নিষিদ্ধ সে পর্ব ১০+১১

#নিষিদ্ধ_সে

(১০)+(১১)

সায়রঃ ছেলে ঠিক হয়ে গেছে বিয়ের জন্য তবু ছেলেদের চোখ টিপ মারিস লজ্জা বলতে কিছু আছে তোর?

চোয়াল হা হয়ে গেলো আমার। কাছ থেকে দেখে মনে হচ্ছে চোখের নিচে কালির রেখা দেখা যাচ্ছে! আমার দিকে শীতল চোখে চেয়ে আছেন। রিহাম ভাইয়াকে দেখে আবারো তাচ্ছিল্যের হাসি নিয়ে আমাকে জিজ্ঞেসা করে উঠলেন,,,

” ঐটাই কি তোর জন্য ঠিক করা ছেলে? ভালোই তো!”

“কি আবোল তাবোল বলছেন? আমার জন্য ছেলে ঠিক হয়েছে মানে?”

“লুকোচ্ছিস কেন? ঠিক হয়নি বলতে চাইছিস?”

“লুকোতে যাবো কেন? সত্যিই আমার জন্য কোন ছেমড়াকে ঠিক করা হয়নি!”

সায়র ভাই বিস্মিত হয়ে তাকালেন আমার দিকে কিছুক্ষন পর চোখ মুখ শক্ত হয়ে এলো উনার।

“সায়রি তাহলে আমাকে মিথ্যে বলবে?”

চোখ মুখ কুচকে তাকাতে উনি পাশ থেকে চলে গেলেন। আমি ভেবলা হয়ে চেয়ে আছি। অদ্ভুত! ঘুরে ঘুরে সায়রিকে খুজতে গিয়ে কিছু আন্টির কথা কানে এলো। গুজুর ফুজুর করছেন কিছু নিয়ে। পাশে দেখি আম্মু আর সায়রির মা দাঁড়িয়ে অসন্তুষ্ট চেহেরা নিয়ে। আম্মুর কাছে দাঁড়াতে টেনে পাশে দাঁড় করিয়ে ফিসফিসিয়ে বলতে লাগলেন, “দেখেছিস? এর জন্যই তোকে ঢাকায় নিয়ে গেছিলাম!” বহুত সময় লাগানোর পর ঘটে কাহিনীর মূলভাব স্পষ্ট হলো। রনক ভাই সামনে ভাবলেশহীনভাবে দাঁড়িয়ে থাকলেও রিধিতা আপুর চেহেরা ফেকাশে হয়ে আছে সায়রির চাচির বদৌলতে। মানে বন্ধুর বাড়িতে থাকাটাও দোষের হয়ে গেলো!

“দেখো কেমন করে দাঁড়িয়ে আছে! সামান্তা (সায়রির আম্মু) তুই কোন চার্জ নিসনি এর থেকে? বিনা পয়সায় খাওয়াচ্ছিস থাকতে দিচ্ছিস! এদেরও বা কি বলবো!”

আন্টি কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত চোখে এক আন্টির দিকে তাকালেন। সেই আন্টিটা মুখ দিয়ে মধু বের হওয়া আন্টিকে ধমকে উঠলো। ভেংচি কেটে উঠলেন তিনি, “মানুষের ভালোও চাইতে নেই! ভালো কথাতেও কেমন করে!” আমি আম্মুর হাত থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে রনক ভাইয়াদের কাছে গেলাম। ফোনে নিউজফিড স্ক্রল করছেন খুব মনোযোগে তিনি! আমি কাধে হাত দিয়ে ধাক্কা দিলে ম্লান হাসি দিলেন।

“ভাইয়া চলুন! সায়রিকে খুজে দিবেন!”

“আমি কিভাবে____”

“আরেক মেয়ে আবার ঢং দেখিয়ে ডাকতে এসেছে।”

আন্টিটার কথায় কথাটা মাঝ পথে থামিয়ে দিলেন ভাইয়া। আমাকে নিচুস্বরে এখান থেকে চলে যেতে বললেন। খারাপ লাগলো খুব রিধিতা আপুর মুখ দেখে। বড় মানুষ নাহলে চুলাচুলি লাগিয়ে দিতাম এখন। সামান্তা আন্টির ইশারাতে রনক ভাইয়ার হাত ধরে টানতে লাগলাম, “রনক ভাইয়া আসেন তো! আপনার পিছনে যে মধুর চাক আছে সব তো ধুয়ে নিচ্ছে মৌমাছিরা! পিছনে যে ভনভন করে পরেছে সেটা দেখেন না? অবস্থা আরো নাজেহাল করে দিবে। মৌমাছিগুলোও কেমন! নিজের চাক ছেড়ে আপনার পিছনের মধুতে সুখ খুজে! আজব চিড়িয়া সব!”

