Game 2 পর্ব -৫৭+৫৮

#Game_2
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_57+58

সকালে নীলাশা ঘুম থেকে উঠে নীলের ঘরে আসল। নীল এখনো ঘুমাচ্ছে আর তার সাথে রাইয়ান ও! নীলাশা খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে নীল কে দেখল অতঃপর রাইয়ান’র কপালে একটা চুমু খেয়ে রান্না ঘরে চলে এলো। তখনও কেউ উঠে নি! নীলাশা রান্না করতে লাগলো সবার জন্য।‌কিছুক্ষন’র মধ্যেই সার্ভেন্ট এসে হাজির হলো। সে নীলাশা কে সাহায্য করতে লাগলো।

একে একে সবাই আসতে লাগল। নীলাশা দ্রুত রান্না ঘর থেকে চলে গেল। নীল তাকে রান্না ঘরে দেখলেই আজ ব্রেকফাস্ট না করেই চলে যাবে এটা তার অজানা নয়।
নীলাশা আবারো নীলের রুমে আসল। দেখল নীল রাইয়ান কে কোলে নিয়ে খেলছে। এজন্য’ই রাইয়ান ঘুম থেকে উঠার পর কাঁদেনি। নীলাশা নীলের সামনে দাঁড়িয়ে বলল..

– রাইয়ান কে খাওয়াতে হবে।

নীল নীলাশা’র দিকে তাকাল। এই কয়েকদিনে অনেকটা দুর্বল লাগছে তাকে। দুজনেই তাকিয়ে আছে দুজনের দিকে। হঠাৎ করেই রাইয়ান নীলের মুখে হাত দিল। নীল কথা বলছিল না বলে সে এরকম টা করল। নীলের ধ্যান ভাঙল। সে রাইয়ান কে নীলাশা’র কোলে দিয়ে ওয়াশরুম এ চলে গেল।

নীলাশা রাইয়ান কে কোলে নিয়ে কিছুক্ষণ খেলল। অতঃপর নীলের সমস্ত জিনিসপত্র খাটের উপর রেখে রাইয়ান কে নিয়ে বাইরে এসে পড়ল। নীল ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখল খাটের উপর তার স্যুট, টাই এসব রাখা। এগুলো নীলাশা রেখে গেছে সে জানে। হঠাৎ তার মনে পরল..

একদিন এমন ভাবেই নীলাশা বিছানার উপর সব রেখে বাইরে চলে গেল। নীল ঘর থেকেই “হাতি বাচ্চা, হাতি বাচ্চা” বলেই তাকে ডাকতে লাগল। নীলাশা দৌড়ে ঘরে এসে বলল..

– কি হয়েছে?

– অনেক কিছু? আমার টাই কোথায়, শার্ট কোথায়, মানিব্যাগ, ফোন কিছু্ই পাচ্ছি না।

– চোখ কি তালগাছে রেখে এসেছেন নাকি, দেখছেন না সব বিছানার উপর!

– এগুলো কি এখানে থাকার কথা নাকি?

নীলাশা একটা মুখ ভেংচি দিয়ে বিছানা থেকে শার্ট টা এনে নীল কে পরিয়ে দেয়। অতঃপর স্যুট পরিয়ে দেবার পর টাই পড়াতে যাবে ঠিক তখনই নীল নীলাশা’র কোমর জরিয়ে ধরে। অতঃপর নীলাশা কে জ্বালাতন করতে থাকে।

ফোনের আওয়াজে নীলের ঘোর ভাঙে। অতঃপর কলটা রিসিভ করে সে!

তৈরি হয়ে নিচে এসে দেখে নীলাশা নেই। সবাই খাবার টেবিলে তার জন্য অপেক্ষা করছে। অতঃপর নীল এসে বসে পড়ে। নীলাশা রাইয়ান কে কোলে নিয়ে আসে। নিহা তাকে দেখে বলে..

– নীলাশা বসো খেয়ে নাও আমাদের সাথে!

