তোমার নেশায় পর্ব -২৫

# তোমার_নেশায় !
.
.
(২৫)
,
,
কঠিন হৃদয়ের মেয়ে তৃষ্ণা!
.
.
হতদন্তের মতো ছুটে চলছি আমি হাস্পাতালের দিকে। আমি যে মা! আমার কলিজার টুকরো সন্তান যে হাস্পাতালে অপেক্ষায় আছে আমার। বুকের ভিতরের অস্থিরতা কিছুতেই কমছেনা। মনে পড়ছে যখন কলেজে পড়তাম তখন কলেজ থেকে ফিরতে একটু দেরি হলেই বাবা চিন্তা শুরু করে দিত। তখন বাবা কে বকা দিতাম এরকম অযথা চিন্তা করার কোনো মানে হয়। কিন্তু আজ পরিস্থিতির মুখে দাড়িয়ে বুঝতে পারছি সন্তান কি জিনিস। হাস্পাতাল থেকে বলেছে আমার রুপক ভালো আছে তবুও যে আমার মন মানছেনা। সব আমার জন্যই হয়েছে, আমারই ভুল হয়েছে আমার রুপকের বায়না শুনে ওকে খেলতে পাঠানো উচিৎ হয়নি। আজ যদি আমি রুপক কে চোখে চোখে রাখতাম তাহলে আমার সোনা টা এইভাবে এক্সিডেন্ট হতোনা। আমার ছোট সোনা নিশ্চই অনেক ভয় পেয়েছে। সব আমার জন্য, আমি ওর খেয়াল রাখতে পারিনা। খুব খারাপ মা আমি খুব খারাপ। এইভাবে নিজেকে বকা দিতে থাকে রুপশা। আমার ওইটুকু বাচ্ছা এতোক্ষন কি করে আমাকে ছাড়া আছে। এতক্ষন নিশ্চই কেদে কেদে অস্থির হয়ে পড়েছে। বাবা তো বিকালে হাটতে বেরিয়েছেন আমি তো তাড়াহুড়ায় বাবা কে বলতে ভুলে গেছি। গাড়ি টা হাস্পাতালের সামনে থামতেই আমি প্রায় লাফিয়ে নেমে পড়লাম। আজ মনে হচ্ছে পথ টা যেন ফুরাতেই চাচ্ছেনা। রুপক যে আমার বেচে থাকার একমাত্র কারন, ওর কিছু হলে আমি কি করে বাঁচবো??
রিশেপ্সনে গিয়ে হাপাতে হাপাতে জিজ্ঞাস করলাম,
,
:– ম্যেডাম আমার রুপক….কোথায়?
,
:– ওয়ান মিনিট ম্যেম। রুপক ৩০২ রুমে আছে।
,
:– জি ধন্যবাদ।
,
সিড়ি বেয়ে উপরের দিকে যতই উঠছি অস্থিরতা, ভয়ে আমার হাত পা জমে যাচ্ছে। বার বার কলিজার পানি শুকিয়ে যাচ্ছে। শরিল টা যেন দম নেওয়া ছেড়ে দিয়েছে। রুপাঞ্জন আর রুপকের এতোক্ষনে অনেক ভাব হয়ে গেছে। তখনই মাগরিবের আজান দেয়। আর রুপাঞ্জন নামাজ পড়ার জন্য বেরিয়ে পড়ে। কিন্তু রুপক ওর থেকে প্রমিস নেয় যে আবার আসতে হবে। তাই রুপাঞ্জন বাধ্য হয় রুপক কে প্রমিস করে যে নামাজ পরেই ফিরে আসছে। রুপাঞ্জনের ও ইচ্ছা করছেনা রুপক কে ছেড়ে যেতে। কতো মায়া এই বাচ্ছটার কথায়। কেমন যেন নেশা কাজ করে, বার বার কথা বলতে ইচ্ছা করে। রুপাঞ্জন বাম দিকের সিড়ি দিয়ে নিচে নামে আর রুপশা ডান দিক থেকে দৌড়ে উপরে আসে। ৩০২ নাম্বার রুম চোখে পড়তেই তাড়াতাড়ি দরজা খুলে ভিতরে ডুকে। নিজের মানিক রুপক কে দেখে রুপশার দেহে যেন প্রান ফিরে আসে। সে ছেলেটা এক ঝটকায় কোলে নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে।
,
:– আমার সোনা, আমার প্রান ” তুই ঠিক আছিস তো?? তুই কেন ওইভাবে বেরিয়েছিলি বল? তোর কিছু হলে মাম্মামের কি হতো বল? মাম্মাম যে তোকে নিয়েই বেচে আছে। আমারই ভুল আমি আর তোকে কখন ও নিজের থেকে আলাদা করবোনা।
,
:– আর এমন হবেনা মাম্মাম। তুমি প্লিস কেদোনা। আমার কষ্ট হয়।
,
:– আর তুই বুঝিসনি তোর কিছু হলে তোর মাম্মাম কতো কষ্ট পাবে। কেন এতো জালাস আমায়??
