#মন_মহুয়ায়_শূণ্যতা
#পর্বঃশেষপর্ব
#Tasfiya_Nur
ব্যালকনির গ্রিল ধরে দাড়িয়ে আছে আরফাজ।শুক্রবার বলে আজ সে বাসায়।সকাল আটটা বাজতেই আজ তার ঘুমটা ভেঙে গিয়েছে।ভালো লাগছিলো না বলে ব্যালকনিতে গিয়ে দাড়ায়।মনের আকাশে মেঘটা বড্ড বেশিই জমে আছে।মহুয়াকে প্রচুর মনে পড়ছে তার।কিন্তু মহুয়া সে কি ভালো আছে!পুরো আটটা বছর সে কাটিয়ে দিলো মহুয়াকে ছাড়া।শান্তিতে সংসার বুঝি তার কপালে নেই।তাকে তার মনে মহুয়ার শূণ্যতায় পুড়তেই হতো বোধ হয়।কিন্তু মহুয়ার শূণ্যতা আজও সে কেনো মেনে নিতে পারলোনা!বুঝে আসেনা আরফাজের।আরফাজের আকাশকুসুম ভাবনার মাঝে একটা নয়বছরের ছেলে এসে আরফাজের শার্ট ধরে টানতে লাগে।আরফাজ পিছন ফিরে ছেলেটাকে দেখে মুচকি হাসে। ছেলেটাও হাসিমুখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। আরফাজ ছেলেটাকে কোলে তুলে নিয়ে বলে উঠে,
‘রিদ্ধি বাবা তুমি স্কুলে না গিয়ে আমার ঘরে কি করো হুম?স্কুলে যাবেনা?’
‘না আরফাজ আব্বু আমি যাবোনা।শুক্রবার আজ।কিসের স্কুল বলোতো?রিহান আব্বু শিখা আম্মু আর দাদিমা গ্রামে যাবে আজ। তুমি যাবেনা?আমি মহুয়া আম্মুকে দেখবো আরফাজ আব্বু।তোমরা সবাই মহুয়া আম্মুর কথা বলো কিন্তু আমি আজও তাকে দেখলাম না।’
রিদ্ধির কথায় মনের মধ্যে মহুয়াকে দেখার ইচ্ছেটা প্রবল ভাবে জেকে ধরেছে আরফাজের।কিন্তু সেই উপায় কি আছে!সে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,
‘কি বোকার মতো কথা বললাম। ভুলেই গিয়েছিলাম আজ স্কুল বন্ধ।না বাবা আমি যাবোনা তুমি তোমার মাম্মামের সাথে চলে যাও।আমার ভার্সিটিতে ক্লাস আছে।’
রিদ্ধি শিখা আর রিহানের ছেলে ছোটো থেকে বড় হওয়ার সাথেসাথে রিহান আরফাজকে আব্বু ডাকতে শিখিয়েছে। কিন্তু যখন একজনকে ডাক দিলে অন্যজন জবাব দেয় তখন দুজনই হাজির হতো রিদ্ধির সামনে। তাই রিদ্ধি বুদ্ধি খাটিয়ে দুজনকে নাম ধরে আব্বু বলে।সবার কাছে ব্যাপারটা অদ্ভুত লাগলেও আরফাজের কাছে বুদ্ধিটা বেশ লাগে।রিদ্ধির সাথে কথা বলতে বলতে সেখানে উপস্থিত হয় শিখা।হাতে ধোয়া উঠা কফির মগ।আরফাজের দিকে সেটা এগিয়ে দিয়ে বলে উঠে,
‘আমার শাস্তি না হয় সরকার আটবছর জেল খাটতেই মওকুফ করলো সব দোষ স্বীকার করে নেওয়ায়।কিন্তু তোমার শাস্তি তো এখনও বহাল চলছে আরফাজ।এবার কি মহুয়াকে ফিরিয়ে আনা উচিত নয় কি?শিকদার বাড়ি মরুভূমি হয়ে আছে। আমার বাবা নিজের পাপের শাস্তি পেয়েছেন দোকানের জন্য জিনিসপত্র আনতে গিয়ে এক্সিডেন্ট করে এক হাত এক পা কেটে ফেলতে হয়েছে। ছোটো বাবা ঐ ঝামেলার দিনই মহুয়াকে হাসপাতালে নেওয়ার পরই ব্রেইন স্ট্রোক করে মারা গেলেন।এত প্রেশার উনি নিতে না পেরে শেষ অব্দি মারা গিয়েই সব পাপের শাস্তি পেয়ে গেলেন।ছোটো মা তো সেই থেকে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে আছেন।তার সুখের সংসারে এত অশান্তির ঝড় তো উনি মেনে নিতে পারেননি।দাদাও তোমরা শিকদার বাড়ি ছাড়তেই চারবছর পর মারা গেলো।দাদী এখনও কষ্ট পেয়ে ধুকে ধুকে মৃত্যুর পথে ধাবিত হচ্ছে। শিকদার পরিবার তোমার মহুয়াকে তোমার থেকে কেড়ে নিয়েছে তার শাস্তি আর কত দিবে তাদের বলবে একটু?
