ভালোবাসি তাই ২ পর্ব -১৯

#ভালোবাসি তাই ২
#পর্বঃ১৯
#তানিশা সুলতানা

মহিলাটির বয়স প্রায় পঞ্চাশের কাছাকাছি কিংবা তার ওপরেও হতে পারে। সাজুগুজুর জন্য বয়সটা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। ঠোঁটে গাড়ো লাল রংয়ের লিপস্টিক। চোখে প্রচন্ড মোটা করে কাজল আঁকা। আধপাকা চুল গুলো খোপা করে তাতে গোলাপ ফুল গোঁজা। সুতি লাল রংয়ের শাড়ি কুচি করে পরে আচলটা ভাজ করে তাতে সেফটিপিন দেওয়া।
ফুলের টবটা হাতে দিয়ে হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
তানহা অভির পেছনে লুকিয়েছে।
“এটাই আমার ফুলের টব। সবার বাসাই চিরুনি তল্লাশি দিয়েছিলাম শুধু এই বাসাটা বাদে। আর এখানেই পেয়ে গেলাম।
টবটাতে হাত বোলাতে বোলাতে বলেন মহিলাটি।
” এটা এখানে আসলো কি করে?
অভি ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে।
“আমি কিন্তু চুরি করি নি। আমি তো চুরি করতে পারিই না। ওই যে টবের ভেতরের গোলাপের ডাল লাগানো সেটাও আমি চুরি নি। বিশ্বাস করেন। এই যে দেয়াল ছুঁয়ে বললাম।
তানহা অভির পেছন থেকে বেরিয়ে বলে।
মহিলাটি কপালে তিনটে ভাজ ফেলে তাকিয়ে আছে তানহার দিকে।
অভি নিজের কপাল নিজে চাপ কায়।
” তুমি চুরি করো নি বুঝলাম। তাহলে তুমি জানলে কি করে ওতে গোলাপের ডাল লাগানো আছে?
অন্য মহিলা বলে ওঠেন।
“আবার ফেসে গেলাম।
তানহা দাঁত দিয়ে নখ কেঁটে বিরবির করে বলে।
” চুরির বিচার পরে করা যাবে। আগে এদের বিয়ের ব্যবস্থা করি। আহাম্মদ ভাই অনুমতি দিয়ে দিয়েছে।
একটা পুরুষ বলেন।
“আমিও সেটাই বলি।
তানহা একটা লাফ দিয়ে এক গাল হেসে বলে ওঠে।
অভি দাঁত কটমট করে তাকায় তানহার দিকে। তানহা ভেংচি কেটে দুই পা এগিয়ে যায়।
” শুধু বিয়ের ব্যবস্থা করলে হবে না। খাট টাও তো সাজাতে হবে ফুল দিয়ে তাই না?
আমাদের হাতে তো টাকা নেই। তাই যদি ফুল গুলোও আপনারাই কিনে দিতেন। অবশ্য পরে টাকা শোধ করল দিতাম।
তানহা হাত কচলাতে কচলাতে মাথা নিচু করে বলে।
“কেমন মেয়েরে বাবা নিজের ফুল সজ্জার কথা নিজে মুখে বলছে। ছি ছি ছি
রিনা খান মানে ফুলের টবের মালিক মুখ বাঁকিয়ে বলে।
“আমি তো ফুল সজ্জার কথা বলি নি রিনা আন্টি।
তানহা মুখটা কালো করে বলে।
” তুমি কি করে জানলে আমার নাম রিনা খান?
মহিলাটি উৎসাহ নিয়ে বলে।
“সাজ দেখে বললাম।
তাহা হেসে বলে।

🥀🥀🥀🥀
গাড়ি ঠিক করার জন্য আহাম্মদ চৌধুরী বেরিয়ে গেছেন। আজকেই স্মৃতিকে বাড়ি নিয়ে যাবে। আনিকা বেগম খেতে গেছেন। আপাতত স্মৃতি একাই আছে। এই সুযোগেই অবির চলে আসে স্মৃতির কেবিনে। আজকে স্মৃতি ঘুমিয়ে ছিলো। আবির এসে স্মৃতির পাশে ফুলটা রাখে। দুই হাত গালে দিয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে স্মৃতির মুখের দিকে। “কিছু একটা আছে এই মুখে নাহলে কেনো এতো চেষ্টা করেও এই মুখটাকে ভুলতে পারছে না”
“এই স্মৃতি ওঠো না
স্মৃতির হাত ধরে ঝাঁকিয়ে বলে আবির।
নরেচরে ওঠে স্মৃতি। ঘুমের ঘোরে পা টা উঁচু করে যায়। আবির ধরে ফেলে। এখন পা বাঁকালে নিশ্চিত ব্যাথা পেতো।
” এই মেয়েটা এতো কেয়ারলেস কেনো?