,
:– মাম্মাম এত্তগুলা সরি। আমি আর কখন ও বের হবোনা প্রমিস।
,
রুপশা ছেলের কপালে চুমু দিয়ে আবার ওকে বুকে জড়িয়ে নেয় শক্ত করে। যেন ছেড়ে দিলেই কোথাও চলে যাবে। তখনইই একটা নার্স এসে বলে,
,
:– ম্যেম আপনার ছেলে অনেক লাকি। যার গাড়ির সাথে ওর এক্সিডেন্ট হয় উনি নিজেই ওকে হস্পিটালে নিয়ে আসেন আর ওর এতো কেয়ার নেন যেন রুপক ওনার নিজের কেউ। উনি না থাকলে রুপকের পায়ে বড় ফ্রেকচার হতে পারতো। উনি সময় মতো নিয়ে আসায় রুপক এখন ভালো আছে। কালকেই ওকে রিলিজ করা হবে।
,
:– Thank you so much…আপনারা আমার ছেলের এতো খেয়াল রেখেছেন।
,
:– আরে থ্যেংক্স আমাদের বলছেন ওই লোকটা কে বলুন যার জন্য আপনার ছেলে বেচে আছে।
,
:– উনি এখন কোথায় দেখছিনা যে।
,
:– উনি বোধহয় নামাজ পড়তে গেছেন এক্ষুনি চলে আসবে।
,
:- ওহহ ওকে।
,
নার্স যেতেই রুপশা ভাবে লোকটা সত্যি তার অনেক বড় উপকার করেছে। একটা ধন্যবাদ ও তো দেওয়াই যায়। তখনিই রুপক আবার বলে উঠে,
,
:– মাম্মাম জানো ওই আংকেল অনেক গুলা ভালো।
,
:– তাই?
,
:- হুম জানো তুমি আসার আগ পর্যন্ত উনি আমাকে ভুতের গল্প শুনিয়েছেন। আর জানো কালেমা তাইয়েবা তুমি আমাকে এতো বকা দিয়ে ও শিখাতে পারোনি আর উনি আমাকে খুব সহজে শিখিয়েছেন । শুনবে…………
এই বলে রুপক ওর মাম্মাম কে কালেমা তাইয়েবা শুনায়। রুপশা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। সত্যি তো সে অনেক বকে ও রুপক কে শুদ্ধ উচ্চারন শিখাতে পারেনি। অথচ লোকটা এই কিছুক্ষনের মধ্যে এতো সুন্দর তেলাওয়াত শিখিয়ে দিল। এবার লোকটা কে দেখার আগ্রহ কয়েক গুন বেড়ে গেল রুপশার। রুপক কে লোকটা আজই মাত্র দেখল এরমধ্যে এতো ক্লোজ হয়ে গেল। রুপক তো তখন থেকে ওই আংকেলের গল্প করে যাচ্ছে। আমি ভাবলাম আমার ছেলে আমাকে ছাড়া কাঁদছিল কিন্তু ওর কথা শুনে মনে হচ্ছে আজ আমি না এলেও চলতো। এতো বেশি ভালোবেসে ফেলল রুপক তাকে।
অন্যদিকে রুপাঞ্জন মুনাজাতে আজ ও প্রতিদিনের ন্যেয় কেদে কেদে দোয়া করছে। আল্লাহ আর কতো শাস্তি দিবে তুমি আমায়? আর কত ধৈর্য পরিক্ষা নেবে তুমি আমার? আমি তো আমার পাপ মোচনের জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করেছি। মাবুদ, আমি আর পারছিনা আমার পরিবার থেকে দুরে থাকতে। তুমি।যদি সত্যি আমায় ক্ষমা করে থাকো তাহলে শিঘ্রিই আমার প্রিয়তমা স্ত্রীর সাথে আমার পুর্নমিলন ঘটিয়ে দাও। মুনাজাত শেষ করে রুপাঞ্জন হাস্পতালের দিকে এগোয়।
আমি রুপকের দিকে মুখ করে বসে আছি। তখনই পিছন থেকে দরজা খুলার আওয়াজ পেলাম। সাথে সাথে রুপক চেচিয়ে উঠল,
,
:– মাম্মাম,,ভালো আংকেল এসে গেছে।
,
রুপাঞ্জন পিছন থেকে একটা মহিলা কে দেখে নিজের দৃষ্টি নামিয়ে নেয়। রুপশা আস্তে আস্তে পিছনে ঘুরে তাকায়। প্রথমেই তার চোখ পড়ে রুপাঞ্জনের পায়ের দিকে, লোকটা নিশ্চই ফরেজগার টাকনুর উপরে পেন্ট পরেছে। পায়ের দিক থেকে চোখ সরিয়ে রুপশা বলতে শুরু করে,
,
:– আপনাকে যে কি বলে ধন্যবাদ…….