শিখার একেকটা কথা তীড়ের ফলার মতো বিধছে আরফাজের বুকে।তার মহুয়া তো বেচে আছে, তার বাবার বাসায় ভালো আছে হয়তো।কিন্তু তার পরিবার?তার মা,ভাই-বোন,ভাইয়ের স্ত্রী তার দাদী তারা কি আদৌ ভালো আছে।নিয়তি এমন হলো কেনো?সেদিন যদি মহুয়ার বাবা সবকিছু জানার পর হাসপাতাল থেকে মহুয়া সুস্থ হওয়ার পর শিকদার বাড়িতে ফিরতে দিতো!কি এমন ক্ষতি হতো তাতে?রাহাদ,সারিফ হোসেন সবাই তো জেলেই পরে আছে।তাহলে কে আসতো মহুয়ার ক্ষতি করতে?হ্যা রাহাদের শাস্তিটা কমই আছে আর বারো বছর পর হয়তো জেল থেকে ছাড়া পাবে।কিন্তু ততদিনে তো মহুয়ার আর তার সুখের একটা সংসার হতো।মহুয়া তার বাবাকে বাচাতে গিয়ে নিজে গুলিবিদ্ধ হলো।কিন্তু তার পরিণতি কি হলো?ডক্টর যখন এসে জানালো মহুয়ার জীবন আল্লাহর হাতে।তখন চারদিকের এত প্রেশারে তার বাবা নিজেই তো স্ট্রোক করে বসলো।এতকিছুর পরও যখন সব সামলে উঠলো তখন তার মা সব দোষ মহুয়াকে দিয়ে বসলো।না মহুয়া তাদের সংসারে আসতো না এত ঝড় বয়ে যেতো।এসব শুনেই তো তার শ্বশুড় মহুয়াকে নিজেদের বাড়িতে নিয়ে গেলো।কসম দিয়ে বসলো মহুয়া শিকদার বাড়িতে ফিরলে উনি যমুনায় ডুব দিয়ে মরবেন।মহিমাও উনার সাথে তাল মিলিয়ে মহুয়াকে নিয়ে চলে গেলো সুস্থ হতেই।আল্লাহ তো মহুয়াকে বাচিয়েই দিলো কিন্তু এত অশান্তি কেনো দিলো?এসব কাহিনী হওয়ার পর আরফাজ রিহানকে বলেছিলো সে চলে আসবে শিকদার বাড়ি
ছেড়ে।রিহানও উপায় না-পেয়ে আরফাজকে সাথে নিয়ে মা আর বাচ্চা ছেলেটাকে সাথে নিয়ে ঢাকা চলে আসে।রিহান নিজের মতো তার জব করতে শুরু করে আরফাজ ভার্সিটির একটা জব জুটিয়ে নেয় অনেক কষ্টে।তারপর এতগুলা দিন পেরিয়ে গেছে।মাঝখানে দুবার শুধু গ্রামে গিয়েছে। একবার তার দাদা মারা গেলে আর দ্বিতীয়বার শিখাকে আনতে। কিন্তু মহুয়ার মুখোমুখি একবারও হয়নি।এতোকিছুর মাঝে ভালো খবর একটাই মহুয়ার সাথে তার তালাক হয়নি।মহুয়ার বাবা জোড়াজুড়ি করলেও মহুয়া রাজী হয়নি।আরফাজ স্তব্ধ ভাবে দাড়িয়ে যখন এসব অতীতের পাতা হাতরে স্মৃতিগুলো মনে করছে তখন শিা এগিয়ে এসে আরফাজকে ঝাকুনি দেয়।আরফাজ চমকে শিখার দিকে তাকায়। প্রশ্ন করে বসে,
‘কি হয়েছে?এভাবে ঝাকাচ্ছো কেনো?’
