তোমার নেশায় পর্ব -২২

# তোমার_নেশায় !
,
,
(২২)
,
,
কঠিন হৃদয়ের মেয়ে তৃষ্ণা!
.
.
.
.
:– মিঃ আশ্রাফ খান! এইবার তো নিশ্চই অনেক শান্তি পেয়েছেন? আপনার জন্য চারটা জিবন চারখার হয়ে গেছে। একটা সুখি পরিবার নষ্ট হয়ে গেছে। এখন নিশ্চই খুব ভালো অনুভুতি হচ্ছে আপনার?(ফুফি)
,
:– কুহু বোন আমার! এইভাবে বলিসনা প্লিস।।
,
:– জাস্ট স্টপ আপনার নোংরা মুখে আমায় বোন ডাকবেন না। আমার কোনো ভাই নেই যে ছিল সে মারা গেছে।
,
:– তুই আমায় ক্ষমা করে দে প্লিস। এইভাবে আর ছোট করিসনা।
,
:– আপনি অলরেডি এতোটা ছোট হয়ে গেছেন আপনাকে নতুন করে কি ছোট করবো। এক কাজ করুন পারলে রুপশা কে তার মা ফিরিয়ে দিন, আহসান কে তার জিবন সঙ্গি ফিরিয়ে দিন। রুপশা কে তার সুন্দর সংসার ফিরিয়ে দিন। বলুন পারবেন? তবেই আপনাকে ক্ষমা করা যাবে। আর শুনে রাখুন আমি আপনাকে ক্ষমা করলেও সৃষ্টিকর্তা কোনোদিন আপনাকে ক্ষমা করবেননা।
,
:– আমি মানছি আমি ওদের সাথে অনেক বড় অন্যায় করেছি। আমি পারবোনা ওদের হারানো মানুষ আর সময়কে ফিরিয়ে দিতে। তবে আমার ভুলের সাঝা নিশশ্চই মেনে নিতে পারবো। অফিসার ভিতরে আসুন!
,
সাথে সাথে কেবিনে প্রবেশ করে একদল পুলিশ। তারা আশ্রাফ খানের হাতে হাতকড়া পরিয়ে দেয়। আশ্রাফ খান যাওয়ার আগে পিছু ফিরে বলেন,
,
:– কহু আমি জানি আমায় যতই শাস্তি দেওয়া হোক আমার পাপ কমবে না। তবুও পারলে আমায় ক্ষমা করে দিস বোন। জানিনা আর কোনো দিন তোদের মাঝে ফিরে আসবো কিনা। আর রুপাঞ্জন তুই আমায় ক্ষমা করে দে বাবা!
,
রুপাঞ্জন এখন ও একিভাবে ফ্লোরে বসে আছে। সে এখন ও একটা ঘোরের মধ্যে আছে। বাবার ডাকে উপরে মুখ তুলে তাকিয়ে দেখে বাবার চারদিকে পুলিশ আর তার হাতে হাতকড়া।
,
:– রুপাঞ্জন আমি নিজেও পাপি পাশাপাশি তোকে ও আমার মতো পাপি বানিয়েছি। জানিনা কোন মুখে তোর কাছে বলবো, তবুও বলছি তুই যেভাবে পারিস বৌমা আর তার অনাগত সন্তান কে খুজে বের করিস! ওর কাছে আমার হয়ে ক্ষমা চেয়ে নিস। এ ও বলিস আমার নাতি নাতনী হলে তাদের যেন বলে আমি মারা গেছি। আমি চাইনা ওদের উপর আমার পাপের ছায়া পড়ুক। আসি!