নীলাশা একবার নীলের দিকে তাকিয়ে বলল..
– না দি রাইয়ান কে খাওয়াতে হবে। তোমরা খাও আমি পরে খাবো।

অতঃপর নীল খেতে শুরু করে। খাবার মুখে দিতেই বুঝে যায় এগুলো নীলাশা রেঁধেছে। তবুও কিছু বলে না সে। নীলাশা সোফায় বসে রাইয়ান কে খাওয়াতে থাকে আর নীল কে দেখে।

নীল, অভ্র, আহিয়ান চলে যায় অফিসে। নিশি বসে কথা বলছে নিশান’র সাথে। আরিশা আর ক্যাট মিলে গল্প করছে নীলাশা’র সাথে। নিহা আজ বাসায়’ই ছিল। নীলাশা’র অনেক অবাক লাগছে আবার ভালো ও লাগছে কারন সবাই এখন তার সাথে মিশে গেছে। কয়েকদিন আগে সে এতোবড় একটা খারাপ কাজ করার পরও সবাই সেটা ভুলে গেছে। আরিশা আজ হেঁসে হেসে কথা বলছে ওর সাথে। রোদ্দুর ও গল্প করছে তার সাথে। এসব কল্পনা করাও কঠিন!

ক্যাট আর আরিশা’র এখনকার অবস্থার জন্য রোদ্দুর আর কাব্য অফিসে যায় নি। মেহেরিন শান্ত আর অরনি’র সাথে খেলছে। হঠাৎ করেই কলিং বেল বেজে উঠলো। সার্ভেন্ট এসে দরজা খুলে। তিশা আর নীলিমা এসেছে। তিশা কে দেখতে পেয়ে মেহেরিন ইহান কে গুতো দিয়ে বলল..

– দেখ তোর হবু বউ আসছে!

ইহান তাকিয়ে দেখল তিশা আসছে। সে তার দিকে তাকাতেই মেহেরিন তার সামনে চুটকি বাজিয়ে বলল..

– এতো দেখিস না নজর গেলে যাবে!

ইহান চোখ ঘুরিয়ে মেহেরিন’র দিকে তাকাল। মেহেরিন দেখল রিদুয়ান ও এসেছে। তাকে দেখে মেহেরিন ইহান কে ফিসফিসিয়ে বলল..

– আজ তোর বিয়ে ফাইনাল হবে দেখিস! তোর শশুড় আব্বা ও এসেছে সাথে!

আসলেই তাই হলো! তারা তিশা’র বিয়ের কথা বলতেই এসেছে। নির্ঝর আসেনি! তারা ভিতরে এসে সবার সাথে কুশল বিনিময় করল। ৩ জন’ই খুশি এই কারনে যে নীলাশা’র সাথে সবাই মানিয়ে নিতে পেরেছে। ক্ষমা করে দিয়েছে সবাই তাকে।

মেহেরিন কল করে অভ্র, আহিয়ান আর নীল কে ডাকল। বিয়ের কথা তো আর তাদের ছাড়া হবে না।‌ দুপুরের পর তারা ৩ জন’ই চলে এলো। অবশেষে বিয়েটা ৭ দিন পরেই ঠিক হলো। এতো তাড়াতাড়ি বিয়ের সিদ্ধান্ত শুধু মেহেরিন’র জন্য। সে চায় বিয়েটা তাড়াতাড়ি হোক। কারন পুরো বাড়িতে এই নিশ্চুপতা তার ভালো লাগছে না। মেহেরিন’র কথায় কেউ না করে নি। অবশেষে বিয়েটা ১০ দিন পরেই ঠিক হলো!
.
কেটে গেল ২ দিন! নীলাশা বার বার চেষ্টা করেও নীলের সাথে কথা বলতে পারে নি। সবার কাছে ক্ষমা চাইতে পারলেও নীলের কাছে এখন পর্যন্ত সে ক্ষমা পায় নি। নীল সবসময় তাকে ইগনোর করছে। এটা সে মেনে নিতে পারছে না। প্রতিরাতেই গেস্ট রুমে বসে বসে কাঁদে সে। মেহেরিন’র চোখে আটকায় না এসব। সে আড়ালে থেকে দেখে নীল দেখছে নীলাশা কে কাঁদতে। কিন্তু সে তার কাছে যায় না। চলে আসে সেখান থেকে!

