#আশ্রিতা🌿
Sumana Easmin
পর্ব পাঁচ
হিমু আয়না থেকে মুখ নামিয়ে ধীরে ধীরে পেছনে ঘুরতে লাগলো। ভয়ে ওর ভেতরে ঠক্ ঠক্ করে কাঁপছে। কয়েক সেকেন্ড পর ও পেছনে তাকাতেই দেখলো কংকা এক মনে খাবার খাচ্ছে। ও একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে কংকার কাছ হতে কয়েক হাত দূরে গিয়ে বসলো।
কংকা খাওয়া শেষে প্লেট রাখার জন্য কিচেনে চলে গেলো। যাওয়ার সময় একবার হিমুর দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দিয়ে চলে গেলো। রহস্যে ভরা সেই হাসি।
যতোই সময় যাচ্ছে হিমুর ভয় ততোই বাড়ছে। আর মাথার মধ্যে হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।
কংকা কোন স্বাভাবিক মানুষ নয়। আয়নাতে ওকে একদম বয়স্ক বুড়ির মতো লাগছিলো। তাহলে কংকা কে? কেনই বা ওর সাথে এমন লুকোচুরি খেলছে? হিমু আর এই বিষয় টা নিয়ে ভাবতে পারছে না। ওর মাথা টলমল করছে। দুশ্চিন্তাই ও চোখ দিয়ে সরষে ফুল দেখছে।
কংকা কিচেনে যেতে যেতে হিমুর কথা ভাবতে লাগলো। হিমু ওকে আয়নায় যখন দেখেছিলো তখন কংকা সেটা বুঝতে পেরেছিলো যে হিমু ওকে দেখছে। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরী হয়ে যাওয়ায় ওর পক্ষে রুপ বদল করা সম্ভব হয়নি। রুপ বদল করতে গিয়ে যদি হিমু আরো ভয় পেয়ে যায় সেজন্য ও নিরুপাই হয়ে চুপ চাপ বসে ছিলো।
হিমু যে এখন ওকে নিয়ে আকাশ পাতাল সমান করে দুশ্চিন্তা করছে আর ভয় পাচ্ছে সেটা কংকা বুঝতে পারছে। কিন্তু ওর মাথায় এখন কোন আইডিয়া আসছেনা হিমুকে সান্ত্বনা দেওয়ার মতো।
কংকা একবার মনে মনে ভাবছে হিমুকে বলে দিবে যে সে মানুষ নয় রক্ত চোষা পিশাচিনী। আর একবার মনে মনে ভাবছে যদি সত্যি কথা বলে দিলে হিমু ওকে ছেড়ে চলে যায়, তাহলে কি হবে?
এসব চিন্তা করতে করতে কংকা হিমুর রুমে চলে গেলো। এদিকে হিমু চোখ বুজে দুশ্চিন্তার সাগরে ডুবে গিয়েছিলো। কংকার পায়ের শব্দ শুনে সে চোখ মেলে তাকালো।
কংকা হিমুর পার্শে গিয়ে বসলো। হিমু আবার চোখ বন্ধ করে ভাবতে লাগলো। কংকা হিমুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল-
“তুমি কি কোন বিষয় নিয়ে খুব চিন্তিত হয়ে আছো?”
হিমু কোন উত্তর দিলোনা। কংকা ওর থেকে কোন উত্তর না পেয়ে ঘাবড়ে গেলো।
একটুপর সায়লা বেগম (হিমুর মা) ওদের রুমে আসলো। ওনাকে দেখে কংকা দাঁড়িয়ে পড়ল। হিমু বিছানা থেকে উঠে বসলো। উনি হিমুর পাশে এসে বসে কংকার দিকে তাকিয়ে বললেন-
“হুঠ হাঠ করে এতোকিছু হয়ে গেলো। তুই কি খুশি হয়েছিস মা?”
“হ্যাঁ মা। আমি অনেক খুশি হয়েছি!”
কংকার কথা শুনে উনি আকাশ থেকে পরলেন। যে মেয়ে কোনদিন কোন প্রশ্নের উত্তর দেয়না, শুধু চুপচাপ বোকার মতো তাকিয়ে থাকে সে মেয়ে কিনা আজ প্রশ্ন করার সাথে সাথে উত্তর দিয়ে দিলো?
উনি অবাক হয়ে হিমুর দিকে তাকিয়ে কি যেনো বলতে চেয়েও বললেন না। তারপর হিমুকে কৌতূহল হয়ে জিজ্ঞেস করলেন-
“হ্যা রে, তোর বাবা তোকে পরে কিছু বলে টলে ছিলো?
“না কিছুই তো বলেনি। শুধু আমাকে দেখলে একটু মুখটা পেঁচার মতো করে রাখছেন, এই আরকি!”
