#ভালোবাসার_অনূভুতি
#লেখিকাঃতানিশা_তিশা_মনি
#পর্বঃ9
প্রিয়জনের সাথে কাটানো সময়গুলো খুব তাড়াতাড়ি চলে যায়।কেটে গেলো আরো একটা মাস।মিহির এখন একদম সুস্থ হয়ে গেছে। এই একমাসে মেঘরা সবাই অনেকবার বাইরে ঘুড়তে গেছে।অনেক মজা করেছে।মেঘ আর মিহিরকে নিয়ে ওরা সবাই অভিদের বাড়িতেও গিয়েছিলো। অভির মা বাবাও মেঘ আর মিহিরের সাথে এমনভাবে কথা বলেছে যেনো মেঘ আর মিহির ওনাদের নিজের ছেলেমেয়ে। এতো গুলো দিনে মেঘের সবার সাথে ভালো সম্পর্ক হলেও আহাকে এখনো দুচোখে সহ্য করতে পারে না মেঘ।কিন্তু মেঘের কাছে তারচেয়েও বিরক্তিকর বিষয় হলো,,,মিহির আহান ভাইয়া বলতে অঙ্গান ।আহানের কথার বাইরে একপাও চলে না। আজকে বড়োরা ছোটরা সবাই হিয়ানদের বাড়িতে এসেছে।অভির মা বাবা আর রিয়ানের মা বাবাও এসেছে। সবাই একসাথে থাকার পরও আজকে সবার মন খারাপ।কারন আজকে সন্ধ্যায় আহান, হিয়ান , হিমা, অভি , রিয়ান ওরা ইউ এস ফিরে যাবে। ওদের ছুটি শেষ। তাই সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুপুরে মেঘের মামাদের বাড়িতে খেয়ে তারপর এখান থেকে সবাই এয়ারপোর্টের উদ্যশ্যে রওনা দেবে। চৌধুরী বাড়ির ছাদে বসে আছে ছোটরা সবাই । বড়োরা সবাই নিচের ড্রয়িং রুমে বসে আছে।মেঘের মা, খালামনি আর দুই মামি ওনারা রান্নার কাজে ব্যাস্ত।এখন দুপুর বারোটা পচিশ বাজে ।ছাদে হালকা রোদ আর তারসাথে মৃদু বাতাস বইছে।প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে সবাই হালকা স্নাক্স খেতে খেতে টুকিটাকি কথা বলছে।
মেঘ বিষন্ন চেহারায় বললো
“আচ্ছা তোমাদের এখনি যেতে হবে আর কটা দিন থেকে গেলে হয়না।”
হিমা মুচকি হেসে বললো
“আহান ভাইয়াদের কিছুদিন পরই এক্সাম । আর তাছাড়া প্রায় চার মাস হতে চললো আমরা বাংলাদেশে এসেছি। এখন তো যেতেই হবে ।”
মেঘ মুখ ফুলিয়ে বললো
“কেনো যেতে হবে ? বাংলাদেশে কি ভালো কলেজ, ভার্ষিটি নেই।তোমাদের সবাইকে কেনো লন্ডনে গিয়েই পড়া লেখা করতে হবে?”
হিমা কি বলবে বুঝতে পারছে না।আলিশা মুচকি হেসে বললো
“মেঘ সবাই কোথায় যাচ্ছে? আমি ,আহির ,মিহির, সাড়িকা, সাইফা, ছাহীর আমরা তো আছি।”
মেঘ অভিমানী সুরে বললো
“তো তুমি কেনো আছো?তুমিও ওদের সাথে চলে যাও। আমার কাউকে লাগবে না।”
আহীর মজা করে মেঘকে উদ্যেশে করে বললো
“আরে বুঝতে পারছিস না ।আলিশা আপু তো আমাকে খুব ভালোবাসে। তাই আমাকে ছেড়ে কোথাও যেতে চায় না।”
আলিশা আহিরকে একটা থাপ্পড় মেড়ে বললো
“তোকে সবসময় ফাজলামি করতেই হবে তাই না।দেখছিস একটা সিরিয়াস বিষয় নিয়ে কথা বলছি ।তার মধ্যেও তোকে নাক গলাতে হবে”
আহির কনফিউশড হওয়ার ভান করে বললো
“নাক কোথায় গলালাম।আমি তো মুখ দিয়ে বললাম”
আহানের কথায় সবাই হেসে দিলো।
অভি মেঘের দিকে তাকিয়ে বললো
“মেঘ আমরা চলে গেলে তুমি আমাদের মিস করবে?”
মেঘ মুখটা কালো করে উপর নিচ মাথা নাড়ালো যার মানে হ্যা।অভি কৌতুহল নিয়ে জিঙ্গেস করলো
“কাকে কাকে সবচেয়ে বেশি মিস করবে?”
“তোমাদের সবাইকে আমি অনেক মিস করবো।”
অভি মুচকি হেসে বললো
“সবাইকে মানে আহানকেও মিস করবে?”
মেঘ আর চোখে একবার আহানের দিকে তাকালো।আহান চুপচাপ বসে ফোন স্ক্রল করছে ।মেঘ গলার স্বরটা একটু নিচু করে বললো
“সত্যি বলবো নাকি মিথ্যা বলবো?”
অভিও গলার স্বরটা একটু ছোটো করে বললো
“সত্যিটাই বলো……..”
