#নিষিদ্ধ_সে
(৮)+(৯)
..
নির্মাঃ কি বললি তুই এই মাত্র?
সায়রঃ পা পাটক্ষেতে____
নির্মাঃ নিষ্ঠা ও সত্যিই তোমায় প্রপোজ করলো?
আমি হাসতে হাসতে নিরীহের মতো মাথা নাড়লাম।
সায়রঃ ঐ মিথ্যে বলিস কেন? আমি____
নির্মা আপু গজগজ করতে করতে বকতে লাগলো সায়র ভাইকে। মাঝখান থেকে কেটে পরলাম। ফোনের রিংটোনে ফোন বের করে দেখি মা কল করেছে।
আমিঃ হ্যালো মা?
মাঃ [ধমকে] কল ধরতে এতোক্ষন লাগে?
আমিঃ কই সাথে সাথেই তো ধরলাম।
মাঃ তুই এখনি চট্টগ্রাম থেকে রওনা দে ঢাকায়।
আমিঃ মানে? সায়রির বিয়ে____
মাঃ তোর ভাইয়ের বিয়ে আগে না সায়রির বিয়ে আগে?
আমিঃ [চিল্লিয়ে] ভাইয়া বিয়ে করে ফেলেছে?
মাঃ উমহু করবে! তুই বাসায় আয় তাড়াতাড়ি।
আমিঃ [কাঁদোকাঁদো হয়ে] আমি কি সায়রির বিয়ে খাবো না তাহলে?
মাঃ আরে পরশু আমাদের সাথে আবার যাবি। এখুনি তুই ঢাকায় আয়!
আমিঃ [দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে] আচ্ছা আসছি।
ফোন কেটে পিছন ঘুরে দেখি মার্কেটের সবাই কেমন করে তাকিয়ে। একটু দূরে রনক ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে কৌতুহলি হয়ে। সায়রিকে ফোন লাগালাম। ফোন তুললো না সে। শেষে ভাইয়ার দিকে এগিয়ে গেলাম।
আমিঃ আমাকে ঢাকায় যেতে হবে।
রনকঃ [ভ্রু কুচকে] কোন সমস্যা হয়েছে?
আমিঃ [হেসে] ভাইয়াকে মনে হয় বিয়ে করার ক্রিমি কামড়েছে! সায়রিকে ফোনে পাচ্ছি না আপনি একটু কষ্ট করে বলে দিয়েন।
রনকঃ মেসেজ করে দাও। চলো তোমাকে বাসায় পৌছে দেই।
ব্যাগ গুছিয়ে আন্টিকে বলে রওনা হয়েছি। রনক ভাইয়া আমাকে স্টেশন পর্যন্ত এগিয়ে দিলো। টিকেট কেটে হাতে চিপস, চকলেট খাবারের প্যাকেট এনে ধরিয়ে দিয়েছে। বাসে উঠতে সিট ঠিক করে দিয়ে নিচে নামলেন।
আমিঃ থাংকু ভাইয়া!
রনকঃ বাস তো ছাড়বে কিছুক্ষন পর। ঝগড়া করো না আবার কারোর সাথে সায়র ভেবে।
আমি হাসতে লাগলাম মাথা নেড়ে। উনি মৃদু হেসে আমার জানালার কাছে এসে দাঁড়ালেন।
রনকঃ আগামী কাল যদি কল পেয়ে কারোর খাপছাড়া কথাবার্তা শুনো তাহলে অবাক হয়ো না।
আশ্চর্য হয়ে তাকালাম ভাইয়ার দিকে। এই সময়ে এই ডায়লগ কেন? হাত নেড়ে চলে যেতে লাগলেন।
আমিঃ [জানলা দিয়ে মুখ বের করে] ভাইয়া, কারনটা তো বলে যান!
রনকঃ [পেছন মুড়ে] সময় আসলে ঠিকই বুঝতে পারবে!