মেহেরিন এখন আর নীলকে বোঝায় না। কারন সে বুঝতে পেরেছে নীল নিজেই বুঝবে। আর সেটাই হলো! নীল বুঝতে পারল নীলাশা কে এখন ক্ষমা করে দেওয়া উচিত। তার জন্য না হলেও তার সন্তানের জন্য।

সেদিন নীলাশা ভাবল আজ যে করেই হোক নীলের সাথে কথা বলবে সে। সন্ধা’র সময় নীল অফিস থেকে ফেরার পর নিজের ঘরে চলে যায় ফ্রেশ হতে। নীলাশা এক কাপ চা বানিয়ে নীলের ঘরের দিকে যেতেই কলিং বেল বেজে উঠে। নীলাশা আশ পাশ তাকিয়ে কাউকে না পেয়ে নিজেই যায় দরজা খুলতে।

একটা লোক এসেছে। সে এসে নীলের খোঁজ করছে। নীলাশা বলল “সে নীলাশা নীল খান”! অতঃপর লোকটা তার হাতে একটা খাম ধরিয়ে দিয়ে নীল কে দিতে বলে চলে যায়। নীলাশা খাম টা নিয়ে দরজা আটকানোর পর দেখে খাম টা কোর্ট থেকে এসেছে। অতঃপর সে এটা খুলে, দেখে এটা তার আর নীলের ডির্ভোস পেপার! এটা দেখেই তার পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যায়। নীল তাহলে তাকে ডির্ভোস নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

নীলাশা কিছু ভাবতে পারে না। তার দুনিয়া বোধহয় সেখানেই ধমকে যায়। মাথা চারদিক থেকে ঘুরছে তার। অতঃপর কিছুক্ষণের মধ্যেই অজ্ঞান হয়ে সেখানে লুটিয়ে পড়ে সে।
.
নীলাশা চোখ খুলে, আশপাশ অনেকজন দাঁড়িয়ে আছে। সবাই তাকে ডাকছে। কিন্তু একজন তার গালে হাত রেখে তাকে ডাকছে। নীলাশা হাত টা ধরে তার দিকে তাকিয়ে দেখে এটা নীল। সে বলে উঠে..

– নীল আপনি!

– ঠিক আছো তুমি!

নিহা বলে উঠে..
– এখন ভালো লাগছে তোমার!

নীলাশা উঠে বসে। আনহা এসে তাকে পানি খাওয়ায়।‌ সে বলে..

– হ্যাঁ ঠিক আছি আমি!

আরিশা বলে..
– দি তুমি বরং একবার ডাক্তার ডাকো!

ক্যাট বলে..
– হ্যাঁ সেটাই ভালো হবে।‌ নাকি অ্যাম্বুলেন্স কে কল করব!

– আমি ঠিক আছি। এতো ভেবো না। শুধু একটু মাথা টা চক্কর দিয়েছিল!

বলেই নীলের দিকে তাকাল। নীলাশা’র চোখের কোনে পানি জমছে যা নীলের চোখ থেকে আড়াল হলো না। সে জানে নীলাশা’র কেন অজ্ঞান হয়েছিল। নীলাশা’র হাতে ডির্ভোস পেপার দেখেছিল সে। সে এটাতো ভেবেছিল ‌নীলাশা কে ক্ষমা করে দেবে কিন্তু ডির্ভোস পেপার’র কথাটা ভুলে গেছিল। মেহেরিন বাসায় নেই তাই এসব সম্পর্কে এখনো কিছু জানে না সে। জানলে হয়তো নীলের উপর বেশ রেগে যেতো সে! কিন্তু নীলের ভাবনা এখন একটাই নীলাশা কি বলবে তাকে, আবার কি কোন ঝড় আসবে!

#চলবে….

[ পর্ব ছোট হবার জন্য দুঃখিত! ]

#Game_2
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_৫৮

নীল আর নীলাশা কে একা রেখে সবাই বাইরে চলে গেলো। কিন্তু তারা দুজনেই চুপ! নীলাশা মাথা নিচু করে কাঁদতে থাকল। নীল নীলাশা’র চোখের পানি মুছে দিল। নীলাশা তখন দু’হাত দিয়ে নীলের হাত টা জরিয়ে ধরে তার উপর মাথা রেখে কাঁদতে লাগল। বলতে শুরু করল..

