#Game
#পর্ব_03+04
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
এমন একটা খবর শোনার জন্যই আজ এতো বছর ধরে অপেক্ষা করছিল সে। খবর টা শোনার পর’ই বাঁকা হাসি দিয়ে কফি’র মগে চুমুক দিলো। অতঃপর জিজ্ঞেস করল..
– বলো কি কি জানতে পারলে..
– এটা অনেক বড় একটা কাহিনী তবে এটার সুযোগ আমাদের জন্য অনেক ভাল হবে।
– মানে…
– অধরা খান যে মাফিয়াদের সাথে যুক্ত সেটা সবার’ই জানা। আর তিনি তাদের লিডার! তিনি মারা যাবার পর তার দায়িত্ব কে পাবে এটা নিয়ে অনেক ঝামেলা হয়েছে। অনেকেই এই দায়িত্ব নিতে চেয়েছে। কিন্তু আদুরী চেয়েছে উনার মার জায়গাটা সেই পাক। পরে সেই পায় এই দায়িত্ব কিন্তু তাকে পরীক্ষা করার জন্য একটা কাজ দেওয়া হয়। যার জন্য এতো দিন ধরে সে নিখোঁজ!
– কি কাজ?
– আদুরীকে একটা চীপ দেওয়া হয়। মাফিয়া গ্যাং দের পুরো হদিস আছে তাতে। কয়েকবছর আগেই পুলিশ এটা সম্পর্কে জানতে পারে তাই তারা এটা খুঁজতে থাকে। আর এটা তাকে রাখতে দেওয়া হয়। তবে এটার জন্য খুব মোটা অংকের টাকা পাবে সে। প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। ৫ বছরের চুক্তি করে এই চিপ রাখা হয় তার কাছে। আর এটা ঠিকভাবে রাখার জন্য’ই সে ছদ্মবেশ ধারণ করে মানে য্বোয়া হয়ে নকল ফ্যামিলি নিয়ে দেশেই লুকিয়ে আছে।
– ওহ্ আচ্ছা এতো কিছু!
– হ্যাঁ তবে এটা আমাদের জন্য খুব ভালো একটা সুযোগ!
– সেটা কিভাবে?
– এই যে আর ১৫ দিন পর এই চুক্তি শেষ হবে। তখন আদুরী কে চীপ টা ফেরত দিতে হবে। যদি সে তখন সেটা দিতে না পারে তবে তার মৃত্যু নিশ্চিত। আমাদের প্রতিশোধ পূরণ হবে।
সে হেসে বলে..
– ওয়াট অ্যা প্ল্যান ইয়ার!
– জানতাম! এখন কি করবে?
– যেটা ভাবছো সেটাই তবে এতো খবর পেলে কিভাবে?
– অনেক কষ্ট করে, গোপন সূত্রে জানতে পেয়েছিলাম তবে..
– তবে!
– যার মাধ্যমে জেনেছি সে আর বেঁচে নেই! কিন্তু সে মারা যাবার আগে আমাকে মেসেজ দিয়ে গিয়েছিল যার কারনে আমি সব জেনেছি!
– কিন্তু ওরা যদি তোমাকে খুঁজে বের করে..
– ডোন্ট ওয়ারি! সব কাজ শেষ করেই এসেছি। তবে আরেকটা নিউজ আছে!
– এটাও কি গুড!
– হুম…
– কিন্তু কি?
সে ওয়াইনের গ্লাস টা হাতে নিয়ে বলে…
– শত্রুর শত্রু বন্ধু হয় জানো!
– তা আমাদের বন্ধু টা কে?
– মিঃ রায়!
– বাংলাদেশের প্রভাবশালী বিজনেসম্যান! যার অনেক অবৈধ কার্যকালাপ আছে!
– হুম! জানো তার আদরের ছেলে কিছু দিন আগে মারা গেছে, আইমিন মারা হয়েছে..
– কে মেরেছে?
– খান পরিবারের বড় মেয়ে নিহা খান মেরেছে তাকে!
– কারন টা কি?
– কিছুদিন আগেই মিঃ রায় এর ছেলে আর তার বন্ধুরা মিলে গ্যাং রেপ করে একটা মেয়েকে নিমর্ম অবস্থায় গাছের দ্বারে ফেলে যায়, মেয়েটা সেখানেই মারা যায়। দুদিন পর সেই সব ছেলেদের লাশ সেই গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। যদিও এটা নিহা’র কাজ তবে প্রমান ছাড়া কিছুই বলা যাচ্ছে না। তবে রায় সাহেব কিন্তু সম্পূর্ণ বিশ্বাস নিয়ে বলছে এটা নিহা’র কাজ। কারন সে নাকি শাসিয়ে দিয়ে গেছিল তাকে। এখন সে প্রতিশোধের আগুনে জ্বলছে!