•
•
•
রেগে সোফাতে বসে আছি। ভাইয়া সামনে বসে হাসছে। আম্মু তখন থেকে ফ্রেশ হতে তাড়া দিচ্ছে। এখনো ঠায় বসে আছি। কিসের বিয়ে কিসের কি? আমাকে শুধু শুধু চট্টগ্রাম থেকে এনেছে আম্মু। দুইদিনের জন্য শুধু শুধু সায়রি মেয়েটাকে মন খারাপ করানো।
নিভৃতঃ আম্মু সিরিয়াসলি তোকে ঐটা বলে আনিয়েছে যে আমার বিয়ে হচ্ছে?
আমিঃ তা নয়তো কি? বলেছে তুই নাকি বিয়ে করছিস!
নিভৃতঃ হাহাহা, তোর মা আসলেও পাগল!
আমিঃ [উঠে দাঁড়িয়ে] ধুরু! আমি আবারো রওনা দিচ্ছি। আমার ভালো লাগছে না এখানে!
আম্মু রান্নাঘর থেকে খুন্তি হাতে তেড়ে এলো। আমি লাফিয়ে লাফিয়ে ভাইয়ার পিছনে গিয়ে দাঁড়ালাম।
আম্মুঃ কি বললি? আবার বল! মানুষের বাসায় এতোদিন থাকার এতো শখ কিসের তোর? তার মধ্যে বললাম তোর খালামনির বাসায় গিয়ে থাক। তা না সে ঐখানেই থাকবে!
আমিঃ ওরা কি পর? আমার বেস্টফ্রেন্ডের বাসাই তো।
আম্মুঃ তাতে কি হয়েছে? ওদের আত্মীয় সজন এসে তোকে বিনা নোটিশে থাকতে দেখলে সমালোচনা করবে না?
আমিঃ উফ আম্মু তুমি এর জন্য আনলে আমাকে?
আম্মুঃ নাহ, কালকে তোর ভাইয়ের জন্য মেয়ে দেখতে যাবো। রেডি হয়ে থাকিস। শুনেছি পাত্রীর নাকি সুদর্শন বড় ভাই আছে। পছন্দ হলে গছিয়ে দিয়ে আসবো তোকে কালকে।
আমিঃ আম্মু!
আম্মুঃ মেউ মেউ চেঁচাবি না। রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়।
আম্মু আবার রান্নাঘরে চলে গেলো। ভাইয়াকে পিঠে চিমটি কাটলাম সজোরে।
নিভৃতঃ আহ! নিষ্ঠা! লাগে তো।
আমিঃ শালা বিয়ের এতো তাড়া তোর! প্রেম করেও এরেঞ্জ ম্যারেজ করছিস লজ্জা লাগে না?
নিভৃতঃ [গালভরা হাসি নিয়ে মাথায় গাট্টা মেরে] তাকেই তো দেখতে যাচ্ছি!
আমিঃ [ব্যাগ ভাইয়ার দিকে ছুড়ে মেরে] এর জন্যই এতো লাড্ডু ফুটছে!
গোসল করে আয়নায় সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখছি। অবচেতন মন বারবার সায়র ভাইয়ের স্মৃতি চোখে মেলে ধরছে। চোখ বন্ধ করলেও উনার চেহেরা ভেসে উঠে। ভাবনায় যাই ভাবি ঘুরে ফিরে সেই সায়র সম্পর্কিত ভাবনা দিয়েই সমাপ্তি হচ্ছে তাদের। মনে খুব অযৌক্তিক একটা ইচ্ছে জাগছে।
আমিঃ [মাথা চেপে ধরে] ও খোদা! এই ছেলে তো দেখি মাথার ভিতর ভন ভন করা শুরু করেছে!
নিভৃতঃ সেই আনলাকি ছেলে কে রে?
