গল্প: #অপ্রত্যাশিত ভালোবাসা
লেখক:#কাব্য মেহেরাব
পর্ব ০৬
প্রবীশ:কোন প্রস্তুতি ছাড়াই আমি দেখা করতে চাই। তবে মেয়েটা যেন ঘুনাক্ষরেও জানতে না পারে,কেউ দেখা করতে আসছে।(এরপর অমিতের দিকে তাকিয়ে বলল) অমিত উনাকে কিছু টাকা দিয়ে দাও।
কোন কথা ব্যয় না করে অমিত ২০০০০ টাকা হাতে দিল রহিমা খালার। রুম টা কোন দিকে জানতে চাইলো অমিত। রহিমা খালা রুমি নামের একটা মেয়েকে ডাক দিলেন। আর বললেন সাহেবদেরকে ডালিয়ার রুম টা দেখিয়ে দাও। রুমি নামের মেয়েটা মাথা নাড়ে জ্বি বলল। অমিত প্রবীশ কে উদ্দেশ্য করে বললো ,আসুন সাহেব…. আমার লোগে আসুন….। রুমি অমিত এবং প্রবীশ এর সামনের দিকে অনুসরণ করে এগিয়ে নিয়ে গেল। বেশ কতগুলো রুম অতিবাহিত করে একটা রুমের সামনে এসে দাড়ালো। রুম টা অনেক ভিতরে সাবাইকে হয়তো এই রুমে আসতে দেওয়া হয় না। রুমের দরজাটা র নকশা টা খুব স্পেশাল। আর দরজায় সুন্দর নিখুঁত করে লেখা’বন্দিনী’। রুমের সামনে এসে দাঁড়াল সবাই। প্রবীশ নাক বরাবর ভ্রুর কোনা উঁচু করে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে’বন্দিনী’ লেখা নামটির মানে বোঝার চেষ্টা করছে। হাল্কা ভেজানো দরজাটা, যার ফাঁক দিয়ে পর্দাটা বাতাসে উঁচু-নিচু হচ্ছে ,যা দেখা যাচ্ছে। রুমা নামের মেয়েটা প্রবীশ আর অমিত কে বলল, সাহেব আইয়া পড়ছি।প্রবীশ অমিতের দিকে তাকালো। বিষয়টা অমিত বুঝতে পেরে বলল ,আপনি ভেতরে জান ।আমি বাইরে অপেক্ষা করছি। রুমি অমিতকে রহিমা খালার কাছে নিয়ে গিয়ে বসতে বলল।
প্রবীশ একটা লম্বা শ্বাস টেনে নিল। হাত দিয়ে আস্তে আস্তে দরজাটা খুলল।
বড় আবেলায় পেলাম তোমায়…
এখনি কেন যাবে হারিয়ে…
কি করে বল রব একা?….
ফিরে দেখো ,এখনও আছি দাড়িয়ে….
কেন হটাৎ তুমি এলে,….
নয় কেন তবে পুরটা জুড়ে ?…
আজ পেয়েও হারানো যায় না মানা…
বাঁচার মানে টা যাবে হারিয়ে…..