,
পুলিশ আশ্রাফ খান কে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি মাথা নিচু করে হেটে চলে যাচ্ছেন কারাগারের উদ্দেশ্য। তার প্রাপ্য শাস্তি উপভোগ করার উদ্দেশ্য। যে আশ্রাফ খান সবসময় মাথা উচু করে হাটতো আজ তারই কৃতকর্মের ফলে সে নিজেই নিঝের পরিবারের কাছে ঘৃনিত। আশ্রাফ খান বেরিয়ে যাওয়ার পর ফুফি নিঃশব্দে কাঁদতে থাকে। শত হোক নিজের ভাইয়ের এমন পরিনতি কোনো বোন মেনে নিতে পারেনা। কিছুক্ষন পর নিঝের চোখের পানি মুছে রুপাঞ্জনের দিকে তাকালেন সে এখন ও একিভাবে বসে আছে।
তিনি আস্তে করে ডাকলেন,
,
:– রুপাঞ্জন!! এদিকে আয়।
,
রুপাঞ্জন ফুফির কথা মতো তার পায়ের কাছে গিয়ে বসে। কিন্তু তার মন পুরো বিষাদে পরিপুর্ন হয়ে আছে। তার মাথায় একটাই কথা ঘুরছে রুপশার কোনো দোষ না থাকা সত্তেও সে তাকে এতো কঠিন শাস্তি দিল। যা কোনো মানুষ মানুষের সাথে করেনা এমন ব্যবহার করতো সে রুপশার সাথে।
রুপাঞ্জন কে অন্যমনস্ক থাকতে দেখে ফুফি ওকে হাল্কা ঝাকুনি দিয়ে বললেন,
,
:– আমি জানি এখন তোর মনে কি চলছে। অনুতাপের আগুনে পুড়ে মরছিস। কিন্তু এটাই তোর প্রাপ্য! রুপশা কে দেখে সত্যি অবাক হতাম। এই কেমন মেয়ে তুই ওকে প্রত্যেক মুহুরতে ঝন্ত্রনা দেওয়ার পর ও তোকে ভালোবেসে ছিল। ওর ভালবাসা সত্যি নিখুত ছিল। তুই খুব ভাগ্য করে ওর মতো বউ পেয়েছিলি। ওর জায়গায় অন্য কেউ হলে তোর টাকায় আয়েশ ফুর্তি করতো নিজের লাইফকে উপভোগ করত। কিন্তু ও তোকে নিজের লাইফ বানিয়ে নিয়েছিল। ঠিক ওর মায়ের মতো সরল ছিল মেয়েটা। সমস্ত কষ্ট নিজের মনে চেপে রাখত। জানিস ওর মা এতিম ছিল। আমাকে নিজের বোনের মতো ভালোবাসত। তাইতো আমার জন্য নিজের ভালোবাসা কে ও ত্যেগ করতে রাজি ছিল। কিন্তু আফসোস আমি ওকে কোন প্রতিদান দিতে পারলাম না। না জানি রুপশা মা টা আদৌ বেচে আছে নাকি তোর দেওয়া ক্ষত সহ্য করতে না পেরে……………
,
:– না ফুফি এইভাবে বলোনা প্লিস! ওর কিছু হতে দেবোনা। ওর কিছু হলে যে আমি বাচবোনা। খুব ভালোবাসি আমি ওকে! ওর নেশা যে আমার শিরা উপশিরায় জড়িয়ে গেছে। আমার হৃধয়ের প্রত্যেক স্পন্দন আমায় জানিয়ে দিচ্ছে আমি রুপশা কে কতোটা ভালবাসি। ওর নেশায় পাগল হয়ে যাচ্ছি আমি ফুফি!! ওকে আমি যেখান থেকে পারি খুজে নিয়ে আসব। তারপর আমার এই বুক থেকে কোথাও যেতে দেবোনা।
,
:- কিন্তু আফসোস রুপাঞ্জন ওর নেশা তোকে সঠিক সময় টানতে পারেনি। নাহলে আজ হয়ত ও তোর থেকে এতো দুরে থাকতোনা। জানিস রে মেয়েটা আমায় বার বার বলতো ও তো কোনদিন মায়ের আদর পায়নি। তাই ও আমার মাঝে নিজের মা কে খুজে নিতে চায়। কিন্তু সেটা পারল না মেয়েটা!! তুই আমায় কথা দে তুই যেখান থেকে পারিস আমার মেয়েকে আমার কোলে ফিরিয়ে দিবি। তাহলে সেদিনই তুই আমার ক্ষমা পাবি ।
,
:– আমি তোমায় ছুয়ে কথা দিচ্ছি ফুফি। আমি রুপশা কে ঠিক খুজে বের করবো। আর তোমার কাছে ফিরিয়ে নিয়ে আসব।
রুপাঞ্জন চোখ মুছে উঠে দাড়ায়! আমায় পারতেই হবে। আমাকে আমার ভালোবাসার মানুষকে খুজে বের করতেই হবে। ও আমার ভালোবাসার কথা শোনা ছাড়া কোথাও যেতে পারেনা। আমি বের হচ্ছি ফুফি! দোয়া করো। তোমার ছেলের জন্য!
