#Game_2
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_৪
নির্ঝর মেহেরিন কে পেছন থেকে ডাক দেয়। কিন্তু মেহেরিন সাড়া দেয়। নির্ঝর দৌড়ে মেহেরিন’র সামনে এসে দাঁড়ায়। মেহেরিন ভ্রু কুঁচকে বলে..
– এটা কোন ধরনের বেয়াদবি।
– আসলে এটা কোন ধরনের বেয়াদবি, কখন থেকে ডাকছি সাড়া দেও নি কেন।
– আমার ইচ্ছা তাই!
– আমার ও ইচ্ছা হলো তোমার সামনে এসে দাঁড়াবো তাই আমিও দাঁড়ালাম।
মেহেরিন কিছু না ইগনোর করে পাশ দিয়ে চলে যায়। নির্ঝর আবারও দৌড়ে মেহেরিন’র পাশে হাঁটতে হাঁটতে বলে..
– কথায় কথায় এতো রাগ করো কেন বুঝি না।
– আপনার এতো বুঝে কোনো কাজ নেই।
– আচ্ছা এটা তো বলো গান টা কেমন লাগলো।
– কার গান?
– কার গান মানে আমার গান!
– আপনার গান আমি আবার কখন শুনলাম?
– ইশ একটু আগেই দেখলাম টুল’র ওপর দাঁড়িয়ে আবার গান শুনলে তুমি।
– এক্সকিউজ মি! আমি আপনার গান শুনতে যায় নি, এটা আমার প্রিয় শুধু এটা জানতে গিয়েছিলাম গান টা কে গাইছে ।
– ওই তো একই!
– না এক না আপনি একটা কপিবাজ। আমার প্রিয় গান টা কপি করে নিজে গেয়েছেন, আবার কথা বলছেন।
– ইশ কি বলো যে তুমি।
– আসলেই আপনার সাথে কথা বলে লাভ নেই।
– আরে আছে আছে অনেক লাভ আছে কিন্তু তুমি বুঝতেই চাইছো না।
– বোঝার ইচ্ছে নেই।
বলেই মেহেরিন গাড়িতে উঠে বসল। নির্ঝর গাড়ির দরজা ধরে ফেলল।মেহেরিন বলে উঠে…
– কি চাই আপনার!
– চাই তো অনেক কিছু কিন্তু কথা হলো তুমি ঠিক কতোটা দেবে আমায়।
– বাজে কথা বাদ দিন।
– না বাজে কথা না একটা সিরিয়াস কথা বলতে এসেছি।
– আপনি আবার সিরিয়াস কথা।
– শোন তো জানো আমাদের আবার দেখা হবে।
– কোনো ইন্টারেস্ট নেই আপনার সাথে দেখা হবার।
– এখন নেই তো একদিন তো হবে।
– আশা করবো তা যেনো না হয়!.
বলেই মেহেরিন গাড়ির দরজা আটকে চলে যায়। নির্ঝর সেখানে দাঁড়িয়ে শান্ত গলায় বলে…
– তুমি না চাইলেও আমাদের আবারও দেখা হবে মেহু পাখি!
বলেই বাঁকা হাসি দেয় নির্ঝর!
.
মেহেরিন গাড়ি থেকে নেমেই রেগে বাসায় ঢোকে। তাকে দেখে সবাই অনেকটা অবাক হয়। মেহেরিন এসেই ধপাস করে সোফায় বসে জোরে জোরে বলে..
– পানি দাও আমি পানি খাবো।
রোদ্দুর বলে উঠে..
– কি হলো রেগে আছিস কেন?
– এমনেই মন চাইলো তাই।
ইহান বলে উঠে..
– আরে মেজাজ তো দেখি আজ তিরিক্ষি। কি হয়েছে?
– কি হয়েছে শুনবি কি হয়েছে….. ( সব ঘটনা বললো )
কাব্য সব শুনে বলে উঠে..
– নিরবের এতো সাহস ও আবার তোকে ঝালাচ্ছে।
– নিরবের টা বাদ দে ওই ছেলেটা কি জানি নাম.. ধুর মনেও পড়ছে না যাই হোক জানিস তার স্বভাব কেমন লেজ কাঁটা ব্যাঙ এর মতো।
রোদ্দুর বলে উঠে..
– জান ব্যাঙ’র কি লেজ থাকে।
– থাকে না বলেই তো সে লেজ কাঁটা ব্যাঙ। আর এই নামটা ওই ছেলেটার সাথেই মানায়। জ্বালিয়ে মারল আজ আমাকে।
ইহান বলে উঠে..
– তাহলে আজ মেহেরিনও কারো কাছে জব্দ হলো কি বলো।
– হুহ
বলেই মেহেরিন রেগে ঘরে চলে গেল। ঘরে এসেই তার বিড়াল কে খেলতে বসে পড়ল। অতঃপর সে তার বিড়াল কে আজকের সব ঘটনা খুলে বলল। মেহেরিন বলে উঠে..