মাথা ছেড়ে দরজার দিকে তাকালাম। ভাইয়া দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে।
আমিঃ [হেসে] এতো টিটকারি মেরে লাভ নাই। সেই ছেলেটা আগে থেকেই নিষিদ্ধ আমার জন্য!
ভাইয়া কতোক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে হেসে পাশে বসে গেলো। নিজের ফোন এগিয়ে দিলো আমার জন্য। অবাক হয়ে ভাইয়ার ফোন নিয়ে দেখি “ছোটু” লেখা জ্বলজ্বল করছে। লাইনে এখনো আছে।
আমিঃ ছোটু আবার কে?
নিভৃতঃ সায়র ফোন করেছে।
অবাক হয়ে ফোন স্ক্রিনে আবারো তাকালাম। কানে ঠেকালাম ফোন। কোন শব্দ নেই।
আমিঃ [ফোন কানে ঠেকিয়ে হাসতে হাসতে] হ্যালো!
সায়রঃ কই তুই?
আমিঃ কি অসামাজিক কথা এগুলা? নিভৃত ভাইকে ফোন দিয়ে আমাকে যেহেতু পেয়েছেন তাহলে নিশ্চিত বাসায় আছি।
সায়রঃ থাপ্পড় খেয়েছিস কখনো? থাপড়ে গাল লাল করে দিবো। অসভ্য বেহায়া বদমেয়ে। সামাজিকতা কি বুঝিস? জঙলি কোথাকার!
আমিঃ এই গালিগুলো দেবার জন্য ফোন দিয়েছেন?
সায়রঃ তোকে বলতে হবে?
আমিঃ আজকেও কিছু খেয়েছেন নাকি?
সায়রঃ তুই বিরাট বড় একটা আজাইরা!
ফোন কেটে দিলেন। আমি ভ্রু কুচকে চেয়ে আছি। এইগুলো বলার জন্য ফোন দিলো। আজব! আমি দেখি সব পাগলের ভিড়ে তলিয়ে যাচ্ছি।
নিভৃতঃ কি বললো রে?
আমিঃ হুহ, গালি দিলো কয়েকটা! এই বেটা ফোন দিলে আর আমাকে দিবি না।
নিভৃতঃ [হাসতে হাসতে] এগুলোই ওর ইম্পর্টেন্ট কথা! আমাকে ফোন দিয়ে বেশ সিরিয়াস হয়ে বললো কি নাকি আছে তোকে বলার তুই ফোন বন্ধ করে রেখেছিস।
ভ্রু কুচকে অন্যদিকে তাকালাম। ভাইয়া মুচকি হাসি হেসে উঠে দাঁড়লো।
নিভৃতঃ সায়রই কি সে? [আমি চমকে তাকালাম] তার সাথে কথা বলার আগেই হাসছিলি অযথা!
আমিঃ [দীর্ঘশ্বাস ফেলে] আমার চয়েজ এতোটাও বাজে না!
নিভৃতঃ [রুম থেকে যেতে যেতে] আমার মনে হয় সেও তোকে পছন্দ করে!
ভাইয়া চলে গেলে দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। শেষ কথাটা সত্যি হলে খুব কি খারাপ হতো? ফোন অন করে দেখি বেশ কিছু কল এসেছে আননোন নাম্বার থেকে। বিছানায় পরে দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। নিষিদ্ধ হলেও আমার অনুভূতিগুলো তার জন্য ছন্নছাড়া হয়ে যাচ্ছে।
•
•
•
“নে এই শাড়ি পরে রেডি হয়ে নিস!”
ভ্রু কুচকে তাকালাম। সকালের খাবারও ঠিক মতো খেতে দিচ্ছে না। ভাইয়া, আব্বুরও সেম রিয়েকশন।
আম্মুঃ এটা পরে নিস।
আব্বুঃ মেয়েটা কি ছেলে দেখতে যাচ্ছে নাকি? ও কেন শুধু শুধু গরমে শাড়ি পরতে যাবে?
