#Game
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_09+10
আনহা কে মুচকি মুচকি হাসতে দেখে নিহা তার ঘাড়ে হাত রেখে জিজ্ঞেস করে..
– কি হয়েছে আপু হাসছো কেন?
– না কিছু না, তুমি কেমন আছো!
– হুম ভালো, তুমি?
– অনেক ভালো!
এর মধেই মেহেরিন ছুটে আসে, হালকা ছাই রঙের একটা হুডি আর ট্রাউজার পরে। এসেই আনহা’র হাত ধরে সোফায় বসে। অতঃপর তার সাথে গল্প করতে শুরু করে দেয়। অভ্র ওর দিকে হেসে নীল কে নিয়ে ঘরে চলে যায়, এদিকে ইহান ওরাও চলে যায়। নিহা, নিশি যোগ দেয় মেহেরিন এর সাথে। প্রায় অনেকক্ষণ গল্প করে সবাই মিলে। হুট করেই কাব্য এসে মেহেরিন’র কানে কানে কিছু বলে। মেহেরিন উঠে চলে যায়। নিহা’র কাছে ব্যাপার টা কেমন লাগলে সেও চলে যায়। এদিকে নিশি’র একটা কল আসে যার কারনে ওর ও উঠে চলে যেতে হয়। আনহা খানিকক্ষণ একা বসে বাড়ি’টা ঘুরতে থাকে। একসময় বাড়ির পেছনের দিকে চলে যায়। সেখানে হাঁটতে থাকে। হুট করেই কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতে নিলে সে তার কোমর জরিয়ে ধরে। আনহা চোখ মুখ খিচে আছে। হঠাৎ কারো চেনা গলা পেয়ে আনহা চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে অভ্র। আনহা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। অভ্র’র ডাকে হুশ ফেরে তার। অতঃপর ঠিক হয়ে দাঁড়ায়। অভ্র দুই হাত গুজে বলে..
– কি হয়েছে তোমার?
– মানে স্যার!
– ভিটামিনের অভাব নাকি তোমার? চোখে কি ঠিকঠাক করে দেখতে পাও না!
– কেন স্যার?
– তাহলে যখন তখন যেখানে সেখানে পরে যেতে নেও কেনো।
– সেটা তো স্যার ভুল করে।
– তাহলে বরং একটা কাজ করো বিয়ে করে নাও তাহলে ভালো হবে।
– কিভাবে ভালো হবে?
– তুমি যখন তখন যেখানে সেখানে পড়ে যেতে নিবে তখন তোমার বর এসে ধরবে তোমায়। কারন সারাজীবন তো আর আমি থাকবো না। শেষে এই বয়সে কবরে না চলে যাও!
আনহা বিড় বিড় করে বলে..
– আপনাকেই তো ধরতে হবে সারাজীবন!
– আনহা!
– জ্বি স্যার!
– কি বলছি শুনেছ।
– হ্যাঁ স্যার আমি তো শুনেছি আর বুঝেছিও তবে সেই তো বুঝছে না।
অভ্র ভ্রু কুঁচকে বলে..
– এই সেই টা কে?
– মানে স্যার আমার মানে…
অভ্র কপাল কুঁচকে তাকিয়ে থাকে। আনহা চোখ বন্ধ করে বলে উঠে..
– যাকে আমি বিয়ে করতে চাই সে!
– ওহ্ এটা বলতে এতক্ষন।
– স্যার আমি মেয়ে, এইসব বলতে শরম তো করবেই।
– তোমার জন্য মাঝে মাঝে আমি সেটাও ভুলেই যাই।
– কি স্যার!
– কিছু না। তাহলে বিয়ে করে নাও, যখন সেই মানুষটিও আছে।
– স্যার আমি তো চাই কিন্তু..
– আবার কিসের কিন্তু!
– মানে স্যার বিয়েটা সে করতে চায় কি না তা জানি না।
– তাহলে জিজ্ঞেস করো।
বলতে বলতে অভ্র স্টাডি রুমে ঢুকল। আনহা তার পিছন পিছন হাঁটতে হাঁটতে বলল..
– কিভাবে জিজ্ঞেস করবো সেটাই তো বুঝছি না, আর ভয় ও হচ্ছে যদি সে না বলে তখন
– নাহ কেন বলবে তুমি দেখতে তো ঠিকঠাকই আছো।
– আচ্ছা স্যার ঠিকঠাক বলতে!