ভাইয়াকে টেনে টেনে নিয়ে যেতে সামনে আবারো সায়র ভাইয়া পরলো। ভ্রু কুচকে চেয়ে আছেন তিনি রনক ভাইয়ার হাত ধরে রাখা হাতটায়। উনার চাহনি দেখে হাত চাপ দিয়ে ধরলাম আরো। রনক ভাইয়া ব্যাথাদায়ক শব্দ করে উঠলে ছেড়ে দিয়ে আবারো ধরলাম।

“তুই কি চাস আসলে? নিজের_____”

“ঐ ঐ সমস্যা কই আপনার? একে তো নিজের ফ্রেন্ডকে এনে তার খোজ রাখেন না ভালো আছে কি না আছে। তার উপর আমার জামাইয়ের পিছে পরেছেন! আমাকে কি লেসবো লাগে? হ্যা? দেখতে গেলাম ভাইয়ার জন্য মেয়ে জনে জনে রটিয়ে বেড়াচ্ছেন আমার জন্য ছেলে ঠিক হয়ে গেছে! হলে বেশ হয়েছে আপনার কি? রিলেশনে আছেন নির্মা আপুর সাথে বারবার আমার না হওয়া মেয়ে জামাই ওরফে রিধিতা আপুকে খোচা দিয়ে কথা বলেন কেন? আজকেও গঞ্জিকা খেয়েছেন? বেশি করবেন তো কিছুদিন আগে আপনার স্বিকারোক্তি ভাইরাল করে দিবো! হ্যান্ডসাম ওম্যান কোথাকার!”

রেগে সায়র ভাইকে একপ্রকার ধাক্কা দিয়েই সায়রিকে খুজতে লাগলাম। রেগে কোন কোন রুম তাড়াঘোড়ায় দেখেছি খেয়াল করিনি। হঠাৎ হলুদ শাড়িতে সজ্জিত সায়রিকে চোখে পরলো। দম টেনে নিজেকে ঠিক করে ওর কাছে গেলাম। সে আমাকে দেখেও না দেখার ভান করছে। রুমে থাকা নির্মা আপুসহ সায়রির কাজিনরা আমাকে অবাক হয়ে দেখছে! সায়রির কাছে গিয়ে আয়নার দিকে পিঠ দিয়ে দাঁড়ালাম সে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। ভ্রু কুচকে ওর থুতনি ধরে আমার দিকে ফিরালে হাত ঝারা মারলো। নির্মা আপু কানের দুল পরতে পরতে এগিয়ে এলো।

নির্মাঃ শুনলাম তোমার জন্য নাকি ছেলে ঠিক হয়েছে? এর জন্যই এতো তাড়াহুড়োয় চলে গেছিলে? আমাদের অন্তত কিছু বলে যেতে।

সায়রি আড়চোখে তাকালো। ভ্রু কুচকে নির্মা আপুর দিকে তাকালাম।

“কে বলেছে এগুলো তোমাদের?”

নির্মাঃ তুমিই তো মেসেজ দিলে সায়রিকে ছেলে দেখতে গিয়েছো!

“কিহ! আমি মেসেজ দিয়েছি! কই দেখি!”

সায়রি অন্যদিকে ফিরে ফোন আমার হাতে ধরিয়ে দিলো। ফোন হাতে নিয়ে দেখি আসলেও আমার ফোন থেকে মেসেজ গিয়েছে আমি ছেলে দেখতে এসেছি। নিজের ফোন বের করলাম দেখি সত্যিই পাঠিয়েছি। কিছুক্ষন ভাবার পর কাহিনী পরিষ্কার হলো। লুকিয়ে ফোন টিপে উত্তর দিতে গিয়ে টাইপিং এ ভাইয়ার জন্য মেয়ে দেখতে এসেছি লিখতে গিয়ে অটোকারেকশনে মেসেজ চলে গেছে ভাইয়াকে নিয়ে ছেলে দেখতে এসেছি! কিছুক্ষন পর কোমড়ে হাত দিয়ে হো হো করে হাসতে লাগলাম। সায়রি কিঞ্চিত ভ্রু কুচকে তাকালো।

নির্মাঃ [আমাকে ধাক্কিয়ে মিটিমিটি হেসে] তোমার বান্ধবী রেগে আছে আর তুমি হাসছো? ছেলে দেখতে গেলে আর ওকে নিলে না? বেশ রাগ করেছে!