মেঘ জোরেই বললো
“আমি আহান ভাইয়াকে একটুও মিস করবো না।ওনি এখান থেকে চলে গেলে আমি সবচেয়ে বেশি খুশি হবো”
মেঘের কথা শুনে সবার চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেলো।ওরা সবাই একবার মেঘের দিকে তাকাচ্ছে আরেকবার আহানের দিকে তাকাচ্ছে। আহান ফোন থেকে চোখ তুলে মেঘের দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকালো।অভি অবাক হয়ে জিঙ্গেস করলো
“আমাদের সবাইকে মিস করবে। কিন্তু আহানকে কেনো করবে না।”
“কারন তোমরা সবাই আমাকে খুব ভালো বাসো।আহান ভাইয়া আমাকে একটুও ভালোবাসে না।সবসময় শুধু বকে ধমক দেয়।”
মেঘের কথা শুনে সবার মুখ হা হয়ে গেলো।ওরা সবাই এমনভাবে মেঘের দিকে এমনবাবে তাকালো যেনো ও একটা এলিয়ন।আহান চোখ ছোট ছোট করে মেঘের দিকে তাকিয়ে রইলো।
____________________________________________________________________________________________________
কিছুক্ষন পর সবাই দুপুরের খাবার খেয়ে নিলো।তারপর আহানরা সবাই একে একে রেডি হতে চলে গেলো।ওরা যে ড্রেস গূলো নিয়ে যাবে সেগুলো আগেই প্যাকিং করে গাড়িতে রেখে দিয়েছে। মেঘ রেডি হয়ে হিমার রুমে যাচ্ছিলো।তখনই ঠটাৎ কেউ ওর হাতে টান দিয়ে।একটা রুমে নিয়ে আসলো।আচমকা এভাবে কেউ মেঘকৈ নিয়ে আসায় ও হকচকিয়ে গেলো।সামনে তাকিয়ে দেখলো ওর থেকে কিছুটা দূরে আহান দাড়িয়ে আছে।মেঘ চোখ বড়ো বড়ো করে আহানের দিকে তাকিয়ে বললো।
“আপনি……….”
আহান একটু মেঘের দিকে ঝুকে বললো
“কেনো অন্য করো থাকার কথা ছিলো।”
মেঘ একটু পিছিয়ে গিয়ে বললো
“আমি সেটা বলিনি।আপনি আমাকে এখানে কেনো আনলেন?”
আহান বাকা হেসে বললো
“ভালোবাসতে…..”
মেঘ কাপা কাপা গলায় বললো
” ভ্ ভালোবাসতে ম্ মানে ক্ কি?”
আহান মেঘের কোমরে হাত দিয়ে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।মেঘ হালকা কেপে উঠলো।আহান এতো কাছে আসায় ওর ভীষন অসস্তি লাগছে।এয়ার কন্ডিশনের মধ্যেও দর দর করে ঘামছে । আহান মেঘের কানের কাছে এসে শ্লো ভয়েজে বললো
“তখন বলেছিলে না আমি নাকি তোমাকে ভালোবাসি না । তাই তুমি আমাকে একটুও মিস করবে না ।তারজন্য তোমাকে এখানে ভালোবাসতে নিয়ে আসলাম যাতে আমি এখান থেকে চলে যাওয়ার পরও তুমি আমাকে বেশি করে মিস করো।”
মেঘের দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ।ওর এতোটা কাছে আগে কোনো ছেলে কখনো আসেনি ।ভয়ে রিতিমতো কাপাকাপি শুরু হয়ে গেছে। মেঘকে এভাবে কাপতে দেখে আহান একটা মুচকি হাসি দিয়ে মেঘের ঠোটের সাথে ঠোট মিলিয়ে দিলো।মেঘ চোখ দুটো রসগোল্লার মতো করে স্টাচু হয়ে দাড়িয়ে আছে।আহান মেঘকে ছেড়ে হাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে নিজের ঠোট মুছে ।ডেবিল মার্কা একটা হাসি দিয়ে বললো
“আই হোপ, আমি যতোদিন দেশে না ফিরছি, আমার ভালোবাসার ছোয়া তোমার মনে থাকবে। আর যদি ভুলে করেও ভুলে যাও তাহলে আবার ফিরে এসে মনে করিয়ে দিয়ে যাবো।”
শেষের কথাটা আহান একটু হুমকির সুরে বললো।মেঘ কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না । ও এখনো স্টাচু হয়েই দাড়িয়ে আছে। আহান মেঘের দিকে একটু তাকিয়ে ওর কপালে গভীর ভাবে একটা চুমু খেলো।তারপর আর কোনো দিক না তাকিয়ে চুপচাপ রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।
_________________________
আহানরা যাওয়ার সময় সবাই ওদের জড়িয়ে ধরে অনেক কান্নাকাটি করেছে।মেঘকে কিস করার পর ও আর আহানের সামনেই আসে নি।আহানদের এগিয়ে দিতে বাসার সবাই যাবে।ওরা সারে চারটার দিকে সবাই বাসা থেকে বের হলো।এরপর মেঘের নানু নানির কবরের কাছে গিয়ে কবর জিয়ারত করে সবাই এয়ারপোর্টের উদ্যশে রওনা দিলো।কিছুক্ষন পর এয়ারপোর্টে পৌছে গেলো। এয়ারপোর্টে পৌছে আহানরা সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ভিতরের দিকে চলে গেলো।যাওয়ার আগে আহান একবার মেঘের দিকে তাকিয়েছিলো, মেঘ আহানকে ওর দিকে তাকাতে দেখে মিরা রহমানের পিছনে লুকিয়ে গিয়েছিলো।আহান কিছু না বলে শুধু একটু ম্লানো হেসেছিলো। ওরা ভিতরে চলে যাওয়ার পর মেঘরা সবাই অনেকেক্ষন এয়ারপোর্টের বাইরে দাঁড়িয়ে রইলো। কিছুক্ষন পর ওদের মাথার উপর দিয়ে একটা ফ্লাইট টেকঅফ করলো। মোনা খানেরা সবাই নিজেদের চোখের পানি মুছে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।সবাই যার যার বাড়ির উদ্যশে রওনা দিলো।