রুপশা দৃষ্টি লোকটার দিকে পড়তেই সে বাক্যরুদ্ধ হয়ে যায়। সমস্ত ভাষা এলোমেলো হয়ে যায়। এই কাকে দেখছে সে?? এতোগুলা বছর পর উনি, এইভাবে। কতোটা বদলে গেছেন উনি। আমি যে আগের রুপাঞ্জন খানের সাথে এখন কার রুপাঞ্জন খান কে মিলাতেই পারছিনা। আমার পা কাপা শুরু হয়ে গেছে। শরিলে রক্ত দ্রুত চলাচল করছে। মস্তিষ্ক যেন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এইভেবে আমি কি সত্যি ওনাকে দেখছি! কিন্তু লোকটা নিচের দিকেই তাকিয়ে আছে। আমার শরিল অনবরত কেঁপে চলছে। কাপার ফলে হাত থেকে ফোন টা পড়ে যায়। তখনই রুপাঞ্জন চোখ পড়ে রুপশার দিকে। দুজনের চোখাচোখি হতেই যেন সময় সেখানেই থেমে যায়! প্রকৃতি নিস্তব্দ হয়ে যায়। দুজন দুজন কে প্রান ভরে দেখছে যেন অনেকদিনের তৃষ্ণা আজ মিটিয়ে নিবে। রুপাঞ্জনের চোখে আলোর বন্যা দেখা যাচ্ছে, যাকে সে এতোদিন ধরে পাগলের মতো খুজে চলছে আজ সে রমনি তার সামনে দাড়িয়ে। আল্লাহ এতোদিনে তার দোয়া কবুল করেছে। রুপাঞ্জনের চোখে দেখা যাচ্ছে হারানো ভালোবাসা ফিরে পাওয়ার তৃপ্তি। সে অবাক হয়ে ভাবছে এটা কি সত্যি রুপশা?? ওর ভালো বাসা, ওর অর্ধাঙ্গিনী?? কিন্তু এখানে তো রুপকের মায়ের দাড়িয়ে থাকার কথা। তবে কি ফুফি ঠিক বলেছিল? রুপক…. রুপক আমার সন্তান??? আমার আর রুপশার ভালোবাসার ফল?
রুপশার চোখের তৃপ্তি যেন মুহুরতেই বিষাদে পরিনত হলো। তার একে একে মনে পড়তে লাগল রুপাঞ্জনের দেওয়া ক্ষত গুলা কথা, যে ক্ষত গুলার দাগ ওর মনে আজ ও শুকায়নি। আর কি করে ভুলে যাবে রুপশা যে রুপাঞ্জন এর বাবাই ওর মা কে খুন করিয়েছে। অসম্ভব! আমার রুপকের কোনো বাবা নেই। আমি একা ওর বাবা মা। আমার কোনো পিছুটান নেই, রুপক কে নিয়ে আমায় এখান থেকে অনেক দুরে চলে যেতে হবে। রুপশা তাড়াতাড়ি রুপক কে বেড থেকে কোলে তুলে নেয়। রুপাঞ্জন বুঝতে পারে রুপশা আজ ও ওকে ভুল বুঝছে। তাই ও চলে যাচ্ছে।তাই রুপাঞ্জন রুপশার পথ আটকে দাড়ালো। খুবই বেদনা ভরা কন্ঠে ডাকল,
,,– রুপশা!!!!!
,
ডাক টা যেন রুপশার হৃদয় গিয়ে আঘাত করলো। কতো নেশা এই ডাকের মাঝে। কিন্ত না সে আর কোনো মিথ্যা মায়ায় জড়াবেনা নিজেকে। সব মিথ্যা, সব!! এই লোকটা কোনোদিন বদলাতে পারেনা। রুপশা সামনের দিকে পা বাড়ালে রুপাঞ্জন ওর হাত টেনে ধরে,
,
:– রুপশা ফাসির আসামি কে সাঝা দেওয়ার আগে একবার জিজ্ঞাস করা হয় সে নিজের পক্ষে কিছু বলতে চায় কিনা। আমাকে কি একটা সুযোগ দিবেনা???
,
:– জিবন কোনো সিনেমা নয় রুপাঞ্জন খান! চাইলেই আপনি আর এটাকে নিজের মতো গড়তে পারবেন না। আমার জিবন অনেক বদলে গেছে। সেখানে রুপাঞ্জন খান নামক কোনো পিছুটান নেই!
