Game পর্ব -১৬+১৭+১৮+১৯+২০

#Game
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_১৬ থেকে 20

নিশান থমতম খেয়ে তাকিয়ে আছে নিশি’র দিকে। নিশি বাঁকা হেসে সেখান থেকে চলে গেল।‌ তার পিছনে ইহান, রোদ্দুর, আর কাব্য তার পিছনে পিছনে চলে গেল। নিশান গালে হাত দিয়ে নিশি’র চলে যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে। হুট করেই নিশি পিছনে ফিরে নিশানকে পিছনে ফিরে চোখ টিপ দিলো। নিশান চোখ বড় বড় করে দেখতে লাগল। নিশানের সব বন্ধুরা একসাথে হেসে উঠলো।
.
অভ্র একবার এই অফিসে যাচ্ছে, একবার ফ্যাক্টরিতে যাচ্ছে, আবার একবার অফিসের কাজের সাইডে যাচ্ছে। তার সাথে সাথে আনহাও ঘুরছে। এতোক্ষণে অফিসের কেবিনে ঢুকল অভ্র। আনহা কেবিনে ঢুকেই ধপাস করে বসে পড়ল। অভ্র দৌড়ে এসে বলল..

– ঠিক আছো তুমি!

– কিভাবে ঠিক থাকবো, একবার এখানে যাও তো একবার এই কাজ করো আমি ক্লান্ত এখন!

অভ্র আনহা কে পানি খেতে দিয়ে..
– নাও পানি খাও!

আনহা পানি নিয়ে খেয়ে ফেলল। অভ্র ফাইল দিয়ে আনহা কে বাতাস করতে লাগল। আনহা বলে উঠে..
– এসি তো চলছে!

– তবুও তুমি ঘামছো।

– আপনি কিভাবে এতো কাজ করেন, এখানেও এতো কাজ আবার বাসায় গিয়ে সবার জন্য রান্না, আর সবচেয়ে কঠিন কাজ তো আদুরী কে সামলানো। আমি হলে কবেই শেষ হয়ে যেতাম!

– কারন তুমি তুমি আর আমি আমি!

– ক্লান্ত হন না!

– আমার মা বলতো জানো, পরিশ্রম ছাড়া কিছু সম্ভব না!

– মা কে দেখার খুব শখ আমার!

– আমার মা দেখতে পুরো মেহেরিন’র মতো! তার মতোই এতো দুষ্টামি করতো!

– আপনি দেখেছেন!

– হুম! আম্মু আর রোদ্দুর, কাব্য,ইহান ওদের মা সবাই মিলে প্রচুর ফাজলামি করতো আর আমার বাবা সব ঠিক করতো!

– তার মানে আপনি আপনার বাবা’র মতো হয়েছেন!

– হুম তার মতো চাঁপা স্বভাবের!

– আচ্ছা আমাদের ছেলে মেয়ে কি রকম হবে!

আনহা’র কথা শুনে অভ্র চোখ বড় বড় করে তার দিকে তাকিয়ে আছে। আনহা শান্ত ভাবেই আবার বললো..

– আমার ছেলে হোক বা মেয়ে সে আপনার মতো হলেই হবে!

– আচ্ছা আনহা এই ফাইল টা একটু চেক করো।

আনহা রেগে উঠে অভ্র’র সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। অতঃপর তার কাছে যেতে যেতে বলল..
– একটা ইম্পর্ট্যান্টে বিষয় নিয়ে কথা বলছি আমি!

– এই ফাইল টাও অনেক ইম্পর্ট্যান্টে!

আনহা মুচকি হেসে অভ্র’র গলা জরিয়ে ধরল। অভ্র শান্ত ভাবে বলে…

– এটা অফিস কি করছো কি এসব!

– তো বাসায় কোথায় আপনি রোমান্স করতে দেন।

– আনহা ছাড়ো কেউ এসে পড়বে।

– না ছাড়বো না, আমার বর আমি ধরেছি কার কি?

– কারো কিছু না কিন্তু কেউ এসে পড়বে।

– আসুক!
বলেই আনহা অভ্র’র দিকে আগাতে লাগল। এর মাঝেই মেহেরিন’র গলা পাওয়া যাচ্ছে। মেহেরিন কাছে আসার ১ মাইল আগে থেকেই ডাকতে থাকে। অভ্র জলদি করে আনহা সরিয়ে দিয়ে বলে..

– আদুরী আসছে ছাড়ো আমায়!

– এখন তো বেঁচে গেলেন পরে বাঁচবেন কিভাবে! থাকবেন তো আমার সাথেই!
বলেই একটা বাঁকা হাসি দেয়।‌ মেহেরিন এসে আনহা কে নিয়ে চলে যায় শপিং এ যাবে বলে। অভ্র যেন হাঁফ ছেড়ে যাবে।
.
নিহা ভার্সিটির ক্যাম্পাসে বসে ছিল। হুট করেই আহিয়ান’র উদয় হলো সেখানে। নিহা ভ্রু কুঁচকে তাকে জিজ্ঞেস করল..

– আপনি তো এই ভার্সিটিতে পড়েন না তাহলে এখানে হুটহাট করে আসেন কিভাবে?

আহিয়ান হেসে ‌গেটের দাড়োয়ানের দিকে তাকায়।‌ নিহা”রং বুঝতে বাকি নেই দাড়োয়ান কে ঘুষ দিয়ে আহিয়ান এখানে আসে। কিন্তু সে কিছু না বলে ফোন টিপতে থাকে।‌ আহিয়ান তার বসে বলে..

– কি করছো ভূতনি!

– আমার মা বাবা অনেক সুন্দর একটা নাম দিয়েছে আমায় নিহারিকা নিহা খান!

– হ্যাঁ জানি তো নাম তো প্রিয় মানুষ’ই দেয় তাই আমিও দিলাম।

– কিন্তু আপনি আমার সেই প্রিয় মানুষটি নন।

– হতে কতোক্ষণ!

– সে গুড়ে বালি!

– এভাবে বলো না! আচ্ছা একটা জিনিস খাবে?

– কিহহ?
আহিয়ান নিহা’র হাত ধরে বাইরে নিয়ে আসে। নিহা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে। আহিয়ান নিহা কে নিয়ে ফুচকার দোকানের সামনে যায়।

– ফুচকা খাবে!

– না আপনি খান।

– আরে কি মেয়ে তুমি অন্যকেউ হলে এতোক্ষণ ১ প্লেট খেয়ে ফেলতো।

– আমি অন্য কেউ না নিহা খান.

– হুম তাই তো তুমি আমার ভূতনি! তাই…
বলেই ফুচকা ওয়ালা কে সরিয়ে আহিয়ান নিজে সেখানে দাঁড়ায় আর বলে..

– আমি তোমাকে নিজ হাতে বানিয়ে খাওয়াবো।

– ইমপ্রেস করার জন্য শেষে ফুচকা ওয়ালা সাজবেন।

– তোমার জন্য ঝালমুড়ি বেঁচতে রাজী আছি। নাও খাও!

নিহা মুচকি হেসে ‌আহিয়ান’র কাছ থেকে ফুচকা নিয়ে খেতে লাগল আর আহিয়ান এক দৃষ্টিতে নিহা’র দিকে তাকিয়ে ফুচকা বানাতে লাগল!

নিহা কয়েকটা ফুচকা খেয়ে আর খেলো না। অতঃপর সে হাঁটতে শুরু করল। আহিয়ান তাড়াতাড়ি করে তার পিছন পিছন হাঁটতে লাগল। দুজনে পাশাপাশি হাঁটতে অনেক পথ অতিক্রম করল। নিহা বলে উঠল..

– আমি এখন বাসায় যাবো আপনি চলে যান।

– যানো আজ তোমার সাথে পাশাপাশি হেঁটে খুব ভালো লাগলো কিন্তু একটা জিনিস খুব মিস করেছি।

– কিহ?

– তোমার হাত ধরে হাঁটার ইচ্ছে টা।

– এতো ইচ্ছে যে কিভাবে হয় আপনার! আর কতোদিন এভাবে ঘুরবেন আমার পিছনে।

– পরিশ্রম করলে সাফল্য আসবে তাই না।

– কিন্তু যেটার ভবিষ্যত নেই সেটার পিছনে সময় নষ্ট না করাই ভালো।

– কিন্তু আমার ভবিষ্যৎ যে তুমি!

নিহা একটু অবাক হয় কিন্তু কিছু না বলে গাড়িতে উঠে চলে যায়!
.

আনহা আর মেহেরিন অভ্র আসার আগেই চলে আসায় বাসায়। অতঃপর আনহা সবার জন্য রান্না করে। কিন্তু এভাবে সে রান্না করে না তবে আজ শুধু শখ বসত রান্না করেছে। অতঃপর সবাই খেতে আসলে আনহা নিজ হাতে সবাইকে খাবার বেড়ে দেয়। কিন্তু মেহেরিন তখন ও আসে না। সবাই খেতে শুরু করে। আনহা অধীর আগ্রহে সবার দিকে তাকিয়ে আছে কে কি বলে এইজন্য। খাবার খেয়ে সবাই অনেক প্রশংসা করে। আনহা’র খুশি যেন ধরে না। এরমধ্যে মেহেরিন আসে। আনহা তাকে খাবার দিতে যাবে তখন অভ্র না বলে উঠে! আনহা মুখটা মলিন করে অভ্র’র দিকে তাকায়। অভ্র বলে উঠে..

– খাবারে অয়েল অনেক বেশি আনহা! এগুলা ওর না খাওয়া ভালো। তুমি দেখো রান্না ঘরে আমি ওর জন্য রেঁধে রেখেছি সেটা নিয়ে আসো।

মেহেরিন বলে উঠে..
– আচ্ছা একটু খাই না মিষ্টি ভাবী রেঁধেছে!

– না আদুরী! ডাক্তার আংকেল আমাকে বলেছে তোমার খাবারের প্রতি অধিক নজর রাখতে।

আনহা মুচকি হেসে বলে উঠে..
– হ্যাঁ তাই তো। ঠিক আছে আদুরী আমি বরং কাল তোমার জন্য আবার রান্না করবো আজ তোমার দা রান্না করা খাবার খাও।

– আচ্ছা!
অতঃপর মেহেরিন অভ্র’র রান্না করা খাবার’ই খেতে থাকে। অভ্র নিজ হাতে তাকে খাইয়ে দিতে থাকে। মেহেরিন আনহা কে বলে..

– তুমি খাবে না মিষ্টি ভাবী!

– খাবো ননদিনী তার আগে তোমরা খাও।

কাব্য বলে উঠে..
– আজ ভার্সিটিতে কি হয়েছে জানো!

– কি হয়েছে!

রোদ্দুর বলে উঠে..
– নিশি কে একটা ছেলে জরিয়ে ধরেছে!
এই কথা শোনার পর কারো মুখে কোনো রিয়েক্ট নেই। যে যার মতো খাওয়ায় ব্যস্ত এমনকি নিশিও। শুধু আনহা’ই অনেক অবাক। আনহা বলে উঠে..

– কিহহহ? এতো বড় সাহস ছেলেটার! তোমরা কিছু বলো নি।

নিহা বলে উঠে..
– নিশি কিছু না করে ছাড়বে বলে মনে হয় ভাবী!