‘আমি আর রিদ্ধি যে কখন থেকে ডেকে যাচ্ছি সে খেয়াল আছে তোমার?কোন জগতে হারিয়েছিলে কে জানে।যাও ব্যাগ করো আজ আমরা গ্রামে যাবো দ্যাট’স ইট।এর উপরে আর একটা কথাও হবেনা।’
আরফাজ রিদ্ধিকে কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে নিশ্চুপে ব্যাগ বের করে কাপড় গুছাতে শুরু করে।শিখা তা দেখে হেসে রিদ্ধিকে নিয়ে তার রুমে চলে যায়।রিহানকে বিছানা থেকে তুলতে ডাকাডাকি শুরু করে।তারপর নিজেও সবকিছু গুছাতে শুরু করে।
সবকিছু হলে ব্রেকফাস্ট করে সবাই মিলে বেরিয়ে পরে গ্রামের উদ্দেশ্যে।
💞💞💞
বাড়ির উঠোনে এককোনায় ছোট্ট একটা বাগান করেছে মহুয়া।সেখানেই থম মেরে পিড়ি বসে আছে সে।আজ শুক্রবার বলে তার কোনো কাজ নেই।আরফাজকে বড্ড মিস করছে সে।প্রতিদিন তবু তাদের গ্রামের ছোট্ট স্কুলটাতে কাজ নিয়েছে সেখানে ক্লাস করায়।বিকেল অব্দি সেখানে থেকে তারপর বাসায় এসে ছোটো ভাইয়ের সাথে টুকটাক কথা বলে পড়িয়ে রাত হলে হালকা ডোজের ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমায় সে।নয়তো ঘুমতার চোখের পাতায় ধরা দেওয়ার না।মহুয়ার মা সকালের রান্না সেরে কাথা সেলাই করতে বসছে।মহুয়ার ভাই শিহাব বন্ধুদের সাথে খেলতে চলে গেছে মাঠে।জীবন কি থেকে কি হয়ে গেলো। আরফাজকে ছেড়ে এসে সে আবারও পুরোদমে পড়াশোনায় মনোযোগ দেয়।পড়াশুনা শেষ করে গ্রামের মানুষের কথায় ছোট্ট প্রাইমারি স্কুলটাতে চাকরির আবেদন করে।যোগ্যতার জোড়ে চাকরিটা পেয়েও যায়।কিন্তু জীবনে শান্তির দেখা মিললো না।মহুয়া যখন জীবনের হিসেব মিলাতে ব্যস্ত তখন উঠোনে জান্নাতের গলার স্বর শুনে চকিতে সেদিকে তাকায় মহুয়া।এতগুলো বছর পর জান্নাতকে দেখে সে দৌড়ে এসে দাড়ায় জান্নাতের সামনে।জান্নাতকে জড়িয়ে ধরে কেদে দেয়।জান্নাত স্তম্ভিত হয়ে দাড়িয়ে রয়।সে এসেছে কোন কাজে আর এই মেয়ে করছে কি! জান্নাত নিজেকে ছাড়িয়ে ধমকে উঠে বলে,
‘কি বাচ্চাদের মতো ফ্যাচফ্যাচ করে কাদছো?আসলাম উনাকে দেখতে উনি কাদছে।থামো বলছি?’
