Game পর্ব -২৬+২৭+২৮+২৯

#Game
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_২৬

আজ ২ দিন হলো মেহেরিন আর রোদ্দুর’র মাঝে কোনো কথা হয় নি। রোদ্দুর’র খবর কেউ জানে না। এদিকে আহিয়ান বেশ চিন্তায় পড়লো। সবার থেকে যা জেনেছে সেখানে রোদ্দুর খুব রাগী। যদি কিছু একটা করে ফেলে তখন। আহিয়ানের সামনে তার ছোট ভাইয়ের ছবি ভেসে উঠছে। তার মনে হচ্ছে রোদ্দুর না তার ছোট ভাইয়ের মতোই কিছু একটা করে ফেলে। এখানে বাকি সবাই তন্ন তন্ন করে রোদ্দুর কে খুঁজছে তবে কারো কাছেই তার কোনো হদিস নেই। রোদ্দুর’র মা বাবা চিন্তা করবে বলে অভ্র তাদের জানায় নি। তবুও পাগলের মতো খুঁজে বেড়াচ্ছে।

আহিয়ান আর বসে থাকে না খুঁজতে বের হয় রোদ্দুর কে। কিন্তু এখানে কেউ একজন ফলো করতে শুরু করে আহিয়ান কে। আহিয়ান প্রথমে রোদ্দুর’র ফ্লাটে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তারা জানায় ২ দিন আগে এসেছিল রোদ্দুর! আহিয়ান এবার শহরে খুঁজতে থাকে। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও খুঁজে পায় না তাকে। অতঃপর আহিয়ান একটু গ্রামের দিকে যায়। হয়তো বা সেখানে রোদ্দুর থাকতে পারে তবে সেখানেও পায় না। অতঃপর কল করে ডেভিল কে। ডেভিল জানায় তাকে নাকি শেষবার শহরের শেষে একটা রিসোর্টে দেখা গেছে। ডেভিল আসছে তবে তার আসতে দেরি হবে। এদিকে আহিয়ান ও শহরের শেষ প্রান্তে চলে আসে। তাই ডেভিল’র আগে রিসোর্টে চলে যায়। রিসোর্ট টা খুব বড় আর সুন্দর করে সাজানো। আহিয়ান গাড়ি পার্ক করতে গিয়ে রোদ্দুর’র গাড়ি দেখে। সে সিউর হয়ে যায় রোদ্দুর এখানেই আছে।

আহিয়ান রিসেপশন থেকে রোদ্দুর’র রুম নাম্বার নেয় কিন্তু সেখানে তাকে পায় না। একটা সার্ভেন্ট কে জিজ্ঞেস করলে সে বলে রোদ্দুর কে ছাদে দেখা গিয়েছে। আহিয়ান দ্রুত ছাদে যায় সেখানে গিয়ে হতবাক হয়ে যায় সে। দূরে রোদ্দুর দাঁড়িয়ে আছে, তার হাতে একটা গান যেটা সে তার কপালে ঠেকিয়ে রেখেছে। আহিয়ান দৌড়ে রোদ্দুর’র কাছে যায়। তাকে ডাকতে থাকে তবে রোদ্দুর কোনো সাড়া দেয় না। রোদ্দুর গুলি করতে যাবে এর আগেই আহিয়ান তার থেকে গান টা কেড়ে নেয়।

– জিজু!

– পাগল হয়ে গেছো, কি করতে যাচ্ছিলে‌ তুমি।

রোদ্দুর মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আহিয়ান একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে মাথা ঠান্ডা করে রোদ্দুর’র ঘাড়ে হাত রাখে। দুজনে একসাথে নিচে বসে। দুজনের মাঝেই নিরবতা। আহিয়ান’ই প্রথমে বলে…

– কেন করতে যাচ্ছিলে এমন!

– আমার পাশে কেউ নেই জিজু, সবাই ছেড়ে দিয়েছে।

– সবাই তোমাকে পাগলের মতো এ দুদিন খুঁজেছে জানো।

– জান খুঁজেছে!

– না মানে ও নিজে বের হয়নি কিন্তু ডেভিল কে দিয়ে পাঠিয়েছি। আর ডেভিল আমায় বলেছে তুমি এখানে।

রোদ্দুর আহিয়ান’র কথা শুনে হতাশা প্রকাশ করল। আহিয়ান আবারও বলে উঠে..

– আচ্ছা রোদ্দুর তোমার কি মনে হয়, এভাবে মরে গেলে তোমার সমস্যার সমাধান হতো।

– আমি তো বেঁচে যেতাম সমস্যা থেকে।

– কিন্তু তোমার মা বাবা তারা!

– দা আছে তাদের দেখার জন্য।

আহিয়ান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে…
– মেয়েটা সত্যি’ই ভালো না রোদ্দুর!

– এখন তুমি ও বলবে একথা। কেউ বুঝলো না আমায়!

– রোদ্দুর এক মিনিটের জন্য এটা ভাবো যে তোমার সবাইকে বুঝতে হবে তখন। তোমাদের বন্ধুত্ব অনেক পুরোনো আর শক্ত। একটা মেয়ের জন্য এভাবে ভেঙে যাবে সেটা। হুম আমি জানি তুমি বন্ধুত্ব নিয়ে কোনো কথা বলো নি মেহেরিন নিজেই তোমাকে বলেছে ছেড়ে দিতে এখন তুমি কি জানো না ও ঠিক কতোটা রাগি। যখন রাগ ওর মাথায় চাপে তখন যা খুশি তাই করে। তুমি তো চিনো ওকে বোঝ তাহলে আবার কি!

– আজকাল খুব অচেনা লাগছে।

– এটা তোমার ভ্রম রোদ্দুর আর কিছু না। তুমি জানো মেহেরিন তোমার জন্য যা করবে ভালোই করবে।

– ……

– রোদ্দুর এটা কি হচ্ছে, আমরা সবাই যখন বলছি মেয়েটা ভালো না তাই মেহেরিন মেয়েটাকে তোমার জীবন থেকে সরে যেতে বলেছে, তোমার এটা কেন বিশ্বাস হয় না। যেখানে আমি নিজেও বলছি তোমায় একথা। এতো গুলো মানুষ কি তোমায় মিথ্যে বলবে।

– তাহলে আমিও তো বলতে পারি জিজু, তুমি কেন সবার কথা বিশ্বাস করো না। কেন মানতে চাও না নিহা দি নির্দোষ! সবাই কি মিথ্যে বলছে তোমায়। আচ্ছা আমাকেই বলো তোমার মা বাবা কি তোমাকে কখনো মিথ্যে বলতে পারে।‌ তারা কি একবার ও আমার দি’র দোষ দিয়েছিল। কোথায় তারা তো দেয় নি। কারন তারা সেই শক থেকে বের হতে পেরেছে কিন্তু তুমি পারো নি। তুমি ভেবেই নিলে সব দোষ দি’র। এখানে তুমি তাকে বোঝার চেষ্টাই করলে না। আমি আত্নহত্যা করতে এসেছি, তবে সত্যি বলতে এখানে কারো দোষ নেই। সবাই আমার ভালো করতেই চায় কিন্তু আমি সেটা বুঝতে পারছি না। তোমার ভাইয়ের সাথেও কি এমন না হয়েছে বলো। জিজু আমার দি কে আমি চিনি। তোমার ভাই আত্নহত্যা করার পর আমার দি অনেক খারাপ লেগেছিল। হ্যাঁ এটা ঠিক মানুষ মারতে আমার দি’র হাত কাঁপে না তবে সেটা নির্দোষ ব্যক্তিদের না। সেরকমই তোমার ভাই ও ছিল!

আহিয়ান উঠে দাঁড়ালো, অতঃপর রোদ্দুর কে বলে..
– চলো!