অভ্র আনহার দিকে তাকিয়ে বলে..,
– দেখতে সুন্দর, কথাবার্তা ভালো, ভদ্র তবে সমস্যা একটাই!
– কি?
– বেশি কথা বলো তবে সেটা ফ্যাক্ট না। যাই হোক এরকম ভালো মেয়েকে কে বিয়ে করতে চাইবে না।
– সবাই চাইবে।
– হুম! তোমাকে না বলার কারন কি থাকতে পারে!
– আর স্যার আপনি!
আনহার কথা শুনে অভ্র তার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে। আনহা দ্রুত কথা ঘুরিয়ে বলে..
– মানে স্যার আমাকে কে তো কেউ না করবে না বুঝলাম তবে আপনি! আপনি বিয়ে করবেন না। বিয়ের বয়স তো আপনারও হয়েছে।
অভ্র কিঞ্চিত হেসে বলে..
– বিয়ে! না।
– কেন স্যার, আপনার মধ্যে কমতি কি?
– জানি না!
– তাহলে, নাকি আপনি কাউকে পছন্দ করেন।
– না সেই সময় আমার হয়ে উঠেনি। আমার জীবনের সকল মূহুর্ত শুধু আমার ভাই বোনদের জন্য!
– কেন স্যার।
– কারন এটা আমার মায়ের শেষ ইচ্ছা ছিল।
– কিন্তু যদি বিয়ে করেন তাহলে সেও তো এসে আপনাকে সাহায্য করতে পারে, আবার আপনার ভাই বোনদের দেখা শুনাও করবে।
– বলতে পারি না তবে সবসময় এমন হয় না।
– কেন হয় না!
– কারন ভাগ্য চায় না। আর ভাগ্য যদি না চায় তাহলে এমন কিছু কখনো হবে না।
– হুম!
বলেই আনমনে বেরিয়ে আসতে নেয় আনহা। তখন অভ্র বলে উঠে..
– তবে একটা কথা কি জানো আনহা, তুমি যে বাড়ির বউ হবে সে বাড়ি সত্যি ভাগ্যবান হবে।
আনহা মুচকি হেসে বলে উঠে..
– আর আপনাকে যে পাবে সে সত্যি ভাগ্যবান হবে!
বলেই বেরিয়ে আসে আনহা।
.
এদিকে আড়িপেতে নিশি, নীল, কাব্য আর মেহেরিন সব শুনে। মেহেরিন সব শুনে রাগে কাব্য’র পায়ে জোরে পাড়া মারে। কাব্য চিৎকার করতে নিলে নীল ওর মুখ চেপে ধরে। অতঃপর সবাই মিলে দৌড়ে বেলকনিতে চলে আসে। কাব্য মেহেরিন’র হাতে চিমটি দিয়ে বলে..
– এতো জোরে মারলি কেন আমায়!
– রাগে!
নীল বলে উঠে..
– আমার দা টাও না!
নিশি বলে উঠে..
– কিছু হবে না তাকে নিয়ে!
কাব্য বলে উঠে..
– দা কখনো বিয়ে করবে না।
মেহেরিন বলে উঠে..
– না করুক দা বিয়ে, তো কি হয়েছে যা করার আমার মিষ্টি ভাবী করবে।
নীল অবাক হয়ে বলে উঠে..
– মানে!
– শোন দা জীবনে নিজে থেকে বিয়ে করতে চাইবে না বুঝলে।
কাব্য বলে উঠে..
– এটা নতুন কি?
নিশি বলে উঠে…
– তাহলে জোর করেই বিয়ে দিয়ে দেই!
মেহেরিন বাঁকা হেসে বলে..
– সেটা সহজ হবে না কিন্তু আগে এটা জানতে হবে মিষ্টি ভাবী কি চায়!
– সেটা জানবো কি করে!
মেহেরিন বাঁকা হেসে বলে..
– কাব্য, অফিসের সবচেয়ে সুন্দর মেয়েটার খোঁজ দে আমায়!
– কেন তুই কি করবি!
– অনেক কিছু! দেখলেই বুঝতে পারবি!
.