অন্য সময় হলো এই কথাটা বলেই হিমু উচ্চস্বরে হাসতে লাগতো। কিন্তু এখন ও তার কিছুই করলোনা।
সায়লা বেগম দুজনের দিকে তাকিয়ে বললেন-
“আজ দুপুরে খেয়ে দেয়ে আমরা রওনা দিবো।”
পরক্ষনেই হিমুর দিকে তাকিয়ে বলল-
“তোর বাবা যে রেগে আছেন। কখন কি করতে কি করে বসেন, তার নাই ঠিক। তাই মান-সন্মান থাকতে আগে ভাগে চলে যেতে হবে। তুই কি বলিস?”
হিমু একটা শুকনো হাসি দিয়ে বলল-
“ঠিকই বলেছো মা। আমারো এখানে আর ভালো লাগছে না।”
সায়লা বেগম চলে যেতে ধরে আবার থেমে গেলেন। তারপর কংকার দিকে তাকিয়ে বললেন-
“একটু পর ডাইনিংয়ে আসিস! তোকে দেখার জন্য অনেকেই এসে বসে আছে।”
কংকা মাথা নিচু করে উত্তর দিলো-
“ঠিক আছে মা!”
সায়লা বেগম চলে যাওয়ার পর কংকা ভেতর থেকে দরজা লক করে দিলো। তারপর হিমুর পাশে এসে বসে নরম কন্ঠে বলল-
“তুমি এমন চুপচাপ হয়ে কি ভাবছো আমায় বলোতো?”
হিমু কোন উত্তর দিলোনা। ও আগের মতো আবার চোখ বন্ধ করে বিছানায় চুপচাপ শুয়ে রইলো।
হিমুকে অমন চুপ থাকতে দেখে কংকা কিছুটা রাগান্বিত হয়ে বলল-
“বলোনা? কি ভাবছো এতো?”
হিমু তবুও কোন উত্তর দিলোনা। ও মনে মনে রাগ-জেদ আর অভিমানে নিজেকে গুমরে গুমরে মারছে। কংকা সেটা আন্দাজ করতে পেরে হিমুর ঠোঁটের উপরে একটা আঙুল রেখে বলল-
“আমি তোমায় এতোটা ভালোবাসি আর তুমি কিনা তোমার সামান্য মন খারাপের কথা টাও আমায় বলতে পারছো না। ভালোবাসা দেখছি মিথ্যা হয়ে গলো!”
হিমু এবার চোখ মেলে ওর ঠোঁটের উপর থেকে কংকার হাত সরিয়ে দিয়ে বলল-
“সব কিছুই মিথ্যা হয়ে গেছে। ষোল আনার মধ্যে দুই আনা সত্য বাকি সবই মিথ্যা!”
হিমু কি মিন করে কথাটা বলল কংকা সেটা খুব ভালো করেই বুঝতে পারলো।
কংকার ভেতর ভয় ও হতাশা গ্রাশ করে ফেলল। ও হিমুকে হারানোর ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পরলো।
হিমু কংকার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল-
“তোমার মুখ এমন শুকিয়ে গেলো কেনো?”
কংকা ঈষৎ মৃদু হেসে বলল-
“ষোল আনার মধ্যে বাকি যে দুই আনা সত্যি থাকে সেই সত্যির নামে কসম খেয়ে বলছি, আমি তোমায় নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসি!”
হিমু একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বলল-
“জানি!”
হিমু কংকাকে টাচ্ করতে ভয় পাচ্ছে। ও এখন কংকার কাছ থেকে যতো দুরে সম্ভব থাকার চেষ্টা করছে। তাই সে হেসে হেসে কংকাকে বলল-
“আমি জানি আমার পরী টা আমায় কত্তোটা ভালোবাসে। কিন্তু আমাদের ভালোবাসা দিয়ে কি আর দিন চলবে? বাবা কেও তো মেনে নিতে হবে তাইনা?”
“হুম!”
“তুমি এক কাজ করো। মা তোমায় ডেকে গেলো একটু আগে, তুমি ওখানে চলে যাও। আর আমি একটু বাবার সাথে কথা বলি!”
“আচ্ছা!”
হিমুর আচরনে কংকার মন একটু হালকা হলো।
কংকা চলে যাওয়ার আগে হিমুর মুখের কাছে ওর ঠোঁট টা এগিয়ে নিয়ে গেলো। যাতে হিমু ওকে কিস্ করে। কিন্তু হিমু কিস্ করলো না। বরং অন্যমনস্ক হয়ে বিষয়টা এরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলো।
কংকা সেটা বুঝতে পেরে মনে মনে খুব আঘাত পেলো। চোখে পানি চলে এসেছে ওর। সে কোনমতে চোখের পানি লুকিয়ে বিষন্ন মন নিয়ে চলে যেতে ধরলো। হিমু কংকার মুখের দিকে তাকিয়ে সেটা বুঝতে পারলো। তাই ওর ভেতরেও খারাপ লাগা কাজ করলো। হাজারো হোক সে তো কংকাকে নিজের জীবনের চাইতেও বেশি ভালোবাসে। কংকা কষ্ট পায় এমন কাজ সে কক্ষনো করতে পারেনা। আর আজ আয়নায় কি দেখলো না দেখলো তাতেই সব ভালোবাসা নষ্ট হয়ে গেলো?