– ঘি ঢালতে বলছো আগুনে !
– রাইট ইউ আর। তোমার এই স্মার্টনেসের জন্য ভালো লাগে তোমাকে!
সে উঠে টেবিল থেকে একটা মোমবাতি নিয়ে সেটা কে দেখতে দেখতে বলে..
– খুব শখ না তোমার আদুরী মানুষের জীবন নিয়ে Game খেলার। এবার আমি খেলবো Game তোমার জীবন নিয়ে এর এই Game এ আমি’ই জিতবো।
অতঃপর ফুঁ দিয়ে মোমবাতি নিভিয়ে দেয়।
.
কয়েকদিন পর..
অভ্র, নিহা,নীল, নিশি, ইহান, কাব্য আর রোদ্দুর সবাই এসেছে অভ্র’র পিএ এর বিয়েতে। নিহা আর নিশি দুজনেই লেহেঙ্গা পড়ে এসেছে তবে কোনো সাজ নেই। কোনো ধরনের মেকাপ নেই মুখে শুধু কানে ছোট দুল আর কিছু না এর কারন হল অভ্র। সে সাজগোজ করতে দেয় না নিহা আর নিশি কে। তাই এভাবেই এসেছে ওরা। তবুও ভারী সুন্দর লাগছে তাঁদের। তারা সবাই দেখতে বেশ সুন্দর। যার কারনে সাজগোজ না করলেও বেশ সুন্দর লাগে দেখতে। তবে নিহা আর নিশি’র চুল বেশ লম্বা। কোমরের নিচে গিয়ে ঠিকেছে। এখানে অভ্র স্যুট পড়ে এসেছে বাকি সবাই পাঞ্জাবি পড়া। বিয়ে বাড়িতেই আসার পর পিএ নিজে এসেই তাদের রিসিভ করেছে। বিয়ে বাড়িতে দারুন তোরজোড়। অভ্র’র ফোন আসায় সে একপাশে চলে যায় কথা বলতে বলতে, বাকি সবাই একপাশে দাঁড়িয়ে কথা বলতে থাকে। অভ্র কথা বলে পিছনে ঘুরে আসতেই একটা মেয়ের সাথে ধাক্কা খায়। মেয়ের হাতে থাকা ফুলের থালা টা পড়ে যায়, মেয়েটিও পড়ে যেতে নেয়। তখন অভ্র মেয়েটির কোমর ধরে ফেলে। অভ্র তাকিয়ে থাকে মেয়েটির দিকে, এদিকে কাব্য এইসব দেখে নিশি কে খোঁচা মারে, নিশি খোঁচা মারে ইহান কে, ইহান রোদ্দুর কে, রোদ্দুর নিহা কে অবশেষে নিহা নীলের ঘাড়ে হাত রেখে চোখের ইশারায় ওদিকে তাকাতে বলে। অভ্র যেন ঘোরের মধ্যে চলে যায়। মেয়েটা বেশ সুন্দরী, কোনো সাজ নেই মুখে। অভ্র মেয়েটির চোখের মধ্যে যেন হারিয়ে যায়। মেয়েটি ধরে রাখে অভ্র কে। এদিকে সবাই মুখ টিপে হাসতে থাকে, অতঃপর হুট করেই সবাই একসাথে দা বলে উঠে।
অভ্র ওদের আওয়াজ পেয়ে সাথে সাথে ছেড়ে দেয় মেয়েটাকে! মেয়েটি ধপাস করে পড়ে গিয়ে বলে..
– মা গোওও আমার কোমর!
অভ্র মেয়েটিকে বলে..
– সরি মিস! আপনি ঠিক আছেন
– ফেলে দিয়ে জিজ্ঞেস করছেন ঠিক আছি কি না। আজব তো।
– আমি ইচ্ছে করে ফেলেনি এটা নিতান্তই একটা এক্সিডেন্ট!
– ফেলে দিয়ে বলছেন এক্সিডেন্ট, বাহ্!
– আপনি আমায় ভুল বুঝছেন!
– না যা বুঝেছি ঠিক বুঝছি!
সবাই হেসে ওদের কাছে এসে মুখ টিপে হাসতে লাগলো। অভ্র ওদের দিকে তাকাতেই সবাই চুপ হয়ে গেল। কাব্য বলে উঠে..
– আচ্ছা মিস এখন উঠুন এভাবে বসে থাকবেন নাকি!
মেয়েটি রেগে অভ্র’র দিকে তাকিয়ে বলে..
– না আপনি কেন উঠাবেন যে ফেলেছে সে উঠাবে!
অভ্র ভ্রু বলে উঠে..