কেটে গেলো কয়েকদিন। মেহেরিন আজ হসপিটালে, ওর উপর আজ এ্যাটাক হয়েছিল। তবে বেঁচে গেছে কারন সাথে ডেভিল ছিল। শুধু হাতে গুলি লেগেছে তবে সেটা লেগে বের হয়ে গেছে। এদিকে নিহা আর অভ্র অস্থির হয়ে আছে কারন এটা তাদের কোনো নতুন শত্রু মনে হচ্ছে। তবে তার সম্পর্কে কিছুই জানা নেই তাদের। তাকে খোঁজার জন্য কয়েকজন লোক ঠিক করেছে তারা।
এই ঘটনার পর মেহেরিন’কে আরো বেশি ব্যায়াম করতে হয়। তার সাথে মারামারি আর গান শুটিং তো আছেই। সকালে উঠে অভ্র ব্যায়াম করানোর পর নিহা এসে গান শুটিংয়ের প্র্যাকটিস করায়। অতঃপর ঘন্টাখানেক’র জন্য নীল, রোদ্দুর ওদের সাথে ফাইটিং করে। তবে ছুরি চালানোর বিদ্যায় মেহেরিন যথেষ্ট দক্ষ। তবুও সেটাও প্র্যাকটিস করতে হয়। এছাড়া তার বডি গার্ড এর সংখ্যা ও বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এসব দেখে মেহেরিন এখন ক্লান্ত! এমনভাবে চলতে থাকে প্রায় এক সপ্তাহ। মেহেরিন এর পক্ষে আর সম্ভব না। কিন্তু প্রতিদিন অভ্র সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে তাকে দিয়ে এসব করায়! অতঃপর মেহেরিন আজ ফন্দি আঁটল কিভাবে দা কে দেরি করে ঘুম থেকে জাগানো যায়।
রাত ২টা..
অভ্র ঘুমিয়ে আছে, হঠাৎ করেই তার পায়ে কেউ শুরশুরি দিতে লাগল যার কারনে সে ঘুম থেকে উঠে। অতঃপর নিচে তাকিয়ে দেখে তার আদরের বোন হাতে ময়ূরের পালক নিয়ে বসে আছে। মেহেরিন অভ্র’কে দেখে এক গাল হেসে বলল…
– গুড মিডনাইট দা!
– গুড মিডনাইট! তা আপনি না ঘুমিয়ে এখানে কি করছেন?
– আসলে দা আমার খুব ক্ষিদে পেয়েছে!
– রাতে না ডিনার করলে!
– তো ডিনার তো করেছি ৮ টার সময় এখন বাজে ২ টা। ক্ষুধা তো লাগবেই না!
– আচ্ছা কি খাবে এখন!
– ফুচকা!
– ফুচকা খেলে পেট ভরবে!
– আচ্ছা তাহলে বার্গার
– কোনো মতে না!
– আচ্ছা আইসক্রিম!
– ঠান্ডা লেগে যাবে।
– সব বাদ চলো তুমি আর আমি মিলে পপকর্ন খেতে খেতে মুভি দেখি!
– তুমি না বললে তোমার ক্ষুধা লেগেছে!
মেহেরিন কিছু না বলে তাকিয়ে থাকে অভ্র’র দিকে। অভ্র বলে উঠে..
– আচ্ছা পাস্তা বানিয়ে দিচ্ছি সেটা খাবে।
– হামম হামম!
– চলো!
অতঃপর অভ্র মেহেরিন কে খাওয়াতে থাকে আর মেহেরিন কার্টুন দেখতে থাকে। একসময় মেহেরিন অভ্র’র কোলে মাথা রেখে সোফায় ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে অভ্র ঘুম থেকে উঠে দেখে তার সামনে নিহা, নিশি, ইহান ওরা সবাই দাঁড়ানো। অতঃপর তাকিয়ে দেখে মেহেরিন তার কোলে গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে। অভ্র মৃদু হেসে নীল কে বলে..
– ওকে রুমে শুইয়ে দিয়ে আয়!
নীল ওকে কোলে করে যায়। নিহা বলে উঠে..
– তুমি জানো আদুরী এটা ইচ্ছে করে করেছে!
– জানি! ওর বোর হয়ে গেছে, আচ্ছা কাল থেকে একদিন পর পর প্র্যাকটিস করাবে।
– যেমন ভাই তেমন বোন!
.
মেহেরিন বসে বসে চকলেট খাচ্ছে আর সিনচেন দেখছে। তখন কাব্য এসে ওর পাশে বসে বলে…
– সুন্দরী মেয়ের খবর পেয়েছি!