,
রুপাঞ্জন গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। রিসেপশনিস্ট এর কাছ থেকে জেনে ওরা ফুফি কে কয়েকদিন এখানেই রাখবে চেকাপের জন্য!….
রুপাঞ্জন গাড়ি নিয়ে সোজা প্রত্যাশা কাননে চলে যায়। দেখে ফ্ল্যেটে অনেক বড় তালা ঝুলছে। আশেপাশে লোকজন কে অনেক জিজ্ঞাস করে ও কোনো লাভ হয়না। কারন তারা কেউ রুপশা আর আহসান চৌঃ কে বের হতে দেখেনি। তবুও আমার হাল ছাড়লে চলবেনা। একবার ওদের অফিসে গিয়ে খোজ নেওয়া যাক। কিন্তু অফিসের ম্যানেজার জানায় তারা কিছুই জানেনা ওদের ব্যেপারে। রুপাঞ্জন রেগে ম্যানেজার এর কলার ধরে,
:– এই ওনাদের অফিসে কাজ করেন অথচ ওনারা কোথায় গেছে জানেনা। ফাজলামো হচ্ছে রাতারাতি দুইটো মানুষ এইভাবে ভ্যেনিশ হয়ে গেছে??
,
:– দেখুন স্যার! সিনক্রিয়েট করবেন না প্লিস। আমরা সত্যি জানি স্যার আর রুপশা ম্যেডাম কোথায় গেছেন। ওনাদের সাথে কোনো যোগাযোগ নেই আমাদের। উনি ওনার কম্পানি আমাকে বুঝিয়ে দিয়ে জানিনা কোথায় চলে গেছেন। হয়ত মরে…..
,
রুপাঞ্জন এবার রাগ কন্ট্রল করতে না পেরে সজোরে চড় বসিয়ে দেয় ম্যেনেজার কে।
এই ঘটনায় উপস্থিত সবাই অবাক হয়ে যায়।
,
:–How dare you to talk such a rubbish??? আমার রুপশার ব্যপারে আর একটা কথা বলবি I will kill you!!