রোদ্দুর হেঁসে বলে..
– দেখলে তুমিও মানতে চাইলে না। আসলে জিজু কি বলোতো, তোমার আমার পরিস্থিতি ভিন্ন, কষ্ট টাও ভিন্ন তবে মানসিকতা এক। আমরা দুজনেই দুজনকে বোঝানোর চেষ্টা করছি তবে নিজে বুঝতে রাজী না। জীবনে এমন কিছু কিছু ঘটনা ঘটে যার জন্য কোনো মানুষ দায়ী থাকে না তবে আমরা শুধু আমাদের রাগের বসে একজন কে দোষী মেনে নেই আর তাকে শেষ করার চিন্তাভাবনা করতে থাকি।

– হুম চলো এখন!

অতঃপর আহিয়ান রোদ্দুর কে নিয়ে গাড়িতে বসাল। দুজনেই বাড়িতে আসল। সবাইকে রোদ্দুর কে দেখে অনেক খুশি। কিন্তু মেহেরিন এখনো ঘর থেকেই বের হয় নি। আহিয়ান নিজের ঘরে চলে গেল। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগলো কি হলো তার সাথে! সত্যি কি সে ভুল বাকি সবাই ঠিক। তার মা ও বলছিল নিহা ঠিক তাহলে তার মা ও কি মিথ্যে বলছে। আহিয়ান অস্থির হয়ে গেল। খান বাড়ি থেকে বের হয়ে নিজ বাড়িতে গেল। সোজা গেল তার মায়ের কাছে। মা বসে বই পড়ছিলেন। আহিয়ান মেঝেতে বসে মায়ের কোলে মাথা রাখল।

– কি হয়েছে আমার ছেলেটার!

– মা আমি বুঝতে পারছি না আমি কি করবো!

– কি হয়েছে বলো।

– নিহা কি সত্যি’ই ঠিক মা, আমি কি ভুল ছিলাম।

– সেটা তুমি তোমার মন কে জিজ্ঞেস করো।

– তুমি বলো!

– আমার কাছে মনে হয় নিহা ঠিক কারন এতে ওর কোনো দোষ নেই। সবার যে সবাইকে ভালো লাগবে তা না, কিন্তু এই সত্য টা যারা স্বীকার করতে না চায় তারাই ভুল!

– তুমি ও একথা বলছো।

– এটাই যে সত্যি বাবা, তুমি তোমার মন কে জিজ্ঞেস করো দেখবে তোমার মন ঠিক কথা বলবে!

আহিয়ান চলে আসে মায়ের ঘর থেকে। তার ছোট ভাইয়ের ঘর টায় যায় সে, সবকিছু এখনো আগের মতোই আছে। তার গিটার, তার ব্যাট সবকিছু। আহিয়ান আহনাফ এর একটা হাসিমাখা ছবির দিকে তাকায়। কতোটা শান্ত লাগছে দেখতে। তবে এতোটা শান্ত সে না। অনেক চঞ্চল আর অনেক দুষ্ট। ওর জেদের কাছে সবসময় সব কিছু হার মানে। আহিয়ান তার ভাইয়ের লেখা শেষ চিঠি টা পড়তে লাগলো। চিঠির শুধু একটাই লেখা তার মাথার মধ্যে ঢুকে আছে। তা হলো “আমি নিহা কে ভালোবাসতাম ভাইয়া”!

কিন্তু সত্যি বলতে কি? শুধু কি সেই ভালোবাসতো নিহা কে! নিহা ভালোবাসতো না তাকে! এটাই কি ছিল তার মৃত্যুর কারন তবে এখানে নিহা”র দোষ কোথায়? আপনজনের মৃত্যু হলে কেউ সেটা মেনে নিতে পারে না। মনের কোথায় একটা গভীর ক্ষত থেকেই যায় কিন্তু তাই বলে কি মানুষ ভুল করবে। আহিয়ান দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুধু ভাবতে লাগল। আজ কেন জানি তার মনে হচ্ছে সত্যি’ই সেই দোষী! মৃত্যুর শোক তাতে প্রতিশোধের আগুনে পুড়িয়ে ফেলেছিল তাই আজ এতো কিছু হলো!

নিজেকে খুব ছোট মনে হচ্ছে তার কাছে। নিহা সবাই তো বার বার বলেছিলো সে কিছুই করে নি। কেন তাদের কথা শুনলো না সে। যদি তখন তাদের কথা শুনতো তাহলে আজ এরকম কিছুই হতো না। নিহা’র জন্য তার মনে যে সুপ্ত ভালোবাসা ছিল তা এভাবে নষ্ট হতো না! আহিয়ান দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুধু তার খারাপ ব্যবহারের কথা মনে করতে লাগলো যা সে নিহা’র সাথে করেছে। বার বার নিহা এসেছে আহিয়ান’র কাছে। কিন্তু আহিয়ান তাকে মেনে নেয়নি। শুধু বলেছে “সে ভালোবাসে আমাকে”! কিন্তু তার এই ভালোবাসা আমি বুঝতে পারি নি।
.
অনেক রাত হয়ে গেছে, বাইরে খুব জোরে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। নিহা বারবার কল করছে আহিয়ান কে কিন্তু কল বেজেই যাচ্ছে কেউ রিসিভ করছে না। নিহা এবার তার শাশুড়ি কে ‌কল করল। সে জানাল আহিয়ান সন্ধ্যায় বের হয়ে গেছে তাহলে এখনো বাসাঢ় আসলো না কেন? চিন্তায় অস্থির হয়ে যাচ্ছে নিহা। না আর বসে থাকা যাবে না এভাবে। নিহা গাড়ি নিয়ে বের হলো, বৃষ্টির গতিও বাড়তে লাগলো। যে রাস্তা দিয়ে আহিয়ানের আসার কথা ছিল নিহা ও সেদিক দিয়ে যেতে লাগল। অনেকক্ষন পর আহিয়ান’র গাড়ি চোখে পড়ল তার। রোডের এক সাইডে গাড়ি পার্ক করা তবে আহিয়ান কে দেখা যাচ্ছে না। নিহা গাড়ি থেকে বের হয়ে ছাতা নিয়ে আহিয়ানের গাড়ি’র কাছে গেল। দেখল আহিয়ান দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজছে।

নিহা পিছন থেকে আহিয়ানের ঘাড়ে হাত রেখে বলল..

– আহিয়ান!

– …

নিহা আহিয়ানের সামনে দাঁড়িয়ে…
– এভাবে বৃষ্টিতে কেন ভিজছেন, জ্বর আসবে। চলুন!

আহিয়ান একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নিহা’র দিকে। নিহা আহিয়ানের হাত ধরে টেনে নিতে যেতে নিলে আহিয়ান বলে উঠল…

– ভূতনি!

নিহা খানিকক্ষণ’র জন্য থমকে যায়। নিহা পিছনে ঘুরে আহিয়ান’র দিকে তাকায়। আহিয়ান নিহা কে টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। নিহা’র হাত থেকে ছাতা টা পড়ে যায়। দুজনেই ভিজতে থাকে বৃষ্টিতে। আহিয়ান তাকিয়ে আছে নিহা’র দিকে, নিহা তাকিয়ে আছে আহিয়ানের চোখের দিকে। কেমন জানি আজ লাগছে দেখতে। আহিয়ান নিহা’র গালে হাত রেখে বলে….

– ভালোবাসি ভূতনি! আমি সত্যি তোমাকে ভালোবাসি!

আহিয়ানের মুখে ভালোবাসি শুনে নিহা হেসে আহিয়ান কে জরিয়ে ধরে। অতঃপর আহিয়ান তাকে জরিয়ে ধরে। নিহা বলে উঠে..