– দা’র অফিসের!
– না আমাদের নতুন কোম্পানি, তবে আমি তাকে আসতে বলেছি। তুই কি করাবি তাকে দিয়ে!
– দেখ কি করি!
অতঃপর অফিসে…
আনহা অভ্র কে ওদের নিউ প্রজেক্ট নিয়ে বলছে, এর মধেই দরজা কেউ নক করলো। অভ্র তাকে ভিতরে আসতে বলল। আনহা তাকিয়ে দেখে অনেক সুন্দরী একটা মেয়ে এসেছে। মেয়েটা সত্যি বেশ সুন্দর! অভ্র তাকে বসতে বলে আসার কারন জানতে চাইলো।মেয়ে বলে উঠল..
– স্যার আমি আপনাদের নতুন কোম্পানি’র ম্যানেজার। মেহেরিন ম্যাম পাঠিয়েছেন আমাকে। নতুন কোম্পানি’র কিছু ফাইল নাকি আছে আপনার কাছে সেগুলো কালেক্ট করতে আর এছাড়া আরো কিছু কাজ আছে!
– ওহ্ আচ্ছা। কিন্তু..
এরমধ্যে তার ফোনে মেহেরিন’র ম্যাসেজ আসে। মেয়েটি যা বলেছে মেহেরিন ও তাই লিখে পাঠিয়েছে। তাই অভ্র আর কিছু না বলে একজন’কে ডেকে বলে ফাইল গুলো নিয়ে আসতে।
এখানে মেয়েটা বসে অভ্র’র সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে থাকে তবে কোনোটাই কাজের না। অভ্র ও তার সাথে হেসে কথা বলছে। এইসব দেখে যেন আনহা রাগে জ্বলে যাচ্ছে। আনহা বিড় বিড় করে বলে..
– কি বেহায়ার মেয়েরা বাবা। এতো কথা কিসের? আর কোনো টাই কাজের কথা না। আর এই লোকটাকে দেখো কেমন হেঁসে হেসে কথা বলছে! আমার সাথে তো কখনো এমন ভাবে কথা বলে না। আজ কি হলো!
আনহা বলে উঠে..
– স্যার আমি আপনাদের জন্য কফি আনতে বলে আসছি!
মেয়েটি বলে উঠে..
– স্যার কিছু মনে না করলে আমি আপনার জন্য কফি বানিয়ে নিয়ে আসি। অনেক ভালো কফি বানাতে পারি আমি।
আনহা চোখ বড় বড় তাকিয়ে আছে। অভ্র বলে উঠে..
– না আপনি বসুন!
মেয়েটি তবুও অনেক জেদ করে শেষে অভ্র কি বলবে বুঝতে না পেরে হ্যাঁ বলে দেয়। আনহা তাকিয়ে আছে অভ্র’র দিকে। মনে মনে বলে..
– কি? এই মেয়ের হাতে কফি খাবেন উনি! আমাকে তো আজ পর্যন্ত বলি নি বানিয়ে আনতে আর এই দু’মিনিটের মেয়েটাকে বলছে। মেয়েটা শুধু যাক যনমের মতো কফি খাওয়াবো উনাকে আমি!
অতঃপর মেয়েটা কফি বানাতে চলে যায়। অভ্র আবারও আনহা’র সাথে প্রজেক্ট নিয়ে কথা বলা শুরু করে। হঠাৎ আনহা বলে উঠে..
– স্যার মেয়েটা কেমন?
– কোন মেয়ে?
– এই যে আপনার জন্য কফি বানাতে গেলো!
– কেন?
– না এমনি বলুন না!
– সুন্দরী দেখতে!
আনহা দাঁতে দাঁত চেপে বলে..
– ওহ্ আচ্ছা খুব সুন্দর! তাহলে তো তার হাতের কফিও বেশ ভালো হবে না!
অভ্র উঠে সেলফ থেকে একটা ফাইল নিয়ে বলে..
– মানুষের সুন্দর আর গুন এক কথা না। যে সুন্দরী সে যে গুনেও অনন্য এরকম না বুঝলে।
– তাহলে তাকে কফি বানানোর অনুমতি দিলেন কেন?