– আমার দিকে তাকিয়ে কেন বলছেন। আমি ফেলেছি নাকি আপনাকে!
– তাহলে ধরলেন কেন আমাকে, শুরুতে পড়ে যেতে দিলেন না কেন? বুঝেছি সব মেয়ে ধরার ধান্দা!
– কি বললেন আপনি!
– যা বলেছি সত্যি বলেছি! এখন তুলুন আমায়।
– কেন তুলবো একটু আগে না বললেন আমি আপনাকে ধরার জন্য এইসব করেছি এখন আবার ধরতে বলছেন।
– যাহ বাবা ফেলে দিয়ে এখন আর উঠাবেন না।
রোদ্দুর বলে উঠে..
– দা! বলছিলাম কি..
অভ্র রেগে তাকাতেই রোদ্দুর চুপ হয়ে যায়। অতঃপর অভ্র সেখান থেকে চলে যায়। মেয়েটি রেগে অভ্র’র চলে যাওয়া দেখতে থাকে। নীল মেয়েটি কে বলে..
– আপু দা আর আসবে না। আপনি এভাবে বসে থাকবেন না মানুষ দেখছে। উঠে পড়ুন!
– নাহ আমি যখন বলেছি উনি উঠাবেন মানে উনিই উঠাবেন। ব্যস!
নিহা বলে উঠে..
– আপু বলছিলাম কি..
কথা শেষ হবার আগেই অভ্র সবাইকে চমকে দিয়ে মেয়েটি কে কোলে তুলে নিল। সবাই হা করে তাকিয়ে আছে অভ্র’র দিকে! অভ্র তাকে কোলে তুলে বাড়ির ভিতরে নিয়ে যাচ্ছিল। বাড়ির সবাই হা করে তাকিয়ে আছে তাঁদের দিকে। মেয়েটি সবার এমন চাহনি তে ভারী অবাক হয়। বিড় বিড় করে বলতে থাকে..
– সবাই এমন ভাবে তাকিয়ে আছে আমার দিকে! নাহ আমার দিকে না উনার দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু কেন? কে এনি যে সবাই এভাবে তাকিয়ে আছে। কোনো সেলিব্রিটি নাকি! দেখে তো মনে হয় হলেও হতে পারে!
হঠাৎ করেই পিএ চলে আসে অভ্র’র সামনে। সে অভ্র কে এমন ভাবে দেখে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে। অতঃপর বলে উঠে..
– স্যার আপনি! এভাবে… আর আনহা তুই! তুই স্যারের কোলে কি করছিস?
– আরে উনি আমাকে ফেলে দিয়েছেন তাই কোলে তুলেছেন, আর তুই এভাবে বলছিস কেন আমায়!
সে চোখ রাঙিয়ে আনহা’র দিকে তাকিয়ে বলে..
– এটা আমার অফিসের বস! কি করছিস তুই। নাম জলদি!
আনহা এবার শুকনো ঢোক গিলে অভ্র’র দিকে তাকায়। রাগে তার দু’চোখ লাল হয়ে আছে। অভ্র আনহা কে নামিয়ে দিলে পিএ তাকে অভ্র’র সামনে ধরে বলে..
– স্যার এই হলো আপনার নতুন পিএ আনহা আহমেদ!
কিরে আনহা সরি বল স্যার কে।
আনহা তোতলাতে তোতলাতে বলে..
– স..সরি স্যার! আসলে আমি বুঝতে পারি নি।
– ইট’স ওকে!
বলেই অভ্র চলে আসে সেখান থেকে। আনহা তাকিয়ে বলে..
– এই শাহরিয়ার অভ্র খান! দোস্ত আমার চাকরি টা থাকবে তো!
– আল্লাহ’র কাছে দোয়া কর যেন থাকে! তুই যা করলি স্যার এর সাথে..
আনহা অসহায় ভাবে তাকিয়ে থাকে!
.
খান বাড়িতে..
সবাই বসার ঘরে বসে ছিল। নীল বলে উঠে..
– মেয়েটার দেখতে কিন্তু খুব সুন্দরী ছিল না দা!
অভ্র বলে উঠে..
– কোন মেয়ে?
নিশি বলে উঠে..
– আরে যাকে তুমি কোলে তুলে নিলে!
নিশি’র কথা শুনে অভ্র তাকিয়ে থাকে, নিশি আমতা আমতা করে বলে..
– না মানে! জোর করে তোমার কোলে উঠে গেল সেই মেয়ে আর কি।
নিহা বলে উঠে..
– মেয়েটা দা’র নতুন পিএ। আনহা আহমেদ!
কাব্য বলে উঠে..