ইহান বলে উঠে..
– ঠিক তাই! নিশি কিছু না করে কিভাবে ছাড়বে! ছেলেটা বাজী লেগে নিশি কে জরিয়ে ধরেছিল। আর নিশি…

নীল বলে উঠে..
– আমিও ভাবছিলাম কোনো ছেলে তোকে ভালোবেসে কিভাবে ধরবে। তা ছেলেকে হসপিটালে ‌ভর্তি করিয়েছিস!

নিশি খাবার খাওয়াতে মনোযোগ দিতে থাকে। রোদ্দুর বলে উঠে..
– তার চেয়েও বেশি!

– মেরে ফেললি নাকি!

ইহান বলে উঠে..
– বলতে পারিস!

– মানে?

কাব্য বলে উঠে..
– নিশি পুরো ভার্সিটির সামনে ছেলেটাকে কিস করল আর বললো সরি মিস্টেক!

কাব্য’র কথা শুনে আনহা হা হয়ে তাকিয়ে আছে নিশি’র দিকে। কিন্তু নিশি খাবার খাওয়াতে মনোযোগ দিয়েছে। মেহেরিন হাত তালি দিয়ে বলে..

– এই না হলে আমার বোন।

নিহা বলে উঠে..
– ইটের জবাবে পাথর মারল!

অভ্র বলে উঠে..
– আই এম প্রাউড অফ ইউ নিশি!

নিশি মুচকি হেসে বলে..
– থ্যাংক দা!

আহনা অভ্র কে খোঁচা মেরে বলে..
– এটা কি বললে?

– যা তুমি শুনলে! ছেলেটা যেমন করেছে নিশি তার জবাব দিয়েছে।

– কিন্তু এখন যদি নিশি’র পিছনে লাগে।

নীল বলে উঠে..
– মিষ্টি ভাবী চিল! নিশি খান আমার বোন এতো সাহস কারো হবে না বুঝলে!

– জানি তো! আর তোমরা ভাই বোনরা কখনো কোনো কথা সিরিয়াসলি নেও না।

মেহেরিন বলে উঠে..
– আমি কিন্তু খুব সিরিয়াস বুঝলে..
মেহেরিন’র‌ কথা শুনে হাসির বন্যা পড়ে যায় সেখানে!

অতঃপর খাবার খেয়ে যে যার মতো রুমে চলে যায়। তবে নিশি আর কাব্য ওখানে বসেই মজা করতে থাকে। আনহা এবার খেতে বসে।
.
অভ্র ঘরে বিছানায় বসে ‌ল্যাপটবে কাজ করছিল। হঠাৎ দরজা খুলে আনহা ঘরের ভেতর আসল। অভ্র তাকিয়ে দেখল আনহা’র মুখ সব লাল হয়ে গেছে। তার সাথে প্রচুর ঘামছে সে। অভ্র তাড়াতাড়ি করে উঠে পানির গ্লাস নিয়ে আনহা’র সামনে গেলো। আনহা পানির গ্লাস সরিয়ে দিয়ে গালে হাত দিয়ে সোফায় বসল। অভ্র পাশে বসে আবারও বলল..
– পানি খাও ঝাল কমে যাবে.

আনহা রেগে বলে..
– আপনি তখন বললেন না খাবার এতো ঝাল হয়েছে।‌ নীল ওরা সবাই এই খাবার খেলো। বেচারাদের কি অবস্থা হয়েছিল কে জানে। আমাকে বললে কি হতো!

– তুমি কষ্ট পেতে তাই! প্রথম বার রান্না করলে আর এখন যদি ওরা খারাপ বলতো তাহলে কি তোমার ভালো লাগতো।

– কিন্তু তাই বলে এতো ঝাল খাবার চুপ করে খেয়ে নিলো।

– না আমাদের অভ্যাস আছে ঝাল খাবার!

– কিন্তু এটা বেশি ছিল অনেক।

– কিন্তু তবুও ওরা খেয়েছে। দেখেছো তো কতো তৃপ্তি করে খেলো ওরা।

– এজন্য আপনি আদুরী কে খেতে দেন নি নাহ!

– আদুরী ঝাল খেতে পারে না। ও খেলে পুরো বাড়ি মাথায় করতো।

– আপনি জানতেন না আমার রান্না ভালো হবে না তাই আগে থেকে আদুরীর জন্য রেঁধে রাখলেন।

– না এতোটা খারাপ হয় নি। সত্যি অনেক ভালো রেঁধেছো তুমি, জানতাম হয়তো একটু গোলমাল হবে কিন্তু তোমার সেই গোলমাল আদুরী অনেক বড়ো ঝামেলার সৃষ্টি করতো তাই। তবে সত্যি তুমি অনেক ভাল রেঁধেছো। প্রথমবার আমি ও এতো ভালো রাঁধিনি!

আনহা ঝালে ফুয়াতে লাগল। অভ্র ওর সামনে পানির গ্লাস টা রেখে বলল..
– নাও পানি খেয়ে নাও ঝাল কমে যাবে!

– নাহ পানি খেলে ঝাল কমবে না।

– তাহলে…

– মিষ্টি খাবো!

– বসো আমি নিয়ে আসছি!

বলেই অভ্র উঠে দাঁড়ালো। আনহা সাথে সাথে দাঁড়িয়ে বলল..
– আরে শুনুন তো!

অভ্র পিছনে ফিরে বলল..
– আবার কি?

– কি মিষ্টি খাবো এটা তো শুনুন!

– কোন মিষ্টি খাবে?

আনহা বাঁকা হেসে ‌অভ্র’র সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। অভ্র ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে আনহা’র দিকে। হুট করেই আনহা অভ্র’র শার্টের গলার ধরে অভ্র’র ঠোঁটে চুমু খেতে লাগল। অভ্র অনেকটা অবাক হলো কিন্তু সে আনহা’র হালকা ভাবে আনহা’র কোমর ধরল। প্রায় কিছুক্ষণ পড় আনহা অভ্র’কে ছেড়ে দিয়ে বলল..

– এই মিষ্টি খাবার কথা বলছিলাম!

আনহা’র কথা শুনে অভ্র পুরোই লাল হয়ে গেছে। সে আনহা কে ছেড়ে বলল…

– ঝাল কমে গেছে তোমার!

– না এখনো আছে!

– আমি আসছি!

বলেই অভ্র বের হয়ে গেল। এদিকে আনহা বাঁকা হেসে বলল…
– এই নিরামিষ বর কে তো আমি আমিষ করবোই।

বলেই সেও বের হলো। বাইরে এসে দেখে অভ্র নিহা’র সাথে। আর নিহা’র হাতে মিষ্টি’র বাটি। আনহা কে দেখে নিহা মিষ্টির বাটি টা আনহা কে দিয়ে বলল…

– নিশি বললো তোমার নাকি অনেক ঝাল লেগেছে নাও মিষ্টি খাও ঝাল কমবে।

আনহা মিষ্টির বাটি টা হাতে নিয়ে বলল..
– ঝাল এখন কমেছে মিষ্টি খেয়েছি আমি!

অভ্র চোখ রাঙিয়ে আনহা’র দিকে তাকায়। আনহা কথা পাল্টে বলে..
– তোমরা খেয়েছো মিষ্টি, নিশ্চিত তোমাদের ও অনেক ঝাল লেগেছে নাহ। আমাকে বললেই পারতে খেতে গেলে কেন?

– মিষ্টি ভাবী ঝাল খাবার অভ্যাস আমাদের আছে। আর তুমি আমাদের জন্য শখ করে রেঁধেছো এই বেশি!

হুট করেই নীল এসে বলে উঠল…
– তাই তো! দি আমার তো মনে হয় না তুমি কখনো নিজের হাতে রেঁধে তোমার শশুরবাড়ির লোকদের কে খাওয়াবে

– বিয়েই করবো না আবার রান্না। সরি এসব আমার দ্বারা হবে না।

– হুম তাই তো!

আনহা বলে উঠে..
– আমার ননদিনী আমার সাথেই থাকবে। তাকে অন্য কোথাও দেবো না বুঝলে দেবরজী।

– দি কে সবাই মাথায় তুলে বসে আছে।

অভ্র বলে উঠে..
– কেন তোকে কম আদর কে করে।

কাব্য বলে উঠে..
– আর দা বুঝছো না কেন? দি বিয়ে না করলে ভাইয়া ওই মেয়েটাকে কিভাবে আনবে।

আনহা বলে উঠে..
– কোন মেয়ে গো দেবরজী!

নিশি বলে উঠে…
– শুধু মেয়ে না বলো গায়ে পড়া মেয়ে।

মেহেরিন বলে উঠে..
– শেষমেষ সে হবে আমার ভাবী।

আনহা বলে উঠে..
– আমি মিষ্টি ভাবী তাহলে তার নাম কি দেবে আদুরী।

নীল বলে উঠে..
– মিষ্টি ভাবী এখন তুমিও। যাও তোমাদের কারো সাথে আমার কথা নেই।

– আরে দেবরজী আমি তো মজা করছি। এই কেউ আমার দেবরজী কে রাগাবে না। বুঝলে!

– হ্যাঁ হ্যাঁ বুঝে গেছি।

অভ্র বলে উঠে..
– আশা করি একটা ভালো মেয়ে পড়ুক তোর কপালে।‌
অভ্র’র কথায় সবাই একসাথে হেসে উঠে!

#চলবে….

[ ৯ টা বাজে আরেকটা পর্ব দেবো। ধন্যবাদ সবাইকে! ]

#Game
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_১৭

আহিয়ান আজ নিহা’র জন্য অন্যরকম কিছু ভাবছে। যাতে নিহা আর আহি’র প্রমে পড়ে। কিন্তু কি করা যায়? এসব ভাবতে ভাবতে প্রায় আজ ৩ দিন হলো। এই ভাবনার কারনে নিহা’র সাথে এখন অবদি দেখা করেনি আহিয়ান। এদিকে ৩ দিন ধরে আহিয়ান’র কোনো খোঁজ না পেয়ে নিহা’র একটু চিন্তা হতে লাগলো। যে প্রতিদিন এসে তাকে বিরক্ত করে আজ ৩ দিন হলো তার কোনো দেখা নেই। ঠিক আছে তো? নাকি কিছু হয়েছে! চিন্তা কমছে না কিছুতেই। নিহা বাসায় এস ডেভিল দিয়ে আহিয়ান’র ফোন নাম্বার আর বাড়ির ঠিকানা নিল।‌ অতঃপর বাসার সামনে গিয়ে ফোন দিল আহিয়ান কে। কয়েকবার ফোন বাজার পর ওপাশ থেকে কেউ রিসিভ করল। বলে উঠল….

– হ্যালো কে বলছেন?

– ভূতনি বলছি!

আহিয়ান লাফ মেরে উঠে। ফোন আবার চেক করে অতঃপর বলে উঠে..

– কে কে বলছেন?

– নিহারিকা নিহা খান বলছি! এখনও চিনতে পারছেন না নাকি ভুলে গেছেন!

– আরে ভূতনি তুমি! না না তোমাকে কি করে ভুলবো!

– তাহলে বাসা থেকে বের হন, দাঁড়িয়ে আছি আমি!

– কোথায়?