আম্মুঃ তোমার মেয়ে তো জীবনে প্রেম করলো না। ছেলের তো তাও বিয়ের সম্ভবনা আছে! এর তো সেইটাও নেই।
খাওয়া চুপচাপ চাবাতে লাগলাম। আব্বুর কথায় আম্মু শেষে শাড়ি নামক ঝামেলা থেকে রেহায় দিলো আমাকে। বেশ অসন্তুষ্ট তিনি আমার উপর। বুঝি না সব মায়েরা প্রেম বিরোধী আমার মা কেন এমন! পাত্রী দেখতে সোফায় বসে আছি। বেশ আলোচনা চলছে বড়দের মধ্যে। আমি পুরো বাসাটা স্ক্যান করে দেখছি। মাঝখানে আবার ফোন ভাইব্রেশন করে উঠলো। দেখি সায়রি কল দিচ্ছে। কল কেটে টেক্সট পাঠালাম ওকে। কিছুক্ষন পর আম্মুর তথাকথিত সেই “সুদর্শন” পুরুষ সামনে এসে বসলো। চা খেতে খেতে কাশি উঠে গেলো আমার। আম্মু পিঠ থাপড়াচ্ছে।
আমিঃ [ফিসফিসিয়ে] তুমি এই গর্ভবতী ছেলের জন্য আমায় সাজিয়ে আনতে চেয়েছিলে আম্মু? একে তো অলরেডি মেরিড লাগছে।
…..
(৯)
আমিঃ [ফিসফিসিয়ে] তুমি এই গর্ভবতী ছেলের জন্য আমায় সাজিয়ে আনতে চেয়েছিলে আম্মু? একে তো অলরেডি মেরিড লাগছে।
আম্মু আমাকে হাত পিছনে দিয়ে পিঠে মারলেন। মুখ কাচুমাচু করে তাকালাম।
আম্মুঃ [হেসে দাঁতে দাঁত চেপে] এরকম কমপ্লিমেন্ট দিচ্ছিস কেন? যদি তোকে এর সাথেই বিয়ে দেই?
পাশে ভাইয়া বসা ছিলো। আমাকে আর আম্মুকে ফিসফিসাতে মানা করলো। চুপ করে গেলাম। শুধু কটমট করে তাকালাম একবার আম্মুর দিকে। কিছুক্ষন পর আপুকে আনা হলে ড্যাবড্যাব করে চেয়ে রইলাম। ভাইয়া চিমটি কাটলো হাতে। পাশ ফিরে তাকিয়ে আবারো তাকালাম।
নিভৃতঃ আমার বউটা অনেক সুন্দর তাই না?
আমিঃ [হালকা চেঁচিয়ে] আপু তুমি রনক ভাইয়ার বোন?
বসা সেই গর্ভবতী ভাইয়া আর বাকি মুরব্বীগন আমার দিকে কেমন করে তাকাতে লাগলো। অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম। একটু বেশিই আওয়াজে বলে ফেলেছি। বসে থাকা পাত্রীর বাবা আমার দিকে প্রথম মুখভরা হাসি নিয়ে প্রশ্ন ছুড়লেন,
“তুমি রনককে চেনো?”
