#গল্পের_নাম_প্রেমের_শুরু
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ১৯
অনেকদিন পর হেমন্তির সুমধুর সকাল হলো ইলহামের বাহুডরে হেমন্তি ইলহামের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে উঠে পরলো বিছানা থেকে।শাড়ির আঁচল ঠিক করে নিয়ে সোজা চলে গেলো ওয়াশরুমে শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে দেখলো ইলহাম ঘুমে বিভোর তাকে ডিস্টার্ব না করে হেমন্তির আসতে করে রুম থেকে বের হয়ে রান্নাঘরে চলে গেলো সকালের নাস্তা সেই বানাবে কিন্তু রান্নাঘরে গিয়ে তার চোখছানাবড়া কেয়া পরোটা বেলছে তা দেখে হেমন্তি চোখ বড় বড় করে কেয়ার পাশে দাড়িয়ে বললো,
~তুই এতো সকালে উঠে পরেছিস?
কেয়া ভ্রুকুচকে বললো,
~কেন সকালে কী শুধু তোমরাই উঠতে পারো আমার উঠা কী নিষেধ?
হেমন্তি আলু ভাজি নাড়া দিতে দিতে বললো,
~বিয়ের পর ভালোই ট্রেনিং হয়ে গেছে।
কেয়া পরোটা তাওয়ায় দিয়ে বললো,
~জানো তো আপু মেয়েদের জীবন অদ্ভুত যতোই গুছাতে চাও ততোই এলোমেলো হয়ে যায়।
হেমন্তি কেয়ার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বললো,
~কী হয়েছে তোর?
কেয়া চোখের পানি লুকিয়ে বললো,
~কী হবে এখন তো তোমার হওয়ার কথা।
কেয়ার কথা শুনে হেমন্তি বললো,
~লজ্জা সরমের মাথা খেয়েছিস?
কেয়া বললো,
~ওরে বাবাহ তোমার জামাই যে হাত ধরে ঘরে নিয়ে যায় তা কী চোখে পরে না?
হেমন্তি কোমড়ে হাত দিয়ে বললো,
~সে তো অসভ্য হয়ে গেছে তাই বলে তুইও শুরু করবি?
হেমন্তির কথা শেষ হতেই পিছন থেকে কেউ বলে উঠলো,
~আমি হয়েছি তোমার কারণে তুমি এতোটা সুন্দর না হলে কী আমি অসভ্যতামি করতাম?
হেমন্তি পিছন ফিরে দেখলো ইলহাম দাড়িয়ে আছে বুকে হাত গুজে দেওয়ালের সাথে হেলান দিয়ে।ইলহামের কথা শুনে কেয়া হো হো করে হেসে উঠলো আর বললো,
~এটা একদম খাঁটি কথা দুলাভাই।
হেমন্তির রাগে আর লজ্জায় কান লাল হয়ে যাচ্ছে ইলহাম বললো,
~এখনো দেখো তোমায় লজ্জায় কতো সুন্দর লাগছে।
হেমন্তি ইলহামের দিকে কটমট করে তাকিয়ে বললো,
~সকাল সকাল উঠে বসে আছেন কেন?