– আপনার বাসার সামনে!

– কিহহহ! ১০ সেকেন্ড দাঁড়াও আমি এক্ষুনি আসছি!
বলেই ফোন টা রেখে ঝড়ের গতিতে বের হলো আহিয়ান।
বাইরে এসে দেখে গাড়ির উপরে বসে আছে নিহা। আহিয়ান তাকে ভূতনি বলে ডাক দিলে নিহা চোখের সানগ্লাস টা খুলে আহিয়ান’র দিকে তাকায়। দেখে একটা জিন্স পড়া আর হলুদ রঙের টি শার্ট পড়া। উস্কো খুস্কো চুল, মুখের দাড়ি ও খানিকটা বেড়ে গেছে। নিহা বলে উঠে..
– আপনি আহিয়ান চৌধুরী তো!

– নিচে নামো!

নিচে নেমে বলে..
– এ কি হাল আপনার!

– তোমার জন্য সব!

– আমার জন্য!

– হ্যাঁ তোমারই জন্য, তোমাকে ইমপ্রেস করার চক্করে আমার এই হাল। গত ৩ দিন ধরে ঘর থেকেই বের হয় নি।

– ওহ্ আচ্ছা এই কারনে আপনি বাসা বের হন নি। আর আমি ভাবলাম..

– কি ভাবলে।

– ভাবলাম আপদ বিদায় হয়েছে,

– এতো সহজে না। চলো বাসার ভিতরে চলো।

– না আমি শুধু আপনার খবর নিতে এসেছিলাম। এখন সব ঠিক আছে আমি গেলাম।

– কিন্তু ভূতনি শোন তো।

– কিহহ?

– হয়তো এখন আমার সাথে বাসার ভিতরে চলো নাহলে তোমার বিকেল আমাকে দাও।

– আপনাকে ভয় পাই নাকি আমি!

– রিকুয়েস্ট করছি তো। এখন বলো..

– দেখছি!

– তার মানে তুমি আসবে।

নিহা কিছু না বলে গাড়িতে উঠে চলে গেল।
.
নিশান আজ পুরো ভার্সিটি জুরে শুধু নিশি কে খুঁজতে লাগলো।‌ নিশি কে খুঁজতে খুঁজতে আনমনে হাঁটতে গিয়ে কারো সাথে ধাক্কা খেলো। তার হাতে থাকা সমস্ত বই পড়ে গেল। নিশান নিচের দিকে তাকিয়ে সরি বলে বই গুলো তুলে তাকে দিতে লাগলো। আর বলতে লাগলো…

– সরি আপু খেয়াল করিনি, আসলে একটা বাঁদর মেয়েকে খুঁজছিলাম। মেয়েটা কাল আমার বারো টা বাজিয়ে দিয়েছে। তার জন্য’ই এসব হলো।

বলেই মেয়েটার দিকে তাকাল। তাকে দেখে অবাক হয়ে নিশান। এ যে নিশি! নিশি ভ্রু কুঁচকে বলল…

– আমাকে খুঁজছিলে বুঝি!

– তু..তুমি!

– কেন অবাক হলে নাকি!

– তুমি এখানে কি করছো।

– এই ভার্সিটির স্টুডেন আমি।

– ….

– আমাকে কেন খুঁজছিলে?

– সরি বলার জন্য!

– বাহ অনেক বেশি সরি বলো তো তুমি!

– ….

– এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? আচ্ছা যাই হোক নিজের ভুল গুলো স্বীকার করছো তাহলে, নাহলে সরি বলতে আসবে কেন?

– হুম আমি জানি আমি ভুল করেছি, কিন্তু তুমি! তুমি এমন কাজটা কেন করলে?

– নাহলে কি তুমি আজ এসে সরি বলে নিজের ভুল স্বীকার করতে!

– ….

– কি হলো বলো?

– হয়তো না কারন তুমি সত্যি টা জানতে না।

– হুম এটাই!

– কিন্তু তোমার এই কান্ড তো আমার চোখের ঘুম কেড়ে নিয়েছে!

– মানে…

– কিছু না! কফি খাবে, খেতে খেতে কথা বলবো।

– ঠিক আছে!
.
নীল ভার্সিটির ক্যাম্পাসে বসে আড্ডা দিচ্ছে। কিছু নতুন চেহারা আজ দেখা যাচ্ছে ভার্সিটিতে। হয়তো তারা প্রথম বর্ষের স্টুডেন। ইশা দূর থেকে নীল কে দেখে দৌড়ে আসতে লাগল। নীল ওকে দেখে হতাশা প্রকাশ করল। এদিকে ইশা আসতে গিয়ে একটা মেয়ের সাথে ধাক্কা খেলো। ইশা দাঁড়িয়ে মেয়েটাকে ইচ্ছে মতো ঝাড়তে লাগলো। মেয়েটাও কম না সেও কথা শুনাতে লাগলো ইশা কে। দু’মিনিটের মধ্যেই দু’জনের মধ্যে ঝড় উঠতে লাগলো। নীলের তো মনে হচ্ছে এবার মারামারি করবে। মেয়েটা পিছনে ঘুরে থাকার কারনে নীল তাকে দেখতে পাচ্ছে না। নীল আর বসে রইল না, উঠে তাদের কাছে যেতে লাগলো। এরমধ্যে হঠাৎ করেই ইশা মেয়েটাকে চড় দেবার জন্য হাত তুলল। মেয়েটাও কম না ইশা’র হাত ধরে মুচরে দিয়ে পিছনে ঘুরিয়ে নিল। নীল ওর বন্ধুর সবাই দৌড়ে সেখানে গেল। নীল এবার মেয়েটার মুখ দেখল, লাল ফর্সা গায়ের রং, হরিণী চোখ দেখতে বেশ লাগছে। তবে মুখের কোথাও বিন্দু মাত্র হাসি নেই কারণ সে রেগে আছে। নীল এখানে একটা মিষ্টি হাসির অভাব করছিলো।‌এর মাঝেই ইশা চেঁচিয়ে নীল কে ডাক দিলো। নীল বলে উঠে..

– এই মেয়ে ওর হাত ছাড়ো!

– কেন ছাড়বো? এই মেয়ে যখন আমায় মেরেছে তখন!

– তুমি ওর হাত ছাড়ো, কে তুমি? দেখে তো মনে হচ্ছে নতুন স্টুডেন!

– আমি নীলাশা! আর হ্যাঁ আমি নতুন স্টুডেন। আর নতুন স্টুডেন বলেই আমাকে না জেনে চুন্নি টা আমাকে মারতে আসছিলো।

ইশা বলে উঠে..
– কি তুই আমাকে চুন্নি বললি! বেবী কিছু বলো না!

– ওহ্ আচ্ছা এটা তাহলে তোমার বেবী! তাই তো বলি এতো দরদ কিসের!

নীল ধমক দিয়ে বলে..
– এই মেয়ে হাত ছাড়ো ওর! তুমি জানো ও তোমার সিনিয়র। সিনিয়রের গায়ে হাত তুলো কিভাবে তুমি।

– যেভাবে এই চুন্নি তুলে ঠিক সেভাবে!

– বেবী!

নীল আর কিছু না ভেবে ‌নীলাশা’র হাত ধরে ইশা’র হাতটা ছাড়িয়ে নিলো। আর বললো…

– এরপর যাতে এরকম করতে না দেখি বুঝলে তুমি!
বলেই নীল ইশা কে নিয়ে চলে গেল। নীল রাবার পর’ই নীলাশা যেখানে দাঁড়িয়ে বক বক করতে লাগলো..

– ইশ এই চুন্নি টার বেবী’র কথা আমি কেন শুনতে যাবো হুমম! এর পরের বার এই চুন্নি’র বেবী টা আসলে তার হাতটাও মুচরে দেবো। দুই টাকে এক সাথে শিক্ষা দেবো। দেখবো কি বলে আমায় ! এই নীলাশা কাউকে ভয় পায় না!
.
নিহা বিকালে আহিয়ান’র দাওয়া ঠিকানায় চলে যায়। গিয়ে দেখে একটা নদী! আহিয়ান বসে আছে সেই নদীর ঘাটে। নিহা আসলেই আহিয়ান দাঁড়িয়ে যায়। নিহা জিজ্ঞেস করে…

– এখানে কেন আমরা!

– ঘুরবো বলে!

– কোথায় ঘুরবো!

– এই নৌকায় করে পুরো নদীতে ঘুরবো।

– তারপর!

– তারপর আর কি আমার অনুভূতি সম্পর্কে তোমায় বলবো আর তুমি আমায় বলবে!

– ওহ আচ্ছা!

– হুম চলো এখন!
বলেই নিহা’র হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল। অতঃপর দুজনে নৌকায় উঠল। কিন্তু নৌকায় কোনো মাঝি নেই। তাহলে নৌকা চালাবে কে? আহিয়ান মৃদু হেসে বলল..

– নৌকা আমি চালাবো!

– আমি মরার কোনো শখ নেই!

– আরে ভূতনি আমি পারবো। টানা ২ ঘন্টা ধরে প্র্যাকটিস করেছি।

– আপনার মনে হয় এই ২ ঘন্টার প্র্যাকটিসে আপনি পারবেন নৌকা চালাতে!

– অবশ্যই!

– আমি গেলাম!

– আরে আরে ভূতনি এমন করো না প্লিজ! বসো না।
আমি বললাম তো আমি পারবো। কথা দিচ্ছি তোমায়!

নিহা একবার আহিয়ান’র দিকে তাকাল। অতঃপর বসে পরল। আহিয়ান নৌকা চালাতে শুরু করল। তবুও নিহা’র খুব ভয় করছে।‌ কিন্তু আহিয়ান বেশ ভালোই নৌকা চালাচ্ছে। দেখতে দেখতে দুজনে নদীর মাঝে এসে পড়ল। আহি নৌকা থামিয়ে দিল। নিহা আশপাশ দেখতে লাগলো। সবুজ গাছ গাছালিতে ভরা চারদিক। মানুষ জন কেউ নেই শুধু তারা দুজন। পুরো প্রকৃতি নিস্তব্ধ। নিহা এই নিরবতা ভালোই লাগছিলো। এরমধ্যে ঠান্ডা বাতাস বইতে লাগলো। নিহা দাঁড়িয়ে ‌হাত দুটো ছেড়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে বাতাসকে অনুভব করতে লাগলো। হঠাৎ করেই কোমরে কারো স্পর্শ পেয়ে কেঁপে উঠলো সে। তার ঘাড়ে গরম নিঃশ্বাস পড়ছে তার। নিহা’র বুঝতে বাকি নেই এটা আহি! নিহা দ্রুত সরে যাবার চেষ্টা করল কিন্তু আহিয়ান নিহা হাত ধরে তার কাছে টানল। দুজনে দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। আহিয়ান বলে উঠে…

– ভূতনি লাফালাফি কম করো, নাহলে দুজনে গিয়ে নদীতে পড়বো।

নিহা মাথা নাড়লো। আহিয়ান নিহার এলোমেলো চুল গুলো কানের পিছনে গুঁজে দিলো। দুজন দুজনকে এভাবে দেখতে দেখতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। সূর্যের লাল আভা দেখা যাচ্ছে কিন্তু আহিয়ান’র চোখ খানিকক্ষণ’র জন্য ও সরে নি নিহা’র থেকে। দু চোখ ভরে দেখছিলো সে নিহা কে। আর নিহা দেখছিলো তাকে। অতঃপর আহিয়ান নিহা’র কোমর থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে সরে গেল। আর বলল..

