#রৌদ্রর_শহরে_রুদ্রাণী
#পর্বঃ২০
#Saiyara_Hossain_Kayanat
“চিঠির মানুষটা আর কেউ নয় ডক্টর রৌদ্র।”
আরশির কথা শুনে কাসফিয়া চমকে উঠলো। সোজা হয়ে বসে বিস্ময়ের সাথে বললো-
“আশু তুই সত্যি বলছিস??”
আরশি দ্রুত মাথা ঝাকিয়ে হ্যাঁ জানালো। কাসফিয়া অতিমাত্রায় অবাক হয়ে বলল-
“কিইইইইই… কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব?? আর তুই জানলি কি করে??”
আরশি আজকের পুরো ঘটনা কাসফিয়াকে বিস্তারিত বলে দিল। আরশির কথা গুলো শেষ হতেই কাসফিয়া কপাল কুচকে বিজ্ঞ মানুষের মতো বলল-
“ওহহ তাহলে এই ব্যাপার।”
আরশি কাসফিয়ার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে কটক্ষো গলায় বলল-
“তুই না ওইদিন বলেছিলি উনি আমার মনের ভুল। আমার হ্যালুসিনেশন হচ্ছে। এখন কি বলবি তুই!!”
কাসফিয়া একটা বোকা হাসি দিয়ে সন্দিহান কন্ঠে বলল-
“আমি কি জানতাম না-কি এতো রহস্য লুকিয়ে আছে এইসব চিঠির মধ্যে। আচ্ছা সবই তো বুঝলাম কিন্তু উনি যে তোকে জড়িয়ে ধরেছিলেন তখন তুই কিছু বলিসনি কেন?? বাই এনি চান্স তুই কি ওনাকে পছন্দ করিস??”
কাসফিয়ার মুখে এমন কথা শুনে আরশি ভড়কে উঠলো। অপ্রস্তুত হয়ে বলল-
“এসব কি আজে বাজে কথা বলছিস তুই!!”
কাসফিয়া কিছুক্ষন আরশির দিকে তাকিয়ে থেকে শান্ত গলায় বললো-
“যাক ভালোই হলো চিঠির মানুষটা অন্য কেউ না বরং রৌদ্র ভাই।”
“ভালোর কি আছে এখানে?”
“ভালো বলছি কারন এতদিন তোর এই চিঠির মানুষটা নিয়ে একটু চিন্তায় ছিলাম। মানুষটা ভালো নাকি খারাপ এইসবই ভাবতাম কিন্তু এখন চিন্তামুক্ত হলাম।”
আরশি চোখ ছোট ছোট করে কাসফিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল-
“ওনাকে কি তোর ভালো মানুষ মনে হচ্ছে!!!! উনি তো আস্তো একটা অসভ্য লোক। সব সময় আমার সাথে কেমন ভাব নিয়ে কথা বলে দেখেছিস!! আজ পর্যন্ত মুখে একটু হাসি দেখেছি বলে আমার মনে পরে না। ওনার সাথে দুটো নাম বেশ মানায়। জানিস কি কি নাম!!”
কাসফিয়া ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো-
“কি নাম??”