হাসতে হাসতে সায়রির কাধে মারলাম সে বিরক্ত হয়ে তাকালো। “আরে ভাই, অটোকারেকশনে এই মেসেজ চলে গেছে তোর কাছে। কালকে ভাইয়ার সাথে মেয়ে দেখতে গিয়েছিলাম। আমার জন্য ছেলে ঠিক হয়নি!”

সায়রিঃ [হাতের কাছে থাকা পাউডারের কৌটা ছুরে মেরে] হারামি আমি আরো ভেবেছি তুই আমাকে রেখেই কবুল পড়ে এসেছিস।

“হুস! একটা মজার ব্যাপার কি জানিস?”

সায়রিঃ কি?

“ভাইয়ার জন্য যে মেয়ে দেখতে গিয়েছি সে রিধিতা আপু।”

সায়রিঃ মানে রনক ভাইয়ার বোন?

“হ্যা। হাহাহাহা, ভাগ্যিস রনক ভাই সেখানে ছিলো না আমার আম্মু তো রনক ভাইয়ার নাম শুনেই ফিট! রিধিতা আপুর ইন্টার্ভিউ না নিয়ে রনক ভাইয়ার আব্বুর কাছে ভাইয়ার ইন্টার্ভিউ নিচ্ছিলো। বাসা থেকে বেরিয়ে আম্মুর কি আফসোস____”

রিধিতাঃ [মাথায় মেরে] বেশ তো! তাহলে আন্টিকে বলতে হয় তোমার আর রনকের বিয়ে আমাদের সাথেই দেওয়ার জন্য।

পিছনে ঘুরলাম। রিধিতা আপু ঠিক পিছনে দাঁড়িয়ে আর সায়র ভাইয়া, রনক ভাইয়া দরজার কাছে দাঁড়িয়ে। মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে হেসে, “আউইইইই তাহলে তো বেশ হয়! এমনিতেই টোলওয়ালা ক্রাশ ভাইয়া। আচ্ছা এখন থেকেই রনক বলে ডাকবো। এই রনক এদিকে আসো সেলফি তুলবো!”

রিধিতা আপু হেসে আবারো মারলেন আমাকে।সায়রিকে জড়িয়ে ধরে ভালো-মন্দ জিজ্ঞেসা করতে লাগলেন। রনক ভাইয়ার হাত ধরে দূরে সরে যেই সেলফি তুলবো সায়র ভাই মধ্যে এসে বাগড়া দিলো।

ভ্রু কুচকে তাকালাম, “কি সমস্যা?”

সায়রঃ আমিও তুলবো!

ভেংচি কেটে, “আপনাকে নিবো না! সরেন!”

সায়রঃ তুই নিবি না তোর ঘাড় নিবে!

চোখ ছোট ছোট করে, “আচ্ছা রনক ভাইয়া কি আপনার প্রেমিকা লাগে? যতোবার ছবি তুলতে যাই, ভাইয়ার সাথে থাকি আপনি মধ্যে এসে বাগড়া দেন! [ফিসফিসিয়ে] আপনার কি গে-সম সমস্যা আছে সায়র ভাই?”

সায়র ভাই চোখে আগুনের শিখা জ্বেলে তাকিয়ে আছেন। সপ্রশ্নচোখে তার এই রিয়েকশন দেখছি।
…..
(১১)

সায়রিকে স্টেজে নিয়ে যাচ্ছি আর ফিসফিসিয়ে কথা বলছি। সায়রি হাসছে মৃদু মৃদু। আমিও হেসে সায়রিকে নিয়ে যাচ্ছি। স্টেজে নিয়ে বসিয়ে নেমে এলাম। এককোনে দাঁড়িয়ে আছি। আস্তে আস্তে অনুষ্ঠান শুরু হলো। হঠাৎ কাধে কেউ ধাক্কা দিলো। দেখি রনক ভাই দাঁড়িয়ে।

রনকঃ তুমি যাচ্ছো না যে?