বেডের উপর রেডিওতে গানটা বাজছিল। আর আমি মেঝেতে বসে দুহাত বেডের উপর দিয়ে মাথা গুঁজে চোখ বন্ধ করে গানটা শুনছিলাম।কাব্য কে খুব মনে পড়ছে।
প্রবীশ রুমের ভেতর প্রবেশ করল। গানটা শুনে থমকে দাঁড়ালো। ঘরের চারদিকে চোখ বুলিয়ে কিছুটা পর্যবেক্ষণ করছে। ঘরের দেওয়ালে বড় বড় কয়েকটি ছবি ঝুলানো আছে মেয়েটার। সাথে কিছু তারকারও ছবি। রহিমা খালার কাছ থেকে যেই ছবি দেখে এসেছে তার বেশ কয়েকটি ছবি ঝুলানো আছে। বিভিন্ন ড্রেস পরে তোলা ছবি। তবে শাড়ি পরে একটা ছবি তোলা আছে,যেটা খুবই সুন্দর যত্ন করে বাধাই করা। একদম সাধারন একটা মেয়ের মতন। ছবিটার দিকে চোখ আটকে যায় প্রবীশের।চিকন করে কাজল দেওয়া, কপালে দুই ভুরুর মাঝে একটা সাদা পাথরের টিপ। হালকা গোলাপি ঠোঁট।কানে এক জোড়া ঝুমকো। গলায় চিকোন একটা চেন, সাথে একটা রকেট যাতে MK ডিজাইন করা মনে হচ্ছে। নীল রঙের শাড়ি পরে আছে। আর হাতে,ম্যাচিং করে অনেক গুলো কাঁচের চুড়ি।
হঠাৎ নিঃশব্দে কান্না করার একটা গোংরানীর আভাস এলো প্রবীশের কানে।প্রবীশ তাকিয়ে দেখে মেয়েটা মাথা গুঁজে গান শুনছে আর হয়তো কান্না করছে। আবার চারদিকে চোখ বোলালো। রুমটা মাঝারি হলেও সবকিছু পরিপাটি ভাবে গোছানো। সবকিছুই আছে রুমটার ভেতরে। এসব দেখে ঠোঁট টা বাঁকিয়ে একটা বিদ্রুপ করার হাসি দিল। ন্যাকামো করার কান্না সহ্য হচ্ছে না প্রবীশের। দুই হাতে কয়েকটা তালি দিয়ে উঠলো।
মাথা উঁচু করে তাকালাম, তালির শব্দ অনুসরণ করে দেখলাম সামনে একজন সুদর্শন পুরুষ দাঁড়িয়ে আছে। উচ্চতা হয়তো ৬ ফুট এর মতন হবে। চোখে চশমা পরা। সাদা শার্ট এর উপর কালো কোট। কালো জিন্সের প্যান্ট। দেখতে তো ভালো ই।তবে আমার রুমে তো এখন কাউকে আসা নিষেধ। তাহলে লোকটা কে? কি করতে এসেছে..? এসবই ভাবছিলাম।
এইসব ভাবনার মাঝে আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ালাম।
প্রবীশ ছবিতে যেই মেয়েটা দেখেছে, তখন যতটা ভালো লাগেনি এখন এই কান্না কান্না চোখে মেয়েটার সৌন্দর্য যেন আরো বেশি ফুটে উঠেছে। একদম সাদামাটা একটা সিম্পিল থ্রিপিস পরিধান করে আছে। তবে ওড়নাটা গায়ে নাই। মাথার চুল গুলো বেশ লম্বা মনে হচ্ছে। বেণি করে সামনে একপাশে ছেড়ে দেওয়া। কিছু কাটা এলোমেলো চুল মুখের সামনে এসে পড়েছে। কাজল দেওয়া চোখে কাজল লেপটে গেছে তবুও কি অমায়িক সৌন্দর্য যেন ভর করেছে মেয়েটার উপর।
মেঘা: (হাতের উল্টোপিঠ চোখ মুছে, নাক টেনে বললো)আপনি কাউকে খুঁজছেন…?
প্রবীশ:(সব ভাবনার ছেদ পড়ল। তারপর দ্রুত একটা শ্বাস ছারলো। মাথা নাড়িয়ে বলল) হিম…….! স্পেশাল তাই না..?
মেঘা:( খুব রাগ হলো আমার, নক না করে ঘরে ঢুকেছে তার উপর তাকে স্পেশাল বলছে) আপনাকে দেখে যথেষ্ট ভদ্র মনে হচ্ছে। কারোর রুমে লক না করে ঢোকা বেড মেন্যার। তা কি জানেন না….?