__________________________________________________
সময় এবং নদীর স্রোত কারো জন্য কখনো থেমে থাকে না ।তারা নিযশ্ব গতিতে চলমান। কেটে গেছে চার বছর। এই চার বছরে বদলে গেছে অনেক কিছু।মেঘ এবার অনার্স থার্ড ইয়ারের উঠেছে। সাড়িকা সাইফা অনার্স ফাষ্ট ইয়ারে ।আহির আর মিহির মাষ্টার্সে পড়ছে আর তার পাশাপাশি দুই ভাই ওদের বাবাদের জয়েন বিজনেস সামলায়।সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো ওরা সবাই একই ভার্সিটিতে পড়াশোনা করে।
রাত চারটা বিশ, মেঘ নিজের ফোনে একবার সময়টা দেখে ফোনের টর্চ
অন করলো।তারপর ড্রেসিং টেবিলের কাছে গিয়ে ওর মেকআপ বক্স হাতে নিয়ে চুপি চুপি রুমের দরজা দিয়ে বের হয়ে পাশেই মিহিরের রুমে ঢুকলো।পা টিপে টিপে মিহিরের বেডের দিকে এগিয়ে গিয়ে দেখে আহির আর মিহির বেডের উপর বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।মেঘ ওর মেকআপ বক্সটা খুলে মিহির আর আহিরের মুখে কিছু আকি বুকি করলো।তারপর নিজের ফোনের ফ্লাস জালিয়ে ওদের দুজনের কয়েকটা ছবি তুলে নিলো। ওদের দিকে তাকিয়ে শয়তানি একটা হাসি দিয়ে বললো
“আহারে আমার বেচারা দুই ভাই কি সুন্দর নিশ্চন্তে ঘুমাচ্ছে।কালকে সকালের বেকিং নিউজ,ভাসিটির দুই ক্রাস বয় সাবরিদ সায়াজ মিহির এবং সাফওয়ান সিজাত আহীরের মুখে চুন কালি লাগিয়ে হাফ লেডিস বানিয়ে দিলো তাদেরই ছোট্ট আদুরে বোন মেঘনা।”
তারপর একটু ভাব নিয়ে বললো
“আমার সাথে লাগতে আসা তাই না? তোদের দুটোর মান সম্মান আমি মাটিতে মিশিয়ে দিবো তারপর আমার সাথে লাগতে আসার ফল হাড়ে হাড়ে টের পাবি। ‘হুহ’..”
তারপর আবার মেঘ যেভাবে এসেছিলো সেভাবেই রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ে।
“ফ্লাসব্যাক”
আসরের আজান দিলে, মেঘ আসরের নামাজ পড়ে নেয়।তারপর নিচে নেমে ফ্রিজ খুলে বড় এক বক্স চকলেট ফ্রেবারের আইসক্রিম নিয়ে ছাদে চলে আসে। ওদের বাসার ছাদের একপাশে একটা সুইমিংপুল । তার পাশে দুইটা টেবিল আর সাত আটটা চেয়ার রাখা। আরেক পাশে কিছু ফুলের গাছ আর একটা বড় স্টিলের দোলনা।মেঘ ছাদে এসে দেখে মিহির আর আহির একটা টেবিলে ল্যাপটপ নিয়ে বসে অফিসের কাজ করছে।ওদের সাথে অফিসের ম্যানেজার আর দুটো মেয়েও আছে।মেঘ গিয়ে দোলনায় বসে মোনোযোগ সহ করে আইসক্রিম খেতে থাকে।মেঘ পাশে তাকিয়ে দেখে দুইটা মেয়ে আহির আর মিহিরের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে আর বলাবলি করছে
” ছেলে দুইটা তো অনেক কিউট আর হ্যান্ডসাম।”
আরেকটা মেয়ে বললো
” একটা তো এই বাসার মালিকের ছেলে আরেকটা সম্ভবতো ওর বন্ধু হয়।”
মেঘের ওদের দিকে তাকিয়ে দেখলো মিহির আর আহীরের কোনো দিকে খেয়াল নেই।ওরা খুব মনোযোগ দিয়ে কাজ করছে।মেঘ এবার মেয়ে গুলোর দিক ভালোভাবে তাকিয়ে দেখলো এরা নতুন ভাড়াটে কালকেই ওদের বাসায় উঠেছে। আর আজকেই এসব কথা বলছে ।সাইফা যদি একবার শুনতে পারে এই মেয়েরা মিহির ভাইয়ার দিকে নজর দিয়েছে তাহলে এদের যে কি অবস্থা করবে আল্লাহ্ই জানে।কথাগুলো ভেবে মেঘ মুচকি মুচকি হাসছে।মেঘকে এভাবে মুচকি মুচকি হাসতে দেখে মেয়ে দুইটা ওর দিকে এগিয়ে এসে প্রশ্ন করে
“তুমি এভাবে ওই ছেলে দুটোর দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে হাসছো কেনো?”
মেঘ ভ্রু কুচকে জিঙ্গেস করলো
“তো ওদের দিকে তাকালে হয়েছেটা কি?”
একটা মেয়ে রেগে বললো
“এই মেয়ে তুমি আমাদের মুখে মুখে কথা বলো? কয় তলায় ভাড়া থাকো তুমি? তুমি জানো আমি কে ? আমি মিহিরের গার্লফ্রেন্ড।একদম ওর দিকে নজর দিবে না আর যদি দিয়েছো তাহলে এই বাসা থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেবো।”
মেঘ অবাক হয়ে মেয়েগুলোর দিকে তাকিয়ে রইলো।ও বুঝলো এই মেয়ে গুলো ওকে চেনে না।ওর এবার ভীষন হাসি পাচ্ছে।মনে মনে বললো লাইক সিরিয়াসলি , আমি আমার ভাইদের দিক তাকিয়ে আছি, সেই জন্য এই মেয়ে আমাকে আমার বাড়ি থেকেই বের করে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে।মেঘ আর হাসি আটকে রাখতে পারলো না।ফিক করে হেসে দিলো ।হাসতে হাসতে দোলনা থেকে ফ্লোরে বসে পড়লো।আহির আর মিহির ভিডিও কলে আহানের সাথে একটা ডিল নিয়ে ডিসকাস করছিলো।মেঘের হাসির শব্দে ল্যাপটপ থেকে চোখ তুলে সামনের দিকে তাকালো।দেখলো মেঘ রীতিমতো ফ্লোরে গড়াগড়ি খেয়ে হাসছে।আর পাশেই দুটো মেয়ে বোকার মতো ওর দিকে তাকিয়ে আছে।মিহির এবং আহিরকে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আহান ভ্রু জিঙ্গেস করলো
“কিরে তোরা ওদিকে কি দেখছিস?”