– তুই বল তো বিড়াল বাচ্চা এখানে সবাই আমাকে নিয়ে কেন হাসছে? দোষ কি আমার! দোষ তো ওই লেজ কাটা ব্যাঙ টার। আজ সারাটা দিন শুধু আমার পিছনেই লেগে ছিল। হুহ!
এদিকে বিড়াল মশাই কিছু না বুঝতে পেরে মিয়াও মিয়াও করতে লাগলো। মেহেরিন আবারো তাকে লোকে নিয়ে একগাদা গল্প করতে শুরু করল।
.
রাতে মেহেরিন দাঁড়িয়ে আছে জেলখানার গারদের বাইরে। কারো সাথে দেখা করতে এসেছে সে। গারেদের দরজা খুলার পর মেহেরিন ভেতরে ঢুকল। ক্যাট জীর্ণশীর্ণ অবস্থায় বসে আছে মেঝেতে। চোখের নিচ কালো হয়ে গেছে, ফর্সা মুখের হাল আজ বেহাল। মেহেরিন কে দেখে ক্যাট উঠে দাঁড়াল। অবাক হয়ে বলে উঠল..
– তুমি এখানে!
– দেখতে এলাম তোমায়!
ক্যাট তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে..
– ভালোই আছি। কিছু বলবে!
– হুম তুমি চাইলে পালাতে পারতে এখান থেকে পালাও নি কেন?
ক্যাট আবার ও হেসে বলল..
– বাইরে গেলে বাঁচতে পারবো না, তারা কেউ আমাকে বাঁচতে দিবে না এখানে আছি ভালো আছি।
মেহেরিন মুচকি হেসে বলে..
– বেঁচে থাকার অনেক ইচ্ছা দেখছি তোমার।
জবাবে ক্যাট একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। মেহেরিন আবারো বলে উঠে..
– এখনো বাঁচতে চাও কেন?
– জানি না তবে বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করছে। হয়তো কিছু আছে আমার জন্য!
– ভালোবাসতে কাব্য কে?
ক্যাট দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে..
– এখনো বাসি! জীবনে প্রথমবার কাউকে ভালোবেসে ছিলাম কিন্তু হয়তো আমার পাপের কারনে আল্লাহ তাকে আমার ভাগ্য থেকে সরিয়ে নিয়েছেন।
মেহেরিন মৃদু হেসে বলে..
– আল্লাহ চাইলে সবকিছুই পাওয়া যায় আবার কিছুই পাওয়া যায় না। যদি তোমার ভাগ্যে কিছু থাকে তাহলে তুমি পাবে।
বলেই চলে যায় মেহেরিন। ক্যাট দেওয়ালে মাথা ঠেকিয়ে রাখে, দু ফোঁটা নোনা জল গড়িয়ে পড়ে তার চোখ থেকে।
.
বাসায় আসার পর মেহেরিন কয়েকবার বাসার কলিং বেল বাজাতে লাগলো। কিন্তু কেউ এসে দরজা খুলল না। মেহেরিন ফোন ও করল কিন্তু ফোন কেউ ধরল না। মেহেরিন’র কেমন একটা সন্দেহ হলো। সে গান টা বের করে দরজা হাত দিতেই তা খুলে গেল। মেহেরিন মিটি মিটি পায়ে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করল। বসার ঘরে প্রবেশ করতেই হুট করে সব লাইট জ্বলে উঠলো। অনেক বেলুন ফুটল তার সাথে আরো আওয়াজ মেহেরিন লাফিয়ে উঠল। অতঃপর মেহেরিন সামনে তাকিয়ে দেখে শান্ত আর অরনি হাতে বেলুন নিয়ে তাকে দেখে লাফিয়ে লাফিয়ে বলছে..
– হ্যাপি বার্থডে খালামনি, হ্যাপি বার্থডে ফুফুজান!
মেহেরিন একটু চমকে উঠলো। অতঃপর সবাই এসে তাকে উইস করল। ডেভির ও এসে তাকে উইস করল। শুভ্র খান ভিডিও কল করে তাদের সাথে যোগ দিলেন। অতঃপর মেহেরিন কেক কাটল সবাই হাততালি দিলো। দা অ্যানাউসমেন্ট করলেন কালকে বার্থডে উপলক্ষে বাসায় অনুষ্ঠান থাকবে। একথা শুনে মেহেরিন খুশিতে লাফিয়ে উঠলো। সে রাতে আর কারো ঘুম হলো না। হৈ চৈ করে সবাই রাত পার করে দিলো।
.