,
রুপাঞ্জন আবার ম্যনেজার কে মারতে ধরলে অন্যনান্য স্টাফ রা এসে অনেক কষ্টে ছাড়ায়। আসলে ম্যানেজার জানে রুপশা রা কোথায় আছে কিন্ত্ সে কিছুতেই বলবেনা। কারন সে জানে রুপাঞ্জন খান তাদের ম্যেডাম কে অনেক কষ্ট দিয়েছে।
রুপাঞ্জন রেগেমেগে বেরিয়ে যায় অফিস থেকে। বাসায় এসে শাওয়ার নেয়। মাথা খুব খারাপ হয়ে গেছে। উফফ এতো রেগে গেলে চলবেনা। ঠান্ডা মাথায় কাজ করতে হবে।
,
অন্যদিকে রুপশার এখন ৮ মাস চলছে। শরিল টা ইদানিং খুব খারাপ যাচ্ছে। হাত পা বেশ ফুলে গেছে। এখন ঠিকমতো খাওয়া ও যাচ্ছেনা। হাটতে গেলে খুব ধীর পায়ে হাটতে হয়। বাবুটা যে পেটে খুব নড়াচড়া করে । রুপশা কখন ও কখন ও নিঃশব্দে কাদে আবার এই ভালো লাগা অদ্ভুত অনুভুতি পেয়ে খুব আনন্দিত হয়। এখন যে রুপাঞ্জন কে ভুলে গেছে তা নয়। প্রতি রাতে লুকিয়ে কাদে সে রুপাঞ্জন এর জন্য! এইসময় একটা মেয়ের সব থেকে বেশি প্রয়োজন হয় ওর হাজবেন্ডের। রুপশার ও সব আছে নেই শুধু আগলে রাখার জন্য ভালোবাসার একজোড়া হাত। তার বাবা তার যথেষ্ট কেয়ার নেয়। কিন্তু হাজবেন্ড এর অভাব কে পুরন করবে? মনের মধ্যে জমে থাকা কষ্ট গুলা কে দুর করবে। রুপশা মাঝেমাঝে বাবুর সাথে কথা বলতে বলতে ও কাদে।এই বাবু টা যে রুপাঞ্জনের রিভেঞ্জ নামক নোংরা খেলার ফল। এই বাবু কে যতবার দেখবে ততবার এই বিষাদময় দিন গুলার কথা মনে পড়ে। মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে সব ভুলে রুপাঞ্জনের কাছে চলে যাই! আমাদের বাবু কে দেখে বুঝি ওর মন বদলাবেনা? বাবুর মুখে বাবাই ডাক শুনেও বুঝি আমাদের প্রতি ওর ভালোবাসা জন্মাবেনা? দুর কিসব ভাবছি! পশুর কোনা হৃদয় থাকেনা, আর হৃদয় না থাকলে ভালোবাসা আসবে কোথা থেকে । হয়ত সে আমার থেকে রিভেঞ্জ নিতে আমার বাবুর ও কোনো ক্ষতি করতে পারে। না না এই কিছুতেই থে দেওয়া যাবেনা আর বাবুর জন্যই তো রুপশা এখন বেচে আছে। তার একমাত্র বেচে থাকার সম্বল কে কিছুতেই হারাতে দিবেনা। ভুলে যাবে সে রুপাঞ্জন কে।
কিন্তু ভুলে যাব বললেই তো ভুলা যায়না । তার মনে পড়ে তার কলেজ ফ্রেন্ড মাইশা যখন প্র্যেগনেন্ট হয়েছিল তখন ওর বর ওকে এক মিনিটের জন্য ও একা ছাড়তো না। সারাদিন বাবুর জন্য এটা করবো ওটা করবো ভাবতো। আর ওর পেটে কান দিয়ে শুনতো বাবুর নড়াচড়া তখন মাইশা বলত ওর নিজেকে খুব সুখি মনে হতো!
রুপশার ও ইচ্ছা করে যক্ষন বাবু ওর পেটে লাথি দেয় কেউ ওর পেটে কান পেতে শুনুক। কেউ তার মতো বাবুর সাথে কথা বলুক! কিন্তু কি অভাগি সে, নিজের ভালোবাসার মানুষ কে এই ৮ মাস একটু চোখের দেখা ও দেখতে পেলোনা। সে পারলোনা মাইশার মতো সুখি হতে।
তখন আবার চাপা সুরে ফুফিয়ে কাঁদতে লাগল। শরিলের ঝন্ত্রনা আর মনের ঝন্ত্রনা মিলিয়ে রুপশা জলে যাচ্ছে। কিন্তু মুখ ফুটে কাউকে কিচ্ছু বলতে পারছেনা!!
কিই বা বলবে।
এইভাবে আরো এক মাস কেটে যায়। এই একমাস রুপাঞ্জন তার জিবন লাগিয়ে দিয়েছে রুপশা কে খুজতে আর অনাগত সন্তান কে খুজতে কিন্ত কিছুতেই পেলোনা। এই একমাসে রুপাঞ্জন না খায় না ঠিকমতো ঘুমায়। সারাদিন এখানে সেখানে রুপশা কে পাগলের মতো খুজে আর রাত হলে ওর শাড়ি গুলা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে। ওর নেশা যে রুপশা! তাই নেশাগ্রস্তের মতো ছুটে চলছে এদিক সেদিক। তখনই ওর ফোনে কল এলো। স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে, রঞ্জিত!!