‘তুমি আমার উপর রেগে থাকবেনা বলো আগে?আমি চলে এসেছি বলে রেগে তো আমার সাথে আটটা বছর কথা বললে না।আজ কি মনে করে আমায় দেখতে আসলে?’
মহুয়া জান্নাতকে ছেড়ে নাক টেনেটেনে অন্যদিকে তাকিয়ে কথাটা বলে।জান্নাত ফিক করে হেসে দেয়।আরমান পাশেই দাড়ানো ছিলো।সে ওদের কথার মাঝেই বলে,
‘বাচ্চা ভাবীটা আমার বড় হয়ে গেছে। সে নিজেও বাচ্চাদের পড়ায়। ভাবা যায় এগুলো বলোতো?শুনো আংকেল আন্টি কোথায় ডাক দাও।কথা আছে, তোমায় ফিরতে হবে ঐ বাড়িতে অনেক হয়েছে ছেলেমানুষী।আমি মাকে বুঝিয়ে এসেছি।আংকেলের সাথেও কথা বলেছি কাল রাতে। সবাই রাজী। এখন চলো বাড়ি।আংকেল আন্টিকে বিদায় দিয়ে রেডি হয়ে চলো আমাদের সাথে।’
‘হ্যা মহুয়া ম্যাম চলেন আপনি আমাদের সাথে। অনেক হয়েছে কষ্টের বন্যা।এবার হোক সুখের বর্ষণ।’
মহুয়া একসঙ্গে আরমান আর মহিমার কন্ঠস্বর শুনে জান্নাতের পাশে নজর দেয়।মহিমা আর শাহদিয়াতকে দেখে খুশিতে লাফিয়ে উঠে।যায়েদা বেগম উঠোনে হইচই শুনে বাড়ির ভিতর উঠোন থেকে বাইরে আসেন।ওদের সবাইকে একসাথে দেখে খুশিমনে এগিয়ে আসে।এবার যদি মেয়েটার কপালে একটু সুখ হয়।সেই সময় রাঙা মিয়াও উপস্থিত হন।উনিও নিজের ভুল সিদ্ধান্তে যে মেয়ের সুখ কেড়ে নিয়েছেন বুঝতে পেরে মহুয়াকে তার শ্বশুরবাড়িতে ফিরতে দিতে রাজী হয়েছে।সবাই যখম মহুয়াকে নিয়ে যেতে সব গুছাতে ব্যস্ত তখন মহুয়া জান্নাতকে বলে উঠে,
‘জান্নাত আপু সে-ই তো বাড়ি নেই। আমি ফিরে কি করবো?’
‘তোমার সে ফিরবে মহুয়া ভাবী।আগে তুমি চলো তো।’
মহুয়া মৃদু হাসে।নিয়তি তার জীবন নিয়েআর কত উপহাস করবে কে জানে।সবশেষে বাবা -মা ভাইকে বিদায় জানিয়ে শিকদার বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে।
💞💞
আট বছর পর শিকদার বাড়িতে পা দেয় মহুয়া।শরীর কাপছে তার।বাড়ির সব একই আছে শুধু সেই হইচই আর ব্যস্ততা নেই।বাড়ির সব জমি যে বর্গাচাষীদের দিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওরা সব আবাদ করে বাড়িতে ভাগ দিয়ে যায় আবাদের।আরমানও তার বাবার রেখে যাওয়া ব্যবসায় হাত দিয়েছে বলে ঢাকায় আর আমি আমার ফেরেনি।জান্নাতও পরিক্ষার সময় ঢাকায় গিয়ে পরিক্ষা দিয়ে আসছে।তারপর টিসি নিয়ে তাদের শহরের ভার্সিটিতে মাস্টার্স পাশ করেছে।কিন্তু তার জব করার স্বপ্নটা এই ধ্বসে যাওয়া পরিবারকে আগলাতে পূরণ হয়ে উঠেনি।উঠোনের এককোণায় দুজন বাচ্চা মেয়ে খেলছে।মহুয়া প্রশ্নবিদ্ধ চোখে জান্নাতের দিকে তাকায়।জান্নাত তা দেখে উত্তর দেয়,