অভ্র অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে আনহার দিকে। তার কথার কিছু্ই সে বুঝতে পারছে না। এরমধ্যে মেয়েটা চলে আসে কফি নিয়ে। তিন কাপ কফি, প্রথম কফি টা আনহা কে দেয়, আরেকটা টেবিলে রেখে শেষের টা হাতে করে অভ্র’র কাছে নিয়ে আসে। অভ্র মুচকি হেসে তার হাত থেকে কফি টা নেয়। মেয়েটা সামনে দাঁড়িয়ে বলে..
– স্যার খেয়ে বলুন না কেমন হয়েছে?
অভ্র একবার আনহার দিকে তাকায়। সে কেমন ভাবে জানি তাকিয়ে আছে তার দিকে। অভ্র কফিটা নিয়ে হাটতে হাঁটতে টেবিলের কাছে এসে ফাইলটা টেবিলে রাখে। অতঃপর মুখে চুমুক দিতে যাবে এমন সময় আনহা চেঁচিয়ে উঠে যার কারনে কফি অভ্র’র স্যুটে পড়ে যায়। অভ্র কফি টা টেবিলে রেখে আনহা’র কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে..
– কি হয়েছে?
– স্যার কফিটা অনেক গরম ছিলো আমি মুখ পুড়ে গেছে!
– আরে! এই নাও পানি খাও।
– হুম!
বলে অভ্র’র হাত থেকে পানির গ্লাস নেয় আর মুচকি হাসে। কারন এটা সে ইচ্ছে করেই করেছে যেন অভ্র ওই মেয়েটার বানানো কফি না খায়! এরমধ্যে ফাইলগুলো এসে পড়ে। আনহা মুখ টিপে হেসে বলে…
– আপনার ফাইল চলে এসেছে। এগুলো নিয়ে কাজ শুরু করে দিন।
মেয়েটি জোরপূর্বক হাসি দিয়ে ফাইলগুলো নিয়ে চলে যেতে নিয়েও আবার ফিরে আসে। অভ্র’র কাছে দাঁড়িয়ে বলে..
– স্যার আপনার স্যুট এ কফির দাগ ওয়েট আমি মুছে দিচ্ছি!
বলেই ব্যাগ থেকে টিস্যু বের করতে নেয়। আনহা রেগে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। অতঃপর….
#চলবে….
[ আজ আরেকটা পর্ব দেওয়ার চেষ্টা করবো। ধন্যবাদ সবাইকে ]
#Game
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_১০
আনহা রেগে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা ব্যাগ থেকে টিস্যু টা বের করতেই যাবে এর আগে আনহা টেবিল থেকে টিস্যু নিয়ে অভ্রকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে স্যুট’টা মুছে দিতে লাগল। মেয়েটা তো অবাক কিন্তু মারাত্মক অবাক হয়েছে অভ্র। সে হা হয়ে তাকিয়ে আছে। তার মাথায় কিছুই ঢুকলো না কিন্তু এই মেয়েটার সামনে চেঁচিয়ে কিছু বলতে পারছে না। আনহা বলে উঠে..
– তুমি চলো যাও, আমি আছি এখানে হুম!
মেয়েটা কিছু না বলেই চলে গেলো। মেয়েটা যেতেই অভ্র আনহা’র হাত ধরে বলল..
– কি হচ্ছে টা কি আনহা, কি করছো এইসব। কেউ দেখলে কি বলবে?
– ওহ্ আচ্ছা আমি ধরলে কেউ দেখবে আর ওই মেয়ে দেখলে কেউ কিছু বলবে না।
– মানে! কি বলছো তুমি?
– আপনার মানে টানে রাখুন। আগে আমাকে বলুন, মেয়েটাকে মানা করলেন না কেন আপনি!
– করবার সুযোগ তুমি কোথায় দিলে, আর মেয়েটাকে মানা করতে বলছো তার আগে তো তুমি নিজেই করছো।
– আমি করবো আমার অধিকার আছে, ওই মেয়ে কেন করবে।
অভ্র এতোক্ষণে সব বুঝতে পারল, অতঃপর আনহার হাত ছেড়ে চেয়ারে বসে বলল..
– আমি সেই অধিকার কাউকে দিই নি আনহা, আর আমার কাছে এইসব কিছুর আসা করো না। মাথা থেকে ঝেরে ফেলো এইসব। হুমম!
আনহা রেগে গিয়ে অভ্র সামনে দাঁড়িয়ে বলল..
– কেন ঝাড়ব, আমি ভালোবাসি আপনাকে!