– চলো বাসায় যাওয়া যাক!

– হুম।

অতঃপর আহিয়ান নৌকা চালিয়ে আবারও ঘাটে চলে এলো। আহিয়ান নিহা কে গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে চলে গেল। নিহা গাড়ি চালিয়ে বাসায় আসলো। মেহেরিন’র‌ সাথে‌ দেখা করে রুমে আসল। ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। চোখ বন্ধ করে নিলো। ঠিক তখনই আহিয়ান’র মুখ টা ভেসে উঠলো তার সামনে। সাথে সাথে চোখ খুলে নিলো সে। নিজের এমন পরিবর্তন দেখে অবাক সে। কারন কি? তবে কি সে ভালোবেসে ফেলল আহি কে!

#চলবে….

#Game
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_১৮

মেহেরিন গালে হাত দিয়ে বসে বসে ভাবছে। হুট করে নীল এসে তার মাথাম টোকা দিয়ে বলে..

– কি এতো ভাবছিস? এরপর তো মাথা ফেটে যাবে!

– ইম্পর্ট্যান্টে বিষয় নিয়ে ভাবছি!

নিশি বলে উঠল..
– কিহ?

– দা’র‌ বিয়ে হলো আজ কয়দিন?

– দিন না বল মাস! এই ধর ৩ মাস তো হবেই!

– তাহলে তারা এখনো কেন হানিমুনে গেলো না!

মেহেরিন’র কথা শুনে রোদ্দুর ধপাস করে সোফা থেকে পড়ে গেল। কাব্য বলে উঠে..
– সারাদিন কি এসব ভাবিস?

– আরে না কি হয়েছে জানিস!

– কিহ?

– আমার ক্লাসমেট মানে বেঞ্চ মেট ও বলা যায় আর কি সে আজ আমাকে জিজ্ঞেস করছিলো?

ইহান বলে উঠে..
– কি জিজ্ঞেস করল!

– মানে জিজ্ঞেস করল একটা ভালো জায়গার নাম বলতে যেখানে ঘুরতে যাওয়া যাবে!

– তুই কি বললি?

– আমি জিজ্ঞেস করলাম কে ঘুরতে যাবে আর কেন?

– অতঃপর!

– অতঃপর সে বললো ওর নাকি এক কাজিন এর বিয়ে হবে কয়দিন পর তো ও গিফট হিসাবে ও হানিমুন প্যাকেজ দেবে তাদের। মানে তার পক্ষ থেকে তাদের কোথাও ঘুরতে যাবার ট্রিট!

– তুই কি বললি?

– আমি জিজ্ঞেস করলাম হানিমুন আবার কখন যায়, ও বললো বিয়ের পর’ই তো যায় আমি বললাম কোথায় আমি দা তো গেলো না!

মেহেরিন’র কথায় হাসির বন্যা বয়ে গেল। এর মধ্যেই অভ্র আর আনহা অফিস থেকে বাসায় আসলো। সবাইকে এভাবে হাসতে দেখে তারা দুজনেই অবাক হলো। অভ্র বলে উঠে…

– এতো হাসাহাসির কিসের?

– তোমার বোনের কথা শুনে!

– কেন কি বললো?

– তোমরা হানিমুনে কেন যাওয়নি!

অভ্র কি বলবে বুঝতে পারলো না। আনহা মুখ ভেংচি দিয়ে বলে উঠে…
– সে ভাগ্য আমার নেই তাই!

মেহেরিন বলে উঠে..
– কেন নেই, বিয়ে তো তোমরাও করেছো নাহ!

– আমার তো মনে হয় না!

– কিহহ?

– না কিছু না। তোমার দা এর কাজের চাপ আছে তাই আমরা যায় নি।

– সেটা আর নতুন কি এটা তো সারাজীবন’ই থাকবে।

– তা ঠিক বলেছো!

– তো প্ল্যান করা হয়ে গেল তোমরা কাল রওনা দিচ্ছো!

– কোথায়?

– বান্দরবান!

– কি কোথায় কিভাবে?

– গাড়ি করে যাবে,‌কাল সকালে! আমি সব ব্যবস্থা করে রেখেছি, মানে নিহা দি করে দিয়েছে আর কি!

অভ্র মেহেরিন’র‌ গাল টেনে বলে..
– এসব কথা তোর মাথায় কে ঢোকায় বল তো!

– আরে মাথায় কেন ঢোকাবে, এটা তো সত্যি নাহ। তা ব্যাগ ট্যাগ গুছিয়ে নাও।

– সরি আমি কোথায় যাচ্ছি না।

– আরে দা কি বলছো কি আমি অনেক কষ্ট করে সব প্ল্যান করলাম।

– আমার বোন কষ্ট করেছে সবাই শুনছো!

মেহেরিন ঠোঁট উল্টে বলে..
– তুমি যাবে কি না বলো নাহলে খুব খারাপ হবে।

অভ্র কি বলবে বুঝতে পারে না। একবার আনহা’র দিকে তাকায় দেখে সে মুচকি মুচকি হাসছে। অভ্র বলে উঠে..
– আচ্ছা যাবো। কিন্তু তোমার খেয়াল কে রাখবে।

নীল বলে উঠে..
– ঘরে কি মানুষজনের কমতি আছে নাকি!

– মনে তো হয় তাই!

– দা!

– আচ্ছা ঠিক আছে, কিন্তু ওর খেয়াল সবসময় রাখবে। আর ডেভিল আমি না আসা অবদি ওর কলেজে যাওয়া বন্ধ আমি আসলে ও যাবে।

– ওকে ওকে!
.
পরদিন সকালে অভ্র আর আনহা রওনা দিলো বান্দরবান যাবার জন্য। সবাই মিলে ওদের বিদায় দিলো।
নিশি, ইহান, কাব্য আর রোদ্দুর সবাই ভার্সিটি গেছে আর এদিকে মেহেরিন আবারও ঘুমাতে গেছে। নীল আর নিহা ও ভার্সিটির জন্য চলে গেছে।

নিশি ভার্সিটিতে ঢুকে দেখে নিশান ওর বন্ধুদের সাথে ক্যাম্পাসে বসে আড্ডা দিছে। নিশান নিশি কে দেখে একনজর ভাবে তাকিয়ে রইল কিন্তু নিশি তাকালো না। নিশানের একটু খারাপ লাগলো কারন কাল অনেকক্ষণ বসে দুজনে কথা বলেছিল কিন্তু আজ নিশি তার দিকে ফিরেও তাকাল না। নিশান সেখান থেকে উঠে নিশি’র পিছন পিছন যেতে লাগলো। হঠাৎ নিশি কে হারিয়ে ফেলল। নিশান নিশি কে খুঁজতে খুঁজতে লাইব্রেরি দিকে গেল। হঠাৎ দেখল রোদ্দুর ওর দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলল..

– কাকে খুজছো এভাবে?

– আমি কই না তো কাউকে খুঁজছি না।

– আচ্ছা আমি তো এতোক্ষণ দেখলাম তোমাকে কারো পিছনে পিছনে আসতে।

– না আমি কারো পিছনে আসি নি।

– ওহ আচ্ছা ভালো! কিরে নিশি বই নেওয়া হলো তোর নাকি আজ পুরো লাইব্রেরি নিয়ে বাসায় যাবি!

লাইব্রেরী ভেতর থেকে নিশি বললো…
– আর দু’মিনিট আসছি!

রোদ্দুর বাঁকা হেসে নিশানের দিকে তাকিয়ে বলল..
– আচ্ছা আমি বাইরে দাঁড়িয়ে আছি তাড়াতাড়ি আয়!

– ওকে ওকে!

নিশান কিছু না বলে চলে যায় সেখান থেকে। এদিকে নিশি বের হয়ে দেখে রোদ্দুর মুচকি মুচকি হাসছে। নিশি বলে উঠে…

– এতো হাসি কিসের তোর!

– আরে তোমার সেই সরি মিস্টেক আসছিলো তোমার পিছনে পিছনে এখানে!

– তারপর!

– তারপর আর কি আমাকে দেখে চলে গেলো। বেচারার মুখটা দেখার মতো ছিলো।

– হি হি হি হয়েছে এখন চল বাসায় যাবো।

– ক্লাস করবি না!

– না আদুরী বাসায় একা, বাসায় চলে যাবো চল।

– ওকে!
.
নীল ভার্সিটিতে ঢুকতে গেলে তার মুখোমুখি হয় নীলাশা’র। নীলাশা নীল কে দেখেই একটা মুখ ভেংচি দিয়ে চলে যায়। নীল রেগে ওর বন্ধুদের কাছে যায়। সবাই খেয়াল করে নীল বেশ রেগে আছে তাই কেউ কিছু বলে না। হুট করেই ইশা এসে নীলের পাশে বসে পড়ে। নীলের হাত ধরে বলতে শুরু করে..

– বেবী তুমি এখানে আমি পুরো ভার্সিটিতে তোমাকে খুঁজছিলাম!

– কেন কি হয়েছে?

– জানো ওই মেয়ে টা আবারও আমার সাথে ঝগড়া করেছে!

– কি?

– হুম বিশ্বাস করো আমি কিছুই বলি নি ওকে তবুও আমাকে অনেক কথা শুনিয়েছে। দেখো আমার হাত জোরে চেপে ধরার কারনে লাল হয়ে গেছে।

নীল ইশা’র হাতের দিকে একবার তাকায়,সে জানে ইশা ইচ্ছে করেই ঝগড়া করছে কিন্তু নীলাশা’র ওপর কিছু রাগ জমা আছে ওর। তাই ইশা কে বললো..

– আচ্ছা আমি দেখছি!

– সত্যি বেবী!