কংকা যদি মানুষ না হয়ে অন্য কিছুই হয়ে থাকে, তবে তার এতো ঘাবড়ানোর কি আছে? ওর সামান্য একটু নিরবতায় যে কংকার চোখে পানি চলে আসে সেই কংকা ওর কেমনে ক্ষতি করতে পারে? কেমনে অতো নিষ্ঠুর হতে পারে? কেমনে অতো ভয়ংকর আর অমানবিক হতে পারে? যদি তাই হতো তাহলে এতোদিনে কারো কোন ক্ষতি করলোনা কেনো?
হিমু এসব ভাবতে ভাবতে বিছানা থেকে উঠে বর্ষাকে যেতে নিষেধ করলো। কংকা হিমুর কথা শুনতে পেয়েও চলে যেতে লাগলো। অগ্যতা হিমু দ্রুত পায়ে কংকার কাছে গিয়ে ওর একটা হাত ধরে ফেললো। তারপর কংকাকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় এনে শুইয়ে দিলো।
কংকা এক হাত দিয়ে দুই চোখ ঢেকে রেখে কান্না করছে। আর এক হাত দিয়ে হিমুর কাঁধে ধরে রেখেছে।
হিমু কংকার চোখ থেকে ওর হাতটা সরিয়ে দিতেই কংকা ওর দিকে তাকালো। হিমু দেখলো কংকার চোখের তারা আজ গভীর কালো হয়ে গেছে। সে এতোটা কালো চোখের তারা এর আগে কখনো দেখেনি। তার ভেতরটা ভয়ে একবার কেঁপে উঠল। কিন্তু পরক্ষণেই সে নিজেকে সামলে নিয়ে কংকাকে কিস্ করতে লাগল।
কংকাকে স্পর্শ করলেই সে অন্য রকম মুডে চলে যায়।
কংকা ওকে গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। কিস্ করতে দিচ্ছেনা। শেষপর্যন্ত ও কংকার পাশে শুয়ে বলল-
“কি হলো? রাগ কমেনি?”
কংকা চুপ করে আছে।
হিমু কংকার দিকে তাকিয়ে বলল-
“তুমি কান্না করলে কিন্তু আমার অসহ্য লাগে। তোমার কান্না আমি সহ্য করতে পারি না। হয় কান্না থামাও নয়তো আমি তোমার আড়ালে যাই!”
কংকা চোখ মুছতে মুছতে বলল-
“তাহলে তুমি বলো তখন আমার সাথে কেনো অমন করলে?”
হিমু কংকাকে জড়িয়ে ধরে বলল-
“তখন তো আমি বাবাকে নিয়ে টেনশন করছিলাম! তাই চুপ করে ছিলাম।”
“মিথ্যে!”
হিমু আর কংকাকে কোন কথা বলার সুযোগ দিলোনা। কারন কথা বাড়ালেই সে ধরা পরে যাবে, সে তখন কেনো ওর সাথে অমন ব্যবহার করেছিলো।
তাই সে কংকার ঠোঁটে কিস্ করতে লাগলো। একটুপর পর সে কংকার শরীর স্পর্শ করতেই ফিল করলো কংকার শরীরের চামড়া গুলো কেমন জানি কুঁচকানো টাইপের মনে হচ্ছে। এরকম চামড়া সচরাচর বয়স্ক মানুষের শরীরে দেখা যায়। হিমু সাথে সাথে হাত সরিয়ে দেখতে চাইলো যে ওর অনুভূতির সাথে কোন সামঞ্জস্যতা আছে না কি। সত্যিই কি চামড়া গুলো অমন কুঁচকানো কি না!”
হিমু কংকাকে ছেড়ে দিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসে পরলো। তারপর কংকার শাড়ি খুলতে লাগলো। হিমুর এমন কান্ড দেখে কংকা অবাক হয়ে বলল-
“দিনের বেলায় কি করছো এসব?”
হিমু কোন কথা বলল না। সে এক এক করে কংকার সব কাপড় খুলে ফেলতে লাগলো।
কংকা হিমুর মনোভাব বুঝতে পেরে সাথে সাথে ও যুবতীর দেহধারন করলো।
হিমু সমস্ত কাপড় খোলা শেষে দেখলো, সব কিছুই ঠিক ঠাক আছে! সে যেমন ভেবেছিলো তেমন কিছুই নয়। তার ভাবনা চিন্তা মিথ্যা হওয়াতে সে মনে মনে খুব খুশি হলো।
কিন্তু কংকা ভেতরে ভেতরে ছটফট করতে লাগলো। সে ইদানীং বেশিক্ষণ পর্যন্ত অন্য রুপধারন করে থাকতে পারছে না। কারন ওর বয়স অনুযায়ী ওর শরীরে যতোটা রক্তের প্রয়োজন ছিলো তার দশ ভাগের এক ভাগও ওর শরীরে নেই।
[গল্পটি পরে কেমন লেগেছে সেটা পারলে কমেন্টে বলিয়েন। দয়া করে কেউ ইনবক্সে বলতে আসবেন না প্লিজ]
To be continue..