হালকা হেসে, “পরে যাবো একেবারে। সবাই দিয়ে নিক।”

রনকঃ [স্টেজে তাকিয়ে] গতকাল মুখ চুপসে ছিলো। নির্মার সাথেও কথা বলেনি। এমনকি আমার প্রতিও বিরক্ত ছিলো। হুটহাট রেগে পায়চারি করছিলো তো শান্ত হয়ে একবার বসে কি কি বিরবির করছিলো মাথা চেপে ধরে। ফোনে তোমার নাম্বার ডায়াল করে বারবার মুছে ফেলছিলো।

ভ্রু কুচকে, “কে এমন পাগলামি করেছে? হিহিহি শুনে তো আমার পুরানা জামানার প্রেমিক লাগছে!”

রনক ভাইয়া স্টেজে ইশারা করলো। নির্মা আপু আর সায়র ভাইয়া একসাথে হলুদ লাগাচ্ছে সায়রিকে হেসে হেসে। তিনজনের মুখে হাসিরা টইটম্বুর পুরো।

বিস্মিত হয়ে, “সায়র ভাই?”

মাথা নাড়লো রনক ভাইয়া। অবাকচোখে তার দিকে চেয়ে আবারো সায়র ভাইয়ের দিকে তাকালাম, “কিন্তু কেন?”

রনকঃ তোমার মেসেজটা আসলে ফোন সায়রের হাতে থাকার সময় এসেছিলো।

কিছুক্ষন ভেবেও কূলকিনারা না পেয়ে আবারো তাকালাম রনক ভাইয়ার দিকে। তিনি আমার দিকে শান্তভঙ্গিমায় তাকিয়ে। মুখ হা হয়ে এসেছে।

“আমার বিয়ে তো উনার এতো কিসের মাথাব্যাথা?”

উনি কাধ উচিয়ে মৃদু হেসে পকেটে হাত রেখে সামনে এগিয়ে গেলেন। একবার পিছন ফিরে আমাকেও আসতে বললেন। কিছু না বোঝা আমি স্টেজের দিকে তাকালাম আবার! সায়র ভাই বোনের সাথে হাসছে খুব। হাত টিস্যু দিয়ে মুছে উঠে আসছে। এখনো স্তব্দ হয়ে চেয়ে আছি হিসাব মিলাতে না পেরে! কখন উনি সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন কে জানে! তুড়ির শব্দে চমকে তাকালাম।

সায়রঃ [ভ্রু কুচকে] কি এতো ভাবিস? হলুদ মাখাবি না?

কিছুক্ষন সায়র ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে কিছু না বলে স্টেজের দিকে এগোতে লাগলাম। সায়রিকে হলুদ লাগালে আমাকে চেপে ধরে গালে লাগিয়ে দিলো। আমিও মুঠোভর্তি হলুদ নিয়ে ওর সারামুখে একদম লেপ্টে দিলাম। হেসে স্টেজ থেকে নেমে এলাম। সারা সময় শুধু রনক ভাইয়ার কথাগুলো ঘুর ঘুর করেছে মাথায়। বিষয়টা নিষিদ্ধ জেনেও হৃদকোনে সূক্ষ্ম সুখ সুখ অনুভুতি হচ্ছে। নির্মা আপুর সাথে অজান্তে নিজের তুলনা করছি বারবার। আবার মনের এককোনে এলার্মিং দিচ্ছে সে “নির্মা” আপুর মতো ভীষণ ভালো একটা আপুর বয়ফ্রেন্ড তার দিকে কেন নজর দিচ্ছিস? তালগোল পাকিয়ে একবার খেই থাকে তো নিজের চোখ সংযত রেখে স্ট্রেট হয়ে বসে থাকি। কিছুক্ষন পর খেই হারিয়ে যাচ্ছে আর
মনে বারবার নিষিদ্ধ চাওয়া পোষণ করছি। ভুল হলে হোক। সময়ের জোয়ারে ভেসে ঠিক সময়ে পৌছিয়ে তখন না হয় পস্তাবো। সায়র ভাইয়ের দিকে আবারো তাকাতে গিয়ে দেখি সে সামনে নেই। উকিঝুকি দিয়ে খুজছি নির্মা আপু হঠাৎ ভুতের মতো কানের কাছে এসে “কাকে খুজছো?” জিজ্ঞেসা করলো। আত্মা পুরো লাফিয়ে উঠলো। সাথে আমি চেয়ার ছেড়ে ভিতু চোখমুখ নিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। আপু কিছুক্ষন আমার দিকে চেয়ে হাসতে লাগলেন।

নির্মাঃ ভয় পেয়েছো? সত্যিই দেখি কাউকে খুজছিলে!