অপ্রস্তুত হাসি হেসে মাথা নাড়লাম। উনার প্রশ্নে আবারো স্বাভাবিক হয়ে এলো পুরো ঘরটা।
“রিধিতার ছোট সে। [বাবা মা’র দিকে ফিরে] এখন এক কম্পানিতে বেশ ভালো পদে আছে।”
আম্মু উৎসুক হয়ে আরো প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে লাগলো। এদিক আপু যে সামনে দাঁড়িয়ে তাতে হুস নেই। তিনি অদেখা “রনক” ভাইয়ার সুনামে বেশি আগ্রহী। আব্বু মৃদু হেসে ধাক্কা দিলে বিরক্তির সাথে চাইলো। আব্বু নিজেই আপুকে প্রশ্ন করতে লাগলে আম্মুর জ্ঞান আসলো। “রনক” ভাইয়া এখানে নেই দেখে বাসাটা থেকে বেরিয়ে কি আফসোস আম্মুর। আম্মুর আফসোসে আমারই রাস্তায় ভাঙ্গা থালি নিয়ে বসে হেলেদুলে গান গাইতে ইচ্ছে করছে। আব্বু পাকা কথা বলে এসেছেন ঐখানে। গাড়িতে বসে আম্মু শক্ত করে আমার হাত চেপে ধরলেন।
আম্মুঃ ছেলেটা কেমন রে দেখতে?
আমিঃ [একবার চেয়ে নিয়ে] তুমি কি এখন রনক ভাইয়াকে আমার সাথে ভাবছো সে ভুল মোটেও করো না।
আম্মুঃ কেন ছেলেটা তো ভালোই। সুদর্শন, ভালো চাকরি,,
আমিঃ [গ্লাস নামিয়ে বাইরে তাকিয়ে] একবার সুদর্শন খেতাবধারীকে দেখে সাধ মিটে নাই? আবারো সুদর্শন সুদর্শন করো!
আব্বুঃ তোর মা-র বুঝছিস মনে রং লেগেছে সারাদিন কি কি ছবি দেখে আর নিজে সেগুলো কল্পনা করে নেয়। বুড়ো হয়ে তো আর নিজে সেগুলো পূরণ করতে পারবে না তাই তোদের দিয়ে সাধ মেটায়। এতো কমনসেন্স ছাড়া মানুষ কিভাবে হয় বুঝি না। গেছে মেয়ে দেখতে ইন্টার্ভিউ নিয়ে এসেছে মেয়ের ছোট ভাইয়ের। [হাসতে হাসতে] ভাগ্যিস রনক ছেলেটা ছিলো না নাহলে তোর মা দেখার সাথে সাথে কবুল পরিয়ে নিতো কাজি ডেকে!
হাসতে লাগলাম পুরো গাড়ির সবাই। আম্মু আব্বুকে মেরে নিজেও হাসছেন।
আম্মুঃ আমার কতো শখ জানো? মেয়েটা আমার নিজের ভাইয়ের বিয়েতে মেয়ে পক্ষের সাথে মজা করতে গিয়ে প্রেমে পরবে। তারপর___
আব্বুঃ [হাততালি দিতে দিতে] ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ মা তুমি! মেয়ের প্রেমকাহিনী কল্পনা করে রেখেছো!
•
•
•
আমিঃ আম্মু! এতো শাড়ি ভরছো কেনো ব্যাগে?
আম্মুঃ আরে বেস্টফ্রেন্ডের মেয়ের বিয়ে শাড়ি ভরবো না বেশি করে?
আমিঃ [ভেংচে] বেস্টফ্রেন্ড বলে এখন উতলা হচ্ছো কেন? তুমিই না মানুষের বাসায় এতোদিন থাকে নাকি বলে নিয়ে এসেছো আমাকে! তখন মনে ছিলো না সেটা তোমার বেস্টফ্রেন্ডের বাসা?
আম্মুঃ চুপ থাক জ্ঞান দিবি না! তুই আমাকে পেটে ধরেছিস না আমি ধরেছি? নিজে তো ছোট্ট একটা ব্যাগ নিচ্ছিস! সেখানে কিছু আটে?
গাল ফুলিয়ে ভাইয়ার রুমে এসে গেলাম। ভাইয়া প্রেমালাপে ব্যস্ত। পিছে গিয়ে ফোন কেড়ে নিলাম টুপ করে। ভাইয়া চেচিয়ে উঠলো।
আমিঃ হ্যালো আপু বলছো?
রিধিতাঃ হুম। সব রেডি? কখন বেরোবে তোমরা?