– নীল! নীল আপনি আমাকে ডির্ভোস দিয়েন না প্লিজ।আমাকে আমার ছেলে থেকে আপনি আলাদা করবেন না। আমি পারবো না ওকে ছাড়া থাকতে। আমি মানছি আমি অনেক অন্যায় করেছি। আমি ক্ষমা চাইছি তার জন্য। কিন্তু আপনি আমাকে রাইয়ান’র থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েন না। আমার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন সে। প্লিজ নীল প্লিজ! আমি মরে যাবো বেঁচে থাকতে পারবে না ওকে। প্লিজ আপনি ডির্ভোস দিয়েন না কেন আমাকে।

নীল চুপ হয়ে আছে। কোন কথা বলছে না। সে কি বলবে সেটাই বুঝে উঠতে পারছে না। নীলাশা নীলের দিকে তাকাল। সে মাথা নিচু করে আছে। নীলাশা দুই হাত দিয়ে চোখের জ্বল মুছে নীলের কাছে এসে বসল। অতঃপর দু’হাত নীলের মুখটা ধরে ‌তার‌ দিকে ধরে বলল..

– এখনো রেগে থাকবেন! আপনি কথা বলবেন না আপনার হাতি বাচ্চার সাথে।‌ আপনার হাতি বাচ্চা টা কাঁদছে নীল। খুব কষ্ট পাচ্ছে আমি এসব মেনে নিবেন। কথা বলুন না আপনি! কথা বলুন!

নীলাশা নীলকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে লাগল। কাঁদতে কাঁদতে তার শার্ট ভিজিয়ে ফেলছে সে। নীল এখনো চুপ। কিছুই বলছে না।

কিছুক্ষণ পর নীলাশা কান্না বন্ধ করল। অতঃপর নীলের বুক থেকে উঁকি মেরে তার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল..

– নীল আমি পারবো না আপনাকে ছাড়া থাকতে,‌ রাইয়ান কে ছাড়া আমার জীবন নিরর্থক! আপনি আমাকে ডির্ভোস দেবার পর আমার লাশ টা নিয়ে ‌বাড়ি‌ থেকে বের হবেন!

নীল চমকে উঠে! সে নীলাশা’র দিকে তাকায়। নীলাশা’র চোখ মুখ সব লাল হয়ে গেছে কাঁদতে কাঁদতে! অনেক কষ্ট শ্বাস নিচ্ছে সে।‌ নীল নীলাশা কে দু’হাত জরিয়ে বলল..

– কি বলছো এসব! পাগল হয়ে গেছো তুমি!

নীলাশা নীলের শার্ট আঁকড়ে ধরে আবারো কেঁদে উঠলো। নীল ওকে অনেক কষ্টে সামলালো। নীলাশা নীলের হাত ধরে ধরে বলল..
– আপনি আমাকে ছুঁয়ে বলুন! বলুন আপনি আমাকে ডির্ভোস দিবেন না!

নীল হাত টা ছাড়িয়ে নীলাশা’র গালে হাত রেগে বলল..
– আমি তোমায় ডির্ভোস দেবো না। করব না নিজের হাতি বাচ্চা কে নিজের থেকে আলাদা।‌ সারাজীবন আগলে রাখবে তুমি আমাকে আর রাইয়ান কে!

নীলাশা এক কাঁদো কাঁদো মুখে হেসে দিল। তার ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটল। সে উঠে নীলের কপালে একটা চুমু খেল। অতঃপর নীলের পুরো মুখে চুমু খেয়ে তাকে জরিয়ে ধরে বলল..

– ভালোবাসি নীল! অনেক ভালোবাসি আপনাকে! আর কখনো আঙুল তুলবে না কেউ এই ভালোবাসায় কথা দিলাম আমি আপনাকে!

নীল নীলাশা’ল কপালে একটা চুমু খেয়ে বলল..

– হুম আমিও অনেক ভালোবাসি তোমায়!
.
– ইহান!

– হুম বলো!

– তোমার মনে হচ্ছে না বিয়েটা অনেক তাড়াতাড়ি হচ্ছে!

– জানি। কিন্তু কিছু করার নেই

– আচ্ছা এই কষ্ট কি কখনো শেষ হবে না। ভাবী, ভাইয়া, আপু, জিজু তারা কি কখনো এক হবে না।

– অপেক্ষা করো হবে!