আহির মিহির কিছু না বলে ল্যাপটপটা ঘুড়িয়ে দিলো।আহান দেখলো মেঘ ফ্লোরে বসে আইসক্রিম খাচ্ছে আর হাসছে ।আহান গম্ভীর গলায় বললো
“ও এভাবে পাগলের মতো হাসছে কেনো? আর এভাবে ফ্লোরে বসে আইসক্রিম খাচ্ছে কেনো? ওর যে ঠান্ডার সমস্যা আছে তোরা জানিস না?”
মিহির ল্যাপটপটা নিজের দিকে ঘুড়িয়ে বললো
“জানলেও কিছু করার নেই ব্রো ।যেটা মানা করবো সেটা আরো বেশি বেশি করবো।হাজার বার আইসক্রিম খেতে বারন করেছি কিছুতেই শোনে না।”
আহান রেগে বললো
“ভালো কথা ও কখনো শুনেছে? গিয়ে একটা আছাড় মার তাহলে যদি কথা শোনাতে পারিস।”
মিহির মুখটা কালো করে বললো
“তুমি তো জানো ব্রো, আমি আহির কেউই ওকে হার্ট করতে পারিনা।”
“তাহলে আর কি, ও ওখানে বসে আইসক্রিম খেয়ে জ্বর বাধাক।আর তোরা বসে চেয়ে চেয়ে দেখ।”
কাথাটা বলেই আহান রাগে গজগজ করতে করতে ভিডিও কলটা ডিসকানেক্ট করে দিলো।আহির আর মিহির ফোস করে একটা নিশ্বাশ ছাড়লো।তারপর চেয়ার থেকে উঠে এগিয়ে গেলো মেঘের দিকে।আহির ফ্লোর থেকে মেঘকে টেনে দাড় করিয়ে জিঙ্গেস করলো
“কিরে এভাবে হাসছিস কেনো?”
মেঘ অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে বললো
“হাসবো না তো কি করবো ।ভাইয়া এই আপু দুইটা আমাকে বলছে ওরা তোমাদের গার্লফ্রেন্ড। আমি যদি তোমাদের দিকে তাকাই তাহলে আমাকে এই বাসা থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেবে।”
আহির চেচিয়ে বললো
“হোয়াট……”
মিহির শক্ত গলায় মেয়ে দুটোকে উদ্যেশ্য করে বললো
“লাইক সিড়িয়াসলি, তোমারা আমার বাড়িতে দাড়িয়ে আমারই বোনকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছো।তোমাদের সাহস তো কম না।”
মেয়ে দুটো অবাক হয়ে মেঘের দিকে তাকিয়ে রইলো।সাথে সাথে ভয়ও পেলো।একটা মেয়ে ভয়ার্ত গলায় বললো
“সরি ভাইয়া আমরা বুঝতে পাড়ি নি ওনি আপনার বোন হয়।”
মেঘ মনে মনে বললো আরে ব্যাস বয়ফ্রেন্ড থেকে সোজা ভাইয়া, নট ব্যাড।মিহির বললো
“শুধু আমার বোনকে নয়, যদি এই বিল্ডিং এর কাউকে যদি এই ধরনের হুমকি দিয়োছো তাহলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না।”
মেয়েদুটো হ্যা সূচক মাথা নেড়ে ।নিচের দিক তাকিয়ে দাড়িয়ে রইলো।আহীর এতক্ষন মেয়েদুটোর দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো।এবার মেঘের দিকে তাকিয়ে বললো
“ওই তুই আইসক্রিম কেনো খাচ্ছিস? তোর না ঠান্ডার প্রভলেম আছে?”
তারপর বক্সের দিকে তাকিয়ে দেখলো এক বক্স আইসক্রিমের প্রায় তিন ভাগের দুই ভাগই শেষ।আহির চেচিয়ে বললো
“স্টুপিড একসঙ্গে এতোখানি আইসক্রিম কেউ খায়? এখন যদি তোর ঠান্ডা লাগে, গলা বসে যায় তখন কি হবে?”