প্রবীশ: তোমাদের মতো মেয়েদের রুমে ঢুকতে গেলে আবার পারমিশন লাগবে….?(মেঘার সামনে যে জানতে চাইল)
মেঘা:………..(দাঁতে দাঁত চেপে নাকের পাতা ফুলিয়ে তাকিয়ে রইল সামনের সুদর্শন পুরুষ দিকে)
প্রবীশ: এই সব পারমিশন নেওয়া টা প্রবীশের সাথে ঠিক যায় না। আমি পারমিশন নেই না পারমিশন দে ই।
মেঘা:……..(এক হাতের আঙ্গুল অন্য হাত দিয়ে মুঠো করে ধরল, লোকটা যে বেশ ঘাড়তেড়া বুঝতে পারলাম)
প্রবীশ:(মেঘার চারিপাশ ঘুরে ঘুরে মাথা থেকে পা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করছে আর বলছে) বন্দিনী…..? রুমটা দেখে বন্দিনী বলে মনে তো হচ্ছে না…….? শুধু একটু কমতি আছে। প্রকৃতির বাতাস ,প্রকৃতির আলো, মাথার উপর বিশাল আকাশ দেখা। তবে তোমাকে দেখে বন্দিনী নামটা ঠিক মানাচ্ছে না।
মেঘা:(লোকটা চাহনি দেখে এতক্ষণ মাথা নিচু করে থাকলেও এখন আর পারলাম না। তার চোখে চোখ রাখলাম।)
প্রবীশ: একদম না! এত দূঃ সাহস দেখিও না । চোখ দুইটা নিচে নামিয়ে কথা বল। চোখে চোখ রেখে কথা বলা আমি একদম পছন্দ করি না। আর তোমাদের মত মেয়েদের ক্ষেত্রে তো একদমই না।
মেঘা:….. “তোমাদের মত মেয়ে”কথাটা শুনে আমি আপনি চোখটা বন্ধ করে নিলাম।
প্রবীশ: (শব্দবিহীন একটা হাসি দিল… তারপর বলল) রুমের সজসাজ্জা দেখে তো খুব স্পেশাল মনে হচ্ছে। তা রেট কত তোমার….( কানের কাছে মুখ এনে জিজ্ঞেস করল)
মেঘা:(চোখ বন্ধ করে বললাম) আমি এখন অসুস্থ আপনি অন্য কাউকে বেছে নিন ।
প্রবীশ: শব্দ করে হাসলো। আস্ত নজর সব আমার পেটের দিকে দিল।
মেঘা:) লোকটা চাহনি দেখে অনেকটা অপ্রস্তুত হলাম আমি. ঘুরে দাড়ালাম পিছনে) আপনি প্লিজ অন্য কাউকে বেছে নিন।
প্রবীশ: (মেঘার সামনে যে দাঁড়িয়ে ছোট ছোট কাটা চুলগুলো কানের পিঠে গুঁজে দিয়ে বলল) ইউ নো…? আমার স্পর্শগুলো স্পেশাল, তাই আমিও স্পেশাল। আর আমার চয়েজ গুলো নিশ্চয়ই স্পেশাল হবে। তাইতো তোমার মত স্পেশাল কাউকে বেছে নিলাম।
1 আংগুল দিয়ে আমার মুখে স্লাইড করতে করতে বলল
প্রবীশ: বললে না ….?তোমার রেট কত?
মেঘা: দেখুন আমি অসুস্থ আমি প্রেগনে………
প্রবীশ: বিশ্বাস করো আমি সব জানি…! জেনেশুনেই এখানে এসেছি… তোমার এই অসহায়ত্ব আমার মন কেড়ে নিয়েছে। (এক আঙ্গুলে আমার চোখের পানি নিয়ে বলল) এই যে চোখের এই পানি ঝরাচ্ছো…? এটা আমার হৃদয়ের শান্তির খোরাক। বিশ্বাস করো…..