– বাহ বাহ নতুন পিএ হয়েই এতো কিছু করলো আজ।
– আরে সে জানত না এটা দা। তাই এমন করেছে পরে অবশ্য অনেক বার সরি বলেছে।
নীল নিহার দিকে তাকিয়ে বলে..
– তখন আমরা কোথায় ছিলাম?
নিশি বলে উঠে..
– তোরা তখন মেয়েদের সাথে ছিলি। তাদের সাথে যখন সেলফি তুলতে ব্যস্ত ছিল ঠিক তখন।
নীল রেখে নিশি’র দিকে তাকাতেই সে মুখ ভেংচি দেয়। ইহান বলে উঠে..
– তবে তাকে আমাদের ভাবি করলে কিন্তু মন্দ হতো না। একদম দা এর মতোই, দুজনেই সমান ভাবে ঝগড়া করতে পারে।
রোদ্দুর বলে উঠে..
– একদম মেড ফর ইচ আদার লাগে একসাথে।
নীল বলে উঠে..
– যখন কোলে নিয়েছিল তখন সেই দেখতে লাগছিল। ইশ একটা পিক তুললে ভালো হতো। স্মৃতি হিসেবে রেখে দিতাম।
নিশি বলে উঠে..
– পড়ে যাবার সময় যখন দা তাকে ধরেছিল সেই সময়ের পিক আছে আমার কাছে দেখবি। তবে যায়’ই বলিস না কেন মেয়েটার সাথে দা কে কিন্তু খুব মানায়।
কাব্য বলে উঠে..
– তাহলে ভাবি ডাকা শুরু করে দে!
সবাই একসাথে হেসে উঠে কিন্তু নিহা তাকিয়ে আছে অভ্র দিকে। মারাত্মক রেগে আছে সে। অভ্র দাঁতে দাঁত চেপে নিহা কে বলে উঠে..
– নিহা হকি স্টিক টা দে আজ খুব খেলতে মন চাচ্ছে!
অভ্র’র কথায় সবাই চুপ হয়ে যায়। একে সবাই শুকানো ঢোক গিলে একে অপরের দিকে তাকায়। অভ্র শার্টের হাতা ফোল্ট করতে করতে বলে..
– কে কে জানি ভাবি ভাবি করছিল?
কাব্য হুট করে দাঁড়িয়ে ফোন কানে দিয়ে বলে..
– এইতো আসছি আমি, এই যে রাস্তায় আছি আসতে আর ২ মিনিট লাগবে। আসছি আমি..!
নিশি অবাক হয়ে কাব্য কে বলে..
– তোর ফোন বাজল কখন?
কাব্য চোখ রাঙিয়ে নিশি’র দিকে তাকায়। নিশি বুঝতে পেরে বলে উঠে..
– আমার তো এক্সাম সামনে, আমি বরং ঘরে গিয়ে পড়তে বসি ।
ইহান নিশি’র সাথে দাঁড়িয়ে বলে..
– তোর সাথে তো আমার ও এক্সাম, চল আমিও যাই তোর সাথে।
রোদ্দুর বলে উঠে..
– আরে আমাকে ভুলে গেলি নাকি আমিও আসছি।
নীল সবার এমন অবস্থা দেখে দাঁড়িয়ে বলে..
– আমি বরং একটু ঘুমাতে যায় মাথা ব্যাথা করছে।
এভাবে সবাই চলে যায়। নিহা অভ্র’র দিকে তাকিয়ে থাকে! অভ্র নিহা কে জিজ্ঞেস করে..
– তোর আবার কি হলো!
– কিছু না তবে ওদের কথাটা একবার ভেবে দেখলে ভালো হতো নাহ।
– তুই বস, এবার আমি’ই উঠে যাচ্ছি!
বলেই উঠে চলে গেলো অভ্র! নিহা আনহা’র কথাটা ভাবতে লাগলো!
#চলবে….