ইলহাম হেমন্তির পাশ কেটে কেয়ার সাথে দাড়িয়ে বললো,
~শালী সাহেবার কথা মনে পরছিল তাই ঘুম রেখে চলে আসলাম।
কেয়া বললো,
~দেখেছো আপু দুলাভাই আমাকে কতো ভালোবাসে।
হেমন্তি মুখ ভেংচি কেটে বললো,
~জানি তোদের ভালোবাসা ঢং দেখলে শরীর জ্বলে।
ইলহাম দুষ্ট হেসে বললো,
~তাহলে আরেকবার শাওয়ার নিয়ে আসো শরীর ঠান্ডা হয়ে যাবে।
ইলহামের কথায় কেয়া হেসে লুটিয়ে পরছে হেমন্তি একবার কেয়ার দিকে তাকিয়ে চামচ হাত থেকে ফেলে দিয়ে বললো,
~তোর কাজ তুই একাই কর আমার কোনো দরকার নেই।
বলেই সে গটগট করে রান্নাঘরে থেকে বের হয়ে গেলো কেয়া বললো,
~এই রে দুলাভাই আপু কিন্তু রেগে গেছে।
ইলহাম মাথা চুলকে বললো,
~একটু বেশিই হয়ে গেছে।
তখনই তানভীরের ডাক কেয়া শুনতে পায় তাই কেয়া ইলহামকে বললো,
~আমি যাই দুলাভাই ওনাট হয়তো কিছু লাগবে।
কেয়ার কথায় ইলহাম মুচকি হাসে কেয়া চলে যেতেই ইলহাম বললো,
~বউকে মানাতে এখন কতো কাঠখর পুড়াতে হবে কে জানে?
বলেই সে রুমের দিকে ছুটলো রুমে গিয়ে দেখলো হেমন্তি নেই ইলহাম একটু অবাক হলো ইলহাম বাহিরে এসে দেখলো বাসার দরজা খোলা।ইলহাম বুঝতে পারলো হেমন্তি ছাদে গিয়েছে সে আর এক মুর্হুত দেরি না করে সিড়ি বেয়ে ছাদে চলে গেলো।
___♥____
হেমন্তি ছাদে দাড়িয়ে আছে গাল ফুলিয়ে আর বলছে,
~আজ সারাদিনেও তার কাছে যাবোনা তখনই বুঝতে পারবে আমার কদর অনেক মজা নিচ্ছিলো আমার উপর।
ইলহাম ছাদে গিয়ে দেখলো হেমন্তি রেলিং ঘেষে দাড়িয়ে আছে বাতাসে তাট শাড়ির আচল উড়ছে।হেমন্তিকে দেখতে এখন অনেকটাই উপন্যাসের রমণীর মতো লাগছে যে এখন সদ্য যৌবনে পা দিয়েছে।যার উপর পুরো উপন্যাস লেখে ফেললেও অনেক কিছু বাকি রয়ে যাবে।ইলহাম ধীরপায়ে এগিয়ে হেমন্তিকে পিছন দিক থেকে জড়িয়ে ধরলো হেমন্তি একটু কেঁপে উঠলো এতে।হেমন্তি ইলহামের হাত কোমড় থেকে সরানোর চেষ্টা করতে করতে বললো,
~ছাড়েন এতক্ষন তো খুব মজা নিচ্ছিলেন এখন আবার কী হলো?
ইলহাম বললো,
~ভুল হয়েছে বউ আর করবোনা।
ইলহামের মুখে বউ শব্দটা শুনে হেমন্তির মন জুড়িয়ে গেলো কিন্তু নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,
~এখন ঢং করে কোনো লাভ নেই।
ইলহাম বললো,
~হয়েছে তো ভুল করে ফেলেছি আর কোনোদিন এরকম করবোনা।
হেমন্তি বললো,
~এখন কী হবে এসব বলে কেয়া সারাক্ষন এখন মজা নিতে থাকবে।
ইলহাম বললো,
~কেয়াকে বলে দিবো যাতে আমার বউকে একদম বিরক্ত না করে।
হেমন্তি ফিক করে হেসে দিলো ইলহামের কথায় ইলহাম বললো,
~আহা কী সুন্দর মধুর ধ্বনি তোমার এই হাসির।
ইলহামের কথায় হেমন্তি বললো,
~এখন অনেক হয়েছে চলেন নিচে এখানে দাড়িয়ে থেকে কী হবে?
ইলহাম বললো,
~হবে তো ছাদ বিলাস হবে।
হেমন্তি বললো,
~আপনার কথা কিছুই বুঝিনা অনেক সময়।
ইলহাম বললো,
~এতো বুঝতে হবে না।
কেয়া রুমে গিয়ে তানভীরের সামনে দাড়িয়ে বললো,
~কী হয়েছে?