,
:– তুমি কি এটা অসিকার করতে পারবে যে রুপক আমার সন্তান নয়???? তার শরিলে আমার রক্ত চলাচল করছেনা।
,
এই প্রশ্ন শুনে রুপশা থমকে যায়। তারপর ও নিজেকে সামলে বলে,
,
:– না! রুপক শুধু আমার সন্তান!! সবাই জানে ওর বাবা মারা গেছে। এখন আমি ওর মা আর আমি ওর বাবা।
,
রুপাঞ্জনের ভিতর টা দুমড়ে মুছড়ে যায় কথা টা শুনে। খুবই আঘাত পায়, রুপশা তাকে এতো টা ঘৃন্না করে যে তাকে সবাইর কাছে মৃত ঘোষনা করেছে। রুপাঞ্জন চোখের পানি মুছে আবার বলে,
,
:– ঠিকই বলেছো তুমি, এতোদিন আমি জিবন্ত লাশ হয়ে ছিলাম তোমাকে ছাড়া। প্রত্যেক টা দিন, প্রত্যক টা রাত কতো টা ঝন্ত্রনা সহ্য করেছি শুধু মাত্র আমার আল্লাহ সাক্ষি।
,
:– আপনি এখন এইসব বলে কি প্রমান করতে চান? যেতে দিন আমাদের।
,
:– আল্লাহর দোহাই লাগে তোমার পুরো কথা শুনে নাও। চারবছর আগে তুমি চলে যাওয়ার আমি ধীরে ধীরে বুঝতে পারি তুমি আমার জিবনে কি ছিলে। ভেবেছিলাম তোমাকে কষ্ট দিয়ে আমি আনন্দ পাব তৃপ্তি পাবো কিন্তু না আমি ভুল ছিলাম। আমি তোমাকে কষ্ট দিতে গিয়ে নিজের অজান্তে নিজেকেই কষ্ট দিয়ে ফেলেছিলাম। ধীরে ধীরে বুঝতে পারি তোমার সাথে ভালোবসার অভিনয় করতে গিয়ে আমি অজান্তেই তোমার নেশায় জড়িয়ে পড়ি। কিন্তু ততক্ষনে অনেক দেরি হয়ে গেছে। আমার পুরো দুনিয়া এলো মেলো হয়ে যায়, পাগলের মত হয়ে যাই। তোমার নেশা আমায় পাগল করে দিচ্ছিল। কিচ্ছু ভালো লাগছিল না। ধীরে ধীরে যখন একটু সুস্থ হই তখন একদিন ফুফি খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাকে হাস্পাতালে নেওয়ার পর হঠাৎ করে ফুফি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যায়। খুব খুশি ছিলাম সেদিন কিন্তু ফুফি আমায় চড় মেরে মুখ ফিরিয়ে নেয়। কেন জানো?? তোমাকে কষ্ট দিয়েছি বলে, যেখানে তুমি কোনো দোষ করোনি। তারপর ফুফির বলা প্রত্যেক টা কথা রুপাঞ্জন রুপশা কে বলে। যে একটা ভুল ধারনা কে আশ্রয় করে আজ এতগুলা জিবন বিধস্ত।রুপশা সব শুনে দপাশ কে বেডে বসে পড়ে। রুপক অবাক হয়ে দেখছে ওর মাম্মাম কে। ওর ছোট মাথায় কিছুই ডুকছেনা।
তারপর রুপাঞ্জন আবার বলতে শুরু করে,
,
ফুফি বলে তোমার সিমটম দেখে ওনার সন্দেহ হয় তুমি প্র্যেগনেন্ট। সেদিন আরো ভেঙে পড়ি। তারপর পাগলেএ মতো খুজতে থাকি। পুরো ১ বছর খুজেও তোমায় কোথাও পেলাম না। একদিন ফুফি আমাকে বলে, আল্লাহর কাছে চাইতে, তিনি কাউকে খালি হাতে ফিরিয়ে দেননা। তোর পাপের ক্ষমা চাইলে নিশ্চই উনি তোকে ক্ষমা করবে। সেদিন থেকে দীনের পথে ফিরে আসি। তখন থেকে আজ অবদি এইটাই দোয়া করেছি যাতে তোমাদের পেয়ে যাই!!
এইটুকু বলে রুপাঞ্জন থামে। তারপর হাটু গেড়ে বসে বলে,
,
:– আমায় ক্ষমা করে দাও রুপশা!!! আমি তোমাকে ভালোবাসি!!
,
,
,
,
আজ এইটুকু। কেমন লাগল জানাবেন। আর রুপশার কি রুপাঞ্জন কে ক্ষমা করা উচিৎ?? মতামত জানান।
,
# ধন্যবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here