#Game
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_৪
আজকের ব্রেকিং নিউজ শুনে অভ্র আর বাকি সবাই হা হয়ে তাকিয়ে আছে। নিশি, নীল নিস্তব্ধ অবস্থায় সোফায় বসে পড়ে। নিহা আর রোদ্দুর গাড়ি নিয়ে বের হয়ে যায়। এদিকে বাড়িতে ফোনের ঝড় উঠে যায়। একের পর এক ফোন। খানিকক্ষণ বাদেই বাড়ির বাইরে মিডিয়া’র ঝড় উঠে। সবাই অধীর অপেক্ষায় বসে আছে ইন্টারভিউ নেবার জন্য। আজ তাদের প্রশ্নের উওর দিতেই হবে। গার্ড কোনোমতে তাদের আকটে রাখতে পারছে না। ইহান আর না ভেবে পুলিশের কল করে এসব বন্ধ করার জন্য।
আজকে সকালের ঘটনা…
সবাই সকালের নাস্তা খেতে সবে বসেছে এর মধ্যে একজন গার্ড ছুটে আসে অভ্র’র কাছে। নিউজে নাকি আজ আদুরী কে দেখানো হচ্ছে। সবাই তোরজোর করে টিভি অন করে নিউজ দেখতে থাকে। সত্যি আজকের ব্রেকিং নিউজ আদুরী কে নিয়ে। সাংবাদিক বলছে আজ সকালে নাকি তাদের কাছে একটা ভিডিও এসেছে। সেটা অন করতেই একটা মেয়েকে রক্তাক্ত অবস্থায় ঝুলন্ত দেখতে পাওয়া যায়। মেয়েটা বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে বোঝা যাচ্ছে না তবে একজন মুখোস ধারী লোক তাকে মেহেরিন বর্ষা খান ওরফে আদুরী বলে সম্বোধন করছে। সে শাহরিয়ার অভ্র খান এর কাছে একটা চীপ চাইছে, বলছে চীপ না দিলে আদুরী কে তারা মেরে ফেলবে। অভ্র এসব শোনার পর পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যায়। এদিকে হাজার টা প্রশ্ন সাংবাদিকদের।
অভ্র আর বেশিক্ষণ থাকে না, বের হয়ে যায়। তার সাথে ইহান আর কাব্য বের হয়। এদিকে নিশি আর নীলও বের হয়ে যায় গাড়ি নিয়ে।
নিহা আর রোদ্দুর গাড়ি নিয়ে সোজা যায় আদুরীর নকল পরিবারের কাছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করার পর কিছু জানা যায় না। তারা বলে গতকাল রাত থেকে নাকি আদুরী নিখোঁজ। এখানে অভ্র, ইহান আর কাব্য মিলে সারা শহরের সিসিটিভি ফুটেজ চেক করছে। নিশি আর নীল গার্ড নিয়ে পুরো শহর খুঁজছে যদি কোনো হদিস মেলে।
নিহা আর রোদ্দুর যায় ঈশানের কাছে, নিখোঁজ হবার আগে তার সাথেই ছিল সে। ঈশান অনেকক্ষণ পর বুঝতে পারে য্বোহা”ই আসলে আদুরী। অতঃপর সে তাদের যা জানে সবকিছু বলে দেয়।
এদিকে মুখোশ ধারী লোকটা আদুরীর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে চীপের কথা। ওর কথায় আদুরী হাসতে থাকে। কপাল দিয়ে রক্ত পড়ছে তার। এছাড়া হাত পা এর বিভিন্ন অংশ দিয়েও রক্ত গড়িয়ে পরছে। লোকটা রেগে আদুরীর গাল দুটো চেপে ধরে বলতে থাকে..
– রাগাবি না একদম। বলে দে চীপ টা কোথায়?
– চীপ! এটা সারাজীবন ধরে খুঁজলেও পাবে না তোমরা।
লোকটা একজনকে ডেকে বলে ওকে আবার চেক করতে। কিন্তু কিছুই পাওয়া যায় না।
লোকটা রেগে গিয়ে আদুরীর কপালে গান ঠেকিয়ে বলে..
– ভালো মতো বলছি! চীপটা কোথায় বলে দাও নাহলে তোমাকে…
– মেরে ফেলবে.. ( হেসে ) মেরে ফেলো! কিন্তু সেই সাহস তোমাদের নেই। আমি জানি! কে পাঠিয়েছে সেটা বলে দাও।
গান টা সরিয়ে অবাক হয়ে বলে…
– এতো মার খেয়েও এই তেজ এ কথা বলছো।
– ইশ এতোটুকু তেই এই অবস্থা, এরপর যা বলবো তা শুনলে তো হার্ট অ্যাটাক করবে।
– মানে…
– আমাকে তুমি মেরে ফেলো নাহলে যদি বেঁচে থাকি তাহলে আমি তোমাকে মারবো!
– এটা কখনো হবে না। শুধু চীপ’টার জন্য’ই বাঁচিয়ে রেখেছি তোমাকে!
আদুরী হেঁসে বলল…
– তোমাকে এটা কে বললো! কি মনে করো আমাকে? এই game এ নতুন না আমি। Game টা শুরু আমি’ই করেছি আমাকে শিখিও না। প্ল্যান এটাই চীপ টা নিয়ে আমাকে ছেড়ে দেবে আমার দলের কাছে, তারা মারবে আমাকে! এটা দেখেই শান্তি পাবে তোমরা! কি ঠিক না।
লোকটা অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে আদুরীর দিকে। আদুরী বলে উঠে..