অভ্র খানিকক্ষণ আনহা’র দিকে তাকিয়ে বলল..
– বেসে লাভ নেই, সবাই সবকিছু পায় না।
– কেন? আমি তো সেদিন বলেছিলেন আমি নাকি দেখতে সুন্দরী,ভালো তাহলে। যে আমাকে পাবে সে ভাগ্যবান তাহলে! সেই মানুষটি আপনি কেন হবেন না।
– সবকিছুর কারন জানতে চেয়ো না। যাও এখন!
আনহা’র চোখে পানি এসে গেল। সে কোনোমতে চোখের জল মুছে বলল..
– যাচ্ছি!
বলেই আনহা বেরিয়ে গেলো। এদিকে অভ্র আবারও তার কাজে মন দিলো। তাদের মাঝে আর কথা হলো না সেদিন। এমনকি অভ্র আর একবার ডাকলো না আনহা’কে।
এদিকে মেহেরিন বেশ খুশি, কারন সে জানতে পেরেছে আনহা অভ্র কে ভালোবাসে। এখন শুধু তার মিষ্টি ভাবী করে আনার প্ল্যান করতে হবে তাকে। জানে অভ্র কখনো বিয়ে করতে রাজি হবে না।
দেখতে দেখতে আজ প্রায় ১ সপ্তাহ, আনহা অভ্র’র সাথে প্রয়োজন ছাড়া কথা বলে না। অভ্র’র এই ব্যাপারটা অনেক খারাপ লাগে তবুও কিছু বলে না। হঠাৎ করেই আনহা অভ্র’র রুমে আসল এক প্যাকেট মিষ্টি নিয়ে। অভ্র’র সামনে একটা কার্ড ও রাখল। অভ্র সেই কার্ড হাতে নিয়ে বলল..
– কিসের কার্ড!
– আমার বিয়ের!
অভ্র কার্ড’টা আর খুলল না। মৃদু হাসি দিয়ে বলল..
– ওহ তো কবে?
– লেখা আছে ওখানে দেখে নিয়েন। আর হ্যাঁ এই যে মিষ্টি এনেছি আপনার জন্য। আমার বিয়েতে অবশ্যই আসবেন আর আদুরী কে সাথে আনবেন।
অভ্র মুচকি হেসে বলে…
– হুম আসবো!
আনহা বলে উঠে…
– সত্যি আসবেন তো।
– হ্যাঁ কেন আসবো না। আমি যাবো!
– আমি অপেক্ষায় থাকবো!
অভ্র হেসে বলে..
– কনগ্রেচুলেশন!
– ধন্যবাদ স্যার।
বলেই আনহা বেরিয়ে যায়। এদিকে অভ্র কেমন জানি অস্থির হয়ে যায়। টাই টা লুজ করে চোখ বন্ধ করে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে। কিছুক্ষণ পর উঠে বেরিয়ে যায় অফিস থেকে, সোজা বাসায় আসে।
বাসায় এসে দেখে মেহেরিন , ইহান ওরা সবাই ডান্স প্র্যাকটিস করছে। মেহেরিন অভ্র কে দেখে ওর কাছে দৌড়ে আসে আর অবাকও হয় কারন অভ্র এই সময়ে বাসায়! মেহেরিন জিজ্ঞেস করে..
– ভাইয়া ঠিক আছো তুমি!
মেহেরিন’র কপালে চুমু খেয়ে..
– হুম ঠিক আছি!
– তাহলে এই সময়ে বাসায় এলে যে।
– এমনে ভালো লাগছিলো না তাই! খেয়েছো!
– হামম হামম!
– নিহা, নীল, নিশি কোথায়?
– দি আর ভাইয়া ভার্সিটিতে গেলে আর আপু মেডিকেল কলেজে!
– ওহ্ আচ্ছা!
এমন সময় ডেভিল এসে উপস্থিত হয়। মেহেরিন আবারও চলে যায় ডান্স প্র্যাকটিস করতে। অভ্র ডেভিল কে জিজ্ঞেস করে..
– কিছু হয়েছে?
– সেদিন মেহেরিন এর উপর হামলাকারীদের খোঁজ পেয়েছি!
– কারা তারা?
– স্যার তারা সব ইন্টারন্যাশনাল সিরিয়াল কিলার ছিলো!
– ওয়াট! কি বললে?
– হুম স্যার প্রথমে শুনে আমিও খানিকটা অবাক হয়, সিরিয়াল কিলার!