আহির কথাটা বলেই মেঘের হাত থেকে ছো মেরে আইসক্রিমের বক্সটা নিয়ে নিলো।মেঘ রেগে গিয়ে বললো
দেখ ভাইয়া আমার আইসক্রিম ফেরত দে।নাহলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে।
আহির মেঘের কথায় কোনো পাএা দিলো না।ও আর মিহির আইসক্রিমের বক্সটা নিয়ে গিয়ে ওদের কাজের জায়গায় বসে আবার ল্যাপটপ অন করে কাজ করতে লাগলো।মেঘ বারবার ওর আইসক্রিমটা দিতে বলছে।কিন্তু ওরা দুজন এমন একটা ভাব করে আছে যেনো ওরা মেঘের কোনো কথাই শুনতে পারছে না।এক পযার্য়ে মেঘ ভীষন রেগে , ওদের দুজনের ল্যাপটপ নিয়ে জোড়ে ফ্লোরে আছাড় মাড়লো।অবশ্য এইটকু আছাড়ে ল্যাপটপের কিছুই হয় নি ।আহির, মিহির ম্যানেজার ভয়ে তিনজনই বসা থেকে দাড়িয়ে গেলো।মিহির চেচিয়ে বললো
“বনু তুই এটা কি করলি ।আমার ল্যাপটপ কেনো আছাড় মারলি। আইসক্রিম তো আহির নিয়েছে।”
আহির অবাক হয়ে বললো
“ওই ভাইয়ার শালা।তুই এবার আমায় ফাসিয়ে দিচ্ছিস।”
মেঘ চেচিয়ে বললো
“দেখ আমি এতো কিছু শুনতে চাই না ।এখনি তোরা আমার আইসক্রিম ফেরত দে।”
মিহির বললো
“খাওয়াচ্ছি আমি তোকে আইসক্রিম।”
বলেই মিহির আইসক্রিমের বক্সটা উল্টো করে মেঘের মাথায় সব আইসক্রিম ঢেলে দিলো।মেঘ রেগে আ—— বলে জোরে একটা চিৎকার দিলো।মেঘের এরকম অবস্থা দেখে সেই মেয়ে দুটো মুখ টিপে হাসছে।মেঘ হুমকির সুরে মিহির আর আহিরের দিকে তাকিয়ে বললো
“হিসাবটা তোলা রইলো।তোদের আমি পরে দেখে নেবো।”
মেঘ রাগে গজগজ করতে করতে নিচে চলে গেলো।মেঘকে এভাবে রাগতে দেখে মিহির আহির হু হা করে হেসে দিলো।
#ভালোবাসার_অনূভুতি
#লেখিকাঃতানিশা_তিশা_মনি
#পর্ব_10
: সকালে আর্লামের শব্দে ঘুম ভাঙলো আহির আর মিহিরের।দুজন চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষন বিছানায় মোড়ামোড়ি করে উঠে বসলো।ঘুমু ঘুমু চোখে দুজন দুজনের দিকে তাকাতেই ওদের সব ঘুম উড়ে গেলো।ওরা দুজন দুজনের দিকে কিছুক্ষন স্তব্দ হয়ে তাকিয়ে থেকে জোড়ে আ্ আ্ আ্ বলে একটা চিৎকার দিলো।এতো জোড়ে চিৎকার দেওয়ায় মনে হচ্ছে বাড়ি কেপে উঠেছে। ওদের চিৎকার শুনে মেঘ ঘুমের ঘোড়ে ভয় পেয়ে ধরাম করে বিছানা থেকে পড়ে গিয়ে সেও আ্ আ্ আ্ বলে জোরে চিৎকার দিলো।মিড়া রহমান এবং আজম রহমান আহির আর মিহিরের চিৎকার শুনে দৌড়ে সিড়ি দিয়ে উপড়ে উঠছিলেন তখনি আবার মেঘের চিৎকারও শুনতে পেলেন।ওনারা দুজনই কনফিউসড হয়ে সিড়িতে দাড়িয়ে গেলেন ।ভাবছেন কার রুমে আগে যাবেন? তারপর বেশি কিছু না ভেবে ওনারা মিহিরদের রুমে চলে গেলেন।গিয়ে যা দেখলেন তাতে ওনাদের মুখ হা হয়ে গেলো। ওনারা চোখ বড় বড় করে কিছুক্ষন মিহির আর আহিরের দিকে তাকিয়ে থেকে হু হা করে হেসে দিলেন।মেঘ বিছানা থেকে পড়ে গিয়ে কোমরে ব্যাথ্যা পেয়ে ওর ঘুম ভেঙে গেলো।ও হাত দিয়ে কোমর চেপে ধরে ভাবছে, চিৎকারটা কে দিলো?পরক্ষনেই ওর কাল রাতের সব কথা মনে পড়ে গেলো।ও কোমরে ব্যাথ্যা ট্যাথ্যা সব ভুলে গিয়ে বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে মিহিরের রুমের দিকে দৌর দিলো।মেঘ গিয়ে দেখলো আজম রহমান এবং মিড়া রহমান হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। আর আহির মিহির রেগে বোম হয়ে দাড়িয়ে আছে।মেঘ গিয়ে ওদের সামনে দাড়ালো এবার ও সাজটা ভালো করে দেখতে লাগলো
দুজনের কপালে লাল লিভষ্টিক দিয়ে গোল করে বড় একটা টিপ দেওয়া।ব্রুতে পিঙ্ক লিভষ্টিক দিয়ে আর্ট করা।ঠোটে ব্লাক আই ব্রু দিয়ে আর্ট করা।দুই কালারেল নেলপলিশ দিয়ে দুই গালে ক্রস চিহ্ন দেওয়া।সাড়া মুখে হলুদ কালারের কনসেলার দেওয়া।মেঘ হাসতে হাসতে গিয়ে ওদের বেডের উপর শুয়ে পড়ে। মিহির রেগে চিল্লিয়ে বলে
“যাষ্ট স্টপ ইট”……
মিহিরের ধমকে সবাই চুপ হয়ে যায়।আহীর দাতে দাত চেপে বলে
“মেঘ এটা কোন ধরনের মজা?”
মেঘ বুঝলো তার ভাইয়েরা ভীষন রেগে গেছে।কিন্তু তাতে তার কি? সে একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো
“আজব আমি আবার কি করলাম। বাই দ্যা ওয়ে, তোমাদের কিন্তু অনেক কিউট লাগছে।”
আহীর বললো
“Didn’t act over smart okey. আমরা জানি এটা তোর কাজ।”
মেঘ অবাক হওয়ার ভান করে বললো
“আমার কাজ? আমার মতো সুইট, কিউট, ইনোসেন্ট একটা মেয়ে এই ধরনের কাজ কখনো করতে পাড়ে।আর তাছাড়া কি প্রমাণ আছে যে এইসব আমি করেছি?”
মিহির রিডিং টেবিল থেকে হাতে একটা স্কেল নিয়ে মেঘের দিকে এগিয়ে গিয়ে রাগি গলায় বললো
“তোর প্রমান লাগবে তাই না।দিচ্ছি আমি তোকে প্রমান।”
মেঘ সোয়া থেকে উঠে দাড়িয়ে বললো
“আমাকে একদম মারার চেষ্টা করবি না।আর যদি মাড়িস তাহলে তোদের এই সুন্দর চেহারার কিছু পিক আমার ফোনে আছে।সেগুলো F.B. তে পোষ্ট করে দেবো।আর ক্যাপশনে লিখবো আমার দুই কিউট সিষ্টার ।”
বলেই মেঘ একটা ভাব নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।মিরা রহমান এবং আজম রহমানও হাসতে হাসতে বেড়িয়ে গেলো।মিহির আর আহির বোকার মতো কিছুক্ষন মেঘের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।
_________________________
চৌধুরী বাড়ি…….