– আমিও ভালোবাসি! অনেক অনেক ভালোবাসি

– সত্যি!

– হুম!

আহিয়ান হেসে উঠে, নিহা’র গালে দু’হাত রেখে বলে..
– সরি!

– কি বললেন!

– সরি।

– আচ্ছা আপনি তাহলে এবার সরি বলতে শিখে গেছেন।

– ভূতনি ভালো হচ্ছে না কিন্তু!

নিহা হেসে উঠে। অতঃপর বলে..

– সরি বলা লাগবে না। আমি বুঝতে পারি আপনার কষ্ট!

বলেই নিহা আহিয়ানের কপালে আলতো করে একটা চুমু খেয়ে বলে…
– বাসায় চলুন অনেক ভিজেছেন বৃষ্টিতে!

অতঃপর দুজনে এক গাড়িতে করে বাসায় আসে। নিহা আজ খুব খুশি। অবশেষে তাদের এই দূরত্ব মিটল। তবে আজ আরেকজন ও অনেক খুশি। সে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে নিহা’র মুখে থাকা হাসির রেখা টা দেখতে পাচ্ছিল। তবে সকাল হতেই সবাই বুঝতে পারল আহিয়ান আর নিহা’র মাঝে সব ঠিক। এসব দেখে অভ্র কিঞ্চিত হেসে মেহেরিন’র দিকে তাকাল। মেহেরিন অভ্র’র সামনে হাত বাড়ালো। অভ্র হেসে মেহেরিন’র হাতে চকলেট দিলো!
.
মেহেরিন, কাব্য, ইহান, নিশি বসে আছে একসাথে। সেখানে রোদ্দুর এসে উপস্থিত হয়। মেহেরিন উঠে রোদ্দুর’র সামনে যায়। দুজন দুজনকে তাকিয়ে দেখছে। অতঃপর দুজনেই জোরে হেসে ‌ হাইফাই দেয়। রোদ্দুর মেহেরিন’কে বলে উঠে..

– প্ল্যান মোতাবেক কাজ হয়েছে। সত্যি বলতে হবে প্ল্যান টা দারুন ছিলো!
#Game
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_২৭

প্ল্যানের কথা বলতেই মেহেরিন আর বাকি সবাই হেসে উঠে। নিশি বলে উঠে..

– প্ল্যান টা দারুন সেটা বলতেই হবে কিন্তু তোর অভিনয়! বাহ কি অভিনয় করলি রে ভাই!

কাব্য বলে উঠে…
– তোদের তো এ্যাওয়ার্ড দেওয়া উচিত!

ইহান বলে উঠে..
– আমি তো ভেবেছিলাম তোরা না হেসেই দিস ঝগড়া করতে করতে তাহলে আমাদের পুরো প্ল্যানের বারোটা বেজে যেত!

রোদ্দুর বলে উঠে..
– কাভি নেহি। আমি এরকম কিছুই হতে দিতাম না।

নিশি বলে উঠে..
– মেহেরিন যে সেই লেভেলের অভিনেতা সেটা আমরা জানতাম তবে ভাই কামাল তুই দেখালি। সিরিয়াসলি দা, দি ভাইয়া কেউ বুঝতে পারে নি তোরা অভিনয় করছিস তাহলে আর জিজু কিভাবে বুঝবে।

– তা যা বলেছিস কিন্তু জান এমন একটা প্ল্যান তোর মাথায় আসলো কিভাবে?

মেহেরিন বাঁকা হেসে চেয়ারে বসে বলে…
– এর ক্যাডিট ইহান কে দেওয়া উচিত!

– আমি!

– হ্যাঁ তুই! সেদিন রাতে ওর কথা শুনে আমি একটু অবাক হয়েছিলাম কারন এটা হতেই পারে না রোদ্দুর একটা মেয়েরঠ কারনে আমাদের ভুল বুঝবে। কিন্তু বাস্তবতা আসলেই খারাপ বলা যেতে পারে না। যাই হোক আমি জানতাম রোদ্দুর আমাদের কথা বিশ্বাস করবে। সত্যি বলতে কি ইহান সেদিন রাতে রোদ্দুর ওখানেই ছিল ‌

ইহান হা হয়ে তাকিয়ে আছে মেহেরিন’র দিকে। রোদ্দুর মুখ টিপে হাসতে হাসতে ইহান কে বলে..
– তুই আমাকে নিয়ে এতো সিরিয়াস আমি আসলেই জানতাম না ইয়ার!

– মানে!

মেহেরিন বলে উঠে..
– মানে টা আমি বলছি রোদ্দুর আমার সাথেই ছাদে এসেছিল। কিছু হঠাৎ ওর ফোন আসায় আমি একাই তোর কাছে এলাম। সব শোনার পর আমি ইশারা করে রোদ্দুর কে আসতে বারন করলাম। কিন্তু রোদ্দুর আড়াল থেকে সব’ই শুনছিল। যাই হোক এটা নিয়ে কোনো ঝামেলা হয় নি। রোদ্দুর আমাকে সোজা বলেছে সে আর লিসা’র সাথে সম্পর্ক রাখবে না। অতঃপর ঘরে আসার পর আমি রাত ৩ টা পর্যন্ত শুধু ভাবলাম যে যদি নেগেটিভ কিছু হতো। মানে রোদ্দুর না বুঝতে চাইতো তখন। এইসব ভাবার পর’ই হঠাৎ প্ল্যান টা মাথায় আসলো কিন্তু প্ল্যান টা যে সাকসেসফুল হবে সেটা ভাবে নি।

সবাই মেহেরিন’র কথা শুনে হাত তালি দিয়ে উঠে! নিশি বলে উঠে…
– কিন্তু রোদ্দুর তুই কি সত্যি সত্যি গুলি করতে যাচ্ছিল নাকি!

– কি বলিস এসব আমার গানে এ তো গুলিই ছিলো না। ওটা তো শুধু জিজু কে দেখানোর জন্য!

কাব্য বলে উঠে…
– ওকে গাইস এই ঘটনার সমাপ্তি এখানেই! এরপর আর কখনো এই নিয়ে কথা হবে!

– জো হুকুম! তবে একটা কথা, আমাদের বন্ধুত্ব এতো ঠুকনো না যে এতো তাড়াতাড়ি ফাটল ধরে যাবে!

মেহেরিন’র কথা শুনে সবাই হেসে উঠে। এদিকে আবার ও হেরে গিয়ে সেই লোকটা’র মাথা পুরো গরম হয়ে আছে। রাগে শরীর কাঁপছে তার। হাতে থাকা ওয়াইনের বোতলটা কে জোরে আছাড় মেরে বলে…

– কিভাবে কিভাবে কিভাবে? কিভাবে বার বার জিতে যায় আদুরী। কিভাবে? এতো বড় একটা প্ল্যান কে কিভাবে নষ্ট করে দিলো সে। কিভাবে?

– এখানে তো মানে…

সে চিৎকার করে বলে…
– আমি কিছু শুনতে চাই না, আমার একটা ফুলফিল প্ল্যান চাই। আমি শুধু মেহেরিন বর্ষা খানের লাশ দেখতে এট এনি কস্ট। শুধু ওর রক্তাক্ত লাশ দেখবো আমি এজন্য যা করার হয় তাই করো। কিন্তু আমি আদুরীর শেষ দেখতে চাই বুঝলে তুমি!