– এতো বড় শত্রু কে আমাদের?
– স্যার খোঁজ চলছে তবে এখনো জানা জায়নি!
– বের করো খুব জলদি! আর হ্যাঁ মেহেরিন যেনো কোনোমতে এসব জানতে না পারে।
– জ্বি স্যার!
.
এদিকে সেই অজানা লোকগুলো..
– কাদের পাঠালে তুমি? ওরা তো আদুরীর কিছু্ই করতে পারলো না!
– সেটা আমিও ভাবছি! তবে..
– তবে আমার কি?
– তাদের ব্যাপারে ডেভিল জানতে পেরেগেছে!
– এটাই বাকি ছিল! তারা এখন কোথায়?
– আমি তাদের আবারও ব্যাংকক এ ফিরিয়ে এনেছি!
– এসব হবে না, কিছু হবে না এদের দ্বারা! আমাকেই কিছু করতে হবে।
– কিহহ তুমি যাবে।
– হ্যাঁ আমি যাবো!
– পাগল হয়ে গেলে নাকি? তুমি এখনো প্রস্তুত নও।
– যাই হোক না কেন আমি যাবো।
– পাগল হয়ো না এটা আর না মেহেরিন বর্ষা খান, অধরা খানের মেয়ে! তুমি ওর সাথে এখন পেরে উঠবে না।
– বুদ্ধি! বুদ্ধিতে আমি পারবো!
– আমার কথা শোন!
– না আমি আর শুনছি না। অনেক হয়েছে? আমি নিজেই এবার যাবো।
বলেই উঠে চলে গেলো সে!
– ও নিশ্চিত কিছু একটা করবে। প্রতিশোধের নেশায় পাগল হয়ে গেছে। তবে এটা ওর জন্য যেমন ভয়ানক তেমনি মেহেরিন’র জন্য ও। জানি না কি করবে…
.
নিহা ভার্সিটিতে যাচ্ছে, পড়নে একটা সাদা হুডি, হুডি’র টুপি দিয়ে মাথা ঢাকা, চোখে সানগ্লাস ! ফোন টিপতে টিপতে যাচ্ছে! হঠাৎ’ই খেয়াল করলো পাশে কয়েকটা ছেলে একটা মেয়েকে টিজ করছে। নিহা ব্যাক নিয়ে টুপি টা সরিয়ে সানগ্লাস খুলে ছেলে গুলোর দিকে তাকিয়ে থাকে। ছেলেগুলো প্রথমে নিহা কে খেয়াল না করলেও একসময়ে চোখে পড়ে। অতঃপর তারা মেয়েটাকে ছেড়ে দেয়। মেয়েটা কৃতজ্ঞ ভরা চোখে নিহা কে তাকিয়ে দেখে চলে যায়! তবুও নিহা তাকিয়ে থাকে ওই ছেলেগুলোর দিকে। ছেলে গুলো আড় চোখে নিহা’র তাকিয়ে থাকা দেখছে। নিহা’র চাহনি তে তাদের অস্বস্তি বোধ হচ্ছে। অতঃপর তারা চলে যায় সেই স্থান থেকে। নিহা অবশ্য এটাই চেয়েছিল।
চোখে সানগ্লাস দিয়ে আবারও হাঁটতে শুরু করে সে। হঠাৎ করেই কেউ ডাকছে বলে মনে হয় তার কাছে। কিন্তু নিহা পিছনে না তাকিয়ে সামনে চলে হাঁটতে লাগল।
কিন্তু সে ডেকেই যাচ্ছে…
– এই ম্যাম, মিস নিহা, নিহারিকা নিহা! আপনাকে ডাকছি। এই যে…
নিহা শুনেও না শোনার ভাব করে চলে যেতে লাগে। হুট করেই একটা ডাক শুনে ধমকে যায় নিহা। সানগ্লাস খুলে পিছনে ঘুরে তাকিয়ে দেখে একটা ছেলে বাইক চালিয়ে তার সামনে আসছে। হেলমেট পড়া, তবুও তার চোখ দুটি দেখতে পাচ্ছে সে। ছেলেটি আবারও বলে উঠে..
– এই যে মিস ভূতনি!
নিহা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে ছেলেটার দিকে!
#চলবে….
[ রাতে এই পর্বের বর্ধিতাংশ দেবো। ধন্যবাদ সবাইকে ]