সাঈফা আর সাড়িকা একে অপরের চুল ধরে টানাটানি করছে ।কারন হলো ওয়াশরুমে আগে কে যাবে।সাঈফা বলছে ও আগে যাবে ।আর সাড়িকা বলছে ও আগে যাবে।শুধু চুল টানাটানি করছে না চিল্লাচিল্লি করে পুরো বাড়ি মাথায় উঠিয়েছে।ওদের ঝগরা শুনে ওদের মা আর চাচি দৌড়ে এলেন।সাঈফার মা একটা ধমক দিয়ে বললেন
“এইটা কোন ধরনের অসভ্যতা? তোমরা কি এখনো বাচ্চা? রোজ রোজ কিছু না কিছু নিয়ে যে তোমাদের ঝগড়া করতেই হবে?”
সাড়িকা সাঈফা একে অপরের চুল ছেড়ে দড়জার দিকে তাকালো।ওদের মা আর চাচি রাগি মুড নিয়ে দাড়িয়ে আছে।দুজনেই শুকনো একটা ডোক গিললো। সাঈফা বললো
“আম্মু ঘুম থেকে আগে আমি উঠেছি।তাই আমি আগে ওয়াশরুমে যাবো।”
সাড়িকা বললো
“কিন্তু ও ঘুম থেকে উঠে বেডে শুয়েছিলো।আমি আগে বেড থেকে আগে নেমেছি। তাই আমি আগে যাবো।”
ওদের মা ঝাঝালো গলায় বললো
“গতো বিশ মিনিট ধরে তোমরা ঝগড়া করছো।এতোক্ষনে দুই জনেরই ফ্রেস হওয়া হয়ে যেতো।এই সামান্য একটা বিষয় নিয়ে তোমরা কেনো ঝগড়া করছো।আর তাছাড়া এই বাড়িতে প্রায় প্রত্যেকটা রুমে একটা করে ওয়াশরুম। তোমাদের দুজনের একজন আমার রুমে বা ছাহীরের রুমের ওয়াশরুমে চলে যাও।”
“সাঈফা জেদি গলায় বললো
আমি আমার ওয়াশরুমেই যাবো।তুমি সাড়িকা কে বলো তোমাদের টায় যেতে।”
সাড়িকাও জেদি গলায় বললো
“আমিও আমার ওয়াশরুমেই যাবো। ”
ওদের চাচি ধমক দিয়ে বললো
“সাট আপ। এই বিষয় নিয়ে আর একটা কথাও বলবে না তোমরা দুজন।আমরা এখন নিচে যাচ্ছি ।এই রুম থেকে যদি আর তোমাদের ঝগরার একটা শব্দও বের হয় ।তাহলে আজকে থাপ্পর একটাও মাটিতে পড়বে না।”
বলেই ওনারা রুম থেকে গটগট করে বের হয়ে গেলেন।সাড়িকা ওর মা চাচির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আনমনে খাটের উপর বসে পড়লো।সেই সুজোগে সাঈফা এক দৌড়ে ওয়াশরুমের ভিতরে ঢুকে গেলো।আর সাড়িকা হা করে ওয়াশরুমের দিকে তাকিয়ে রইলো।তারপর চেচিয়ে বললো
” সাইফার বাচ্চা তোকে একবার হাতের কাছে পাই, থাপ্পর মেরে তোর সব দাত ফেলে দেবো । চিটার একটা”
_________________________
মেঘ ফ্রেস হয়ে রেডি হয়ে নিচে আসলো।এসে দেখলো আজম রহমান আর মিরা রহমান ব্রেকফাস্ট করছে ।মেঘ মিষ্টি হেসে ওনাদের গুড মনিং বললো। বিনিময়ে ওনারাও মেঘকে গুড মনিং বললেন।মেঘ আহির আর মিহিরের কথা জিঙ্গেস করলে মিরা রহমান বলেন ওরা অলরেডি ব্রেকফাস্ট করে অফিসে চলে গেছে।মেঘও আর কিছু না বলে খাওয়া শেষ করলো।তারপর বাইরে বের হয়ে রিকশা নিয়ে ভার্ষিটির উদ্যশ্যে বেড়িয়ে পড়লো। কিছুক্ষণ পর আজম রহমান তার গাড়ি নিয়ে অফিসের উদ্যশ্যে বেড়িয়ে পড়লেন। আর মিড়া রহমানও তার গাড়ি নিয়ে হসপিটালের উদ্যশ্যে বেড়িয়ে পড়লো। ওনি এখন মোনা খানদের হসপিটালের একজন ডাক্তার।তিন বছর আগেই সেই হসপিটালে জয়েন করেছেন।এবং তিনি ওই হসপিটালের বেষ্ট ডাক্তারের মধ্যে একজন।
_________________________
মেঘ ভার্ষিটি পৌছে রিকশা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে গেটের দিকে হাটা দিলো। গেট দিয়ে ভিতরে ডুকতেই ও দেখতে পেলো সাড়িকা সাঈফা দাড়িয়ে দাড়িয়ে একটা ছেলের সাথে কথা বলছে।ছেলেটাকে দেখে মেঘের ঠোটের কোনে হাসি ফুটে উঠলো।ও ছেলেটার কাছে এগিয়ে গিয়ে জিঙ্গেস করলো
“কেমন আছেন অভি ভাইয়া।”
অভি মৃদু হেসে মেঘকে উদ্যেশ্য করে বললো
“ভালো আছি মাই কিউট সিসটার।”
মেঘ অভিকে জিঙ্গেস করে
“ভাইয়া আপনি হটাৎ এখানে কেনো, কোনো কাজে এসেছেন?”