– হুম!
.
আহিয়ান আর নিহা’র সম্পর্ক এখন অনেকটা স্বাভাবিক! আহিয়ান এখন নিহা কে তার বাড়িতে’ই থাকে। তবে মেহেরিন তাকে মোটেও যেতে দিতে চায় না কিন্তু কিছু বলার ও থাকে না তার। কেটে যায় করো কয়েকটা মাস। অবশেষে আনহা’র ডেলিভারি সময় হয়ে যায়। আনহা একটা পুত্র সন্তানের জন্ম দেয়। পুরো খান বাড়িতে যেন আনন্দের উৎসব লেগে যায়। খান বাড়ির প্রথম পুত্র সন্তান সেদিন বাড়িতে আসে। মেহেরিন সারাদিন তাকে কোলে নিয়েই বসে থাকে। ছেলেটার নাম রাখা হয় শান্ত! অবশ্য নামটা মেহেরিন’ই রাখে। শাহরিয়ার অভ্র খান এর ছেলে শাহরিয়ার শান্ত খান!

মেহেরিন সারাদিন শান্ত’র সাথেই থাকে। তবে তার দায়িত্ব যেন নিশি আর নিহা পালন করে। এসব সে করতে পারে না। শুধু পারে শান্ত কে কোলে নিয়ে বসে বসে খেলতে। নিহা আবার ও খান বাড়িতে চলে আসে কারন তখন আনহা পুরোপুরি সুস্থ না। তাই শান্ত’র খেয়াল তাকেই রাখতে হয়। এদিকে শুভ্র খান অনেক খুশি তার প্রথম নাতির জন্য। এই পর্যন্ত শুধুই ভিডিও কলে’ই দেখেছে তাকে। সামনাসামনি দেখার সৌভাগ্য হয় নি তার।

আনহা সবসময় বলে শান্ত দেখতে নাকি পুরো অভ্র’র মতোই হয়েছে। ওর মতোই শান্তশিষ্ট! নিহা মাত্র’ই শান্ত কে ঘুম পারিয়ে ঘরে ঢুকল। মেহেরিন শান্ত কে নিয়ে একসাথে ঘুমায়! নিহা ঘরে আসা মাত্রই আহিয়ান হেঁচকা টান দিয়ে তাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়!

– এটা কি হলো?

– কিছুই না আমার ভূতনি কে ধরতে ইচ্ছে করল তাই ধরলাম!

– ধরা শেষ হলে এখন ছাড়ুন।

– ছাড়বো তো কিন্তু একটা কথা ছিল!

– কি কথা।

– ভূতনি আমার একটা..

– কি একটা!

আহিয়ান নিহা’র কানে কানে ফিসফিসিয়ে বলল…
– আমাদের অরনি চাই!

– এই অরনি টা কে?

– নিহা!

– কি হলো?

– তুমি এটা কিভাবে ভুলে গেলে।

– কিভাবে ভুললাম আর কি ভুললাম!

– অরনি! আমাদের বেবি আমরা যে নাম ঠিক করলাম।

– আপনি কিভাবে এতো নিশ্চিত হচ্ছেন আমাদের প্রথম সন্তান মেয়েই হবে।

– দেখো এটাই হবে।

– যখন হবে তখন দেখা যাবে এখন সরুন তো।

– হুহ আমার খুব তাড়াতাড়ি চাই। আজ আমি ছাড়ছি না তোমায়!

– আহিয়া….

অতঃপর আহিয়ান নিহা কে কোলে তুলে নেয়!..
❤️
❤️
.
শান্ত’র এখন ছয়মাস চলে, সে এখন মেঝেতে হামাগুড়ি খায় তার সাথে সাথে মেহেরিন ও হামাগুড়ি খায়। মেহেরিন অবশ্য শান্ত কে ফুপিজান বলে ডাকে। সবার চোখের মনি এখন শান্ত। বিশেষ করে মেহেরিন তবে এ কি”দিন মেহেরিন’র ওপর কোনো হামলা হয় নি। সবকিছু তাই এখনো শান্ত!
এদিকে নীল আজ ভার্সিটিতে এসেছে ‌দু’মিনিট ও হয় নি তার আগেই ঝগড়া লেগে গেছে নীলাশা’র সাথে। দুজনেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তুমুল ঝগড়া। তাদের ঝগড়ার কারনে ক্যাম্পাসে ভিড় জমে গেছে! ঝগড়ার কারন হলো নীল কেনো নীলাশা কে ধাক্কা মারল। এখানে নীল বলছে সে ধাক্কা মারে নি তো নীলাশা বলছে নীল ইচ্ছে করেই তাকে ধাক্কা মেরেছে। এক পর্যায়ে নীল অতিষ্ঠ হয়ে। রাগের কারনে কিছু না বলেই নীলাশা’র পাশ কাটিয়ে চলে যায়। এটা নীলাশা’র মান সম্মানে লাগে। সে নীলের ওপর মারাত্মক রেগে থাকে। তাই বাইরে এসে নীলের পার্ক করা গাড়ির টায়ার পাংচার করে দেয়।
অতঃপর ভার্সিটি শেষে নীল এসে দেখে গাড়ি’র টায়ার পাংচার করা। কিন্তু এটা যে নীলাশার কান্ড প্রথমে সে ধরতে পারে না‌। কিন্তু দূর থেকে নীলাশা কে হাসতে দেখে নীলের বুঝতে বাকি থাকে না এটা যে নীলাশা’র কান্ড ‌ তাই সে তার বন্ধুর গাড়ি করেই বাসায় যায়। এখানে নীলাশা নীলের এই অবস্থা দেখে জোরে জোরে হাসতে থাকে। সে তার প্রতিশোধের বদলা নিয়েছে! এভাবেই সাপ বেজীর মতো লেগে থাকে দুজনে।

নীল রেগে বাসায় আসে, তার মেজাজ খুব বিগড়ে আছে নীলাশা’র কারনে। বাড়িতে ঢুকতেই আহিয়ান এসে নীলের মুখে একটা মিষ্টি ঢুকিয়ে দেয়। নীল কোনোমতে মিষ্টি খেয়ে বলে..

– কিসের খুশিতে মিষ্টি জিজু!

– আরে আগে খাও তারপর বলছি!

এখানে মেহেরিন এসে বলে…
– তুমি ভাইয়া কেই মিষ্টি দিলে আমাকে না!

আহিয়ান হেসে মেহেরিন কে পুরো এক হাড়ি রসগোল্লা দিয়ে বলে…
– নাও এসব তোমার!

মেহেরিন এক হাড়ি রসগোল্লা পেয়ে টুপ টুপ করে ৩, ৪ অলরেডি খেয়ে ফেলে। অভ্র এসব দেখে বলে উঠে…

– কি হয়েছে আহিয়ান!

– আপনি মামা হতে যাচ্ছেন দা!

– ওহ আচ্ছা কিহহহহহ?

মেহেরিন বলে উঠে…
– আরে চিৎকার করছো কেন আমার খাওয়াই তুমি ডিস্টার্ব করছো। মামা’ই তো হতে যাচ্ছো এতে এতো চিৎকার করার কি আছে।

কাব্য মেহেরিন’র মাথায় একটা বাড়ি মেরে বলে…
– তুই বুঝতে পারিস মামা হচ্ছে এর মানে টা কি?

রসগোল্লা খেতে খেতে…
– কি?

ইহান বলে উঠে..
– তুই খালামনি হবি!

– হ্যাঁ তো এটার মানে কি!

রোদ্দুর বলে উঠে…
– আরে গাধী জিজু বাবা হবে!

– ওহ আচ্ছা!
হঠাৎ তার হাত থেকে রসগোল্লা টা পড়ে যায়। মেহেরিন চোখ বড় বড় করে আহিয়ান’র দিকে তাকিয়ে বলে…

– সত্যি!

– জ্বি শালিকা! #Game
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_২৮

মেহেরিন চট করে উঠে এক লাফ দিয়ে আহিয়ান’র সামনে এসে দাঁড়ালো। অতঃপর বলল…

– দি কোথায়?

– বাসায়।

– আমি যাবো দি’র কাছে।

– হুম চলো!