– হুম, চলো এখন ক্লাসে।

– হুম চলো!
.
নিহা আজ ভার্সিটিতে যায় নি, ওর মনে হচ্ছে কেউ ওকে ফলো করছে। তাই সে রাস্তায় ঘুরছে কে সে সেটা জানার জন্য। হঠাৎ তার সামনে হাজির হলো আহিয়ানের। নিহা আহিয়ান কে এড়িয়ে চলে যেতে চাইলে আহিয়ান তার পিছনে পড়ে যায়। এদিকে নিহা’র কাছে ‌সব কিছু জানি কেমন লাগছে, মনে হচ্ছে কিছু না কিছু একটা এখন হবেই হবে। কিন্তু আহিয়ান ও তার পথ ছাড়তে চাইছে না। নিহা ফোনে মেসেজ করে গার্ডদের এখানে চলে আসতে বলল। রাস্তায় ফুটপাতে দাঁড়িয়ে কথা বলছে আহিয়ান আর নিহা। আহিয়ান অনেক বক বক করছে আর নিহা শুধু মাথা নাড়ছে। হঠাৎ নিহা আহিয়ান’র পিছনে থাকা গাড়ির কাঁচে একটা মুখ দেখতে পেল। এই সেই লোক সেদিন রাতে যে নিহা’র পিছু নিয়েছিল। নিহা বুঝতে পারল এরাই ওকে এখন মারতে এসেছে। কিন্তু যদি ওরা আহিয়ান’র কিছু করে ফেলে তখন। নিহা ভাবতে লাগল কিভাবে আহিয়ান কে এখান থেকে সরানো যায়।

নিহা হঠাৎ করে চেঁচিয়ে বলতে বলল..
– আপনার সমস্যা টা কি বলুন তো! এভাবে কেন আমার পিছনে পড়ে আছেন। কি চান টা কি আপনি। এভাবে আমার পিছনে পড়ে থাকার মানে কি? বুঝতে পারছেন না আমি বিরক্ত হচ্ছি। মান সম্মান কি নেই আপনার। দেখে তো মনে হয় অনেক ভদ্র ফ্যামিলির ছেলে তো এতো টুকু আপনার মা বাবা শিখাইনি একটা মেয়েকে এভাবে বিরক্ত করা ঠিক কোন পর্যায়ে পড়ে।

আহিয়ান যেন থতমত খেয়ে গেল। সে এরকম কোনো কথাই বলছিল না যে নিহা এতো রেগে যাবে। আহিয়ান রাস্তায় চারদিক তাকাতেই দেখল সব লোক তার দিকে তাকিয়ে আছে। আহিয়ান’র খুব খারাপ লাগলো নিহা’র এমন কথায়। সে শান্ত গলায় মুচকি হেসে বলল…

– সরি বুঝতে পারি নি তোমার এতোটা বিরক্ত লাগবে। আমি আর কখনো আসবো না!

বলেই চলে গেলো আহিয়ান। নিহা রেগে চোখ বন্ধ করে হাত দুটো মুষ্টিবদ্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে। সে এসব বলতে চায় নি আহিয়ান কে। কিন্তু না বললে আহিয়ান যেতো না এখান থেকে। তাই…..

হঠাৎ করেই নিহা’কে কেউ তার বাহুতে জড়িয়ে ধরল। নিহা চোখ খুলে দেখে আহিয়ান! কিন্তু আহিয়ান এখানে আর এরকম করল কেন। নিহা পাশে দাঁড়িয়ে দেখল সেই লোকটা’র হাতে গান। হয়তো গুলি করেছিলো আর আহিয়ান তাকে বাঁচিয়েছে। নিহা তাড়াতাড়ি করে আহিয়ান কে সরিয়ে দিয়ে গান বের করে তাকে গুলি করল। সে লুটিয়ে পড়ে গেল, আরো কিছু লোকজন তাদের দিকে এগিয়ে আসতে লাগল। আহিয়ান বলে উঠল…

– ভূতনি…!
নিহা আহিয়ান’র দিকে তাকিয়ে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে পেছনে তাকায়। আহিয়ান ও তার সাথে সাথে পিছনে তাকায়। দেখে চার টা গাড়ি খুব দ্রুত গতিতে আসছে। আহিয়ান কপাল কুঁচকে তাকায়। গাড়ি গুলো থামলে কিছু লোক বের হয় গাড়ি থেকে। দেখে মনে হচ্ছে এরা গার্ড! এর মাঝে ওই লোক গুলো’র পিছনেও কিছু লোক এসে তাদের ঘিরে ধরে। একটা গার্ড এসে নিহা’র সামনে দাঁড়ায়! নিহা বলে উঠে…

– ডেভিল!

– ম্যাম আপনি যান আমি দেখছি এদের।

– মরে ফেলবে না বাঁচিয়ে রাখবে, জানতে হবে ওদের কে পাঠিয়েছে!

– জ্বি ম্যাম!

নিহা আহিয়ান’কে একটা গাড়িতে উঠে। অতঃপর তারা চলে যায়, আহিয়ান পিছন থেকে অনেক গুলাগুলির শব্দ পায়। কিছুদূর যেতেই নিহা গাড়ি থামিয়ে দেয়। আহিয়ান গাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। নিহা’ও গাড়ি থেকে বের হয়ে আহিয়ান’র কাছে গিয়ে ওকে চেক করতে থাকে! আহিয়ান কপাল কুঁচকে বলে…

– কি করছো তুমি!

নিহা আহিয়ান’কে পিছনে ঘুরিয়ে তাকে দেখে বলে…
– দেখছি গুলি লাগলো কি না।

– আরে না কিছু লাগে নি ঠিক আছি আমি!

নিহা কোমরে হাত রেখে বলে..
– কে বলেছিলো আপনাকে আসতে যদি কিছু হয়ে যেত তখন!

– যা করার সব তো তুমিই করলে!

– মানে!

– এই আমার মন চুরি করে নিয়ে গেল!

– আপনি না বললেন আর কখনো আসবেন না।

আহিয়ান নিহা’র বাহু ধরে নিজের কাছে টেনে বলল..
– আমি জানতাম তুমি কোনো না কোনো কারনে আমাকে এসব বলেছিল তাই তখন কথা না বাড়িয়ে বলেছিলাম তো কি হয়েছে! বলে দিয়েছি মানেই কি ছেড়ে দিয়েছি নাকি।

নিহা ছোটাছুটি করতে করতে বলল..
– এই এই ছাড়ুন আমায়, একদম ছোঁবেন না আমায়!

– ভুলে যেও না খানিকক্ষণ আগেই আমার দুই বাহু তে ছিলে তুমি!

– ছাড়ুন বলছি আমায়!

– না ছাড়লে কি করবে শুনি!

– ওই গুলি টা তখন আপনার বুকে মারা উচিত ছিল!

– তোমার প্রেমের আগুনে কবেই তো পুড়ে ছাই হয়ে আছি! তুমি আমাকে আবার নতুন করে মারতে চাও!

– আপনার সাথে কথা বলাই বেকার।

– বলো না।

– ছাড়ুন না আমায়!

– আজ ছাড়ার মুডে নেই।

– মানে..

– বলো ভালোবাসি!

– কিহহ?

– হুম জলদি জলদি বলো আমি জানি তুমি ইমপ্রেস!

– কখনো না।

– তুমি বললেই হলো নাকি আমি জানি তুমি ইমপ্রেস অনেক আগে থেকেই। এখন শুধু বলো ভালোবাসি!

– বলবো না কি করবেন

– তুমি ভাবতেও পারছো না কি করবো!

– ছাড়ুন বলছি উল্টাপাল্টা কিছু করলে না এখানেই মেরে কবর দিয়ে দেবো।

– সেটা তো আমি ছাড়লে তখন!

– আহিয়…..
কিছু বলার আগেই আহিয়ান নিহার ঠোঁট দুটো আঁকড়ে ধরল। নিহা এমন কিছু হবে ভাবতে পারিনি। সে চোখ বন্ধ করে ছোটাছুটি করতে লাগলো। আহিয়ান দ্রুত নিহা কে ছেড়ে দিলো। নিহা রেগে আহিয়ান’র দিকে তাকিয়ে আছে। আহিয়ান নিহা’র দিকে তাকিয়ে আছে। নিহা কিছু না রেগে গাড়ি নিয়ে চলে গেল। আহিয়ান বুঝতে পারলো না কি হলো!
.
অভ্র আর আনহা পৌঁছে গেছে অনেকক্ষণ আগে। তাদের রিসোর্টে পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। অভ্র পৌঁছে মেহেরিন কে কল করল। কিন্তু মেহেরিন তখন ঘুমাচ্ছিল তাই কথা হয় নি। অতঃপর তারা দু’জন ফ্রেশ হয়ে খেতে গেল। খাওয়া দাওয়া করে অভ্র এসে আবারও কল করল। অতঃপর মেহেরিন এবার কল ধরল। অভ্র মেহেরিন’র সাথে কথা শেষ করে তাকিয়ে দেখল আনহা বিছানায় ঘুমিয়ে আছে। অভ্র ফোনটা রেখে আনহা’র শরীরে চাদর’টা টেনে দিয়ে তার কপালে আলতো করে একটা ভালোবাসার পরশ দিয়ে দিলো। অতঃপর সে বাইরে চলে গেল!

#চলবে….

[ ৯ টা বাজে আরেকটা পর্ব দেবো। ধন্যবাদ সবাইকে! ]
#Game
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_১৯

রাতে নিহা ঘরে একা একা বসে আছে। আজকের ঘটনা মনে পড়তেই শরীর শিউরে উঠছে তার। কিভাবে এটা হলো? কেন হলো? সে কেন কিছু বললো না আহিয়ান কে? বলা তো দরকার ছিল। একটা চড় তো মারতেই পারতো। কিন্তু কিছু না বলে এভাবে চলে আসলাম কেন? এটা একদম ঠিক হয়নি।

হঠাৎ বেলকনিতে কিছু’র আওয়াজ পেল। নিহা সেখানে গেল। কিন্তু কিছু দেখতে পেলো না। হুট করেই ‌কেউ বলে উঠলো.. “ভূতনি”!
নিহা চমকে গেল। একটু নিচু হয়ে দেখল আহিয়ান বেলকনিল গ্রিল ধরে ঝুলছে। নিহা বলে উঠে..

– আপনি!

– আরে ভূতনি ধরো আমায় নাহলে পড়ে যাবো।

– মরে যান!

– এভাবে বলো না।

– তাহলে বলুন আমি মেরে ফেলি।

– পারবে আমাকে মারতে!
বলতে বলতে আহিয়ান উঠে গেল। নিহা মুখ ফুলিয়ে রাগে গজ গজ করছে। আহিয়ান বলে…

– এতো রেগে আছো সত্যি মেরে ফেলবে নাকি!

নিহা তাকিয়ে আছে। আহিয়ান নিহা’র হাত দুখানা ধরে নিজের গলায় নিয়ে বললো..
– নাও গলা টাপে মেরে ফেলো।

– বেস্ট আইডিয়া!
বলেই নিহা গলা টিপে ধরল। আহিয়ান তাড়াতাড়ি করে হাত ছাড়িয়ে বলল..

– আরে আরে তুমি তো সত্যি দেখছি আমাকে মেরে ফেলতে চাও। আমি এমনেই বললাম!

– কিন্তু আমি এমনেই বলছি না সত্যি আজকে আপনাকে মেরে ফেলবো আমি।
বলেই আহিয়ান’র দিকে আগাতে লাগলো। আহিয়ান দৌড়ে ঘরের ভিতর চলে গেল। নিহা আহিয়ান’র দিকে বালিশ ছুঁড়তে লাগলো। আহিয়ান একসময় থেমে গেল। নিহা ইচ্ছে মত আহিয়ান’র পিঠে বালিশ মারতে লাগলো। বালিশ থেকে সব তুলো একসময় বের হয়ে আসলো। নিহা থেমে গেল। আহিয়ান হেসে বলে…

– শেষ..!

নিহা রেগে আহিয়ান’র দিকে তাকাল। আহিয়ান দাঁত বের করে হাসল। নিহা রেগে আহিয়ান কে কিল ঘুষি মারতে লাগল। কিছুক্ষণ পর আহিয়ান নিহা’র হাত দুটো ধরে ফেলে। নিহা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে। আহিয়ান বলে উঠে..

– অনেক মেরেছে এবার থামো।
নিহা ছোটার চেষ্টা করে কিন্তু পারে না। আহিয়ান বলে উঠে..