আমিঃ আটটায় বেরোবো। তোমার ছোট ভাইয়ের ফ্রেন্ডের বোনের বিয়ে তুমি যাবে না?
রিধিতাঃ হাহাহাহা বহুত দূর সম্পর্ক হয়ে যায়। তাছাড়া বাসার কেউই তো যাচ্ছে না!
আমিঃ [লাফিয়ে ভাইয়ার বেডে উঠে বসে] আপু আমাদের সাথে চলো।
রিধিতাঃ এটা হয় নাকি?
আমিঃ আলবাদ হয়! তোমাকে দেখার জন্য আমি চট্টগ্রাম থেকে আসতে পারলে এটুকু পারবে না আমার জন্য?
রিধিতাঃ না গো আপু! বাবা মানবে না!
আমিঃ হিহিহি আরে আমার ফিল্মি আম্মু আছে না! তুমি যাবে নাকি সেটা বলো!
রিধিতাঃ আ আমি____
সামনে কোমড়ে হাত রেখে দাঁড়ানো ভাইয়ার দিকে তাকালাম। কণ্ঠ নামিয়ে আপুকে ফিসফিসিয়ে বলতে লাগলান,,,
“ভাইয়া যদি পাল্টি খায় ঐখানে গিয়ে?”
রিধিতাঃ মানে?
“ভাইয়ার যদি সেখানে গিয়ে সুন্দ্রী কোন আপুকে দেখে মাথা ঘুরে তোমাকে ভুলে যায়?”
রিধিতাঃ হাহাহাহা, মাথায় বারি মেরে আমাকে মনে করাবো!
“উফ, তুমি বড় নিরামিষ মানুষ! চলো না আপু! আমার সঙ্গী বলতে কেউ নেই ঐখানে! সায়রি তো নিজেই বউ সেজে থাকবে স্টেজে!”
রিধিতাঃ বাবা____
“তুমি যেতে চাও নাকি সেটা বলো!”
রিধিতাঃ হ্যা কিন্তু___
“আচ্ছা আমি আম্মুকে বলে দেই!”
আম্মুর কথায় আঙ্কেল বাধ্য হয়ে আপুকে যাওয়ার পাস দিয়ে দিলেন। গাড়ি আপুকে পাশে বসিয়ে ভাইয়াকে ড্রাইভারের পাশের সিটে পাঠিয়ে দিয়েছি। ভাইয়ার কি রাগ! সারা রাস্তা আপু আর আমি গল্প করতে করতে এসেছি। ভোর বেলায় চট্টগ্রাম পৌছুলে আম্মুকে বললাম নেমে যাবো। ঘুম এক্কেবারে উধাও হয়ে গেলো তার। রণমূর্তি হয়ে আমার দিকে চাইলো।
আম্মুঃ ভোর বেলায় ঢং ধরবি না যেতে হয় তো দিনের বেলা যাবি। এখন তোর খালামনির বাসায় গিয়ে উঠবো।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে চুপ করে গেলাম। বাসায় পৌছুতে খালামনি আমার লাফানো শুরু করবে এমন অবস্থা। একে তো আপু এসেছে তার উপর মা-কে বহুদিন পর পাওয়া। খালাতো ভাই মরার মতো ঘুমোচ্ছে রুমে। গিয়ে কানে সুরসুরি দিয়ে ভালো মানুষের মতো এসে গেছি।
•
•
•
আম্মুঃ [ধমকে] সোজা হয়ে হাট।
রেগে তাকালাম। এমনিতেই এসেছি একদম দেরি করে। না জানি বান্ধবীর হলুদ সন্ধ্যা শেষ হলো বলে! আর মধ্যে পরেছি শাড়ি! কোনদিন শাড়ি পরিনি তাই কুচিতে বারবার দেখে ঠিক করছিলাম। আম্মুর তাতে ঘোর বিরোধিতা। দরজা দিয়ে ঢুকতে মাথায় বারি খেলাম কারোর চওড়া বুকে!