অতঃপর আহিয়ান সবাইকে নিয়ে বাসায় গেল। নিহা বিছানায় শুয়ে ছিল, তার পাশে মা বসে ছিলেন। মেহেরিন নিহা কে দেখে একগাল হেসে বলল..

– আমি খালামনি হতে যাচ্ছি, কনগ্রেচুলেশন করো!

– প্রথমে আমাকে কর পাগলি!

– ওহ হ্যাঁ হ্যাঁ কনগ্রেচুলেশন! সুইট আন্টি তুমি ও দাদি হতে যাচ্ছো কনগ্রেচুলেশন!

– ধন্যবাদ মেহেরিন বসো এখানে!

– আমি বসতে না সুইট আন্টি, তোমাদের নিতে এসেছি।

– নিতে এসেছি মানে!

– হুম তোমাকে আর দি কে নিতে এসেছি, তোমরা এখন আমাদের বাসায় থাকবে।

আহিয়ান বলে উঠে…
– এই ডিসেশন কখন নেওয়া হলো।

– মাত্র জিজু! তবে যাই হোক দি এখন আমাদের সাথেই যাচ্ছে হুম!

– হুম এটা ভালো হবে, তুমি নিয়ে যাও ভূতনি কে। ভূতনি আমার কথা শুনে না তোমাদের ওখানে থাকলে সবাই জোর করবে তখন ভালো হবে।

সবাই হেসে উঠে। নিহা চোখ ঘুরিয়ে তাকায় আহিয়ানের দিকে। আহিয়ান তার বদলে নিহা কে একটা চোখ টিপ দেয়। অতঃপর নিহা কে আবার খান বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। কেটে যায় আরো ৬ মাস। আজ সকালে ইশা’র বাবা ‌নীলের সাথে ইশা’র বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসে। সাথে ইশা ও আসে। তবে ইশা কে এতোটা ভালো লাগে না মেহেরিন’র। নীল ইশা’র বাবা কে জানিয়ে দেয় সে কিছুদিন সময় চায় তারপর তার সিদ্ধান্ত জানাবে। ইশা’র বাবা এতেও রাজী হয়ে যায়।
.
নিশান আর নিশি বন্ধুত্ব এখন ভালোই চলছে তবে নিশান আজ পর্যন্ত তার মনের কথা নিশি কে জানায় নি। সত্যি বলতে সে সাহস পায় নি। অজানা এক ‌ভয় কাজ করে তার মধ্যে। এদিকে নিশি’র মনেও নিশানের জন্য অনুভূতি আছে তবে সে চায় নিশান তাকে আগে বলুক এভাবেই দুজনের দ্বিধা’র কারনে তাদের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ হয় না।

নীল আর ইশা সামনাসামনি দাঁড়ানো। ইশা বলে উঠে…
– কি ভাবলি আমাদের বিয়ে নিয়ে!

– ইশা আমি বলছিলাম…

– নীল, তুই যদি না বলিস আমি কিন্তু তাহলে সুইসাইড করবো!

– পুরো কথাটা শোন আগে…

– …..

– দেখ আমার লাইফে অন্য কোন মেয়ে নেই, আছিস তো এক তুই। তোকে বিয়ে করতে আমার কোন সমস্যা নেই তবে আমার বোনের যদি তোকে পছন্দ না হয় তাহলে আমি তোকে বিয়ে করতে পারবো না এখন তুই যাই করিস না কেন!

– তুই কি মেহেরিন’র কথা বলছিস নীল!

– হ্যাঁ, ওকে খুশি কর। তাহলেই আমি রাজী এই বিয়েতে।

– দেখ আমার এটা মনে হয় না ও আমার সাথে তোর বিয়েতে অখুশি এমন হলে তো তখনই বলতো।

– তাও ঠিক, তবুও আমি সময় দিতে চাই।

– তুই নে না সময়, যত দিন ইচ্ছা নে। আচ্ছা আমি বলছি ৩ মাস পর আমাদের বিয়ে হবে। এখন তোর কোনো অভিযোগ নেই তো।

– না নেই মানে!

ইশা নীলের কাছে এসে জরিয়ে ধরে বলে..
– আমি জানতাম তুই শুধু আমাকেই ভালোবাসিস

নীল আর কিছু বলে না। শেষ পর্যন্ত ৩ মাস পর বিয়ের তারিখ ঠিক করা হয়। এখানে মেহেরিন’র ইশা কে একদম পছন্দ না কিন্তু সে এ কথা কিছুতেই নীল কে বলতে পারছে না। কারন তার কাছে এখন এমন মেয়ে নেই যার সাথে নিজের ভাইয়ের বিয়ে দিবে সে।

কয়েকদিন পর….
নীলের এক ফ্রেন্ড একটা পার্টি থ্রু করে। সেখানে ভার্সিটির সবাই ইনভাইটেড থাকে এমনকি নীলাশাও। এদিকে পার্টির কথা শুনে মেহেরিন এখন শুধু নীলের পিছন পিছন ঘুরছে। কারন সে ও যাবে এই পার্টিতে। প্রায় অনেকক্ষণ ধরেই নীল খেয়াল করছে মেহেরিন তার পিছু পিছু ঘুরছে কিন্তু এর কারণটা কি? নীল গ্লাসে পানি ঢেলে খেতে থাকে তখন পেছন থেকে মেহেরিন নীলের শার্ট ধরে টানতে থাকে। নীল বলে উঠে…

– কি হয়েছে?

– ভাইয়া আমিও তোমার সাথে পার্টিতে যাবো।

– কিহ?

– হুম! প্লিজ ভাইয়া আমিও যাবো! প্লিজ প্লিজ প্লিজ!

– কিন্তু তুই গিয়ে বোর হয়ে যাবি।

– আরে যাবো না।

– সত্যি তো!

– হুমমমম!

– আচ্ছা ঠিক আছে নিয়ে যাবো!
.
নীল আর মেহেরিন একসাথে যায় পার্টিতে। নীল একটা সাদা রঙের হুডি আর কালো জিন্স পড়ে।‌ মেহেরিন ও স্যাম। দুজনকে এমন একই রঙের ড্রেস দেখে সবাই তাকিয়ে থাকে বিশেষ করে মেহেরিন কে। মেহেরিন কে অনেক কিউট লাগছে দেখতে। মেহেরিন কে দেখে ইশা এসে তাকে জড়িয়ে ধরে।‌ নীল সবার সাথে পরিচয় করায়। অতঃপর নাচতে শুরু করে। খুব জোরে মিউজিক বাজছে আর সব লাইট ডিম করে রাখা হয়েছে।

মেহেরিন একসময় আসলেই বোর হয়ে যায়। নীল ওকে নিয়ে একটা টেবিলে বসে। হঠাৎ ইশা এসে জোর করে নীল কে নিয়ে যায় ডান্স ফ্লোরে। মেহেরিন একা একা বসে থাকতে থাকতে বোর হয়ে যায় তাই হাঁটতে থাকে। তখন হুট করে একজনের সাথে ধাক্কা খায়।

– সরি!

– সরি আমিও খেয়াল করি নি।

– ইট’স ওকে।

– তুমি মেহেরিন বর্ষা খান নাহ!

– হুমম তুমি!

– আমি নীলাশা।

মেহেরিন তাকিয়ে আছে নীলাশা’র দিকে। দেখতে খুব মিষ্টি মেয়েটা। মেহেরিন বলে উঠে…
– তোমার নাম টা খুব বড় আমি ছোট করে ডাকি!

– কি বলে ডাকবে তুমি আমায়!

– আমি তোমাকে শুধু নীল আপু বলে ডাকবো।

– নীল!

– কেনো? নামটা সুন্দর নাহ!