– তুমি যত’ই যা শিখো মনে কিন্তু আমার সাথে পারবে না।

– কে বললো!
বলেই নিহা বাঁকা হেসে পা দিয়ে মেরে আহিয়ান কে ধপাস করে নিচে ফেলে দিলো। অতঃপর তার উপর বসে বলল..

– ভুলে যেও না আমি নিহারিকা নিহা খান! আমাকে ভয় দেখিয়ে লাভ হবে না বুঝলে!

আহিয়ান নিহা’র হাত দুটো শক্ত করে ধরে নিহা কে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে মেঝেতে বসে বলল..

– আমিও আহিয়ান চৌধুরী বুঝলে। এখন তুমি যত’ই ভূতনি হও না কেন আমিও কম না।

নিহা উঠে বসে, তাকিয়ে থাকে আহিয়ান’র দিকে। আহিয়ান নিহা’র হাত ধরে নিজের কাছে টেনে নিয়ে আসে।
– আসলাম রোমান্স করতে আর তুমি কি করলে আমার সাথে!

– কিহহ?

– না কিছু না।

– বের হন আমার বাসা থেকে।

– রেগে যাচ্ছো কেন? সরি!

– বের হবেন না গার্ড ডাকবো।

– তুমি ডেকে শান্তি পেলে ডাকো।

– সমস্যা টা কি আপনার!

– তোমাকে ভালোবাসি এটাই সমস্যা।

– সত্যি ভালোবাসেন!

– বিশ্বাস করে তো দেখো ঠকবে না কখনো!

নিহা খানিকক্ষণ আহিয়ান’র দিকে তাকিয়ে বলল..
– বের হন!

– দেখো তুমি বলো ভালোবাসো কি না। নাহলে অন্য কাউকে খুঁজে নেবো আমি।

– কিহহ বললেন!

– যা শুনলে তাই।

– এই না বললেন আমায় ভালোবাসেন।

– তো কি করবো তুমি তো ভালোবাসো না।

– তাই বলো আপনি… আপনি!
বলেই আহিয়ান’র চুল টানতে টানতে থাকে। আহিয়ান কোনো রকমে ‌নিহা কে শান্ত করে বলে..
– এভাবে আমার মা ও কখনো মারে নি জানো। বাহ বাহ কি মেয়ে তুমি। ভালোবাসি বললে কি হয়।

– বলবা না কি করবেন শুনি!

– তখন যা করলাম আর কি!

– এটা আমার বাসা, এমন হাল করবো না।
আহিয়ান নিহা’র নাক টায় টোকা দিয়ে বলে..

– তোমার এইসব ধমক অনেক ভালো লাগে জানো!

নিহা মুখ ভেংচি দিয়ে আহিয়ান’র বুকে শুয়ে পড়ে। আহিয়ান দু’হাত জরিয়ে ধরে নিহা কে!
.
পরদিন সকালে…
নিশি আজ ভার্সিটিতে যায় নি মেহেরিন’র কারনে।‌ নিশি, রোদ্দুর ইহান আর কাব্য সবাই মিলে সারাদিন ঘুরবে বলে ঠিক করেছে মেহেরিন। এদিকে নীল গেছে ভার্সিটিতে আর নিহা অফিসে। অভ্র’র অবর্তমানে এখন অফিসের কাজ তাকেই দেখতে হবে।

এদিকে নিশি আর ভার্সিটিতে যায় নি বলে নিশানের মন বেশ খারাপ। এখন একদিন নিশি কে না দেখলেই অনেক খারাপ লাগে তার।

নীল ভার্সিটিতে গিয়ে দেখে ইশা মন খারাপ করে বসে আছে। নীল তাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করল..

– কি হয়েছে?

– বেবী!

– কি?

– ওই মেয়েটা আজও আমার সাথে ঝগড়া করেছে খুব বাজে বাজে কথা বলেছে!

– কিহহ।

– হুম!

– চল আমার সাথে
বলেই নীল ইশা কে নিয়ে নীলাশা’র কাছে গেল। দেখল নীলাশা তার বান্ধবীর সাথে ফাজলামো করছে।‌ নীল ওখানে ইশা কে নিয়ে গেল নীলাশা’র বান্ধবী নীলাশা কে বলে। নীলাশা পিছনে ফিরে নীল ইশা’র সাথে দেখে জিজ্ঞেস..

– আপনি!

নীল রেগে বলে..
– এই মেয়ে তোমার সমস্যা’টা কি বলো তো!

– আমি আবার কি করলাম!

– কি করলে সিনিয়র’র গায়ের হাত তুলো আবার বলছো কি করলে!

– গায়ে হাত তুললাম মানে! কখন?

ইশা খাবড়ে যায় কারন নীল কে ও মিথ্যে বলেছে। ইশা পরিস্থিতি সামলাতে বলে..

– এই মেয়ে মিথ্যে বলছো কেন তুমি তখন আমার সাথে ঝগড়া করো নি।‌ আমার হাত মুচড়ে দাও নি। আবার মিথ্যে বলছো।

নীলাশা রেগে ইশা সামনে আঙুল তুলে বলে..
– এই চুন্নি দেখ আমার নামে মিথ্যে বলবি না একদম নাহলে ঘুষি দিয়ে তোর নাক ফাটিয়ে দেবো।

নীল রেগে নীলাশা’র বাহু ধরে বলে..
– তোমার সাহস তো কম না। আমার সামনে আমার ফ্রেন্ড কে বলছো মারবে। তোমার ব্যবস্থা আমি করছি আজ।
বলেই নীলাশা কে নিয়ে যেতে লাগলো। কিন্তু নীলাশা’র বান্ধবী এসে অনেক অনুরোধ করায় তাকে ছেড়ে দিলো। কারন তাকে নীল অনেক আগে থেকেই চিনে। নীল শেষবারের মতো বলে গেলো এমন কিছু যাতে না হয়।‌
এদিকে নীল যাবার পর নীলাশা বিড় বিড় করতে করতে বললো..

– ইশ আসছে কোন মহারাজ। উনার কথা শুনে চলতে হবে। দোষ তো ওই চুন্নি’র আমার নাকি।

– নীলাশা দোষ যার’ই হোক কিন্তু তুই কিছু বলবি না।

– কেন বলবো না!

– কারন তুই মধ্যবিত্ত আর তারা বড়লোক। অনেক কষ্ট করে এই ভার্সিটিতে চান্স পেয়েছিস বাড়াবাড়ি করলে যদি বের করে দেয় তখন এই কুল ও যাবে আর ওই কুলও বুঝলি।

নীলাশা আর কিছু না বলে মাথা নামিয়ে নিলো। সত্যি’ই সে একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। বেশি বাড়াবাড়ি করলে ভালো নাও হতে পারে। এই সত্য তাকে মেনে নিতে হবে।
.
অভ্র আর আনহা আজ সারাটা দিন ঘুরেছে। কালও অনেক জায়গায় ঘোরার প্ল্যান আছে। সন্ধ্যার সময় দুজনে চলে আসল রিসোর্টে। অতঃপর ফ্রেশ হয়ে হালকা নাস্তা করল। আনহা একা একা রিসোর্টের পাশে একটা বাগানে ঘুরতে লাগলো। বাগান টা অনেক সুন্দর, অনেক ফুল আগে এখানে। ভালোই লাগছিল আনহা’র। তার মতে এখন অভ্র ল্যাপটব নিয়ে বসবে। তো সেখানে গিয়ে বসে বোর না হয়ে এখানে থাকা ভালো। অনেক রাত হয়ে গেল! অভ্র এখনো আসে নি আনহা’র কাছে। আনহা ভাবল হয়তো কাজের মধ্যেই ঢুবে আছে। তাই রেগে রুমের দিকে গেল।

আনহা গিয়ে রুম নক করলো। কিন্তু কেউ খুললো না। সে আবারও নক করলো তখন বুঝতে পারলো রুম লক করা নেই। আনহা’র ভয় হলো। কিছু হয় নি তো আবার অভ্র’র। সে দ্রুত দরজা খুলে ভেতরে ঢুকল। রুমে ঢুকেই চমকে উঠলো আনহা। পুরো রুম মোমবাতি দিয়ে ডেকোরেট করা। মোমবাতির আলোয় আলোকিত ঘর। আনহা অনেকটা অবাক হলো কারন এরকম কিছু’র আশা অভ্র’র কাছে কখনো করে নি সে। কিন্তু অভ্র কোথায়?

আনহা অভ্র কে ডাক দিলো কিন্তু কোনো উত্তর পেলো না। আনহা’র আবারও চিন্তা হতে লাগলো তাই সে লাইট জ্বালাতে গেল।লাইটের সুইচ টিটতে যাবে এর আগেই কেউ তার হাত ধরে ফেলল। এই স্পর্শ অচেনা নয়, এটা অভ্র! আনহা যেমন ছিলো তেমনই ‌দাড়িয়ে আছে। অভ্র পেছন থেকে আনহা’র কোমর ধরে ওর ঘাড়ে থিতুনি রাখল। আনহা’র পুরো শরীর কাপতে লাগলো। অভ্র ফিসফিসিয়ে বললো…

– এতো নার্ভাস কেন তুমি! এতোদিন কতো অভিযোগ ছিল এই নিরামিষ বর কে নিয়ে। আজ বলবে না!

আনহা লজ্জায় মাথা নিচু করে নিলো। অভ্র আনহা কে ছেড়ে একটা গিটার নিয়ে গান বাজাতে লাগলো। গান গাইতে শুরু করল….

Mere Paas Ek Dil Tha
Woh Bhi Tumne Chura Liya
Oh Mere Paas Ek Dil Tha
Woh Bhi Tumne Chura Liya

Yeh Marziyon Ka Malik
Kaise Mana Liya
Oh Mere Paas Ek Dil Tha
Woh Bhi Tumne Chura Liya……

গান গাইতে গাইতে আনহা’র সাথে নাচতে লাগলো।‌ অতঃপর গান শেষ হলে অভ্র আনহা’র কোমর জড়িয়ে ধরে। আনহা অভ্র’র গলা জরিয়ে ধরে তাকিয়ে আছে অভ্র’র দিকে। অভ্র মুচকি হেসে বলে…

– এতো কি দেখো আমার মাঝে, ক্লান্ত হয়ে যাও না!

– আপনাকে দেখলে শুধু দেখতেই ইচ্ছে করে।

– কেন?

– কারন আমি ভালোবাসি আপনাকে।

– যদি এই ভালোবাসা কখনো কমে যায়।

– কমতে দেবো আমি। সারাজীবন আপনার হয়ে থাকবো। আমি শুধুই আপনার!