ওর স্কুল ফ্রেন্ড! কলেজ পর্যন্ত একি সাথে পড়াশোনা করেছে। কিন্তু পরে রঞ্জিত মেডিকালে পড়ে ডাক্তার হয় আর রুপাঞ্জন ম্যানেজমেন্ট পড়ে বিজনেসম্যেন। কোনো একটা কারনে সে রুপাঞ্জনের বিয়েতে আসতে পারেনি। কিন্তু এতোদিন পর হঠাৎ ফোন!
,
রুপাঞ্জন রিছিভ করতেই রঞ্জিত শুরু হয়ে গেল,
,
:– সালা, হারামি, কুত্তা। কেমন বন্ধু রে তুই?? এতোদিন একটু খবর নিসনি তুই।
,
:– আসলে পরিস্থিতি এমন ছিল।
,
:– ওও যাইহোক ভাবি কেমন আছে??
,
:——–
,
:– কি হলো কিছু বলছিস না যে? আচ্ছা যাইহোক দরকারি কথা বলবি। নেক্সট উইক আমার বিয়ে!
,
:– কি, তুই বিয়ে করছিস?
,
;– কেন রে নিজে পারবি আমি পারবোনা?? তুই আর ভাবি চলে আসবি কিন্তু।
,
:- দেখ রঞ্জিত আসলে আমি যেতে পারবোনা।
,
:– চুপ আর এক শব্দ বললে ঢাকায় এসে পিটাবো তোকে সালা! আমি কিচ্চু শুনতে চাইনা তোকে আমার বন্ধুত্তের দিব্যি দিলাম।
,
:– কিন্তু রঞ্জিত…….
,
আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রঞ্জিত ফোন কেটে দিল। আমি মরি আমার জালায় আর এই সালা আছে নিজের বিয়ে নিয়ে। কি যে করি এখন। আচ্ছা আমি বোকার মতো রুপশা কে শুধু ঢাকায় খুজছি কেন? এও তো হতে পারে ও ঢাকার বাইরে কোথাও গিয়ে থাকছে আমার নাগালের বাইরে। এবার ঢাকার অভিযান শেষ, সিলেট অভিযান শুরু!!!
হ্যা, রঞ্জিতের বাড়ি সিলেট। এইভাবে রঞ্জিতের বিয়ে ও এটেন্ড করতে পারব আর রুপশা কে খুজে নেওয়া যাবে।
রুপাঞ্জন পরের দিনই ফুফি থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। কেন জানিনা সিলেট খুব টানছে আমাকে। এর আগেও ঘুরতে অনেকবার গেছি সিলেট কিন্তু এই অনুভুতি আর কখন ও হয়নি। রঞ্জিতের বাসায় যেতেই রঞ্জিত রুপাঞ্জন কে জড়িয়ে ধরে।,
:– কিরে ভাবি কে আনলি না যে!
,
:– আসলে ওর শরিল খারাপ তাই আর কি……..
,
:– ওহহ নেক্সট টাইম আনবি কিন্তু।
,
রুপাঞ্জন শুধু একটু মুচকি হাসল। বিয়ের তোড় জোড় চলছে কিন্তু রুপাঞ্জনের সেদিকে মন নেই ও একমনে রুপশা কে খুজে চলছে।
অন্যদিকে রুপশা খাটে হেলান দিয়ে বসে টিভি দেখছিল। হঠাৎ পেটে একটু চাপা ব্যেথা অনুভব হলো। রুপশা ভাবল বাবু হয়ত লাথি দিচ্ছে।,
:– সোনা, তুই কি ওখানে ফুটবল খেলছিস?? মাম্মাম ব্যেথা পাইনা বুঝি?