আরশি বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে গম্ভীরমুখে বলল-
“এ্যাংরি বার্ড আর অসভ্য ডাক্তার এই নাম দুটোর সাথে ওনার ভয়ংকর রকমের মিল আছে।”
আরশি নাম গুলো বলেই দরজার দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। আরশির কথা শুনে কাসফিয়া উচ্চস্বরে হাসে উঠলো। হাসতে হাসতেই বলল-
“নাম গুলো অসাধারণ তবে আমি একটা জিনিস সব সময় খেয়াল করেছি। তোর এই অসভ্য ডাক্তার তোকে একটু বেশিই কেয়ার করে।”
আরশি দরজা কাছে এসেই থমকে দাঁড়িয়ে গেল। পেছন ফিরে রাগান্বিত চোখে কাসফিয়ার দিকে তাকিয়ে আঙুল তুলে হুমকির স্বরে বললো-
“এক হাত ভাঙা আছে আরেকটা ভাঙতে না চাইলে এইসব সব ফালতু কথা বলা বন্ধ কর।”
আরশি কথা গুলো বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেল। কিন্তু কাসফিয়ার ঝংকার তোলা হাসির শব্দ এখনো আরশির কানে এসে বারি খাচ্ছে। আরশি বিরক্ত হয়ে দ্রুত পায়ে নিজের রুমে চলে আসলো।
————————
রাত প্রায় ন’টায় আরশি ডিনার করে বারান্দায় আসলো। বারান্দায় এসে মেঝেতে নীল চিরকুট দেখেই ভ্রু কুচকে এলো তার। কৌতুহল নিয়েই চিরকুটটা হাতে নিয়ে মনে মনে বলল- “এখন তো সব জেনেই গেছি তবুও কেন চিঠি দিয়েছেন উনি!! কিছুর বলার ইচ্ছে হলে তো সরাসরিই বলতে পারেন।” আরশি চিরকুটটা খুলে দেখলো।
[প্রিয় রুদ্রাণী,
জানি চিঠি দেখে অবাক হবেন তাই বলে রাখছি চিঠির আদান-প্রদান আগের মতোই চলতে থাকবে। চিঠির মধ্যে আলাদা এক অনুভূতি আছে। এই যান্ত্রিক পৃথিবীতে চিঠির মাধ্যমে কথা বলাটাই আমার কাছে বেটার মনে হচ্ছে। কিছু কিছু কথা যেগুলো চিঠিতে পড়ে অনুভব করা যায় তা হয়তো মুখে বললেও অনুভব করা যায় না। নিজের অনুভূতি প্রকাশের সব থেকে সুন্দর একটা মাধ্যম চিঠি। কারন মানুষ যখন চিঠি লিখে তখন তার মন মস্তিষ্কের সকল অনুভূতি ঘিরে থাকে শুধু সেই মানুষটা যার কাছে সে চিঠি লিখছে। আর একটা মানুষ শুধু তার কথা ভেবেই চিঠি পড়ে যার কাছ থেকে সে চিঠি পেয়েছে। চিঠি মানে শুধু একটা রঙিন কাগজের টুকরো নয়, চিঠি হলো সুপ্ত অনুভূতির এক গভীর সাগর। সে সাগরের একটু কাছে আসলেই অনুভূতির অতল গহ্বরে মানুষ তলিয়ে যায়। যেমনটা এই মুহূর্তে আপনি গভীর ভাবে আমার ভাবনায় ডুবে আছেন। আমি একদম সিউর হয়ে বলছি এই মুহূর্তে আপনার পুরো ভাবনার জগৎ জুড়ে শুধু আমিই আছি।]
আরশি চিঠির এই লাইন গুলো পড়েই হকচকিয়ে উঠলো। পুরো চিঠি না পড়েই চিঠি নামিয়ে অস্থির হয়ে পাশের বারান্দায় তাকিয়ে তাড়াতাড়ি করে রুমে চলে আসলো। বিছানায় বসে বড়বড় কয়টা শ্বাস নিয়ে আবারও চিঠির দিকে নজর দিল।
[হাহা আমি জানি আপনি এখন কিছুক্ষণের জন্য চিঠি পড়া থামিয়ে দিবেন। কিছু কি অনুভব করতে পেরেছেন না-কি রুদ্রাণী!! থাক অস্থির হয়ে পরবেন না।
আচ্ছা যাইহোক পাখির নামটা তো এখনো ঠিক করলেন না!! পাখিটা তো বিনা নামেই আছে এখনো। ইশশ বেচারা পাখিটা কি নামে পরিচয় দিবে তার সঙ্গীনিকে বলুন তো!! জলদি একটা নাম দিয়ে তাদের পরিচয় করাতে সাহায্য করুন। আপনার চিঠির অপেক্ষায় থাকবো।
বিঃদ্রঃ কাল সকালে নিচে রাস্তায় অপেক্ষা করবো আপনার জন্য। একা একা না গিয়ে আমার সাথেই ভার্সিটিতে যাবেন আপনি।
ইতি,
রৌদ্র]