– হুম সুন্দর! কিন্তু তুমি এখানে কি করছো, পার্টি তো ওখানে হচ্ছে।

– খুব বোর লাগছে তাই এখানে আসলাম।

– আমার ও খুব বোর লাগছে এই পার্টিতে এসে। আচ্ছা শোন!

– বলো!

– আমি এখানে আসার আগে পাশে দেখেছি মেলা বসেছে তুমি যাবে আমার সাথে!

– মেলায় হ্যাঁ‌ হ্যাঁ আমি যাবো চলো চলো!

– আচ্ছা চলো!
.
নীলাশা আর মেহেরিন দুজন মিলে মেলায় গেলো। দুজনে মিলে খুব গল্প করল। মেহেরিন নীলাশা কে ভালো লাগলো। এদিকে নীল পুরো পার্টিতে মেহেরিন কে খুঁজছে কিন্তু কোথায় পাচ্ছে না তাকে। চিন্তায় নীল অস্থির হয়ে গেছে। ফোনের উপর ফোন করে যাচ্ছে কিন্তু কেউ ধরছে না। একে তো ফোন সাইলেন্ট ছিলো আর এতো ভিড়ের মাঝে তা টের পেলো না মেহেরিন। নীল এবার প্রায় পাগল হয়ে গেল। অতঃপর ডেভিল কে কল করে মেহেরিন’র ফোনের লোকেশন জানল নীল। লোকেশন অনুযায়ী নীল সেই মেলায় চলে এলো। এদিকে নীলাশা আর মেহেরিন মাত্র আইসক্রিম কিনল। নীল আর ইশা দুজনেই খুঁজতে লাগলো মেহেরিন কে। অবশেষে নীল দেখল মেহেরিন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আইসক্রিম খাচ্ছে। তাকে দেখে নীল কিছুক্ষণ’র জন্য শান্ত হলো। এবার নীলের চোখে পড়ল মেহেরিন’র এর পাশে নীলাশা দাঁড়িয়ে আছে। নীলের মাথা আবার গরম হয়ে গেল। নীল রেগে ওখানে নীলাশা’র হাত জোরে চেপে ধরে বলল…

– তোমার সাহস হলো কিভাবে আমার বোন কে নিয়ে এখানে আসার, না বলে ওকে তুমি নিয়ে আসলে কিভাবে? এতো সাহস তোমায় কে দিয়েছে বলো!

নীলের চিৎকারে লোকজন জড়ো হয়ে গেল। মেহেরিন অবাক হয়ে নীলের দিকে তাকিয়ে আছে। নীল এতোটা রেগে যাবে সে ভাবে নি। এদিকে লোকজন সব নীলাশা’র দিকে তাকিয়ে আছে। নীলাশা লজ্জায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। মেহেরিন শান্ত ভাবে নীলের হাত ধরে বলে…

– ভাইয়া আপু’র কোনো দোষ নেই আমি তাকে জোর করে এখানে নিয়ে এসেছি, তুমি আপু কে কিছু বলো না।

নীল শান্ত গলায় মেহেরিন’কে বলে…
– ঠিক আছে আদুরী তবে না বলে কেন আসলে তুমি!

– তুমি আমার সাথে ছিলে যে তোমায় আমি বলবো। আমি তো একা একাই ছিলাম তাই।

নীল এবার নীলাশা’র হাত ছেড়ে মেহেরিন’র মাথায় হাত রেখে বলল..
– তুমি জানো কতোটা চিন্তা করেছিলাম আমি!

এরমধ্যে ইশা বলে উঠে..
– এতোটা বাচ্চামি তোমাকে মানায় না মেহেরিন, তোমার ধারনা থাকা উচিত তুমি কার বোন। এভাবে হুটহাট করে তুমি এখানে আসলে কিভাবে তাও এই মেয়েটার সাথে। এতোটা দায়িত্ব হীন কিভাবে হও তুমি!

ইশা’র কথা শুনে মেহেরিন রেগে তাকিয়ে আছে ইশা’র দিকে। নীল ‌বলে উঠে..

– ইশা, আমার বোন কে এভাবে বলার তুমি কে?

– নীল আমি তো শুধু ওকে বোঝাচ্ছিলাম।

– সুন্দর ভাবেও বোঝানো যায় আর আমার বোন কে বোঝানোর জন্য আমি আছি, শেষবারের মতো বলছি আমার বোনের সাথে এভাবে কথা বলবে না তুমি!

– সরি নীল, সরি মেহেরিন!

নীল মেহেরিন’র হাত ধরে বলে..
– বাসায় চলো অনেক হয়েছে!
বলেই মেহেরিন নিয়ে গেল। মেহেরিন কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারল না। মেহেরিন কে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে নীল ও বসল গাড়িতে। মেহেরিন গাড়ি থেকে নীলাশা কে দেখল। তাকে দেখে খুব খারাপ লাগলো তার। হাত টা ধরে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে নীলাশা।

নীল গাড়ি চালাচ্ছে আর মেহেরিন মুখ ফুলিয়ে বসে আছে।
– এভাবে মুখ ফুলিয়ে বসে থাকার মানে কি আদুরী।

– তুমি জানো না নাকি!

– ইশা কে তো বকলাম আমি!

– আমি ইশা আপু’র কথা বলছি না।

– তাহলে…

– নীল আপুর কথা বলছি!

নীল সাথে সাথে গাড়ি ব্রেক করে। মেহেরিন’র দিকে তাকিয়ে বলে..
– নীল আপু! কি বলছো!

– নীলাশা আপুর কথা বলছি।

– সে কবে থেকে নীল হলো।

– আমি শর্ট ফ্রম করেছি কেন?

– না কিছু না তবে এটা আমার নাম।

– হ্যাঁ এটা নাম আর এক নাম সবার হয়। বাই দ্যা ওয়ে তুমি তার সাথে অনেক খারাপ ভাবে কথা বলেছো।

– ও যা করেছে তা কি ঠিক করেছে!

– দোষ আমার ছিলো!

– ও যেরকম কাজ করেছে সেকরম’ই কথা শুনেছে।

– বাসায় গিয়ে আমি দা কে বলবো তুমি এভাবে একটা মেয়ের সাথে কথা বলেছো দেখো!

নীল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে…
– কি করতে হবে আমায়!

– সরি বলবে কালকে নীল আপু কে!

– কিহ সরি আমি তাও ওই ঝগড়াটে মেয়েকে।

– হ্যাঁ বলবে কারন দোষ তোমার।

নীল কোনোমতে নিজেকে সংযত করে..
– ওকে!

– অনেক সুন্দর করে বলবে!

– হ্যাঁ বাবা বলবো।

– প্রমিস করো!

– হুম হুম করলাম।

– লাভ ইউ ভাইয়া!

বাসায় এসে মেহেরিন’র সামনে অভ্র আর আহিয়ান দাঁড়ানো। সবার প্রশ্ন এক পার্টি ছেড়ে কোথায় গিয়েছিলে তুমি! মেহেরিন খুব সহজে বলে দিল..

– আমি মেলায় গিয়েছিলাম একটা আপুর সাথে, জানো আপুটা কি কিউট ছিলো। অনেক ভালো ছিল আমায় আইসক্রিম খাওয়ালো….
আরো অনেক প্রশংসা কলতে লাগলো মেহেরিন, পেছন থেকে নিহা আর আনহা তাকিয়ে আছে নীলের দিকে, ভ্রু নাচিয়ে বলছে কে এই মেয়ে? নীল নিজের কপাল চাপড়ালো। এ দেখে নিহা আর আনহা হেসে উঠলো। অতঃপর আনহা মেহেরিন কে জিজ্ঞেস করল…

– আপুটার নাম কি আদুরী!