আমি অপ্রস্তুত হাসি হাসতে লাগলাম। নির্মা আপু আমার হাত নিজের হাতের মাঝে নিয়ে সামনে হাটা দিলেন। দুজনে এখানে সেখানে হাত ধরে ঘুরছি দুই বান্ধবীর মতো। বলতে গেলে আপুই আমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে এদিক ওদিক। রিধিতা আপুকে সঙ্গি করে এনে দেখি তাকে একাই পাওয়া যায় না। সায়রির কোন কাজিন জানি রিধিতা আপুর ক্লোজফ্রেন্ড। বুঝেছি নির্মা আপু না থাকলে আমার এতিম হয়ে ঘুরতে হতো! আপু হাত ধরে ইচ্ছেমতো কথা বলছে আর আমি তার দিকে চেয়ে আছি। সত্যিই মারাত্মক ভুল করছি। একটু একটু করে পছন্দের যাত্রায় সায়র ভাইয়ের দিকে অগ্রসর হতে হতে। আপুর কথা অন্তত ভাবা উচিত আমার।

নির্মাঃ এমন করে কি দেখো?

মৃদু হেসে, “আজ অনেক সুন্দর লাগছে তোমায় আপু!”

আপু লাজুক হাসি হেসে আমায় নিয়ে ছাদে যেতে লাগলো।

“আজকে কি থেকে যাবে এখানে?”

“আমার আম্মু মহাশয়া বেশ একরোখা হয়ে আছেন। তিনি আমাকে এখানে মোটেও রাখবেন না। কালকে এসে যাবো ঠিক সময়ে!”

“থেকে যাও আজকে। আমাদের বাসায় থেকো। বেড শেয়ার করে সারারাত গল্প করবো। সেলফি তুলবো। তুমি তো বেশ সেলফি পাগল!”

হাসতে হাসতে, “আম্মুকে মানানো দায়। তার মধ্যে বিয়েতে পরার শাড়ি তো আমি নিয়ে আসিনি। এতো কষ্ট করে বান্ধবীর বিয়ের জন্য কিনলাম সাইফ ভাইয়াকে খিড়িয়ে ঐটা পরবো না!”

“তোমার ভাইয়াকে দিয়ে আনিয়ে নিয়ো!”

“তোমার চাচি আজকে আম্মুর সামনে রনক ভাইয়াকে যদি কথা না শুনাতো আমাকে রেখে যাবার চান্স ছিলো আম্মুর। এখন তাও নেই!”

দাঁড়িয়ে যেয়ে, “রুবি চাচি কথা শুনিয়েছে রনককে?”

“হ্যা!”

আপুর গাল লাল হয়ে এসেছে। রাগে ফোস ফোস করছে। আপুর রাগান্বিত চোখ মুখের দিকে চেয়ে আছি।

“বাদ দাও, কাহিনি খতম হয়ে গেছে আগেই। এখন তোলপাড় করোনা চলো আমরা বরং ছাদে যাই!”

আপু আমার দিকে চেয়ে কিছুক্ষন দম নিতে লাগলেন। লাল আভায় গাল দুটো ছেয়ে গেছে।

“এর জন্যই আমার রুবি চাচিকে ভালো লাগে না। রনককেও ছাড় দিলো না। বলি সে কি তোর বাপের কোন ক্ষতি করেছে? সায়র ছিলো না তখন সেখানে?”

“সায়র ভাই কি জানি করছিলো।”

ছাদেও কোলাহলের শেষ নেই। বিশেষ করে এক সাইডে সায়র ভাইয়ার ছেলে কাজিনগুলো আর সায়র ভাইয়ারা দাঁড়িয়ে বেশ জোরে জোরে কথা বলছে নির্মা আপুর হাত টেনে উল্টো পথে ফিরতে চাইলাম। আপু খোশমেজাজে আমাকে আশ্বাস দিয়ে আরো সেখানটায় নিয়ে গেলো। আমাদের দেখে ভাইয়ারা উৎসুক হয়ে তাকালো। রনক ভাই আমাকে দেখে সায়র ভাইয়ের দিকে তাকালেন।

“নির্মা ও কে রে?”

ওদের প্রশ্নে নির্মা আপু হেসে কিছু বলার আগে সায়র ভাই উঠে এসে আমার হাত ধরে ছাদের দরজার দিকে টেনে আনতে লাগলেন। ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে গেছি প্রত্যেকে। শাড়ির কুচিতে বেজে পরে যাবার যোগার উনি পারলে ছ্যাচড়িয়ে নিয়ে যায় আমাকে।

“সায়র ভাই ছাড়েন হাত টেনে নিয়ে যাচ্ছেন কেনো এভাবে!”