আরশি আজ রৌদ্রর চিঠি পড়ে থ মেরে বসে আছে। আজকের চিঠি তার কাছে একদমই ভিন্ন মনে হচ্ছে। আরশির বুক ধুকপুক করছে। মনে হচ্ছে তার পাজর ভেঙে এখনই হার্ট বেরিয়ে এসে পরবে। আরশি বুকে হাত দিয়ে ভয়ে উত্তেজিত হয়ে বলতে লাগলো-
“আল্লাহ এই লোক এতো কিছু জানে কিভাবে?? উনি কি আমার উপর নজর রাখছে না-কি?? এতো নিশ্চিত হয়ে কিভাবে চিঠি লিখেছেন উনি?? হঠাৎ করেই চিঠি লেখার ধরন পালটে গেল কিভাবে? উফফফ আমি মনে হচ্ছে এইসব ভাবতে ভাবতেই পাগল হয়ে যাবো।”
আরশি কথা গুলো বলেই ধপাস করে বিছানায় শুয়ে পরলো। চিঠিটা পাশে রেখেই একটা বালিশে মুখ গুজে দিল।
—————————
সকালে ঘুম থেকে উঠে আরশি পাশে রৌদ্রর চিঠি দেখে ভ্রু জোড়া কুচকে ফেললো। বিছানা থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে এসেই একটা লাল কাগজে চিঠি লিখে ফেললো। টেবিলের উপর চিঠি রেখে দিয়ে কাসফিয়ার কাছে গেল।
“আশু আজ কি তুই ভার্সিটিতে যাবি?? যদি যাস তাহলে বল আমি আদ্রাফকে ফোন করে বলি তোকে নিয়ে যেতে।”
আরশি ডাইনিং টেবিলের কাছে এসে একটা চেয়ার টেনে বসে বলল-
“বুঝতে পারছি না যাবো কি না!! কাল রাতে উনি চিঠিতে লিখে দিয়েছেন উনি না-কি নিচে রাস্তায় আমার জন্য অপেক্ষা করবেন। ওনার সাথে ভার্সিটিতে যেতে বলেছেন। আমি কি করবো এখন কাসফি??”
আরশির কথা কাসফিয়া সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল-
“কি করবি সেটা না হয় পরে বললাম। আগে তুই বল উনি উনি করে কার কথা বলছিস?? মানুষটার নাম কি??”
আরশি ভড়ে গিয়ে ধমক দিয়ে বলল-
“তুই ভালো করেই জানিস আমি কার কথা বলছি।”
কাসফিয়া একটা দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল-
“তা তো জানি কিন্তু একদিনেই উনি বানিয়ে ফেললি কীভাবে সেটাই তো জানি না।”
“কাসফিইইইইইইই….”
আরশি চেচিয়ে উঠতেই কাসফিয়ে হাসি থামিয়ে দিয়ে বলল-
“আরে রেগে যাচ্ছিস কেন?? আচ্ছা আয় নাস্তা কর। দেরি হয়ে গেলে রৌদ্র ভাই অপেক্ষা করবে তো।”
আরশি সরু চোখে কাসফিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল-
“ওনার প্রতি তোর এত বিশ্বাস হলো কিভাবে যে আমাকে ওনার সাথে নির্দ্বিধায় যেতে বলছিস!!”
কাসফিয়া শান্ত গলায় বললো-
“কিছু কিছু মানুষের সাথে অল্প সময় কাটালেই আপনা আপনি বিশ্বাস চলে আসে। লোকটা উপরে দিয়ে গম্ভীর হলেও কেন যেন মনে হচ্ছে উনি ভিতর দিয়ে একদমই তার উল্টো। আর তুই তো নিজেই কাল ওনার সাথে একা সময় কাটিয়ে আসলি। আমি জানি তুইও ওনাকে ভরসা করিস।”
আরশি বিরক্ত হয়ে বলল-
“হইসে বইন থাম এখন। জীবনে কখনো আমার এতটা প্রশংসা করেছিস বলে মনে হয় না। চুপচাপ নাস্তা কর।”
—————————
আরশি ভার্সিটি যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে টেবিলের উপর থেকে চিঠিটা নিয়ে বারান্দায় চলে গেল। পাখি গুলোর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চিঠিটা রৌদ্রর বারান্দায় ছুড়ে মারলো। রুমে এসে সাইড ব্যাগ কাধে নিয়ে বেরিয়ে গেল রুম থেকে। কাসফিয়াকে বলেই ভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেল। নিচে এসে রৌদ্রকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আরশি থমকে গেল। গোলগোল চোখে আরশি তাকিয়ে আছে রৌদ্রর দিকে।
চলবে….