘা এক চিৎকার দিয়ে বললো নাআআআআআ ঝাপ দিও নাআআ……. ততক্ষণে মেয়েটা তার কাজ শেষ করে দেয়। মেঘা একবার মেয়েটা যেখান থেকে ঝাঁপ দেয় সেখান থেকে নিচে তাকিয়ে দ্রুত চলে আসে ব্রীজের অপর প্রান্তে। নিচে তাকিয়েও যখন মেয়েটাকে দেখতে পেল না তখন দূরে চোখ রাখতেই দেখে মেয়েটার দেহটা ঝড়ের গতিতে এক পলকেই পানির সাথে মিশে গেছে।

মেঘা : কাব্য ……………( নামটি বলে চিৎকার দিয়ে উঠে ) নিচে পড়ে যাওয়ার আগেই প্রবীশ এসে মেঘাকে ঝাপটে ধরে নেই।
*
*
*
*
জ্ঞান ফেরার পর মেঘা দেখে মেঘা প্রবীশের রুমে শুয়ে আছে। পরক্ষনেই মেয়েটার কথা মনে পরতেই হাউমাউ করে কান্না শুরু করে দেয়। প্রবীশ বুঝতেই পারে না, মেয়েটার এমন মৃত্যুর সাথে কাব্যর কি সম্পর্ক?

মেঘা বুঝতে পারে তার কাব্য আর বেঁচে নেই। ঐ এক্সিডেন্ট টা এমন ভাবে হয়েছিল মেঘার যতদূর মনে আছে কাব্যের মাথায় আঘাত লেগেছিল এবং ছিটকে পড়েছিল বাসের জানালার কাচ ভেঙে। একটা পরিপূর্ণ সুস্থ মানুষ ঝাপ দেওয়ার সাথে সাথে ই পানির স্রোতের সাথে মিশে যায় ,সেখানে এক্সিডেন্ট এর পর কাব্যর এমন ভাবে ছিটকে পড়ায় বেঁচে থাকার কথা নয় । কথাটা ভাবতেই ডুকরে কেঁদে উঠে মেঘা।

প্রবীশ মেঘার সামনে আসতেই প্রবীশকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে। আর বলে আমার কাব্য বেঁচে নেই প্রবীশ বাবু, আমার কাব্য বেঁচে নেই।

প্রবীশ বুঝতে না পারায় যখন জানতে চাইল মেঘার কাছে , তখন মেঘা কাব্যর সাথে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসার পর থেকে সব ঘটনা খুলে বলে কান্না করতে করতে।প্রবীশ স্তব্দ হয়ে যায় মেঘা র কথা শুনে। এই মেয়েটার উপর কত নির্যাতন ই না করেছে ভাবতেই প্রবীশের চোখ বন্ধ করে নেয় , চোখের কার্নিশ বেয়ে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পরে হৃদয়হীন মানুষ টার চোখ থেকে।

তারপর থেকে প্রবীশ সিদ্ধান্ত নেয় মেঘাকে দ্রুত আপন করে নিবে। মেঘা যা যা হারিয়েছে তার থেকে 10 গুণ সুখ তাকে ফিরিয়ে দেবে। মেঘা কে বিয়ের প্রস্তাব দেয় প্রবীশ । মেঘা তখন বলে আমি সারা জীবন মিসেস কাব্য মেহেরাব হয়েই থাকতে চাই। তাছাড়াও একজন মুসলিম মেয়ে হয়ে বেগানান ছেলেকে বিয়ে করা ইসলামে হারাম বলে ঘোষণা করেছে।

প্রবীশ মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করে। সুন্নতে খাতনা করে। প্রবীশের মেঘার জন্য নিজে র ধর্ম ত্যাগ করে মুসলমান হয়েছে । সুন্নতে খাতনা করেছে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে শিখেছে।কাব্যর নামে একটি এতিমখানা বানিয়েছে। একটা বড় মসজিদ বানানোর দায়িত্ব নিয়েছে। যেখানে সে নামাজ পড়তে যাবে। নিজের নাম টা পর্যন্ত পাল্টে মেহেরাব ইসলাম রেখেছেন। মেহেরাব অর্থ ‘নব মুসলিম’। ইসলামিক নাম রেখেছেন নিজের তাও আবার কাব্যর সাথে মিল রেখে। মেঘাকে সারাজীবন মিসেস মেহেরাব বানিয়ে রাখতে চাইলো।

এতো কিছু করতে দেখে মেঘা প্রবীশ কে না করতে পারে না। অবশেষে মেঘা রাজি হয়ে গেল। মেঘার বিয়ের একমাস পর যখন জানতে পারে মেঘা মা হতে চলেছে তখন আল্লাহ র নিকট মেঘার সুস্থতা কামনা করে দোয়ার পড়ানো হয় প্রবীশের বাড়িতে তাও ঘটা করে।