চোখ লাল করে আমার দিকে তাকালেন। আমি রেগে উনার থেকে হাত ছাড়াতে চাইছি। উনি একটু থেমে আবারো টেনে নিয়ে সিড়ির কাছে এলে বেশ জোরেই বলে ফেললাম, “আরে ভাই শাড়ি খুলে যাবে আমার!” উনি সাথে সাথে হাত ছেড়ে দিলেন। সিড়ি হওয়ায় কথাটা হালকা জোরে বললেও প্রতিধ্বনিত হলো বেশ জোরে। উনি কটমট করে আমার দিকে চেয়ে।

“কোথায় কি বলতে হয় জানিস না?”

হাত ডলতে ডলতে, “আমার দোষ কই? আমি তো আপনাকে সুন্দর করে আস্তে আস্তেই বলছিলাম হাত ছাড়েন! আপনি আরো গরুর মতো টেনে আনছিলেন আমাকে! জীবনে প্রথম শাড়ি পরেছি। হঠাৎ খুলে হা হয়ে গেলে দায়ভার আপনি নিতেন?”

অন্যদিক তাকাতে তাকাতে, “মুখে একটু লাগাম লাগিয়ে বল কিছু। তোর কথাগুলো কিন্তু নিচ অবদি শোনা যাচ্ছে!”

“তো?”

দাঁত খিচে আমার পাশে একটু সরে, “আমার মা ঠিক নিচের সিড়িতে দাঁড়িয়ে উঁকিঝুকি মারছে! তোর কি সেল্ফরেস্পেক্ট নাই?”

ভয়ে ভয়ে উনাকে সরিয়ে সিড়ির রেলিঙে ভর দিয়ে নিচে তাকালাম। সরাসরি আন্টির মুখখানা পরলো সামনে। লাফিয়ে সরে এলাম জায়গা থেকে। কান গরম হয়ে এসেছে। লজ্জায় কি করবো বুঝছি না। সায়র ভাইয়ের দিকে তাকাতে বাড়ির বাইরে জ্বলতে থাকা ঝারবাতির আলোতে তাকে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখতে পেলাম। দম বন্ধ হয়ে আসবে এমন শীতল শিহরণ বয়ে গেলো ভেতর দিয়ে। কিছু না বলে উপরে উঠতে গেলে উনি আমার হাত আবার চেপে ধরলেন।

“কই যাচ্ছিস?”

“কেন ছাদে! নির্মা আপু সেখানে আছে আপুকে রেখেই যাবো?”

“মানুষকে কোমড় দেখানোর শখ খুব তাই না? চটকানি মেরে একদম ঘুরিয়ে দিবো! শাড়ি পরতে পারিস না পরেছিস কেন শুধু শুধু!”

লাফিয়ে সরতে গিয়ে সিড়ির ধাপে পা পিছলে পরে যেতে নিলাম। উনি কোমড়ে হাত রেখে ধরে ফেললেন। হাত ঝারি মারলাম তৎক্ষনাৎ। সোজা করে দাঁড়িয়ে রেগে চেয়ে আছি।

“ছিঃ আপনি এতো লুচু কেন?”

“যাহ, তোকে______”

গাল ফুলিয়ে, “আমার জানামতে আমার শাড়ি এদিক ওদিক হয়নি। আম্মু বেশ ভালো করে পিন লাগিয়ে দিয়েছে।”

সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে, “নিজের দিকে তাকিয়ে দেখ তাহলে!”

নিজের দিকে তাকিয়ে চিৎকার দিয়ে উঠলাম। উনি হাসতে হাসতে নিচে নেমে গেলেন। শাড়ি ঠিক মতো আটকে গাল ফুলিয়ে রিধিতা আপুর পাশটায় দাঁড়িয়ে আছি। আপু বারবার আমাকে গাল ফোলানোর কারন জিজ্ঞেসা করছে। মাথা নাড়ছি শুধু। সায়র ভাই সামনে দাঁড়িয়ে সেই তখন থেকে গা জ্বালানো হাসি হাসছেন। বারবার রেগে তাকাচ্ছি। উনি আরো হেলেদুলে হাসছেন।

চলবে_________❤

#এ্যাগ্নেস_মার্টেল

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here