স্মৃতির দুই গালে হাত রাখে আবির। কপালে ঠোঁট ছোঁয়ায়। ঘুমের মধ্যেই ভ্রু কুচকে ফেলে স্মৃতি। ঠোঁট উল্টে ফেলে। ফিক করে হেসে দেয় আবির।
“পাগলি একটা।

বেশ কিছুখন পরে চোখ পিটপিট করে তাকায় স্মৃতি। পাশে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে ধাপ করে চোখ খুলে স্মৃতি। পাশে তাকিয়ে চোখ বড়বড় করে ফেলে তাকায় স্মৃতি।
আবির স্মৃতির এক হাত জড়িয়ে রেখেছে আরেক হাত গালে দিয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে স্মৃতির দিকে।

তখনই কারো পায়ের ধাপ ধাপ শব্দ শোনা যায়। আবির চমকে ওঠে।
” এবার কি হবে?

🥀🥀🥀
নিজের ফুলসজ্জা খাট নিজে হাতে সাজাচ্ছে তানহা। অনেক গুলো গোলাপ রজনীগন্ধা কিনে এনে দিয়েছে ওনারা। বিয়ে পরিয়েই চলে গেছেন ওনারা। এখন বাসায় তানহা আর অভি। তানহা রিনা খানেন বাগান থেকে বেশ কয়েকটা কালো গোলাপ ছিঁড়ে এনেছে। খাটের চারপাশে আস্ত গোলাপ রেখে দিয়েছে তানহা। আর কিছু গোলাপের পাপড়ি ছিড়ে খাটের ওপর লাভ একে তাতে তানহা অভি লিখেছে। এবার নিজে সেই নীল শাড়িটা পরে এসে সুন্দর করে খোপা করে তাতে গোলাপ ফুল গুঁজে দিয়েছে। সাজার মতো কিছুই নেই৷
তাই আর সাজা হয় না।
অভি দুইজনের জন্য খাবার বেরে তানহাকে ডাকে।
“আমি কিন্তু ভীষণ খিধে পেয়েছে। তুমি কি খাবে? না কি আমি একাই খাবো?
অভি জোরে বলে।
তানহা দৌড়ে যায়।
” দেখুন তো কেমন লাগছে আমাকে? অভির পাশে বসে বলে তানহা।
“ভালোই
মুখে খাবার পুরে বলে অভি।
তানহা মুখ ফুলিয়ে খাবার খাওয়া শুরু করে দেয়।
” শুনো
আজকের ঘটনাটা সবাইকে ঢাক ঢোল পিটিয়ে বলার দরকার নেই। সবাই জানলে পরিস্থিতিটা বাজে হবে বুঝলে?
তানহার দিকে তাকিয়ে বলে অভি।
“নাহহহ বুঝি নি। বিয়ে হয়ে গেছে। এটা আমি সবাইকে বলবো। আর আমি এখান থেকে এখন আর যাচ্ছি না।আমাকে ট্যাগ করে got a Married স্ট্যাটাস দিবেন। ঢাক ঢোল পিটিয়ে সবাই বলবো।
তেজি গলায় বলে তানহা।
” ইডিয়েট
এক লাইন বেশি বুঝে সব সময়।
অভি খাওয়ায় মনোযোগ দিয়ে বিরবির করে বলে।
“বেশি বুঝি ভালো। আপনার কি?
নাক টেনে বলে তানহা। চোখ দুটো টলমল করছে। এখুনি পানি গড়িয়ে পরবে।
” আজিব তো।
এখানে কান্না করার মতো কি বললাম আমি?
অভি ভেবাচেকা খেয়ে যায় তানহার কান্নায়৷ তানহা এবার হাত গুটিয়ে নেয়। ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে।
“আরে আরে
আচ্ছা বাবা ঠিক আছে। তুমি সবাইকে বইলো।
অভি তানহাকে স্বান্তনা দিয়ে বলে।
” আপনি আমার দিকে না তাকিয়েই কেনো বললেন ভালোই?
তানহা নাক টেনে বলে।
অভি কপাল ঘসে।
“এই পাগলীটাকে নিয়ে কোথায় যাবো?
মনে মনে বলে অভি।
” এখন ভালো করে দেখে বললাম খুব সুন্দর লাগছে।
তানহার হাত ধরে বলে অভি।
তানহা কান্নার মধ্যে হেসে ফেলে।
“থ্যাংক ইউ
চোখ মুছে বলে তানহা।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here