মেঘা:(চোখ ছোট ছোট করে বোঝার চেষ্টা করছে ,লোকটা কি পাগল এমন কথা কেন বলছে)
প্রবীশ: আমি স্পেশাল তাই আমার চিন্তা-ভাবনাগুলো স্পেশাল!
মেঘা: রেগে গিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিলাম লোকটি দিক থেকে!
প্রবীশ: তোমার এই অ্যাটিটিউড সত্যি আমার অন্তরে লেগেছে ।
মেঘা: আপনার কথাবার্তা আমি ঠিক হজম করতে পারছি না…
প্রবীশ: হিম🤔🤔🤔 হজমী খাওয়াতে হবে তোমাকে।
মেঘা: মানে….?(আশ্চর্যজনক ভাবে জানতে চাইল)
প্রবীশ: রেডি থাকো ! আস্ত আমাকে হজম করতে …….
কথাটা বলেই প্রবীশ রুম থেকে বেরিয়ে এলো। রহিমা খালার সাথে কথা বলছিল অমিত। প্রবীশ কে আসতে দেখে উঠে দাঁড়ালো অমিত রহিমা খালার দুজনে। প্রবীশ দুজনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রহিমা খালার কে বলল
প্রবীশ: মেয়েটাকে আমি আমার সাথে নিয়ে যেতে চাই কিছুদিনের জন্য। কত প্রেমেন্ট করতে হবে বলুন…?
রহিমার খালা: আপনি ভুল ভাবছেন সাহেব…? এখান থেকে কোন মেয়ে বাইরে যেতে পারবে না। আর ডালিয়াকে তো আমি কিছুতেই দিতে পারব না। এই অন্ধকার গলির রানী ও। ওকে আমি হাতছাড়া করতে পারবোনা তাতে আপনি আমাকে যত টাকায় দেন না কেন।
প্রবীশ অমিতের দিকে কটমট করে তাকিয়ে উঠলো। আমিতো ভয়ে একটা শুকনো ঢোগ গিলে নিল। শুকনো ঠোঁট টা জিবা দিয়ে ভিজিয়ে নিল। এক গ্লাস পানি পেলে হয়তো ভালো হতো।
অমিত রহিমা খালার কাছে গিয়ে বললো..
অমিত: কি খালা…? কিছু দিনের জন্য ই তো মেয়েটাকে চাইছি। এর জন্য তুমি যা চাও আমরা দিতে রাজি আছি। বলো কত নিবে..?
রহিমা খালা: একটা পোয়াতি মাইয়ারে আমি এই কামে পাঠাতে পারবো না।
প্রবীশ: ৫ লক্ষ,৬ লক্ষ ৮ লক্ষ ১০ লক্ষ …? ভেবে দেখুন মেয়েটা প্রেগনেন্ট। এমনিতেও তাকে দিয়ে কোনো ইনকাম করতে পারবেন না এখন । তাছাড়াও আমি তাকে সারা জীবনের জন্য নিতে চাইনি, কিছুদিনের জন্য নিতে চাইছি।
10 লক্ষ টাকা এক সাথে তিনি হয়তো স্বপ্নেও পাবেন বলে ভাবতে পারেনি। একেতে ডালিয়া অসুস্থ বলে মার্কেট ডাউন যাচ্ছে। এখন যদি কিছু দিনের জন্য 10 লক্ষ টাকা পাওয়া যায় মন্দ হয় না। তাই অনেক ভেবে চিন্তে তিনি বললেন।
রহিমা খালা: ঠিক আছে সাহেব আমি দেখছি! তবে ডালিয়াকে কিন্তু আমার ফেরত দিতে হবে! অসহায় মেয়েটা। তার উপর অসুস্থ, সে দিকে একটু খেয়াল রাখবেন.
প্রবীশ: 😏😏😏😏 অসহায়…….। চিন্তা করবেন না ওর স্বর্গ কে-নরক বানানোর দায়িত্ব এখন আমার।
#চলবে ……..