– ভুলে যেও না অধরা খানের মেয়ে আমি মেহেরিন বর্ষা খান! আর একটা সত্যি কথা কি জানো! আমাকে মারার ক্ষমতা তুমি রাখো না। তবুও বলছি আমাকে মেরে ফেললে বেঁচে যেতে পারো।
– কনফিডেন্স দেখে আমি অবাক। ভাবতে পারো কিভাবে এখান থেকে বেঁচে ফিরবে তুমি!
– কারন আমি বাঁচাবো ওকে!
লোকটা মুহুর্তে পেছনে ফিরল। দেখে হাতে গান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে একজন। সে কাঁপা বলতে চেষ্টা করে তখন আদুরী বলে উঠে..
– দি!
এরপর অনেক গুলি বর্ষণ হয়। নিহা একে একে সবাইকে মারে শুধু ওই মুখোশধারী লোকটাকে ছাড়া। নিহা আদুরী কে ছাড়িয়ে দেয়। অতঃপর মুখোশধারী লোকটার মুখোশ খুলে ফেলে। তবে সেটা অন্য কেউ ছিলো। আদুরী একটা চেয়ার নিয়ে লোকটার সামনে বসে। অতঃপর বলে..
– কি হলো? কি ভাবছো?
লোকটা তাকিয়ে আছে আদুরীর দিকে।
– বলেছিলাম না আমি বেঁচে যাবো। দেখে বেঁচে গেছি আর দাঁড়িয়ে আছি তোমার সামনে। এখন…
– তুমি বাঁচবে না, আজ নয়তো কাল তুমি মরবেই!
লোকটার কথায় নিহা রেগে তার কাছে যেতে নেয়। তখন আদুরী আঁটকে দিয়ে বলে..
– দি ও আমার শিকার!
অতঃপর লোকটার দিকে তাকিয়ে,
– মরে যাবার আগে তোমার শেষ ইচ্ছা আমি পূরণ করে দিচ্ছি, আমি জানি শেষ ইচ্ছে টা হলো চীপ টা কোথায় এটা জানতে চাওয়া। তো এই দেখো এই যে চীপ!
বলেই তার হাতে থাকা রিং এর পাথর সরিয়ে সেই চীপ বের করে তাকে দেখায়।
লোকটা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে চীপ”টার দিকে। আদুরী নিহা’র কাছে চীপ টা দিয়ে বলে…
– বলেছিলাম আমাকে মেরে ফেলো নাহলে আমি মারবো তোমায়! সো বাঁচার একটা চান্স দিচ্ছি, নিজের বস’র নাম টা বলো।
– কখনো না মরে গেলো না!
– তাহলে মরে যাও!
– তবে আমি একা মরবো না, তার সাথে তোমরাও!
আদুরী ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকায়। সে হেসে বলে..
– ২ মিনিট পর পুরো জায়গা ব্লাস্ট হবে। আমার সাথে সাথে তোমরা ও মরবে।
আদুরী হেঁসে বলে..
– কিন্তু তার আগে তুমি মরবে!
বলেই কপাল বরাবর ছুরি মারে। ছুরির আঘাতে লোকটা পড়ে যায়। কিছুক্ষণ পর পুরো জায়গা ব্লাস্ট হয়।
দুদিন পর…
অভ্র আর বাকি সবাই বসে আছেন। আজ’ই চীপ ফেরত দেবার কথা। মিঃ খান্না নিজে নিবে এই চীপ! তার সহকারী মিঃ হাওলাদার বলে উঠে..
– কি ব্যাপার অভ্র? চীপ কোথায়? চুক্তি অনুযায়ী আজ তা নেবার কথা।
অভ্র বলে উঠে..
– ও আসবে!
– কিন্তু কিভাবে? আমি তো শুনলাম ও নাকি ব্লাস্টে মারা গেছে!
ইহান বলে উঠে..
– ওহ্ আচ্ছা, সব জেনে তাহলে এখানে এসেছেন কেন?
সে কিছু বলতে নিলে মিঃ খান্না তাকে থামিয়ে দেয় এখানে কাব্য কিছু বলতে যাবে নিশি তাকে থামিয়ে দেয়।
কিছুক্ষণ পর হাওলাদার সাহেব খান্না’র কানে ফিসফিসিয়ে কিছু বলে। তখন খান্না বলে উঠে…
– তোমার সময় শেষ অভ্র। চুক্তি মোতাবেক তোমরা চীপ দিতে পারলে না। তোমাদের কাছে এটা আমি আশা করেনি।
এর মধ্যে’ই সদর দরজা খুলে যায়। একজন বলে উঠে..
– টাইম সেন্স সম্পর্কে আপনার ধারণা দেখে অবাক হলাম মিঃ খান্না!