অভ্র মুচকি হেসে আনহা’র গালে হাত রেখে কপালে ভালোবাসার পরশ দিলো। আনহা কে কোলে তুলে নিলো। আনহা অভ্র’র গলা জরিয়ে তাকে দেখতে লাগলো। অভ্র আনহা কে চোখ টিপ দিলো। আনহা লজ্জায় অভ্র’র বুকে মুখ লুকাল। অভ্র ধীরে ধীরে আনহা কে নিয়ে বিছানায় চলে যায়…

❤️
❤️
.
সকালে আনহা ঘুম থেকে উঠে দেখে ‌অভ্র তাকে বুকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে। আনহা এখনো অভ্র কে দেখতে থাকে।‌ আসলেই অভ্র কে দেখতে বেশ ভালো লাগে তার কাছে। আর সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে তার চাপা স্বভাব, কথায় কথায় লজ্জা পাওয়া সবকিছু! এমন একজনকে ‌ভালোবাসার সৌভাগ্য সবার হয় না। আনহা অভ্র’র কপালে একটা ভালোবাসার পরশ দিয়ে উঠে পড়ে ঘুম থেকে। শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে দেখে অভ্র এখনো ঘুমাচ্ছে। আনহা ফাজলামো করে তার চুলের পানি অভ্র’র মুখে ছিটায়। অভ্র পানির ছিটায় ঘুম থেকে উঠে পড়ে। ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে আনহা’র দিকে। আনহা দাঁত চেপে বলে..

– গুড মর্নিং নিরামিষ বর!

অভ্র মুচকি হেসে আনহা কে নিজের কাছে টেনে নেয়। অতঃপর তার নাকে নাক ঘষে বলে..

– গুড মর্নিং আমিষ বউ।

– আর কতো ঘুমাবেন যান ফ্রেশ হয়ে আসেন।

– হুম যাচ্ছি!

#চলবে….
#Game
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_২০

অভ্র আর আনহা ১ সপ্তাহ পর ফিরে এলো। মেহেরিন বাকি সবাই অভ্র আর আনহা কে দেখে খুব খুশি হয়!
মেহেরিন কে পরেদিন থেকে আবার কলেজে পাঠানো হয়। সবকিছু মোটামুটি ঠিকঠাকই চলে। এভাবে কেটে যায় ৩ মাস। এই ৩ মাসে নিশান নিশি’র সাথে বন্ধুত্ব করতে সক্ষম হয়। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে অবশেষে বন্ধুত্ব হয় তাদের। এদিকে নিহা আর আহিয়ান ভালোবাসা আরো বেড়ে যায় তবে নিহা এখনো বাড়ির কাউকে আহিয়ান’র সম্পর্কে এখনো কিছু বলে নি তাহলে।

নীল আর নীলাশা’র ঝগড়া আরো বাড়তে থাকে। সেদিন তো নীলাশা রেগে নীলের মুখে পানি ছুড়ে মারে। নীল রেগে তখন ভার্সিটি থেকে বের হয়ে যায়। অতঃপর নীলাশা ভার্সিটি থেকে বের হলে নীল নীলাশা’র পাশ দিয়ে গাড়ি নিয়ে যাবার সময় ইচ্ছে করে নীলাশা’র দিকে কাঁদা ছুঁড়ে মারে। নীলাশা রাগে গজগজ করতে থাকে আর নীল নীলাশা’কে দেখে হাসতে হাসতে চলে যায়।
সবার এমন খুঁটিনাটি ভালোবাসার মাঝে অভ্র আর আনহা’র সম্পর্কও ভালোভাবে যেতে থাকে।
.
আজকে সকাল থেকেই আনহা’র শরীর টা ভালো না। আজ অফ ডে বলে তারা দুজনেই বাসায়। আনহা’র শরীর তেমন ভালো লাগছিলো না বলে রান্না ঘরে এসে একটু কাজ করতে লাগলো। ভাবল হয়তো ভালো লাগবে। তখন নীলও আসে রান্না ঘরে।‌ আনহা নীল কে দেখে হেসে বলে..

– দেবরজী যে কিছু লাগবে!

– হুম মিষ্টি ভাবী, একটু কফি খাবো।

– তুমি বসো আমি বানিয়ে দিচ্ছি।

– মিষ্টি ভাবী আমি বানিয়ে নিতে পারবো!

– আরে তুমি বসো না আমি আনছি।

– আচ্ছা!

অতঃপর নীল এসে সোফায় বসে টিভি দেখতে থাকে। আনহা কফি বানিয়ে নিয়ে আসলে নীল মুচকি হেসে ‌আনহা’র হাত থেকে কফি নিতে যায় তখন হুট করেই আনহা’র মাথা ঘুরে যায়। নীল তাড়াতাড়ি করে আনহা ধরে বসিয়ে অভ্র আর নিহা কে ডাকতে থাকে। অভ্র আর নিহা সাথে বাকি সবাই দৌড়ে আসে। আনহা’র এমন অবস্থা শুনে অভ্র ডেভিল কে বলে ডাক্তার ডাকতে।

ডাক্তার এসে আনহা কে চেকআপ করে জানায় আনহা প্রেগন্যান্ট! পুরো খান বাড়িতে উৎসব লেগে যায়। সবচেয়ে বেশি খুশি তো মেহেরিন! ওর যেনো একটা সঙ্গি আসতে চলেছে। অভ্র পরদিন থেকেই আনহা’র অফিস যাওয়া বন্ধ করে। তাকে সবসময় বাড়িতেই থাকতে বলে। নিহা, নীল, রোদ্দুর, ইহান সবাই অনেক খুশি। প্রায় অনেক দিন পর খান বাড়িতে এরকম একটা খুশির এলো।
তবে এই হাসি খুশি মুখ বেশি দিন থাকলো না। তখন আনহা’র ৩ মাস চলে। এই কয়দিন ধরেই বাগানে ফুল গাছের পরিচর্যা করছে সে। অভ্র এখন আনহা কে অনেক সময় দিচ্ছে। সবকিছুই ঠিকঠাক ছিলো কিন্তু নিহা’র মন আজকাল বেশি ভালো থাকে না কারন আজ কয়েকদিন ধরেই আহিয়ান তাকে ইগনোর করছে। সময় দিচ্ছে না তাকে। সারাদিনে একবারও ফোন দেয় তাকে। নিহা আহিয়ান’র এমন আচরণ সহ্য করতে পারছে না। হঠাৎ একদিন আহিয়ান ফোন করলো। নিহা খুশিতে আত্নহারা হয়ে গেল। দেরি করা করে তাড়াতাড়ি করে ফোন তুলল নিহা!

– হ্যালো আহিয়ান!

– কেমন আছো ভূতনি!

– আলহামদুলিল্লাহ! তবে আপনার জন্য মন খারাপ লাগছিলো।

– কেন?

– আপনি তো আমার কোনো খোঁজ খবর’ই নেন না ইদানিং!

– আসলে একটা কাজ নিয়ে খুব ব্যস্ত ছিলাম।

– সেটা কি আমার থেকেও ইম্পর্ট্যান্টে!

– না ভূতনি তোমার থেকে ইম্পর্ট্যান্টে আর কিছু না। আচ্ছা শোন কাল তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।

– সত্যি!

– হুম কাল সন্ধ্যায় ‌তুমি আমার বাসায় আসবে।

– আপনার বাসায় কেন?

– এলেই দেখতে পাবে। তবে এসো কিন্তু!

– হুম আসবো।

– অপেক্ষায় থাকবো!

নিহা মুখের হাসি রেখা বেড়ে গেলো। সে ভাবল কালকেই আহিয়ান কে সে ভালোবাসি বলবে। এখনো এই কথা বলেনি সে আহিয়ান কে। কাল’ই বলে দেবে।
.
সন্ধ্যায় নিহা একটা পিংক কালারের টপস্ আর জিন্স পড়ে তৈরি হলো আহিয়ান’র বাসায় যাবার জন্য! মুখের কোথাও সাজগোজের একটু ছোঁয়া নেই তার। চুল গুলো মাঝে সিঁথি করে নিল। ব্যস এতেই অনেক সুন্দর লাগছে তাকে। নিহা গাড়ি নিয়ে ধামল আহিয়ান’র বাসার সামনে। দেখল পুরো বাড়ি সাজানো! নিহা ভাবল হয়তো বাড়িতে কোনো অনুষ্ঠান আছে কিন্তু আহিয়ান তাকে এইসময় কেন ডাকলো বাড়িতে। নিহা কিছুই বুঝতে পারলো না। সে বাড়িতে প্রবেশ করল।

বাড়িতে প্রবেশ করে দেখল বাড়ির ভেতর দিকটাও অনেক সুন্দর করে সাজানো।নিহা’র চোখে আহিয়ান কে পড়ল। কালো স্যুট পড়ে দাঁড়িয়ে ছিল একপাশে। নিহা আহিয়ান কে ডাক দিলো। আহিয়ান নিহা কে দেখে তার কাছে আসল।‌ নিহা বলল..

– বাড়িতে কোনো অনুষ্ঠান আছে আহিয়ান!

– হুম দেখতেই তো পারছো।

– তাহলে তুমি আজ কেন ডাকলে আমায়।আর কিসের অনুষ্ঠান এখানে!

– আসলে নিহা…

নিহা’র অনেকটা অবাক লাগলো কারন আহিয়ান কখনো ওর নাম ধরে ডাকে না।‌আহিয়ান এবার বলতে যাবে তখন একটা মেয়ে ডাক দিলো…

– আহি বেবী!

নিহা অবাক হয়ে আহিয়ান’র দিকে তাকাল। অতঃপর মেয়েটার দিকে তাকাল একটা কালো রঙের গ্রাউন পড়া মেয়েটা! আহিয়ান মুচকি হেসে বলল..

– ইয়াপ বেবী!
বলেই মেয়েটার হাত ধরে নিহা’র সামনে আনলো। নিহা মুখে হাসি নিয়েই আহিয়ান কে জিজ্ঞেস করল..

– এ কে আহিয়ান?

মেয়েটা বলে উঠলো..
– আহি বেবী এনি কে?

আহিয়ান হেসে বলল..
– নিহা মিট নিতি মাই ফিয়ান্সে! উড বি ওয়াফ ও বলতে পারো।

আহিয়ান’র কথা শুনে নিহা’র পায়ের থেকে মাটি সরে গেল। সে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে আহিয়ান’র দিকে। নিহা কাঁপা কাঁপা গলায় বলে…
– তোমার ফিয়ান্সে!

– হুম আমার ফিয়ান্সে। ইনফেক্ট আজ আমাদের এনগেজমেন্ট!

নিহা আহিয়ান’র দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিলো। আহিয়ান নিতি কে বললো!

– বেবী মিট মাই ফ্রেন্ড নিহা!

নিতি বলে উঠে..
– হ্যালো! আমি নিতি! আহি’র ফিয়ান্সে , আজ ফাইনালি এনগেজমেন্ট! জানো গত ১ বছর ধরে শুধু এই দিনটার অপেক্ষা করছিলাম। ছোট থেকেই ভালোবাসতাম ওকে। বিশ্বাস’ই হচ্ছে না এতোদিন পর আমার ভালোবাসা পূর্ণতা পাবে!

– ইয়াপ বেবী! নিহা কনগ্রেচুলেশন করবে না!

নিহা হাত বাড়িয়ে নিতি কে কনগ্রেচুলেশন করে। নিতি বলে উঠে..
– তোমাকে না চেনা চেনা লাগছে। আচ্ছা তোমার পুরো নাম কি?

– নিহারিকা নিহা খান!

– ও মাই গুডনেস! নিহা খান তুমি, মানে অধরা খানের মেয়ে!

– হুম!