আমিঃ আব্বে কে রে!
মাথা তুলে দেখি সায়র ভাই ফোন হাতে আমার দিকে চোখ বড় বড় করে চেয়ে। হলুদ পাঞ্জাবি সোজা হালকা বড় চুলগুলো জেল দিয়ে সুন্দর করে পিছনে নিলেও কিছু অবাধ্য চুল কপালে এসে পরছে। চোখ মুখ কেমন নির্বিকার লাগছে। আজকে ধাক্কা খেয়েও ঝগড়া করলো না! খুব আজব! আম্মু মাথায় মারলো আমার। মাথায় হাত বুলিয়ে ঠোঁট ফুলিয়ে তাকালাম মা-র দিকে!
আম্মুঃ দেখে হাঁটিস না আবার এমন ভাষা ব্যবহার করিস! [সায়র ভাইকে] কিছু মনে করো না তুমি!
সায়র ভাই আমাকে সম্পুর্ণ উপেক্ষা করে মা-বাবার সাথে বহুদিন পর দেখার কথাবার্তা আদান প্রদান করতে লাগলেন। এমন ভাব নিচ্ছেন যেনো এখানে আমার কোন অস্তিত্বই নেই! কিন্তু বেহায়া চোখ দুটো দিয়ে পুরো স্ক্যান করে ফেলেছি উনাকে কতোবার কে জানে হিহিহিহি। জোরসে ক্রাশ খেয়েছি ভাই! মাথায় হালকা আঘাতে পাশে তাকালাম। রিহাম ভাইয়া (খালাতো ভাই) চোখ নাচাচ্ছে।
রিহামঃ ছেলে দেখলেই লুচুমি শুরু করে দিস নাকি এভাবে? তোর চোখ তো বেশ খারাপ হয়ে গেছে নিশু!
আমিঃ [কাধে ঘুষি মেরে] তুই বুঝি খুব ভালো! ঐ দিকের একটা মেয়েকে মাত্র চোখ টিপ মারলি বখাটেদের মতো আমি দেখিনি ভেবেছিস!
রিহামঃ [চোখ গোল গোল করে] কই করলাম?
আমিঃ [ছাড়া চুলগুলো পিছনে একেবারে ভাইয়ার মুখের উপর দিয়ে] বলতে বাধ্য নই!
সামনে ঘুরে রিধিতা আপুর পাশে যেতে সায়র ভাইকে শীতল চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখলাম। আশপাশ তাকালাম। না আমাকেই দেখছে। চোখ টিপ মারলে সে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে চোখ ঘুরিয়ে নিলো। আজব তো এমন হাসির মানে কি? আর তাকাবো না মনে মনে পণ করলাম। রিধিতা আপুর সাথে দাঁড়িয়ে আছি এককোনে। হঠাৎ রনক ভাইয়াকে দেখে তার কাছে গেলো আপু। একা একা দাঁড়িয়ে সায়রিকে ফোন করতে লাগলাম। বারবার বিজি আসছে!
সায়রঃ ছেলে ঠিক হয়ে গেছে বিয়ের জন্য তবু ছেলেদের চোখ টিপ মারিস লজ্জা বলতে কিছু আছে তোর?
চোয়াল হা হয়ে গেলো আমার। কাছ থেকে দেখে মনে হচ্ছে চোখের নিচে কালির রেখা দেখা যাচ্ছে! আমার দিকে শীতল চোখে চেয়ে আছেন। রিহাম ভাইয়াকে দেখে আবারো তাচ্ছিল্যের হাসি নিয়ে আমাকে জিজ্ঞেসা করে উঠলেন,,,
“ঐটাই কি তোর জন্য ঠিক করা ছেলে? ভালোই তো!”
চলবে________🖤
#এ্যাগ্নেস_মার্টেল