সবাই অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। অভ্র একটা বাঁকা হাসি দিয়ে পিছনে ঘুরে দাঁড়ায়। হাওয়ালার সাহেব বলে উঠে…
– কে তুমি?
সে ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বলে…
– it’s me, মেহেরিন বর্ষা খান! খান পরিবারের ছোট মেয়ে অধরা খানের মেয়ে আদুরী!
সবাই অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে। আদুরী ভিতরে প্রবেশ করে তখন তার দুপাশে নিহা আল রোদ্দুর তার সাথে থাকে। ভিতরে প্রবেশ করে হুডি’র টুপি টা মাথা থেকে নামিয়ে নেয়। খান্না বলে উঠে..
– মেহেরিন তুমি! তুমি বেঁচে আছো।
মেহেরিন হেসে বলে..
– কি করবো বলেন, ভাগ্য আমায় খুব ভালোবাসে। তাইতো আবার আপনাদের সামনে নিয়ে আসল
হাওয়ালার সাহেব হেসে বলেন..
– তবে তোমার ভাগ্য বোধহয় এইবার তোমার সাধ দেয় নি। কারন ইউর টাইট ইজ ওভার নাও!
– ঘড়ি টা আরো একবার চেক করুন, ২ মিনিট এখনো আছে! আর এই ২ মিনিটে চীপ তো দেওয়ায় যেতে পারে তাই না মিঃ খান্না!
মিঃ খান্না হেসে বলেন..
– পুরোই মা’র ডুবলিকেট! তুমি যখন টাইমে এসেছো তখন চীপ নিতেই পারবো কিন্তু ব্লাস্ট থেকে বাঁচলে কি করে!
মেহেরিন রোদ্দুর দিকে তাকিয়ে বলে..
– বেস্ট ফ্রেন্ড সাথে থাকলে আর চিন্তা কি! তবে আরেকজন ও আছে!
– কে সে?
– ডেভিল ভিতরে আসো!
ডেভিল ভিতরে আসল, মিঃ খান্না ডেভিল কে দেখে প্রথমে অবাক হলেন পরে মৃদু হেসে ডেভিল এর ঘাড়ে হাত রেখে বলল..
– অধরা খানের জুনিয়র বডি গার্ড ছিলে তুমি, এখন তার মেয়ের বডি গার্ড! তা মেহেরিন ডেভিল থাকতে তোমার চিন্তা কি। ওর জীবন থাকতে তোমার ক্ষতি হতে দিবে না।
– আমি জানি সেটা।
মিঃ হাওলাদার বলে উঠেন..
– স্যার আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে, মেহেরিন চীপ দাও!
কাব্য নিশি কে ফিসফিসিয়ে বলে..
– এই লোকটার সমস্যা কি? সবসময় এমন করে কেন?
নীল বলে উঠে..
– কারন একটাই! আদুরী না থাকলে এর জায়গাটা তিনি পেতেন! সেটাই রাগের কারন..
ইহান বলে উঠে..
– ইচ্ছে করে এটাকে এখানেই মেরে ফেলে দেই!
নিশি হেসে বলে..
– তবে আমাদের রুলস হলো শত্রুদের বাঁচিয়ে রাখা যেন তারা আমাদের সাফল্য দেখতে পারে!
নিশি’র কথায় সবাই মুচকি হেসে উঠে। অভ্র বলে উঠে…
– হাওলাদার সাহেবের তাড়া মনে হচ্ছে বেশি!
নিহা তাচ্ছিল্যের স্বরে বলে..
– আদুরী চীপ টা দিয়ে দাও এটায় তার জান লুকানো আছে।
মেহেরিন বাঁকা হেসে চীপ টা বের করে টেবিলে রাখে। হাওলাদার সাহেব সেটা নিতে গেলে মেহেরিন আবার সেটা নিয়ে যায়। তিনি বিরক্ত স্বরে বলেন..
– এটা কি হলো?
– প্রথমে টাকা পরে চীপ!
– মানে! কি বলতে চাও তুমি? আমরা ঠকাবো তোমাকে। তোমার মা এতো দিন কাজ করেছে আমাদের সাথে তারপরও এতো অবিশ্বাস। এটা তো আমাদের অপমান তাই না!
মেহেরিন খান্না’র দিকে তাকায়! তিনি হেসে বলেন..
– মা’রই তো মেয়ে, টাকা টা দিয়ে দাও।
– কিন্তু যদি ঠকায় আমাদের..
– না ঠকাবে না, ওর মা যখন ঠকায় নি ও ঠকাবে না। এখন টাকা দিয়ে দাও।
হাওয়ালার সাহেব কিছু না বলে টাকা মেহেরিন এর অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে বলে..