ইতি মধ্যে মেঘা রয় প্রবীশের প্রথম স্ত্রী প্রবীশের বাসায় ইসলামী কিছু চলছে বিষয়টা জানতে পারে। বাসায় আসার পর মেঘার মুখোমুখি হলে
মেঘা রয় জানতে চাই

মেঘা রয় : তুমি দেখছি এই বাসায় থাকো….! তা কত পাও প্রবীশের কাছ থেকে….?(উপহাস করে বলল)

মেঘা : (এমন কথা শুনে মেঘা নিজের সর্ব শক্তি দিয়ে এক চড় বসিয়ে দেয় মেঘা রয় এর মুখে)প্রবীশ নাম এ এখানে কেউ থাকে না। আমি মিসেস মেহেরাব । আর আমার বাসায় দাঁড়িয়ে আমাকে বাজে কথা বলছেন…..? এত সাহস কোথা থেকে পেলে…

প্রবীশ সিঁড়ি একদম উপরে দাঁড়িয়ে দুই মেঘার কান্ড দেখছে। মেঘা রয় মুখে হাত প্রবীশের দিকে তাকাতেই প্রবীশ ঠোঁট প্রসারিত করে একটু হেসে দিলো।

মেঘা রয় : প্রবীশ এই মেয়েটা কি বলছে এই মেয়ের বাসা মানে….?

প্রবীশ : ঠিকই তো বলেছে, আর এখানে প্রবীশ নামে কেউ থাকেনা……. যেহেতু প্রবীশের কাছে এসেছেন তাই বলবো আপনি এখান থেকে চলে যেতে পারেন।

মেঘা রয় : প্রবীশ প্লিজ আমার কথাটা একবার শোনো…

মেহেরাব : আই সেড গেট আউট……(ধমক দিয়ে বলল)

মেঘা : ভদ্রভাবে বেরিয়ে যাবে নাকি ঘ্যার ধাক্কা দিয়ে বের করে দিব….?

মেঘা রয় : ……..(প্রবীশের দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়)

[অতীত শেষ হলো]
*
*
*
*
মেঘা ফ্রেশ হয়ে এসে রাতে দুজনে একসাথে নামাজ আদায় করে নিল।মেহেরাব প্রান্ত আর প্রীতি কে দেখতে পাশের রুমে গেল , ততক্ষণে মেঘা কে বধু বেশে নিজেকে সাজাতে বলে যাই। ঘন্টাখানেক পর ফিরে এসে দেখে মেঘা বধু সেজে বসে আছে বেডের উপর।মেহেরাব দরজা লক করে এসে আবার ডুব দেয় ভালোবাসা অতল সাগরে।( আমি রোমান্টিক কিছু লিখতে পারি না।আপনারা বুঝে নেন)

রাত ২ টা

দরজা বার বার করাঘাত এর শব্দ কানে একাধারে বেজে উঠছে মেঘার আর মেহেরাবের । ক্লান্ত শরীর এলিয়ে দিয়েছে কিছু ক্ষণ আগে, ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। মেঘার বস্ত্রহীন ব্লাংকেট জড়িয়ে থাকা শরিলের উপর এক হাত দিয়ে জড়িয়ে রেখে উদম শরিল নিয়ে ঘুমের জগতে পাড়ি দেওয়া তে বেঘাত ঘটে।

মেঘা বাচ্চা দের কান্নার শব্দ শুনে এক লাফে উঠে পরে । হাতের নিচের থেকে এমন ভাবে উঠে যাওয়ায় মেহেরাব এর ঘুম ও ভেঙে যায়। মেঘা কাপড় খুঁজে দূরত্ব নিজের গায়ে জড়িয়ে ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসে।

সার্ভেন্ট দুটি রুমের মধ্যে মেহেরাবের এমন উদাম দেহ দেখে আর মেঘার সাজ এমন ভাবে নষ্ট হওয়া দেখে বুঝতে পারে কি হয়েছে এতক্ষণ রুমের মধ্যে । ঠোঁট টিপে একটু হেসে মেঘাকে বলে

– সরি মেম! ডিস্টার্ব করার জন্য।
-ওদেরকে এখন ফিডিং করাতে হবে।তাই নিয়ে এলাম ‌ খুব কান্না করছিল।

মেঘা : আচ্ছা যাও

মেঘা রুমের মধ্যে বাচ্চা দুটিকে নিয়ে এসে তাদের জায়গায় শুইয়ে দিয়ে মেহেরাবের দিকে রাগী চোখে তাকালো।

মেহেরাব : যাহ বাবা 🙄😏 এমন করে তাকানোর কি আছে? বাচ্চা হয়ে গেলে যে রোমান্স করা যাবে না এমন কি কোন জায়গায় লেখা আছে? আজব তো…..!

মেঘা : মাথার বালিশ নিয়ে মেহেরাব এর দিকে ছুড়ে মারল ……(শুরু হলো খুনসুটি ঝগড়া)

*
*
*
*
*
~~সমাপ্ত~~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here