‘পিংক কালার বেবি ফ্রক পড়া আমার আর আরমানের মেয়ে আরিয়াত।আর অন্যজন মহিমা আপুর মেয়ে সাহিয়া।’
মহুয়ার চোখে আনন্দের কষ্টের দুটোরই পানি যেন উপচে পড়বে এই অবস্থা।সব ঠিক থাকলে তার আর আরফাজেরও সন্তান হতো।মহুয়া বাড়িতে পা রাখতে ই মনিরা বেগম আর নাজমা বেগম এগিয়ে এসে বুকে সাথে জড়িয়ে নেয়।মহুয়া তাদের সংস্পর্শ পেয়ে সবাই কেদে ফেলে।আজই তাদের শেষ কান্না।এরপর সুখ ব্যতিত যেন তাদের জীবনে কিছু না আসুক।মহিমা এত কান্না দেখে উচ্চস্বরে বলে উঠে,
‘আরে আরে কান্না করে তোমরা বন্যা এনোনা। শুনো বাড়িতে খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করো।আজ বাড়ির বউ ফিরলো তার জন্য একটু তো আনন্দে খাওয়া দাওয়া করা উচিত।’
‘কিন্তু বাড়ির ছেলে যে ফিরলোনা মহিমা।’
মনিরা বেগম পাশ থেকে বলে উঠে।আরমান তাদের কথা শুনে উত্তর দেয়,
‘শিখা আপু আসছে তাকে নিয়ে।তোমরা সব আয়োজন করো।’
আরমানের কথায় মহুয়ার চোখেমুখে খুশির ছটা ফুটে উঠে।নাজমা বেগম সব শুনে একটু একটু করে কথা বলার চেষ্টা করে।আরফাজ চলে যাওয়ার পর উনাকে শতচেষ্টা করেও কেউ কথা বলাতে পারেনি।মহিমা জান্নাতের কানে ফিসফিস করে কিছু একটা বলে মহুয়াকে নিয়ে চলে যায় আরফাজের রুমে।জান্নাত রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ায় আরমানকে কিছু জিনিসের লিস্ট ধরিয়ে দিয়ে।মনিরা বেগম বয়স্ক মানুষ সহিদাকে জান্নাতকে সাহায্য করতে বলে রুমে চলে যায়।নাজমা বেগমও রান্নাঘরে পা দেয়।ছেলে আর ছেলের বউয়ের জন্য রান্না করবেন আজ।
💞💞
রাতের আটটার দিকে আরফাজরা এসে পৌছেছে বাড়িতে।তাদের আসার আনন্দে মেতে উঠেছে বাড়ি।কিন্তু এতকিছুর মাঝেও জান্নাত আর মহিমা সবাইকে বুঝিয়ে মহুয়া যে এসেছে এটা জানায়নি।আরফাজ আসতেই মহুয়াকে আরফাজের রুমে আটকে দিয়ে আরফাজকেও তার রুমে যেতে দেয়নি।শিখা আর রিহানকেও সব জানানো হয়েছে।রিঠী গ্রামে থাকেনি এতদিন হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করছে।কিন্তু ভাই আসার আনন্দে সেও ফিরেছে আজ।পুরো বাড়িটা আজ আনন্দে মাতোয়ারা।এসবের মাঝে মহুয়া একা একা বসে বিরক্ত হচ্ছিলো।শরীরে তার নতুন শাড়ি,গহনা আর হালকা সাজগোজ।মহিমা তাকে সাজিয়ে খাইয়ে দিয়ে ঘরে বসিয়ে দিয়ে গেছে।ঘরটাও গোলাপ আর রজনীগন্ধার সাজে সজ্জিত।এতকিছুর আয়োজন কেনো ভেবে পাচ্ছেনা মহুয়া।বাইরে থেকে মাঝেমধ্যে আরফাজের গলার স্বর শুনে তার আত্মা কেপে উঠছে।