– দিয়ে দিয়েছি!
মেহেরিন ডেভিলের দিকে ইশারা করে। ডেভিল ল্যাপটব চেক করে বলে..
– টাকা এসে গেছে ম্যাম!
অতঃপর মেহেরিন চীপ টা দিয়ে দেয়। মিঃ খান্না চীপ টা নিয়ে মেহেরিন এর সাথে হাত মিলিয়ে বলে..
– আবারও হয়তো দরকার পড়বে তোমায়!
– দেখা যাক!
.
বাসায় এসে অভ্র মেহেরিন এর ব্যান্ডেজ চেঞ্জ করে দিচ্ছে। নিহা সবে মাত্র খাবার নিয়ে এসেছে মেহেরিন এর জন্য! মেহেরিন অভ্র’র কোলে বসে আছে, আর নিহা খাইয়ে দিচ্ছে। বাকি সবাই.. তারা তো থামছেই না। ৫ বছরের কথা যেন ৫ মিনিটে বলে দেবে সবাই! আর মেহেরিনও একবার এর দিকে তাকায় তো একবার ওর দিকে তাকায়। মানে কার কথা শুনবে সেটাও ভেবে পাচ্ছে না। অতঃপর অভ্র মেহেরিন এর মাথা ধরে সোজা করে সবাইকে চুপ করতে বলে। সবাই চুপ! মেহেরিন বলে উঠে..
– তোমরা সবাই নিজের কথাই বলছো আমার কথা কেউ শুনতে চাইছে না কেন?
নীল বলে উঠে..
– তোর আবার নতুন কি? তোর সব খবর’ই রাখতাম! রাত ১২ টার ঘুরতে যাবা, সকাল ১২ টায় ঘুম থেকে উঠা। মাসে একবার স্কুলে যাওয়া…
ইহান বলে উঠে..
– যেদিন স্কুলে যাবে সেদিন ও স্কুল থেকে পালিয়ে সারা দিন ঘোরাঘুরি করা, ছেলেদের কে অযাথা মেরে হাত পা ভেঙ্গে দেওয়া..
রোদ্দুর বলে উঠে..
– সারাদিন স্ট্রিট ফুড খাওয়া! কোনো ব্যায়াম না করা, নিজের যত্ন না নেওয়া!
কাব্য বলে উঠে..
– প্রতিবারের মতো এক্সাম হলে ঘুমানো, আচ্ছা এবার নাকি বোর্ড পরিক্ষায় হলে ঘুমিয়েছিস! কিভাবে সম্ভব! মানুষ পড়ার চিন্তায় ঘুমানো ভুলে যায় আর তুই হলে ঘুমাস কিভাবে?
ওদের কথা শুনে সবাই হেসে উঠে। মেহেরিন সবার দিকে তাকিয়ে বলে..
– আমি যে সেলিব্রিটি এখানে না আসলে তা জানতেই পারতাম না।
নীল বলে উঠে..
– তুই কাছে না থাকলে কি হবে? তোর সব খবর রাখি বুঝলি! তবে কালকেই একটু অসচেতন ছিলাম যার কারনে এরকম একটা কান্ড হলো।
মেহেরিন বলে উঠে..
– যাই হোক এতে আমি মজা করেছি! হি হি হি..
নিহা বলে উঠে ..
– আচ্ছা এখন একটু চুপ করে খেয়ে নে!
কাব্য হেসে বলে..
– বিড়ালের সামনে মাছ দিয়ে বলছে মাছ খেয়ো না!
একদফা হেসে উঠে সবাই। মেহেরিন মুখ ফুলিয়ে বলে..
– সবার সিক্রেট কে ব্লাস্ট করবে!
নিশি একলাফে দাঁড়িয়ে বলে…
– আমি বলছি!
সবাই শুকনো ঢোক গিলে। কারন মেহেরিন কে কিছু বললেই সে সবসময় সেটা নিয়েই জ্বালাতন করবে। তাকে কিছু বলাও যাবে না আবার।
রোদ্দুর বলে উঠে..
– বলবি ভালো কথা ক্যাঙ্গারুর মতো লাফানোর কি হলো?
নিশি রোদ্দুর দিকে তাকিয়ে বলে..
– দাঁড়া তোর টা আগে ব্লাস্ট করছি!
মেহেরিন এক্সাইটেড হয়ে বলে..
– কি রে?
নিহা মুখ নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলে…
– শুনবি তো কান দিয়ে এখন এদিকে ঘুরে খাবার খা!
– কিন্তু এক্সপ্রেশন দেখবো না!
বলেই আবার নিশি’র দিকে ঘুরে। নিশি বলতে শুরু করে,
#চলবে….