“তোমাদের তিন জনকে মিস করছিলাম তো। তাই তোমাদের দেখতে আসলাম।”
মেঘ চোখ ছোটো ছোটো করে বললো
“কি ডাহা মিথ্যাকথা।আপনারা বাংলাদেশে আসছেন ছয় মাস হয়ে গেছে। আর এই ছয় মাসে আপনার সাথে আমার মাএ তিনবার দেখা হইছে।একবার আপনাদের এয়ারপোর্টে রিসিভ করতে গেছি তখন, আর দুই বার হসপিটালে হিমা আপুর বেবি হইছে তখন।আপনি একবারও আমার সাথে ইচ্ছে করে দেখা করতে আসছেন।তারপর আবার আপুর বেবি হওয়ার জন্য আপনার কাছে ট্রিট চাইলাম ।আপনি কালকে দেবো বলে সেই যে ভেগেছেন এরপর আর আপনাকে খুজেই পেলাম না।”
অভি এতোক্ষন মেঘের দিকে হা করে তাকিয়ে থেকে ওর কথা শুনছিলো।এবার ফিক করে হেসে দিয়ে বললো
“ওরে বাবা আমার নামে এতো অভিযোগ।আই এ্যাম ভেরি সড়ি কিউটি।আসলে আমার নিউ জব তো, তাই জন্য প্রথম প্রথম বেশি ছুটি ছুটি নিতে পারছি না। এখন থেকে আর ভুল হবে না মাঝে মধ্যে তোমাদের সাথে এসে দেখা করে যাবো। আর বাকি রইলো ট্রিট এর কথা ।সেটা তো রিয়ান আমাকে বললো ও তোমাকে আলিশাকে, সাড়িকাকে, সাঈফাকে ট্রিট দিয়েছে।তাই আমাকে আর দিতে হবে না।”
মেঘ রেগে বললো
“রিয়ান ভাইয়া ট্রিট দিয়েছে কারন ওনি বাবুর আব্বু।আর আপনি দিবেন কারন আপনি বাবুর চাচ্চু।”
অভি হেসে বললো
“আচ্ছা ঠিকাছে তাহলে চলো এখন কোনো রেষ্টুরেন্টে যাই।”
“না অন্য একসময় যাবো। এখন আমাদের ক্লাস আছে।”
অভি বললো
“okey. As your wish. ”
সাড়িকা অভিকে উদ্যেশ্য করে জিঙ্গেস করলো
“ভাইয়া আপনি এখানে কোনো এসেছেন সেটাই তো বললেন না।”
“একটা জরুরি কাজে এসেছিলাম আমার এক বন্ধুর কাছে।”
তারপর ওরা আরও কিছুক্ষন টুকিটাকি কথা বলে অভি নিজের কাজে চলে গেলো।আর মেঘ, সাড়িকা ,সাঈফা ভার্ষিটির ভিতরে চলে গেলো।
আসলে ছয় মাস আগে হিমা রিয়ান আর অভি বাংলাদেশে এসে পড়েছে।হিমা তখন চার মাসের প্রেগনেন্ট ছিলো।পনেরো দিন আগে হিমার গ্রিন এভার হসপিটালে সিজাড়িং এ মেয়ে হয়েছে।আহান আর হিয়ান হিমাদের সাথে আসতে পারেনি কারন ওরা বিজনেসের কাজে আটকে গিয়েছিলো।
_________________________
ভার্ষিটি ছুটি হলে মেঘ সাড়িকা সাঈফা একে অপরের থেকে বিদায় নিয়ে যার যার বাসায় চলে যায়। মেঘ বাসায় এসে দেখে দুইজন সাভেন্ট ছাড়া বাসায় আর কেউ নেই।মেঘ ওর কাধের ব্যাগটা সোফায় রেখে একজন সার্ভেন্ট এর উদ্যেশে জিঙ্গেস করে
“আন্টি মা বাবা ভাইয়া কোথায় ? ওনাদের তো এতক্ষনে এসে পড়ার কথা?আসেনি এখনো?”
মহিলাটি মেঘের দিকে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিয়ে বললো
“মিড়া ম্যাম আর আজম স্যার দুজনেই বারোটার দিকে এসেছিলো।তারপর তাড়াহুরো করে রেডি হয়ে আবার বেড়িয়ে গেছে।যাওয়ার আগে বলে গেছে সাঈফা মামুনিদের বাড়ি যাচ্ছে।তোমাকে অনেকবার ফোন করেছে কিন্তু পায়নি।তুমি বাসায় আসলে যেনো তারাতাড়ি রেডি হয়ে ওই বাড়িতে চলে যাও।আর মিহির বাবা অফিস থেকে সরাসরি ওই বাড়িতে চলে যাবে।”
মেঘ পানি খেয়ে গ্লাসটা মহিলাটার কাছে দিয়ে দিলো।তারপর ব্যাগ খুলে ফোনটা বের করে দেখে মিরা রহমানের পাচটা মিসড কল। মেঘ জিভ কাটলো ।ক্লাসে ডুকে ফোনটা সাইলেন্ট করেছিলো ।তাই রিংটোন এর শব্দ শুনতে পায়নি।
মেঘ তাড়াতাড়ি মিরা রহমানের নম্বরে ডায়াল করলো। প্রথমবার রিন হয়ে কেটে গেলো দ্বীতিয় বার দুইটা রিন হতেই ফোন রিসিভ করে মেঘকে কিছু বলার সুজোগ না দিয়ে মিরা রহমান ঝাঝালো কন্ঠে বললো
“কি সমস্যা তোমার মেঘ? কতোবার কল করেছি একবারও রিসিভ করার প্রয়োজন মনে করোনি? যদি সময় মতো ফোন রিসিভ করতেই না পারো তাহলে ফোন কেনো চালাও?”