,
কিন্তু ব্যেথা টা ক্রমশ বাড়তে লাগল। একসময় রুপশা থাকতে না পেরে চিৎকার দেয়,
,
:– বাবা!!!!!!!!!!!
,
আহসান সাহেন বারান্দায় পত্রিকা পড়ছিলেন। মেয়ের চিৎকার শুনে তাড়াতাড়ি রুমে এলেন,
,
:– কি হয়েছে মা??
,
:– বাবা.. সময়… এসে গেছে। গাড়ি বাইর করতে বলো।
,
আহসান সাহেব আর একমিনিট ও না দারিয়ে গাড়ি বের করান। তার পর মেয়েকে পাঁজাকোলা করে। গাড়িতে নিয়ে বসান। রুপশার এক একটা দম ফাটানোর চিৎকারে চারদিক স্তব্দ হয়ে যাচ্ছে। আহসান সাহেব একমনে আল্লাহ কে ডাকছেন। আর মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। রুপাঞ্জন তখন হাইওয়ে তে পায়চারি করছিল। হঠাৎ করে ওর বুক টা কেমন করে উঠল। যেন কিছু একটা থে চলেছে। এমন অস্থির লাগছে কেন আমার!
গাড়ি থেকে নামিয়ে রুপশা কে স্ট্রেচারে তোলা হলো। গাইনি ডাক্তার রুপশা কে দেখে বললেন,
:- ও মাই গড! ওনার কান্ডিশান ভালো দেখছিনা। ব্লিডিং হচ্ছে অনেক ওনাকে এখুনি অপারেশন করতে হবে। রুপশা ও.টি তে নিয়ে যাওয়া হলো। আহসান সাহেব কেদে কেদে বুক ভাসাচ্চেন। মেয়েটা ছাড়া দুনিয়ায় তার কেউ নেই। ওর কিছু হলে কি করে বাঁচবেন তিনি। উনি মনে মনে বলছেন, আল্লাহ আমার হায়াত টুকু ও আমার মেয়ে কে দিয়ে দাও। কিছুক্ষন পর এক ডাক্তার বেরিয়ে এলো।
,
:– জি এখানে পেশেন্টের বাড়ির লোক কে আছেন?
,
:– জি আমি।
,
:– ওনার হাজবেন্ড কই? ওনার এক্ষুনি এই এগ্রিমেন্ট এ সাইন করতে হবে।
,
:– আসলে উনি মারা গেছেন। দিন আমি সাইন করে দেই।ডাক্তার আমার মেয়ে….
,
:– দেখুন আমরা সবটুকু চেষ্টা করছি কিন্তু ওনার অবস্থা খুব খারাপ। আর হ্যা, তাড়াতাড়ি O- রক্তের জোগাড় করুন। ওনার অলরেডি অনেক রক্ত চলে গেছে। ১ ঘন্টার মধ্যে রক্ত না পেলে হয়ত মা শিশু কাউকেই বাঁচানো যাবেনা।
,
আহসান সাহেবের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। O- রক্ত ছিল একমাত্র প্রত্যশার। এইছাড়া কারো সাথে রুপশার রক্ত ম্যেচ হয়না। এবার কি হবে এই অচেনা শহরে কার কাছে রক্ত খুজবেন তিনি।
চোখে যেন অন্ধকার দেখছেন। উনি হতদন্তের মতো মদজিদের দিকে ছুটলেন। নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে কাঁদতে লাগলেন। এই মুহুরতে তিনি ছাড়া তার মেয়ে কে কেউ বাচাতে পারেনা। হে রাহিম, একটা পথ দেখাও! আমার মেয়ে তো কোনো পাপ করেনি। তাহলে কেন এতো শাস্তি দিচ্ছো তুমি তাকে। প্লিস তাকে সুস্থভাবে উদ্ধার করো।
,
,
,
আজ এইটুকু থাক। কেমন হলো জানাবেন। হয়ত এই কালেই রুপশার মৃত্যু লেখা আছে।
,
,
# ধন্যবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here