– কিন্তু আমি তো আর নিতে পারছি না এসব। এতোবছর পর নিজে বাবা কে পেয়েও খুশি হতে পারছি না। আনন্দ নেই বাড়িতে। পুরো বাড়ি মনমরা হয়ে আছে। বাড়ির প্রাণটাই যেন চলে গেছো।

– কি করব বলো এটাই তো নিয়তি!

তিশা ইহানের বুক থেকে মাথা টা উঠিয়ে তার দিকে তাকাল। দুজনেই খোলা আকাশের নিচে গাড়ির উপর বসে আছে। তিশা ইহানকে জরিয়ে ধরে তার বুকে মাথা বসে আছে।

– কিছু বলব

– আমরা কি কিছু করতে পারি না বলো

– ( ইহান নিশ্চুপ )

– তোমার নিশ্চুপতার কারন কি? তার মানে তুমিই ও কি মনে করো..

– এখন মনে করার কোন কারন নেই। তবে যা করেছে সেটাও ভুলে যাবার মতো নয়।

– তাই বলে কি ক্ষমা করবে না।

– নীল ভাইয়া ক্ষমা করবে‌ আমি জানি! কিন্তু মেহেরিন! ও একটু বেশিই জেদি!

– কিন্তু ভালো তো বাসে ভাইয়া কে। আচ্ছা ভাবী কি কষ্ট পাচ্ছে না তুমি বলো আমায়।

– আমি জানি ও কষ্ট পাচ্ছে। কিন্তু সেটা মুখে স্বীকার করার মেয়ে ও না।

– তাহলে.. তুমি ও বুঝতে পারছো সে কষ্ট পাচ্ছে। তাহলে একবার চেষ্টা করতে দোষ কি।

– আচ্ছা আমি আজ দা’র সাথে কথা বলবো এই ব্যাপারে!

– সত্যি!

– হুম!

অতঃপর তিশা খুশি হয়ে ইহানের গালে একটা চুমু খেয়ে বলে..
– আই লাভ ইউ আমার বর মশাই!

– আই লাভ ইউ টু!

অতঃপর তিশা আবারো তাকে জরিয়ে ধরে আকাশ দেখতে থাকে!
.
মেহেরিন অফিস থেকে মাত্র গাড়ি নিয়ে বের হয়েছে। হঠাৎ তার সামনে একটা গাড়ি এসে তার পথ আটকায়। মেহেরিন তাকিয়ে দেখে ওই গাড়িতে নির্ঝর! দুজনের চোখাচোখি হলো। আজ প্রায় অনেকদিন পর হলো দুজনের চোখাচোখি! মেহেরিন গাড়ি টা ঘুরিয়ে অন্যদিকে যেতে নিলে নির্ঝর আবারো তার পথ আটকায়। অতঃপর মেহেরিন রেগে গাড়ির হ্যান্ডেল’র থেকে হাত দুটো সরিয়ে তার বাহুতে গুঁজে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বসে থাকে।

নির্ঝর মেহেরিন’র গাড়ির পাশে এসে দাঁড়ায়। বলে “মেহু পাখি নামো”!

মেহেরিন মুখটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে নেয়। নির্ঝর গাড়ির দরজা খুলতে যাবে মেহেরিন তখন তার দরজা লক করে করে। গাড়ির আয়নাটা খোলাই ছিল। নির্ঝর সুযোগ বুঝে গাড়ির চাবিটা নিয়ে ফেলে। মেহেরিন রেগে তার দিকে তাকায়। নির্ঝর আবারো বলে..

– মেহু পাখি নামো! কথা আছে।

অতঃপর মেহেরিন গাড়ি থেকে চাবি টা নিতে গেলে নির্ঝর মেহেরিন’র দুই বাহু ধরে নিজের কাছে টেনে বলে..

– কি করছো তুমি কথা বলছো না!

– ( নিশ্চুপ )

– এতো কল , এতো মেসেজ বোঝ না কথা বলতে চাই আমি।

– যেদিন ডির্ভোস পেপার দিয়েছি কথা সেদিন শেষ হয়ে গেছে।

– না শেষ হয় নি। আমি দেইনি তোমাকে ডির্ভোস!