তানভীর বললো,
~আজকে তুমি আমার সাথে যাবে?
কেয়া বললো,
~সবাই যাবে আজ মাকে দেখতে।
তানভীর বললো,
~তাহলে তো আয়োজন করতে হবে।
কেয়া বললো,
~কোনো দরকার নেই আমার পরিবারের জন্য এতো খরচ করার মা সব তৈরি করে নিয়ে যাবে।
তানভীর বললো,
~তোমার পরিবার শুধু এটা আমার কিছুই না।
কেয়া বললো,
~আমি তর্ক করতে চাই না আপনি অফিস থেকে বাসায় চলে যান আর আমি সবার সাথে চলে আসবো।
তানভীর আর কিছু বললোনা শুধু চুপচাপ বিছানায় বসে পরলো।
সবাই একসাথে নাস্তার টেবিলে বসেছে ইরিনা বেগম বললেন,
~আমরা কিন্তু বিকেলে কেয়ার বাসায় যাবো।
হেমন্তি বললো,
~জ্বী মা আমার মনে আছে।
ইমরান খান বললেন,
~বাজার করে এনেছি বেয়ানের জন্য সব রান্না করে নিয়ে যাবে বুঝতে পেরেছো?
ইরিনা বেগম হেসে বললেন,
~বুঝতে পেরেছি।
তানভীর বললো,
~আমি অফিসের জন্য বের হচ্ছি।
ইলহাম বললো,
~আমি আর ফারুক ভাইও বের হবো আমাকে অফিসে যেতে হবে কিছু পেপারস আছে জমা দিতে হবে।
তানভীর বললো,
~ঠিক আছে।
ইমরান খান জিজ্ঞেস করলেন,
~ইলহাম,তোমার কী ছুটি শেষ?
ইলহাম বললেন,
~১৫দিনের ছুটি আছে আসলে এই পেপারস গুলো দরকার তাই।
ইমরান খান বললেন,
~ঠিক আছে বুঝতে পেরেছি।
___♥___
হেমন্তি আর ইরিনা বেগম সকল রান্না নিজ হাতে শেষ করে টিফিনে ভরে নিলেন রাতের খাবার সবাই কেয়ার বাসায় করবে।কেয়া রান্নাঘরে উপস্থিত হয়ে বললো,
~রান্না শেষ হয়েছে মা?
ইরিনা বেগম বললেন,
~হ্যা সব রান্না শেষ তুই রেডি হয়ে নে হেমন্তি তুইও যা রেডি হয়ে নে।
হেমন্তি বললো,
~মা,সব প্যাক করা শেষ আর ফারুক ভাই ফল নিয়ে এসেছে সেগুলোও নিয়ে নিতে হবে।
ইরিনা বেগম বললেন,
~ইলহামও কতো খাবার নিয়ে এসেছে এতো সব কীভাবে নিয়ে যাবো?
হেমন্তি বললো,
~সিএনজি করে পাঠিয়ে দেও।
ইরিনা বেগম বললেন,
~তাই করতে হবে।
কেয়া মনে মনে বললো,
~যার জন্য এতো কিছু করছো সে মনে হয়না তোমাদের ততোটা সম্মান দিবে।
বিকেলে সবাই রওনা হলো কেয়ার বাসার উদ্দেশ্যে কেয়ার মুখে মলিন হাসি লেগে আছে।কেয়া সিড়ি বেয়ে কলিংবেল টিপতেই তানভীর দরজা খুলে দিলো কেয়া একবার তানভীরের দিকে তাকিয়ে বললো,
~সবাই এসে পরেছে।
কেয়া ভিতরে প্রবেশ করতেই সবাই ভিতরে এসে পরলো সোফার ঘরে সবকিছু রেখে তারা সোফায় বসে পরলো।
মানুষের কথার আওয়াজ শুনে রাহেলা খাতুন ঘর থেকে বের হয়ে আসলেন সবাইকে দেখে সে অবাক হলেন।হেমন্তি সালাম দিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলো,
~কেমন আছেন আন্টি এখন?