– জানো তোমাকে দেখার কোনো ইচ্ছে ছিল আমার। অবশেষে দেখা হলো তোমার সাথে। একটা সেলফি প্লিজ।

– হুম কেন না।

অতঃপর নিতি নিহা’র সাথে সেলফি তুলল। নিতি বলে..

– তুমি না অনেক সুন্দর!

– ধন্যবাদ, তুমিও অনেক সুন্দর!

আহিয়ান বলে..
– বেবী মা ডাকছে তোমাকে!

– আচ্ছা আমি আসছি!
বলেই চলে গেলো নিতি। আহি আর নিহা এখন মুখোমুখি! নিহা আহিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল…

– এজন্য আসতে বলেছিলেন আমায়!

– হুম সারপ্রাইজ! কেন ভালো লাগেনি।

– কেন করলেন এসব!

– জানতে চাও!
নিহা কৌতুহল বসত আহিয়ানের দিকে তাকাল।‌ আহিয়ান মুখ একটা ছবির দিকে ঘুরাল। নিহা ও তাকাল ছবিটার দিকে। ছবিতে আহিয়ান আর একটা ছেলে। নিহা‌ চরম অবাক হলো ছবি টা দেখে। সে বলে ওঠে…

– আহনাফ!

– অবশেষে চিনতে পারলে।

– আহনাফ আপনার সাথে!

– আহনাফ চৌধুরী! আমার ছোট ভাই! আহিয়ান চৌধুরীর ছোট ভাই আহনাফ চৌধুরী!

নিহা আহিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। আহিয়ান একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে হেসে বলল..

– চিনতে পারছো আমার ভাইকে।‌ আজ থেকে ১ বছর তোমার জন্য মারা গিয়েছিল সে।

– আহিয়ান ও তো সুইসাইড করেছে।

– কার জন্য করেছে বলো কার জন্যে! তোমার জন্যে। তুমি মেরেছো আমাকে ভাইকে।

– আহিয়ান!

– তোমার জন্য মারা গেছে আমার ভাই শুধু মাত্র তোমার জন্য। আমার ভাইয়ের মৃত্যুর আগে চিঠি পড়েছিলাম আমি। সেখানে শুধু তোমার নাম লেখা ছিল। নিহারিকা নিহা খান!

– আপনার ভাই সুইসাইড করেছে আহিয়ান। এতে আমার দোষ কোথায়? আমি তো মারে নি তাকে।

– তোমার জন্য তো মরেছে। কি বলেছিলো আমার ভাই তোমায়। সে তোমাকে ভালোবাসে শুধু এটাই তো। আর তুমি…
আহিয়ান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে..
– তোমার জন্য তার ভালোবাসার কোনো মূল্যে ছিল না।‌ আমার একমাত্র ছোট আদরের ভাই ছিল ও। আমি জানতাম তোমার নামে কেস করে লাভ হবে না কারন তুমি নিহা খান! তাই তোমার সাথেও তাই করলাম যা তুমি আমার ভাইয়ের সাথে করলে। এখন তিলে তিলে শেষ হবে তুমি। যা কষ্ট আমার ভাই পেয়েছে সেটা তুমি ও পাবে।

নিহা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল আহিয়ানের দিকে। অতঃপর একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল..

– শোধ নিচ্ছেন তাহলে!

– হ্যাঁ বলতে পারো!

নিহা হেসে বলে…
– আপনি ভাবতেও পারছেন না আহিয়ান এর ফল কি হবে!

– তুমি বুঝতে পারছো না এরপর কি হবে!
বলেই নিহা’র‌ হাতে একটা কার্ড দিলো।‌বলল..

– ১০ দিন বিয়ে এসো কিন্তু!

– অবশ্যই আসবো। আপনার প্রতিশোধের ঋণ বাকি এখনো। দেখবেন এরপর আমি কি করি।

– অপেক্ষায় থাকবো দেখার জন্য। আচ্ছা এখন এনগেজমেন্ট হবে। তোমার জন্য’ই ওয়েট করছিলাম। তুমি যখন এসেছো তাহলে এনগেজমেন্ট টা করেই ফেলি।
বলেই আহিয়ান চলে যেতে নিলো। নিহা পেছন থেকে বলল..

– বেস্ট অফ লাক আহিয়ান। আশা করি আপনার আর আপনার নিতি বেবী’র বৈবাহিক জীবন সুখের হোক।

আহিয়ান পিছনে ফিরে মুচকি হেসে বলল…
– ধন্যবাদ!
অতঃপর আহিয়ান আর নিতি আন্টি বদল করল।‌আহিয়ান নিহা কে দেখিয়ে দেখিয়ে ‌নিতি’র হাতে কিস করল। সবাই হাততালি দিল। নিহা মুচকি হেসে বের হয়ে গেল।‌গাড়ি’র‌ কাছে এসে সজোরে একটা লাথি মারল গাড়িতে। রাগে তার পুরো শরীর কাঁপছে, রাগে গজগজ করতে করতে বাসায় আসল নিহা। বাড়িতে এসেই ‌সোজা নিজের রুমে ঢুকে গেল নিহা। মেহেরিন ওরা সবাই বসার ঘরে ছিল। মেহেরিন অনেকটা অবাক হলো কারন আজ পর্যন্ত এমন হয় নি। নিহা আর বাড়ির যেই হোক বাড়িতে এসে সবার আগে মেহেরিন’কেই ডাকে। এমন কোনো দিন নেই যে নিহা বাড়িতে এসে মেহেরিন’র কপালে চুমু না খেয়ে ঘরে যায় নি।

মেহেরিন বসা থেকে উঠে দাঁড়াল, নিহা’র ঘর থেকে জিনিসপত্র ভাঙচুর করার শব্দ আসছে। সবাই দৌড়ে নিহা’র ঘরের দিকে গেল। মেহেরিন দরজার সামনে দাঁড়ানো। নিহা পেছনে ঘুরে আছে। ভাঙ্গা জিনিসপত্র ঘরের চারদিকে পড়ে আছে। মেহেরিন পেছন থেকে বলে উঠে…

– দি!

মেহেরিন’র কথা শুনে নিহা রাগ কমানোর চেষ্টা করে। অতঃপর সামনে ঘুরে হেসে বলে..

– আদুরী!

ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে…
– কি হয়েছে দি!

– সাবধানে কাঁচ আছে।

নিহা’র দিকে তাকিয়ে…
– তোমার কি হয়েছে?

– কি..ছু কিছু না!

মেহেরিন পিছনে তাকাল। সবাই চলে গেলো, মেহেরিন নিহা’র গালে হাত রেখে বললো…
– কি হয়েছে?

নিহা মেহেরিন’র হাত ধরে চুমু খেয়ে তাকিয়ে আছে মেহেরিন’র দিকে। মেহেরিন খেয়াল করলো নিহা’র চোখের কোনে পানি জমছে। সে দেরি না নিহা’র হাতে একটা ইনজেকশন পুশ করল। নিহা সাথে সাথে অজ্ঞান হয়ে বিছানায় লুটিয়ে পড়ল। মেহেরিন নিহা’র দিকে তাকিয়ে বলল…

– খান বাড়ির কারো কাঁদার অনুমতি নেই!

বলেই বেরিয়ে আসল। সবাই ঘরের মধ্যে ঢুকে নিহা কে দেখতে লাগলো। মেহেরিন নিজের রুমে বসে ভাবছে কি এমন হয়েছে দি এর সাথে। কার জন্য কাঁদতে যাচ্ছিল দি। হঠাৎ কেউ দরজা নক করে। মেহেরিন তাকিয়ে দেখে ডেভিল!

– ডেভিল আসো!

– ডেকেছিলেন আমায়!

মেহেরিন উঠে ডেভিলের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল..
– আমাকে গত ৬ মাসে দি এর ডিটেল দাও। গত ৬ মাস কার সাথে ছিল দি, কি করছিল, কার সাথে কথা বলছিলো সব।

– ম্যাম!

– ২ ঘন্টা! শুধু ২ ঘন্টা দিলাম তোমায়। সে কে? কোথায় থাকে? কি করে? এভরিথিং, সবকিছু চাই আমার এই ২ ঘন্টায়।

– ওকে ম্যাম!

– নাও গো!

ডেভিল বেরিয়ে যায় রুম থেকে। মেহেরিন ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকে।
.
২ ঘন্টা পর…

মেহেরিন রান্না ঘরে কফি বানাচ্ছিল। তখন ডেভিল এলো…

– ম্যাম!

– নাম কি?

– আহিয়ান চৌধুরী!

– আসল ঘটনা কি?

– ম্যাম ১ বছর আগে তার ছোট ভাই আহনাফ চৌধুরী নিহা ম্যাম এর সুইসাইড করেছিল। আর আহিয়ান তার প্রতিশোধ নিতে ম্যাম কে ধোঁকা দিয়েছে!

মেহেরিন ডেভিলেল দিকে তাকাল। ডেভিল বলল..
– ১০ দিন আহিয়ান চৌধুরীর বিয়ে। আর এই কথা শুনে ম্যাম….

– অফিসিয়াল কোনো সম্পর্ক!

– গত ৬ মাস ধরে উনার বাবা কবীর চৌধুরী আমাদের কোম্পানির সাথে ডিল করতে চাইছে কিন্তু এখন অবদি পারে নি।

– দা কে বলে দাও আমি কাল অফিস যাচ্ছি। আর প্রথম মিটিং টা চৌধুরী’দের সাথেই করবো।

– ওকে ম্যাম। নিহা ম্যাম কেমন আছে?

হুট করেই নিশি এসে বলল দি’র জ্ঞান ফিরেছে। মেহেরিন আসছি বলে দু’কাপ কফি নিয়ে চলে গেলো। যাবার আগে ডেভিল কে বলল..

– দি এখন ঠিক আছে!

মেহেরিন নিহা’র ঘরে গেলো। মেহেরিন কে দেখে সবাই বের হয়ে গেল। মেহেরিন কফি নিয়ে নিহা’র কাছে গেলো।

– দি!

– আদুরী! জান আমার!
বলেই মেহেরিন’র‌ কপালে চুমু খেল।‌ মেহেরিন এক কাপ কফি নিহা’র দিকে এগিয়ে দিলো।

– আমি নিজে বানিয়েছি!

– সত্যি নাকি!

– হুম খেয়ে বলো কেমন হয়েছে?

নিহা এক চুমুক দিয়ে বলল…
– দারুন হয়েছে!

মেহেরিন জবাবে মুচকি হাসল। নিহা কফি টা রেখে মেহেরিন’র কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ল। মেহেরিন নিহা’র মাথায় হাত রেখে বলল…

– এখন কেমন লাগছে!

– হুম ভালো।
বলেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। অতঃপর বলল…
– আমি জানি তুই জানিস।

– কি তুমি চাও!

– উনাকে! এনে দিবি।

মেহেরিন নিহা’র কপালে চুমু খেয়ে বলল…
– কথা দিলাম ১০ দিন পর তোমার উনি আমার জিজু হবে। বিয়ের জন্য তৈরি হও তুমি!

নিহা মেহেরিন দিকে ‌একটা স্বস্তির হাসি দিলো!

#চলবে….

[ ৯ টা বাজে আরেকটা পর্ব দেবো। ধন্যবাদ সবাইকে! ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here