– এই যা নাম’ই তো বললাম না। নাম হলো…

বলার আগেই নীল মেহেরিন’র মুখ চেপে ধরল,আর সে বলল…

– নীলাশা! মেয়েটার নাম নীলাশা! আদুরী তুমি যাও ফ্রেশ হয়ে নাও ঠিক আছে। মেহেরিন নাচতে নাচতে রুমে চলে গেল। সবাই নীলের দিকে তাকাল। নীল কাউকে কিছু না বলে নিজেও রুমে চলে গেল!
.
মেহেরিন বিড়াল কে আদর করতে করতে ভাবছে যদি ইশা’র জায়গায় নীলাশা তার ভাবী হতো তাহলে খুব ভালো হতো। তখন অভ্র আসল মেহেরিন’র রুমে..

– কি ভাবছো এতো মনোযোগ দিয়ে?

– দা! জানো আমি কি ভাবছিলাম!

– কিহ?

– নীল আপু’র কথা।

– নীল নাহ তোমার ভাইয়া হয় আদুরী!

– আরে আমি নীল আপু মানে নীলাশা আপু’র কথা বলছি!

– একদিনেই নাম দিয়ে দিলে।

– তুমি জানো আপু টা কতো সুইট ছিলো। ইশা আপু’র থেকেও সুইট আর কিউট ও।

– তুমি কি ভাবছো যে তোমার নীল আপু’কে ভাবী বানাবা।

– এজন্য তোমায় আমি এত্তো ভালবাসি কি সুন্দর বুঝে গেলে।

– ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন আপনার ভাইয়ের বিয়ে ঠিক হয়ে আছে আদুরী।

– ভেঙে দাও!

– তাহলে ওই মেয়ে মরে ভূত হয়ে এসে তোমার ভাইয়ের ঘাড় মটকাবে!

অতঃপর অভ্র আর মেহেরিন এক সাথে হেসে উঠে। পরদিন নীল ভার্সিটিতে এসে খুঁজতে থাকে নীলাশা কে। কিন্তু নীলাশা এখনো আসে নি ভার্সিটিতে! নীল অপেক্ষা করছে কখন সে আসবে। নীলের অপেক্ষার অবশন ঘটল। নীলাশা আসল কলেজে। নীল নীলাশা কে দেখে তার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। কিন্তু নীলাশা নীল কে ইগনোর করে চলে আসল। নীল কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারল না।

নীল বারবার’ই নীলাশা’র সাথে কথা বলতে চাইলে নীলাশা প্রতিবার’ই নীল কে এড়িয়ে চলে। নীল এবার অনেক রেগে যায়। নীলাশা ক্লাসরুমে যাচ্ছিল হুট করেই কেউ তাকে টান দিয়ে ক্লাসরুমে নিয়ে গেল। নীলাশা তাকিয়ে দেখে নীল।‌ সে ইচ্ছে মতো ব্যাগ দিয়ে তাকে মারতে লাগলো। এদিকে নীল কথা বলতে চাইছে কিন্তু নীলাশা তার কোনো কথা শুনতে রাজী না। নীল রেগে নীলাশা’র দুই বাহু ধরে দেওয়ালে ঠেকায়। নীলাশা রেগে তাকিয়ে আছে নীলের দিকে। বলতে শুরু করে..

– সমস্যা টা কি আপনার, এমন করছেন কেন ছাড়ুন আমায়! দেখুন ভালোই ভালোই বলছি আমায় ছাড়ুন নাহলে কিন্তু আমি চিৎকার করবো।

– দু মিনিটের জন্য একটু চুপ করবে, কখন থেকে চেষ্টা করছি তোমার সাথে কথা বলার আর তুমি কি না।

– কি আমি হুম কি আমি, কাল এতো অপমান করে মন ভরে নি কিন্তু আপনার, এখন আবার এসেছেন কথা শুনাতে ।

– নীলাশা!

নীলের ধমকানিতে নীলাশা চুপ হয়ে গেল, নীল শান্ত গলায় বলল…

– সরি!

নীলাশা চমকে উঠল নীলের সরি বলায়!
#Game
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_২৯

নীলাশা অবাক হয়ে বলে উঠে…
– আপনি কি বললেন!

– সরি বললাম!

– সত্যি বললেন, বিশ্বাস হচ্ছে না আমার। আবার বলুন তো!

– সরি সরি সরি হয়েছে শান্তি!

– শান্তির কথা বলছেন আমি তো আজ নিজের কান কেই বিশ্বাস করতে পারছি না।

– ভাব নিচ্ছো কেন এতো!

– কি যে বলেন, ভাব নেবো না মানে। আপনি জানেন আপনি কি বললেন!

– আসলেই কাকে কি বললাম!

– কি বললেন আবার!

– এই শোন বেশি ভাব নিও না আদুরী বললো বলো তোমায় সরি বললাম না হলে তোমাকে আমি সরি বলতাম কখনো না।

– হুহ আমার ও কোনো ইচ্ছা নেই আপনার সাথে কথা বলার!

– তাহলে যাও এখান থেকে!

– আগে ছাড়ুন তো আমায়, না হলে কি করে যাবো!

নীল তাকিয়ে দেখল ও এখনো ধরে আছে নীলাশা কে। সে চট করে নীলাশা কে ছেড়ে দূরে গিয়ে দাঁড়াল। নীলাশা মুখ ভেংচি দিয়ে চলে গেল। নীল বলতে লাগল…

– এতো ভাব নিয়ে কিভাবে থাকে এই মেয়ে!
.

ভার্সিটি শেষে নীলাশা বের হতে যাবে তখন ওর সামনে এসে একটা গাড়ি থামল। নীলাশা তাকিয়ে দেখল মেহেরিন!

– মেহেরিন!

– হেই নীল আপু! কেমন আছো?

– খুব ভালো আপু! তুমি?

– এইতো, এসো গাড়িতে বসো।

– কিন্তু তোমার ভাই…

– আরে চিন্তা করো না পিছনে ডেভিল আছে। এসো..

নীলাশা গাড়িতে গিয়ে বসল। মেহেরিন গাড়ি ড্রাইভ করতে শুরু করল।

– ভাইয়া তোমাকে সরি বলেছে!

– হ্যাঁ বলেছে!

– আপু কালকের জন্য তুমি রাগ করো না কিন্তু!

– আরে না সত্যি আমার বলা উচিত ছিলো তোমার ভাই কে। এখানে এসব স্বাভাবিক ব্যাপার।

– তোমাকে নিয়ে আজ আমি বাসায় যাবো। যাবে আমার বাসায়!

– তোমার বাসায়!

– হ্যাঁ আমি দি আর মিষ্টি ভাবী কে বলেছি তোমার কথা, তারা তোমাকে দেখতে চেয়েছে।

– তাই!

– হুম হুম! তাইলে যাই হুম!
.
মেহেরিন নীলাশা কে নিয়ে খান বাড়িতে ঢুকল। নীলাশা এই প্রথম খান বাড়িতে ঢুকল। খান বাড়িতে ঢোকার সাথে সাথে তার শরীর শিউরে উঠলো। বসার ঘরে আনহা আর নিহা বসে ছিলো। মেহেরিন তাদের সাথে নীলাশা’র পরিচয় করিয়ে দিলো। সবাই কিছুক্ষণ গল্প করতে লাগল। এরমধ্যে শান্ত’র কান্না’র আওয়াজ আসলো। আনহা উঠে তার কাছে গেল।নিহা আনহা’র সাথে গেল। মেহেরিন শান্ত কে আনতে যাবে বলে সেও উঠে গেল। মেহেরিন আনহা’র ঘরে গেলে নিহা বলে উঠে…

– তুমি তুমি একেই ভাবী বানাতে চাও!

– হুম! কেন ভালো লাগে নি তোমাদের!