রাতের খাবার দাবার সেড়ে সাইফ শিখাকে সাথে নিয়ে তাদের বাড়ি যায়।মহিমা আর শাহদিয়াত তাদের মেয়েকে নিয়ে চলে যায়।থাকতে বললেও থাকেনি।যাওয়ার আগে মহিমা জান্নাতকে আরফাজকে রুমে পাঠিয়ে দেওয়ার কথা বলে যায়।জান্নাতও সেই কথামতো নাজমা বেগম, মনিরা বেগম আর রিঠীকে ঘুমাতে বলে রুমে পাঠিয়ে দিয়ে নিজে আরমানকে বলে আরফাজকে সাথে নিয়ে রুমের সামনে দাড়ায়। আরফাজ কিছু বুঝতে পারছেনা হচ্ছে কি এসব।দরজা খোলা হতেই আরফাজকে ধাক্কা দিয়ে ঘরে পাঠিয়েই দরজা আটকে দেয় বাইরে থেকে।আরফাজ ঘরে এভাবে ঢুকতে হবে ভাবতে পারেনি।কিন্তু ঘরে মহুয়াকে দেখে আশ্চর্যে আকাশ থেকে পড়ে এমন অবস্থা।
আরমান ভাইকে ঘরে পাঠিয়ে জান্নাতের দিকে ফিরে বলে উঠে,
‘ভাইয়ের রোমান্সের ব্যবস্থা করালে এখন আমার কি হবে?আমারও তো আদর করতে মন চাচ্ছে।মেয়ে হওয়ার পর অনেক তো দূরে দূরে থাকো।এবার কাছে আসার সময় হয়েছে।আটকাবেনা একদম।’
আরমানের মুখে এমন নির্লজ্জ কথা শুনে জান্নাতের লজ্জায় মুখ রাঙা হয়ে উঠে।আরমান তা দেখে জান্নাতকে কোলে তুলে নিয়ে পা বাড়ায় ঘরের দিকে।
নিজের রুমে রাহাদের ছবি বুকে আকড়ে কাদছে রিঠী।সবার জীবনে শান্তি আসলো তার জীবনে ধরা দিলোনা সুখ। এতটা কষ্ট না লিখলেও পারতো বিধাতা।সে অপেক্ষায় আছে রাহাদের অপেক্ষায় সে আছে।সপ্তাহে দুবার রাহাদের সাথে সবার অগোচরে সে দেখা করে।তার বিশ্বাস আটটা বছর পার হয়েছে যখন আরও বারোটা বছর পেরিয়ে যাবে।কাদতে কাদতেই ঘুমিয়ে যায় রিঠী।
আরফাজকে রুমে দেখে অসস্তি লাগে মহুয়ার। আরফাজও জড়তা নিয়ে মহুয়ার দিকে পা বাড়ায়।মহুয়া খাটে বসে আরফাজকে আগাতে দেখে শাড়ির আচল চেপে ধরে। আরফাজ কেমন ঘোর লাগা চোখে তাকিয়ে তার দিকে আগাচ্ছে।আরফাজ মহুয়ার পাশে বসে। মহুয়া মাথা নিচু করে পা দিয়ে মেঝেতে আঁকিবুঁকি কাটছে।আরফাজ মহুয়াকে হুট করে জড়িয়ে ধরে বলে,
‘আজ তবে আমার মনে মহুয়ার শূণ্যতা পূরণ হলো।তাকে কি আপন করে পেতে ছুয়ে দিলে রাগ করবে সে?’
আরফাজের ঘোরলগা কন্ঠে আরফাজকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।আরফাজ নিজের সম্মতি পেয়ে মহুয়ার মাঝে ডুব দেয়। একদিকে আরমান জান্নাত,মহিমা শাহদিয়াত,শিখা রিহান ভালো থাকুক তাদের জীবন নিয়ে।আরফাজ মহুয়ার জীবনটাও সুখে পরিপূর্ণ হোক।কষ্ট শেষে সুখ আসুক সবার জীবনে।পূর্ণতা পাক সবার জীবনের শূণ্যতা।
সমাপ্ত।