রাহেলা খাতুন মুখ গম্ভীর করে বললেন,
~ভালো নেই।
ইরিনা বেগম বললেন,
~বেয়ান আপনার এতো শরীর অসুস্থ আমাদের একবার বলতে পারতেন।
রাহেলা খাতুন বললেন,
~এতে বলার কী আছে বয়স হয়েছে শরীরতো খারাপ হবেই।
রাহেলা খাতুনের ব্যবহার হিয়া,ফারুক আর ইলহামের কাছে ভালো ঠেকছেনা তবুও হাসিমুখে তারা কথা চালিয়ে যাচ্ছে।
#গল্পের_নাম_প্রেমের_শুরু
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ২০
রাহেলা খাতুন মুখ গম্ভীর করে বসে আছেন সবাই কথা বলছে হাসি-ঠাট্টা করছে তিনি চুপ করে বসে আছেন।
ইরিনা বেগম রাহেলা খাতুনের পাশে বসে তার হাত ধরে বললেন,
~আপা,আপনার শরীরটাকে বেশি খারাপ লাগছে?
রাহেলা খাতুন বিরক্তি নিয়ে বললেন,
~খারাপ লাগছেনা আপনি বার বার এককথা কেন বলছেন?আপনি কী চান আমার শরীর খারাপ হয়ে যাক?
ইরিনা বেগমের মুখটা চুপসে গেলো কেয়ার এখন কান্না পাচ্ছে তার মায়ের সাথে তারই সামনে কতোটা খারাপ ব্যবহার করছে।তানভীর রাহেলা খাতুনের ব্যবহার দেখে অবাক হচ্ছে তার মা তো কোনোদিন এভাবে কথা বলে না।ইমরান খান গলা পরিষ্কার করে বললেন,
~কেয়া হেমন্তি যাও টেবিলে খাবার দেও অনেক রাত হয়ে গেছে।
ইমরান খানের কথা শুনে রাহেলা খাতুন বললেন,
~এতো সব আয়োজন করা হয়েছে আপনারা একসাথে না আসলেই পারতেন আমার ছেলেরও তো চাকরির পয়সা কতো টাকা খরচ হয়ে গেলো।
রাহেলা খাতুনের কথা শুনে লজ্জায় ইমরান খান মাথা নিচু করে ফেললেন এসব তো তানভীরের টাকায় হয়নি।রাহেলা খাতুন আরো বললেন,
~আপনারা এসেছেন ঠিক আছে আরো দুজন সাথে করে নিয়ে আসার কোনো প্রয়োজন তো আমি দেখছিনা।
হিয়া আর ফারুক বুঝতে পারলো কথাটা তাদের বলা হয়েছে হিয়া মুখে প্রকাশ না করলেও তার ভিতরে অনেক কষ্ট লাগছে।হেমন্তি আর ইলহাম অবাক হয়ে তার কথা শুনছে কেয়া তো কেঁদেই উঠলো।তানভীর নির্বাক হয়ে তাকিয়ে আছে রাহেলা খাতুম কেয়ার কান্না দেখে বললো,
~এতে কান্নার কী আছে যা সত্যি তাই তো বললাম।আসলে কী এতিম মানুষ এমনই হয় একটু মাথায় চড়ালো নাচতে শুরু করে?