পরেরদিন কেউই তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠতে পারে নি। সবার ঘুম ভাঙতে ভাঙতে দুপুর হতে চলল তবে মেহেরিন’র ঘুম ভাঙতেও তার মতো আলসেমি করল। সে অনুষ্ঠানের ঠিক দু’ঘন্টা আগে ঘুম থেকে উঠলো।
উঠে দেখে পুরো বাড়িতে মানুষ কাজ করছে। সবাই কাজে ব্যস্ত। শান্ত আর অরনি কয়েকটা জামা এনে মেহেরিন কে বলছে কোনটা পড়বে। মেহেরিন তাদের জামা পছন্দ করে দেওয়ার পর তারা নাচতে নাচতে চলে যায় তৈরি হবার জন্য। মেহেরিন এসে সোফায় বসে সবার কাজ দেখতে থাকে। তখন দা আসে মেহেরিন’র জন্য খাবার নিয়ে। মেহেরিন কে খাওয়াতে থাকে সে।
যথারীতি সময়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়, একে একে সব মেহমান আসতে থাকে। নিহা আর নিশি মেহেরিন কে নিয়ে আসে। একটা মেরুন রঙের গাউন পরা সে। ভারী মিষ্টি লাগছে দেখতে তবে মুখে কোনো সাজ নেই। মাথার চুল গুলো ছেড়ে রেখেছে। পার্টির থিম হিসাবে সবাইকে পার্টি মাস্ক পড়তে হয়। মেহেরিন ও একটা পার্টি মাস্ক পরে নেয়। প্রায় অনেকক্ষণ ধরেই অনুষ্ঠান চলতে থাকে। হঠাৎ করেই লাইট সব অফ হয়ে যায়। একটা লাইট জ্বলে উঠে, কতো গুলো মেয়ে আর তাঁদের সাথে তাদের পার্টনার প্রবেশ পরে মনে হচ্ছে তারা নাচতে এসেছে। গানের সুর বাজতে থাকে। একটা ছেলে প্রবেশ করে। মেহেরিন তাকিয়ে আছে তার দিকে। একটা ব্লাক রঙের কুর্তা পড়া। তার মুখেও মাস্ক। সে মাইক নিয়ে গান গাইতে শুরু করে..
Bulave tujhe yaar aaj meri galiyan
Basaun tere sang main alag duniya
Bulave tujhe yaar aaj meri galiyan
Basaun tere sang main alag duniyaa
Na aayein kabhi dono mein zara bhi faasle
Bas ek tu ho, ek main hoon aur koyi na
Hai mera sab kuch tera tu samajh le
Tu chaahe mere hakk ki zameen rakh le
Tu saanson pe bhi naam tera likh de
Main jiyu jab jab tera dil dhadke
সবাই নাচতে শুরু করে। ইহান এসে নিশি কে নিয়ে নাচতে যায় তো কাব্য এসে মেহেরিন কে টেনে নিয়ে নাচতে যায়। সবাই একসাথে নাচতে থাকে তবে এখানে মেহেরিন’র তাকিয়ে থাকে সেই ছেলেটার দিকে। কেন জানি তাকে চেনা চেনা লাগছে তার কাছে। হুট করেই সবাই তার পার্টনার কে ঘুরিয়ে দেয়। মেহেরিন এসে পড়ে সেই ছেলেটার কাছে। ছেলেটা গান গেতে গেতে মেহেরিন হাত ধরে তাকে নিয়ে নাচতে থাকে। মেহেরিন তার ঘাড়ে হাত দিয়ে নাচছে আর তার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। কোথাও যেন দেখেছে এই চোখ সে। দুজনেই এভাবে নাচতে থাকে। দূর থেকে আহিয়ান আর নিহা দেখতে থাকে তাদের। আহিয়ান বলে উঠে..
– এই তাহলে সে!
– হুম!
– তুমি ইচ্ছে করেই নিশি ওদের পাঠালে নাহ যেন তারা একসাথে নাচতে পারে।
নিহা হেসে বলে..
– যখন ব্যাংকক এ ছিলাম তখন ওর বার্থডে ছিল। গিফট হিসাবে সে মেহেরিন’র সাথে নাচতে চেয়েছিল। তাই আর কি!
– যেমন বোন তারও তেমন’ই বোন। তবে যদি মেহেরিন জানতে পারে কি হবে!
– কি হবে?
– দেখোই না তোমার বোন কি করে!.
– আমার বোন তো যা করবে ধামাকাই করবে।
– আসলেই করবে!
.
নাচ শেষ হয়, ছেলেটা মেহেরিন’র কোমরে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। মেহেরিন’র হাত তার ঘাড়ে। মেহেরিন ইচ্ছে করেই তার ঘাড়ে হাত রেখেছে কারন সে তার মাস্কের ফিতা খুলছে। এদিকে সে তাকিয়ে আছে তার দিকে। এর মধ্যেই মাস্ক টা খুলে যায়। মেহেরিন তার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে! অতঃপর…
#চলবে….