মেঘ নিচু গলায় বললো
“আ’ম সরি মা।আসলে ক্লাসে ছিলাম তাই ফোন সাইলেন্ট করে ব্যাগের মধ্যে রেখেছিলাম দেখতে পাইনি। কিন্তু তুমি ফোন কেনো করেছিলে।”
মিরা রহমান ব্যাস্তোতার ভঙ্গিতে বললো
“তোমার হিমা আপুর শ্বশুর বাড়ি থেকে মেহমান আসবে হিমার বেবিকে দেখার জন্য। আজকে সকালেই ওনারা ফোন করে জানিয়েছেন।আমরা সবাই তোমার মামাদের বাসায় আছি ।তুমিও এখানে এসে পড়।”
“আমি গিয়ে কি করবো ।তোমরা তো আছো।তাছাড়া আমি অনেক টায়ার্ড এখন যেতে পাড়বো না।”
মিরা রহমান রেগে বললেন
“আমাকে রাগাবে না মেঘ ।চুপচাপ সুন্দর করে রেডি হয়ে এখানে চলে এসো।তোমার কাছে শুধুমাত্র আধঘন্টা টাইম আছে। তার মধ্যে তোমাকে আমি এই বাড়িতে আমার চোখের সামনে দেখতে চাই।”
মেঘ ওকে বলে ফোনটা কেটে দিলো ওর ইচ্ছে করছে ফ্লোরে হাত পা ছড়িয়ে চিৎকার করে কাদতে।কিন্তু এখন কাদলে বেশি দেরি হয়ে যাবে।তাই কান্নার প্লান ক্যান্সেল করে তারাতাড়ি উপরে ওর রুমে চলে গেলো। রুমে গিয়ে সাওয়ার নিয়ে রেডি হয়ে নিলো।মেঘ গাড় ব্লু রঙের একটা গাউন পড়েছে।গাউনটার উপরে সাদা রঙের পাথর দিয়ে হালকা কাজ করা।সাথে ম্যাচিং করা সাদা রঙের ল্যাগিন্স, সাদা এন্ড ব্লু রঙের কম্বিনেশনের ওরনা, সাদা রঙের হিজাব। কানে সাদা ষ্টোনের ছোট্ট দুইটা টব পড়েছে।গলায় একটা সাদা ষ্টোনের পেনডেন্ট। একহাতে সাদা ষ্টোনের চওরা একটা বেসলেট। ঠোটে হালকা পিংঙ্ক লিভষ্টিক , চোখে হালকা কাজল।মেঘ রেডি হয়ে নিচে গিয়ে সার্ভেন্টদের বাই বলে বাসার বাইরে আসলো।বাইরে এসে দেখলো ড্রাইবার গাড়ি নিয়ে দাড়িয়ে আছে মেঘ মুচকি একটা হাসি দিয়ে গাড়িতে উঠে পড়লো।কিছুক্ষন পর গাড়ি এসে মেঘের মামাদের বাসার সামনে থামলো । মেঘ গাড়ি থেকে নেমে বাসার সামনে গিয়ে কলিংবেল বাজালো।কিছুক্ষন পর সাঈফা এসে দরজা খুলে দিলো।তারপর মেঘকে দেখে আপু বলে চিৎকার দিয়ে জড়িয়ে ধরলো।সাঈফাকে দেখে মনে হচ্ছে যেনো ও মেঘকে দেখে হাতে আকাশের চাদ পেয়ে গেছে। মেঘ সাঈফা কে নিজের থেকে ছারিয়ে সন্দীহান চোখে তাকিয়ে জিঙ্গেস করে
“কী ব্যাপার বলতো? হটাৎ এতো ভালোবাসার কারন? আমাদের তো একটু আগেই দেখা হলো তখন তো তুই ঠিক ঠাকই ছিলি হটাৎ তোর আবার কি হলো?”
সাঈফা একটা মেকি হাসি দিয়ে মেঘকে হাত ধরে ভিতরে নিয়ে যেতে যেতে বললো
“বলছি আগে ভিতরে এসো।”
মেঘ ভিতরে ডুকেই দেখলো ওর বাবা মামারা সবাই ড্রয়িংরুমে বসে আছে।মেঘ হাটতে হাটতে হটাৎ একজনকে দেখে ওর পা থেমে গেলো।চোখ বড় বড় করে সেই লোকটার দিক তাকিয়ে রইলো।ওর মনে হচ্ছে ও ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছে।মেঘকে এভাবে দাড়িয়ে যেতে দেখে সাঈফা মেঘের কানে কাছে ফিসফিসিয়ে বললো
“তোমার আবার কি হলো? এভাবে স্টাচু হয়ে দাড়িয়ে আছো কেনো?”
সাঈফার কথায় মেঘের হুস ফেরে ।মেঘও সাঈফার মতো ফিসফিসিয়ে বলে
“সাঈফা আমার না, কালকে রাতে ঘুম হয়নি। তাই মনে হচ্ছে ঘুমের ঘোড়ে চোখের সামনে উল্টো পাল্টা দেখছি।আমার হাতে জোরে একটা চিমটি কাটতো।”
“সেটা নাহয় কাটলাম।কিন্তু তোমার কালকে রাতে ঘুম কেনো হয়নি?”
মেঘ ধীর কন্ঠে ধমক দিয়ে বললো
“সেটা তোকে পড়ে বলছি। তুই আগে চিমটি কাট।”
সাইফা বিরক্তি নিয়ে মেঘকে জোড়ে একটা চিমটি কাটলো। মেঘ আম্মুগো বলে একটা চিৎকার দিলো।হটাৎ মেঘের এরকম চিৎকারে সবাই হকচকিয়ে ওদের দিক তাকালো।কিন্তু মেঘের সেদিকে খেয়াল নেই। মেঘ বুঝলো ও স্বপ্ন দেখছে না এটা সত্যি।ও অস্পষ্ট গলায় কন্ঠে বললো
“আ্ আহান ভ্ ভাইয়া।”
চলবে…….
#চলবে