ইলহাম এবার চুপ থাকতে পারলো না সে সোফা ছেড়ে উঠে বললো,
~বাবা,আমাদের এখন যাওয়া উচিত এখানের পরিবেশ খারাপ হয়ে গেছে।
হিয়া চোখের পানি মুছে ফারুকের হাত ধরে দাড়িয়ে রাহেলা খাতুনের দিকে তাকিয়ে বললেন,
~আন্টি আপনার শরীরের খেয়াল রেখেন আমাদের বাসায় অবশ্যই যাবেন আমাদের জন্য দোয়া করবেন।
বলেই ফারুক আর হিয়া বের হয়ে গেলো হেমন্তি দৌড়ে তাদের পিছে পিছে চলে গেলো ইলহাম একবার তানভীরের দিকে তাকিয়ে বললো,
~তানভীর,কেয়াকে কিছুদিনের জন্য নিয়ে যাচ্ছি নিজের আর আন্টির খেয়াল রেখো।
বলেই কেয়া,ইমরান খান,আর ইরিনা বেগমকে নিয়ে বের হয়ে আসলো ইরিনা বেগম স্তব্ধ হয়ে আছে আজকের ঘটনায়।কেয়া কান্না করছে বাসা থেকে বের হয়ে সবাই গাড়িতে উঠে বসলো ইমরান খান হিয়ার হাত ধরে বললেন,
~মাগো আমায় মাফ করে দিয়ো আমি জানতাম না আমার কারণে তুমি এতোটা কষ্ট পাবে।
বলেই সে কেঁদে ফেললেন এতো বছরে কোনোদিন বাবাকে কাঁদতে দেখেনি হেমন্তি হিয়া ইমরান খানের হাত ধরে বললো,
~এসব কী করছেন আপনি?আমার বাবার মতো আপনি এভাবে মাফ চেয়ে আমাকে ছোট করবেন না।
ফারুক বললো,
~হিয়া ঠিক বলেছে আঙ্কেল যা হওয়ার হয়ে গেছে এসব ভুলে যান।
ইলহাম বললো,
~কেয়া তুমি কিছুদিন বাবা আর মায়ের সাথে থাকো এরপর সে বাসায় চলে যেয়ো এতে পরিবেশটা একটু ঠিক থাকবে।
ইলহাম হেমন্তি আজ নিজেদের বাসায় চলে আসলো হিয়া আর ফারুকও আছে সাথে হেমন্তি হিয়ার রুমের সামনে এসে বললো,
~আসতে পারি আপু?
হিয়া তার মা-বাবার ছবি দেখছিলো হেমন্তির আওয়াজ শুনে বললো,
~অবশ্যই আসো।
হেমন্তি ঘরে ডুকে হিয়ার পায়ের কাছে বসে বললো,
~আপি তোমার কী মন খারাপ?
হিয়া মুচকি হেসে বললো,
~একদম না।
হেমন্তি বললো,
~আপু তোমরা অনেক ভালো তাই মানুষ তোমাদের কথা শুনিয়ে চলে যায়।
হিয়া বললো,
~হেমন্তি এসব নিয়ে মাথা ঘামাবেনা আমরা কোনো কিছু মনে করিনি।
হেমন্তি স্বস্তির নিশ্বাস ছেড়ে বললো,
~তাহলে চলো খাবার দিয়েছি টেবিলে খাবে।
হিয়া বললো,
~তুমি যাও আমি আসছি।
____♥____
তানভীরের রুমের দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে রাহেলা খাতুন সবার যাওয়ার পরই তানভীর রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে।রাহেলা খাতুন অনেকক্ষণ ধরে দরজায় টোকা মারছে তবুও তানভীর দরজা খুলছেনা রাহেলা খাতুন এবার কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলেন,
~আমার ছেলেটা না খেয়েই বসে আছে আর সেই মহারানী চলে গেলো দুলাভাইয়ের সাথে।কী দেখে যে আমি ওই মেয়েটাকে পছন্দ করেছিলাম আমার কপাল পুড়লো?আমার ছেলেরটা সব খেয়েই শেষ করে দিলো আমার ছেলের কী কোনো ভবিষ্যৎ নেই ওই জামাইরে তো সব দিয়ে দিবে আমার ছেলের জন্য কী দিবে?