– চিন্তা করবেন না তিশা’র বিয়ের পর এটা কোর্টে উঠবে তখন আপনি দিতে বাধ্য থাকবেন।

নির্ঝর মেহেরিন’র হাত দুটো আরো শক্ত করে চেপে নিজের কাছে টেনে দাঁতে দাঁত চেপে বলে..
– কি বললে আবার বলো।

মেহেরিন মুখ ঘুরিয়ে বলে..
– যা আপনি শুনলেন!

– আমার দিকে তাকাও

– কোন ইচ্ছে নেই আমার!

নির্ঝর একহাত দিয়ে মেহেরিন’র কোমর ধরে অন্য হাত দিয়ে মেহেরিন’র গালে হাত রেখে নিজের দিকে ঘুরিয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। অতঃপর তার কপালে একটা চুমু খেয়ে তার কপালের সাথে নিজের কপাল ঠেকিয়ে বলে…

– আই এম সরি মেহু পাখি! আমি জানি আমি তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি। তোমার দুর্বলতায় বার বার আঘাত করেছি। তোমাকে কাঁদিয়েছি। অনেক কিছু করেছি আমি! তুমিও আমাকে কষ্ট দেও, মারো আমি মেনে নেবো। প্লিজ ছেড়ে যাবার কথা বলো না। আমি পারবো না তোমাকে ছাড়া থাকতে! তোমাকে ছাড়া বেঁচে থাকা আমার কাছে অর্থহীন মেহু পাখি! মেহু পাখি আমি পারবো না। এমনটা করো না। আমি বেঁচে থেকেও মরে যাবো তোমাকে ছাড়া!

বলতে বলতে নির্ঝরের চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরল। সে খুব শক্ত করে ধরে আছে মেহেরিন কে। মনে হচ্ছে মেহেরিন কে ছাড়লেই সে পালিয়ে যাবে। মেহেরিন’র শরীর কাঁপছে। চোখ লাল হয়ে আসছে। সে পারছে না এভাবে থাকতে। মনে হচ্ছে এখনি কেঁদে দেবে সে। সে একটা বড় নিঃশ্বাস ফেলে বলে..

– নির্ঝর ছাড়ুন!

– না মেহু পাখি আমি ছাড়বো না তোমায়!

কিছুক্ষণ পর মেহেরিন তার সর্বস্ব দিয়ে ধাক্কা মারল নির্ঝর কে। নির্ঝর তার থেকে দূরে সরে গেল। মেহেরিন বলল..
– দূরে থাকুন আমার থেকে। আমি ভালোবাসি না আপনাকে!

বলেই গাড়ির ভেতর ঢুকল। নির্ঝর তাকিয়ে দেখল তার হাতে চাবি টা নেই। সে চাবিটা নিয়ে নিয়েছে। অতঃপর মেহেরিন চলে গেল।
.
এখন বর্ষাকাল! বৃষ্টি প্রতিনিয়ত আকাশ থেকে ঝড়ছে। এই বৃষ্টি তার খুব পছন্দ। তার খারাপ লাগলেও সে বৃষ্টিতে ভিজে আবার খুশি হলেও ভিজে। তবে আজ কারন দুটোই। একটা হলো নীল আর নীলাশা’র ঝামেলা মিটে গেছে এই খুশিতে। আর মন খারাপের কারন হলো এখন সবাই তাকে আর নির্ঝর কে নিয়ে পড়বে। তারা চাইবে তারা দুজন যেনো আবারো এক হয়ে যায়। কিন্তু এটা কি সত্যি’ই এতো সহজ। মেহেরিন দু চোখ বন্ধ হাত ছাড়িয়ে বৃষ্টির মাঝে দাঁড়িয়ে আছে। ভালোই লাগে এভাবে তার বৃষ্টিতে ভিজতে।

গাড়ির আওয়াজ আসায় মেহেরিন ছাদের কোনায় এসে দাঁড়াল। মেহেরিন দেখল এটা নির্ঝরের গাড়ি। সে তাকিয়ে রইল। নির্ঝর গাড়ি থেকে বের হয়ে উপরে তাকিয়ে দেখল মেহেরিন ছাদে দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজছে। এখন তারা দুজনেই ভিজছে। দুজনেই তাকাল দুজনের দিকে। আর তখনই মেঘ গর্জন করল।

#চলবে….

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here