আনহা বলে উঠে…
– হুম অনেক সুন্দর তো দেখতে।

– ইশা আপুর থেকেও ভালো।

– তবে নীল কে জিজ্ঞেস করতে হবে সে রাজী কি না।

– তাহলে করো, ইশা আপু’র সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছি হয় নি তো।

– আচ্ছা নীলাশা একা আছে চলো।

– শান্ত কে আমাকে দাও আমি নেবো।

– আচ্ছা নাও!
.
এখানে নীলাশা একটু উঠে আশপাশ দেখতে থাকে। হঠাৎ তার হিচকি শুরু হয়, এদিকে নীল সবে মাত্র বাসায় ঢুকে। কি টেবিলে থাকা পানির গ্লাস টা নিতে ‌যায় নীল। নীলাশাও ওই একই গ্লাস নিতে যায় তবে গ্লাস টা নীল’ই ধরে। দুজন দুজনকে দেখে ভারী অবাক। নীল বলে উঠে…
– তুমি এখানে!

নীলাশা কিছু না বলে পানির গ্লাস টা নিতে যায় কিন্তু নীল তা সরিয়ে ফেলে‌। নীলাশা বলে উঠে…

– দেখুন আমার হেঁচকি থামছে না পানির গ্লাস টা আমায় দিন।

– তার আগে তুমি বলো তুমি আমার বাসায় কি করছো?

– আপনি আগে আমায় পানি খেতে দিন তো!

– দেবো না, আগে সরি বলো।

– কিহ?

– হ্যাঁ বলো।

– কেন বলবো সরি!

– এমন ভাবে বলছো যেনো তুমি আজ অবদি কিছু করো নি। আনিওয়ে সবসময়‌ যে আমার সাথে ঝগড়া করো তাই বলবে!

– কখনো না! বলবো না বলবো না বলবো না।

– দেখলে তোমার হেঁচকি বন্ধ হয়ে গেছে।

নীলাশা খেয়াল করলো আসলেই তার হেঁচকি বন্ধ হয়ে গেছে। নীল বলে উঠে..

– তুমি যে ঝগড়াটে, পানি না খেয়ে বরং তুমি ঝগড়া করো দেখবে চট করে হেঁচকি বন্ধ হয়ে গেছে।

– আপনি আপনি কি বললেন আমায়।

– যা বলেছি একদম ঠিক বলেছি।

– আপনাকে তো আমি!

অতঃপর লেগে যায় তুমুল মারামারি, কেউ ছাড়ে না কাউকে। নীলাশা রেগে পানির জগ টা পুরো নীলের দিকে মারে। নীল রেগে রান্না ঘর থেকে আটা এনে পুরো নীলাশা’র মাথায় ঢেলে দেয়। কুশন দিয়ে মারামারি করতে করতে তুলো বের করে ফেলে। কিন্তু কেউই ছাড়ে না। ঘরের অবস্থা নাজেহাল। আনহা, নিহা আর মেহেরিন তাকিয়ে এসব দেখছে। নিহা বলে উঠে..

– তুই ওদের বিয়ে কিভাবে দিবি আদুরী!

আনহা বলে উঠে..
– এরা যে সাপ আর বেজি, কোনোমতে এদের এক করা সম্ভব না!

মেহেরিন তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে দুজনকে!
.
ইশা এখন’ই বিয়ের শপিং শুরু করে দিয়েছে। এদিকে মেহেরিন ভাবছে কি করে এই বিয়ে ভাঙা যায় তবে ইশা যে রকম মেয়ে কোনোমতে এই বিয়ে ভাঙতে চাইবে না সে। তবুও মেহেরিন ভাবতে থাকে।

এদিকে এলাকার কিছু ছেলে নীলাশা’কে প্রায় অনেকদিন ধরেই জ্বালাচ্ছে। কিন্তু নীলাশা তাদের কিছু বলে না কারন এতে তার’ই বিপদ হতে পারে। বেশ কিছুদিন পর একদিন নীলাশা’র বাসায় সেই ছেলে গুলো এসে। ছেলে গুলো এলাকার গুন্ডা মাস্তান নামেই বেশ খ্যাত। তারা নীলাশার মা আর বাবা কে ভয় দেখিয়ে নীলাশা’র বিয়ে ঠিক করিয়ে যায়। নীলাশা’র মা আর বাবা নিরুপায় হয়ে তাদের কথা মেনে নেয়। তারা হুমকি দিয়ে চলে যায়। পরদিন থেকেই নীলাশা’র‌ ভার্সিটি যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়।

নীলের বিয়ে শুরু হতে আরো ২ সপ্তাহ বাকি, তবে এই কয়েকদিন নীলাশা কে ভার্সিটিতে দেখতে পায় না। এতো তার কোনো ভ্রুপ নেই তবে মেহেরিন রোজ’ই তার কথা জিজ্ঞেস করে। নীল বাসায় এসে বলে নীলাশা হয়তো ছুটি নিয়েছে তাই আসে না ভার্সিটিতে। মেহেরিন আর কিছু বলে না।

বিয়ের ১ সপ্তাহ আগে থেকেই চলতে থাকে বিয়ের আয়োজন। ব্যাচেলর পার্টি, আন্টি বদল, মেহেদী, সঙ্গীত, ইত্যাদি তে মেতে উঠে সবাই। কিন্তু মেহেরিন মোটেও চায় না এই ইশা মেয়েটার সাথে নীলের বিয়ে হোক। একটু ও পছন্দ হয় না তার এই মেয়েটাকে। কিন্তু নীল নিজে মত দিয়েছে এই বিয়েতে তাই তার কিছু্ই করার নেই। নিহা মেহেরিন কে অনেক বুঝিয়েছে!

বিয়ের জন্য পুরো খান বাড়ি খুব সুন্দর করে সাজানো হয়। খান বাড়ির সবাই রওনা দেয় ইশা’র বাসায়। এদিকে নীলাশা’র বিয়ের আয়োজন হয় সেদিন। ঘরে একা বসে বসে কাঁদতে থাকে সে। নীলাশা’র মা লুকিয়ে লুকিয়ে আসে তার কাছে। নীলাশা কাঁদতে কাঁদতে তার মা’কে জরিয়ে ধরে। মা তার মাথায় হাত রেখে বলে…

– তুই পালিয়ে যা মা!

– এসব কি বলছো তুমি মা!

– হ্যাঁ মা তুই পালিয়ে যা তাহলে বেঁচে যাবি। এরকম একটা খারাপ লোকের সাথে আমি তোকে জীবন পার করতে দেবো না।

– কিন্তু তোমাদের রেখে আমি কিভাবে যাবো!

– তুই চিন্তা করিস না তোর বাবা পুলিশকে ডাকতে গেছে কিন্তু আমি জানি ওই ছেলেটা তোকে কিছুতেই ছাড়বে না। তাই তুই এখন থেকে পালিয়ে তোর মামার বাসায় চলে যা। কিছুদিন ওখানে থাক পড়ে আমরা এই এলাকা ছেড়ে দেবো।

– মা…

– আর কথা বাড়াস না তোর বাবা এক্ষুনি চলে আসবে তুই পালিয়ে যা এখনি। জলদি কর।

অতঃপর নীলাশা বিয়ের সাজিয়ে’ই পালিয়ে যায়! দৌড়াতে দৌড়াতে প্রায় অনেকদূর চলে আসে সে। এতো দৌড়াতে দৌড়াতে হয়রান হয়ে যায় সে।‌ একটা চায়ের টং এ কিছুক্ষণ’র বসে সে। এক গ্লাস পানি খেয়ে রাস্তার দিকে তাকাতেই দেখে সেই ছেলে গুলো তাকে খুঁজতে এসেছে। নীলাশা পানির গ্লাস রেখে দৌড়াতে থাকে।

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here