রাহেলা খাতুনের এতো অশ্রাব্য কথা শুনে তানভীর আর থাকতে পারলো না সে দরজা খুলে রাহেলা খাতুনের কাছে গিয়ে বললো,
~তুমি এসব কী বলছো মা?
রাহেলা খাতুন বললেন,
~যা বলেছি ঠিক বলেছি।
তানভীর বললো,
~না মা,তুমি ঠিক বলোনি আজ এসব আয়োজনের পিছে আমার এক টাকাও খরচ হয়নি তাদের পিছে এখন পর্যন্ত আমি এক টাকাও খরচ করিনি।ইলহাম ভাই তাদের যে সাহায্য করে আমি তো তাও করিনা কারণ কেয়া আমাকে মানা করে ইলহাম ভাইও আমাকে মানা করে।আজ যাদের এতিম বলে খোঁটা দিলে তারা আমাকে আপন করে ভাই আর বোনের ভালোবাসা দিয়েছে।আর আমার শশুড়ের টাকার কোনো প্রয়োজন ইলহাম ভাই বা আমার নেই কারণ দুজনই নিজ নিজ পায়ে দাড়য়ি আছি।
রাহেলা খাতুন বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন ছেলের কথা শুনে এতোদিন সে একটা কাঁচের জগতে বসবাস করছিলেন যা তানভীরের কথায় ভেঙ্গে গেছে।তানভীর আরো বললো,
~তুমি জানো ফারুক ভাই আমায় ৫০,০০০ টাকা দিয়েছে গ্রামের বাসা ঠিক করার জন্য এখন আমার হাতে টাকা নেই তাই আমি চিন্তায় ছিলাম ফারুল ভাই জানতে পেরে সবার অগোচরে তিনি আমায় ৫০,০০০ টাকা দিয়েছে আর বলেছে যাতে কেউ না জানে।আর তুমি তাদের অপমান করলে মা হিয়া আপুর শরীরের অবস্থা তুমি জানো তার বাচ্চা কতোটা রিস্কের মধ্যে আছে।
রাহেলা খাতুন বললেন,
~তানভীর তুই আমার কথাটা শোন।
তানভীর বললো,
~থাক মা আজ অনেক বলেছো আসো খেয়ে নেও তারপর ঘুমিয়ে পরো আমি কাল কেয়াকে নিয়ে আসবো।
রাহেলা খাতুন কিছু না বলে শাড়ি দিয়ে চোখ মুছে ফেললো তিনি বুঝতে পেরেছেন বাইরের মানুষদের কথা শুনে নিজের সংসারে আগুন লাগিয়েছে।কিছুদিন যাবত পাশের বাসার এক মহিলার সাথে বেশ ভালোই সখ্যতা গড়েছে তাই সেই তাকে এসব বলে মাথাটা নষ্ট করে দিয়েছিল কিন্তু এর পরিণাম যে এতোটা খারাপ হবে তা সে জানতোনা।
ইলহাম বারান্দায় দাড়িয়ে আছে তার মনটা অনেক খারাপ কেয়া আর তানভীরের জন্য তার খারাপ লাগছে একটু খানি ভুলের জন্য আজ কী থেকে কী হয়ে গেলো?
হেমন্তি রুমে এসে কোথাও ইলহামকে না পেয়ে বারান্দায় চলে গেলো হেমন্তি দেখলো ইলহাম আকাশপাণে মুখ করে তাকিয়ে আছে।হেমন্তি ধীর পায়ে ইলহামের পাশে দাড়িয়ে বললো,
~আপনার কী মন খারাপ?
ইলহাম দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে হেমন্তির দিকে তাকিয়ে বললো,
~কেয়া আর তানভীরের জন্য খারাপ লাগছে।
হেমন্তি বললো,
~আন্টি কেন এমন করলো কিছুই বুঝতে পারছিনা।
ইলহাম বললো,
~শুনো হেমন্তি সংসারে যখন বাহিরের মানুষ এসে কথা বলে সে সংসারে আগুন লাগাটাই স্বাভাবিক কারণ বাহিরের মানুষ কানটা ভালো ভরতে পারে।
হেমন্তি বললো,
~আন্টির উচিত ছিল কেয়ার সাথে সরাসরি কথা বলার।
ইলহাম বললো,
~ইগো জিনিসটা সবার মাঝেই বিদ্যমান আন্টি তো আর সবার থেকে ব্যতিক্রম নয়।
হেমন্তি বললো,
~এখন শুধু একটাই দোয়া সব যাতে ঠিকঠাক হয়ে যায়।
ইলহাম বললো,
~আমিও সেটাই ভাবছি।
___♥___
কেয়া বিছানায় শুয়ে আছে আর কেঁদে কেঁদে বালিশ ভিজাচ্ছে তার মন আজ অনেক কষ্ট লেগেছে নিজের পরিবারকে এভাবে অপমানিত হতে দেখে তার বুকে অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে।কেয়ার ফোনটা বেজে উঠলো কেয়া ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো তানভীরের নামটা স্ক্রিনে দেখা যাচ্ছে।কেয়া চোখ মুছে ফোনটা রিসিভ করতেই তানভীর বলে উঠলো,
~রেগে আছো আমার উপর?
তানভীরের কথায় কেয়া ভাঙ্গা কন্ঠে বললো,
~রাগ করে থাকলে কী ফোন রিসিভ করতাম?
তানভীর নিঃশব্দে হাসলো এরপর বললো,
~মায়ের পক্ষ থেকে আমি মাফ চাইছি আমি কালকে সবার কাছ থেকে মাফ চেয়ে নিবো।
কেয়া বললো,
~খেয়েছেন?
তানভীর বললো,
~নাহ।
কেয়া বললো,
~মা খেয়েছেন?
তানভীর দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
~খাইনি অনেক জোরাজুরি করিছি কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।
কেয়া বললো,
~আমার ভালো লাগছেনা ফোন রাখছি।
তানভীর বললো,
~ঠিক আছে ঘুমিয়ে পরো।
কেয়া ফোন রেখে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে রইলো।এখন একটা ঘুমের প্রয়োজন ঘুম দিলে মাথাটা ঠান্ডা লাগবে
ইরিনা বেগম চুপচাপ শুয়ে আছেন চোখ বন্ধ করে কোনো কথাই তিনি বলছেননা ইমরান খান তাকে ডেকে বললেন,
~তুমি কী ঘুমিয়ে গেছো?
ইরিনা বেগম চোখ খুলে বললেন,
~আজকে যেটা হয়েছে তা না হলেও পারতো।
ইমরান খান বললেন,
~ভাগ্যের লিখন কী কেউ পাল্টাতে পারে বলো?
ইরিনা বেগম বললেন,
~আমাদের কী ভুল হয়েছে তাই বুঝতে পারছিনা?
ইমরান খান বললেন,
~ভুল কারোরই না মানুষ অনেকেরই সময় লাগে বেয়ানেরও সেই সময় লাগছে।
ইরিনা বেগম বললেন,
~কেয়ার সংসারটা ঠিকঠাক হলেই মনটা ভালো লাগবে।
ইমরান খান আর কোনো কথা বললেন না চুপচাপ শুয়ে পরলেন সকালে ঘুম থেকে উঠে কেয়া আর ইরিনা বেগম কাজ করছেন তখনই কলিংবেল বেজে উঠলো কেয়া হাতের কাজ রেখে দরজার সামনে গিয়ে দরজা খুলতেই সামনে থাকা মানুষটিকে দেখে চমকে উঠলো কারণ সামনে থাকা ব্যক্তিটি হচ্ছে
চলবে
(